হিমি পর্ব-৪৫

0
978

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

৪৫.

‘তোকে কে বলেছে প্রবলেম সল্ভ করতে?’

‘কেউ বলে নি তো, নিজ দায়িত্বে করছি। আমি না কাল‌ই জানতে পেরেগেছিলাম যে বিয়েটা দুমাস পিছানো হয়েছে। কনেই পিছিয়েছে। সন্দেহ হলো। এখানে আসার পর তাই সোজা কনের সাথে কথা বলতে গেছিলাম। একটু চেষ্টা করতেই বলে দিলো সব। আমিও তাই তাকে তার প্রেমিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এলাম। এবার আর বিয়ে হবে না। বাচ্চা ডাক্তার আমার ফোন উঠাবে, কথাও বলবে। দেখাও করবে। দারুণ না?’

মোজাম্মেল সাহেব ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

‘মনের ডাক্তার যাতে তোকে সময় দেয় তাই এই কান্ড ঘটালি?’

‘হ্যা। তুমিই না বললে কাল রাতে!’

‘আমি? আমি আবার কি বললাম?’

‘বললে তো, এখনো সময় আছে। বুঝতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে বাচ্চা ডাক্তার আমাকে না ভুলে যায়। আমাকেই কিছু করতে হবে। ভাবতেও তো বলেছিলে!’

‘আর তুই সারারাত ভেবে এই পন্থা অবলম্বন করলি?’

‘করলাম।’

মোজাম্মেল সাহেব শব্দ করে মুখ ভর্তি শ্বাস ছেড়ে অস্বস্তি জ্ঞাপন করলেন। হিমির চেহারায় তখন‌ও হাসির ঝলক। উনি বুঝতে পারলেন উনি যা ভাবছিলেন হিমি তা ভাবে নি। এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান‌ও তার নেই। থাকলেও হিমি ভাবতে চায় নি। বাচ্চামো করছে। এবং ইচ্ছে করেই করছে। মোজাম্মেল সাহেব হতাশ হলেন ভাইঝির কাজে।

এদিকে তাহিরের বাড়িতে বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে বর কনের আসার অপেক্ষায় মায়মুনা জামান। গল্প গুজব, কনের গুণ নিয়ে দারুণ আলোচনা চলছে। সবাই হাসি খুশি আছেন। কনের বাড়িতে ঘটে যাওয়া আকস্মিক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এখনো তারা জানেন না। কেউ জানায় বলেই জানেন না। দিব্যি খাওয়া দাওয়া করছেন সবাই। হাসি ঠাট্টা করছেন। আত্মীয়রা মায়মুনা জামানকে হাসতে দেখছেন বহু বছর পর। ভদ্রমহিলার জীবনে খুশি হ‌ওয়ার কারন খুব একটা আসে নি। শেষ যৌবনে হেসে ছিলেন হয়তো। মাঝে মাঝে যাও তাহিরের কাজে খুশি হন তবুও তখন ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিত হাসি দেখা গেছে। এমন প্রফুল্ল ছিলো না সেই হাসি। আজ ছেলের ব‌উ ঘরে আসছে এই কারনটাও অত্যধিক খুশি হ‌ওয়ার কিছু নেই। বরং ছেলে আঁচল ছাড়া হচ্ছে বলে দুঃখী হতে পারতেন। তা না করে তিনি হাসছেন। এক মুহুর্তের জন্য‌ও হাসি সরছে না ওনার। হয়তো ছেলেকে নিজের মন মতো তৈরী করতে পেরেছেন বলেই এই খুশি। অথবা নিজের মতো চালনা করতে পেরে খুশি।

অন্যদিকে বেশ অনেকক্ষন বিচার বিবেচনা করে এক‌ই আসরে তাহিরের বিয়ে ঠিক হলো। কনে হিমি। এসব কিছুর পেছনে সয়ং মোজাম্মেল রহমানের হাত রয়েছে বুঝতে পেরেছে হিমি।

‘কথা বাড়াবি না হিমি। অনেক কষ্টে সবাইকে রাজি করিয়েছি।’

হিমি রাগান্বিত গলায় বললো,

‘কে বলেছে রাজি করাতে? রাজি করিয়েছো কেনো?’

