হাতে_রেখো_হাত (৪)

0
140

#হাতে_রেখো_হাত (৪)

এইচ এস সি রেজাল্ট প্রদান করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে পাস করেছে আবরাজ। ছেলেটা খুশি হবে নাকি দুঃখী হবে ঠিক বুঝতে পারছে না। অরিতা সব সময় বলতো ওর ভাইকে বেস্ট রেজাল্ট করতে হবে। তেমনি রেজাল্ট করেছে ছেলেটা। তবে সে সংবাদ অরিতার কানে পৌছালো না। বেশ মনোকষ্ট নিয়ে এক গুচ্ছ বেলি ফুল কিনে নিলো ছেলেটি। অরিতা কে গনক*বর দেওয়া হয়েছে। ক*বরস্থানের কাছে আসতেই মৃদু শীর শীর বাতাস এসে ওকে স্পর্শ করে গেল। এক মুহুর্তেই জন্য অনুভব হলো ঐ স্পর্শ যেন অরিতার ছোট ছোট হাতের স্পর্শ। মেয়েটি প্রায় সময় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো ওকে। আর চোখ বন্ধ করে বোনের দেওয়া ভালোবাসা গ্রহন করতো আবরাজ। দীর্ঘ সময় এভাবেই পার হয়ে গেল। কয়েকটা কাকের কা কা ধ্বনি তে ওর ধ্যান ভাঙে। হাসে, কষ্টের হাসিই বটে। কব*রের পাশে এসে ফাঁকা ঢোক গিলে। অরিতার জন্য দোয়া, প্রার্থনা করে সাথে প্রার্থনা করে সকল ক*বর বাসীর জন্য। ফুলটা ক*বরের পাশে রেখে মাটিতে হাত বুলায়। কাল রাতে বেশ বৃষ্টি হয়েছিলো। তাই মাটি ভেজা। ছেলেটার বুক ধক করে উঠলো। অরিতার ঠান্ডার সমস্যা ছিলো। আজ ও কি ঠান্ডা লেগে গেলো ওর? অরির কি কষ্ট হচ্ছে ঠান্ডায়? মেয়েটা বৃষ্টা আসলেই ভাই ভাই করে চেঁচাতে। কাল ও কি চেঁচিয়েছে অরি? হাজারো জল্পনা কল্পনা এসে ভর করে মস্তিষ্কে। চোখ দুটোর কোণ ভেজা নোনা জলে। আবরাজের ইচ্ছে হয় হাউমাউ করে কাঁদতে।ক*বরে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
” বোন এই বোন কেমন আছিস তুই? কষ্ট হচ্ছে খুব। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা বাঁধিয়েছিস নিশ্চয়ই। তোর অভাগা ভাইয়ের সাধ্য হলো না তোকে রক্ষা করার। আল্লাহর কাছে কতো বার বললাম আমার বোনটা কে নিয়ে নিও না। কিন্তু তিনি তোকে ও নিয়ে গেল। বেলি ফুল তোর খুব পছন্দের তাই না? দেখ একদম তরতাজা ফুল এনেছি। খুশি তো তুই? এই অরি, শুনতে পাচ্ছিস তুই তোর ভাই সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে পাস করেছে। তোর সেরা ভাই, অরি বোন আমার। আমি বাঁচতে পারছি না। শক্তি নেই আমার মাঝে। ”

আবারো আর্তনাদে ভেঙে পরে ছেলেটি। সব পরিস্থিতি তে কঠোর থাকার শক্তি এখন আর নেই ওর।পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে হারিয়ে একদম ই ভেঙে পরেছে ছেলেটা। চোখের পানিতে শুকিয়ে যাওয়া মাটির মাঝে আবারো দাগ উঠে। কাঁধে কারো স্পর্শ পায়। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে লোকটা বললেন ” শান্ত হও বাবা। শান্ত হও, জীবনটা কে এতো ঠুনকো ভেবো না। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকে একটি লক্ষ্য দিয়ে পাঠান। তোমাকে ও পাঠিয়েছেন এমন এক লক্ষ্য দিয়ে। ”

” আপনি? ”

