#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#হাতে_রেখো_হাত (১৮)
মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ। আর তাঁর ই পাশে কান ধরে দাঁড়ানো সীরাত। আবরাজের অভিমান ভাঙানোর সাধ্য নেই মেয়েটির। তবু ছোট্ট করে বলল
“প্লিজ মাফ করে দাও।”
“আগে কেন বলো নি?”
“বললাম তো স্যরি।”
“উহু। হবে না।”
বেঞ্চে তে বসে পরল মেয়েটি। এবার ওর রাগ হচ্ছে খুব। সাধারন একটি জিনিসের জন্য মানুষ এত অভিমান করতে পারে?
আবরাজের রাগ অভিমান সব প্রশমিত হলো। তবে এবার বেঁকে বসল সীরাত। মেয়েটার কাছে এসে তোষামোদে করতে লাগল আবরাজ। খানিক বাদেই গগন কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করে সীরাত। “তুমি বড্ড বেশি ইমোশনাল। এমন হার্ট নিয়ে সেনাবাহিনীতে জয়েন করা সম্ভব নয়।”
“ভুল বললে সীরাত। আমি ইমোশনাল নই। না হলে এত গুলো দিন এই শহরে টিকে থাকতে পারতাম না।”
“কষ্ট পেয়েছ তুমি?”
“উহু।”
“তাহলে?” 👉👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র👈👈👈
“আমার এক্স হয় রাই। সম্পর্কটা খুব ই অসুন্দর শোনাচ্ছে। তবু এটাই বাস্তব। যাইহোক মেয়েটা এখন প্রেগনেন্ট, অথচ ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে মেনে নিচ্ছে না। এটা আমাকে অদ্ভুত যন্ত্রণা দিচ্ছে।”
“চিন্তা কর না মেনে নিবে ওকে।”
কথাটা বেশ সাবলীল গলায় বলল মেয়েটি। আবরাজের দৃষ্টি তে বিষন্নতা। চকচকে চোখে তাকায় সীরাত। কিছু টা এগিয়ে এসে বলে “আই লাভ ইউ।”
মেঘের গর্জনের মত শব্দটা কানে এসে বার বার বেজে চলেছে। আবরাজের ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটে উঠল। কেন উঠল জানা নেই। তবে কি এটা সত্য যে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে ক্ষণিকেই?
তিন দিন পরের ঘটনা। রকির সাথে সীরাতকে দেখে ঝটকা খেল আবরাজ। ভ্রু জোড়ার মাঝে কিছুটা রেখা ফুটে উঠেছে। সীরাত বলল “ভাইয়া ওর নাম আবরাজ।”
মৃদু হাসল রকি। আবরাজের পাশে এসে বসল। কাঁধে হাত রাখল। “আমার বোনের মন চুরি করে নিলে তুমি!”
ছেলেটা যেন লজ্জা পেল। মাথাটা নিচু করে ফেলতেই সীরাত বলল “ওকে লজ্জা দিও না তো। তুমি যে বাচ্চার বাপ হতে চললে।”
দু হাত মেলে দিয়ে কিছুটা অদ্ভুত ভঙ্গিমা করল রকি। আবরাজ যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইল সীরাতের দিকে। মৃদু হাসিতে মেতে উঠেছে সীরাত। একটা পেপার এগিয়ে দিল রকি। আবরাজের কণ্ঠে বিস্ময় “এটা কি?”
“রেজিস্ট্রি পেপার।”
“কিসের?”
“আমার আর রাই এর বিয়ের।”
তৃতীয় বারের মত চমকে উঠল আবরাজ। চাঁপা হাসির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রকি বলল “রাই কে আমি পছন্দ করতাম। বিদেশে পড়াশোনা করেছি আমি। দেশে ফিরে প্রপোজ করতেই প্রপোজ অ্যাকসেপ্ট করে নিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তোমার সাথে রিলেশন ছিল। বিষয়টা আমায় বেশ আঘা’ত করে। আমি বুঝেছিলাম ওকে শাস্তি দিতে হবে। ওকে বেঁধে ফেলতে হবে আমার ভালোবাসায়। নতুবা পরবর্তী সময়কাল সুন্দর হবে না। তাই একটা প্ল্যান করলাম। খুব সুন্দর করে রেজিস্ট্রি করে নেই। যা আঁচ করতে পারে নি রাই। আর আমরা ফিজিক্যালি ইনভলভ হই। মেয়েটা নিশ্চয়ই বোকা! না হলে এমন কাজ করে? যাই হোক যখন বুঝতে পারলাম কনসিভ করেছে তখন ওকে আমি অস্বীকার করি। বুঝতে পেরেছিলাম আমায় খুব ভালোবাসে। তবে যে অন্যায় করেছে তাঁর জন্য শাস্তি তো পেতেই হবে। সেই কারণে এমনটা করেছি আমি। বাট আমি খুব দ্রুত অফিসিয়ালি জানানোর ব্যবস্থা করব। রাই তো অনুতপ্ত। আর কষ্ট দিব না।”
চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে গেছে। হেসে ফেলে আবরাজ। ভীষণ ভালো লাগছে ওর। রাই এর জীবনটা নষ্ট হয় নি। সীরাতের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে “তোমার তো খবর ই আছে।”
.
