উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।
কলমে: চন্দ্রা।
পর্ব :১০
বাজলো তোমার আলোর বেণু ,,,,,,
সেই ভোর রাত থেকেই চৌধুরীদের মন্দিরে সাউন্ড বক্সে ফুল ভলিউমে বেজে চলেছে মহালয়ার সুর।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ রীতি চালু থাকলেও তন্মধ্যে শারদীয়া দূর্গোৎসবই সর্ব শ্রেষ্ঠ। মহালয়ার মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয়ে সে আনন্দের রেশ থাকবে আসছে বৎসর পর্যন্ত।আসলেই আলোর বেণুই বাজবে ধরণীতে। এর আগে কখনো এমন হই হই রই রই ভাবে মহালয়া কেউ শোনেনি এবাড়িতে।রিতিই সবার আগে ঘুম থেকে উঠে অভি রাজের ঘুম ছুটিয়ে মন্দিরে পাঠিয়েছে সাউন্ড সিস্টেম অন করতে।সে বেচারা এখন সবার সাথে ড্রইং রুমের সোফায় বসে ঢুলছে।রিতি আছে মহানন্দে। রঘুনাথ কাল উপজেলার একটা মিটিং এবং অন্যান্য দরকারি কাজ সেরে প্রায় শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে।রিতি গিয়ে তাকেও টেনে তুলেছে কম্বলসহ।রঘুনাথের কোন আপত্তি বিপত্তি ধোপে টেকেনি যখন রিতি বললো, দাদাভাই এই একটি বছরই তো সবাই একসাথে বসে মহালয়া শুনবো।
আসছে বছর যদি এ সুযোগ না মেলে তবে কিন্তু আফসোস করবে বলে দিলাম। তারচেয়ে ভালো হয় ভালোয় ভালোয় বসার ঘড়ে চলে এসো।
রঘুনাথ অনেক কষ্টে দুচোখের চারটি পাতা আলাদা করে করুন দৃষ্টিতে তাকায় রিতির দিকে,,
বুড়ি ,, শেষ মেশ তুইও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলি?তুই?
রিতি হুট করে উঠে দাঁড়ায়,
সে তুমি যা ভাববার ভাবোগে আমি গেলাম। ইচ্ছে হলে এসো না হলে শুয়ে পরো আমি কম্বল চাপা দেই।
বললো ঠিকই কম্বল চাঁপা দেই কিন্তু দরজাটা হা করে খুলে রেখে আপন গতিতে বেড়িয়ে পড়লো।
রিতি ঘুম থেকে তুলে দিয়ে গিয়েছে আর রঘুনাথ পুনরায় ঘুমোবে এমনটা তো সম্ভব ই না। অগত্যা আড়মোড় ভেঙে উঠতেই হলো।
পুরো বাড়িতে এখন একটি মানুষই শুধু ঘুমিয়ে আছে কারন তার ঘুম ভাঙানোর দ্বায় রিতির নেই।তিতলিও ব্যপারটা বেশ উপভোগ করছে।সেই ছোট বেলায় ইন্ডিয়া থেকে আনা রানীগোল্ডের বড়ো রেডিওতে বাড়ির সবাই যখন মহালয়া শুনতো ও তখন কাঁথার তলায় ঘুমহীন কাঁচুমাচু হয়ে শুয়ে ভাবতো এবার পুজোয় কি কি কিনবে আড়ং থেকে।অনেক বছর এই আনন্দের ভাগীদার হয়না সে। চুলোয় চায়ের জল চাপিয়ে সরলা পিসিকে বসার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে রিতি,,
সবাই বিভোর হয়ে শুনছে মহালয়া।এমন ভাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মহালয়া শুনা হয় না অনেকদিন।মা গো তুমি এইভাবে আমার সংসারটা ভরিয়ে রেখো সবসময়। মনে মনে কথাগুলো আওড়ে কপালে জোর হাত ঠেকান অন্নপূর্ণা দেবী।
