হাতে রেখো হাত (৭)

0
130

হাতে রেখো হাত (৭)

অনেক কিছু কিনেছে আবরাজ। হাজার হোক চাচার বাড়ি। তবু খালি হাতে যাওয়া যায় নাকি? চাচা চাচির জন্য শাড়ি আর পাঞ্জাবী। রুবির জন্য গলার মালা। আর রুস্মির জন্য বই। বই নেওয়ার কারণ আছে। সেদিন অতোগুলো বই নিয়ে গেল রুস্মি। এক সপ্তাহেই পড়া শেষ! ফেরত দিয়ে গেছে। ঘরে আসে নি। রাস্তা থেকেই ফেরত দিল। তারপর কেটে গেল চারটে দিন। আবরাজ সময় বের করে এতো শপিং করেছে। এ মাসের বেতনের মোটা অংশ ব্যয় করে। আবরাজের হাতে থাকা জিনিস পত্র এগিয়ে নিল দারোয়ান। ভীষণ আনইজি লাগছে। ভেতর থেকে ছুটে এলেন রেবেকা বেগম। ছেলেটার মাথায় হাত বুলালেন। তারপর ঝরঝরে কেঁদে উঠেন। বিস্মিত না হলেও বিব্রত হতে হয় ওকে। চাচিকে নীরবে সান্ত্বনা দেয়। ভদ্রমহিলা চোখের জল মুছেন। “রুবি,রুস্মি কোথায় তোরা? দেখ কে এসেছে।”

বিকেল বেলা বাগান বিলাশ করা রুস্মির স্বভাব। বাড়িটা বিশাল নয় তবে পরিপাটি আর গোছানে। এক পাশে অনেক ধরনের গাছ লাগিয়ে ছোট করে বাগান করা। আর তারপাশেই রাখা দোলনা। রুস্মির কানে হেডফোন। কিছুই শুনতে পেল না মেয়েটা। রুবি এলো। আবরাজের সাথে প্রথম দিনই ওর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ছেলেটা খুব সহজ ভাষায় অপদস্ত করেছে ওকে। এই নিয়ে চাপা রাগ ছিল। সেটা যেন বেড়ে গেল হু হু করে। তবু সৌজন্যতায় হাসল। “কেমন আছো রুবি?”

“ভালো আছি। তুমি এমন সময় এলে, যখন বাবা বাড়ি নেই।”

“কোথায় গেছেন চাচা?”

” ব্যবসার কাজেই ব্যস্ত। তুই বাবা ভেতরে আয়। আমি ফোন করে দিব কাল ই চলে আসবে।” পাশ থেকে উত্তর করলেন ভদ্র মহিলা। রুস্মিকে না দেখতে পেয়ে বাগানে এলো রুবি। চট করে বসে পরে পাশে। দোলনাটা ইষৎ নড়তেই চোখ খুলে রুস্মি। রুবির শরীরে হাল্কা করে চাপর দিয়ে শুধায় “কি হলো তোর?”

“শ*য়তান ছেলেটা এসে গেছে।”

“কার কথা বলিস?”

“আবার কে, তোমার মা বাবার আদরের ভাতিজা আবরাজ।”

রুস্মি চমকালো। অন্য সময় হলে ধমকে দিত রুবিকে। আজ তেমন কিছুই করল না। চটপট উঠে গেল। রুবি সেদিকে তাকিয়ে কি যেন বিরবির করল।

নাস্তার আয়োজন দেখে চক্ষু বড় বড় হয়ে গেল। আবরাজ প্রায় হাত উচিয়ে বলল
“আমি এত খেতে পারব না।”

“কেন ডায়েট করা হয়?”

