হৃদমোহিনী
পর্ব ৫০
মিশু মনি
.
মিশুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আগে নিজেকে সামলে নিলো তন্ময়। তারপর মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিলো।
মেঘালয় রিসিভ করেই উদ্বিগ্ন স্বরে বললো, ‘হ্যালো, হ্যালো..’
– ‘হ্যা ভাই বলো। এতবার ফোন করেছো যে? আমার ফোন ভাইব্রেট করা ছিলো, আমি আমার বোনের সাথে গল্প করছিলাম।’
– ‘মিশুর নাম্বার বন্ধ কেন? মিশু কোথায়?’
– ‘ও তো পাশের রুমে শুয়ে পড়েছে। ওর ফোনে মেয়বি চার্জ নেই। আমি আমার ফোনটা ওকে দিয়ে আসছি এক্ষুনি, টেনশন কোরো না।’
মেঘালয় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। এখনি কি যে টেনশন শুরু হয়ে গিয়েছিলো। মেয়েটাকে একা পাঠানোই উচিৎ হয়নি। তন্ময়কে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রাখলো মেঘালয়। সাথে সাথে মনেমনে প্রতিজ্ঞা করলো আর ভূলেও কোনোদিনও মিশুকে একা ছাড়বে না। পাগলীটাকে সবসময় সাথে সাথেই রাখবে। ফোন বন্ধ হওয়াতে নিশ্চয় এখন গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
এদিকে তন্ময় নিজের ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো। তারপর এক গ্লাস পানি এনে হালকা পানির ছিটা দিলো মিশু’র মুখে। চমকে উঠে চোখ মেললো মিশু। এখনো চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। তন্ময়কে দেখে চিৎকার না করে বরং ধীরেসুস্থে উঠে বসলো। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বললো, ‘কি চাচ্ছো তুমি এখন?’
– ‘তোমাকে।’
– ‘আমাকে না আমার শরীরটাকে?’
– ‘তোমাকে পুরোটাই চাই আমি।’
– ‘আমি পুরোটাই মেঘালয়ের হয়ে গেছি। আমার বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। তুমি আমাকে চাইলে বড়জোর রেপ করতে পারবে। এরবেশি কিছুই পাবে না। কিন্তু ভালোবাসাকে কখনো ধর্ষণ করা যায়না তন্ময়।’
মিশু উত্তেজিত হওয়ার বদৌলতে ঠাণ্ডা মেজাজে কথাগুলো বলে গেলো। এতক্ষণ সেন্সলেস হয়ে কি স্বপ্ন দেখলো নাকি মেয়েটা? বিন্দুমাত্র ভয়ের রেশ চেহারায় নেই। ভড়কে গিয়ে তন্ময় তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।
মিশু বললো, ‘আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। আবার হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। তোমার সাথে এই ব্যাপারগুলো খোলাখুলি ভাবে শেয়ার করা দরকার। এখন তুমি আসলে কি চাইছো?’
– ‘আমি তোমাকেই চাই মিশু। তোমার সাথে আজীবন থাকতে চাই, তোমার ভালোবাসা নিয়ে থাকতে চাই।’
– ‘ভালোবাসা এভাবে পাওয়া যায়? বরং আজকের পর থেকে তোমার প্রতি যে ভালোবাসাটুকু ছিলো সেটাও ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। যেদিন বটি নিয়ে তোমাকে মারতে গিয়েছিলাম, সেদিন কাজটা সম্পন্ন করাই বোধহয় ভালো ছিলো।’
মিশু’র কাছে এগিয়ে আসলো তন্ময়। কাছে এসে ওর মুখটা দুহাতে ধরার চেষ্টা করলো। মিশু বাঁধাও দিলো না, চিৎকারও করলো না। বরং এগিয়ে এসে বললো, ‘মুখ ধরতে চাচ্ছো? ধরো। তুমি আসলে কতটা নিম্নশ্রেণীর পশু আমিও আজকে সেটাই দেখবো।’
তন্ময় মিশু’র মুখটা ধরে বললো, ‘মিশু আমাকে ভূল বুঝো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। দেখো তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো। আমার টানে রংপুর থেকে ঢাকায় ছুটে গিয়েছিলে তুমি। আমরা কত স্বপ্ন দেখতাম তাইনা? মাঝখানে আমার লাইফে যা যা হয়েছে, এক্সিডেন্ট ভেবে ভূলে যাচ্ছি আমি। তুমিও বিয়েটাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভূলে যাও না। তুমি আমি, দুজন মিলে একটা সুন্দর জীবন সাজাই?’
