#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
খোদেজা রান্নাঘরে বসে বটি দিয়ে তরকারি কুটছে। তার সামনেই জ্বলন্ত মাটির চুলা। সেখানে পাতিলে করে কাঁচা কলা সিদ্ধ হচ্ছে। তা দিয়েই আজকে দুপুরে খাবার জন্য ভর্তা করা হবে। ধারা আর শুদ্ধ’র আজকে দাওয়াত আছে, ধারার বাপের বাড়ি। ধারার ছোট চাচা বিয়েতে ছিলেন না। শুদ্ধকে দেখেননি। তিনি তার ভাতিজির জামাইকে দেখতে চান। সেই সুবাদেই আজ দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাদের। এই ফাঁকে পরিচয়ও হবে। এজন্যই আজ দুপুরে খাবারে ভারী আয়োজন রাখেননি খোদেজা। ছেলে, বৌ দুজনই চলে যাবেন। খাবে তো শুধু চুমকি আর সে। তাই ভাত, ভর্তা, বেগুন ভাজা আর একটু ডাল দিয়েই রান্নার পাটটা তাড়াতাড়ি চুকিয়ে ফেলার নিয়ত তার। কিন্তু তা হবে বলে মনে হচ্ছে না। পাশের বাড়ির মকবুল আর তার বৌ এসেছে খোদেজার কাছে। আজ সকালেই ছোটভাই আবুলের সাথে তার লেগেছে তুমুল ঝগড়া। সেই ঝগড়ার পুরো বর্ণনা আর এর পেছনে মূল দায়ী যে আবুলই তাই সাজিয়ে গুছিয়ে তারা শুনিয়ে যাচ্ছে খোদেজাকে। খোদেজা মনোযোগ দিয়েই ওদের দুজনের কথা শুনছে আর কাজ করছে। ধারা গেছে গোসলে। তাই শুদ্ধও গোসলখানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দুপুরের দাওয়াতের জন্যই আজ সকাল সকাল গোসল করা ধারার। ধারা গোসলে ঢুকেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। শুদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে উঠে বলল,
‘ধারা, আর কতক্ষণ? তাড়াতাড়ি করুন। আমাদের আপনাদের বাড়িতেও তো যেতে হবে।’
ভেতর থেকে ধারা চেঁচিয়ে বলল,
‘এই তো হয়ে গেছে। আর একটু….!’
কিছুক্ষণ পর ধারা ব্লাউজ পেটিকোটের উপর একটা হলুদ শাড়ি কোনরকমে পেঁচিয়ে বের হয়ে এলো। ভেজা জামা কাপড়ের বালতি হাতে নিয়েই বললো, ‘হয়ে গেছে, চলুন।’
যাবার জন্য এক পা বাড়িয়েও দিল ধারা। কিছুক্ষণ ধারার দিকে তাকিয়ে থেকে শুদ্ধ দ্রুত বলে উঠলো, ‘এক মিনিট! দাঁড়ান।’
ধারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কি হলো?’
‘আপনার এই অবস্থা কেন? শাড়ি শুধু পেঁচিয়েই রেখেছেন, পড়েননি কেন? আপনি শাড়ি পরতে পারেন না?’
