#স্রোতের_টানে
লেখিকা: #Tarin_Niti
পর্ব:২৭
কিছুক্ষণ পর মিস্টার আজাদ এসে দেখলো আয়ান একহাত কোমরে আর এক হাত মাথায় রেখে চুল টানছে আর ড্রইংরুমে পায়চারি করছে।
মিস্টার আজাদ নিচে এসে একটু রাগের স্বরে বললো,
“তুমি আবার বাড়িতে কেনো এসেছ?আমার মেয়ে যখন থাকে তখন আসো তাই এলাও করি।কিন্তু এখন কেন এসেছো?”
আয়ান মিস্টার আজাদকে দেখে রেগে গেল কিন্তু তবুও শান্ত কণ্ঠে বললো, “ফারিহা কোথায়?”
মিস্টার আজাদ অবাক হয়ে বললো, “ফারিহা কোথায় মানে? আমি কিভাবে জানবো ফারিহা কোথায়!”
“না জানার নাটক করবেন না।বলুন ফারিহাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন?”
“আমি কেন ওকে লুকিয়ে রাখবো?আমার মেয়ে কোথায়?”
“ফারিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না”
মিস্টার আজাদ অবাক হয়ে বললো, “পাওয়া যাচ্ছে না মানে?আমার মেয়ের কি হয়েছে?কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?তুমি আমাকে এখন বললে”
আয়ান শান্ত চোখে মিস্টার আজাদের দিকে তাকিয়ে বললো, “প্লিজ বলুন ফারিহা কোথায়?আমার খুব চিন্তা হচ্ছে”
মিস্টার আজাদ অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকালো।মিস্টার আজাদ সবসময় আয়ানের চোখে রাগ দেখেছিল।কিন্তু এই আয়ানের চোখে অসহায়ত্ব দেখলো।কিন্তু মিস্টার আজাদ সত্যি জানেনা ফারিহা কোথায় তাই বললো,
“আমার মেয়েকে লুকিয়ে রাখার মত কাপুরুষ আমি নই।ফারিহা কে যদি তোমার কাছ থেকে আনতে হয় তাহলে তোমার সামনে দিয়েই আনবো।এভাবে লুকিয়ে না।ফারিহা এ বাড়িতে আসেনি কিন্ত ও কোথায় গেল?”
আয়ান সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“আমি সব জায়গায় খুঁজেছি।ফারিহা কোথাও নেই”
আয়ান কিছু একটা ভেবে দৌড়ে ফারিহার রুমে চলে গেল।যদিও ওর মন বলছে ফারিহা এখানে নেই তবুও ফারিহার পুরু রুম খুঁজে দেখলো। কিন্তু ফারিহা কোথাও নেই।আয়ান ওয়াশরুম ব্যলকনি সব জায়গায় খুঁজে দেখলো কোথাও ফারিহা নেই।
এদিকে মিস্টার আজাদ জোরে জোরে হানিফ আহমেদ কে ডাকতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর হনুফা বেগম হন্তদন্ত করে এসে বললো, “স্যার উনি তো বাসায় নেই”
মিস্টার আজাদ রেগে গিয়ে বললো, “কোথায় গিয়েছে এখন?”
“জানিনা স্যার কিন্তু এখন তো বাসায় নেই”
মিস্টার আজাদ বিরক্ত মুখে বললো, “উফ কাজের সময় একে পাওয়া যায় না”
তারপর মিস্টার আজাদ ফোন বের করে হানিফ আহমেদ কে কল দিতে লাগল কিন্তু ফোন বন্ধ।মিস্টার আজাদ এবার প্রচুর বিরক্ত হলো।
আয়ান উপর থেকে নিচে এসে তাড়াতাড়ি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো তখন মিস্টার আজাদ পেছন থেকে আয়ানকে বললো,
“কোথায় যাচ্ছো?ওকে এখন কোথায় খুঁজবে?”
“আমি আমার বউকে ঠিক খুঁজে পাবো।আপনার এত চিন্তা করতে হবে না”
“তুমি কাকে রাগ দেখাচ্ছ হ্যাঁ? আমাকে??যেখানে আমার তোমার উপর রাগ দেখানোর কথা।তোমার কাছে থাকতে আমার মেয়েটা কিভাবে হারিয়ে যায়?”
