স্রোতের টানে পর্ব-২৩

0
3445

#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:২৩

ফারিহা আর আয়ান গাড়িতে বসে আছে।আয়ান ড্রাইভ করছে আর ফারিহা বাইরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দুপুরে লাঞ্চের পর মিস্টার আজাদ চলে গেলেও আয়ান থেকে যায়।ফারিহা অনেকবার বলেছিলে অফিসে অনেক কাজ থাকতে পারে আয়ান যেন চলে যায় কিন্তু আয়ান যায়নি।বলেছে একবারে ফারিহাকে নিয়ে বাসায় ফিরবে।
আয়ান ড্রাইভ করতে করতে বললো, “নওশীন আর শিহাবের মধ্যে কি কিছু চলছে নাকি?”

আয়ানের কথায় ফারিহা বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো। তারপর একটু হেসে বললো, “না এখনো কিছু হয়নি।দুটোই তো বোকা কেউ কারো মনের কথা প্রকাশ করতে চায় না”

“আমার মনে হয় ওরা ও হয়তো নিজের মনের কথা বুঝতে পারছে না”

“তা আপনার হঠাৎ এটা মনে হলো কেন?”

“না মানে আজকে দেখলাম আর কি!শিহাব নওশীনকে খাইয়ে দিচ্ছিল।তারপর নওশীন কি যেন একটা করতে যাচ্ছিল শিহাব ধমকিয়ে বসিয়ে রেখেছিল,অনেক কেয়ার করে।নওশীন অসুস্থ নাকি?”

“হুম একটু অসুস্থ।আর ঠিকই বলেছেন,শিহাব নওশীনকে অনেক কেয়ার করে।আর নওশীনও শিহাব কোন মেয়ের সাথে কথা বললে রেগে যায় তার মানে তো বুঝতেই পারছেন”

আয়ান অবাক হয়ে বললো, “কিন্তু প্রথম প্রথম ওরা যেভাবে ঝগড়া করত ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে আমি তো ভাবতেই পারছিনা।প্রথম প্রথম তো আমি ভাবতাম এত ঝগড়া করে কেউ কি করে বন্ধু হয়?”

আয়ানের কথায় ফারিহা হাসলো।তারপর বললো, “ভালোবাসার মধ্যে এরকম দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া থাকেই এটা স্বাভাবিক।শুধু ওরা দুজন বুঝলেই হলো।কবে যে বুঝবে!”

“তুমি কিছু করতে পারো তো”

“আমি আর কি করবো?আমি তো ওদের কে বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু ওরা বুঝতে চায় না। তবে আমার মনে হয় ওদেরকে কিছুদিন সময় দিলে ওরা ঠিকই বুঝতে পারবে”

আয়ান সেভাবে ড্রাইভ করতে করতে বললো,”হয়তো”

বাসায় ফিরে আয়ার আর ফারিহা ফ্রেশ হলো তারপর ফারিহা ডিনার তৈরি করতে নিচে চলে গেলো।আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফারিহাকে রুমে দেখতে না পেয়ে টি-শার্ট গায়ে গলিয়ে ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে নিচে চলে আসলো।
নিচে এসে দেখে ফারিহা শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে রান্না করছে আর সার্ভেন্টরা ফারিহাকে সাহায্য করছে।বিয়ের পর থেকে দুপুরে তো ওরা দুজনেই বাইরে খায়।আর রাতের রান্না ফারিহা করে।
আয়ান একবার ফারিহার দিকে তাকিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ল্যাপটপ অন করলো।আয়ান ল্যাপটপে কাজ করছে আর ফাঁকে ফাঁকে ফারিহাকে দেখছে।রান্না শেষে ফারিহা ফ্রেশ হয়ে আয়ানের কাছে আসলো।তারপর বললো, “এখন ডিনার করবেন?”