‘পারি তো। কিন্তু শাড়িটা দেখছেন না! একদম নতুন শাড়ি, এখনও ভাঁজও ভাঙা হয়নি। পরতে গেলে ফুলে থাকবে। কল পাড় একদম ভিজে আছে। এখানে কিভাবে পরবো? তাই এখন কোনমতে প্যাচ দিয়ে রেখেছি। রুমের ভেতর গিয়ে পরবো। চলুন।’
আবারও ধারাকে থামিয়ে শুদ্ধ বলল,
‘দাঁড়ান, দাঁড়ান। যাবেন না। রান্নাঘরের সামনে মকবুল ভাই আর তার বৌ দাঁড়িয়ে আছে।’
ধারা থেমে গিয়ে কিছুটা ভেবে বলল,
‘ও! কিন্তু এখন আর কি করবো? কলপাড়ও তো একদম ভেজা। কুচি ঠিক করে পরতে গেলেই শাড়ি পুরো ভিজে যাবে।’
‘আপনি এখানেই শাড়ি নিয়ে এসেছেন কেন? এখন গোসল করে একটা থ্রি পিছ পরতেন তারপর না হয় ভেতরে গিয়ে শাড়ি পরতেন।’
‘ঠিকই। কিন্তু তখন তো আর এতকিছু ভাবিনি। আর আমি কি জানতাম এখানে কোন লোক এসে পরবে। এখন কি করবো? আচ্ছা দাঁড়ান।’
এই বলে ধারা ভেতরে গিয়ে মাথা টাথা ঢেকে আরো ভালো মতো শাড়ি পেঁচিয়ে বের হয়ে বলল,
‘এইবার হয়েছে? এখন চলুন।’
‘কোথায় হয়েছে? আপনার সাইডে কোমড় বের হয়ে আছে?’
ধারা লজ্জা পেয়ে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি সেখানে তাকিয়ে শাড়ি টেনে ঢেকে নিল। শুদ্ধ বলল,
‘আপনি একটা কাজ করুন। গোসলখানার ভেতরে যান। শাড়ি পরে তারপর বাইরে আসুন। দেরি হলে হোক।’
‘আপনাকে তো বললামই, কলপাড় পুরো ভেজা। আমি একা একা এখানে কিভাবে শাড়ি পরবো? এভাবেই চলুন। এখন তো ভালোমতো ঠিক করেছিই। তারা তো রান্নাঘরে দাঁড়ানো। আমি তাড়াতাড়ি ওটার সামনে দিয়ে চলে যাবো। সমস্যা নেই।’
শুদ্ধ বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বলল,
‘আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার সমস্যা আছে। আমি কাউকে এভাবে আমার বৌকে দেখতে দেবো না।’
এই বলে শুদ্ধ ধারার হাত টেনে গোসলখানার ভেতরে নিয়ে এলো। ধারা হতবাক। এতক্ষণ ভেবেছিল শুদ্ধ হয়তো ধারা অন্যদের সামনে লজ্জা পাবে ভেবে বলছে। আর এখন এটা কি শুনলো! আর কিভাবেই না দ্বিধাহীন লোকটা লজ্জাশুন্য কণ্ঠে কতই না অনায়াসে আমার বৌ বলে দিলো। মুহুর্ত গড়াতেই একদম লজ্জাবতী গাছটির ন্যায়ই গুটিয়ে গেলো ধারা। বুকের মধ্যকার অপ্রতিরোধ্য ধুকপুক ধ্বনি বৃদ্ধি পেলো কয়েকগুণ। শুদ্ধ বলল,
‘দেখুন, হিরোদের মতো আমি শাড়ি পরাতে পারি না। কোনদিন দেখিওনি কিভাবে পরে। আমি শাড়িটা ধরে রাখছি। আপনি আপনার মতো পরুন। কোন হেল্প লাগলে আমি চেষ্টা করবো।’
ধারা ধীরে ধীরে শাড়ি পরতে লাগলো। শুদ্ধ শাড়ি পানি থেকে ভেজানো থেকে বাঁচিয়ে রেখে যতটুকু সম্ভব ধরে রাখলো। বিপত্তিটা বাঁধলো কুচি ঠিক করতে গিয়ে। কুচি ঠিক করতে গিয়ে শুদ্ধ ঠিক করার থেকে বেশি আরো গুলিয়ে ফেললো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে উঠলো ধারা। শুদ্ধকে যতোই বলল ‘আপনি ছেড়ে দিন, হবে না। আমিই দেখছি।’ শুদ্ধ ততই নাছোড়বান্দা। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। এতো এতো কঠিন কাজ সে করেছে। শাড়ি পরানো এমন কি জিনিস যে সে পারবে না! আজকে শাড়ি পরানো সে শিখেই ছাড়বে। ধারার মনে হলো, আজকে বোধহয় ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পরবে। শুদ্ধ তখন একদম সিরিয়াস মুডে। তার সমস্ত ধ্যান শাড়ির কুচির দিকে। মনে হচ্ছে কোন জটিল যুদ্ধ পরিচালনার কাজে আছে সে। শাড়ির একপ্রান্ত শুদ্ধ’র হাত ফসকে ভেজা জায়গায় পরতে নিলে ধারা অনুযোগের স্বরে বলে উঠলো,
