হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে পর্ব:৫

0
1037

উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে:চন্দ্রা।

পর্ব:০৫

মেঘমেদুর শারদ প্রভাত। নিহারিকা আচ্ছাদিত সবুজ ঘাস মাড়িয়ে নগ্ন পায়ে হেঁটে চলেছে রিতি। বাড়ির সামনে বেশ খানিকটা ফাকা জায়গা।তার এক পাশে ফুলের বাগান।চোখ বুজে কোনরকমে রাতটুকু পার করে উঠে এসেছে সে। নতুন কোন জায়গায় গেলে ওর ঘুম দেবী ছুটি কাটাতে চলে যায় কোথাও। সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে। বাড়ির কেউ তখনো জাগেনি।আস্তে দরজা খুলে বেড়িয়ে পরে ঘড় থেকে।সূর্য দেবও আজ ভীষণ আলসেমি করছে আঁখি মেলতে। তিনিও কি রাত জেগে ছিলেন রিতির সাথে? ফাঁকা জায়গা টুকুতে শীতকালে টেনিসের কোট আঁকা হয়। অন্নপূর্ণা দেবীর ছোট ভাইয়ের ছেলে অভিরাজ এখানে থেকে পড়াশুনা করে।সে বন্ধুদের নিয়ে আর কদিন পরে টেনিস খেলবে এখানে। ছোট নরম দূর্বাঘাস তাতে শীতল শিশিরের আলিঙ্গন। অভূতপূর্ব এক ভালো লাগার সৃষ্টি করছে রিতির মধ্যে।রাত্রি জাগরণের অস্বস্তি প্রায় মিলিয়ে এসেছে।একটা অন্যরকম সুবাসে রিতির ঘ্রানেন্দ্রীয় সজাগ হয়ে ওঠে।এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে ঘ্রাণের উৎসটা।
অবশেষে পেয়েও যায় সেটা।মন পুলকিত হয় ভীষণ ভাবে। একছুটে দৌড়ে যায় ফুল বাগিচার দক্ষিণ কোনে।হাঁটু মুড়ে বসে পরে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে। দুহাতের আজঁলাতে ভরে নেয় শিউলি ফুল গুলো। নাকের কাছে নিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ফুল গুলোর সুবাস নিজের ভেতরে প্রবেশ করায়।অনেক দিন কাছ থেকে ছোঁয়া হয়না তার অতি পছন্দের শিউলি ফুল।মনে মনে আফসোস করে রিতি, আহারে,এমন শুভ্র তরতাজা শিউলির একটা মাল্য যদি গোবিন্দকে পরাতে পারতাম?পেছন থেকে নারী স্বর ভেসে আসে,
এই যে গোপালের পাগল ফুল গুলো নিয়ে আয়।মালা গেঁথে পরাস তোর গোবিন্দকে।

রিতির যেনো বিশ্বাস হয়নি কথাটা এমন ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, কিন্তু বৌদিদি, তোমাদের মন্দিরে তো মা সিংহ বাহিনীর পূজা হয়।

তাতে কি হলো?এবাড়ির একমাত্র ছেলের বৌ গোবিন্দের আরাধনায় সদা মগ্ন আর প্রভাকর রায় চৌধুরীর এতবড়ো মন্দিরে সেই গোবিন্দের পূজা হবে না? তুই তাই ভাবিস?এখন যা তো তোর গোপালের আহারের ব্যবস্তা কর।আমি জল খাবার করে আসছি।
রিতি হতবাক এমন অনাকাঙ্খিত প্রাপ্তিতে।সে ভেবেছিলো কৃষ্ণ ঠাকুরকে বুঝি নিজের ঘড়েই বন্দী রাখতে হবে। কিন্তু না সকালটা পার করার জন্য তবে মুখ্য উপায়টাই পেলো।

