হাতে_রেখো_হাত ( ৯ )

0
107

#হাতে_রেখো_হাত ( ৯ )

চোখে হঠাৎ কিছু পড়েছে। জ্বালা করছে বেশ। মনে হচ্ছে বিষা*ক্ত কোনো গ্যাসের প্রভাব। কাজ শেষে ফিরছিল আবরাজ। আজ একটু বেশিই রাত হলো। প্রায় দশটা বেজে গেছে। অথচ কাজ শেষে সাতটায় বাড়ি ফেরার কথা। এক বন্ধুর সাথে অনেক দিন পর দেখা। আড্ডা দিতে গিয়েই এই বিলম্ব। লেট হওয়ায় শর্টকাট নিয়েছিল। পথে ধোঁয়ার আবিষ্কার। একটু ভয় হয়। তবু এগিয়ে চলে। ধোঁয়া গুলো ক্রমশ জড়িয়ে নিচ্ছিল ওকে। আবরাজ অনুভব করে বিষয়টা ভালো দিকে যাচ্ছে না। যতক্ষণে ফিরে যাওয়ার কথা মাথায় আসে ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। ছেলেটার গলা শুকিয়ে আসে। ধীরে ধীরে চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা হয়। আর তারপর ই নিস্তেজ হয়ে আসে শরীর।

আবরাজের জ্ঞান ফিরে পরদিন ভোর পাঁচটায়। মাথার কাছে বসা একজন নার্স। হাল্কা ঝিমুনি এসে গেছে। ছেলেটা শুরুতেই বুঝতে পারে না। একটা দ্বিধা নিয়ে উঠতে বসে। হাতে লাগানো ক্যানেলায় টান পড়তেই আর্তনাদ জেগে উঠে। ধরমরিয়ে উঠেন নার্স। “কি হলো, কি হলো, আপনি উঠছেন কেন? শুয়ে থাকুন।”

উত্তর দেয় না আবরাজ। নার্স ব্যস্ত গলায় ডাকে “ওয়াড বয়, ওয়াড বয়। দ্রুত ডক্টর কে ইনফর্ম করো। পেসেন্টের সেন্স এসেছে।”

ওয়াড বয় চলে যায়। হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধটা নাকের ফাঁকা দিয়ে ধীরে ধীরে গলায় এসে ঠেকছে। একটা তিক্ত স্বাদ অনুভব হয়। সাথে মাথায় প্রবল যন্ত্রণা। অজান্তেই চোখের কোণে জল নামে।ছেলেটার হাতের একটা অংশ থেকে ক্রমশ পুরো শরীর অবশ হতে শুরু করে। একটা সময় পুনুরায় জ্ঞান হারায়।

দুদিন পর ফের জ্ঞান আসে আবরাজের। এর মাঝে অনেকবার জ্ঞান এলেও প্রতিবার কয়েক সেকেন্ড পর পর ই জ্ঞান হারিয়েছে। ছেলেটা এখন কিছুটা সুস্থ। একটা ভালো ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে। নার্স ধরে বসালো। আবরাজ এবার মৌন রইল। শরীরে অতো জোর নেই। নার্স পিঠের কাছে বালিশ রেখে বলল “আপনি নিশ্চয়ই খুব ই ভালো মানুষ। কিংবা আপনার উপর কোনো পবিত্র আ*ত্মার দোয়া রয়েছে। নতুবা এত কম সময়ে কোনো বড় ক্ষতি ছাড়া বেঁচে যাওয়া সম্ভব নয়।”

নার্স কি বলেছে শুনেনি আবরাজ। ওর শরীর মন কোথাও একটা ডুবে আছে। এক একটা অংশ যেন ব্যথায় টনটন করছে। একটা সুক্ষ্ম স্রোত নেমে যাচ্ছে কান বেয়ে। ছেলেটা বার কয়েক শ্বাস নিল। চোখ বন্ধ করতেই একটা হাত স্পর্শ করল গাল। “কেমন আছো তুমি?”