‘কি করছেন কি? এভাবে কেউ শাড়ি ধরে! এজন্যই বলছিলাম, আগে ভেতরে গিয়ে নেই।’
তখন বাইরে দিয়ে পাশের বাড়ির নাজমা কলপাড়ে আসছিল। ভেতর থেকে হঠাৎ এই কথাটা তার কানে আসলো। এই কথার মানে নাজমা কি বুঝলো কে জানে! মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হঠাৎ জোরে জোরে হেসে উঠলো সে। শুদ্ধ ধারা দুজনেই চমকে উঠলো। নাজমা বলতে লাগলো, ‘এইবার বুঝলাম মাহতাব ভাই। ভেতরে ভেতরে তাইলে এই চলে! এই কারণেই আমাদের কাউরে ভেতরে ঢুকতে দেন না।’
ধারার গাল লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করলো। শুদ্ধ কি করবে না করবে বুঝতে না পেরে মাথা চুলকে একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, ‘ভাবী, আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছু না।’
নাজমা দুষ্টমির ন্যায় বলে উঠলো, ‘আমি আবার কখন বললাম আমি কিছু ভাবতাছি? চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।’
নাজমা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। শুদ্ধ ধারা বিব্রত হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। নাজমা বলল,
‘চালায় যান দেবরজি, চালায় যান। আমরা ভাবী মানুষ কি আর দেবরের সোহাগের সময় বাধা হইতে পারি! আমি চললুম।’
নাজমা চলে গেলে শুদ্ধ, ধারা দুইজনই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বাকিটুকু ঝটপট করে ফেলে অবশেষে শাড়ি পরা সম্পন্ন হলো ধারার। সব শেষ হতেই ধারা বলল,
‘এইবার হয়েছে? এখন যাবো?’
শুদ্ধ হুম বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল, ‘এক সেকেন্ড!’ তারপর ধারার আঁচলটা টেনে দু হাত দিয়ে মাথায় একটা ঘোমটা পরিয়ে হেসে বলল, ‘এইবার একদম পার্ফেক্ট!’
শুদ্ধ মুখের হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো ধারার দিকে। ধারা তখন একটা হলুদ পরী। কাঁচা হলুদ আবরণে মুড়িয়ে থেকে, প্রভাত স্নানের স্নিগ্ধ সুভাস মুখরিত মুখমন্ডলে সকালের সোনালী রোদের লুটোপুটি খেলা তার ফর্সা মসৃণ ত্বকটিকে হলুদাভ করে তুলেছে। এই অনিন্দ্য হলুদ সুন্দরীটি তখন নিজ জ্ঞাত শুন্য। সামনের পুরুষটির গালের টোল পরা হাসিই যে তার ধ্যান কেড়ে রেখেছে।
__________________________________________
শুদ্ধ ধারার মধুপুর গ্রামে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর বারোটা বেজে গেলো। জামাই মেয়েকে একসাথে দেখে প্রসন্ন মুখে এগিয়ে গেলো আসমা। একে একে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলো সেখানে। শুদ্ধ শ্বশুর, শ্বাশুড়িকে সালাম করার পর পরিচিত হলো শাহেদের সাথে। আসমা ওদের দুজনকে ভেতরে বসিয়ে চলে গেলেন খাবারের আয়োজনে। শাহেদ গভীর মনোযোগের সাথে তার সামনে বসা ছাব্বিশ কি সাতাশ বছরের যুবকটিকে নিরীক্ষণ করতে লাগলো। না! জামাই হিসেবে দেখতে শুনতে খারাপ না। এখন মেয়ে যেহেতু দিয়েই ফেলেছে তাই আর কি করার! ধারা বলল,
‘ছোট চাচা, কাকী আর তামিম ভালো আছে? তাদেরকেও নিয়ে আসলেন না কেন?’