পাড়ার মধ্যে বহুল আলোচিত সমালোচিত মহালদার বাড়িটি।অন্যান্য গ্রামে যেমন পাখির কলকাকলি আর মোরগের বাগ দেওয়ার স্বরে মনু্ষ্যজাতির ঘুম ভাঙ্গে তেমনি চন্ডীনগর বাসীর ঘুম ভাঙ্গে মহালদার বাড়ির রোজকার চেঁচামেচি ঝগড়া ঝাটি শুনে।আগে বিরক্ত হলেও এখন কান সওয়া হয়ে গিয়েছে সবার।কেউ ওদের হাউ কাউ এখন আর বিশেষ পাত্তা দেয়না।ও বাড়ির হরিশ মহালদারের বৌটা হয়েছে দুনিয়ার হতচ্ছাড়া।গুরুজনে ভক্তি নাই, মুখের কোন লাগাম নেই।যা খুশি বলবে,যা ইচ্ছা তাই করবে।
কলপাড়ে হাতমুখ ধুচ্ছিলো সুমি।মহালদার বাড়িতে ভীষণ ভাবে চেঁচামেচি শুনে দ্রুত এগিয়ে যায়, সেখানে যা পরিস্থিতি, দেখে চোখ উল্টে যাবার জোগাড় হয় তার।হরিশ কাকার মা রাঙা ঠাম্মা উঠোনে পরে কাতরাচ্ছে আর যে শলার ঝাড়ুটা দিয়ে এতক্ষণ উঠোনে ঝাঁট চলছিলো সেটা দিয়ে এখন হরিশের বৌ অনিতার দেহ ঝাড়ু চলছে। সেদিকে একবার তাকিয়ে রাঙা ঠাম্মাকে টেনে উঠায় সুমি। বৃদ্ধা মহিলা কাঁপছে থরথর করে।খোলা বারান্দায় একটা পাটি বিছিয়ে বসিয়ে দেয় ঠাম্মাকে। ততক্ষনে বেশ কয়েকজন জমে গিয়েছে উঠোনে।হরিশ থেমে গিয়েছে কিন্তু অনিতার মুখ ঠিক কখন বা কদিনে থামবে সঠিক খবরটা কেউ বলতে পারবেনা।
সুমি ঘড়ে ঢুকে সময় দেখার জন্য ফোনে চাপ দিতেও দেখলো চারটা কল মিস হয়েছে।তিনটা রিতির একটা প্রদীপের।রিতিকে কল ব্যাক করে সুমি। এমনিতেই করতো রাঙা ঠাম্মাকে ডাক্তার দেখানো দরকার সেটা রিতিকে বললে ওই ব্যবস্থা করে দেবে।বুড়ির বোধহয় ডানহাতটা চটে গিয়েছে।

হ্যালো,,,

হ্যা ।বল?

শোন সুমি ,,,কাজে আসার সময় আমার ঘড় থেকে বুটিক হাউস এর ফাইলদুটো নিয়ে আসিস তো,,আনতে ভুলে গিয়েছি,,,,,

আরো কিছু দরকারি কথা শেষে সকালের ঘটনাটার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলো সুমি।রিতি ডাক্তার কাকাকে পাঠিয়ে দেবে বলে আস্বস্ত করলো সুমিকে।