আয়ান ঘড়ি দেখে বললো, “না একটু পর”

“আচ্ছা আমি তাহলে রুমে যাচ্ছি।একটুও পড়া বাকি আছে”

আয়ান কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ালো।ফারিহা ওপরে রুমে চলে গেল।
অনেকক্ষণ পরা আয়ান ওর সব কাজ কমপ্লিট করে রুমে গেলো।রুমে এসে দেখলো ফারিহা একটা টুলের উপর উঠে উপরের কাবার্ড থেকে কি জানি নামানোর চেষ্টা করছে।লাল সিল্কের শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে রাখা আর হাত উঁচু করে কিছু খোঁজার কারণে ফারিহার পেটের দিক থেকে শাড়িটা সরে গিয়ে পেট উন্মুক্ত।চিকন ছিমছাম শরীরে লাল শাড়ির সাথে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে।আয়ানের নিজেকে সামলানো কষ্ট হয়ে পড়ছে।আয়ান দিনদিন ফারিহার শরীরের প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।আয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বেডের উপর ল্যাপটপটা রেখে তারপর ফারিহার কাছে গেল।

আয়ান ফারিহার পেছনে দাঁড়িয়ে ফারিহার উন্মুক্ত কোমর স্লাইট করতে করতে পেটের উপর হাত রাখলো।কারোর স্পর্শে ফারিহা কেঁপে উঠলো।যদিও ফারিহা পেছনে না ফিরেই বুঝতে পেরেছে যে এটা আয়ান।আয়ান মাঝে মাঝেই এরকম করে ওকে যখন তখন জড়িয়ে ধরে।কিন্তু ফারিহা এসবে এখনো অভ্যস্ত হতে পারেনি।তাই আয়ান যখনি কাছে আসে ফারিহা অস্বস্তিত হয়, ভেতর থেকে কি যেন একটা বাধা দেয়।কিন্তু আয়ান ফারিহাকে এমন ভাবে কাছে টেনে নে যে ফারিহা বাঁধা দিতে পারেনা।
ফারিহা টুলের ওপরে উঠে দাঁড়ানোর কারনে আয়ানের মুখের কাছে ফারিহার পেটটা দেখা যাচ্ছে।আয়ান ফারিহা পেট থেকে বাকি শাড়ির অংশটুকু সরিয়ে ফারিহার পেটে মুখ গুঁজে দিলো।ফারিহার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল।কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠছে।আয়ান ফারিহার কোমরে হাত রেখে পেটে,নাভিতে কিস করছে।ফারিহা আয়ানের চুল খামচে ধরলল।

প্রায় অনেকক্ষণ পর আয়ান ফারিহাকে ছেড়ে দিলো।তারপর ফারিহাকে একপ্রকার কোলে করে টুল থেকে নামালো।আয়ান ফারিহার কোমর জড়িয়ে ধরে সামনের চুলগুলো পেছনে পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,

“ওখানে উঠেছ কেনো? যদি পড়ে যেতে?”

“পড়বো না।আর বেশি উঁচুতে উঠিনি তো পড়লেও বেশি ব্যথা পাবো না”

“বেশি হোক বা কম তুমি ব্যথা পাবে কেনো? তুমি জাননা তুমি ব্যাথা পেলে আমার কষ্ট হয়”

ফারিহা অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “সত্যি?”

আয়ান ফারিহার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “কোনো সন্দেহ আছে?”

আয়ানের কথায় ফারিহা অনেক খুশি হলো।ফারিহা বুঝতেও পারলো না যে আয়ান নির্ভুলভাবে নাটক করছে।
তবে হ্যাঁ এটা নাটক না কি সত্যিই সেটাই আয়ান ও হয়তো জানে না!আয়ান এখন আর শুধু ফারিহাতে ডুবে আছে।
আয়ান ফারিহার নাকে নাক ঘসতে ঘসতে বললো, “তুমি দিনদিন অনেক হট হচ্ছো।নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে”

ফারিহা লজ্জা মাখা মুখে হেঁসে আয়ানের বুকে মুখ গুঁজে বললো, “যাহ ফাজিল”

“হাহাহাহা…” আয়ান একটু জোরে হেসে দিলো। তারপর ফারিহাকে ছেড়ে বললো, “ওখানে কেন উঠেছো?”