সীরাতের কণ্ঠ! আবরাজ তখনি চোখ খুলতে পারল না। সময় নিয়ে চাইতেই দেখতে পেল সীরাতের মুখ। মেয়েটা কেমন যেন রুগ্ন। চোখের নিচে কালি। যেন ঘুমোয় নি কিছুদিন। আবরাজ কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু অনুভব করল মুখ দিয়ে একটা কথাও আসছে না। কথা না বলতে পেরে নিজেকে পাগল পাগল অনুভব হয়। হাত দিয়ে ইশারা করে। একটা যন্ত্রণার স্রোত নামে। ছেলেটা ব্যকুল হয়। সীরাত আগলে ধরে। পিঠে হাত বুলায়। “শর্টটাইম কথা বলার শক্তি হারিয়েছ তুমি। চিন্তা নেই ঠিক হয়ে যাবে। একটু শান্ত হও।”

সময়টা ঝড়ো হাওয়ার মতো। আবরাজ শান্ত হতে পারছে না। পর পর অস্থির হয়ে উঠে। তখুনি কেবিনে আসে ওর চাচার বাড়ির সব সদস্য। একটু আগেই খবর দেওয়া হয়েছে ওনাদের। আবরাজ কিছুতেই স্বস্তি পেল না। শরীরের সমস্ত ব্যথার থেকেও অধিক যন্ত্রণা কথা না বলতে পারা। সীরাত সবটা জানালো। আনিসুল সাহেব ব্যস্ত হলেন। তিনি চান সুস্থ হোক আবরাজ। যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ হোক। বিলম্ব না করে ডাক্তারের নিকট গেলেন ওনারা। রুবি কিছুটা ভয় পেয়ে আছে। ওর চোখ দুটো কেমন নেতিয়ে এসেছে। রুস্মি এসে সীরাতের পাশে দাঁড়াল। চিন্তা গলে পরছে কণ্ঠে “কবে নাগাদ সুস্থ হবে কিছু বলেছেন ডাক্তার?”

“না। তবে দশ পনেরো দিন লাগতে পারে।”

দশ পনেরো দিন! সময়টা সত্যিই বিশাল নয়। তবে দুঃখের সময় দীর্ঘ হয়। রুস্মির কপাল জুড়ে ভাঁজ। আবরাজের আকুল হওয়া দৃষ্টির পানে তাকাতেই কেমন যেন করে উঠে বুক!

.

বাড়ি নিয়ে আসা হয় আবরাজকে। ডাক্তার বলেছেন রেস্ট প্রয়োজন। সাথে দরকার ফুরফুরে হাওয়া। প্রকৃতির আলোতে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবে। এ ছাড়াও কিছু ঔষধ দেওয়া হয়েছে। সেসব ওর শরীরে থাকা বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব বিস্তার করতে দিবে না। যত্ন নিতে হবে। সারাক্ষণ কাউকে না কাউকে পাশে থাকতে হবে। ডাক্তার প্রথমে বলেছিলেন নার্স রাখার কথা। তবে বাঁধ সাজে রুস্মি। ওর মতে বাহিরের মানুষ না রাখাই ভালো। বাড়ি গেলে সবার যত্নে সুস্থ হয়ে উঠবে দ্রুত। ডাক্তার এ বিষয়ে সহমত দেন। অতঃপর ওকে নিয়ে আসা হলো। বাড়িতে আসা মাত্রই মনে হলো শরীরের আর্ধেক রোগ সেরে গেছে! আবরাজের ভালো লাগছে এখন। রুস্মি ঘর গুছিয়ে দিল। পরিপাটি সুন্দর এক ঘর। রেবেকা স্যুপ এনেছেন। নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন। রুবি ও কিছুটা সাহায্য করছে। এসব যদিও ভালো লাগে না তবু করছে সে। অনেকটা দায়সাড়া ভাবে। রুস্মি কাপড় গুছিয়ে কাবাডে রাখছে। আবরাজ কিছু বলতে চাইছে তবে মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছে না। ছেলেটার শরীরে যন্ত্রণা এসে ভর করে। রুস্মির চোখে পরতেই রুস্মি বলে “কিছু লাগবে?”