মান্নান মিয়ার সকালটা আজ ভারী প্রসন্ন। দিনের আলোয় সবার সম্মুখে স্ত্রীর সাথে করা দুর্ব্যবহারের সমস্ত মনমালিন্য মিটেছে কাল রাতের অন্ধকারে।রিতির শাসানিতে স্ত্রী কে আনতে শশুর বাড়িতে গিয়ে যখন শুনলো রাবেয়ার খেলার সাথী আসছে।দাদী শাশুড়ি বললেন, এই অবস্থায় পোয়াতি মাইয়াডার গতরে ক্যানো হাত দিলো। তখন মান্নানের যেনো খুশিতে পাগল পাগল অবস্থা। দ্বিতীয় সন্তানের আগমনের খবরটা যেনো কর্ণকুহরে এক বালতি মধু ঢাললো। বাবা হওয়ার অনুভূতি গুলো অন্যরকম তা সেটা প্রথমবার হোক বা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বার হোক।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো।দুই দিন কাজ কামাই করেছে আজ যেতেই হবে তার।না হলে থাকবেনা কাজটা। বিছানায় বসে বড়ো একটা হাই তুললো।বাইরে থেকে হাঁস মুরগির কান ঝালাপালা করা ডাক শুনা যাচ্ছে।রাবেয়ার মা সেগুলোকে খাবার দিয়ে খোয়ার মুক্ত করছিলেন। মান্নান বাইরে বেরোতেই লুঙ্গি, গামছা টা এগিয়ে দিয়ে বললো, গোসল কইরে আইসেন, খাওন দিতেছি। রাবেয়া তখনো গণিত বইয়ের সরল অংক সমাধানে ব্যস্ত,,
অনেক হইছে রাবু,,অহন গোসল দিয়া খাইয়া তোর বাপের লগে স্কুলে যা।বেলা অনেক হইছে।মেয়েকে তাগাদা দিয়ে রান্না ঘড়ে ঢোকে সালমা বানু।
এইতো আম্মা,ভাত দেও আমি আসছি।
সালমা বানু নিজে পড়ালেখার সুযোগ পায়নি । অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিলো।তবে পড়ালেখার প্রতি তার ভীষণ শ্রদ্ধা।তাই শত অভাবের মাঝেও মেয়ের পড়ার জন্য কিছু দিতে কমতি রাখে না। নিজের গর্ভের সন্তান যখন অনর্গল শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে তখন সালমা বানুর বুকটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে।এইতো চায় লেখা পড়া শিখে সন্তান তার সভ্যতা ভদ্রতা শিখুক।রিতি দিদিমনির কারনে কামলা মান্নানের স্থায়ী একটা কাজ জুটেছে চৌধুরীদের খামার বাড়িতে।বেতন কড়ি ভালো দেয়।এখন হাতে দুটো পয়সা জমে সালমা বানুর আর মনের কোণে জমে মেয়েকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন। কিন্তু মান্নান মাঝে মাঝে জানোয়ারের চাইতে খারাপ ব্যবহার করে।লোকের কানভাঙানি শুনে ঘড়ের বৌ পেটায় বেধরক ভাবে। তখন আর কোনো স্বপ্নের কথা মনে থাকে না।মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।

সকালের পূজা শেষে তরিঘরি করে ব্যাগ গোছাতে ব্যাস্ত রিতি। গতকাল তার ব্যাগ দুটো বিরূপাক্ষ এর ঘড়েই রেখেছিলো রঘুনাথ। অন্নপূর্ণা দেবী অনেক অনুরোধ করলেন ঐ ঘড়ে থাকার জন্য। কিন্তু রাজি হয়নি রিতি।রিতির একগুঁয়েমি যে অন্যসবাইকে হার মানাতে ওস্তাদ সে সম্পর্কে অবগত এবাড়ি চাকর বাকর সহ মনিব পর্যন্ত। একবার না করলে আর হ্যা হয়না তার দ্বারা। অবশেষে হার মেনে রূপের ঘড়ের পাশের ঘড়েই ব্যবস্থা হয়েছিলো তার থাকার জন্য।একদম পাশের ঘড়ে থাকাতে আপত্তি থাকলেও সেটা নিয়ে গাঁইগুঁই করে কাউকে আর অপ্রস্তুত করতে মন চাইলো না রিতির বৌদিদি নিজে আলমারি ক্যাবিনেট গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে।সকাল বেলা সারদা পিসি এসে একটা তাজা ফুল সহ ফুলের টব রেখে গিয়েছে টেবিলের উপর। সেগুলোর মৃদু সৌরভ আর মন্দিরে জালিয়ে রাখা ধুপকাঠির অপূর্ব সুগন্ধে মনটা চনমনে হয়ে উঠেছে রিতির।
হাতে কয়েকটি নতুন শাড়ি নিয়ে ঘড়ে প্রবেশ করলেন অন্নপূর্ণা দেবী।
একি সকাল সকাল ব্যাগ গোছাতে লেগেছিস ক্যানো?কোথাও যাবি?রিতি ফিরে তাকায় ঠোঁটের কোনে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি টেনে বলে,বা রে,,, স্কুলে যেতে হবেনা?ছুটি নেওয়া হয়নি তো।
ক্যানোরে তুই না গেলে স্কুল চলবেনা?রঘুকে বলছি ছুটির ব্যবস্থা করতে।হাতের শাড়িগুলো বিছানায় রেখে বললেন অন্নপূর্ণা দেবী।