‘তো করাবো না? বিয়ের আসরে বিয়ে না হলে বর পক্ষের কতবড় অপমান হয় তুই জানিস? ‌একে তো নিজে যেচে পরে ছেলেটার বিয়ে ভাঙলি। এখন নতুন করে যখন সব ঠিক হচ্ছে সেটাও গুড়িয়ে দিচ্ছিস। কি চাইছিস তুই?’

‘আশ্চর্য! ‌আমি বিয়ে করতে রাজি কি না সেসব না জেনেই আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো কি করে?’

‘তোকে সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম। বাবা তোর বিয়ের জন্য পাত্র দেখছেন না। তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।’

হিমি আকাশসম বিস্ময় নিয়ে বললো,

‘আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমি জানি না!’

‘বাবা বলেছিলেন তোকে বলতে। আমি বলি নি।’

‘কেনো বলোনি?’

‘কারন আমি জানি তুই বিয়েটা করবি না।’

‘করবো নাই তো!’

‘কিন্তু বাবা তোর বিয়ে দিয়ে ছাড়বেন।’

‘তোমার বাবা বললো আর তোমরা মেনে নিলে?’

‘তোর বাবাও তো মত দিয়েছে।’

‘আমার বাবা মত দিয়েছে! তারমানে আমার মতামত জানার দরকার পরলো না?’

‘উহু পরলো না। যেমন তুই মিশ্মির মতামত না জেনেই নিহানের সাথে বিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিস তেমনি বাবাও তোর মতামত জানতে ইচ্ছুক নন।’

হিমি মুখ ছোট করে ফেললো। তার এখন যেমন অনুভুতি হচ্ছে মিশ্মির নিশ্চয় এর থেকেও বেশি খারাপ লাগছিলো! ইশ বুঝলো না কেনো তবে মিশ্মির ইচ্ছে? তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে অসহায় গলায় হিমি বলে উঠলো,

‘জ্যাঠুমনি আমি বিয়ে করবো না।’

‘তুই না চাইলেও জোর করে বিয়ে দেয়া হবে হিমি। হয় বাবা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে, নয়তো তোর বাপের হার্ট অ্যাটাকের কথা বলে। এর থেকে ভালো মনের ডাক্তার। তুই ওকে বিয়ে কর। তোদের দরকারের সম্পর্ক বদলে যাবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে। সারাদিন রাত কথা বলতে পারবি। দুজন দুজনের সমস্যা মিটাতে পারবি। ভালো থাকবি।’

‘তুমি বাচ্চা ডাক্তারের মা কে চেনো না জ্যাঠুমনি। ভীষন বজ্জাত থুক্কু বদরাগী মহিলা। আমার সাথে একবার ধাক্কা লেগেছিলো কি বকাই না দিলো! খালি বকা? হুহ, বাবার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলেছিলো। আবার আমার মুখোমুখি হলে জান নিয়ে নিবে। আমি পারবো না।’

মোজাম্মেল সাহেব উজ্জল চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘বাহ! শাশুড়ির সাথে আগে থেকে পরিচয় আছে দেখছি। দারুণ! দারুণ! এটাকে নিয়তি বলে। সবার সাথেই আগে থেকে আলাপ রয়েছে। এদিকে আমরা ছেলের মাকে না চিনলেও বাবাকে চিনি। আর কি লাগে? যা তৈরি হয়ে নে।’

‘জ্যাঠুম,,,,,’

হিমির কথার মধ্যেই মোজাম্মেল সাহেব তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন। কললিস্ট চেইক করতে করতে দুজন মেয়েকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। বললেন,

‘কনেকে নিয়ে যাও তো মা। রেডি করাও গিয়ে।’

‘আমি যাবো না। তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো জ্যাঠুমনি।’

‘বেশ করছি।’

হিমি ম‌্যাকি কান্না করে বলে উঠলো,

‘আমি কিন্তু বড়সড় কিছু ঘটিয়ে দেবো!’

