“হালাল প্রেম” সূচনা পর্ব

“হালাল প্রেম”
সূচনা পর্ব
(নূর নাফিসা)
.
.
মডেল টেস্ট চলছে কলেজে। আজ শেষ হবে। রাস্তায় জ্যামের কারণে দশ মিনিট লেট শারমায়া। দ্রুত পা চালিয়ে গেইটের ভেতর প্রবেশ করলেও সিড়ির ধারে এসে একপ্রকার দৌড়ে সিড়ির ধাপ অতিক্রম করে উঠে এলো তিন তলায়। সিড়ির ধাপ অতিক্রম করে হাপিয়ে গেছে সে! তবুও থেমে নেই। তড়িঘড়ি করে ক্লাস রুমের সামনে এসে বললো,
“ম্যা আই কাম ইন, ম্যাম?”
টেবিলের সামনে থাকা তারিন ম্যাম বললো,
“ইয়েস, হারিআপ। টেক ইট।”
তারিন ম্যাম খাতা ও প্রশ্ন এগিয়ে দিতেই শারমায়া ক্লান্তি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“থ্যাংক ইউ, ম্যাম।”
অত:পর তারাহুরো করে সিটে বসতে যাচ্ছে। হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিলো তা দেখে ক্লাস রুমের পেছন দিকে পায়চারি করা আলভী স্যার বললো,
“আরে, সাবধানে। এতো তারাহুরো করার প্রয়োজন নেই। ধীরেসুস্থে কাজ করো।”
শারমায়া মৃদু হেসে বড়সড় নিশ্বাস ফেলে সিটে বসলো এবং খাতায় মার্জিন করতে লাগলো। আলভী স্যার পেছন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
“এতো লেট কেন, সাদিয়া! জ্যাম?”
“ইয়েস, স্যার। কত সহজেই বুঝে যান আপনি!”
“ঢাকার সব জ্যাম কি শুধুমাত্র সাদিয়ার সামনেই পড়ে যায়?”
স্যারের বিদ্রুপে বাকিরা হেসে উঠলো। শারমায়াও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“আর বলেন না, স্যার! সকালের জ্যাম গুলো আমার সাথে চরম শত্রুতা করে। তারা সবসময়ই চায় আমার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাতে।”
আলভী স্যার হেসে উঠলো এবং বললো,
“তুমি তো জানোই সবসময় জ্যামগুলো তোমার সাথে শত্রুতা করে। তাহলে আরও আগে রওনা দিতে পারো না কেন?”
“স্যার, আমি তো এটাও জানি যে, যখনই বের হই না কেন! জ্যাম আমাকে ছাড়বে না। তাই সবসময় দশটার বিশ মিনিট আগেই বের হই বাসা থেকে।”
আশেপাশের কয়েকজনসহ আলভী স্যার হেসে বললো,
“হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। তোমার স্বভাবও পাল্টাবে না, জ্যামও কখনো তোমায় ছাড়বে না।”
“নো স্যার, উল্টো বুঝেছেন আপনি। সঠিকটা হচ্ছে, জ্যামের শত্রুতাও শেষ হবে না তাই আমার স্বভাবও পাল্টাবে না।”
“হা হা হা! স্ট্যান্ডার্ড চাপা…! এক্সাম দাও। এমনিতেই লেট।”
“অলরেডি মার্জিন শেষ, স্যার।”
“গুড।”
পূর্ণ নাম শারমায়া সাদিয়া৷ পাশের বাড়িতে এক সাদিয়া থাকায় পরিবারের সবাই ডাকে শারমায়া। আর স্কুল কলেজে পরিচিত সাদিয়া নামে। সাদিয়া নামটা কমন হওয়ায় শারমায়া নামেই সর্বত্র পরিচিত হতে চেয়েছিলো। কিন্তু শারমায়া নামটা একটু কঠিনতম নাম হওয়ায় সাদিয়া নামটাকেই তারা সহজভাবে গ্রহণ করলো। বাবা সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভেন্ডার। মা শারমিন সাখাওয়াত, একজন গৃহিনী। ছোট বোন সাফওয়ানা শিফা দশম শ্রেনীর ছাত্রী। এই তার পরিবার। ধানমন্ডি এলাকায় তাদের বসবাস। তারা দুইবোন ছোট থাকতেই গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে তার বাবা ও চাচা এখানে এসে ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছে। পাশের ফ্ল্যাটই চাচার। ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলা তাদের দুইভাইয়ের কেনা। চাচার পরিবারেও সদস্য সংখ্যা চার জন। চাচাতো ভাই ফুয়াদ বউ বাচ্চা নিয়ে চাকরিসূত্রে নরসিংদী থাকে৷ আর চাচাতো বোন ইংলিশে অনার্স করছে।
প্রথমে তারাহুরো করলেও এখন ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিচ্ছে শারমায়া। প্রায় দেড় ঘন্টা অতিক্রম হয়ে গেছে। পাশের বেঞ্চ থেকে নিধি ফিসফিসিয়ে ডাকতেই শারমায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। নিধি বললো,
“দোস্ত, ছয় নং এর আন্সার করেছিস না?”