ফারিহা একটু ভীতু চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “না আসলে কাবার্ডের উপর পুড়নো খাতাগুলো রেখেছিলাম তাই…”

আয়ান অবাক হয়ে বললো, “ওখানে কেন খাতা রাখতে গেলে?”

“আরে কাবার্ডের ভেতরে রাখেনি তো।একদম উপরে আর খাতা গুলো পূরণ হলেও অনেক প্রয়োজনীয় ছিল তাই ফেলে দেই নি”

“তা আমাকে বললেই তো পারতে।না হয় কোন সার্ভেন্টকে বলতে। তুমি ওখানে উঠতে গেলে কেনো? যদি ব্যথা পেতে!সরো আমি নামিয়ে দিচ্ছি”

আয়াত ২ মিনিটের মধ্যেই কাবার্ডের উপর থেকে ফারিহার প্রয়োজনীয় খাতাগুলো নামিয়ে দিল। ফারিহা মিষ্টি হেসে আয়ানকে ধন্যবাদ জানালো।আয়ান ফারিহার ধন্যবাদ শুনে হেসে বললো,
“না না শুধু ধন্যবাদে হবেনা”

ফারিহার চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“তাহলে আর কি লাগবে?”

আয়ান ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বুঝালো আয়ানকে কিস করতে।যদিও আয়ান আর ফারিহার সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক তবুও ফারিহা আয়ানকে কিস করতে অস্বস্তিবোধ করে। তাই লজ্জা মাখা মুখে বললো,

“না না।এখন না প্লিজজ..

আয়ান বাচ্চাদের মত বললো, “না না আমারতো এখনি চাই”

আয়ান ওর ঠোঁট দুটো ফারিহা সামনে এগিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে নিলো।ফারিহা খাতাগুলো টেবিলের উপর রেখে একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে ঠোট কামড়ে হাসলো।তারপর আয়ানের গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে দৌড় দিলো।
গালে ফারিহার ছোঁয়া পেতেই আয়ান চোখ খুললো। চোখ খুলে দেখলো ফারিহা দৌড়ে চলে যাচ্ছে। ফারিহা দৌড়ে যেতে যেতে বললো,

“তারাতারি ডিনার করতে আসেন।না হলে আমি সব খেয়ে ফেলবো কিন্তু”

আয়ান ফারিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে হাসলো।
অনেকক্ষণ পর ওরা দুজন ডিনার করে ফারিহা সব গুছিয়ে রুমে আসলো।এসে দেখলো আয়ান ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে।তাই ফারিহা বেডে গিয়ে বসলো।আয়ান হয়তো বিজনেসের কোন ব্যাপারে কথা বলছে তাই ফারিহা সেদিকে পাত্তা দিলো না।
কিছুক্ষণ পর ফারিহা কাবার্ড খুললো আগামীকাল কি জামা পড়ে যাবে সেটা বের করে রাখার জন্য।কাবার্ডের একপাশে আয়ানের জামা কাপড় অন্যপাশে ফারিহার জামা কাপড়।ফারিহার জামা কাপড় গুলো খুব সুন্দর করে গোছানো। কিন্তু আয়ানের গুলো একটু অগোছালো।অগোছালো মানে এই না যে ফারিহা আয়ানের জামা কাপড় গুছায় না।ফারিহা প্রতিদিন আয়ানের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখে। কিন্তু আয়ান আবার এলোমেলো করে ফেলে,ফারিহা এতে ভীষণ বিরক্তি।

