হাতে_রেখো_হাত (১১)

0
288

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#হাতে_রেখো_হাত (১১)

বি*ষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে গাছ গুলো সব শুকিয়ে গেছে। ঘন জঙ্গল ছিল সেখানে। তার পাশেই তৈরি করা হচ্ছিল ফ্যাক্টরি। যা দেশের কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলত। অনেক অনেক সার উৎপাদন করা হতো সেখানে। প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতি হয়েছে। খবরটা এলো ঘটনার এত দিন পর। এমন এক গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যার ফলে একটু একটু করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুরুতে এই বিষয়ে অবগত ছিল না কেউ ই। ল্যাবে পরীক্ষার পর বিষয়টি জানানো হয়েছে। মিডিয়ায় এসব নিয়ে চর্চা চলছে। প্রতিটি চ্যানেল ব্যস্ত নিউজটা জানাতে। খবর দেখছিলেন আনিসুল সাহেব। তিনি বিশেষ কিছু জানতেন না।আবরাজ কাজ শেষে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পরেছিল এইটুকুই জানতেন। কিভাবে কি হলো কোথায় হয়েছে এসব কাউকেই জানানো হয় নি। অনেকটা গোপনেই কাজ শেষ করেছেন পুলিশ প্রশাসন। ভদ্রলোক ঘেমে নেমে একাকার। স্ত্রীকে ডাকলেন “রেবেকা,রেবেকা, কোথায় তুমি।”

স্বামীর ডাকে এক প্রকার ছুটে এলেন ভদ্রমহিলা। বিচলিত আনিসুল সাহেবের মুখ দেখে বললেন “কি হয়েছে তোমার! শরীর খারাপ লাগছে। ডাক্তার ডাকব?”

“আবরাজ কোথায়?”

“ওকে নিয়ে বেরিয়েছে রুস্মি, রুবি।”

“এখনি ফোন করে, আসতে বলো।”

“কেন?”

“আহ কথা বলিও না তো। এখনি বলো আসতে।”

স্বামীর মুখের ভঙ্গিমা দেখে ফের প্রশ্ন করার সাহস হলো না ওনার। রুস্মিকে ফোন করা হলো। রুস্মি জানায় ওরা এসেই গেছে। মিনিট খানেক এর মাঝে চলে এলো ওরা। রুস্মিরা ঘরে প্রবেশের পূর্বেই আনিসুল সাহেব উঠে এলেন।
“কি হয়েছে বাবা?”

রুস্মির প্রশ্নকে অবজ্ঞা করে আরাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন
“কথা আছে তোমার সাথে।”

মৌন রইল আবরাজ। ভেতরে এসে বসল। রেবেকা বেগম চুলা নিভিয়ে সভায় যোগ দিলেন। চোখে মুখে হাজারো চিন্তা।
“তোমার অসুস্থ হওয়ার কারন কি ছিল আবরাজ? ”

“বিশেষ কিছু নয় চাচা।”

“মিথ্যে বলবে না দয়া করে।”

“ওটা কেবল এ*ক্সি*ডেন্ট।”

“বি*ষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে তোমার শরীর অসুস্থ হয়েছিল তাই না?”

আনিসুল সাহেবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। ঘরে থাকা প্রতিটা মানুষের ভ্রু বেঁকে গেছে। রুবি প্রায় বিরক্তি নিয়ে চেয়ে। এসব ফালতু কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবে ঘটনাটা কোনো ছোট নয়। তাই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। “বাবা আমি বুঝতে পারছি না কি বললে তুমি।”

“পুলিশ তোমায় জঙ্গলের রাস্তায় পেয়েছে তাই না?”