মিশু হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘যখন তাড়িয়ে দিয়েছিলে তখন কেন বোঝোনি যে ভূল করছো? মেঘালয়ের সাথে আমার আকাশ পাতাল ব্যবধান। আমরা কেউই কাউকে চিনতাম না, তবুও বিয়েটা হয়েছে বলে সে আমাকে নিয়েই থাকতে চাইছে। আমি অনেকবার বলেছিলাম ডিভোর্স হোক আমাদের। কিন্তু মেঘ সেটা হতে দেয়নি। একটার পর একটা ঝামেলা সব একহাতে সামলেছে। ফেরেশতার মত মানুষ পেয়েছি একটা। তাকে ছাড়ার কথা চিন্তা করা যায়?’
তন্ময় মিশু’র মুখটা ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘ওর সাথে মাত্র কয়েকদিনের সম্পর্ক। সেখানে আমাদের অনেক দিনের রিলেশনশিপ। আমাকে ওর চেয়ে তুমি বেশি ভালোবাসতে। ওকে ছেড়ে আমার কাছে আসা যায় না?’
মিশু সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো। ও তন্ময়কে দীর্ঘদিন ধরে চেনে। আর যাই করুক, অন্তত জোর পূর্বক কিছু করবে না এটা নিশ্চিত। সেই ভরসাতেই ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলার চেষ্টা করলো। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো, ‘তুমি এতটা অকৃতজ্ঞ কিভাবে হতে পারলে তন্ময়? আজকে বিশ্বাস করে মেঘালয় আমাকে তোমার সাথে পাঠিয়েছে। সেই বিশ্বাসের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছো তুমি। এতটাও নিচু হতে পারে কেউ! এই তন্ময়কে আমি কখনোই ভালোবাসিনি। ভালোবাসাকে সম্মান করতে পারাটা যার ধাতে নেই।’
তন্ময় কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বললো, ‘আমি কিছু বুঝি না মিশু। আমি অনেক নিঃসঙ্গ। আমার পাশে তোমাকে দরকার।’
মিশু বললো, ‘সব দরকারকে পেতেই হবে এমন তো কথা নেই। আমি পুরোপুরি মেঘালয়ের। তবুও তোমার সৌভাগ্য যে এতকিছুর পরও সেই মেঘালয় ই দুজন নার্স রেখে তোমার সেবা করেছে। দুদিন পরপর নিজে ছুটে গেছে তোমাকে দেখতে। এত অসম্মান, এতকিছু মাথায় নিয়েও ছেলেটা বারবার ছুটে গেছে। তুমি নাকি ওর বন্ধু হয়ে গেছো? এই মানুষটাকে কিভাবে ঠকানো যায় তন্ময়?’
তন্ময় মিশুর কাছাকাছি এসে বললো, ‘আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মিশু। সবদিক থেকে এত প্রেশার আমি জাস্ট নিতে পারছি না আর। তোমাকে হারানোটা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। বাবা মাকে হারিয়েছি, সব হারিয়েছি। আমার জীবনের কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবুও যখন তোমাকে দেখি, মনেহয় এই মেয়েটা তো আমার হতে পারতো। তুমি আমার হলে আমার জীবনটা এরকম নাও হতে পারতো। তখনই মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। ন্যায় অন্যায় সবকিছু ভূলে কেবল তোমাকেই পেতে চাই। তোমাকে পাওয়ার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষটাও আমি হতে রাজি।’
– ‘বাহ! যখন আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে? আমি গাইয়া, আমি আনস্মার্ট, তোমার সাথে আমার যায় না। কত কি… রাস্তায় পড়ে পড়ে কেঁদেছি আমি।’
– ‘এখন তোমার পা ধরবো মিশু?’
– ‘তুমি আমার পা ধরার ও যোগ্যতা রাখো নি তন্ময়। এইযে তোমার সাথে ভালো করে কথা বলছি, এটা মেঘালয়ের আদর্শকে ধারণ করেছি বলে। নয়তো কোনোদিনো আমি পারতাম না তোমার সাথে কথা বলতে।’
– ‘মিশু, সব ই বুঝলাম কিন্তু মেঘালয়কে ছেড়ে কোনোভাবেই কি আমার কাছে আসা যায় না?’
