#হৃদয়ের_রং_জানে_না <সপ্তম পর্ব>
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১৩>
সেইদিন ঠিক বিকেল পাঁচটায় অনন্ত রেডি হয়ে অপেক্ষা করছিলো ড্রইং রুমে | আজকে কফিশপে গিয়ে পরের সপ্তাহে নতুন নার্সিংহোমে জয়েন করার কথাটাও শেয়ার করবে রূপকথাকে | এসবই ভাবছিলো , তখনই রূপকথা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো| একটা লাল রঙের শাড়ি , চুলটা খোলা, কপালে একটা ছোট্ট টিপ্ | অনন্ত এতেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো ওর দিকে | রূপকথা খেয়াল করলো ব্যাপারটা | আজকাল মাঝে মাঝে এইভাবে তাকায় কেন অনন্ত ! প্রশ্নটা ওর মনে এসেই মিলিয়ে গেলো | ধুর , যতসব ভুলভাল ভাবছে | অনন্ত কখনো ওর দিকে আলাদা করে তাকাতেই পারে না | এটাই সত্যি | কথাটা যেন আবার জোর করে নিজের মনকে বোঝালো এখন | তারপর কিছু কথা সাজিয়ে অনন্তকে বলে উঠলো আলতো হেসে ,
” আজ একেবারে বিফোর টাইমে রেডি ! কি ব্যাপার ? এরকম তো হয় না কখনো|”
অনন্তও এবার এক সেকেন্ড সময় না নিয়ে উত্তর দিলো,
” তুই আজ নিজে থেকে আমার সাথে দরকারি কাজ ছাড়া এমনি কফি খেতে চেয়েছিস | এরকমও তো হয়নি এতদিনে ! তাই আজ বিফোর টাইমে|”
রূপকথা এসব শুনে এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারলো না | তাই কথা ঘোরানোর জন্য অনন্তকে এবার তাড়া দিয়ে বললো ,
” আচ্ছা , বুঝলাম | এবার চলো তাড়াতাড়ি | নইলে দেরি হয়ে যাবে|”
অনন্ত কথাটা শুনে একটু অবাক হলো! হঠাৎ এতো তাড়াহুড়োর কি আছে ! যাবে তো ওরা দুজনই| আসতে ধীরে গল্প করতে করতে গেলেই হয় ! যাই হোক, এইসব ভাবনার ভিড়ে অনন্ত আর কথা বাড়ালো না | রূপকথার সাথে পা মেলালো শুধু | আর মেন্ রোডে উঠেই একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেছে ওরা | একদম অপেক্ষা করতে হয়নি | অনন্তর তো ট্যাক্সিতে উঠে মনে হচ্ছে সব দিক থেকে যেন আজ ঈশ্বর সহায় ওর ওপরে | এগুলো সব ওপরওলারই সিগন্যাল |
যাই হোক, আধঘন্টার মধ্যে শহরের জ্যাম, ভিড় রাস্তা কাটিয়ে অনন্ত আর রূপকথা কফিশপে এসে পৌঁছলো অবশেষে | তবে
অনন্ত তো প্রথমে জায়গাটাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলো ! এটা তো সেই পুরোনো কফিশপটা! স্কুল লাইফে বাবার সাথে এখানে মাঝে মাঝেই আসতো | কত পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে জায়গাটা জুড়ে| এখানে বসে বাবার সেই পুরোনো হাসি মুখটা হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওর , আনমনে | এখন বুঝতে পারছে রূপকথা কাল ঠিক কি সারপ্রাইজের কথা বলছিলো| এই জায়গাটার ব্যাপারে শুধু মা আর রূপকথাই তো জানতো| তাই আজ ওকে বেছে বেছে এই কফিশপটায়ই নিয়ে এসেছে| এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই অনন্ত বলে উঠলো ,
” বুঝলাম এতক্ষনে | তোর সারপ্রাইজটা কি ! সত্যি অনেক বছর বাদে আজ এখানে এলাম| বাবা মারা যাওয়ার পর তো আর আসাই হয়নি |”
রূপকথা কথাটা শুনে আলতো হেসে বললো,
” জানি | তবে পুরোনো জায়গাগুলোতে মাঝে মাঝে আসা উচিত | তাহলে পুরোনো সময়টাকে খুব কাছ থেকে ফিল করা যায় | যাই হোক , এটা তো একটা সারপ্রাইজ | আর একটাও আছে | কিছুক্ষন পরই জানতে পারবে|”
অনন্ত এসব শুনে এখন একটু অবাক হয়ে গেলো ! নিজের মুখে বিস্ময়টা নিয়েই বললো ও ,
” বাবা ! আরো একটা সারপ্রাইজ ! বিশাল ব্যাপার তো ! যাই হোক, আমারও কিন্তু আছে কিছু বলার | প্রথমটা শুনে হয়তো তুই সত্যি সারপ্রাইজ হয়ে যাবি | আর সেকেন্ডটা তুই নিশ্চয়ই অনেকদিন ধরেই জানিস | ”
রূপকথা এবার একটু কৌতূহল নিয়েই বললো,
” আমার জন্যও সারপ্রাইজ ! কি শুনি একটু?”