আয়ান এখন মিস্টার আজাদের সাথে রাগারাগি করতে চায় না তাই শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমি ফারিহাকে খুঁজে আনবো আর আপনার যদি এতোই চিন্তা হয় তাহলে আপনিও খু্ঁজার চেষ্টা করুন”
ফারিহাকে খোঁজার জন্য আয়ান মিস্টার আজাদের বাড়ি থেকে সোজা ভার্সিটিতে আসলো।এসে সবার আগে বডিগার্ডদের অনেকক্ষণ বকাঝকা করল। এটা যদি ভার্সিটি না হতো তাহলে এখন সব কটাকে গুলি করে মেরে ফেলতো।সবাই আয়ানের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে।
আয়াম জিহাদের কাছে গিয়ে বললে,
“কোন খবর পেলে?”
জিহাদ ভয় পেয়ে বললো, “স্যার ম্যাডাম ভার্সিটির পেছনে গেইট দিয়ে বেরিয়েছে”
আয়না অবাক হয়ে জিহাদের দিকে তাকালে জিহাদ আয়ানের দিকে সিসিটিভি ফুটেজ টা এগিয়ে দিলো। আয়ান খুব মনোযোগ দিয়ে ফুটেজটা দেখলো তারপর জিহাদের দিকে তাকাতেই জিহাদ বললো,
“তারপর রাস্তার কোন ফুটেজ নেই।ম্যাডাম পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলে তা জানি না। তবে পাশে একটা পার্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ম্যাডামকে নাকি ওখানে দেখা গিয়েছিলো”
আয়ান কি যেন ভাবছে তখন জিহাদ আবার বললো,
“স্যার ম্যাডাম যদি নিজে পালিয়ে যেতে চাইতো তাহলে কিন্তু পার্কে বসে থাকতো না।আমার মনে হয় ম্যাডামের কোনো বিপদ হয়েছে”
আয়ান রেগে বললো, “সেটা বুঝতে পারছ তাহলে ওকে খুঁজতে পারছনা কেনো??”
জিহাদ মাথা নিচু করে ফেললো। আয়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে চুল টানতে লাগলো।ওর নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। আয়ান এত বড় মাফিয়া হওয়া সত্ত্বে কত মানুষকে মেরেছে কিন্তু আজকে নিজের আপন জনকে হারিয়ে কত কষ্ট হচ্ছে।আয়ান শুধু ভাবছে ফারিহার কি হলো!আচ্ছা আয়ানের কোন শত্রু ফারিহাকে কিডন্যাপ করল না তো?আইয়ান বডিগার্ডের দিকে তাকিয়ে রাগী চোখে বললো,
“ফারিহার যদি না পাই তোদের একটাকেও ছাড়বো না।ফারিহার কিছু হলে তোদের সবকটা জীবনে আজকে শেষ দিন মনে রাখিস”
একটা বডিগার্ড সাহস করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, “স্যার আমরা তো ম্যাডামের উপর নজর রাখছিলাম।কিন্তু ম্যাডাম তো পিছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেল”
আয়ান জোরে একটা ধমল দিয়ে বডিগার্ড টাকে বললো, “চুপ! কাজের কাজ তো করতে পারিস আবার মুখে মুখে কথা”
জিহাদ ইশারায় বডিগার্ড টাকে চুপ করতে বললো। বডিগার্ড টাও প্রাণের ভয়ে চুপ হয়ে গেল।আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে যেতে যেতে বললো, “চলো রেস্টুরেন্টে যাবো”
“স্যার আমরা খোঁজ নিয়েছি।ম্যাডাম রেস্টুরেন্টে নেই”
“তবু আমি রেস্টুরেন্টে যাবো।শিহাব আর নওশীন হয়তো কিছু জানতে পারে”
বডিগার্ডরা আর জিহাদ আয়ানের পিছু পিছু গেল। আয়ান রেস্টুরেন্টে এসে দেখলো শিহাবকে বসে বসে কি যেন কাজ করছে আর নওশীনকে কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আয়ান সোজা ওদের কাছে গেলো
তারপর বললো, “ফারিহা কোথায়?”
এভাবে আয়ানের হঠাৎ আওয়াজ আসাতে শিহাব,নওশীন দুজনেই চমকে উঠলো।তারপর অবাক হয়ে বললো, “ফারিহা কোথায় মানে?”
আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “মানে জিজ্ঞেস করছি ফারিহা কোথায়?তোমাদের সাথে না ক্লাস করেছিল তারপর কোথায় গিয়েছে?”
নওশীন বললো, “ফারিহা তো বলছে ওর শরীর ভালো লাগছে না বাসায় চলে যাবে।তাই আমরা রেস্টুরেন্টে চলে এসেছি।কেনো,,ফারিহা কোথায়?”
এখানেও আশাহত হয়ে আয়াত ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। শিহাব চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“ফারিহা কোথায় বলবেন প্লিজ?”
“ফারিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না”
শিহাব আর নওশীন একসঙ্গে বললো, “পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?”
আয়ানের কথা বলতে ভালো লাগছেনা তাই জিহাদকে হাতের ইশারা করলে জিহাদ নওশীন আর শিহাবকে সব বুঝিয়ে বললো।সব শুনে নওশীন আর শিহাব চমকে উঠল।
দুপুরে তো ফারিহা ওদের সাথে ভার্সিটিতে ছিল।এখন কোথায় গেল মেয়েটা?নওশীন তো রীতিমত কান্না শুরু করে দিয়েছে।শিহাব নওশীনকে সামলানোর চেষ্টা করছে।
হঠাৎ আয়ান ঝট করে উঠে দাঁড়ালো ওর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।বাকিরা সবাই অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ আগেও রাগ করলো এখন আবার হাসছে কেনো!
জিহাদ একটু ভেবে বললো, “স্যার হাসছেন যে?”
আয়ান হাসিমুখে বললো, ” ফারিহা কোথায় আছে পেয়ে গেছি। চলো…”
জিহাদ আর বডিগার্ডরা প্রচুর অবাক হলো। হঠাৎ আয়ান কি করে বুঝলো যে ফারিহা কোথায় আছে! তবুও কেউ আয়ানের ভয়ে কোনো প্রশ্ন না করে আয়ানের পিছু পিছু যেতে লাগলো।শিহাব যেতে চাইলে আয়ান বাঁধা দিয়ে বললো,শিহাব এখন নওশীনের কাছে থাকতে,ওখানে শিহাবের বিপদ হতে পারে।
____________
দরজা খোলার আওয়াজে ফারিহা চোখ তুলে তাকালো।ফারিহার খুব খিদে পেয়েছে।সেই দুপুরে কিডন্যাপ হয়েছিলো এখনো কিছু খায়নি।অন্ধকার রুমে বন্দী থেকেও ফারিহা বুঝতে পারছে এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।সকালে একটু খেয়েছিল তার পর আর কিছু খাওয়া হয়নি।তাই ফারিহা একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে।ফারিহা সেই দুপুর থেকে ভাবছে ওকে কে কিডন্যাপ করতে পারে!
মিস্টার আজাদের কি অন্য কোন শত্রু আছে যে ফারিহাকে কিডন্যাপ করলো!কিন্তু ফারিহা ভাবছে ওর বাপী তো খুব ভালো।ওর বাপির কোন শত্রু থাকতে যাবে কেনো?তাহলে কি আয়ানের কোন শত্রু হতে পারে?আয়ান অনেক এতো বড় মাফিয়া আর মাফিয়াদের শত্রু থাকাই স্বাভাবিক।ফারিহা বসে বসে ভাবছে সবাই প্রতিশোধে নেয়ার জন্য ওকেই পায়?ওকেই কিডন্যাপ করতে হয়?
ফারিহা জানে ফারিহা কিডন্যাপ হয়েছে শুনে আয়ান হয়তো কষ্ট পাবে না কারণ আয়ান তো এতোদিন ওর একসাথে নাটক করেছে,আয়ান তো ফারিহাকে ভালোবাসে না।কিন্তু ফারিহা মিস্টার আজাদের কথা ভাবছে।ফারিহা আরেকবার কিডন্যাপ হয়েছে শুনে মিস্টার আজাদ ঠিক থাকতে পারবে তো?
ফারিহা সামনে তাকিয়ে দেখল ওই লোকটা আসছে যে ওকে কিডন্যাপ করেছিল।ওই লোকটা ফারিহার কাছে এসে বললো,
“আমাদের বস এসেছে। এতক্ষণ তো কার কথায় আপনাকে কিডন্যাপ করেছি বলে বলে আমাদের জ্বালিয়ে ফেলেছেন।এবার নিজের চোখে দেখে নিন।
খিদের জ্বালায় ফারিহার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তবু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কোথায়??”
“আসছে আসছে… স্যারের সামনে বেশ তেজ দেখিয়েন না।স্যার কিন্তু মোটেও আমাদের মত দরদী নয়”
ফারিহা সামনে দিয়ে তাকিয়ে দেখলো একটা লোক আসছে।পরনে কোট প্যান্ট তবে চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।লোকটা যখন ফারিহার কাছে আসলো তখন ফারিহার মাথায় মনে হয় বাজ পড়ল।ফারিহা কি ঠিক দেখছে? না না এটা ওর চোখের ভুল!উনি কি করে ফারিহাকে কিডন্যাপ করতে পারে!
ফারিহা অবাক চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হানিফ আঙ্কেল!!!”
চলবে…