মিশু দৃঢ় কণ্ঠে বললো, ‘না। আমি মেঘালয়কে ভালোবাসি। তুমি একটু আগে যেটা করেছো, সেটার জন্য আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না। অবশ্য জোর খাটিয়ে কি ই বা করতে পারতে। ধর্ষণ? করলে করতে। করে কি পেতে? আমার ঘৃণা ছাড়া কিছুই পেতে না। আমাকে খুন করে ফেললেও তোমার লাভ নেই। হয়তো সাময়িক আনন্দ পেতে কিন্তু একদিন তোমার মস্তিষ্ক ঠিকই তোমাকে শাস্তি দিতো। প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নিতে ছাড় দেয় না।’
– ‘মিশু, তুমি তো আমাকে চেনো। আমি কোনো বাজে ছেলে নই। আমি এসব রেপ টেপ কখনো করতাম না।’
– ‘আমি জানি তুমি বাজে ছেলে নও। কিন্তু তোমাদেরকে কখনো বিশ্বাস করা যায়না বুঝলে? কখন কোন পৈশাচিক রূপ বেরিয়ে আসে বোঝা মুশকিল।’
– ‘মিশু, আমি জানি বারবার খারাপ কিছু করেছি। কিন্তু সবটাই তোমাকে পাবার জন্য।’
– ‘এভাবে পাওয়া যায় না জানোনা সেটা? আমার জন্য তুমি মরে গেলেও আর তোমার কাছে ফেরার রাস্তা আমার জানা নেই। জানো না? নাকি পরকিয়া করার কথা ভাবছো?’
তন্ময় চমকে উঠে মিশু’র দিকে তাকালো। তারপর মাথা দুলিয়ে বললো, ‘তোমার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না। তবুও যদি কোনোভাবেই কিছু করার না থাকে, পরকিয়া করতেও আমি রাজি। তবুও তোমার ভালোবাসাটুকু আমার চাই ই।’
শব্দ করে হেসে উঠলো মিশু। হাসি থামতেই চাইলো না। অনেক্ষণ ধরে হাসার পর বললো, ‘তুমি পাগল হয়ে গেছো। মিশুর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তোমার ধারণা কম আছে। এত নিচু মন মানসিকতার মানুষটাকে আমি কিভাবে একদিন অতটা ভালোবাসতাম সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।’
তন্ময় সিরিয়াস চেহারা ধারণ করে বললো, ‘এই তন্ময় কখনো এমন ছিলো না। পরিস্থিতি আমাকে এমন বানিয়েছে।’
মিশু তন্ময়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘পরিস্থিতির সূচনা তুমিই করেছিলে। তুমি যদি সেদিন আমাকে অপমান করে ফিরিয়ে না দিতে, একটার পর একটা বিপদ কিছুই ঘটতো না। দেখো তন্ময়, আমি জানি তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে। তুমি গুণ্ডাদের মত আচরণ করলে তাহলে জগতে আর ভালো মানুষ কে থাকলো বলো? আমি আর মেঘালয় একজন আরেকজনের জন্যই সৃষ্টি। আমাদেরকে আলাদা করতে চেয়ো না প্লিজ। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো, এরপর থেকেই আমার লাইফে একটার পর একটা বিপদ ঘটে যাচ্ছে। সবকিছুর পরেও আমি সুখী কারণ মেঘালয় আর ওর পরিবারটাকে পেয়েছি। তোমার উপর রাগ বা ভালোবাসা কোনটাই আমার নেই। তোমাকে মনে করার সময় পাই না আমি।’
– ‘আমি এতটা খারাপ নই মিশু।’
মিশু বললো, ‘ তোমার সামান্য একটা ভূলের কারণে আমার জীবনে যে বিপর্যয় আসতে চেয়েছিলো, সেটা কেটে এসেছি। আমি তোমাকে ক্ষমাও করে দিয়েছিলাম। আজকে নতুন করে আর কোনো বিপদ ডেকে এনো না। অনেকেই বলেছে আমি অন্য একটা এলাকায় একটা ছেলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছি। এরপর আমাদের বিয়ে, তারপর চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও করে প্রমাণ করতে হলো আমরা নির্দোষ। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। আজকে যদি এখানে কোনো ঝামেলা হয়, দুদিন পর আমার বিয়ের প্রোগ্রামটা আর হবে না। একদিকে অপমান সহ্য করতে না পেরে আব্বু হার্ট এটাক করবে, অন্যদিকে আমার শ্বশুরবাড়ির রেপুটেশন নষ্ট হবে। আর মেঘালয়ের কি হবে কল্পনা করতে পারিনা আমি। এতকিছু নষ্ট করে দিয়ে কি তুমি ভালো থাকবে? আর আমিও যদি তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাই, আমরা কি ভালো থাকবো? ধ্বংস হয়ে যাবে তন্ময়।’
তন্ময় করুণ চোখে মিশু’র দিকে তাকালো। সেই চোখের ভাষা বুঝতে পারলো না মিশু। কিন্তু অপরাধবোধ প্রবল হয়ে উঠেছে। ছেলেটা অনুশোচনা করতে করতে দগ্ধ।
মিশু বললো, ‘আমি জানি তুমি খারাপ ছেলে নও। তুমি খারাপ হলে অন্তত আমি কখনো তোমাকে ভালোবাসতাম না।’
হঠাৎ মিশুর বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তন্ময়। খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে মিশু। আচমকা তন্ময়ের এমন আচরণে কি করবে বুঝতে পারলো না। তন্ময় কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘আমাকে কেন মরতে দিলে না তোমরা?’
