“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৫৪
(নূর নাফিসা)
.
.
জোভান শারমায়ার দিকে তাকাতেই শারমায়া লজ্জায় জোভানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
“ছি! আপু কি বলে গেলো এটা!”
তার লজ্জা দেখে জোভান হাসলো। দশটা বেজে যাচ্ছে তাই শারমায়া উঠতে গেলে জোভান বাঁধা দিলো। শারমায়া বললো,
“আরে, উঠো। দশটা বেজে গেছে।”
“বাজেনি এখনো। সময় বাকি আছে।”
“আপু কি বলে গেলো শুনোনি? পার্লারের মহিলা এসে বসে আছেন।”
“পার্লারের মহিলা আসবে না। তোমাকে যেতে হবে।”
জোভান আবার চোখ বন্ধ করে রাখলো। শারমায়া তার উন্মুক্ত বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললো,
“একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।”
“কি?”
“আপু বলাতে আমার উপর রাগ কমিয়ে অভিমান ভেঙেছো নাকি?”
জোভান চোখ খুলে ব্রু সামান্য কুচকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর একহাতে শারমায়ার দুইগাল চেপে ধরে বললো,
“এই, ভালোবাসার শুরুতে কি আপু বলে দিয়েছিলো, যা প্রেম কর গিয়ে? নাকি আমি আপুকে পাগল করে ফেলেছিলাম বিয়ের ব্যাপারে বাবা-মাকে রাজি করানোর জন্য? কোনটা?”
শারমায়া মুচকি হেসে দৃষ্টি নত করে বললো,
“তুমি।”
“তাহলে এখন আপুকে বলতে হবে কেন?”
“তাহলে সেদিন রাতে শুনলে না কেন? কেন নষ্ট করে দিলে তোমার কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা? আমি তো চেষ্টা করছিলামই নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার। তুমি সুযোগ দিলেই না।”
“প্রত্যাশা তো আরও অনেক ছিলো, সেগুলো পূরণ হয়নি। তো এটা আর পূরণ করার কি দরকার।”
“তাই বলে ব্যর্থতা মেনে নিবে?”
“যার জন্য এতোসব আয়োজন, সে-ই রইলো না পাশে। এখানে সফলতা আর ব্যর্থতার আর কি-ই বা বাকি থাকে?”
“লাভ ইউ। লাভ ইউ সো মাচ। জান, আই লাভ ইউ সো মাচ।”
শারমায়া তাকে জড়িয়ে ধরে মিশে রইলো। জোভান তাকে টেনে মুখোমুখি করতে বালিশে তুলে বললো,
“এই তাকাও আমার দিকে। হয়েছে কি তোমার?”
শারমায়া মাথা দু’দিকে নাড়ালে জোভান বললো,
“কিছু না হলে একটু পরপর আযব গল্পের গুজব কথা তুলে তুলে এভাবে কান্না করো কেন? সুইটহার্ট, জাস্ট ফরগেট দ্যাট ইভেন্ট। এন্ড এনজয় দ্য মুভিং মোমেন্ট।”
শারমায়া চোখ মুছে প্রেমময় দৃষ্টিতে চোখ বুলালো জোভানের চেহারায়। হাত বাড়িয়ে হুট করেই জোভান ফুলের ঝারটা টান দিয়ে ছুটিয়ে ফেললো, আর লেপ্টে পড়লো তাদের উপর ছড়িয়ে থাকা কাঁথার উপর। শারমায়া হেসে উঠে বললো,
“এটা কি করলে!”
“তোমাকে শত ফুলের চাদরে জড়িয়ে নিলাম।”
কথার সাথে সাথে জোভান খুনশুটিতে মেতে উঠেছে। শারমায়া ফুল ছিড়ে কুটিকুটি করে জোভানের মুখে দিয়ে হাসতে হাসতে ফুলের ঝার সরিয়ে নিলো। জোভান উঠে গেলে শারমায়া বিছানা গোছাতে লাগলো। আলমারি থেকে কয়েকটি পুরনো ব্রাশ নামিয়ে জোভান বললো,
“রাতে গোসল করেছো, এখন করো না আর। অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
শারমায়া তার হাতে ব্রাশ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কোথায় এনে লুকিয়ে রেখেছে ব্রাশ গুলোকে! আর এজন্যই গতকাল সে বাথরুমে গিয়ে একটা মাত্র ইন্টেক ব্রাশ পেয়েছে। জোভান তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“কি বললাম, শুনেছো?”
“হুম?”
“শাওয়ার নিতে নিষেধ করেছি।”
“সারাদিন থাকতে পারবো!”
“পারবে। প্রয়োজনে ফ্যান নিয়ে ঘুরবো তোমার সাথে। নাহয়, পার্লারের মহিলাকে জিজ্ঞেস করো ফ্যান ফিট করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কি না।”
“ইশ!”
জোভান হেসে বললো,
“আবহাওয়া গুমোট। এতোটা গরম পড়বে না আশা করি। এমনিতেই রাতে ভিজেছো। ঘন ঘন শাওয়ার নিলে সর্দি লেগে যাবে।”
জোভান ফ্রেশ হয়ে গেলে শারমায়া তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত রুমে বসে থাকতে বললো যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজে বাইরে যাওয়া প্রস্তুত হয়। একা একা বের হওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে জেভার জন্য। আর কে না কে শুনেছিলো তখন তার কথা, কে জানে! অতঃপর জোভানের পিছু পিছুই বের হলো শারমায়া। কিন্তু লজ্জায় তাকে পড়তেই হলো। জেভার সাথে দেখা হতেই জেভা মুখ চেপে হাসলো যার ফলে শারমায়ার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে! জেভা বললো,
“ঘুম হয়েছে ঠিকমতো?”
