হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️ #Part_08 #Writer_NOVA

0
347

#হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️
#Part_08
#Writer_NOVA

— আরে আপনি!

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের সেই ছাতা ধরা ছেলেটা। ত্রিবু বেশ অবাক। এভাবে যে তার ধারণা সঠিক হয়ে যাবে তা সে ভাবতেই পারেনি। ছেলেটা একগালে রহস্যময় হাসি দিলো। তাতে ত্রিবুর মনে হলো ছেলেটা যেনো জানতো তাদের আবার হঠাৎ বৃষ্টিতে দেখা হবে। অবশ্য সেদিন তো ছেলেটা বলেছিলোই হঠাৎ বৃষ্টিতে আবার দেখা হবে। ত্রিবুকে আরেকদফা অবাক করে ছেলেটা বলে উঠলো,

— কেমন আছেন মিস ত্রিবু?

ত্রিবু চোখ দুটো রসগোল্লা করে ছেলেটার দিকে তাকালো। সে কি করে তার নাম জানলো? আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলো,

— আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?

ছেলেটা আবারো রহস্যময় হাসি দিলো। ত্রিবুর এখন এই হাসির কারণ খুঁজতে খুঁজতে পাগল হওয়ার জোগাড়। সে কিছুতেই কোন হিসাব মিলাতে পারছে না। সে তো সেদিন ছেলেটাকে তার নাম বলেনি। তাহলে জানলো কি করে? ত্রিবু আরো কিছু ভাবার আগে ছেলেটা বলে উঠলো,

— বললেন না কেমন আছেন?

—জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

— আপনার জ্বর কি কমছে?

না,ত্রিবুর আজ অবাক হওয়ার দিন। একটার পর একটা আশ্চর্যজনক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ছেলেটা। যা ছেলেটার জানার কথা নয়। ছেলেটা মুচকি হেসে বললো,

— ছোট মাথাটা এতো প্রেশার দিয়েন না। অসুস্থ শরীরে আরো অসুস্থ হয়ে যাবেন।

— আপনি যেরকম প্রশ্ন করছেন তাতে তো একের পর এক না চাইতেও অবাক হতে হচ্ছে।

— এতটা অবাকের কিছু হয়নি। সেদিন বৃষ্টিতে যেই পরিমাণে ভিজেছিলেন তাতে জ্বর আসাটাই স্বাভাবিক। তাই আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনার জ্বর কমছে কিনা।

— ওহ আচ্ছা। কিন্তু আমার নাম জানলেন কি করে?

ছেলেটা একগালে হেসে একটা চোখ মেরে দুষ্টামির সুরে বললো,

— এটা সিক্রেট। বলা যাবে না।

ছেলেটার কথা বলার ভঙ্গি ও চোখ মারতে দেখে ত্রিবু ফিক করে হেসে উঠলো। হালকা আবছা আলোয় ত্রিবুর হাসির ঝংকার দূরে না গেলেও ছেলেটার কানে এসে বারি খেলো। এক ধ্যানে ত্রিবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ত্রিবু হাসতে হাসতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ইতস্ততভাবে চুপ হয়ে গেলো। ছেলেটা কিরকম মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ত্রিবু চোখ নামিয়ে নিলেও ছেলেটা অপলক চোখে তাকিয়ে নিচু স্বর করে বললো,

— আপনার হাসিটা মা শা আল্লাহ খুব সুন্দর।

ত্রিবু চমকে তাকালো। এই প্রথম কেউ তার প্রশংসা করলো। সবার কাছে তো অবহেলার পাত্রী হয়। চোখ দুটো তার ছলছল করে উঠলো। হিমেলের সাথে সাত মাস সম্পর্কেও সে কখনো ত্রিবুর কোন কিছুর প্রশংসা করেনি। ত্রিবুকে চুপ করে থাকতে দেখে ছেলেটা বললো,

— আমি সত্যি বলছি। আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। চেহারাটা তো ভীষণ মায়াবী। আমার কাছে মনে হচ্ছে একটা মায়াবতী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ত্রিবু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। ওর হাসি দেখে ছেলেটা জোর গলায় বললো,

— আমি জানি আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেননি। না করাটাই স্বাভাবিক।

— পাম দিচ্ছেন?

ত্রিবু চোখে চোখ রেখে কথাটা বললো। ছেলেটা মুচকি হাসলো। ত্রিবু একটা জিনিস খেয়াল করলো ছেলেটার
কথায় কথায় হাসার অভ্যাস।আসার পর থেকে হেসেই যাচ্ছে। হাসলে তাকে খারাপ লাগে না। বরং স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পরে। যা ত্রিবুর দেখতে বেশ লাগে। ত্রিবুকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা খাকরি দিয়ে বললো,

