হৃদমোহিনী পর্ব ৪২

0
2313

হৃদমোহিনী
পর্ব ৪২
মিশু মনি
.
৬২
মিশু ঘুম থেকে উঠে ভূত দেখার মত লাফিয়ে উঠলো। শ্বাশুড়ি মা বসে আছেন সামনে! ভূল দেখছি না তো? ও চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, ‘আপনি!’

উনি মুচকি হেসে মিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আচমকা এভাবে জাপটে ধরায় হকচকিয়ে গেলো মিশু। অনেক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে সামলে নিতে। বললো, ‘মা আপনি এসেছেন!’

মা বললেন, ‘আমার মেয়ে না? আমি কি মেয়েকে দূরে রাখতে পারি?’

স্বপ্নের মত লাগছিলো মিশুর। তবুও এতদিনের জমিয়ে রাখা সমস্ত রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, জেদ সবকিছু নিমেষেই মিলিয়ে গেলো। উনি যখন চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘মায়ের উপর রাগ করিস না রে সোনা। মায়েরা ছেলে মেয়ের কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারেনা। মেঘকে কষ্ট পেতে দেখে রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছি, তাই বলে কি রাগ করে আছিস?’

মিশু কোনোমতে বললো, ”আপনি তো ঠিকই বলেছিলেন।’
– ‘আহারে সোনা মা আমার। রাগ করিস না প্লিজ। এইযে তোর মা তোকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তুই কি তোর মায়ের উপর রাগ করতে পারিস?’

শ্বাশুড়ির এমন কথা শুনে চোখে পানি এসে গেলো মিশুর। জাপটে ধরে বললো, ‘আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি মা। কিন্তু আপনার কথাগুলো আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। খুব রাগ উঠেছিলো আমার বিশ্বাস করুন।’
– ‘বুঝি রে। মেঘ আর মৌনি আমাকে বলেছে তুই কতটা জেদ নিয়ে আছিস।’
– ‘হ্যা। আপনার মেয়েকে কেউ এভাবে বললে আপনি কি চাইতেন না মেয়েটা যোগ্য জবাব দিক?’
– ‘আচ্ছা বাবা সরি। এইযে কান ধরলাম।’

মিশুকে ছেড়ে দিয়ে উনি কান ধরলেন দুহাতে। মিশু হেসে ফেললো এবারে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনি দেখি দারুণ স্মার্ট।’
– ‘আমাকে তুমি করেই বলিস অসুবিধা নেই। হ্যা আমি অনেক স্মার্ট। আমি আসলে ন্যাকা টাইপের প্রেমিকা ছিলাম। তোর শ্বশুর রোজ আমার জন্য এক দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতো আর আমি দেরিতে গিয়ে কান ধরে তার রাগ ভাঙাতাম। এই অভ্যেস এখনো আছে।’

মিশু হেসে বললো, ‘আপনি অনেক ফ্রি।’
– ‘হ্যা। আমি হচ্ছি এই যুগের শ্বাশুড়িদের আদর্শ। ঠিক না?’
– ‘হা হা হা। একদম ঠিক। বসুন, আপনাকে চা এনে দিই।’

মা মিশুকে কোলের উপর টেনে নিয়ে বললেন, ‘আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাক। চা পরে খাবো, আগে তোকে দুটো কথা বলি।’

উনি জোর করে মিশুর মাথাটা টেনে নিলেন কোলের উপর। তারপর মিশুর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘বিয়েতে কি শাড়ি নিবি নাকি লেহেঙ্গা?’

চমকে উঠলো মিশু। বিয়ে মানে! স্বপ্ন দেখছি না তো!

ও অবাক হয়ে বললো, ‘,আমার হাতে একটা চিমটি কাটুন তো। আমি কি এখনো ঘুমে আছি?’

