#হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️
#Dhamaka_Part
#Writer_NOVA
— এই মারিয়া দাঁড়া।
পেছন থেকে কারো ডাক পেতেই দ্রুত পেছনে ঘুরলো মারিয়া। তার বেস্টফ্রেন্ড মুনকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। কতদিন পর দেখা। মুন দৌড়ে এসে মারিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। মারিয়াকে ছেড়ে অভিমানী ভঙ্গিতে বললো,
— তোর খবর কি বল তো?
মারিয়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো,
— আর খবর!
— কেন কি হয়েছে?
দুজন কলেজের ভেতরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
— তোকে তো গতকাল কলে সব বললাম। আম্মু-আব্বু অনেক টেনশনে আছে। আম্মু তো আমাকে মামাবাড়ি পাঠানোর জন্য রিতীমত যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
— দেখ মারিয়া আমি একটা কথা বলি। কিছু মনে করিস না।
— এতো ভনিতা না করে বলে ফেল।
— তুই বরং আঙ্কেল-আন্টির কথা শুনে মাস খানিক ঢাকায় থেকে আয়। এতে তোর মঙ্গল।
মারিয়া হাঁটা থামিয়ে কপট রাগী গলায় বললো,
— তুইও শুরু করলি।
— রাগ করিস না। আমি আমার অপনিয়ন দিলাম।
— প্লিজ মুন থাম তুই। দয়া করে ফালতু বকবকানি থামা। আমার এসব আর ভালো লাগছে না। আমি মোটেও ভীতু নই। আমিও দেখতে চাই হিমেল কি করতে পারে। আমাকে চিনে না। ও যদি সেড় হয় আমিও সোয়া সেড়।
— জেদ করিস না। এতে হীতের বিপরীত হতে পারে। হিমেল কেমন ছেলে তা নিশ্চয়ই তোকে বলতে হবে না। যে ছেলে দিনে দুপুরে তোর বাবা-মায়ের সামনে তোর গলা টিপে ধরতে পারে সে খুনও করতে পারবে। তোকে এখন হেয়ালি করলে চলবে না। সাবধানে থাকতে হবে। সাবধানের মাইর নেই। ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ায় ও আরো বেশি রেগে আছে। রাগের বর্শবর্তী হয়ে যেকোনো কিছু করতে দ্বিধা করবে না।
— অনেক বলেছিস। এবার দ্রুত ক্লাশে চল।
— তুই বিষয়টাকে তুচ্ছ করে দেখে হেয়ালি করছিস মারিয়া। বিপদ কিন্তু বলে কয়ে আসে না। আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে তোর জন্য।
— কিন্তু আমার করছে না। ভবিষ্যতে কি হবে তার জন্য চিন্তা করে বর্তমান নষ্ট করার কোন মানে হয় না। অনেক কথা হয়েছে। এবার জলদী পা চালা।ক্লাশ করতে যেতে হবে।
— যা ভালো বুঝিস কর। তবে সাবধানে থাকিস।
— যথাআজ্ঞা মহারাণী।
দুই বান্ধবী আরো টুকটাক কথা বলতে বলতে ক্লাশের দিকে ছুটলো। আসলে সত্যিই মারিয়া বিষয়টাকে আমলে নিচ্ছে না। এতে তার বিপদ হবে না তো?
