#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:২৯
ফারিহা এখনো নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।আসলে ফারিহা কি করবে বুঝতে পারছে না।একদিকে যেমন কষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে তেমন রাগও হচ্ছে।
কষ্ট হচ্ছে এই কারণে যে এই লোকটার জন্য ওর মাম্মা মারা গেল আর রাগ হচ্ছে এই কারণে যে এই লোকটার জন্য আয়ান মিস্টার আজাদকে শত্রু ভাবে।ফারিহা ভেবেছিল সব সত্যি জানার পর মিস্টার আজাদ আর আয়ানকে এক করে দিবে। কিন্তু এখন ফারিহা বাঁচবে কিনা সেটাই ঠিক নেই!ফারিহা তাচ্ছিল্য হাসলো।হানিফ আহমেদ এবার চেয়ার থেকে উঠে ফারিহার হাত খুলে দিতে দিতে বললো,
“হাত খুলছি বলে পালানোর চেষ্টা করবি না। এই বাড়ির আশেপাশে আমার বডিগার্ড আছে তাই চালাকি না করে আমার সাথে চল”
হাত খুলে দিচ্ছে তাই ফারিহা এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু আশেপাশে এমন কোন হাতিয়ার নেই যেটা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।হানিফ আহমেদ ফারিহার হাতের বাধন খুলে ওর হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।
খাবার না খাওয়ার ফলে ফারিহা অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে তবু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
হানিফ আহমেদ রাগি চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“চুপ কোন কথা নেই।আমার সাথে চল,,মৃত্যুর আগে তোর সাথে একটু খেলে নেই”
ফারিহা হানিফ আহমেদের কথা বুঝতে পারছে না। তাই হানিফ আহমেদের সাথে যেতে লাগলো।
ফারিহা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি হানিফ আহমেদ এরকম কিছু করবে।হানিফ আহমেদ ফারিহাকে টানতে টানতে একটা রুমে এনে বিছানার উপর ছুড়ে ফেললো।ফারিহা আবার প্রচুর চমকে উঠলো।হানিফ আহমেদ রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিল।ফারিহা অবাক হয়ে বিছানা থেকে উঠে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আঙ্কেল কি্ কি করছেন?”
হানিফ আহমেদ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, “তোকে তো মেরেই ফেলবো কিন্তু তার আগে একটু তোর মজা নিই?”
ফারিহা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। হানিফ আহ্মেদ এতটা জঘন্য ফারিহা ভাবতেও পারছে না।ফারিহা অবাক কন্ঠে বললো,
“আঙ্কেল আপনি আমার বাপির সমান।আপনি আমার সাথে!”
হানিফ আহমেদ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো, “তোর বাবার সমান!কিন্তু তোর বাবা তো নই।আর তোকে তো মেরে ফেলবো।তাহলে মেরে ফেলার আগে একটু মজা নিলে ক্ষতি কি?”
“আঙ্কেল্ আঙ্কেল আমি আপনার মেয়ের মতো।মনি্ মনি আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসে।আপনি আমার সাথে এরকম করবেন না”
হানিফ আহমেদ বিরক্তি মুখে বললো, “ওই গাধী মহিলাটার কথা বলবি না তো।এক নম্বর ভীতু! সব সময় শুধু মিস্টার আজাদ আর তোর গোলামী করবে।বিরক্তিকর মহিলা একটা।সব সম্পত্তি আমার হাতে এসে গেলে ওই মহিলাকে আমি ছেড়ে দেবো”
ফারিহার বিশ্বাস ছিল যে এসবের পেছনে মনির হাত থাকতে পারে না।ঠিকই হয়েছ হনুফা বেগম এসবের কিছু জানেনা।ফারিহা একটা মুচকি হাসি দিলো।ওর মনি ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি।
হানিফ আহমেদকে আগাতে দেখে ফারিহার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ফারিহা আর উপায় না পেয়ে হানিফ আহমেদের পায়ে পড়ে গেলো।তারপর কান্না করতে করতে বললো,
“আমি আপনার মেয়ের মত আঙ্কেল।আপনি আমার সাথে এরকম টা করবেন না।আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে মেরে ফেলেন। কিন্তু মরার আগে আমারে এত বড় কলঙ্ক করবেন না”
হানিফ আহমেদ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, “তোর উপর আমার অনেক দিনের নজর।শুধু আয়ানের জন্য কিছু করতে পারিনি।আজকে যখন সুযোগ পেয়েছি তাহলে ছাড়বো কেন!”