মা হেসে মিশুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘স্বপ্নে কি গন্ধ পাওয়া যায়? অনুভব কর তো আমার শরীরের গন্ধ।’

মিশু চোখ বন্ধ করে মায়ের শরীরের গন্ধ অনুভব করলো। তারপর বিস্ময়ে অনেক্ষণ কথা বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ থমকে থাকার পর বললো, ‘মা গো!’

শ্বাশুরি মিষ্টি স্বরে বললেন, ‘বিয়ের শপিং করতে যাবি কবে? নাকি বিয়ের তারিখটাও ভূলে গিয়েছিস শুনি? তুই তো বড্ড আত্মভোলা। হয়ত তারিখটাও মনে নেই তাইনা? আসছে ১৫ তারিখ তোর আর আমার ছেলেটার বিয়ে। আমার ছেলেকে ভূলে যাস নি তো আবার?’

মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। অনেক ক্ষোভ নিয়ে ও চলে এসেছিলো। চেয়েছিলো বিয়েটা ক্যানসেল করে দিতে। কিন্তু এভাবে বললে কি ফিরিয়ে দেয়া যায় কাউকে? এখন তো মহা ঝামেলায় পড়া গেলো।

শ্বাশুড়ি মা বললেন, ‘আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিস না। বিয়ের কার্ড অলরেডি অনেকের কাছে পৌঁছে গেছে। তোর বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম। উনি বলেছেন তুই নাকি বিয়ে করবি না। বিয়ে তো হয়েই গেছে, না করার আবার কি আছে বল? আমার রাগ মেঘের উপরে ঝেড়ে লাভ আছে?

মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘রংপুরে আমাদের বাসাতেও বিয়ের আয়োজন জোরেশোরে শুরু হয়েছিলো। আমিই বাবাকে না করে দিয়েছিলাম রাগের বশে।’
– ‘আমাদের অনেক রিলেটিভ জানে বিয়েটা হচ্ছে। তারা কি ভাব্বে এই জেদের কথা শুনলে? সবাই হাসাহাসি করবে রে মা। রাগটা ভূলে যা। তুই এখন আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে আমি আমার পরিবারের মত করেই অন্যের সামনে উপস্থাপন করবো। যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে।’

মিশু চমকে উঠে তাকিয়ে রইলো শ্বাশুড়ির দিকে। ঘুম থেকে উঠেই এরকম সারপ্রাইজ পাবে কল্পনাও করেনি। উনি খুব গুছিয়ে কথাগুলো বলছেন। মিশু বললো, ‘আপনি যা বলেছিলেন ঠিকই বলেছিলেন।’
– ‘আহা আবার রাগ করছিস কেন? বিয়ের সমস্ত আয়োজন হয়ে গেছে। এখন তুই ‘না’ বললে সবাই কি বলবে? এরকম পাগলামি করতে হয়না রে মা। তোরা বাচ্চা মানুষ, ভূল করলে সেটা শুধরে দেয়ার দায়িত্ব তো আমাদেরই তাইনা?’

মিশু চুপ করে রইলো। আসলে ও এখন যা করতে চেয়েছে সেটা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে সুযোগেরও। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর শ্বশুরবাড়ি যেতে চাইলে তখন শ্বাশুড়ি মা যদি এমন করে ভালো না বাসে? এখন ওদেরকে জেদ দেখিয়ে বিয়েটা ক্যানসেল করলে পরে আজীবন এই ভালোবাসা টুকুর জন্য পস্তাতে হবে। কি যে করা যায় এখন…

মিশু বললো, ‘আপনার ছেলের সাথে কথা বলেছিলেন?’
– ‘না। প্রয়োজন মনে করিনি। তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো। বিয়েটা ভাংতে চাইছো জেদের বশে। এটাকে আমরা সাপোর্ট করতে পারিনা। আজকে যদি বিয়েটা না মেনে নিতাম তাহলে কি দুজনেই কষ্ট পেতে না?’