ভোরের আলো ফুটতে আর কিছু মূহুর্ত বাকী।রিতি ট্রেতে করে চায়ের পেয়ালা এগিয়ে দিচ্ছে সবাইকে।প্রভাকর চৌধুরী তাকে টেনে বসালেন নিজের পাশে।হাসি মুখে বললেন,সেই মাঝরাত থেকেই তো ছোটাছুটি শুরু করেছিস।বোস না একটু শান্ত হয়ে।রিতির আর উপায় কি ?বসতেই হলো বাধ্য মেয়েটির মতো।
********
কফির মগ হাতে নিয়ে বিরূপাক্ষের শয়নকক্ষে ঢুকলো রিতি।খালি বিছানা পরে আছে বিছানার মানুষটা নেই।ওয়াশরুম থেকে জল পরার শব্দে নিশ্চিত হলো রিতি ফুল বাবু স্নানে আছেন।বেড সাইড টেবিলে কফির মগটা ঢাকা দিয়ে রেখে হাত লাগালো এলোমেলো বিছানায়। বিছানা গুছিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে সবে বাঁ হাতে হ্যাচকা টানে বুকটা কেঁপে উঠলো রিতির।সামনে বিরূপাক্ষ দাঁড়িয়ে,খালি গায়ে মুক্ত দানার মতো বিন্দু বিন্দু জল চিক চিক করছে কালো পশমাবৃত প্রশস্ত বক্ষে।পরনে সফেদ রঙা তোয়ালে। একজনের নিঃশ্বাসের শব্দ অন্য জনে শুনতে যতটুকু ব্যবধানের প্রয়োজন ঠিক ততটাই দূরত্ব ওদের মাঝে।
রিতি বিমুঢ় বিমোহিতের মতো কিছুক্ষণ দেখতে থাকে বিরূপাক্ষের নগ্ন বক্ষ এবং ললাটের উপরিভাগে লেপ্টে থাকা হালকা জলযুক্ত কেশরাশি গুলো।মনে বড় সাধ জাগে নিজের আঁচল দিয়ে মানুষটার আদ্র চুল গুলো শুষ্ক করে দিতে।
ঘোর কাটতেই অদৃশ্য ভাবে জিভকাটে রিতি নিজের বেহায়া মনে বেশরম সাধ জাগার জন্য।হাতটা টান মেরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই অপরপক্ষের ঘোর কাটল।
বিরূপাক্ষ যখন ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো তখন হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছিলো এক অসীম মুগ্ধতায়।সামনে একটু ঝুঁকে বিছানা চাদর ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখছে রিতি।ভেজা একঢাল দীঘল কালো চুল হাঁটু ছাড়িয়ে আরো নিচে ছড়িয়ে আছে।সদ্য পাটভাঙা লালপেড়ে গাঢ়ো নীল শাড়ির আঁচল গড়াচ্ছে মেঝেতে। হাতের নড়াচড়ার তালে যখন আঁচল সরে মেদহীন ফর্সা পেটের খালি অংশটা দেখা গেলো তখন বিরূপাক্ষের নির্লজ্জ দৃষ্টি আটকে গিয়েছিলো সেখানে।সমগ্র দেহে এক অজানা অনুভূতির দোলাচল। কিন্তু মোহ সবার বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। অনেকের সংযম ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে।বিরূপাক্ষকে সে দলে ফেলে দেওয়া যায় নির্বিবাদে।নিজেকে সংযত করতে গত রাতের অপমানের কথাটা মনে করলো বারংবার তারই ফলশ্রুতি হাত ধরে হ্যাচকা টান। কিন্তু পেছনে দেখে যে মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায় সামনে দেখে সে নিজেকে সামলাবে কি করে।
কি হলো হাতটা ছাড়ুন। কথায় কথায় হাত ধরা এসবের মানে কি হ্যা?