মিষ্টি হাসি দিয়ে বসল রুস্মি। পেছন পেছন এলো রুবিও। হাল্কা হেসে বলল
“আমার গানের ক্লাস শুরু হবে। আমি যাচ্ছি।”

রুবি চলে যেতেই আবরাজ বলল “ডায়েট না এটা লিমিটেশন। আমি এমন কোনো খাদক নই যে এতো খাবার খেয়ে ফেলব।”

“এতো খেতে হবে না। একটু একটু টেস্ট করে দেখো।”

আরও কিছু নাস্তা নিয়ে এলেন রেবেকা বেগম। আবরাজ এবার বাঁধা দিল।”চাচি আর কিছু না। আমি এগুলোর এক অংশ ও খেতে পারব না।”

“আর দিচ্ছি না। তুই কিন্তু আজ যেতে পারবি না।”

“আমাকে তো যেতে হবেই চাচি।”

“তোর চাচা রাগ করবেন।”

“চাচাকে আমি বলে দিব। তিনি রাগ করবেন না।”

“আচ্ছা মোবাইল ধর, বোঝা তোর চাচাকে।”

আনিসুল হক বললেন “ভালো আছিস বাবা?”

“জী। আপনি ভালো আছেন?”

“আল্লাহর রহমতে ভালো। তুই এসেছিস আমার যে কি ভালো লাগছে। এবার হয়তো মৃ*ত্যুর পর একটু শান্তি পাব।”

এ বিষয়ে মৌন রইল আবরাজ। ভদ্রলোক আরও কিছু বললেন। আবরাজ বারংবার বলল আজ চলে যাবে। কিন্তু আনিসুল সাহেব নারাজ। তিনি অনুরোধ করলেন আজ থেকে যেতে। কাল বিকেলেই চলে আসবেন। এক মন দ্বিধা নিয়ে সর্বশেষ থাকতে হলো ওকে।

রাতের খাবারের আয়োজন দেখে আবরাজ বিস্মিত না হয়ে পারল না। রুস্মি রান্না করেছে কিছু পদ। আর বাকি সব রেবেকা বেগম। সেসব পরিবেশন করে রুবি। সচরাচর রান্না ঘরে যাওয়া হয় না কারো। বাড়িতে কাজের লোক আছে। এলাহি জীবন না হলেও সুখের অভাব নেই। শখের বসে রান্না শিখেছে রুস্মি। সারাদিন গল্প উপন্যাসে ডুবে থাকা মেয়েটা তেমন চটপটে নয় এমন না। রুস্মি দারুণ স্বভাবের মেয়ে। কম কথা বলে তবে যখন কথা বলে তখন হৃদয়ে গেথে যায়।
আবরাজ খাচ্ছে না দেখে রুস্মি নিজে বেড়ে দিল। রেবেকা বেগম মাথার কাছে দাঁড়িয়ে। “আমার খারাপ লাগছে।”

“রান্না ভালো হয় নি?”

“আপনাদের কষ্ট দিলাম। আমার জন্য শুধু শুধু এতো সব।”

“তোর মা থাকলে আয়োজন করত না? কি করত তো?”
উত্তর দিলো না আবরাজ। রেবেকা বেগমের বুক চিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস সবাই শুনতে পায়। আঁচলের কোণে চোখ মুছে তিনি বলেন “তোর মা আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমি বড় বউ হলেও তোর মা সংসারে আগে এসেছে। আমি তার কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। সেই ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারব না।”

“ঋণ শোধ করতে চান চাচি?”

“ছি ছি তেমন কিছু না। আমি শুধু তোর চাচার ভুল গুলোর জন্য লজ্জিত। অরি তখন খুব ছোট। আমার হাতে মানুষ হয় নি তবে একটা ভালোবাসা ছিল। যখন শুনতে পেলাম খবরটা বিশ্বাস কর আমার মনে হয়েছে আমি আমার পেটের একটা অংশ হারিয়েছি। আমার পেটের সন্তান না তো কি হয়েছে। আমিও তো তদের আরেক মা।”