মিশু কিছু বললো না। ওনার কথায় যুক্তি আছে। এভাবে গো ধরে থাকা যাবেনা। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘আমি বিয়ে না করে কোথায় যাবো? আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিলে সেটাকে বলে স্বাভাবিক আর আমি আজ আপনাকে ফিরিয়ে দিলে সবাই বলবে বেয়াদবি। আপনি মা হয়ে সন্তানকে অপমান করতে পারেন কিন্তু আপনাকে অপমান করার সাধ্য আমার নেই।’

মিশুর জবাবে বর্ষা আহমেদের রেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু উনি রাগের বদলে দারুণ খুশি হলেন। কারণ মিশুর উত্তরটা খুব চমৎকার ছিলো আর ওনার খুবই ভালো লেগেছে। মনেমনে বললেন, বাহ বাচ্চাটা তো দারুণ স্মার্ট!

তারপর হেসে বললেন, ‘আহা বাচ্চাটা কান ধরেছি তো। তবুও রাগ করে থাকবি?’
– ‘নাহ। রাগ শেষ। আপনি নিয়ে যেতে চাইলে আমি এখনই আপনার সাথে যাবো। কিন্তু একটা কথা বলবো? সময়ের প্রয়োজনে আপনি আমাকে এত আদর দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকদিন গেলে এই আমাকেই আপনার অসহ্য লাগবে না? এটাও তো স্বাভাবিক। ভালোবাসা সবসময় থাকেনা। আর একটা কথা প্রচলিত আছে, পর কখনো আপন হয়না।’

বর্ষা আহমেদ মিষ্টি করে হেসে বললেন, ‘সেদিনকার কথাগুলো খুব লেগেছিলো তাইনা? তাই আজকে খুব কড়া করে উত্তর দিচ্ছিস। পর কখনো আপন হয়না এটা যেমন সত্যি, তেমনি মায়ের মত শ্বাশুড়িকে হুট করে পরও বলা যায়না এটাও সত্যি। আমি তোকে কখনো পর মনে করিনি সেটা তুই জানিস। আমার জায়গায় তুই থাকলে সেদিন তুইও ওরকম বিহ্যাভ ই করতিস।’

মিশু একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললো, ‘আপনার জায়গা থেকে আপনি ঠিক, আমার জায়গা থেকে আমি ঠিক। আর এখন সবচেয়ে ঠিক কাজটা হচ্ছে ভালোমতো বিয়েটা করে নেয়া। কারণ আমার আব্বুও অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ের আয়োজন করেছে। আপনারাও করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমি থাকতে পারলেও মেঘমনি আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট পাবে অনেক। এখন বিয়েটা ক্যানসেল করলে ভবিষ্যতে আপনার বাসায় ওঠা টা অনেক সময়ের ব্যাপার। অতদিন মেঘমনির মত একটা মানুষকে কষ্ট দেয়ার সাহস আমার নেই।’

বর্ষা আহমেদ মুগ্ধ হচ্ছেন মিশুর জবাবে। উনি মুচকি হেসে বললেন, ‘মেঘমনি! বাহ সুন্দর একটা নাম দিয়েছিস আমার ছেলেটার।’
– ‘আমি যাবো মা। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পাইনি। আপনার কাছে কয়েকদিন পর অসহ্য হয়ে যাবো না তো?’
– ‘যদি অসহ্য হয়ে যাস, তাহলে মেঘকে নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠিস। আমার ছেলেকে পুরোপুরি আমার থেকে আলাদা করে দিস। এটাই হবে আমার শাস্তি।’

মিশু অবাক হয়ে বললো, ‘ মা! আপনি সত্যিই…’
– ‘ অনেক স্মার্ট তাই তো? হা হা হা। ওসব বাদ দে, এখন তুই আমার সাথে আমাদের বাসায় যাবি।’