☔☔☔
অন্যদিকে……
হিমেল দুই দিন ধরে নিজেকে রুম বন্দী করে রেখেছে। প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি একটা বের হয় না। ছেলের হঠাৎ এরকম আচারণে তার বাবা-মা দুজনেই অবাক। প্রতিদিনের মতো আজও তার মা রুমকি বেগম দরজায় খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। তবু তার ছেলে রুম থেকে বেরিয়ে খাবার খেতে আসেনি।এক নাগাড়ে দরজায় করাঘাত করে সে হিমেলকে ডাকছে।
— হিমেল, এই হিমেল। সোনা বাবা আমার। দরজাটা খোল। আর কত নিজেকে এরকম ঘরবন্দী করে রাখবি। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
হিমেলের কপাল কুঁচকে এলো বিরক্তিতে। সবেমাত্র একটা সিগারেট ধরিয়ে দুটো টান মেরেছে। এর মধ্যে এতো ডাকাডাকি তার সহ্য হচ্ছে না। বিরক্তিতে চেচিয়ে বললো,
— ডাকাডাকি করো না তো। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। কোন ডিস্টার্ব করবা না।
— সেকি কথা বাবা! খাবার খাবি না। খাবার না খেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি।
— উফ মা তুমি কি যাবা এখান থেকে। অসহ্যকর! কানের সামনে প্যান প্যান করতেই থাকে।
— আমি কিছু বললেই প্যান প্যান হয়ে যায়। যা আর কিচ্ছু বলবো না আমি। তোর যা খুশি তাই কর। আমার কথা তো শুনবি না। আসুক তোর বাপ আজ। তার কাছে সব বলবো আমি।
হিমেল কপাল ডলে নিজের রাগটা একটু দমন করে নিলো। তারপর বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো,
— তুমি কি দরজার সামনে থেকে সরবা? বেশি ডিস্টার্ব করলে বাড়ি থেকে কিন্তু বের হয়ে যাবো।
ছেলের বিরক্তি কন্ঠের হুমকি শুনে রুমকি বেগম কিছুটা দমে গেলো। ছেলেটার যা রাগ তাতে বাসা থেকে বের হয়েও যেতে পারে। তাই তিনি আর ডাকলেন না। ছোটবেলা থেকে শাসনের অভাবে ছেলেটা চরম বেয়াদব হয়ে গেছে। সবাই মাথায় তুলে নেচেছে। আদরের ছেলেকে শাসন করেনি। আর সবসময় বলেছে ছোট মানুষ এখুনি তো এমনটা করবে। যার দরুন আজ এই অবস্থা।
একটা বাচ্চার মানুষের মতো মানুষ হওয়ার শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। যদি পরিবার তাকে শিক্ষা দিতে না পারে তাহলে সে কি করে ভালো মানুষ হবে?বাচ্চাকে আদরের সময় আদর, শাসনের সময় শাসন করতে হয়। কোন কাজ অতিরিক্ত ভালো নয়। অতিরিক্ত আদরে যেমন সন্তান বিগড়ে যায়, তোমনি অতিরিক্ত শাসনেও সন্তান বিপথে চলে যায়। বাচ্চাকে ছোট থেকেই ঠিক ভুলের পার্থক্য শিখাতে হয়। উপযুক্ত মানুষ গড়ার হাতেখড়ি পরিবার থেকে দিতে হয়। ছোট বাচ্চারা সাদা কাগজের মতো হয়। তাদেরকে যেভাবে আঁকবেন সেভাবেই গড়ে উঠবে। এখন আপনার সন্তানকে আপনি ভালো পথে পরিচালনা করবেন নাকি খারাপ পথে তা আপনার ওপর নির্ভর করে।
☔☔☔
গত কয়েকদিন ধরে ত্রিবু পুরনো বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি ছেলেটার দেখা পায়। যদিও ছেলেটাকে তার বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে। তবুও তাকে এক নজর দেখার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। তাছাড়া ছেলেটাকে তো একটা ধন্যবাদ দিতেই হবে। তাকে নতুন করে বাঁচতে শেখার আশা যে সে যুগিয়েছে। বাসে করেই কলেজ যায় সে। একটু আগেও একটা বাস চলে গেলো। কিন্তু ত্রিবু উঠলো না। হঠাৎ কাঁধে কারোর স্পর্শ পেয়ে চমকে পেছনে ঘুরলো ত্রিবু। তাকিয়ে দেখে টিকিট কাউন্টারের জামাল চাচা। তিনি বিস্মিত ভঙ্গিতে বললো,
— তুমি প্রতিদিন কার অপেক্ষা করো ত্রিবু? আমি বেশ কয়েকদিন ধইরা খেয়াল করছি তুমি এখানে দাঁড়াইয়া কারো প্রতিক্ষায় প্রহর গুনো।
ত্রিবু মলিন হেসে বললো,
— একজন উত্তম ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের অপেক্ষা করি চাচা। সে আমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। সব বাঁধা পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তা দেখিয়েছে। তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকি। যদি এক পলক তার সাথে দেখা হয় তাহলে তাকে ধন্যবাদ জানাবো।
