#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:২৫
আয়ান ফারিহার চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।তারপর বললো,
“ফারিহা তোমার চোখ এতো লাল হয়ে আছে কেন?কান্না করছো নাকি??”
ফারিহা নিজেকে স্বাভাবিক করে জোরপূর্বক হেসে বললো, “না না কাঁদছি না। চোখে কিছু পড়েছে হয়তো আসলে বাগানে ছিলাম তো তাই…”
“কিন্তু তাই বলে এভাবে লাল হবে?তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”
আয়ান অস্থিরভাবে ফারিহার কপালে, গলায় হাত রাখলো।ফারিহা অবাক হয়ে আয়ানের অস্থিরতার অভিনয় দেখছে।এই ছেলেটা কতো ভালো অভিনয় করতে পারে!
ফারিহা নিজের গলা থেকে আয়ানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“আমি ঠিক আছি।নাস্তা করবেন আসুন ”
এটা বলে ফারিহা হয়ে চলে গেল।আয়ান আর কিছু বললো না ফারিহার পিছু পিছু খাবার টেবিলে গেল।ফারিহা নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।ফারিহা এখন আয়ানকে জানতে দিতে চায় না যে ফারিহা সব সত্যি জেনে ফেলেছে।ফারিহা দেখতে চায় যে আয়ান কত দিন অভিনয় করতে পারে।তবে হ্যাঁ ফারিহা এটা সেভাবে ফেলেছে যে যাই হোক ও মিস্টার আজাদের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না।তাছাড়া এখন যদি ফারিহা এই বাড়ি থেকে চলে যায় তাহলে হিতে বিপরীত হবে।
কোন কাজ করার আগে ভেবে চিন্তে করা উচিত।ফারিহা তখম ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলো।এখন আয়ানকে কিছু জানতে দিবেনা। আয়ানের সাথে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ব্যবহার করবে। কষ্ট হবে তবে ফারিহাকে পারতেই হবে।
ফারিহা আয়ানের সাথে বসে নাস্তা কমপ্লিট করলো।
.
ফারিহা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে গিয়ে দেখল নওশীন আর শিহাব আবার ঝগড়া করছে।ফারিহা আজকে ওদের ঝগড়া ভাঙ্গানোর চেষ্টা করল না।চুপচাপ গিয়ে ওদের পাশে বসে পড়লো।নওশীন আর শিহাব কিছুক্ষণ ঝগড়া করার পর ফারিহার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।কারণ ফারিহা কখনো পরা ঝগড়া করার সময় চুপ থাকে না।ফারিহা চুপ থাকার মেয়েই নয়।তাহলে আজকে কি হলো?
নওশীন ফারিহার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“ফারু কী হয়েছে? কথা বলছিস না কেনো?আজকে এতো চুপচাপ যে?”
নওশীনের ধাক্কায় ফারিহার হুঁশ ফিরলো।এতক্ষণ ও কি সব আকাশ-পাতাল ভাবছিলো। ফারিহা নওশীনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, “না না কিছু হয়নি।তোরা আজকে আবার ঝগড়া করছিস?”
শিহাব সন্দেহ চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোর মন খারাপ?”
নওশীন আর শিহাবের সাথে থাকলে ফারিহা কখনো মন খারাপ করে থাকতে পারে না।ওরা ফারিহার মন খারাপ দেখলেই মন ভালো করার চেষ্টা করবে আর হাজারটা প্রশ্ন করে।তাই ফারিহা জোরপূর্বক হেসে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।তারপর হেসে বললো,
“আমার মন খারাপ না। আমি একদম ঠিক আছি”
নওশীন ফারিজার কাঁধে হাত রেখে বললো, “তোকে অনেকদিন ধরে একটা কথা বলবো ভাবছি”
ফারিহা নওশীনের দিকে তাকিয়ে বললো, “এত ইতস্ত করছিস কেন! বল..”
“আচ্ছা তোদের সম্পর্ক কি ঠিক হয়ে গিয়েছে? মানে আয়ান ভাইয়া তো তোকে এখন তোর বাপির বাড়িতে যেতে দে।আবার এখন তোকে মন খারাপ করে থাকতে দেখি না। তাহলে তাদের।কি সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে?”