মিশু বললো, ‘যাবো। আপনি রেস্ট করুন কিছুক্ষণ। আন্টি আপনাকে না খেয়ে যেতেই দিবেনা।’

৬৩
রাত সারে নয়টা।

মিশু মেঘালয়ের রুমে বসে আছে। বিকেলে এসেছে এ বাড়িতে। মেঘালয় তখন অফিসে ছিলো। অফিসের পর ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ঘুরতে গেছে। মেঘ জানে বিয়ে ক্যানসেল হয়ে গেছে। বাসায় মিশু এসেছে সেটা জানেই না বেচারা। আজ বাসায় আসলে দারুণ একটা চমক হবে ওর জন্য। এই সুযোগে মিশু শাড়ি পড়ে, শ্যাম্পু করা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে কপালে একটা কালো টিপ দিলো। এই একটা কালো টিপ ই যথেষ্ট মেঘালয়কে মাতাল করার জন্য। এতদিন পর মিশুকে দেখতে পেলে এমনিতেই কান্না করে দিবে মেঘালয়। তাও আবার নিজের বাসায়, নিজের রুমে, বিয়েটাও ফাইনালি হতে চলেছে! উফফ ছেলেটা যে কি পরিমাণ খুশি হবে ভেবেই ভালো লাগছে মিশুর।

দশটায় সবাই একসাথে ডিনার করে যে যার মত চলে গেলো। মিশুকে শাড়ি পড়তে দেখে শ্বাশুড়ি মা নিজে থেকেই বললেন, ‘এই যে রাজকুমারী, আমরা গিয়ে শুয়ে পড়লাম। মেঘালয় আসলে দরজা খুলে দিও আর খাবার দিও ওকে।’

মিশু মাথা নেড়ে বললো, ‘আচ্ছা।’

শ্বাশুড়ি মা মিশুকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘প্লানিংয়ের ব্যাপারে কি করছিস তোরা?’

মিশু অবাক হয়ে বললো, ‘কিসের?’
– ‘ফ্যামিলি প্লানিং।’

লজ্জায় নীল হয়ে উঠলো মিশু। মাথাটা নিচু করে থুতনিটা গলার সাথে লাগিয়ে ফেললো। বর্ষা আহমেদ বললেন, ‘ওরে বাবা কি লজ্জা! আমাকে শ্বাশুড়ি ভাবতে হবেনা। আমি একজন ডক্টর। খোলামেলা সবকিছু আমার সাথে আলাপ করতে পারিস। শোন, তোর বাবার সাথে ডেকোরেশন নিয়ে আলাপ আছে। এইগুলা নিয়ে কালকে কথা বলবো। তোকে এখন একটা ট্যাবলেট দিচ্ছি, এটা খেয়ে নিশ্চিত কর আমায়।’

মিশু লাজুক স্বরে বললো, ‘আমার লজ্জা লাগছে।’
– ‘ওরে আমার লজ্জাবতী রে। বয়স তো কেবল আঠারো না ঊনিশ। বাইশের আগে কনসিভ করতে দিবো না। তার উপর তোর যা শরীর। নিজেই এক বাচ্চা, বাচ্চা সামলাবি কি করে?’

মিশু নীল থেকে গাঢ় নীল হতে শুরু করেছে। মা বললেন, ‘শোন, এইগুলা মোটেও লজ্জা পাবার মত বিষয় নয়। তোর যা ওয়েট আর যে বাচ্চার মত শরীর। এখন মা হলে বাচ্চা হওয়ার সময় হয় তুই মরবি নাহয় বাচ্চা মরবে। আমাদের দেশের যা অবস্থা, থাক ওসব।’
– ‘আমি এগুলো বুঝিনা মা। আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনি। বিয়েটা তো এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে।’
– ‘সেজন্য তোমরা তো আর ভালোবাসা বাসি অফ রাখবা না। আমিও আমার ছেলেকে এত বাচ্চা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতাম না।’
– ‘আহা! আপনার মত শ্বাশুড়ি যদি প্রতি ঘরে ঘরে হতো।’
– ‘বলেছি তো, আমি এ যুগের শ্বাশুড়ি দের আদর্শ। হা হা হা’

