হাতে_রেখো_হাত (২২) সমাপ্তি পর্ব

0
339

#হাতে_রেখো_হাত (২২) সমাপ্তি পর্ব

‘মিশনটায় ব্যর্থ হলে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। এটা খুব ই হৃদয়বিদারক হবে আবরাজ। আমার বিশ্বাস আছে আমাদের দেশকে রক্ষার্থে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তুমি।’

প্রাইম মিনিস্টার রকিব হোসেনের কথায় থমকে গেল আবরাজ। সামান্য ব্যথিত হয়ে বলল “আপনারা আমাকে আগে খবর পাঠান নি কেন স্যার?”

“ভেবেছিলাম সব সামলে নিবে সকলে। কিন্তু আবারো হামলা হবে ভাবতে ও পারি নি। সীমান্তবর্তী আক্রমন চালাচ্ছে ওরা। তুমি গত মাসে আবার নতুন করে জয়েন হয়েছ তাই ভেবেছিলাম পরে জানাব। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে না জানিয়ে উপায় নেই। তুমি তোমার ফোর্স রেডি কর।

“ইয়েস স্যার।”

স্যালুট প্রদান করল আবরাজ। ছেলেটির চোখে মুখে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে। বুকে রয়েছে দেশকে রক্ষা করার তীব্র শক্তি। তবে অনুভূতি বলে ও কিছু আছে। এ মিশনে প্রান সংশয় হতে পারে। সীরাতকে এ বিপদে কি করে নিবে?
ছোট্ট মেয়েটার কথা ভীষন মনে পরছে ওর। দু চোখের কোণে পানে জমে উঠল। বাসায় ফিরে আসতেই সীরাত বলল “প্রাইম মিনিস্টার স্যারের সাথে কথা হয়েছে?”

“হ্যাঁ।”

“কি বললেন?”

“এমনি এতদিন পর জয়েন করায় শুভেচ্ছা বার্তা জানালেন।”

“ওহ আচ্ছা শোনো না। সীমান্তের অবস্থা কেমন দেখাচ্ছে। আমি কিছু ফোর্স লাগিয়েছি।”

ছেলেটার কপালে কয়েকটা ভাঁজ পরল। সীরাতের দিকে সুচালো দৃষ্টি দিয়ে বলল “কেমন দেখাচ্ছে বলতে?”

“আজ ও দুজন লোক দেশে প্রবেশ করার চেষ্টায় ধরা পরল। সুবিধা মনে হলো না।”

“আচ্ছা। সীরাত শোনো একটা কথা বলার ছিল।”

“হ্যাঁ বল না।”

আবরাজের পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল সীরাত। আবরাজ মিনমিনে কণ্ঠে বলল “আমার মনে হয় বাবু বড় হওয়া অবধি তোমার বাসায় থাকা উচিত।”

“আবরাজ! আমাদের তিহুন ব্রেভ গার্ল। দেশের জন্য ত্যাগ করতেই হবে।”

“কিন্তু সীরাত বোঝার ট্রাই কর।”

ছেলেটা কথা শেষ করতে পারল না তাঁর আগেই কয়েক টা গোলার আওয়াজ শুনতে পেল। সীরাত আর আবরাজ এক পলক নিজেদের দেখে বেরিয়ে পরল। সীমান্তে বোমা আঘা*ত করা হয়েছে। আবরাজের কপালে বিন্দু বিন্দু পানি কনা। চেঁচিয়ে উঠল সীরাত। সব সৈন্যরা প্রস্তুত হতেই বলল “সবাই চেকিং লাগাও। আমাদের মধ্যেই রয়েছে সেই দুষ্কৃতী। টাকা খেয়ে আমার দেশকে অপমান করেছে সেই জা’নো’য়ার।”

সীরাতের উদ্দীপনা দেখে আবরাজের গা ঝটকা দিয়ে উঠল। শিরায় শিরায় র’ক্ত চলাচল থেমে গেল। কাছে আসল সীরাত। মেয়েটার চোখে পানি চিক চিক করছে। ভাঙা তার কণ্ঠস্বর। “এই কারনে প্রাইম মিনিস্টার তোমাকে ডেকেছে তাই না? আর তুমি আমাকে বাসায় ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছ?”