মাথা নাড়ালো আবরাজ। আনিসুল সাহেব হতাশ হলেন। আবরাজের নিকটবর্তী হয়ে দু চোখ বন্ধ করে বললেন “তোর বাবার সাথে আমি অন্যায় করেছি। তাই হয়তো তোর প্রতি খারাপ লাগাটা বেশি। তুই আমার র*ক্ত। তোর জন্য সত্যিই মায়া হয় আমার। যা তা হতে পারত। তুই কেন জানালি না আমাদের? খুব সামান্য বলে চালিয়ে দিলি সবটা! আরও বেটার ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন ছিল। সত্যিই আমি তোর নামে মাত্র চাচা।”

স্পষ্ট কণ্ঠটা ক্রমশ ভেঙে আসছে। ভীষণ খারাপ লাগছে আবরাজের। মূলত সকল ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায় ও। তাই অফিসার আবুলকে রিকোয়েস্ট করছিল পুলিশ প্রশাসন কিংবা নিজের লোক কাউকেই যেন এসব না জানানো হয়।

.

দুদিন পরের ঘটনা। একটা অনাকাঙ্খিত খবরে বদলে গেল পরিবেশ। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া রুবি পালিয়ে গেছে। তাও নিজের ক্লাইমেটের সাথে। বিষয়টা খুব দ্রুত ছড়িয়ে গেল স্কুলে। খবর এলো দুপুরে। রেবেকা বেগম ফোনের এপাশ থেকে চেচামেচি করছেন “কি সব উল্টাপাল্টা কথা। আপনারা পাগল হলেন। আমার মেয়ে এমন না। পালাবে কেন শুধু শুধু। আমরা যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছি ওকে। কাউকে পছন্দ হলে বললেই হতো। তাছাড়া কি এমন বয়স ওর।”

ওপাশ থেকে তেমন কিছু জবাব এলো না। সি সি টিভি ফুটেজ তেমনটাই বলছে। ঘটনাটা স্কুলের উপভোগের বিষয় হিসেবে চলতে লাগল। রেবেকা বেগম স্বামীকে খবর দিলেন। আনিসুল সাহেব কাজের জন্য অন্য জেলায়। তিনি খোঁজ নিতে বললেন। আবরাজ ট্রেরেসে ছিল। ঘটনাক্রমে চলে এসেছে। রেবেকা বেগম কুল কিনারা পাচ্ছেন না। সমানে কেঁদে যাচ্ছেন।
“চাচি আমি দেখছি, আপনি কান্না করিয়েন না। আসেন আমার সাথে। আগে ওর স্কুলে যেতে হবে।”

স্কুলে যাওয়ার পথে সীরাতের সাথে কথা হলো আবরাজের। মেয়েটা বুদ্ধিমতী। তাছাড়া প্রশাসনের সাথেও যোগাযোগ ভালো। রুবি মেয়ে মানুষ। অনেক ঘটনাই থাকতে পারে। রেবেকা বেগমের যা অবস্থা তাতে তিনি বিশেষ কিছু করতে পারবেন না। সীরাত কাছেই থাকে। খুব দ্রুতই চলে এসেছে। আবরাজরা গাড়ি থেকে নামতেই তিনজন স্কুলের ভেতরে চলে এলো। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে নিজের ক্লাসমেটের সাথেই স্কুল থেকে পালাচ্ছে রুবি। সাথে আছে কাপড়। এটা থেকেই ধারনা করা হচ্ছে দুজন পালিয়ে গেছে। রেবেকা বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে ফের চেচালেন। রাগান্বিত স্বরে স্কুল কতৃপক্ষককে দোষারোপ করলেন। স্কুলের হেডস্যার বিপাকে পরলেন। “শান্ত হোন ম্যাডাম। স্কুল কতৃপক্ষের কোনো দোষ নেই। দেখুন আপনার মেয়ে স্ব ইচ্ছায় পালাচ্ছে।”

“আপনাদের গার্ড কি করে। স্কুলে মেয়ে পাঠাই, নিরাপত্তা নাই কোনো।”

“ম্যাডাম আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। এখানে গার্ডের কি দোষ। গার্ড তো টহল দিচ্ছিল। ওরা তো পেছনের গেট দিয়ে পালিয়েছে। হয়ত আগেই পালাতো। তবে স্কুলে আসা যাওয়া করে পার্সোনাল গাড়ি দিয়ে। সেই জন্যই স্কুল থেকে পালিয়েছে যাতে ধরতে না পারেন। আমরা বিষয়টা লক্ষ্য হতেই দ্রুত খবর দিয়েছি।”

রেবেকা বেগম শুনছেন না কোনো কথা। রুবি ছোট। এই বয়সে নানা রকম চিন্তা কাজ করে। মেয়েটা কি করছে কে জানে। রুবির ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই রেবেকা বেগমের মাথা খারাপ। দুজন ম্যাডাম সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সীরাত বলল “স্যার, ছেলের ফ্যামিলিতে খবর দেওয়া হয়েছে?”