— জানেন মিস পৃথিবীতে অনেক প্রকার স্বর্ণ আছে। আঠারো ক্যারেট, বিশ ক্যারেট, বাইশ ক্যারেট, চব্বিশ ক্যারেট ইত্যাদি। দুবাই স্বর্ণ, সৌদি আরাবিয়ান, সিঙ্গাপুরের, বাংলাদেশের আরো বিভিন্ন দেশের। এই স্বর্ণ কিন্তু সবাই চিনতে পারে না।হয়তো চিনতে পারবে এটা স্বর্ণের বস্তু। কিন্তু কোন দেশের কোন ক্যারেটের স্বর্ণ তা একমাত্র স্বর্ণকার চিনে ভালো করে।এর মধ্যে চব্বিশ ক্যারেট হলো খাটি স্বর্ণ।যার খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। এগুলো কিন্তু অনেক দামী।

ত্রিবু কপাল কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকালো। এই ছেলে স্বর্ণের পেঁচাল শুরু করছে কেন? মনের মাঝে থাকা প্রশ্নটা মুখে করেই ফেললো,

— এসব কথা আমাকে শুনাচ্ছেন কেন?

ছেলেটা আবারো একি ভঙ্গিতে হাসলো। উফ, আবারো সেই হাসি! ছেলেটা কি বুঝতে পারছে না তার হাসিটা ত্রিবুকে ঘোরে ফেলে দিচ্ছে। ত্রিবু চোখ সরিয়ে নিলো। ছেলেটা শান্ত গলায় বললো,

— আপনি হলেন সেই চব্বিশ ক্যারেটের খাঁটি স্বর্ণ। আপনাকে সবাই চিনতে পারবে না। শুধুমাত্র স্বর্ণকার ছাড়া। নিজেকে তাই মূল্যহীন ভেবেন না। অবশ্য ঐ স্বর্ণকারটা আমাকেও বলতে পারেন। আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।

ত্রিবু বিস্মিত চোখে তার দিকে আবারো তাকালো। ছেলেটা বলছেটা কি? তার তো সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সে আবার এতো দামী কবে হলো? ত্রিবু কিছু বলার আগে ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো,

— তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে মিস ত্রিবু?

— যাচ্ছে ঠেলে ধাক্কিয়ে কোনরকম।

— এর মধ্যে ঐ ছেলেটা কি আবারো কোন ঝামেলা করেছে?

— কোন ছেলে?

— ঐ যে যার সাথে আপনার সাত মাসের সম্পর্ক ছিলো।

ছেলেটার কথা শেষ হতেই পুরনো স্মৃতি আবারো হানা দিলো চোখের পাতায়। ভেতর থেকে হেঁচকি তুলে কান্না আসতে নিলে ঠোঁট কামড়ে সংবরণ করে নিলো। হঠাৎ ছেলেটার দৃষ্টি ত্রিবুর কপালে গেলো। সেখানে ক্রশ চিহ্নের মতো দুটো ছোট ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ। ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

— আপনার কপালে কি হয়েছে?

ত্রিবু চট জলদী কপালে হাত দিয়ে আমতাআমতা করে বললো,

— তেমন কিছু নয়। দরজার সাথে লেগে ফেটে গেছে।

ত্রিবু জানে সে মিথ্যে বলছে। তাই বারবার তার ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠছিলো। চোখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখলো ছেলেটা সন্দেহের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কথা যে সে বিশ্বাস করেনি তা দৃষ্টি দেখে বোঝা যাচ্ছে। বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেটা বললো,

— আমি মিথ্যেটা শুনতে চায়নি। সত্যিটা বলুন।

ত্রিবু কিছুটা চমকে উঠলেও ছেলেটাকে বুঝতে দিলো না। মিথ্যে বলে লাভ হবে না বলে বড় করে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রথম থেকে সবটা বলে দিলো। হিমেলের কথা, তার ফুপুর বলা কথা, সাথে চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড় দিয়ে যে দরজার সাথে লেগে কপাল ফেটে গেছে তাও বাদ রাখলো না। সব শুনে ছেলেটার চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠলো। রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে। শক্ত গলায় বললো,

— আপনি কেন নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন না? এখন নিশ্চয়ই বলবেন ওরা আপনাদের গ্রাম থেকে বের করে দিবে তাই। আসলে আপনি চুপ করে থাকেন বলেই ওরা এমন করতে সাহস পায়। আপনি যদি প্রতিবাদী হোন তাহলে সেই সাহসটা পাবে না। দূর্বলদের ওপর সবলরা সবসময় অত্যাচার করে। আপনি নিজেকে তাদের কাছে দূর্বলভাবে প্রকাশ করছেন। যাতে তারা আপনার সাথে অত্যাচার করতে পারছে, আপনার ওপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারছে। আর কত দূর্বল থাকবেন বলুন তো? এবার প্রতিবাদী হোন। নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। আপনি প্রতিবাদ করলে কেউ আপনার ক্ষতি করতেও দুইবার ভাববে।

ত্রিবু মুগ্ধ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো। আচ্ছা ছেলেটার মধ্যে কি জাদু আছে? প্রতিটা কথায় ত্রিবু মনের ভেতর জোর পায়, বেঁচে থাকার ইচ্ছে খুঁজে পায়, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারে। অন্য একটা ত্রিবুর অস্তিত্ব জানান দেয়। যে প্রতিবাদী, নিজেকে মূল্যবান, নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত করা ত্রিবু। ছেলেটা কিছু সময় থেমে আবারো বললো,