না বড়মা, পূজো এখনো কয়েকদিন বাকী ।এত আগে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে পরে হাতপায়ে বাত ধরে যাবে। শাড়ির কুঁচি নেড়ে বললো রিতি।

শুধু এড়িয়ে যাওয়ার ফন্দি ফিকির তোর।এই বয়সে এত খাটুনির কি দরকার বলতো?মন দিয়ে ডাক্তারীটা পড়।কটা দিন বিশ্রাম নে না?একটু কাছে কাছে থাক।তোর জন্য আমার বুকের জলুনীটা যে কি,সেটা বুঝলে এই মিছে অভিমান করে দূরে দূরে থাকতি না।আমারই বা কি অধিকার আছে তোকে আটকানোর‌‌। নিজের সন্তানকে মানুষ করতে পারিনি তো,সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। কান্নায় কন্ঠ রোধ হয়ে আসে অন্নপূর্ণা দেবীর।
রিতির ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে।সবাই শুধু ভুলই বুঝলো তাকে।
পেছন থেকে জাপটে ধরে বড়মাকে।তারপর আহ্লাদী সুরে বলে,বড়োমা তুমি কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো।দিনে দিনে কচি খুকিটি হয়ে নাকের, চোখের জলে এক করছো।আমি কি তোমাকে ভালো বাসি না। তোমার বুকে মুখ গুঁজে যে শান্তি পাই তা পৃথিবীর আর কোথাও পাইনা বুঝলে? এখন শান্ত হয়ে কিছু খেতে দিলে দাও না হলে পরে আবার বলতে পারবে না ,এত ব্যস্ত মেয়েটা , দুটো খাওয়াতে ও পারলাম না।

আমার কান্না দেখে তুই রসিকতা করছিস?বেয়াদব হয়েছিস দিন দিন।এত কিছু বলছি তাও তোকে যেতে হবে? অভিমান ঝরে অন্নপূর্ণা দেবীর কন্ঠে।
তো কি করবো? তোমার সাথে দল বেঁধে কেঁদে কেঁদে জল বৃদ্ধি করলে সারা বাড়িতে কাঁদা হবে ‌আমি বাবা পূজার দিনে এমন অঘটন ঘটাতে পারবোনা।
রিতির কথার ধরনে হাসি ফুটে ওঠে অন্নপূর্ণা দেবীর মুখে।

এইতো এবার ঠিক আছে।সূর্যটা তবে উঠলো।
অন্নপূর্ণা দেবী আদর করে রিতির গালটা টিপে দিয়ে বলেন, কিছু বলার কায়দা নেই উত্তর সব সময় সাজানো থাকে তাইনা?