নওশীনের কথা শুনতে ফারিহা তাচ্ছিল্য হাসলো
ওদের নাকি সব ঠিক হয়ে গিয়েছে?ওদের তো সব শেষ হয়ে গেল।ফারিহা খুব করে চাইছিলো নওশীনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে, সব কিছু বলতে কিন্তু এখন এটা করা যাবে না।তাই ফারিহা বুকে পাথর চাপা দিয়ে কান্না আটকিয়ে নওশীনকে হাসিমুখে বললো,
“হ্যাঁ হ্যাঁ সব ঠিক হয়ে গিয়েছে”
নওশিন আর শিহাব হেসে দুজন দুদিকে পা ফারিহাকে জরিয়ে ধরলো।আর ফারিনা দুই হাত দিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।
আজকে মিস্টার আজাদের সাথে ফোনে কথা বলতে গিয়ে ফারিহার ভেতর থেকে কান্না আসছিলো। কিন্তু ফারিহা ওড়না দিয়ে মুখ চেপে কান্না আটকে রাখে।ফারিহা শুধু ভাবছে ওর জীবনটা এরকম না হলেও পারতো।বাপির সাথে তো কত ভালো ছিল।তারপর আয়ান ওর জীবনে এসে সব এলোমেলো করে দিলো।
ফারিহার এখন আসল লক্ষ্য আয়ান মিস্টার আজাদের থেকে কি কারণে প্রতিশোধ নিতে চায় সেটা জানা।
_____________
রাতে আয়ান আবার ফারিহার কাছে আসলো।আজকে আয়ানের ছোঁয়ায় ফারিহা গা জ্বলছে।কিন্তু ফারিহা বাধা দিতে পারছেনা।কারণ এখন বাধা দিলে আয়ান সন্দেহ করবে।ফারিহা ভেতর থেকে একদম ভেঙ্গে গুড়িয়ে গিয়েছে।নিজের ভালোবাসার মানুষ মিথ্যে অভিনয়,মিথ্যে ভালোবাসা,মিথ্যে আদর করা এতদিন ফারিহা এগুলোতেই সুখ অনুভব করতো।কিন্তু আজকে যখন জানলো সব মিথ্যে তখন ফারিহার মনে অবস্থা একদম করুন।ফারিহা যে এখনও এসব সহ্য করছে সেটাই অনেক!
আয়ান কাছে আসলে ফারিহা ভাবতেই পারে না যেগুলো মিথ্যা ভালোবাসা।ফারিহা ভাবছে সকালে যা শুনেছে সেগুলো যদি মিথ্যে হতো!এখনকার মুহূর্তটা যদি সত্যি হতো।এসব ভাবার কারণে ফারিহা নিজের উপর নিজে তাচ্ছিল্য হাসলো।
আয়ান ফারিহা বুক থেকে মুখ তুলে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো, “আজকে তোমার আচরণ কেমন অদ্ভুত লাগছে।কি হয়েছে?”
আয়ানের প্রশ্নে ফারিহা হকচকিয়ে গেলো।তারপর ঢুক গিলে বললো, “কি হবে আবার?কিছু হয়নি”
“না আজকে সকাল থেকে দেখছি তুমি কেমন অন্যরকম বিহেভ করছো।আমি অফিস থেকে আসার পরেও আমার কাছে আসোনি।সব সময় দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছো।কেনো??”
ফারিহা আমতা আমতা করে বললো,
“কই্ কই দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছি?আমিতো কাজ করছিলাম”
“সেটা তো প্রতিদিনই করো কিন্তু আজকে তোমার আচরন কেমন অন্যরকম লাগছে।তোমার কি মন খারাপ?আমার উপর কিছু নিয়ে অভিমান করেছো?”
ফারিহা জোর পূর্বক হেসে বললো, “না না আপনার উপর কি অভিমান করবো?আপনি ভুল ভাবছেন আমার মন খারাপ না”
আয়ান ফারিহার গাল হাত রেখে অনেকক্ষণ ফারিহার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ফারিহা আয়ানের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না কারণ বিশ্বাসঘাতক টাকে ফারিহা ঘৃণা করে।ফারিহা ভাবছে কি করে আয়ানের সত্যিটা জানা যায়।
আর এদিকে আয়ান কিছুক্ষণ ফারিহার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ফারিহার বুকে মুখ গুজলো।আয়ান ফারিহার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে নিজের ছোঁয়া দিচ্ছে আর ফারিহা মুখ ছেপে সব সহ্য করে যাচ্ছে।ফারিহার নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।কিন্তু ফারিহা যে নিরুপায়!