” কব*রস্থান দেখা শোনা করি আমি। পাশেই ছিলাম, রোজ অনেক মানুষ কান্না করে এখানে। তবে তোমার আর্তনাদ শুনে না এসে পারলাম না।

বৃদ্ধ লোকটি শ্বাস ফেললেন। ভারী গরম এক নিশ্বাস।
তারপর বললেন ” তোমার বোন হয়? ”

আবরাজ উঠে দাঁড়ালো। কব*রটা আরেক বার দেখে বলল ” হ্যাঁ। আমার বোন কে দেখে রাখবেন। মেয়েটা বড্ড ভীতু প্রকৃতির। ”

চোখ মুছে এলোমেলো পায়ে ক*বরস্থান থেকে বের হলো আবরাজ। বৃদ্ধ লোকটি ভাষাহীন নির্বিকার। এমন ভালোবাসা খুব কম ই দেখেছেন তিনি। ভালোবাসার কোনো সীমা নেই। অন্তত অসীম এই প্রক্রিয়া সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে।

ক*বরস্থান থেকে বেরোলেই একটা মসজিদে আছে। নামাজ পড়ে মসজিদেই অবস্থান করলো আবরাজ। বিগত মাস দুয়েক ধরে এখানেই থাকছে ছেলেটা। দুপুরে নামাজ শেষ করে খাবার খাওয়ার জন্য বের হয়েছে। তখনি চোখে পরে একটা মেয়েকে। মুখে মাক্স লাগিয়ে ছুটছে। দেখে মনে হচ্ছে পেছনে কোনো লোক লেগেছে। আবরাজ নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। ছুটে গেল ঐ মেয়েটির দিকে। একটু দূরে এসে হাপাচ্ছে মেয়েটি। আবরাজ ওহ হাপাচ্ছে। পেছন ঘুরে ওকে দেখে বলল ” কি চাই? ”

” আপনি এভাবে ছুটছিলেন কেন? কেউ তাড়া করেছে আপনাকে?”

” ওহ হো এর জন্য এসেছেন? ”

” হ্যাঁ। ”

মাক্সটা খুলে ফেললো মেয়েটি। নির্লিপ্ত তাকিয়ে রইলো আবরাজ। অনেক সুন্দরী না হলে ও বলা চলে বেশ মায়াবী মেয়েটি। বয়স বেশি হলে আঠারো হবে।

আবরাজের কাছে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি। ভালো করে পরখ করে বলল ” সৈয়দ আবরাজ? ”

অচেনা মেয়েটার মুখে নিজের নাম শুনে চমকালো বেশ। মেয়েটা দারুন এক হাসি উপহার দিয়ে হাত বাড়ালো। হাতের দিকে এক পলক তাকালে ও হাত মেলালো না আবরাজ। মেয়েটি তাঁতে বিন্দু মাত্র অপমান বোধ করলো না। বরং অধর কোণে হাসি রেখেই বলল ” আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি এখন। ”

” আমাকে? ”

” এইচ এচ সিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছেন তাই না? ”

” হ্যাঁ। ”

” আমি ও এইচ এস সি ব্যাচ। তবে আপনার মতো এতো ভালো নাম্বার পাওয়া হলো না। তবে বোর্ড পর্যায়ে প্রথম হয়েছি। দৌড়াচ্ছিলাম কারন আমি সেনাবাহিনীতে জয়েন হতে চাই। কিছু দিন পূর্বে একটি ঘটনা ঘটে গেলো জানেন নিশ্চয়ই। আমার মন সেই দিন থেকে সেনাবাহিনীতে জয়েন করার জন্য উতলা হয়ে রয়েছে। দেশের পরিস্থিতি দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে। কোন দিন পুরো দেশটাই লুট হয়ে যাবে জানতে ও পারবে না কেউ। আমি চাই আমার দেশকে ভালোবাসতে,ভালো রাখতে। তাই এই পদে জয়েন হতে চাচ্ছি। ”

থমকে গেছে আবরাজ। মেয়েটির কথা শুনে ভেতর থেকে ভালো লাগা কাজ করলো। মনে মনে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিলো। মুখের সামনে তুরি বাজাতেই চমকে উঠলো ছেলেটি। মেয়েটি বলল ” উইল ইউ বি ফ্রেন্ড? ”