জোভান মুখে চাপা হাসি রেখে শারমায়ার দিকে তাকালো একবার, অতঃপর জেভাকে বললো,
“আর বলো না তো কিছু। আমার বউটাকে সহজসরল পেয়ে একেবারে পঁচিয়ে দিচ্ছো তোমরা।”
সে কি লজ্জা থেকে উদ্ধার করলো নাকি আরও ডুবিয়ে দিলো! তাই শারমায়া তার পিঠে চিমটি কেটে চোখ পাকালো। জোভানের মামাতো বোন শিখা বললো,
“বাবাগো! আপু, দেখেছো? বউয়ের জন্য কি জ্বলছে ভাইয়ার!”
জোভান একটু ভাব নিয়ে বললো,
“জ্বলবে না!”
জেভা হেসে বললো,
“জ্বলুক! জ্বলুক! আদরও করবো আমি, শাসনও করবো আমি। মাঝে লজ্জায় ফেলবো আবার আমিই টেনে তুলবো। তোর না কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার কথা ছিলো? ইফাজ আর সাদাত, না হলেও চারবার এসে ঘুরে গেছে।”
“আমি আসছি তাহলে। শারমায়া, নাস্তা করো।”
জেভা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“এই, নাস্তা করে যা। রাতেও খাসনি কিছু।”
“ভাইয়া এসেছে?”
“হুম, এসেছিলো। ইফাজ টেনে নিয়ে গেলো সাথে।”
নাস্তা করে জোভান বেরিয়ে গেলো। জেভা শারমায়ার নোজপিন দেখে বললো,
“জেনেভা থেকে এটা এনেছে জয়?”
“কোথা থেকে এনেছে জানি না তো। উনিই দিয়েছেন।”
“জেনেভা থেকেই এনেছে। আমাকে দেখালোই না। বললো, এমনিতে দেখে সৌন্দর্য বুঝবে না। শারমায়ার নাকে পরলে তখন দেখো। রিং ও না এনেছে? দেয়নি?”
শারমায়া হাত বাড়িয়ে গত রাতে পরিয়ে দেওয়া রিংটা দেখিয়ে বললো,
“এটা?”
“হুম, এটাই হবে। আমার জন্যও একটা রিং এনেছে। ডিজাইনটা ভিন্ন। সবই মহব্বতের ঠেলা, বুঝলে? মায়ের জন্য এক জোড়া চুড়ি এনেছে। খুব সুন্দর। আজ পড়বে, দেখো।”
“স্যারের জন্য কিছু আনেনি?”
জেভা বড় বড় চোখ করে বললো,
“এখনো স্যার’ই বলবে! তাহলে মাকেও আজ থেকে ম্যাডাম বলো।”
ওদিকে কাজ করতে করতে জুলেখা ইয়াসমিন বললো,
“তুই তোর শ্বাশুড়িকে গিয়ে ম্যাডাম ডাক। শারমায়া, তোমার স্যার কিন্তু গতকাল দুপুরেই এই প্রশ্নটা আমাকে করে ফেলেছিলো যে তুমি এখনো স্যারই ডাকবে কি না! গতকাল সকালে নাকি স্যার বলেই সালাম দিয়েছো? আমি তো শুনিনি। তাহলে তো প্রথমদিনই বকা খেতে। আগে যেমন তেমন। এখন বাবা ডাকবে। যেমন সম্বোধন, তেমন আদর।”
জেভা মায়ের কথায় সুর টেনে বললো,
“হুম। যেমন সম্বোধন তেমন আদর কিন্তু। বাকিদের জন্য পোশাক এনেছে। এবার রেডি হয়ে যাও তারাতাড়ি। পার্লার থেকে দুইবার কল করে ফেলেছে।”
অতঃপর শারমায়াকে ছোট চাচী ও শিখার সাথে পার্লারে পাঠিয়ে দিলো। জেভা আর গেলো না মেয়ের জন্য। বাসার কাছেই পার্লার। পার্লারের কাছেই কমিউনিটি সেন্টার। দুপুরের পর সেখান থেকে তারা সরাসরি কমিউনিটি সেন্টারে চলে এলো। এখানে এসে নিজ বাসার সবাইকে দেখতে পেয়ে আনন্দে কান্না চলে আসছে শারমায়ার। যেন কতদিন দেখে না তাদের। কেবল মা আর চাচীকে পেলো না। আর সবাই আছে। মা আসেনি তারা যাবে, তাই সেদিকে ব্যবস্থা করার জন্য। চাচী আসেনি ফারিয়ার জন্য। জোভানকে পরিপূর্ণ সাজেই দেখতে পেলো এখানে। সে তাকাতেই মুচকি হাসলো জোভান। বিনা শব্দে দৃষ্টিতেই যেন প্রকাশ করে দিচ্ছে বউ সাজে শারমায়ার সৌন্দর্যের প্রশংসা।