কথাটা বলে এক মুহূর্ত থাকল না মেয়েটি। ছুটে গেল সীমান্তের দিকে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ। স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। দেশের প্রতি প্রেম ভুলে শুধুমাত্র নিজ পরিবার কে নিয়ে ভাবা শুরু করেছিল। নিজে ও ছুটে গেল সীমান্তের দিকে। বোমা আ’ঘা’তে তিনজন সৈন্য প্রান হারিয়েছে ইতোমধ্যেই। তবে কে বা কারা আ’ঘা’ত করেছে তা ধরতে পারে নি কেউ। তিনজন সৈন্যকেই নিয়ে যাওয়া হলো। সম্মান দিয়ে এদের দাফন করা হবে।

সীরাতের চোখে পানি। আবরাজ এর আচারন মেনে নিতে পারছে না কোনোক্রমেই।

ছয়টা দিন গরু খাটুনির পর সেই রাজাকারকে শনাক্ত করেছে সীরাত। এই ছয় দিনে একটি বারের জন্য ও আবরাজের সাথে কথা বলে নি। আবরাজ হতাশাগ্রস্ত। উক্ত রাজাকার রূপী সৈন্য কে মৃ’ত্যু দেওয়া হয়েছে।

সৈন্যদের নির্দেশনা দেওয়ার পর সীরাতের কাছে এলো আবরাজ। মেয়েটির হাত ধরে অনুনয় করল, “আমাকে ক্ষমা কর সীরাত।”

“তোমার মধ্যে দেশ প্রেম নেই আবরাজ। চলে যাও তুমি।আমি একাই রক্ষা করব আমার দেশকে।”

“তুমি ভুল ভাবছ। আমি তো তিহুনের কথা ভেবে তোমাকে সেইফ রাখতে চেয়েছি।”

“থামো আবরাজ। এ কথা মাথায় ও নিবে না। আমার মেয়ে একা বড় হবে এই পৃথিবীতে। তবে গর্বের সহিত বলতে পারবে আমার মা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।”

“সীরাত আমি দুঃখিত।”

মাথাটা নিচু করে ফেলে আবরাজ। ছেলেটা কাঁদছে। শুকনো ঢোক গিলল সীরাত। আশে পাশে অনেক সৈন্য রয়েছে। যদি দেখে প্রধান নিজেই দূর্বল, তাহলে তাঁদের মাঝে ও ভয় কাজ করবে। আবরাজের পিঠে হাত বুলায় মেয়েটি। ” অতীত ভুলে যাও। এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই, দেশ কে রক্ষা করা। সীমান্ত দখল হলে আমাদের দেশ দূর্বল হয়ে যাবে।”

“হ্যাঁ।”

দুজনেই শটান হয়ে দাঁড়ালো। সৃষ্টি কর্তার কাছে কিছুক্ষণ প্রার্থনা করে সেনাবাহিনীর নীতিবাক্য পাঠ করল
“সমরে আমরা শান্তিতে, আমরা সর্বত্র, আমরা দেশের তরে।”

বুক থেকে হাত নামিয়ে চেঁচিয়ে উঠল সীরাত ও আবরাজ। সৈন্য দের উদ্দেশ্য করে বলল ‘জয় বাংলা।’

বো’মা আঘা’তে বিধ্বস্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান। সব থেকে বিপর্যয়ে রয়েছে আবরাজের আন্ডারে থাকা সীমান্ত। কারণ এই পথ জয় করলেই দেশ দূর্বল হয়ে পরবে। খবরটা দেখেই আঁতকে উঠল রাই আর রকি।

আবরাজ আর সীরাতের সঙ্গে কথা বলল। মনের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে সকলের। আবুল অচিরেই চোখ মুছলেন। গত মাসেই রিটায়ার্ড হয়েছেন তিনি। তবে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বললেন ‘আমার দুই সন্তানের প্রাণ যাক তবু ও আমার দেশ শান্তিতে থাক।’

আবুলের মুখে এমন অনুপ্রেরণা মূলক কথা শুনে সীরাত ও আবরাজ দুজনেই কেঁদে উঠল। হাত নাড়িয়ে বেস্ট অফ লাক জানালেন তিনি। তিহুনকে ভাসা চোখে এক পলক দেখল সীরাত ও আবরাজ। মেয়েটি আধো আধো বুলিতে বলছে ‘বেত অব লাক মাম্মা পাপা।’

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে হেসে উঠল দুজনেই। ল্যাপটপটা অফ করে সীরাত কে বুকে চেপে ধরেছে অবরাজ। ক্ষীন তার কণ্ঠস্বর। “আমাদের মেয়েটা অনেক বড় হবে দেখ। এই ছোট বয়সে স্বীকার করা ত্যাগ যেন ধরে রাখতে পারে। এভাবেই সারাজীবন দেশের জন্য নিজের স্বার্থকে উস্বর্গ করে।”

“হ্যাঁ সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা।”

আবরাজ আর সীরাত বেরিয়ে পরল নিজের দেশকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। সীমান্তে আসতেই গো লাগু লির শব্দ কানে আসল। প্রাণ ঘা তী রা কাছাকাছি এসে পরেছে তবে।