‘যা ঘটিয়েছিস তার থেকে বড় আর কিছু ঘটানোর নেই। (ফিসফিস করে বললেন) এরা যদি জানে তুই কাঠখড় পুরিয়ে বিয়ের কনেকে ভাগিয়ে দিয়েছিস তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস? কান্নাকাটি না করে গিয়ে বিয়ে কর। মনের ডাক্তারের যেখানে আপত্তি নেই সেখানে তোর কিসের আপত্তি? যা যা। দেরি করিস না। আমি তোর মামুকে বলে দেই তোর বিয়ে হচ্ছে।’

…………………………

শোবার ঘরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন হানিফ শরীফ। কদিন ধরে শরীর ভালো যাচ্ছে না। বদ হজম হচ্ছে। কিছু খাওয়ার‌ও রুচি নেই। মন মেজাজ বিগড়ে থাকছে সবসময়। ভালো কাজেও বিরক্তি অনুভব করছেন তিনি। রাত আটটা হলেই রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পরেন। এক দেড় ঘন্টা টানা হেঁটে ঘরে ফিরে সোজা ঘুম দেন। আজ‌ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তবে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ফোন বেজে উঠায় বিরক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সোজা হয়ে বসে ফোন করা ব্যক্তিকে গালি দিতে দিতে স্ক্রিনে তাকান। হিমি ফোন দিচ্ছে দেখে মুখের গালিগুলো গিলে নিলেন। অবচেতন মনে দেয়া গালিকেও ফিরিয়ে নিলেন। হাসি হাসি মুখে ফোন উঠাতেই পুরুষালী গলা শোনা গেলো। হানিফ শরীফ তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘কে বলছেন?’

‘আমি। মোজাম্মেল রহমান। হানিফ ভাই বলছেন?’

‘জি বলছি।’

‘এই সময় ফোন দিয়ে বিরক্ত করতে চাই নি। কিন্তু না করেও উপায় নেই। একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললেই নয়।’

‘বলুন তবে।’

‘হিমির বিয়ে।’

হানিফ শরীফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘জানি। মুহিব ভাই সেদিন জানিয়েছিলেন। ছেলে ইন্জিনিয়ার। ছেলের ছবি পাঠিয়েছেন। দেখি নি আমি। ইচ্ছে করে নি। হিমি রাজি থাকলেই হলো।’

‘হিমি রাজি নয়। তাই আজকেই ওর বিয়ে দিচ্ছি।’

‘রাজি না হলে বিয়ে দিচ্ছেন কেনো? আজকে দিচ্ছেন এর আবার কি মানে?’

‘মানে হলো বাবার পছন্দ করা ছেলেকে হিমি বিয়ে করছে না। আমি হিমির বিয়ে দিচ্ছি। আজ এবং এক্ষুনি।’

মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো হানিফ শরীফের। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ঘর্মাক্ত মুখ মুছে নিয়ে মনোযোগী হলেন ফোনে। মোজাম্মেল সাহেব বললেন,

‘ছেলে ডাক্তার। সাইকিয়াট্রীস্ট। হিমির পরিচিত। আজ ছেলের বিয়ে হ‌ওয়ার কথা ছিলো। হিমি মেয়েকে ভাগিয়ে দিয়েছে।’

‘হিমি মেয়েকে ভাগিয়ে দিয়েছে! কেনো?’

‘কারন জটিল। এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। সময় করে বলবো। আপাতত হিমির সাথেই বিয়ে হচ্ছে ডাক্তারের।’

‘হিমি ওই ডাক্তারকে বিয়ে করছে?’

‘রাজি হচ্ছে না। তবে আমি ওকে সাজাতে পাঠিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস হিমি সাজবে না। শাড়িও পরবে না।’

‘তাহলে?’

‘প্যান্ট শার্ট পরেই বিয়ে করবে। এই বিয়ে থেকে পিছু হটতে পারবে না বলেই বিয়ে করবে। প্রথমবার কোনো বাঙালি মেয়ে প্যান্ট শার্ট পরে বিয়ে করছে দারুণ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। নয়?’

‘না।’

‘আপনি কি রেগে যাচ্ছেন?’

‘রাগছি না তবে বিরক্ত হচ্ছি। এভাবে হুট করে ভাগ্নীর বিয়ে হচ্ছে আমি মেনে নিতে পারছি না।’

‘মানতে তো হবেই। যাই হোক আপনারা বেরিয়ে পরুন।’

‘এড্রেস দিন। আসছি।’

‘কিসের এড্রেস?’