হেসে সম্মতি প্রদান করলো আবরাজ। বহু দিন পর ভেতর থেকে শান্তি অনুভব হচ্ছে। মেয়েটির সাথে কথা বলে জানতে পারলো মেয়েটির নাম সীরাত। পুরো নাম সিদ্রাতুল সীরাত।

সীরাত বেশ ফ্রেন্ডলি কথা বলে। আবরাজ হেসে বলল
” আপনার নাম টা বেশ ইউনিক? ”

সরস হাসলো মেয়েটি। এক পলক তাকিয়ে বলল
” আপনার নাম টা আরো বেশি ইউনিক। বাই দ্যা ওয়ে আমরা আপনি করে কেন বলছি? সেম ব্যাচ সেম এইজ ওহ তাহলে তো তুমি করেই বলা যায়। ”

আবরাজ ও সম্মতি জানালো। কথা বলতে বলতে আসরের আজান পরে গেল। আবরাজকে বিদায় জানালো মেয়েটি। যাওয়ার পূর্বে বলল ” খুব ভালো হলো তোমার সাথে পরিচয় হয়ে। পরে দেখা হবে। মসজিদে থাকছো তাই না? ” ”

” হ্যাঁ। ”

” আচ্ছা বাই। ”

মৃদু হাসলো আবরাজ। সীরাত চলে গেল লম্বা লম্বা পা ফেলে।
.

অনেকক্ষণ ধরেই মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করছেন ভদ্রলোক। লম্বা দেহ চওড়া বুক। মুখের ভঙ্গিমা শক্ত। আবরাজকেই দেখেই উঠে এলেন। প্রথমে খেয়াল করে নি আবরাজ। পা ধোয়ার সময় দেখতে পেল।
” আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস বাবা? ”

” ভালোই। ”

” বাড়ি যাবি না? ”

” কোন বাড়ি? ”

” আমার বাড়ি। তোর চাচি অপেক্ষায় আছে। ”

” যাবো না আমি। চাচিকে অপেক্ষা করতে বারণ করবেন। ”

” আবরাজ, বাবা রাগ করিস না তুই। ছোট সময়ের ঘটনা নিয়ে কেউ মন খারাপ করে থাকে? ”

” মন খারাপ নেই চাচা। যদি তেমনি হতো তাহলে আমি বা বাবা লিগ্যাল অ্যাকশন নিতাম। এর কিছুই যেহেতু করি নি সেহেতু আপনারা নিশচিন্তে থাকতে পারেন। ”

মন খারাপ হলো লোকটির। তিনি আবরাজের কাঁধে হাত রেখে বললেন ” সময়ের সাথে সাথে মানুষ পরিবর্তন হয়। আমরা নিশ্চয়ই তদের ভালোবাসি। ”

” মাফ করবেন চাচা। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি নামাজে যাবো। ”

আনিসুল সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। আবরাজ নামাজে গেলে তিনি ও গেলেন। নামাজ শেষে বললেন
” অরির জন্য খারাপ লাগছে। তবে ভাগ্যে হয়তো এটাই ছিল। তোর চাচি অসুস্থ। তাই আসতে পারে নি। কখনো যদি মনে হয় সব ভুলে…. ” থামলেন তিনি। গলায় আটকে আসে কথা। আবরাজ মৌন রইলো পুরোটা সময়।

রাতে ফোন করলো সীরাত। ” ঘুমাচ্ছিলে তুমি? ”

” না। ”

” আমার কিছু জানার ছিল। ”

” কোন বিষয়ে? ”

” তোমার নানা বাড়ির বিষয়ে। ”

” কেউ নেই। ” সীরাত বুঝলো এ বিষয়ে কথা বলার উপযুক্ত সময় নয় এখন। তাই ফোন রেখে দিলো মেয়েটি। আবরাজ আকাশে দিকে তাকিয়ে। বড় চাঁদ উঠেছে। হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে যেন। অরি চাঁদ দেখতে ভালোবাসতো। এখনো কি চাঁদ দেখে না অরি? আগের মতো রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে নির্লিপ্ত চাহনিতে?

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

আমার লেখা বড় গল্প
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/139690821925154/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here