রিতি তাড়া লাগায়,বড়োমা ঢাকা থেকে লোক আসবে। সকাল সকাল বুটিক হাউসে যেতে হবে।এখন তবে আসি।

এই আগে খেয়ে নে।আর এই শাড়ি গুলো পরবি কিন্তু।না করা চলবে না।দাদাভাই নিজে এনেছে পরতে না দেখলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে।
রিতি তাঁর দিকে একবার অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে পেছনে অন্নপূর্ণা দেবী।

চৌধুরী বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশী নয়। হেঁটে যেতে মিনিট পাঁচেক ব্যয় হয়। মূল গেটের কাছে যেতেই একটা পুরনো বাইসাইকেল এসে থামে রিতির সামনে মান্নান নেমে সালাম দিলো, আসসালামুয়ালাইকুম আপা,,,
রিতি মান্নানের দিকে লক্ষ্য করে দেখে তার চোখে মুখে চাপা অনুশোচনা খেলা করছে। সালামের উত্তর দিয়ে বলে সে,কি ব্যাপার মান্নান ভাই। ভালো আছেন?

জি আপা।

কাজে যাচ্ছেন?কি রাবেয়া বেড়ানো ক্যামন হলো?
আমতা করে বলল মান্নান,আপা আসলে হেই দিনের কামের জন্য বহুত শরমিন্দা হইছি ।মাফ দিয়েন আপা।
ছি ছি মান্নান ভাই এমন করে বলবেন না।এইযে রাবেয়া স্কুলে আসছে,আপনাদের মিট মাট হয়ে গেছে শুনেই অনেক শান্তি পেলাম।আর এমন করবেন না।
আল্লাহর কিরা আপা এমন আর করবো না।অহন আসি।
একটু সরে গিয়ে মান্নান সাইকেলে চড়ে বসে।রিতি তাকিয়ে থাকে সেদিকে।সে জানে যত যাই আল্লাহর কিরা দিক আর অনুতপ্ত হোক এমন ঘটনা আবারো ঘটবে। আগেও ঘটেছে। গ্রামের মানুষ গুলোই তো এমন কথায় কথায় বৌকে মারে বকে, আবার গর্ব করে বলবে, আমার দাদায় বৌ পিডাইছে,পরদাদায় পিডাইছে,বাবায় পিডাইছে, আমিও পিডামু হেতে কার বাপের কি?

বিকেলে বুটিক হাউস এর অফিস সেরে বাড়ির পথ ধরেছে রিতি।মনটা তার খুবই ফুরফুরে। নিজেকে হাওয়ায় ভাসাতে ইচ্ছা করছে তার।আজ ঢাকার ক্লায়েন্ট পার্টির সাথে ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেলো।এসব ক্লাইন্টরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাতের কাজ করা শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবী, তাঁতে বোনা যাবতীয় সব কিছু ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করে।মালগুলো ভালোয় ভালোয় ডেলিভারি দিতে পারলে অন্তত পঁচাত্তর লক্ষ টাকা লাভ হবে রিতির।সেখান থেকে আড়াইশ তিনশো শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার পরেও বেশ টাকা থাকবে।এমন বড়ো ডিল তার এই প্রথম। শহরের দেশীয় পন্যের বাজারে “অন্নপূর্ণা তাঁত এন্ড বুটিক”এর তৈরী সবকিছুর সুনাম আকাশ ছোঁয়া। এলাকায় তাঁতি না থাকলেও প্রায় শ খানেক নারী পুরুষ কাজ করে তাঁত কলে।গামছা থেকে শুরু করে শাড়ি বুননের কাজ ও দক্ষ হাতে করে শ্রমিকেরা। অফিস রেজিস্ট্রেশনের খাতায় তিনশো শ্রমিকের নাম থাকলেও কাজের চাপ বেশী হলে পার্ট টাইম লোকের অভাব হয়না।
হাঁটতে হাঁটতে যখন বড় রাস্তা থেকে মোড় ঘুরবে তখন বাঁধলো বিপত্তি।বড় একটা নতুন গাড়ি মোড় ঘুরছে আগে কখনো এই গাড়িটা দেখেনি রিতি। এদিকে ঢুকছে মানে চৌধুরী বাড়িতেই যাবে।আগে থেকে লক্ষ্য করেনি গাড়িটা দেখলো সামনে একটা ছাগলছানা এসে পরেছে‌। আর একটু হলেই এতোক্ষণে থেঁতলে যেতো সাদা কালো মিশেলের সুন্দর বাচ্চাটি। বাচ্চাটাকে জোড়ে ধরায় ম্যা ম্যা করে চেঁচাচ্ছে।রিতি শাড়িতে জড়িয়ে হাঁটু মুড়ে পরে গিয়েছে পিচের উপর ।ব্যাথাও পেয়েছে বেশ। কাঁধের ব্যাগটা সরে পরে গিয়েছে। ততক্ষনে গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত গতিতে নেমে এসেছে চালক।

