#স্রোতের_টানে
লেখিকা: #Tarin_Niti
পর্ব:৬
আয়ান শক্ত করে ধরে রাখার কারনে ফারিহা হাতে অনেক ব্যথা পাচ্ছে।আয়ানকে দেখে মিস্টার আজাদ রেগে বললো,
“আমার মেয়েকে ছাড়!”
আয়ান মিস্টার আজাদকে দেখে একটু হেসে বললো,
“ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, আপনার মেয়ে এখন আমার স্ত্রী!তাই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপনি নাক গলাবেন না প্লিজ”
তারপর আয়ান ফারিহার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” চলো..”
মিস্টার আজাদ বলে উঠে, “আয়ান তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো”
ফারিহা একবার মিস্টার আজাদের দিকে তাকায়। মিস্টার আজাদও মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।উনি চাইলেও আয়ানের সাথে পারবে না! আর এদিকে আয়ান মিস্টার আজাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে ফারিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
গাড়িতে বসে আয়ান আর কোন কথা বলে না। একদম চুপচাপ গাড়ি চালাতে থাকে।ফারিহা আয়ানের পাশের সিটেই চুপচাপ বসে আছে। ফারিয়ার অনেক ভয় হচ্ছে আয়ানকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে।
বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে আয়ান ফারিহার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে।ফারিহা ভয়ে কাঁপছে আয়ানকে কিছু বলতে যাবে তখন আয়হান ঠাস ঠাস করে ফারিহার দু গালে দুটো চড় মেরে দে।তারপর পকেট থেকে গান বের করে ফারিহার গালে সাথে চেপে ধরে বললো,
“তোকে বলেছিলাম না বাবাকে ভুলে যা! তবুও কোন সাহসে নিজের বাবার সাথে কথা বলেছিস?”
গান দেখে ফারিহা আঁতকে উঠে।মিস্টার আজাদ রাজনীতি করলেও ফারিহাকে কখনো এসবের সামনে আসতে দে নি।তাই আয়ান এভাবে গান চেপে ধরায় ফারিহা ভয় পেয়ে যায়।ব্যাথায় ফারিহার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আয়ান আবার বললো,
“আজ থেকে তোর বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ। এখানে বন্দি থাকবি তুই”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা আঁতকে ওঠে বললো,
“না না.. প্লিজ এরকম করবেন না।আমি পড়াশোনা করতে চাই”
আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “তাহলে আমি যা বলেছি তা শুনলি না কেনো?”
“ব্ বা বাপির সাথে অনেকদিন কথা বলিনি তাই..”
আয়ান ফারিহাকে ধমক দিয়ে বললো, “তোকে আমি বারণ করিনি? বল,,বারণ করেছি কিনা?”
আয়ানের ধমকে ফারিয়া কেঁপে ওঠে। তারপর কোনরকমে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।আয়ান ফারিহার চুলের মুঠি ধরে ফারিয়ার মুখটা আয়নায় মুখের কাছে এনে বললো,
“আমার কথা অমান্য করে কাজটা ভালো করিস নি”
তারপর ফারিহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আয়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।ধাক্কা দেওয়ার ফলে ফারিহা ফ্লোরে পড়ে যায়। আয়ান চলে গেলে ফারিহা ফুঁপিয়ে কেঁদে দে।ওর জীবনটা কি হয়ে গেল! আগে বাপির আদরের মেয়ে ছিল আর এখন প্রত্যেকদিন কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।আচ্ছা ওর কি দোষ??
