স্রোতের টানে পর্ব:৮

0
4366

#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:৮

পরদিন যথারীতি ফারিহা ভার্সিটি শেষে রেস্টুরেন্ট যায়।সাথে শিহাব আর নওশীন ও আছে।ফারিহা তৌহিদ আঙ্কেলের সাথে বসে কথা বলছিলো তখন নওশীন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,
“ফারু,, আঙ্কেল এসেছে!”

ফারিহা নওশীনের ভ্রু কুঁচকে তাকালেন নওশীন হেসে বললো, “আরে তোর বাবা এসেছে”

ফারিহা এক মুহূর্তের জন্য আয়ানের কথা ভুলে যায়!তাকিয়ে দেখে মিস্টার আজাদ রেস্টুরেন্টে ডুকছে। ফারিহা আর কিছু না ভেবে “বাপি” বলে দৌড়ে গিয়ে মিস্টার আজাদ কে জড়িয়ে ধরে।মিস্টার আজাদও হাসিমুখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।
এ মেয়েটাকে ছাড়া এখন বাড়ি খালি খালি লাগে। এ মেয়েটাই তো ওনার আপনজন।স্ত্রী সেই কবেই চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। মিস্টার আজাদের ফারিহাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়।তাই ফারিহাকে দেখতে চলে আসে।
ফারিহা মুখে তুলে বললো,
“বাপি কেমন আছো?তুমি কেমন শুকিয়ে গিয়েছো।একদম খাওয়া দাওয়া করো না,, তাইনা?”

ফারিহার কথা শুনে মিস্টার আজাদ হেসে দিলো। ফারিহা কোমরে হাত রেখে বললো,
“আমি নেই বলে খাবারের অনিয়ম করছো?ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছে তো??”

“আরে খাচ্ছি রে,মা খাচ্ছি।তুই এতো আমার চিন্তা করিস না তো”

“ঠিকমতো খাচ্ছো?তাহলে এভাবে শুকিয়ে গেলে কেনো?”

“কই শুকিয়ে গিয়েছি!দেখ আমি এখনো কত ফিট। এখনো কতো মেয়ে আমার জন্য পাগল জানিস?”

ফারিহা একটু ভাব নিয়ে বললো, “কার বাবা দেখতে হবে তো!”

মিস্টার আজাদ জোরে হাসে।তারপর ফারিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“তুই ভালো আছিস তো মা?”

মিস্টার আজাদের কথা শুনে ফারিহার মন খারাপ হয়ে যায়।তবুও মুখে নকল হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ.. আমি খুব ভালো আছি”

“মিথ্যে বলছিস কেনো?আমি বুঝি না ভেবেছিস?”

“না!বাপী মিথ্যে বলছি না।আমি সত্যি খুব ভালো আছি”

মিস্টার আজাদ ব্যথাতুর চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আয়ান তোকে অনেক কষ্ট দে। তাই না রে?”

বাবার কথা শুনে ফারিহা চুপ হয়ে গেলো।মিস্টার আজাদ আবার বললো,
“আমি একটা অপদার্থ বাবা।যে নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনা”

“বাপি!! এভাবে বলছো কেনো? তুমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাপি।চলো চলো,,আজকে তোমাকে আমি নিজ হাতে খাওয়াবো।আমার রেস্টুরেন্টের স্পেশাল মেনু দিয়ে”

“স্পেশাল মেনু? তাহলে তো খেতেই হয়”

“হুম,, কিন্তু বাপি আমি বিনা টাকায় খাওয়াবো না।রেস্টুরেন্টে খাবে টাকা দিতে হবে”

ফারিহার কথা শুনে নওশীন হেসে বললো, “আঙ্কেলের থেকেও টাকা নিবি?”

“তো নিবো না কেনো?বাপি এখন আমাদের কাস্টমার।সো,, টাকা দিতে হবে হুহ ”

মিস্টার আজাদ হেসে বললো, “দিবো রে মা..তুই যতো টাকা চাস দিবো।আমার সবকিছু তো তোরই”

“না না.. এতো টাকা লাগবেনা। খাবারের বিল যতো ততো দিলেই চলবে।চলো চলো..”