হানিফ আহমেদ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আর ফারিহা আস্তে আস্তে পেছাচ্ছে।ফারিহা শক্ত করে ওর জামা হাতের মুঠোয় নিল।আর এদিক ওদিক তাকালো।
এখানেও হানিফ আহমেদকে আঘাত করা যায় এরকম কিছু পেল না।এই রুমে একটা খাট বাদে আর কিছুই নেই।কান্নার কারণে ফারিহার চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে।
হানিফ আহমেদ শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলে ফারিহাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে ফারিহার উপরে উঠে বসলো।বাবার বয়সী একটা লোক কি করে ওর সাথে এসব করতে পারে?ফারিহার ওর মাম্মার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, এমন একটা লোককে বাসায় জায়গা দিল যার জন্য নিজেকে মরতে হলো।এখন নিজের মেয়ে বিপদে! ফারিহা হাতজোড় করে হানিফ আহমেদ কে বললো,
“আঙ্কেল আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।আমার সাথে এরকম করবেন না।আমি আমি…”
কান্নার কারণে ফারিহার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।ফারিহা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে।হানিফ আহমেদ কিছুতেই ফারিহাকে কন্ট্রোল আনতে পারছেনা।
হঠাৎ দরজা ভাঙ্গার আওয়াজে হানিফ আহমেদ পেছনে ফিরে চমকে উঠলো।
আয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে দাড়িয়ে আছে!আয়ানের পেছনে মিস্টার আজাদ!হানিফ আহমেদ এখানে আয়ান আর মিস্টার আজাদকে একদম আশা করেনি।হানিফ আহমেদের কলিজা পেঁপে উঠলো।আয়ানের রাগ সম্পর্কে হানিফ আহমেদ জানে আর মিস্টার আজাদ মেয়ের সাথে এরকম হচ্ছে দেখে কি করবে সেটা ভেবেই হানিফ আহমেদের গলা শুকিয়ে গেল।
আয়ান একপ্রকার দৌড়ে এসে হানিফ আহমেদকে বিছানা থেকে তুলে জোরে জোরে একসাথে অনেকগুলো ঘুষি দিল।আয়ান পুরো রাগ এখন হানিফ আহমেদের উপর ঝাড়ছে,ইচ্ছা মতো মারছে।
আর মিস্টার আজাদ তো একবার হানিফ আহমেদের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল।তারপর ফারিহার কাছে গেলে ফারিহা মিস্টার আজাদ কে কাছে পেয়ে ঝাপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো।আয়ান আর মিস্টার আজাদকে দেখে ফারিহা যেন প্রাণ ফিরে পেল।ফারিহা মিস্টার আজাদের বুকে হাউমাউ করে কাঁদছে।
আর এদিকে আয়ান তো হানিফ আহমেদকে ইচ্ছামত কিল-ঘুষি-লাথি যেভাবে পারছে সেই ভাবে মারছে।ফারিহা ভীত চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানের এই রূপের সাথে ফারিহা পরিচিত নয়।তাই একটু ভয় পেয়ে আছে।
আর মিস্টার আজাদ অবাক চোখে আয়ানকে দেখছে।ফারিহাকে কিডন্যাপ করেছে তাই আয়ানের এত রাগ?তবে আয়ান হানিফ আহমেদকে মারছে দেখতে মিষ্টার আজাদের ভালই লাগছে।ফারিহা মিস্টার আজাদের বুকে মুখ গুঁজে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ান হানিফ আহমেদকে মেরে আধমরা করে ফেলেছে।হানিফ আহমেদ হাতজোড় করে আয়ানকে বলছে,
“আয়ান আমাকে ছেড়ে দে।আমার্ আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখন এরকম করবো না।
আমি সব ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাবো।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে।আমি তোর কাছে প্রাণের ভিক্ষা চাইছি”
আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে হানিফ আহমেদকে মারতে মারতে বললো, “কিছুক্ষণ আগে আমার জান তোর কাছে প্রাণেরভিক্ষা চেয়েছিল।দিয়েছিলি তুই??
তুই আমার জানের গায়ে হাত দিয়েছিস আমি তোকে ছাড়বোনা।আয়ান খানের স্ত্রীর সাথে খারাপ কিছু করার শাস্তি তোকে পেতেই হবে”
মার খেতে খেতে হানিফ আহমেদ অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।তবু অনেক কষ্টে বললো,
“ফারিহা মামণিকে তো আমি মেয়ের মতো ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে।আমি এরকম কিছু করতে চাইনি কিন্তু..”