দেখি আপনার কোথাও লাগেনি তো?উৎকন্ঠিত হয়ে প্রশ্ন করল আগন্তুক।
রিতি উঠে হাত ঝেড়ে আগন্তুকের দিকে তাকায়।এই রোদহীন বিকেলে কালো সানগ্লাস দিয়ে চোখ দুটো ঢাকা,তথাপি জোড়ভ্রূ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।স্কাই ব্লু ডেনিম জিন্স প্যান্টের উপরিভাগে রয়েল ব্লু টিশার্ট। উজ্জ্বল শ্যমলা।একদম ফর্সাও না আবার কালোও না।একপলক দেখতেই চিনতে ভুল হয়না রিতির । কিন্তু তার তো আরো একদিন পরে আসার কথা ছিলো । আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে মানুষটা ।কে বলবে এই ছেলে আরো তিন বছর আগে ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে?মনে মনে ভাবছিল রিতি ।বুকে মধ্যে হার্টবিট দ্রুত বাড়ছে।

কি হলো মিস,,

সম্বিত ফিরে পেয়ে নিচ থেকে ব্যাগটা নিতে ঝুঁকতেই পুনরায় বিপত্তি ঘটলো। দুজনের মাথা আচ্ছা মতো গুতো লাগলো। আগের বার শান্ত থাকলেও এবার চরম মেজাজ খারাপ হলো রিতি কিন্তু অভদ্র ব্যবহার সে কারো সাথেই করে না আর এ ব্যাক্তির সাথে তো মরে গেলেও করবে না।
খুব বেশি ব্যাথা পেলেন?

আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে।একটা কথা বলি,এই অজো পাড়াগাঁয়ের মানুষ গুলোই ট্রাফিক রুলসে অভ্যস্ত নয় সেখানে ছাগল,গরু তো বাদ দিলাম ।বেশি ভালো হয় যদি আপনারা একটু দেখে শুনে চলেন।
কথাটা রূঢ় না হলেও তেমন ভালো লাগলো না রূপের‌।তবে সামনের দিদিমনি টাইপের নারীটির দিকে বার বার দেখতে ইচ্ছে হলো। নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে বললো ,আপনি কি এদিকেই যাবেন? চলুন পৌঁছে দেবো।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যা আমি ঐদিকেই থাকি তবে একা যেতে পারবো আপনি আসুন এবার।
অগত্যা রূপ নিজের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।রিতি এতক্ষণ স্থির থাকলেও আর পারলো না। লজ্জা,ভয়, সংকোচ তাকে ঘিরে ধরলো অক্টোপাসের মতো।কি ভাবে পারবে এই মানুষটার সামানে ঘুরতে।

মেয়েটা কিন্তু দারুণ কথা বলে রূপ।ড্রাইভিং রত অবস্থায় পাশের সিটের সল্প বসন পরিহিতা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে রূপ,ওটাকে তুই দারুন বলছিস? সুযোগ পেয়ে দিদিমনি ভাব ধরে একটু জ্ঞান দিয়ে দিলো আর কিছু না।
তবে হ্যা দেখতে বেশ রুপবতী।ঐ মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছিলো আমার,,, এটুকু বললো অস্ফুটে।

চলবে,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here