“হু।”
“চিত্রটা দেখা। বুঝতেছি না কোনটা!”
শারমায়া সুযোগ বুজে অঙ্কিত চিত্রের পৃষ্ঠা খুলে দেখালো। নিধি জিভ কেটে বললো,
“আল্লাহ! এইটা! এইটা তো আমি পারি না! দোস্ত, এঁকে দে প্লিজ।”
“কিহ! এঁকে দিতে পারবো না। আমি দেখাই। তুই এঁকে নে।”
“দোস্ত, প্লিজ। তোকে ফুসকা খাওয়াবো।”
“সাতদিন পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট ট্রিটের অফার করলেও না। দেখাতে পারবো কিন্তু এঁকে দিতে পারবো না।”
“প্লিজ! প্লিজ, দোস্ত। না করিস না।”
“না আঁকতে পারলে এইটা না দে, তাহলেই তো হয়…”
শারমায়া বলতে বলতে এদিকে নিধি তার সিঙ্গেল পেজ এগিয়েও দিলো কিন্তু শারমায়া না ধরাতে পেজ ফ্যানের বাতাসে শারমায়ার পায়ের কাছে পড়ে গেলো। আর সে পেজ হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো,
“স্যার, কার পেজ যেনো উড়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়েছে… ”
নিধি অবাক! আলভী স্যার ও তারিন ম্যাম একসাথে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলো। তারিন ম্যাম এগিয়ে এসে পেজ হাতে নিয়ে বললো,
“নিশ্চয়ই কেউ চালান দিচ্ছিলো! তা না হলে পেজ আবার উড়ে যায় কিভাবে! এই পেজ কার?”
ম্যাম দুইবার জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না। তাই তারিন ম্যাম পেজটি ছিড়ে টুকরো করে বাইরে ফেলে দিলেন। নিধির হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে এখন। কারণ, অপর পেজে আরেকটা চিত্র ও বর্ননা ছিলো। সেটাও গেলো। পেছনের দুজন সান্ত্বনা দিতে লাগলো। তারাও অপেক্ষায় ছিলো শারমায়া চিত্র এঁকে দিলে তারা কপি করে নিবে। কিন্তু অপেক্ষার বিষন্ন অবসান ঘটলো। পুরোটা সময় নিধি গোমড়ামুখো হয়ে পরীক্ষা দিলো। পরীক্ষা শেষ হতেই শারমায়া তার সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,
“ভুল করেও ভাবিস না যে, আমি তোকে এখন সরি বলবো! কারণ আমি কিন্তু কোনো ভুল করিনি। ভুল করেছিস তুই। সাবধান করে দিচ্ছিলাম তা-ও তুই শুনলি না। সুতরাং এক্সিডেন্টের জন্য সম্পূর্ণ তুই দায়ী। তাই আমি মোটেও সরি বলবো না তোকে।”
“তোর মতো গুন্ডির কাছে সেটা প্রত্যাশাও করি না।”
“ওহহো! বাবুটা রাগ করেছে! এই পরীক্ষায় পাস করলেই কি আর ফেইল করলেই কি! ফরম ফিল-আপ তো হয়েই গেছে। যাস্ট কুল বেবি। আর শোন, আবারও সাবধান করে দেই। দ্বিতীয়বার কিন্তু এমন ভুল করিস না।”
নিধি রেগে তাকে মারতে যাচ্ছিলো তাই সে হাসতে হাসতে দ্রুত সরে গেলো। পেছন থেকে তারাহুরো করে বুসরা এসে বললো,
“সাদিয়া, কাজটা মোটেও ঠিক করলি না।”
“কোন কাজ?”