ফারিহা নিজে গিয়ে ভেতর থেকে খাবার নিয়ে আসে। তারপর একটা টেবিলে বসে মিস্টার আজাদের মুখে খাবার তুলে দে।মিস্টার আজাদ তৃপ্তি নিয়ে খায়। ফারিহা ঠিকই বলেছে, ফারিয়া নেই বলে উনি খাবারের অনিয়ম করতো।কিন্তু আজকে মেয়ের হাতে খুব শান্তিতে খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ খাওয়ার পর এবার মিস্টার আজাদ খাবার তুলে ফারিহার মুখের সামনে ধরে বললো,
“এবার তুই খা..”

ফারিহা ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকায়।তারপর খাবার মুখে তুলে।নওশীন, শিহাব আর তৌহিদ আঙ্কেল আরো কয়েকজন ওদের বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখছে।
খাওয়া শেষে মিস্টার আজাদ অনেকক্ষণ ফারিহার সাথে গল্প করে।তারপর চলে যায়।ফারিহা আসলে আয়ানের কাছে কেমন আছে সেটা বাবাকে বুঝতে দেয় না।ফারিহা মিস্টার আজাদকে বুঝায় ও খুব ভালো আছে।আসলেই কি তাই..?

.
আয়ান অফিসে বসে একমনে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে।তখন আয়ানের পিএ রাকিব আয়ানের কেবিনে নক করে।ছেলেটা আয়ানকে প্রচুর ভয় পায়। আয়ান আসার পারমিশন দিলে কাঁপা কাঁপা পায়ে কেবিনে প্রবেশ করে।তাাপর আয়ানের দিকে কিছু ফাইল এগিয়ে দে।আয়ান রাকিবকে দেখে হাসে। আয়াত বুঝতে পারেনা রাকিব আয়ানকে এতো ভয় পায় কেনো?রাকিব বলে উঠলো,

“স্যার এইগুলো শিবপুরের প্রজেক্টরের ফাইল।আপনি যেভাবে বলেছেন,সেভাবেই করেছি।ঠিক আছে কিনা চেক করে নিন”

“ইয়াহ.. আই সি”

আয়ান ফাইলগুলো দেখতে থাকে তখন জিহাদ আয়ানের কেবিনে নক করে।জিহাদ মাফিয়া জগতে আয়ানের ডান হাত বলা যায়।আয়ানের পর ওদের গ্যাং এর সবকিছু জিহাদই দেখে।জিহাদ আসলেই রাকিব বেড়িয়ে যায়।জিহাদের আয়ান সামনের চেয়ারে বসে বললো,
“বস,, খবর আছে”

আয়ান ফাইল দেখতে দেখতে বলে বললো, “কি খবর?”

“আগামী 23 তারিখ এমপি মহিদুল হক আজাদের প্রতিমন্ত্রীর সাথে একটা মিটিং আছে”

“হুম জানি।শিবপুরের প্রজেক্টটা নিয়ে।আমি মহিদুল হক আজাদকে সফল হতে দিবো না”

জিহাদ হেসে বললো, “ওই এমপি আপনার সাথে পারবে না স্যার।যেখানে নিজের মেয়েকেই বাঁচাতে পারলো না সেখানে..”

জিহাদের কথা শুনে আয়ান হাসে।তারপর বললো,
“তুমি যাও আমি এ ব্যাপারটা দেখছি।আর হ্যাঁ কিছু যে শিশুপাচারের কাজটা বেড়েছে তার পিছনে কোন গ্যাং আছে খুঁজে বের করো”

“আমি কাজ শুরু করে দিয়েছি বস!আসছি”

তারপর জিহান কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আয়ান কিছু একটা ভেবে মিস্টার আজাদ কে কল দে।আয়ান ফোন কানে ধরে চেয়ারে বসে দুলছে।আর আঙ্গুল দিয়ে টেবিলে ঠকঠক আওয়াজ করছে।কিছুক্ষণ পর মিস্টার আজাদের পিএ রিসিভ করে বললো,
“হ্যালো,, কে বলছেন?”

“আয়ান খান!মিস্টার আজাদকে ফোনটা দাও”

মিস্টার আজাদের পিএ আয়ানকে চিনে।আর এটাও জানে আয়ান এখন ফারিহার হাসবেন্ড।মিস্টার আজাদকে ফোন দিলে মিস্টার আজাদ বলে উঠলো, “হ্যালো কে?”

“ওহো.. শ্বশুরমশাই আমাকে চিনলেন না?”

ফোনের উপারের কথা শুনে মিস্টার আজাদ বুঝতে পারে এটা আয়ান।উনি একটু রেগে সুরে বললো,
“আয়ান!আমাকে কেনো কল করেছো?”