— হ্যাঁ, আপনি কালো। আল্লাহ আপনাকে কালো বানিয়েছে। এতে তো আপনার দোষ নেই। আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসে বলেই এই রং দিয়েছে। এই রং নিয়ে আপনি কেন হীনমন্যতায় ভুগবেন?আপনার কি মনে হয় না হীনমন্যতায় ভুগে আপনি আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করছেন? আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করার কোন অধিকার আমাদের নেই। তাই দয়া করে নিজের গায়ের রং নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগা বন্ধ করুন। বরংচ এটাকে পজেটিভ দিকে দেখুন। গায়ের রং নিয়ে কেউ কোন কথা বললে আপনি তা আমলে নিবেন না। নিজেকে আপনি ছোট করে দেখেন বলেই অন্যরা আপনাকে ছোট করার প্রন্থা পায়। আপনি যদি নিজেকে বড় করে দেখেন তাহলে কারোর সাধ্যি নেই আপনাকে ছোট করার। অন্যের কথাও তখন গায়ে লাগবে না। আরেকটা কথা, নিজেকে একটা শক্তিশালী রূপে আবিষ্কার করুন। প্রতিবাদী হোন। নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। এতে আপনার প্রতিপক্ষ ভড়কে যাবে। আপনাকে কাবু করতে পারবে না। বিপদকে মোকাবিলা করতে শিখুন মিস ত্রিবু। নিজেকে এমন স্থানে প্রতিষ্ঠিত করুন যাতে অন্যরা আপনাকে আদর্শ বানাতে পারে। আপনাকে দেখে কেউ তার গায়ের কালো রং নিয়ে হীনমন্যতায় না ভুগে।আপনাকে গুণ দিয়ে বিবেচনা করে। সমাজকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন রূপে নয় গুণে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উপরের ধাপে উঠতে হয়।

ত্রিবু নিষ্পলকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কই এমন করে তো সে কখনো ভাবেনি। আজ ছেলেটা ওকে নতুন করে ভাবাতে শিখালো। মনে মনে ত্রিবু শক্ত একটা পণ করলো। সেটা হলো চোখে আঙুল দিয়ে সে সমাজকে দেখিয়ে দিবে রূপে নয় গুণেই সব। ছেলেটা ত্রিবুকে বললো,

— অনেক কিছু বললাম। এগুলো নিয়ে একটু ভাববেন। আমার বিশ্বাস আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই নিজের যোগ্যতায় উপরে উঠতে পারবেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। চলুন আপনাকে পৌঁছিয়ে দেই। এই সন্ধ্যায় আপনাকে একা ছাড়া আমার ঠিক হবে না।

ত্রিবু কোন কথা বললো না। সে ছেলেটার প্রতিটা কথা ভাবছে। আসলে কথাগুলো তাকে ভাবাচ্ছে। তার ভেতরের মরিচা পরা বিবেকটাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির বেগ কমে গেছে অনেক আগে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে হালকা ঠান্ডা বাতাস। দুজনে নিঃশব্দে বাড়ির পথ ধরলো। অন্ধকার হয়ে আসছে। আবছা আলোতে পথ চলতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। বাড়ির কিছুটা সামনে এসে সেদিনের মতো ত্রিবু ছেলেটার দিকে ছাতাটা বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটা কোন কথা না বলে ছাতাটা নিয়ে বললো,

— আসছি।

ত্রিবুকে কিছু বলতে দিলো না। সে চায় ত্রিবু তার কথাগুলো ভাবুক। ভেবে সিদ্ধান্ত নিক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ তাকে হেনেস্তা না করতে পারে। সে একাই নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। ত্রিবু ভাবতে ভাবতে বাড়ির সামনে চলে এলো। যখন ধ্যান ভাঙলো তার মনে হলো ভেতরের সত্ত্বাটাকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলেটাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তখুনি সে চট জলদী পিছু ঘুরলো। আজও তাকে অবাক হতে হলো। কারণ আজও পিছনে কেউ নেই। এতো দ্রুত সে গেলো কি করে?

~~~মানুষ মাত্রই ভুল। তাই কারোর ভুল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ না করে তার ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করুন।

#চলবে

ছেলেটার পরিচয় খুব শীঘ্রই জানতে পারবেন। একটু ধৈর্য্য ধরুন। আগামী পর্বে ধামাকা আছে। আপনাদের উদ্দ্যেশে বলছি।নেক্সট, নাইস বাদ দিয়ে দুই লাইন ভালো-মন্দ বলুন। আমি যদি শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনাদের জন্য গল্প লিখতে পারি আপনারা দুই লাইন গঠনমূলক মন্তব্য লিখতে পারবেন না? আজকে যদি নেক্সট, নাইস, স্টিকার কমেন্ট করেন তাহলে ধামাকা তো দূরে থাক আগামীকাল গল্পই পাবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here