“কিন্তু তুই করেছিস!যার জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে”
ফারিহা অবাক হয়ে আয়ানকে দেখছে।আয়ান কি বললো?ফারিহা কি ঠিক শুনেছে?আয়ান ওকে আয়ানের জান বলেছে?কিন্তু আয়ান তো ওইসব নাটক করেছিল।তাহলে এখন??
ফারিহা শুধু ভাবছে আয়ানের এইরূপ তা কি সত্যি? আয়ান হানিফ আহমেদকে মারতে মারতে বললো,
“আর তোকে ছেড়ে দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না একেতো তুই ফারিহাকে মারতে চেয়েছিলি।আর সবচেয়ে বড় কথা তুই আমার বাবা মায়ের খুনী!যেই খুনীকে আমি নিজের হাতে মারতে চেয়েছিলাম।আজকে সেই সুযোগ এসেছে।তাহলে তোকে কী করে ছেড়ে দিবো বল?”
আয়ানের কথায় হানিফ আহমেদ চমকে উঠল।আয়ান কী করে এসব জানলো?হানিফ আহমেদের মাথায় কিছু ঢুকছে না।আয়ান কি করে এই জায়গাটার ঠিকানা জানলো,ফারিহা যে এখানে আছে সেটাই বা কিভাবে জানলো!
কিন্তু এখন হানিফ আহমেদের এসব ভাবার শক্তি নেই।হানিফ আহমেদ শুধু হাত জোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে।আয়ান তো হানিফ আহমেদের কোন কথাই শুনছে না একদম হিংস্র হয়ে উঠেছে।
আয়ান অনেকক্ষণ হানিফ আহমেদকে মেরে তারপর উঠে জিহাদের দিয়ে তাকালো।জিহাদ আয়ানের হাতে একটা গান দিল।গান দেখে ফারিহা চমকে উঠলো।ফারিহা কখনোই এসব খুন খারাপীর সাথে পরিচিত নয় তাই আজকে অনেক ভয় পাচ্ছে।এমনিতে এতক্ষণ ভয়ে ছিল এখন আবার এসব!আয়ান হানিফ আহমেদের চুল মুঠো করে ধরে মাথায় গানটা লাগিয়ে হানিফ আহমেদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“জীবনে যা পাপ করার সব করে ফেলেছিস।এবার উপরে গিয়ে সেগুলির হিসাব দে।আর মরার আগে শুনে রাখ তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ফারিহার গায়ে টাচ করা”
আয়ান ঠাস ঠাস করে হানিফ আহমেদের মাথায় দুটো গুলি করে দিল।ফারিহা ভয়ে মিস্টার আজাদের বুকে মুখ গুঁজলো।মিস্টার আজাদ শক্ত করে ফারিহার মাথাটা চেপে ধরলো।
আয়ান হানিফ আহমেদের মাথায় গুলি করে শান্ত হয়নি।ইচ্ছা মত বুকে গুলি করে ঝাঝড়া করে দিতে লাগলো।হানিফ আহমেদ তো সেই কখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে কিন্তু আয়ানের রাগ কমেনি।
এবার জিহাদ ভয় পেয়ে বললো, “স্যার ও মরে গেছে।এবার ছাড়ুন”
জিহাদের কথায় আয়ান কিছুটা শান্ত হলো।একদৃষ্টিতে হানিফ আহমেদের লাশের দিকে তাকলো।আয়ানের আজকে খুব শান্তি লাগছে। এতদিনে মা-বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। ওই ছবিগুলো দেখার পর আয়ান ভেবেছিল মিস্টার আজাদ কে মেরে ফেলবে কিন্তু পরে প্ল্যান চেঞ্জ করে ফারিহাকে বিয়ে করলো।
আয়ান ভেবেছিল ও যা করেছে তা কি ঠিক?এখন মনে হচ্ছে ও যা করেছে একদম ঠিক করেছে।তখন যদি আয়ান মিস্টার আজাদকে মেরে ফেলতো তাহলে একজন নির্দোষের প্রান যেতো আর ফারিহার মতো কাউকে নিজের জীবনে পেতো না।
আয়ানের হঠাৎ ফারিহার কথা মনে হলো।আয়ানের খেয়াল নেই যে ফারিহা ওর সামনে আছে।আয়ান চট করে হাত থেকে বন্দুকটা ফেলে দিলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দেখল ফারিহা মিস্টার আজাদের মুখ বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।আর ভয়ে কাঁপছে।ফারিহার অবস্থা দেখে আয়ান ভয় পেয়ে গেলো।ফারিহা কি এখন ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাবে?তাহলে যে আয়ান বাঁচবে না।
চলবে…