“আরে রিল্যাক্স রিল্যাক্স! জামাই কি তাঁর শ্বশুর মশাই কে কল দিতে পারে না?”

“খবরদার আমাকে শ্বশুরমশাই বলবেনা”

আয়ান হেসে বললো, “আমি যতদূর জানি, ফারিহা আপনার মেয়ে আর ফারিহা এখন তো আমার বউ। তাহলে আপনি আমার শশুরমশাই”

“তোমাকে তো আমি..”

আয়ান কৌতুকের সুরে বলে উঠলো, “কি শ্বশুর মশাই?”

আয়ানের কথা শুনে মিস্টার আজাদের অনেক রাগ উঠে।কিন্তু এখন রেগে গেলে চলবেনা।শত হলেও ফারিহা এখন আয়ানের কাছে আছে। তাই আয়ানের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। মিস্টার আজাদ শান্তকণ্ঠে বললো,
“কেনো কল করেছো?”

“এইতো আপনার খবরা খবর নিতে”

“তোমাকে আমার খবরা খবর নিতে হবে না।রাখছি”

“ওয়েট ওয়েট শ্বশুরমশাই।আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আপনি ভালোই আছেন।কিন্তু এদিকে আপনার মেয়ে যে কষ্টে আছে!”

আয়ানের কথা শুনে মিস্টার আজাদ ভ্রু কুঁচকে ফেলেন।ফারিহা কষ্টে আছে? কিন্তু রেস্টুরেন্টে তো ফারিহাকে দেখে এরকম কিছু মনে হলো না। আর তাছাড়া মিস্টার আজাদ শিহাব,নওশীনের থেকেও ফারিহার খবর নিয়েছিলো।ওরা তো কিছু বললো না। তবুও মিস্টার আজাদ একটু রেগে বললো,

“আমার মেয়ে যদি কিছু হয় তোকে আমি জীবিত রাখবো না আয়ান”

আয়ান মিস্টার আজাদের কথা শুনে জোরে হাসে। মিস্টার আজাদ আবার বললো,
“তোর সাথে আমার কিসের শত্রুতা যে তুই তার জন্য ফারিহাকে কষ্ট দিচ্ছিস?”

আয়ান কিছু বলে না আবার ঠোঁট কামড়ে হাসে। মিস্টার আজাদ আবার বললো, “আমি তোর কী ক্ষতি করেছি?”

“জানেন না কি করেছেন?”

“জানিনা বলেই তো জিজ্ঞেস করছি। তুই কেনো আমার মেয়েটার সাথে এরকম করছিস?”

আয়ান বাঁকা হেসে বললো,” সেটা না হয় সময় হলে জানতে পারবেন। মিস্টার আজাদ বলে,

“তুই ফারিহাকে বিয়ে করেছিস ঠিক আছে।কিন্তু ফারিয়া এখন যেভাবে আছে সেরকমই যেনো থাকে।ওর কোনো কষ্ট হলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।আমার মেয়ের জন্য আমি সব করতে পারি”

আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো, “এখন যেভাবে আছে সেভাবে থাকে মানে?এখন কি সুখে আছে নাকি?”

“সুখে নয় কিন্তু ফারিহা বলেছে তোর বাড়িতে নাকি ওর কোনো সমস্যা হয় না।তুই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করিস।তাই আমি ফারিহাকে তোর সাথে থাকতে দিয়েছি,না হলে কবেই নিয়ে আসতাম”

মিস্টার আজাদের কথা শুনে আয়ান চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে।আয়ান মিস্টার আজাদ কে কল দিয়েছে এটা বুঝাতে যে,ফারিহা কষ্টে আছে।যেন মিস্টার আজাদও কষ্ট পায়।কিন্তু ফারিহা মিস্টার আজাদকে বলেছে ও ভালোই আছে! আয়ানের প্রচুর রাগ ওঠে। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দে। মিস্টার আজাদের সাথে কথা বলা শেষে আয়ানের বডিগার্ড কল দিয়ে বলে যে,মিস্টার আজাদ আজকে ঠিকানায় গিয়েছিলো।
আয়ান রাগে হাত মুঠো করে বললো,
“কাজটা তুমি ঠিক করলে না ফারিহা!একে তো আমার কথা অমান্য করেছো আবার তোমার বাবাকে ভালো রাখার চেষ্টা করছো? এবার দেখো আমি কি করি..!”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here