হাতের সাহায্যে খাতা কলম আনতে বলে আবরাজ। রুবি নিয়ে আসে। রুস্মির হাতে তুলে দিয়ে চলে যায়। রুস্মি বসে পাশে। কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে “লিখে জানাও।”

আবরাজ লিখল “অরির ছবি আনো নি?”

হতাশ চোখে তাকালো রুস্মি। আবরাজ উৎসুখ দৃষ্টি মেলে। মেয়েটার থেকে উত্তর না পেয়ে হাল্কা হাতে ধাক্কা দিল। রুস্মি বলল “কাল গিয়ে নিয়ে আসব।”

মন খারাপ নামে আবরাজের মনে। জানালা গলিয়ে তাকিয়ে থাকে। এখন সম্ভবত সন্ধ্যা। এই অসময়ে রুস্মিকে একা পাঠানোও ঠিক হবে না। কাল ই বা যাবে কি করে? ও পথে নানান লোকের চলাচল। কে কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে দিবে কে জানে?

খুব দ্রুত সুস্থ হচ্ছিল আবরাজ। এর ই মাঝে একদিন কল করে সীরাত। কল রিসিভ করে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারাটা ফের ঝড় নামায় চিত্তে। একটা নিদারুণ ব্যথা ক্রমশ টুঁটি চেপে ধরে। মনে হয় এই বুঝি সব শেষ!

সেদিন কথা হলো না ওদের। খুব ই খারাপ লাগে। দুদিন বাদে আসে সীরাত। ছেলেটা তখন ঘুমিয়ে জল। রুস্মি গল্প জুড়ে দেয়। হরেক রকমের গল্প। রুস্মিকে চারটে বই উপহার দিয়েছিল সীরাত। সব গুলোই যুদ্ধ আর দেশের নানান বিষয় নিয়ে লেখা। একটা একটা সৌন্দর্য আর দেশপ্রেম রুস্মির হৃদয়ে নতুন ছন্দ তুলেছে। এই যে আগে দেশাত্মবোধক গান শোনা হতো না তবে এখন শুনে। রোজ নিয়ম করে। আগে প্রেমের উপন্যাস ভালো লাগলেও ইদানীং মেয়েটির থ্রিলার পড়তে ইচ্ছে হয়। গোয়েন্দা সিরিজ গুলো ভালো লাগে। তবে কোন বই কিনবে ঠিক করতে পারে না। সীরাত লিস্ট করে দেয়। মেয়েটার সাথে পুরোপুরি মিশে গেছে রুস্মি। আবরাজের ঘুম ভাঙে খানিক বাদে। নাস্তার টেবিলে আসতে চাইলে সীরাত জানায় সে নিজ থেকে দেখা করে আসবে। আবরাজ সবে উঠে বসেছে। পাশে গরম গরম স্যুপ। সীরাতকে দেখে খুশি হয়। হাতের ইশারায় ডাকে। সীরাত বসে। আবরাজের শুকনো মুখে হাত বুলিয়ে বলে “তোমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না।”

একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছড়িয়ে পরে পুরো ঘরময়। খাতায় লিখে আবরাজ “আমি ও চাই দ্রুত সুস্থ হতে। আচ্ছা বলো তো আমি কি করে হসপিটালে এলাম। আমার কাছে সবটা কেমন অস্পষ্ট লাগছে।”

**আপনাদের রেসপন্স একদম ই কমে গেছে। অনুরোধ রেসপন্স করার।**

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

Next
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/188952200332349/?app=fb

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here