___________
পরদিন ভার্সিটি শেষে ফারিহা নওশীন আর শিহাবকে রেস্টুরেন্টে পাঠিয়ে দিলো।ফারিহা ওদের বলেছে ওর শরীর খারাপ লাগছে আজকে রেস্টুরেন্টে যাবে না।এটা শুনে নওশীন আর শিহাব অস্থির হয়ে পড়েছিলো কিন্তু ফারিহা ওদেরকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিল।
আসলে ফারিহা আজকে একটু একা থাকতে চায়।একটু নিজেকে সময় দিতে চায়।সব সময় তো বন্ধু,ভার্সিটি, রেস্টুরেন্ট আর আয়ানকে সময় দে।আজকে একটু নিজেকে সময় দিতে চায়।নিজের সাথে কথা বলতে চায়,গল্প করতে চায়।
ফারিহা আজকের বডিগার্ড দের সাথে যাবে না তাই ভার্সিটির পেছনের গেইট দিয়ে লুকিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো।ফারিহা জানে এর জন্য হয়তো আয়ানের অনেক বকা শুনতে হবে কিন্তু ফারিহা এখন আর এসব ভয় পায় না।ফারিহয় একা একা হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূরে একটা পার্কে গিয়ে বসলো।
ফারিহা চুপচাপ বসে বসে পার্কে থাকা কাপলদের দেখছে।ওদের কত ভালোবাসা!একজন আরেকজনকে বাদাম খাইয়ে দিচ্ছে।কেউ কেউ হাতে হাত রেখে গল্প করছে।ফারিহার এসব দেখে আয়ানের কথা মনে হলো,ফারিহাও আয়ানের সাথে এরকম গল্প করতো।আয়ানও ওকে খাইয়ে দিতো
ফারিহা কিছুক্ষণ বসে থাকার পর একটা লোক হন্তদন্ত করে এসে ফারিহাকে বললো,
“দিদি দিদি আমাকে একটু সাহায্য করুন।আমার মা খুব অসুস্থ”
লোকটা এভাবে হঠাৎ আসায় ফারিহা হকচকিয়ে গেলো।তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে?”
“আমার মা!খুব অসুস্থ এখন হসপিটালে নিতে হবে। আপনি একটু প্লিজ আসুন, কেউ আমাকে সাহায্য করতে চাইছে না”
ফারিহার অবুঝমন ভাবলো লোকটাকে সাহায্য করা উচিত।লোকটা কেমন করুন চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিহা আশেপাশে তাকিয়ে বললো “কোথায় আপনার মা?”
লোকটা হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো, “ওই যে…একটু দূরে।প্লিজ আসুন”
ফারিহা ভাবলো লোকটার হয়তো টাকা নেই।গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারছে না তাই সাহায্য চাইছে।ফারিহার পার্সে টাকা আছে তাই ফারিহা লোকটার সাথে গেল।
কিছুদুর যাওয়ার পর কাউকে দেখতে না পেয়ে ফারিহা লোকটাকে বললো,
“আপনার মা কোথায়?
“আছে।ওইযে আর একটু দূরে। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন..”
ফারিহার এবার কেনো যেনো লোকটাকে সন্দেহ হচ্ছে।লোকটা এভাবে একা অসুস্থ মাকে ফেলে এতদূর আসলো!একটা সাহায্যের জন্য?কাছ থেকে তো কাউকে সাহায্য করতে বলতে পারতো।
তাছাড়া ফারিহা একটা গলির ভেতরে যাচ্ছে
জায়গাটা মনে হয় আস্তে আস্তে নিরব হয়ে আসছে।ফারিহা ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর বললো,
“আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমি যাবো না। আপনার তো সাহায্যের প্রয়োজন টাকা লাগবে? আমি দেবো কিন্তু আমার সাথে আমি যেতে পারবো না”
“দিদি প্লিজ আসেন।আপনাকে যেতেই হবে”
ফারিহা অবাক হয়ে বললো, “আমাকে যেতেই হবে মানে?আপনি আমাকে চিনেন??”
“হ্যাঁ আমি তোকে চিনি।চিনি বলেই তো এখানে এনেছি”
“কি সব কথা বলছেন আপনি?”
লোকটা ওর পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে ফারিহার দিকে এগোলো।ফারিহ এবার একটু ভয় পেয়ে গেলো।লোকটার মুখে শয়তানী হাসি।লোকটা কাছে আসছল দেখে ফারিহা পেছন ফিরে দৌড় দিলো।
কিন্তু সামনে আর একটা গাড়ী এসে থামলো।গাড়ি থেকে আরো কয়েকটা ছেলে নামলো। যেই লোকটা ফারিহাকে এখানে এনেছিল সেই লোকটা পেছন থেকে এসে ফারিহার মুখে ক্লোরোফিল মাখা রুমাল চেপে ধরলো।আর মূহুর্তের মধ্যেই ফারিহা অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ল।ফারিহা চোখ বুঝার আগে সামনে কয়েকটা গুন্ডা টাইপের লোক দেখে ছিল ওদের মুখে শয়তানী হাসি লেগে আছে!
চলবে…