আবুল নিজে একদম দেশপ্রেমি লোক। সেই কারনে মেয়েটাকে দেশের প্রতি ঝোঁকানোর চেষ্টা করেছেন সর্বদা। অবশ্য রকির ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন হয়ে যায়। কারণ ছোট থেকেই রকি বিদেশে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। তাই দেশের প্রতি ভালোবাসাটা ঠিক সেই ভাবে জন্মায়নি। তবে সীরাতের প্রতি পূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আজ সেই জন্যেই মেয়েটা দেশের জন্য কাজ করতে চাচ্ছে। রাই এর বাসায় বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন ওনারা। যদি ও অফিসিয়ালি বিয়েটা হয়েছে। তবে কিছু রিচুয়াল তো বাকি। সেই সাথে বড় করে গেট টুগেদার পালন হবে। সকলের সম্মুখে কেঁদে ফেলল রাই। নিজের ভুল টা বুঝতে পেরেছে। সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসে রকি কে। সবাইকে ভুলে রাই কে বুকে চেপে ধরে রকি। মেয়েটার মাথায় চুমু একে বলল “কিচ্ছু হয় নি। এভাবে কাঁদলে আমার বেবিটা ও অসুস্থ হয়ে যাবে। বেবির মাম্মাম কি এমন টা চায়?”
সবার চোখে খুশির ঝলক। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্য গুলো দেখে চলেছে আবরাজ। এই সময়টা তে অরিতা কে খুব বেশি মনে পরছে ওর। দু চোখ ঘোলাটে হয়ে গেল। মৃদু স্বরে পেছন থেকে সীরাত বলল “খুব মিস করছ ওকে?”
“অনেক বেশি। খুব ভালোবাসি ওকে। আমার ছোট্ট বোনটা।”
সীরাতের বুকের ভেতর ঝড় উঠে যায়। প্রিয় মানুষ টি কে কষ্টে নিমজ্জিত হতে দেখা সত্যিই প্রচণ্ড যন্ত্রণার।
ছেলেটা কে আনমনেই জড়িয়ে ধরে। চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল “অরির সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবে আমায়?”
“যাবে তুমি?”
“হ্যাঁ। অনেক দিন হলো যাই নি।”
চোখ মুছে মৃদু হাসে আবরাজ। তখনি বেরিয়ে পড়ে কব’রস্থা’নের উদ্দেশ্য। হাঁটা পথেই যাওয়া যায়। আবরাজের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে হেঁটে চলেছে সীরাত। মেয়েটার মনে চাঁপা কষ্ট হচ্ছে। কারন আবরাজ কে খুশি করার কোনো উপায় ওর জানা নেই। দুজনে কব’রস্থানে এসে দাঁড়ায়। নাকে গোলাপ পানির শুভ্রতা এসে লাগে। কি অপূর্ব স্থান তাই না। প্রতিটা মানুষের ঠিকানা এটা। মৃ’ত্যু হলেই কব’রস্থানে শুয়ে দিয়ে চলে যায় সবাই। বড্ড অদ্ভুত এ দুনিয়া। চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ডুকরে কেঁদে উঠে আবরাজ। বাবা মায়ের জন্য ও এতটা কষ্ট হয় নি যতটা কষ্ট হচ্ছে অরিতার জন্য। মেয়েটা যেন ওর অংশ বিশেষ। হাত দিয়ে অরিতার গ’নকবরটা দেখায় সীরাত কে। কাঁপা কন্ঠে বলে “বোন, আমার বোন শুইয়ে আছে এখানে। অন্ধকারে ভীষন ভয় ওর। অথচ এতগুলো দিন এভাবেই কাঁটিয়ে দিল। কত বুঝদার হয়ে গেছে তাই না? দেখ গাছ গুলোতে ফের ফুল হয়েছে।”
“তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না।”
ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবরাজ। কষ্ট তো হচ্ছে, ভীষন কষ্ট হচ্ছে। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। কষ্ট পেও না বললেই কষ্ট চলে যায় না। বুকটা ক্ষণে ক্ষণে তপ্ত হয়।গীষ্মের উত্তপ্ত রোদ্দুরে যেভাবে মাটি ফেঁটে যায়, হয় চৌচির ঠিক সেভাবেই ফেঁটে যাচ্ছে ওর হৃদয়।
দুজনে সকলের জন্য দোয়া করল। চোখের পানিতে ভিজে গেল হাত। সবার জন্য দোয়া শেষ হলে ক’বরস্থান ত্যাগ করল দুজনেই। ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে। প্রিয় বোনটা কবরে শুয়ে আছে যে।
রাস্তার ধারে দুটো খেজুর গাছ লাগানো। সেই খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বাঁধা। ছোট সময়ে রস চুরি করে খেয়েছে সীরাত। কিছুটা ডানপিটে ছেলেদের মতই ছিল ওর স্বভাব। আবরাজের মন ভালো করার উপায় পেয়ে গেছে মেয়েটা। ঢাকার শহরে এমন গাছ দেখা যায় না। প্রায়শই এসব নিয়ে মন খারাপ হতো। আজ যেন মন খারাপটা উবে গেল। শীতের সন্ধ্যা, এই দিকটা ও নির্জন। বায়না ধরল সীরাত। “প্লিজ আমাকে রস এনে দাও।”
“চুরি করব?”
“আরে হ্যাঁ এতে মজাই আলাদা।”
“কিন্তু”
“কোনো কিন্তু নয়। এতে টাকা রেখে যাব আমরা।”
কিছুক্ষণ ভাবে ছেলেটা। পরে সিদ্ধান্ত নেয় রস নামাবে। আশে পাশে তাকিয়ে বুকে থু থু দিয়ে সাহস জোগায়। বেশ কষ্ট করে উপরে উঠে। রস চুরি করে নিচে নেমেছে মাত্র তখনি চেঁচানোর শব্দ কানে আসে। ছেলেটা বুঝতে পারে বিপদ সীমার মধ্যে ওরা। কোনো মতে নিচে টাকা রেখে হাঁড়ি আর সীরাত কে নিয়ে ছুট লাগায়। পেছনে তাকানোর সাহস হয় নি আর।
একটা পার্কের কাছে এসে দম ফেলে। দুজনেই হেঁসে কুটি কুটি। আবরাজের হাত থেকে রসের হাঁড়ি নিয়ে রস পান করতে লাগল সীরাত। আবরাজ চাইতেই নাকোচ করে দিল। ভেঙ্চি মেরে বলল “রস এর সাথে খাতির নেই বন্ধু। দূর হটো তুমি।”
“ঠিক না এটা।”
আবারো ভেঙ্চি কাঁটে মেয়েটা। সাথে রস পান করতে থাকে তৃপ্তি নিয়ে। আবরাজ এর মাথায় বুদ্ধি আসে। মেয়েটা কে এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাতে রসের হাঁড়ি নিয়ে যায়। ছুটো ছুটির চেষ্টা চালায় সীরাত। তবে কিছু তেই পেরে উঠে না। বাঁকা হাসে ছেলেটা। কিছুটা কাছাকাছি হয়ে বলে “আমার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা ও করো না মেয়ে। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়। কখনো ছাড়ব না। কিছুতেই না, কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়। এই যে তোমার হাতে রাখলাম হাত।”
সীরাতের বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ হয়। আলগোছে ছেলটার বুকে হাত রাখে। আনমনেই বলে উঠে “প্লিজ এভাবেই অন্ততকাল হাতে রেখো হাত।”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ
সবাই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন প্লিজ বন্ধুদের ইনভাইট করে গল্প পড়ার সুযোগ করে দিন।
নতুন পর্ব পেতে পেজে ফলো করে রাখলে পোস্ট করলেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন প্লিজ ফলো 👉👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র👈👈👈🙏