জামাল চাচা ত্রিবুর কোন কথা বুঝলো না। নিরস চোখে তাকিয়ে রইলো।তা বুঝতে পেরে ত্রিবু মুচকি হেসে তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। কুশলাদি জিজ্ঞেস করা শেষ হতেই সে বললো,
— চাচা, একটু পানি হবে? বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।
— টিকিট কাউন্টারে লও(চলো)।
ত্রিবু, জামাল চাচার সাথে কাউন্টারে গেলো। ত্রিবুকে একটা টুলে বসতে দিয়ে জামাল মিয়া পানি আনতে গেলেন। ছোট একটা কাউন্টার। জানলার পাশে একটা পুরনো রংচটা টেবিল পাতা।সাথে বিবর্ণ চেয়ার।টেবিলের কোণার দিকে অনেকগুলো পত্রিকা জমে আছে। পাশে এক পাতা টিকিট। জামাল মিয়ার অবসর কাটে পত্রিকা পড়ে। কিছু সময় পর জামাল চাচা পানি নিয়ে এলেন। পানি এনে ত্রিবুর হাতে দিতেই ত্রিবু ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে জামাল চাচার হাতে দিয়ে বললো,
— ধন্যবাদ চাচা। আজ উঠি।
— নিশ্চয়ই।
ত্রিবু কিছুটা তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে টেবিলের পায়ার সাথে বারি খেলো। দুই হাতে টেবিলের কোণাটা আঁকড়ে ধরতে গেলে পত্রিকাগুলো সব নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেলো। জামাল চাচা দ্রুত এসে ত্রিবুকে উঠিয়ে কিছুটা শাসনের সুরে বললো,
— দেইখা চলবা না। পাইলা তো ব্যাথা।
— না চাচা ঠিক আছে।
ত্রিবু বেশি একটা ব্যাথা পায়নি। শুধু ডান পায়ের বুড়ো আঙুল কিছুটা জ্বালা করছে। দ্রুত বসে পত্রিকাগুলো উঠাতে উঠাতে বললো,
— সবগুলো এলোমেলো করে দিলাম চাচা। আমি সত্যি দুঃখীত।
— আরে ধূর মাইয়া। তুমি যে ব্যাথা পাও নাই তাই অনেক বেশি।
ত্রিবু মুগ্ধ নয়নে জামাল মিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর পত্রিকাগুলো ভাজ করতে লাগলো। কিছু পত্রিকা মেলে পরে আছে।সেগুলো ভাজ করতে গিয়ে হঠাৎ একটা পত্রিকার কোণার দিকে চোখ যায়।দুই সপ্তাহ আগের পত্রিকা। সেখানে হাস্যউজ্জ্বল একটা ছেলের ছোট ছবি দিয়ে কিছু একটা লিখা।কিন্তু নিচের হেডলাইনের থেকে কোণার দিকটা তেছড়াভাবে ছেঁড়া। যার দরুন কি লেখা আছে তা পড়া সম্ভব নয়। ত্রিবু ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকাতেই আৎকে উঠলো। আরে এটাই তো সেই মাথায় ছাতা ধরা ছেলেটা। যার কাছে সে ঋণী। ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য হন্যি হয়ে খুঁজছে। কিন্তু তার ছবি পেপারে ছাপিয়েছে কেন? ছবির নিচে থাকা লেখাটা না পড়তে পেরে ত্রিবু কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে জামাল চাচাকে বললো,
— চাচা, এই ছেলেটা….
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে জামাল চাচা চশমা মুছে পুনরায় চোখে দিয়ে বললো,
— কোন ছেলেটা?
— এই যে সাদা শার্ট পরিহিত ছেলেটা। ওর ছবি নিউজ পেপারে ছাপিয়েছে কেন?
— তুমি পড়ে দেখো।
— কিভাবে পড়বো? হেডলাইন থেকে তো নিচের অংশটা ছেঁড়া।
— দেখিতো কোন ছেলে?
— এই যে নিন।
জামাল মিয়া পত্রিকাটা হাতে নিয়ে দরজার সামনে এসে আলোতে মেলে ধরলেন।তিনি পত্রিকা পড়ার সময় ছোট থেকে ছোট বিষয়ও মনোযোগ সহকারে খুঁটেনাটে পড়েন। ছোটবেলায় সবসময় স্মৃতিশক্তির খেলায় ফার্স্ট হতেন। যার ফলে মধ্য বয়সে এসেও তার স্মৃতিশক্তি ভালো আছে। ছোটখাটো বিষয়ও স্পষ্ট মনে রাখতে পারেন। ছেলেটাকে ভালো করে দেখে বললো,
— ওহ এই ছেলের কথা বলছো।
ত্রিবু দ্রুত পায়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালো। তার বুকের ভেতরটা অজানা আশংকায় ঢিপঢিপ করছে। চাচার পাশে দাড়িয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো,
— হ্যাঁ চাচা এই ছেলেই।
— এটা তো আমাদের পাশের গ্রামের ছেলে। তুমি ওর ঘটনা জানো না?
ত্রিবু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
— কি ঘটনা চাচা?
— এই ছেলে তো প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
~~~যে আপনাকে খুব সহজে পেয়ে যাবে, সে কখনো আপনার মূল্য বুঝবে না 💔।
#চলবে
আরেকটা ঝাটকা বাকি আছে। আজকেরটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।