ফারিহা কাঁদতে কাঁদতে তাচ্ছিল্যে হাসে।
_________
রাতে আয়ান ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। তখন ফারিহা আয়ানের জন্য কফি নিয়ে আসে! ফারিহা সার্ভেন্টদের থেকে শুনেছে আয়ান রাতে কফি খায়। তাই ফারিহা নিজে আয়ানের জন্য কফি বানিয়ে আনে।ফারিহা কফি নিয়ে রুমে এসে আয়ানের দিকে মগটা বাড়িয়ে দিয়ে বলেলো,
“আপনার কফি”
আয়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে একবার ফারিহার দিকে তাকায় তারপর আবার কফি দিকে তাকায়। তারপর কিছু না বলে কফির মগটা হাতে নে। ফারিহার বুক ধুকপুক করছে।যদি কফি খারাপ হয়! যদি আবার ওর সাথে আয়ান বাজে আচরণ করে! আয়ান কফিতে চুমুক দে আর এদিকে ফারিহা হাত কচলাচ্ছে আর আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।আয়ান এক চুমুক খেয়ে বললো,
“ভালোই তো কফি বানাও।কার কাছ থেকে শিখেছো?”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায়।হাসিমুখে বললো,
“আমি তো আগে কফি বানাতে পারতাম ই না।তারপর বাপি…”
এইটুকু বলে ফারিহা চুপ হয়ে যায়।আয়ান বুঝতে পারে ফারিয়া কি বলতে চেয়েছিলো।আয়ান বলে উঠে,
“এমপি মহিদুল হক আজাদ কফি বানাতে পারে?”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা হেসে বললো,
” বাপি অনেক ভালো কফি বানায়”
ফারিহাকে দাঁড়িয়ে উসখুস করে আয়ানকে কিছু বলবে বলে।আয়ানের রাগটা এখন কিছুটা কমেছে। ফারিহা এই সুযোগে মাথা নীচু করে বললো,
“আই এম সরি।আমি জানি আমি আপনার কথা অমান্য করেছি। কিন্তু প্লিজ আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করবেন না”
আয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমিও চেয়েছিলাম আমার বউ যেন অশিক্ষিত না হয়। তাই তোমার ভার্সিটি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি। কিন্তু তুমিতো আমার কথা মানলে না”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা মাথা নিচু করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর আয়ান বলে উঠে,
“ঠিক আছে! প্রথমবার তাই ক্ষমা করলাম।তুমি কাল থেকে ভার্সিটি যেতে পারো”
আয়ানের কথা শুনেছে ফারিহার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তারপর খুশি হয়ে বললো,
“থ্যাংক ইউ! থ্যাংক ইউ সো মাচ”
তারপর ফারিহা নিচে চলে যায়।ফারিহা আসলে আয়ানের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ওর জন্য কফি করে আনে।না হলে ফারিহা আয়ানের জন্য কফি করার কোনো ইচ্ছে নেই। যাক ওর কাজটা সার্থক হলো।
ফারিহা চলে গেল আয়ান কফির মগে চুমুক দিয়ে বাঁকা হাসে। আয়ান জানে ফারিহা কখনো নিজ থেকে ওকে কফি করে খাওয়াবে না। শুধুমাত্র ভার্সিটি যাওয়ার অনুমতি চাওয়ার জন্য এতল আদিখ্যেতা! যাই হোক মেয়েটা দারুণ কফি বানায়!
.
পরদিন সকালে ফারিহা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিজের জন্য কফি বানিয়ে ছাদে চলে যায়। কিছুক্ষণ ছাদে থাকার পর আয়ানের জন্য কফি নিয়ে রুমে আসে।এসে দেখে আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। ফারিহা চুপচাপ আয়ানকে কফি দিয়ে চলে আসতে নিলে আয়ান ফারিহাকে ডাকে।ফারিহা পেছনে ফিরলে আয়ান বললো,
“এবার থেকে প্রতিদিন তুমি আমার জন্য কফি বানাবে”
ফারিহা ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়লো।তারপর ফারিহা চলে যেতে নিলে আবার পেছন ফিরলো।আয়ান ফারিহাকে থেমে যেতে দেখে বললো,
“কিছু বলবে?”
ফারিয়া হাত কচলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
“আসলে আমার বইগুলো সব ওই বাড়িতে”
ফারিহা ভাবে আয়ান হতো এটা শুনে রেগে যাবে। কিন্তু আয়ান শান্তকণ্ঠে বললো,
“তোমাকে নতুন বই এনে দেবো। এগুলো প্রয়োজন নেই”
“না না আমার এগুলোই লাগবে”
আয়ান ফারিহার দিকে শান্ত চোখে তাকালে ফারিহা মাথা নীচু করে বললো,
” ওখানে আমার অনেকগুলো ইম্পরট্যান্ট নোট আছে। তাছাড়া ওই বইগুলোতে ইম্পরট্যান্ট অনেককিছু দাগানো আছে।আমার ওইগুলো প্রয়োজন”
আয়ান একবার ফারিহার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফারিহা আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক ফোটা চোখের জল ফেললো।বইগুলো না পেলে সত্যি ওর লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হবে। আর এখন তো ফারিহা বাবার সাথে যোগাযোগ করে বলতে পারবেনা যে,বইগুলো আনতে বলবে!