রিতির নিচু স্বরে কড়া বাক্যে মুগ্ধতা কেটে গিয়ে গত রাতের উষ্মা ফিরে এলো বিরূপাক্ষের মনে,,
অনাত্মীয় পুরুষের ঘড়ে দিনে রাতে এভাবে রুপ দেখিয়ে বেড়ালে সেতো একটু আধটু সুযোগ নেবে,কে বলেছে এসব করতে?
হাতটা আগে ছাড়ুন। আমার লাগছে। আপনাদের খাচ্ছি, আপনাদের পরছি এটুকু কাজ করতে পারবোনা?
না আমার আশে পাশে এভাবে ঘুর ঘুর করা যাবে না।এতে আমার মন গলবে না।বৃথা কষ্ট করে লাভ নেই।
রিতি গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কটা দিন আছে এখানে বিরূপাক্ষের সাথে কোন দুরব্যবহার করবে না। আপোষে সবকিছু কন্ট্রোল করে নেবে। শুধু শুধু বিবাদ বাড়িয়ে কি লাভ তাতে যে এক সাথে কাটানো সল্প সময়ের স্মৃতিটুকু ও সুখকর হবে না।তাই বিরূপাক্ষের ক্ষোভপূর্ণ কথার জবাবে মৃদু হেসে বললো,,,
কি ব্যাপার হ্যা,,,আশে পাশে ঘুরঘুর করলে ধরা পরে যাবেন সেই ভয় পাচ্ছেন?ভয় পাবেন না।আমি ছেলেধরা নই।
রিতির হাসি বিরূপাক্ষের কাছে চরম ন্যাকামি মনে হলো,
আর কখনো আমার ঘড়ে ঢুকে এসব করার চেষ্টাটাও করবি না। ভালো ভাবে বলে দিলাম না শুনলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।চোখ দুটো অগ্নিবর্ণ করে বললো বিরূপাক্ষ।রিতিও সে চোখে চোখ রেখে দৃঢ়তার সাথে বললো,,
আমার যা কর্তব্য আমি করবো, পারলে ঠেকান।
বিরূপাক্ষ সজোরে রিতির হাতটা ছুড়ে মারতেই সে টাল সামলে বসে পরলো বিছানায়। এককোণে গুছিয়ে রাখা কম্বল বালিশ এলোমেলো করে ছুঁড়ে মারলো রিতির মুখে,,,
এরকমই হবে বুঝলি?আর কখনো আমার সাথে বৃথা স্পর্ধা দেখাবি না।ভালো কথা শোনার মেয়ে নোস তুই ।তাহলে এভাবে আমার পেছনে পরে থাকতি না।
রিতি আর একটা কথাও বলেনি। একছুটে মুখে কাপড় গুঁজে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খেয়ালই করেনি আরো কেউ একজন সমব্যথি হয়ে দরজার বাইরে দেয়ালে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে ছলছল নয়নে।
রিতি প্রস্থান করতেই বিরূপাক্ষ দুহাতে মুখ ঢেকে বসে পরেছে বিছানায়।মনটা অশান্ত হয়ে উঠেছে।মেয়েটাকে কষ্ট দিলে তার এমন হচ্ছে ক্যানো এটাই বুঝতে পারছে না।একটু বুঝি বেশিই করে ফেললো। বিছানায় কিছু রাখার শব্দে চোখ তুলে তাকালো বিরূপাক্ষ।পালঙ্কের একটা পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছে জয়া। চোখের নিচে সদ্য মোছা জলের দাগ দেখে অবাক হয় বিরূপাক্ষ,,
কি হয়েছে বৌদিদি?ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করে।
ভাই,বৌদিদির মুখটা একটু ম্লান দেখেই ভাবনায় পরে গেলে?আর যে মনের মধ্যে ব্যাথা নিয়ে সবার সাথে হেসে খেলে বেড়ায় তার ব্যাথা বুঝলে না?একটা অনুরোধ করি তোমাকে,মেয়েটাকে ভালো বাসতে না পারো কষ্ট দিওনা তাহলে যে ভগ্নাংশটুকু দেখছো না?সেটুকুও আর অবশিষ্ট থাকবে না।
বিরূপাক্ষকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুতপদে বাহিরে চলে যায় জয়া। বিরূপাক্ষ জয়ার বলা কথাগুলো উলোট পালোট করে নিজের মনে। সামনের টেবিলে ঢেকে রাখা কফির মগটা তুলে নিয়ে আনমনে একটা চুমুক দিয়ে বিতৃষ্ণায় চোখ মুখ কুঁচকে থু থু করে ফেলে দেয় ভেতরের তরল পদার্থটুকু।
এটা কি কেবল কফির বিস্বাদ নাকি মনের অবসাদ মিলে মিশে একাকার হয়েছে কে জানে?