” আমি নেক্সট উইক থেকে আবার প্র্যাকটিস শুরু করবো | বেশ কয়েকটা প্রাইভেট নার্সিংহোমে এপ্লাই করেছিলাম | একটা থেকে কাল রিপ্লাই এসেছে |”
হাসি মুখে কথাগুলো বলে গেলো অনন্ত, আর খেয়াল করলো রূপকথার মুখটা | হঠাৎ কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এখন | ও হাসি মুখে এবার বলে উঠলো ,
” সত্যি ! এই কথাটা তুমি এতক্ষন বাদে বললে আমায় ? সকালেই তো বলতে পারতে| তাহলে তোমায় সকালেই মিষ্টি খাওয়াতাম |”
অনন্ত এবার দু সেকেন্ড চুপ থেকে বললো ,
” মিষ্টির দরকার নেই| তার বদলে আমার একটা উত্তর চাই| আসলে তোকে কিছু কথা !”
না , আর কথাটা শেষ করতে পারলো না অনন্ত | কারণ এই কথার মাঝখানেই ওর কফিশপের দরজার দিকে চোখটা চলে গেলো , আর হঠাৎ এই মুহূর্তগুলো থমকে গেলো জীবনের | মিথিলা এখানে কি করছে! প্রশ্নটা মনে আসতেই রূপকথা বলে উঠলো,
” আর এটা ছিল আমার সেকেন্ড সারপ্রাইজ |”
কথাটা শুনে অনন্তর মাথায় যেন একটা বাজ পড়লো | চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে গেলো হঠাৎ ! এর মাঝেই মিথিলা ওদের টেবিলের সামনে এসে হাজির| অনন্তর কিছু বোঝার আগেই এই মুহূর্তে রূপকথা বলে উঠলো,
“প্লিজ রেগে যেও না অনন্ত | তোমাকে প্রথমে মিথিলার কথা বললে হয়তো তুমি এখানে আসতেই না! কিন্তু আজ তোমাদের দেখা হওয়াটা জরুরি ছিল | মিথিলা সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসে | আর ও ফিরে আসতে চায় |’
রূপকথার কথাগুলো শুনে অনন্তর এবার ঘোরটা কেটে গেছে প্রথমের| আর এখন ভেতরে একটা যন্ত্রনা , রাগ সবকিছু এসে জড়ো হয়েছে এক সঙ্গে| রূপকথা নিজে মিথিলাকে ফিরিয়ে আনলো ওর কাছে ! মানে ও অনন্তকে নিজের করে পেতেই চায় না! কথাগুলো মনে হতেই আর নিজেকে সামলাতে পারলো না | টেবিলটা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,
” তুই ভাবিস কি নিজেকে ! যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি ? আমার পারমিশন না নিয়ে আমার লাইফের সব ডিসিশন নিয়ে নিবি ! তুই বুঝিস না আমি কি চাই ?”
কথাগুলো শুনে এবার রূপকথায় উঠে দাঁড়ালো, তারপর একটু দৃঢ় গলায় বললো ,
” বুঝি আমি তুমি কি চাও | তাই মিথিলা যখন নিজে থেকে ফোন করে আমাকে বললো তোমার সাথে দেখা করতে চায় , তখন আমি না বলিনি | আমি জানি যেই রাগটা এখন তোমার ওর ওপর আছে সেটা বাইরের | ভেতরে ভেতরে তুমি মিথিলাকেই ভালোবাসো |”
অনন্ত এবার রাগে অভিমানে জ্বলে উঠলো ভেতর থেকে | তারপর কিছু না ভেবেই বলে ফেললো ,
” ভালোবাসা ! রিয়ালি ! তুই বুঝিস কিছু এই ফিলিংটার ব্যাপারে ? ভালবেসেছিস কখনো কাউকে যে বলছিস |”
কথাটা শুনে রূপকথার হঠাৎ ভেতর থেকে একটা ধাক্কা লাগলো এখন | এই প্রথম অনন্তর এই প্রশ্নে ও আজ চুপ থাকলো না | কঠিন গলায় উত্তর দিলো,
” বেসেছি ভালো একজনকে| খুব মন থেকে একতরফা | তাই জানি এই ফিলিংটা ঠিক কি | কিন্তু তোমার আর মিথিলার ব্যাপারটা তো আলাদা | তোমরা দুজনই দুজনকে ভালোবাসো | তাই এই খারাপ লাগা , কষ্টটা নিয়ে না হয় না ই বাঁচলে |”
কথাগুলো শোনার জন্য অনন্ত ঠিক এই মুহূর্তে একদম তৈরী ছিল না | ও থমকে গেলো হঠাৎ| ওর ভেতরের সমস্ত রাগ , কষ্টগুলো যেন এখন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে ! আর সেই এক হয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলো নিয়েই ও জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,
” তুই ভালোবাসিস ! কাকে? তার জন্যই কি এই দু বছর মাঝখানে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলি না? কলকাতা ছেড়ে দিলি?”