তীব্র গু লির হামলা চলল। আ ক্রম ন কারীরা বুঝতে পারে নি এতটা শক্তিশালী হয়ে গেছে বাংলা মায়ের সন্তানেরা! নানান যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরাস্ত করে ফেলল শত্রুদলকে।

সকলে এক যুগে জয় বাংলা ধ্বনিতে মেতে উঠল। সীরাতের চোখে পানি চিক চিক করছে। আবরাজের গলাটা ভার হয়ে আছে। দুজনে দুই প্রান্তে ছিল। ছুটে এলো দুজনেই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমরা পেরছি।”

“হ্যাঁ সীরাত আমরা পেরেছি আমাদের দেশকে রক্ষা করতে।”

সমস্ত খবর লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছে। রকি রাই আর আবুল ও এসে গেছেন। সাথে করে নিয়ে এসেছেন তিহুন আর রিদুকে। তিহুন বার বার জয় বাংলা জয় বাংলা কথাটি বলে যাচ্ছে। ফোনের এপাশ থেকে কথা টা শুনে হেসে উঠল সীরাত ও আবরাজ। এখনো স্পর্টে রয়েছে সকলে। সবাই মিলে নিজেদের বিজয় উল্লাসে ব্যস্ত।

সবাই যখন চলে যাবে তখনি চোখ যায় নদী পথে আসা জলদস্যুদের। এরা এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল! আপাতত সব কিছু অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চেঁচিয়ে উঠল আবরাজ। “রাইফেল নিয়ে আ ক্রম ণ চালাও সকলে।”

সবাই রাইফেল চালাতে থাকল। জলদস্যুদের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। যাহ স্বচক্ষে দেখল তিহুন আর রিদু।এই প্রথম রাইফেল চালাতে দেখল ওরা। সব সময় টিভিতে দেখেছে। দুজনেই এগিয়ে আসতে লাগল।

স্বস্তির দম ফেলেছে আবরাজ। তখনি পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠে সীরাত। শেষ কয়েক জন শত্রু এখনো রয়েছে। দুটো গু লি এসে লাগল আবরাজের বুকে! সীরাত যেন থমকে গেল। তবে নিজ হাতে শেষ করল সেই দুজন শত্রুকে। আবরাজের কাছে আসতেই কোথা থেকে দুটো গু লি এসে লাগল সীরাতের গাঁয়ে। কাঁপা হাতে সেই শত্রুর দিকে গু লি ছুঁড়ে দিল আবরাজ। শেষ শত্রুটিও মাটিতে লুটিয়ে পরল। সীরাত আর আবরাজ দুজনেই আঘা ত প্রাপ্ত। মেয়েটা পড়ে গেল মাটিতে। একটু একটু করে এগিয়ে আসে আবরাজ। সীরাতের হাত ধরতেই যেন অপরিমেয় শান্তি মিলে। পৃথিবীর সমস্ত যন্ত্রনাকে হার মানায় মৃ ত্যু যন্ত্রনা। তবু ও যেন স্বস্তি পেল দুটি আত্মা। মুখ থেকে র ‘ক্ত ঝরতে লাগল। সীরাতের হাতে আলগোছে চুমু খায় অবরাজ। তীব্র ব্যথা নিয়েও হাসছে সীরাত। ইশারায় সামনে তাকাতে বলল। অবরাজ আর সীরাত দেখতে পেল আগামীর যোদ্ধাকে। রিদু আর তিহুন একে অপরের হাত ধরে ছুটে আসছে এ দিকে। দুজনের চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। আগামীর দেশ প্রেমিকদের দিকে তাকিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল দুজনে। মৃত্যুর পূর্বে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে কালিমা পাঠ করল। তারপর সেনাবাহিনীর নীতিবাক্য পাঠ করেই একে অপরের হাতে রেখে হাত, হারিয়ে গেল চিরতরে এই পৃথিবীর বুক থেকে। পথিমধ্যে হঠাৎ করেই রিদু আর তিহুন থেমে গেল। শুনতে পেল নীতিবাক্য
‘সমরে আমরা শান্তিতে, আমরা সর্বত্র, আমরা দেশের তরে।’

~সমাপ্ত~
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

**কাল থেকে নতুন গল্প আসবে ইনশাআল্লাহ। অভিনব আর ঝিলকে নিয়ে লেখা তথা ধূসর রঙের প্রজাপতি ২।

ফাতেমা তুজের সমস্ত গল্প
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/139690821925154/?app=fbl

পাঠক মহল
https://facebook.com/groups/2944711092471263
/
লেখকের আইডি
https://www.facebook.com/fatema.tuz.9469

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here