মিশু ওর মাথায় হাত রেখে বললো, ‘মৃত্যুটা সবকিছুর সমাধান নয়। এখন ওঠো, আর আজকে কোনো ঝামেলা কোরো না। আমি কথা দিচ্ছি, তোমার আজকের এই আচরণের কথা কেউ কখনো জানতে পারবে না।’
মাথা তুলে মিশুর চিবুকে হাত রেখে তন্ময় বললো, ‘তুমি এত ভালো কেন মিশু? এত লক্ষী একটা মেয়েকে আমি কষ্ট দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি ভাবলে মরে যেতে ইচ্ছে করে।’
মিশু উত্তরে বললো, ‘সবকিছুকে পেয়ে পায়ে ঠেলে দিতে হয় না তন্ময়। গুরুত্বটা বুঝতে হয়। বাহ্যিক রূপ দেখে যদি সৌন্দর্য বিচার করো, তাহলে বলবো আমি সবসময়ই সুন্দর ছিলাম। আমাকে দেখার চোখ তোমার ছিলো না। আর যদি বাইরেটা দেখে স্মার্টনেস বিচার করো তাহলে বলবো, নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখাটাই সবচেয়ে বড় স্মার্টনেস। যেটা আমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’
মিশুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তন্ময়। আর কোনো কথা বললো না। চোখ মুছে বিছানার উপরে রাখা নিজের ফোনটা দেখিয়ে দিয়ে বললো, ‘মেঘালয়কে ফোন দাও।’
তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সবকিছুর জন্য আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি শোকরিয়া আদায় করলো মিশু। তন্ময় চলে গেছে, তারমানে আর কোনো বিপদ আসার সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তন্ময়ের মঙ্গল করুক।
কথাটা বলতে বলতে ফোন নিয়ে আগে কল দিলো মেঘালয়কে।
৭১
মিশু’র কণ্ঠ শুনে কলিজায় শান্তি ফিরে পেলো মেঘালয়। হাফ ছেড়ে বললো, ‘মরে যাচ্ছিলাম এখনি। তন্ময় ফোন ধরছিলো না, ওদিকে তোমার ফোনটাও বন্ধ।’
মিশু যথাসম্ভব গলার স্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো, ‘আমার ফোনটা বন্ধ, চার্জ শেষ। আর তন্ময় এসে দেখে আমি দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। আসলে খুব টায়ার্ড লাগছিলো তো। ও ডেকেছে, আমি শুনতে পাইনি।’
– ‘মিশু, জীবনে প্রথমবার আমাকে মিথ্যে বললে তাই না?’
মিশু তোতলাতে তোতলাতে বললো, ‘মিথ্যে মানে!’
– ‘দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমালে তোমার গলার স্বর শুনেই বুঝতাম। আর আমার সাথে কথা না বলে তুমি ঘুমাতেই পারো না। কি করলে বলো তো?’
মিশু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন তো?’
– ‘সেটা করি বলেই তন্ময়ের সাথে পাঠিয়েছি। কিন্তু তন্ময়কে তো তোমার মত বিশ্বাস করতে পারি না।’
– ‘আমি নিরাপদে আছি, ভালো আছি। আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।’
– ‘ঠিক আছে। বাদ দাও। আমি যদি আজকে সারারাত তোমার সাথে কথা বলতে চাই তাহলে কি তোমার সমস্যা হবে?’
মিশু খুশি হয়ে বললো, ‘এর মত আনন্দ আর হবেনা আমার জন্য।’
– ‘তাহলে সারারাত কথা বলবো। রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ?’
মিশু চমকে উঠে বললো, ‘দরজা খোলা।’
– ‘দরজাটাও লাগিয়ে দিয়ে আসো। তাহলে নির্ভয়ে কথা বলতে পারবা।’
মিশু অবাক হলেও কিছু বললো না। উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলো। মোমটা নিভে গেছে। বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিয়েই বললো, ‘মেঘমনি, আমাকে কখনো ভূল বুঝবেন না তো?’
– ‘না। কিন্তু আমার কাছে সৎ থেকো সবসময়।’
– ‘আমি সত্যিই আজকে মিথ্যে বলেছি।’
মেঘালয় বললো, ‘বুঝতে পেরেছি। তোমার কোনো সমস্যা না হলেই হলো। তবে আজকে আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এরপর কখনো তোমাকে একা একা শপিং করতেও পাঠাবো না। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে? প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমি তোমার সাথে থাকতে চাই মিশু।’
মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। ও নিজেও আর কখনো মেঘালয়কে ছাড়া এক পা ও তুলবে না।
চলবে..