বৌমনি,ও বৌমনি শুনেছো কি হয়েছে?
অভি তার ক্যারকেরে গলা বাজাতে বাজাতে ঢুকলো রিতির শয়নকক্ষে।রিতি কিছুক্ষণ আগের আঘাতটা সামলে নিচ্ছিলো।অভির উপস্থিতি টের পেয়ে ভালো করে চোখ মুছে মিথ্যা হাসির ফোয়ারা ছুটিয়ে বললো,,
কি নিউজ বয়ে এনেছে আমাদের অভি বাবু?
ছটদাভাই সেদিন বললো বিদেশ থেকে আমাদের জন্য নাকি কিছুই আনেনি।অত বড়ো বড়ো লাগেজে শুধু নিজের জামাকাপড় এনেছে বলেছিলো আমার অবশ্য সন্দেহ হয়েছিলো।সেটাই ঠিক হলো দেখলে?
অভির কথার ধরনে অনেকক্ষণ পরে মন থেকে হাসি পেলো রিতির।সেও একটু ভাব নিয়ে বললো,তা কি সন্দেহ করেছিলো আমাদের ডিটেকটিভ সাহেব?
তুমি কিন্তু মজা নিচ্ছো বৌমনি!অভির কন্ঠে অভিমান।
রিতি হেসে অভির কাঁধে হাত রেখে বলে,,আর কোনো ফান না এবার বলো কি সন্দেহ ঠিক হলো?
তিতলি দি বললো ছোটদা ভাইয়ের বড়ো লাগেজ দুটোতে সব আমাদের জন্য উপহার এনেছে। আমার তো মনটাই খারাপ হয়েছিলো কিছু আনেনি বলে।এখন যে কি খুশি লাগছে তোমার খুশি হচ্ছে না?
হুম হচ্ছে। ছোট্ট জবাব রিতির।
তুমি ছোটদাভাইয়ের বউ তো।দেখো তোমার জন্যই সবচেয়ে দামি গিফ্টটা এনেছে।
রিতির বুক ভেঙ্গে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসতে চায় অভির অতি উচ্ছাসে বলা কথাগুলো শুনে।এত সৌভাগ্য হয়নি তার যেটা অভি ভাবছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হলো।ছোট বড়ো শতখানেক মানুষের খাওয়ার আয়োজন হয়েছিলো চৌধুরী বাড়িতে বাগানের এককোনে ফাঁকা জায়গায় চুলা বানিয়ে তাতে রান্না হয়েছে নিরামিষ খিচুড়ি, বেগুন ভাজি আর শেষপাতে দেওয়া হয়েছে মিষ্টান্ন,দধি।
অন্য বছর এমনটা হয় না।এবার হলো রিতির পরামর্শে।যে যুবক ছেলেরা দলবেঁধে পূজার জন্য কলা কেটেছে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে এই ব্যাবস্থা।সাথে পাড়ার বাচ্চারাও বাদ পরেনি।
কাজে কর্মে ব্যস্ত থেকে দিনটা ভালই কাটলো রিতির। বর্ষার মৌসুমের ধানগুলো পাঁক ধরেছে অদূরে ক্ষেতে। অস্তমিত সূর্যের সোনালী দিগন্তে মিশে যাওয়া দেখলো ছাদে দাঁড়িয়ে।সাথে তিতলির টুকটাক কথোপকথন মন্দ লাগলো না রিতির।কর্ম ব্যস্ততায় আজকাল যান্ত্রিকতার ভূত ভর করেছে তার মধ্যে এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহ এখন আর টানেনা তাঁকে।আজ খারাপ লাগলো না বরঞ্চ সকালের মন খারাপ ভাবটা উধাও হয়ে গেল এই মনোরম পরিবেশে।