“ও… তুমি এখন বুঝো না কোন কাজ? এক্সাম শেষ, এখন তো ভুলেই যাবা! কি হতো চিত্র এঁকে দিলে!”
“কিছুই না।”
“তাহলে এঁকে দিলি না কেন?”
“যেহেতু কিছু হবেই না তাহলে এঁকে দিবো কেন? বুসরা, তোর এপ্রোনে মাকড়সা!”
“আ….!”
“ওপ্স! হি হি হি…!”
বুসরা লাফিয়ে উঠতেই শারমায়া হেসে উঠলো। এবং দ্রুত চলে গেলো সিড়ির দিকে। তবে ছাড়া পায়নি। চারজন ফ্রেন্ডকে আজ ফুচকা খাওয়াতে হয়েছে৷ আর ক’দিন একসাথে থাকে কে জানে! তবে এই মুহূর্তগুলোকে খুব মিস করবে তারা। শেষ পরীক্ষা হওয়াতে আজ ঘন্টাখানেক আড্ডা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো তারা। ছোট মাঠে সবুজ ঘাসের উপর বসে তারা বাদাম খেতে খেতে গল্প করছিলো। ভবনের বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে বাংলা শিক্ষক আশরাফ স্যার ডাকলেন,
“শারমায়া সাদিয়া?”
কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে আদর্শ একজন শিক্ষক আশরাফ স্যার। সবাই তাকে যেমন পছন্দ করে, তেমন ভয়ও পায়। মূলত এটা ভয় নয়, আলাদা একরকম শ্রদ্ধা যার অধিকারী সবাই হয় না। কেবল আশরাফ স্যার শারমায়াকে পুরো নামে ডাকে। শারমায়া বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“জ্বি, স্যার?”
“অফিস রুমে এসো।”
শারমায়াকে ডেকে স্যার অফিস রুমে চলে গেলো। বুসরা বলে উঠলো,
“সাদিয়া রে…! স্যার কি খাতা দেখে ফেলছে এই কদিনে! খাতায় কিছু ধরা পড়ছে নাকি আবার? হঠাৎ এমন জরুরী তলব!”
“চুপ থাক তো! কোনো কারণ জানা না থাকলে এমনিতেই হৃদপিণ্ড ডিপডিপ করে, আবার ভয় দেখাস! আরে পারলে একটু উৎসাহ দে না, যাতে ফ্রেশ মাইন্ডে দৌড়ে চলে যাই!”
“ওক্কে! যা দোস্ত। স্যার তোর জন্য আন্ডা নিয়ে বসে আছে। আন্ডা নিয়ে বাসায় ভাজি করে খেয়ে নিস। যাহ, যাহ…”
বাকিরা হেসে উঠলো এবং শারমায়া অফিস রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
“এটা উৎসাহ দিলি, তাই না? ওয়েট, আন্ডা এনে তোর মাথায় ফাটাবো। জাস্ট ওয়েট…!”

.
[বলেছিলাম “ইনশাআল্লাহ সন্ধ্যায় দিবো।” কিন্তু হঠাৎ ব্যস্ততার কারণে লেখা সম্ভব হয়নি। এখন লিখে তারপর দিলাম…😴]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here