মিশু রুমে এসে ফোন দিলো মেঘালয়ের নাম্বারে। মেঘালয় রিসিভ করে বললো, ‘সরি গো, সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিলে কিন্তু ব্যাক দিতে পারিনি। বহুদিন পর ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি। আমার বিয়েটা ওদের কাছে স্বপ্নের মত এখনো।’
– ‘বিয়ের গল্প শোনাচ্ছেন ওদেরকে?’
– ‘আমাদের ট্রেন থেকে নামা, ট্রাকে ওঠা, নদীতে ভাসা, লোকজন ধরে বেঁধে বিয়ে দেয়া.. হা হা হা। কি যে আজগুবি ব্যাপার। আমি কল্পনাও করিনি গ্রামের মানুষজন ওরকম।’
– ‘হয়েছে। রাত তো অনেক হলো, বাসায় ফিরবেন কখন?’
– ‘আজকে তো বাসায় ফিরবো না। ফ্রেন্ডরা একসাথে একটা পার্টি টার্টি দেই ভাবছি।’

নিমেষে মনটা খারাপ হয়ে গেলো মিশুর। বাসায় ফিরবে না আজকে! এত আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মেয়েটা। ও যে বাসায় এসেছে সেটা বলাও যাবেনা মেঘকে, বললে তো সারপ্রাইজ টাই থাকবে না। ধেৎ, ভালো লাগেনা।

মেঘালয় বললো, ‘ডিনার করেছো?’

মিশু নিশ্চুপ। মেঘালয় আবারও জিজ্ঞেস করলো। মিশু বললো, ‘আমি একটু পরে ফোন দিচ্ছি।’

ফোনটা কেটে চলে এলো মৌনির রুমে। মুখটা কাচুমাচু করে বললো, ‘মেঘমনি নাকি আজ বাসায় ফিরবে না আপু?’

মিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে মৌনি হাসলো। মেঘালয়কে ফোন দিয়ে বললো বাসায় দ্রুত চলে আসতে, খুবই দরকার। মেঘালয় তৎক্ষনাৎ বললো, ‘এক্ষুণি আসছি।’

নাচতে নাচতে রুমের দিকে ছুটে গেলো মিশু। অধীর আগ্রহে বসে রইলো মেঘালয়ের জন্য। কলিং বেল বাজতেই মৌনি এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো, ‘তোর রুমে যা, আমি আসছি। জরুরি কথা আছে।’

মেঘালয় কৌতুহলী হয়ে রুমে চলে এলো। রুমে ঢোকামাত্রই কেউ একজন পিছনে শার্ট খামচি দিয়ে ধরে দেয়ালের দিকে টেনে নিলো। পিছন ফিরতেই দুহাতে গলা পেঁচিয়ে ধরলো মেঘালয়ের। গলা ধরে হাতের মুঠোয় চুল খামচে ধরে ক্রমশ কাছে টেনে নিতে লাগলো। এত দ্রুত ঘটে গেলো যে খেই হারিয়ে ফেলেছে মেঘালয়। কিন্তু মিশুর মুখটা দেখামাত্রই আনন্দে হৃদপিন্ড লাফিয়ে ওঠার জোগাড়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিশুর দিকে তাকিয়েই মুখটা দুহাতে ধরলো মেঘ। তারপর জড়িয়ে ধরলো বুকে। এতদিন পর মিশুকে দেখে সত্যিই কান্না আসছে মেঘের। মিশু আবেশে চোখ বুজে জড়িয়ে ধরে রইলো। মাঝেমাঝে মনেহয়, এই বুকেই পৃথিবীর সমস্ত সুখ লুকিয়ে আছে।

পরের পর্ব আগামীকাল..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here