‘আরে ধারা, আমি কি আর বেশি দিনের ছুটি এনেছি। তামিম কত ছোট না! আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে কি আর এতো জার্নি করা যায়! আবার যখন বেশি দিনের ছুটিতে আসবো তখন নিয়ে আসবো। একসময় যাস আমাদের ওখানে বেড়াতে। তুই আর শু…শু কি যেন নাম!’
শুদ্ধ স্পষ্ট স্বরে বলল, ‘শুদ্ধ।’
‘কি?’
শুদ্ধ আবারও বলল, ‘শুদ্ধ।’
‘ঐ…যাস শুদ্ধকে নিয়ে বেড়াতে চট্টগ্রামে।’
ধারা মাথা দুলিয়ে বলল, ‘আচ্ছা।’
শাহেদ বলল, ‘আমি শুদ্ধকে নিয়ে একটু হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। তুই থাক এখানে। আর শোন, ফ্যান বন্ধ করে দে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। তোরও ঠান্ডা লাগবে।’
শাহেদের কথা অনুযায়ী ধারা উঠে ফ্যান বন্ধ করে দিলো। অথচ ধারার নাক মুখে ঘাম জমে আছে। তারা এই মাত্রই বাইরে থেকে এসেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার গরম লাগছে। তবুও ধারা কিছু বলল না। শুদ্ধ খানিক অবাক হলো।
শাহেদ শুদ্ধকে নিয়ে বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসল। এবার শুদ্ধকে সরাসরি বলল, ‘আচ্ছা শুদ্ধ, তুমি কি কাজ করো? বাড়ির কেউ তো দেখলাম তোমার কাজের ব্যাপারে ঠিকমতো গুছিয়ে বলতেই পারছে না।’
শুদ্ধ ও’র সমস্ত কাজের ধরণটা, কি করতে চায় সবটা শাহেদকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো। কিন্তু সবটা একদম মাথার উপর দিয়ে গেলো শাহেদের। এতে করে লাভটা কি সে বুঝতে পারলো না। শুদ্ধ তবুও ধৈর্য্যের সাথে শাহেদকে বোঝাতে লাগলো। শাহেদ বারবারই বারবারই শুদ্ধকে কথার মাঝে থামিয়ে বলতে লাগলো, ‘এসব বাদ দাও। তুমি নাকি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলে! রেজাল্ট অনেক ভালো! একটা কাজ করো বিসিএসে ট্রাই করো। একটা ভালো সরকারি চাকরি একবার পেয়ে গেলে তোমার আর ধারার দুজনেরই লাইফ সেট হয়ে যাবে। বিসিএসের জন্যই প্রিপারেশন নাও।’
শাহেদের সাথে শুদ্ধ একমত হলো না। সুস্পষ্ট এবং তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সাথে সে নিজের অভিমতটাই প্রকাশ করতে লাগলো। প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করলো শাহেদ। শুদ্ধ’র কোন কথাই না বুঝে শেষমেশ একটা কথাই তার বোধগম্য হলো, ছেলে তো দেখি বেয়াদব! বড়দের পরামর্শ শোনে না।