‘যেখানে বিয়ে হচ্ছে সেখানের। নাহলে আসবো কি করে? আমরা তো ঠিকানা জানি না।’

‘আপনারা এখানে আসবেন না। আমি মেয়ের বিয়ে দিয়ে ওকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেবো। এখানে আপনাদের কোনো কাজ নেই।’

কিছুটা স্তম্ভিত হলেন হানিফ শরীফ। বললেন,

‘তাহলে কোথায় আসতে বলছেন?’

‘আমাদের বাড়ি।’

‘কেনো?’

‘আপনি মামা হয়ে ভাগ্নীর বিয়ে মেনে নিতে পারছেন না মুহিব বাবা হয়ে কি করে পারবে? বাবাও রেগে যাবেন। আপনাকে সামলাতে হবে সব।’

‘আমায় কি করতে বলছেন?’

‘বেশি কিছু না, পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়ি যাবেন। বসার ঘরে সবাইকে জড়ো করে হিমির বিয়ের ঘটনার বর্ণনা করবেন। এবং সবার মতোই আমার ঘাড়ে দোষ চাপাবেন। আমার স্ত্রী আমিনা কান্নাকাটি করে জ্ঞান‌ও হারাতে পারে। আপনি তবুও থামবেন না। বরং বাবার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে বকা ঝকা করবেন। পারলে দু একটি গালিও দিবেন। মুহিব কিছু বলবে না। ওকে বলতে বাধ্য করবেন। ততক্ষনে আমি বাড়ি পৌঁছে যাবো। এরপর আবার‌ও আমাকে দোষারোপ করবেন। সবাইকে শান্ত করে তারপর আমি আমার পক্ষ রাখবো। তখন আপনি আমার সাইড নিবেন। আমার সাথে তাল মিলিয়ে ‘হিমির ভালো হয়েছে’ এমন টাইপ কথা বলবেন। এভ্রিথিং উইল বি পার্ফেক্টলি অলরাইট।’

হানিফ শরীফ তব্দা খেয়ে গেলেন মোজাম্মেল সাহেবের কথায়। বাকরুদ্ধ হয়েগেলেন কিছুক্ষনের জন‌্য। মোজাম্মেল সাহেব নিরাশ গলায় বললেন,

‘যা বলেছিলাম! হিমি প্যান্ট শার্ট পরেই আছে। মেক আপ নেই। বিয়ের কনে এভাবে বিয়ে করবে? বিশ্বাস হয় না। এই মেয়েটা কিছুই শিখলো না। নিজের বিয়ের দিন এমন একটা লুক! ‌অ্যালবামের বারোটা বাজিয়ে দিলো এই মেয়ে। রাখছি। আপনি বেরিয়ে পরুন।’

হানিফ শরীফ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার‌ও খাটে বসলেন। বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস উঠিয়ে চুমুক দিলেন পানিতে। হতাশা নিয়েই উঠে দাঁড়ালেন। আলমারি খুলে হালকা সোনালী রঙের পাঞ্জাবী বের করে পরলেন। ওখানে গিয়ে কি কি বলবেন তার একটা লিস্ট‌ও মনে মনে ঠিক করে নিলেন হানিফ শরীফ। হিমির জন্য মন কেমন করতে লাগলো ওনার। একটাবার ওর সাথে কথা হলে ভালো হতো। মেয়েটা হয়তো ভয় পাচ্ছে। হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। হয়তো বা রাগ করছে। মোজাম্মেল সাহেব বরের ব্যাপারে কিছু বললেন‌ও না। জানা উচিত ছিলো। ছেলে, তার পরিবার সবাই ভালো তো? হিমিকে মেনে নেবে? হিমি ওদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে? এখানের মতো ওখানেও অপমানিত হবে না তো হিমি? বুক ভেদ করে দীর্ঘশ্বাস বেরুলো হানিফ শরীফের। না বোনের বিয়েতে থাকলেন আর না বোনের মেয়ের। বোনের সংসার টিকেও টিকলো না। তিনিও দেখলেন না। হিমির বেলায় এক‌ই জিনিস না ঘটে আবার। বুক ভারি হয়ে আসে হানিফ শরীফের। প্রশ্ন জাগে মুহিব রহমান কি করে নেবেন মেয়ের বিয়েটা?

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here