“জী। এখনি চলে আসবে।”

আবরাজ আর সীরাত একে অপরের দিকে চাইল। দুজনেই কুল পাচ্ছে না। রুবি নিজ ইচ্ছেতে বের হয়েছে। এখানে ছেলের একা দোষ নেই। ঘটনা ক্রমশ জটিল লাগছে। আবরাজ বলল “রুবির ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলতে চাই। আপনারা পুলিশে ইনফর্ম করেছেন তো?”

“পুলিশ, না মানে আসলে বুঝতেই পারছেন স্কুলের ইমেজের ব্যপার।”

সীরাত তেঁতে উঠল “মানুষ আপনারা! একটা মেয়ের লাইফ রিস্কে আছে। আর আপনারা পরে আছেন স্কুলের ইমেজ নিয়ে। ফাইন আমরাই দেখে নিচ্ছি।”

সীরাত আর আবরাজ বেরিয়ে এলো। রুবিকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওর। রুবির ক্লাসমেটদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানা গেল তা হচ্ছে ছেলেটার নাম
সুজিত। পড়াশোনায় তেমন ভালো না। তবে রুবির সাথে বেশ ভাব। বেশ কিছুদিন ধরে মেলামেশার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সীরাত কাছের থানাতেই খবর পাঠায়। মিনিট দশেকের মাঝেই এসে পরে তারা। স্কুলের বাচ্চারা ভয়ে তটস্থ। বিশেষ করে রুবি আর সুজিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। সুজিত সম্পর্কে বাজে কোনো রেকর্ড নেই। অল্প বয়সী ছেলে। সব মিলিয়ে জটলা বিঁধে যায়। সুজিতের বাবা মা আসেন। ক্লাসি ফ্যামেলি। দুজনেই হেড স্যারকে হুমকি দিলেন। এমনকি বললেন রুবি নামক মেয়েটিকে দেখে নিবে। সত্যি বলতে তাদের আচারণ একদিকে যেমন উগ্র ছিল অন্যদিকে স্বাভাবিক ই ছিল। কোনো বাবা মা নিজ সন্তানের বিরুদ্ধে কথা শুনতে পারেন না। তারা পেঁচিয়ে হলেও অন্যের দিকে দোষ ঠেকায়। আবরাজ শান্ত আর নীরব কণ্ঠে বলল “ছেলের জন্য নিশ্চয়ই চিন্তিত আপনারা। আমার বোনের জন্যও আমরা চিন্তিত। রাগারাগি ঝগড়া করে বিশেষ লাভ হবে না। একটা সমাধান বের করতে হবে। ওদের খুঁজতে হবে।”

সুজিতের বাবা পূর্ণ নজরে তাকালেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে অসাধারণ বলা চলে। কণ্ঠে ভদ্রতা। একটা বিনয়ী ভাব রয়েছে। তবু নিজের প্রভাব জানান দিতে পাত্তা দিলেন না তিনি। অফিসারের সাথে কথা বলতে লাগলেন। সীরাত অনেক সময় যাবত ফোনে কথা বলছিল। কথা শেষে আবরাজের কাছে এসে চাপা কণ্ঠে বলল “একটা সমস্যা হয়ে গেছে। দ্রুত বের হতে হবে আমাদের।”

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
নতুন পর্ব পেতে পেজে ফলো করে রাখলে পোস্ট করলেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন প্লিজ ফলো 👍👍👍গল্পগুচ্ছ সমগ্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here