শাহেদ আর শুদ্ধ’র কথার আসর ভাঙলো আসমার ডাকে। টেবিলে খাবার সাজানো হয়েছে। ছেলেদের আগে খেতে দেওয়া হয়েছে। রাতুল গিয়ে বসলো ঠিক শুদ্ধ’র পাশে। এই অল্পদিনের আলাপেই দুলাভাইকে ভারী পছন্দ হয়েছে তার। প্রথম দিনেই তো কি সুন্দর রাতুল আর তার এক ক্লাসমেটের নিত্যদিনের ঝগড়ার কি সুন্দর সমাধান বলে দিয়েছেন তার দুলাভাই। সমাধানটা খুব সুন্দর কাজেও লেগেছে। সেদিন থেকেই শুদ্ধ তার পছন্দের। শুদ্ধ’র বলা সব কথাই রাতুলের কাছে কোন বিজ্ঞানীর থেকে কম লাগে না। আসমা ধারাকেও বলল তাদের সাথেই খেতে বসে যেতে। ধারা গড়িমসি করছিল। বলল পরেই খাবে। আজিজ সাহেব এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন। আস্তে করে তিনি পাশ থেকে বললেন,
‘বসতে বলছে যখন বসো।’
ধারা ঝট করে বাবার দিকে তাকালো। তার বাবা আজ কতদিন পর তার সাথে কথা বলল। মনটাই ভালো হয়ে গেলো ধারার। সে তাড়াতাড়ি শুদ্ধ’র পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো। খাবার দাবারের একটা হুলস্থূল কান্ড ঘটিয়ে রেখেছে আসমা। কি নেই টেবিলে! বেগুন ভাজা থেকে শুরু করে চিংরি মাছ ভুনা, ইলিশ মাছ ভাজা, রুই মাছের কালিয়া, মুরগির রোস্ট, গরুর ঝাল মাংস, পায়েস, পোলাও আরো কত কি! আসমা ব্যস্ত হয়ে পড়ল শুদ্ধকে আপ্যায়নে। শ্বাশুড়ির মন রক্ষার্থে শুদ্ধও খুব বেশি আপত্তি করলো না। ধারার চিংড়ি মাছ পছন্দ। প্রথমেই সে হাত বাড়ালো চিংড়ির বাটির দিকে। ধারার বাবা বলল, ‘এটা ঝাল বেশি হয়েছে। খেয়ো না। ইলিশ মাছ নাও।’
ধারা আর নিলো না। ইলিশ মাছ ভাজাই নিলো। শুদ্ধ খেয়াল করলো ঝাল অতো বেশিও না যে খাওয়া যায় না। আর তাছাড়া সবাই তো খাচ্ছে। আরো কয়েকবার ধারার কিছু বিষয় শুদ্ধকে অবাক করলো। দেখতে দেখতে একে একে সবার খাওয়াই শেষ হয়ে এলো। এখন শুধু টেবিলে আছে ধারা, শুদ্ধ আর শাহেদ। শুদ্ধ’র প্লেটে আসমা খাবারের পাহাড় বানিয়ে তুলেছিল বলেই শুদ্ধ পিছিয়ে গেছে। শাহেদ পায়েস খাচ্ছে। ধারার খাওয়াও মোটামুটি শেষ। খাওয়া শেষে ধারা যখন পায়েস নেওয়ার জন্য চামচ দিয়ে নিজের প্লেটের দিকে অগ্রসর হলো তখনই শাহেদ বলল, ‘ধারা, নিস না পায়েস। মিষ্টি বেশি হয়ে গেছে। তোর টেস্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটা কাজ কর হাত ধুয়ে আয়। তারপর দই খা।’
শুদ্ধ একবার ধারাকে কথায় কথায় বলতে শুনেছিল মিষ্টি জাতীয় খাবার তার বেশি পছন্দ। শাহেদ বলায় নিজের প্লেটের দিকে বাড়িয়ে নেয়া পায়েসের চামচও ধারা রেখে দিল। সে একবার নিজের থেকে টেস্ট করেও তো দেখতে পারতো এতটুকু মিষ্টি সে খেতে পারে কিনা! শুদ্ধ হতবাক হয়ে রইলো। শাহেদ চলে যাওয়ার পরই শুদ্ধ ডাকলো, ‘ধারা!’
ধারা পাশ ফিরে বলল, ‘হুম?’
‘আপনি কোথায়?’
শুদ্ধ’র হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে বুঝতে না পেরে ধারা বিভ্রান্ত স্বরে বলল, ‘এই যে।’
শুদ্ধ আফসোসের সহিত বলল, ‘আপনাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
চলবে,