ফারিহা ওর জামাটা নামিয়ে রেখে আয়ানের জামাগুলো গুছিয়ে দিতে লাগলো।ফারিহা আয়ানের একটা শার্ট হাতে নিতে নিচে কি যেন পড়লো। ফারিহা নিচে দিকে তাকিয়ে দেখে ওর পায়ের কাছে একটা গান পড়ে আছে।গানটা হয়তো কাপড়গুলোর ভেতরে ছিল।ফারিহা কাঁপা কাঁপা হাতে নীচু হয়ে গানটা হাতে তুলে নিলো।
যদিও ফারিহা এসবে খুব ভয় পায় কিন্তু আজকে খুব সাহস নিয়ে গানটা দেখছে।আয়ানের এত ভালোবাসা,কেয়ার এর মধ্যে ফারিহা ভুলেই গিয়েছিলে আয়ান একটা মাফিয়া। হয়তো এ পর্যন্ত কত লোক কে খুন করেছে!কিন্তু ফারিহা কি করবে ভালোবাসা তো আর এসব দেখে হয় না।ফারিহা তো আয়ানকে ভালবেসে ফেলেছে। এখন চাইলেও আয়ানকে ছেড়ে যেতে পারবে না।কিন্তু হ্যাঁ ফারিহা ভেবে নিয়েছে আয়ানকে এসব কাজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে।ফারিহা কাঁপা কাঁপা হাতে গানটা দেখছে তখন আয়ান ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো।এসে দেখে ফারিহার এক হাতে ওর শার্টটা আর এক হাতে গান।
আয়ান এক প্রকার দৌড়ে এসে ফারিহা থেকে গানটা ছিনিয়ে নিলো।তারপর বললো,

“তুমি এসব কেন ধরেছো?”

ফারিহা আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি এসব কাজ ছাড়তে পারেন না?কি মজা পান এসব করে?”

“সেটা তোমার জানতে হবে না”

“আপনি কি নরমাল ভাবে জীবন যাপন করতে চান না?এসব খুনখারাপি না করলেই নয়?”

আয়ান গান টা কাবার্ডে রাখতে রাখতে বললো,
“আমি এটা নিয়ে তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাই না”

“কিন্তু কেনো? আমি আপনার স্ত্রী।আমার এসব জানার অধিকার আছে।আপনার এই সব কাজ আমার ভালো লাগেনা”

আয়ান শান্তকণ্ঠে বললো, “ফারিহা দেখো আমি চাই না এখন এটা নিয়ে তোমার সাথে ঝগড়া করতে।তাই প্লিজ আমাকে কিছু বলো না।আর তুমি এটা কেন ধরেছো?তুমি তো বন্দুক চালাতে পারো না।যদি হঠাৎ লেগে যেতো?”

ফারিহা তাচ্ছিল্য হেসে বললো, “কি আর হতো!মরে যেতাম।যেখানে মৃত্যুর সরঞ্জাম আমার রুমে থাকে সেখানে মৃত্যুকে ভয় পাওয়া টা তো বোকামি”

আয়ান ফারিহাকে একটা ধমক দিয়ে বললো, “চুপ আর কখনো এসব কথা বলে খুব খারাপ হবে কিন্তু। চলো ঘুমাবে চলো…”

আয়ান ফারিহাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে বেডে বসালো।তারপর রুমের লাইট অফ করে এসে বেডে শুয়ে পড়লো।তারপর ফারিহাকে টেনে ওর বুকের উপর নিয়ে নিলো।আয়ান ফারিহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।ফারিহা আয়ানের বুকের সাথে মিশে আছে।যদিও গানটা দেখে ফারিহার খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু আয়ানের বুক এসে এখন সব কষ্ট নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল।তবে ফারিহা চিন্তা করছে যে কিভাবে আয়ানকে এই পথ থেকে সরানো যায়।কিন্তু ফারিহা জানে না যে ফারিহা এটা কখনো করতে পারবে না। কারণ ফারিহা তো আয়ানের বিশাল খেলার একটা গুটি মাত্র!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here