*****
মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক।এই হাসি তো এই কান্না। দুঃখ যেমন সারা জীবন কারো ছায়াসঙ্গী হয় না।সুখেরও শেষ হয়।
নিজের ঘড়ে ড্রেসিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিতি।অশ্রুর ঢল নেমেছে আখি পল্লবীতে।ঝাপসা চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের প্রতিবিম্বের দিকে।প্রতিবিম্বের রিতিকে খুব রাগী দেখাচ্ছে যেনো।চোখে তার অফুরন্ত উপহাস।অট্টহাসিতে ফেটে পরে গম্ভীর গলায় বললো,,তুই এতটা লোভী রিতি?এত নির্লজ্জ ক্যানো তুই?আত্ম সন্মানবোধ বলে কি কিছুই নেই তোর।যে তোকে কানা কড়ির মূল্য দেয়না তার কাছে সোনার মোহর হওয়ার লোভ ক্যানো দেখাস ?উচিৎ শিক্ষা হয়েছে আজ।লোভী, বেহায়া মেয়ে কোথাকার।
চিৎকার করে ওঠে রিতি,,না না না ,আমি লোভী নই।লোভী নই আমি। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে সে।
কিছুক্ষণ আগে,
সন্ধ্যা উতরেছে মাত্র।বসার ঘড়ে বাড়ির সবাই উপস্থিত। রঘুনাথ আজ বিকালে কোনো কাজ রেখেনি। প্রভাকর রায় চৌধুরী সকালের পত্রিকায় মুখ গুঁজেছেন এই ভরসন্ধ্যায় ।অন্নপূর্ণা দেবী জয়ার সাথে সাংসারিক কথাবার্তায় ব্যস্ত।রিতি চা করছে সবার জন্য। বিরূপাক্ষ একটা লাগেজ টেনে নিয়ে নিচে নামতেই সবার কৌতূহলী দৃষ্টি সেদিকেই পরলো।অভির ভেতর টান টান উত্তেজনা।কি পরবে তার ভাগে?
ধীরে সুস্থে লাগেজ খুলে যার যার জিনিস তাকে দিয়ে দিলো বিরূপাক্ষ।এসব শাড়ি চুড়ি সব কিনেছে ঢাকায় ব্যাক করেই। ইতিমধ্যে রিতিকে হিড়হিড় করে টেনে এনে নিজের পাশে বসিয়েছে জয়া। সবার সবকিছু দেওয়ার পরে লাগেজে দিকে তাকিয়ে দেখলেন অন্নপূর্ণা দেবী।তাতে বেশ বড় একটা প্যাকেট দেখে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লেন সবার অলক্ষ্যে।অভি তার রিমোর্ট কন্ট্রোল উড়ো প্লেনটা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের ঘড়ে ঢুকেছে।
জয়া মনে শান্তি পাচ্ছে না। নিজেই লাগেজে পরে থাকা প্যাকেটটা বের করে আনপ্যাক করলো। চমৎকার একটা কাতান শাড়ি বেরিয়ে এসেছে সেখান থেকে। অন্নপূর্ণা দেবীর চোখ মুখ স্বস্তিতে চকচক করে উঠলো।জয়া হাসি মুখে শাড়িটার ভাঁজ খুলে মেলে ধরলো রিতির কাঁধে।
কি দারুন লাগছে বলো মামিমা? মানিয়েছে বেশ তাইনা তিতলি?