ফারিহা চুপচাপ ভার্সিটির জন্য রেডি হতে থাকলো।
ফারিহা ভার্সিটিতে যাওয়ার সাথে সাথেই নওশীন আর শিহাব ওকে ঘিরে ধরে।নওশীন বললো,
“ফারিহা আয়ান ভাইয়া তোকে এভাবে নিয়ে গেলো কেনো?”
শিহাব বললো, “কত বড় সাহস! তোর বাবার সামনে দিয়ে তোকে এভাবে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। আমিতো ভাবছি আঙ্কেল কিছু বলল না কেনো!”
নওশীন বললো, “এই ফারিহা বলোস না।তোকে বকাঝকা করেনি তো?”
ফারিহা হেসে বললো, “আরে না! কিছু বলেনি”
শিহাব সন্দেহ চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই যে আঙ্কেলের সাথে যোগাযোগ করলি তার জন্য কিছু বলেনি?”
ফারিহা একটু চুপ হয়ে যায়। তারপর মুখে কৃত্রিম
হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“না! কিছু বলেনি”
নওশীন ফারিহার গালে হাত রেখে অবাক কন্ঠে বললো,
“ফারু! তোর গালে রকম লাল হয়ে আছ কেনো?দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ চড় মেরেছে!”
নওশীনের কথা শুনে শিহাব ফারিহার কে দেখে। ফারিয়া হেসে বলেলো,
“আরে না,, কিছু হয়নি।মনে হয় মশা কামড় দিয়েছে!”
শিহাব রেগে বললো, ” কিছু হয়নি মানে? স্পষ্ট পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বোঝা যাচ্ছে। তোকে ওই আয়ান মেরেছে তাই না?”
ফারিহা কিছু বলতে যাবে তখন শিহাব ফারিহাকে জোরে একটা ধমক দিয়ে বলেলো,
” চুপ!আর কতো মিথ্যা বলবি? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তোকে কেউ চড় মেরেছে।কতো বড় সাহস তোকে চড় মারে!”
“প্লিজ রাগ করিস না।রেগে কি লাভ বল তো?উনাকে তো তোরা কিছু বলতে পারবিনা”
“হ্যাঁ আমরা পারবোনা। কিন্তু আঙ্কেল তো পারবে। আমি এক্ষুনি আঙ্কলকে কল করছি”
ফারিহা উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
“না না!বাপি কে কিছু বলিস না”
নওশিন আর শিহাব অবাক চোখে ফারিহার দিকে তাকায়।ফারিহা নীচু কন্ঠে বললো,
“বাপি উনার সাথে পেরে উঠবে না।আর বাপি যদি জানে উনি আমাকে চড় মেরেছে আর বাপি কিছু করতে পারেনি তাহলে অনেক কষ্ট পাবে।বাপি অসুস্থ হয়ে পড়বে।প্লিজ বাপিকে কিছু বলিস না।তোদেরকে অনুরোধ করছি”
নওশিন ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। ফারিহা হাসিমুখে বললো,
“এই কাঁদছিস কেনো?”
“আয়ান ভাইয়া তোকে খুব কষ্ট দেয়। তাই নারে?”
“আরে না!ধুর,, তোরা এতো চিন্তা করিস না তো!”
“তুই খুব স্ট্রং মেয়ে ফারিহা”
বলে শিহাব ফারিহাকে এক সাইড থেকে জড়িয়ে ধরলো। নওশীন ও ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। ফারিহা হাসিমুখে ওদের দিকে তাকায়। এই দুইজন ওর বন্ধু কম,ভাইবোন বেশি।বাপির পরে এই নওশীন আর শিহাব ই ফারিহার সবচেয়ে আপনজন।
চলবে…