ভদ্রমহিলা কথার মাঝে চোখের জলের ফোয়ারা নামিয়েছেন। আবরাজের খারাপই লাগে। রুস্মি রুবিকে বলে মা কে ঘরে নিয়ে যেতে। তারপর আবরাজের পাশে বসে। নিচু কণ্ঠে বলে “তোমার সাথে ছোট সময়ের কিছু স্মৃতি আমার মনে আছে। আমি তোমার কাঁধে উঠার বায়না করতাম। অথচ তুমি আমার থেকে খুব বেশি বড় নও। তিন কি সাড়ে তিন বছরের ফারাক আমাদের। তবু তুমি আমাকে কাঁধে নিতে। এসব আমার খুব মনে পড়ে। বাবার কাজের জন্য সত্যিই আমরা লজ্জিত।”

সীরাতের কলটা এলো পরদিন সকালে। আবরাজ তখন গভীর ঘুমে। রুস্মি চা দিতে এসেছিল। ফোনের স্ক্রিনে নামটা দেখতে পেল। ‘মন ভালো হওয়ার বন্ধু’। নামটা এতো ভালো লাগে রুস্মির। সে চেয়ে থাকে। যখন ধ্যান ভাঙে তখন কল কেটে গেছে। চা রাখতে রাখতে ফের কল আসে। আবরাজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাল রাতে অনেক খাওয়া হয়েছে। নিজে থেকে সব পদ টেস্ট করালো রুস্মি। ছেলেটার ঘুমের ভাব থেকে রুস্মির ইচ্ছে হলো না ডেকে দেওয়ার। তবে অন্যের কল ধরার মতো কাজটিও করল না সে। চা রেখে নিচে একটা চিরকুট রাখল। দশটার পর ঘুম ভাঙে আবরাজের। অনেক ঘুম লেগে আছে দু চোখের পাতাতে। ধীরে ধীরে আরমোরা ভাঙে। পাশে থাকা চায়ের কাপ। হাতে নিতেই বুঝতে পারল ঠান্ডা হয়ে গেছে। চা কাপ রাখার সময় চিরকুটটা দেখতে পেল। লেখা ‘সুন্দর সকালের শুভেচ্ছা।’ লেখাটা ভালো লাগে আবরাজের। চট করেই বুঝে যায় রুস্মির কাজ। মেয়েটার মাঝে কেমন একটা শক্তি দেখতে পায়। সর্বদা সব বিষয়ে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে যেন।

এগারোটায় সীরাতের মিস কল দেখতে পায় আবরাজ। চারটে কল এসেছে। এই কদিনে মেয়েটার কথা একদম ই ভুলে বসেছিল। তখনি কল করে। “হ্যাঁ সীরাত কেমন আছো তুমি?”

“ভালো নেই আবরাজ। প্রচন্ড টেনশনে।”

“টেনশন কেন?”

“গত দিন একটা আঘা*ত পেয়েছি পায়ে। ব্যথাটা অনেক বেশি। আমি দৌড়াতে পারছি না আগের মতো।”

মন খারাপ হয়ে গেল আবরাজের। সীরাত জানালো দুদিন পর একটা রেস আছে। সেই রেসে অংশগ্রহণ করবে মেয়েটি। আরও কিছু কথা হলো ওদের। তারপর ই রেখে দিল সীরাত। আবরাজ লক্ষ্য করেছে পুরোটা সময় সীরাতের কণ্ঠ ছিল ভার। কয়েক মাসে এইটুকু জেনেছে সীরাতের বন্ধু নেই। ছোট থেকে ওর সাথে কম মিশতো সবাই। এর কারণ অধিক মেধা। বিষয়টা ব্যথিত করেছিল ওকে। প্রতিটা মানুষ ই কোনো না কোনো ভাবে অবহেলিত। ভীষণভাবে অবহেলিত।

** আমি গ্রামে এসেছি। যেই ফোন নিয়ে এসেছি এটায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। চার্জ হয় না। তিন ঘন্টা চার্জ দিলে দেখা যায় চার্জের পরিমান চার কি পাঁচ। এমন অবস্থায় লিখাই যাচ্ছিল না। তবু এই টুকু লিখেছি। রিচেক করা হয় নি। পাঠকরা একটু ধৈর্য ধরবেন বলে আশা করছা।***

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here