তিতলি অপ্রস্তুত হয়ে পরে।ও তো জানে একটা অনর্থ ঘটবে কারন এই শাড়িটা রূপ নিজে পছন্দ করে কিনেছে অন্য কারো জন্য। অসহায় চোখে একবার রিতির ঝলমলে মুখের দিকে তাকলো সে।
রিতি মনে মনে ভাবলো মুচকি হেসে, আমায় যদি মনে নাই রাখো তাহলে এসব কি?
বাহ্ বেশ পছন্দ তোর খোকা। বললেন অন্নপূর্ণা দেবী।
বিরূপাক্ষ বললো,মা তোমাদের ভুল হচ্ছে।এই শাড়িটা আমি অন্য কারো জন্য কিনেছি ওর জন্য না।
বিরূপাক্ষের কথায় জয়া শাড়িটা ছেড়ে দিতেই তা নিচে পরে যায় তিতলি মনে মনে ভেবেছিলো রূপ ব্যপারটা সামলে নেবে। কিন্তু ও যে এমন ভাবে মেয়েটাকে অপমান করবে ভাবেনি।রিতির দিকে তাকিয়ে মায়া হলো,ঝলমলে মুখটাতে কেউ যেনো কালিমা লেপন করে দিয়ে গেছে। রঘুনাথ থম মেরে গিয়েছে। অন্নপূর্ণা দেবী খালি হাতেই উঠে গেলেন নিজের ঘড়ে।জয়া উঠবে এমন সময় রিতি তার হাত চেপে ধরে চোখ দিয়ে ইশারা করলো না উঠতে।নিজেই ভাঁজ ভাঙা শাড়িখানি যত্ন করে ভাঁজ করে রাখলো সোফায়।তারপরে ধীরপদে সিঁড়ি ভাঙলো ধাপের পর ধাপ।বিরূপাক্ষ নিজের করা নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকেই তিরস্কার করলো খানিক।দিয়ে দিলেই হতো ওকে শাড়িটা।ঢাকা থেকেই তো কেনা।আরো পাওয়া যেত।
বর্তমানে,,
এক পা গুটিয়ে আর এক পা মেলে পালঙ্কে বসে আছে রঘুনাথ।প্রচন্ড রাগে চোখদুটো লাল তার।পায়ের কাছে রূপের দেওয়া আইফোনটা বাক্সবন্দী হয়ে পরে আছে।ওটা আর ছুঁয়ে দেখারও ইচ্ছে করছে না। জয়া এসে বসলো পায়ের কাছে,,চোখে জল নিয়ে বললো,,যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে না জানো?ভাই যে ক্যানো এমন করছে বুঝতে পারছি না। ভালো করার আশায় মেয়েটার ক্ষতি হয়ে যাবে নাতো? প্রথমবার সামলেছে। এবার কি করবে বলো তো?
ও ঠিকই সামলে নেবে। কিন্তু আমার চিন্তা রূপকে নিয়ে।দেখো দাবার গুটি যেনো উল্টে না যায়। প্রতিক্রিয়া হীন ভাবে বললো রঘুনাথ।
দরজায় টোকা পরতেই জয়া চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।বাইরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে রিতি।
বৌদিদি রাতে কি সবাইকে উপোস করাবে ভেবেছো?এভাবে ঘড়ে দরজা দিয়ে দুজনে রোমাঞ্চ করো তাতেই সবার পেট ভরে যাবে।অভিযোগ করে রিতি।
জয়া, রঘুনাথ দুজনেই বিভ্রান্ত রিতির স্বাভাবিকতায়।জয়া পেছনে রঘুনাথের দিকে তাকাতেই সে চোখ দিয়ে ইশারা করে ,ভাবটা এমন যে,বলেছিলাম না ঠিক সামলে নেবে?
চলবে,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।