এতগুলো প্রশ্ন যে একসঙ্গে হঠাৎ করে বসবে অনন্ত , রূপকথা এটা ভাবেনি | আর এই সময় ও মিথিলার মুখটাও খেয়াল করলো , কেমন অন্ধকার ফ্যাকাসে হয়ে গেছে এখন | ও কি ভাবছে রূপকথা দু বছর আগের সব সত্যি অনন্তকে বলে দেবে ! এতো সহজে নিজের আড়ালটা শেষ করে দেবে !
কখনোই না | যে ওকে কখনো ভালোইবাসেনি , তার ওর ভালোবাসার ব্যাপারে জানার সত্যি কোনো দরকার নেই| এই ভেবেই রূপকথা কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে কিছু কথা সাজিয়ে বললো ,
” তুমি তাকে চিনবে না | আছে একজন| আর ঠিকই , তার থেকে দূরে যাওয়ার জন্যই আমি কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম | তবে মন থেকে কখনো দূরে যেতে পারিনি | যাই হোক, তোমার লাইফের ডিসিশন তুমিই নিও | আমি কোনো ইন্টারফেয়ার করবো না | তবে পারলে মিথিলাকে আর একটা সুযোগ দিও | আমি আসছি |”
কথাটা শেষ করেই রূপকথা আর পেছনে ফিরে তাকালো না| অনন্ত আর মিথিলাকে একা করে দিয়ে কফিশপের দরজার বাইরে বেড়িয়ে এলো , আবার একটা একলা শহরে| চোখগুলো জ্বালা করছে এখন ওর | না চাইলেও বুকের জমাট বাঁধা কান্নাটা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে এই মুহূর্তে | কিন্তু রূপকথা জোর করে নিজেকে আটকালো | হাতের মুঠোটা শক্ত করে জলটাকে থামানোর চেষ্টা করলো চোখের | রোজ রোজ তো কাঁদতে ইচ্ছে করে না| অনন্ত যার প্রথম থেকে ছিল , সব সময় তারই থাকবে| ওর মনের গোপন তো জানার দরকার নেই কারোর | এই লুকোচুরিটাই সত্যি রূপকথার জীবনে |
<১৪>
আজকে কলকাতার বুকে মেঘ করেছে | সারা আকাশ জুড়ে ছাই রং এর শেডিং | সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া চারিদিকটা এলোমেলো করে দিচ্ছে | আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই হয়তো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে শহরটাকে | কিন্তু তা ও অনন্ত গঙ্গার ধারের বেঞ্চটা ছেড়ে উঠছে না কিছুতেই | মনে হচ্ছে এইভাবেই সময়টা থমকে থাক এখানে | কারণ, আজ আর ওর সত্যি চলতে ইচ্ছা করছে না | বাড়ি ফিরে আর রূপকথার মুখোমুখি হতে ইচ্ছা করছে না | ওকে দেখে এই নকল বন্ধুত্বের অভিনয়টা করতে ইচ্ছে করছে না একদম | আর হয়তো পারবেও না এইসব ! নিজের ফিলিংসগুলোকে নিজের মনে রেখে দিতে | কিন্তু ওকে বলেই বা কি লাভ ! রূপকথার মনে তো অন্য একজন আছে | যাকে আবার অনন্ত চেনে না ! কথাটা ভেবেই ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর | রাগ কষ্ট অভিমান সব কিছু একসঙ্গে এসে বুকে জমাট বাঁধছে এই মুহূর্তে | সব থেকে বেশি রাগ হচ্ছে রূপকথার ওপর | ওর মনের ওপর |
ছোটবেলা থেকে স্কুলের প্রজেক্ট থেকে আরম্ভ করে পরীক্ষার আগে পেন কিনে দেয়া , সবেতে অনন্ত | কলেজের ফ্রম ফিল আপ থেকে মাস্টার্সে ভর্তির লাইন , সেখানেও শুধুই অনন্ত | নিজের ছোট বড়ো কথা শেয়ার থেকে অষ্টমীর সকালের অঞ্জলি , সেসবেও একমাত্র সঙ্গী অনন্ত ; আর ভালোবাসার বেলায় কোথাকার কে অন্য একজন ! বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না কিছুতেই | মনে হচ্ছে ওই না চেনা ছেলেটাকে যদি একবার সামনে পেতো ! হয়তো শেষ করে দিতো আজ |
এর মধ্যেই বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়তে শুরু করেছে শহরে | টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি কয়েক সেকেন্ডেই অঝোর ধারায় বদলে গেছে | আর সেই জল এসে পুরোপুরিই ভিজিয়ে দিয়েছে অনন্তকে | তবুও যেন ওর ভেতরের জ্বালাটা মিটছে না এখন | যতবার ভাবছে রূপকথা একটা অন্য ছেলের জন্য এতো ভাবে যে দু বছর ধরে নিজের শহর, অনন্ত , সবার সাথে যোগাযোগ শেষ করে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে থাকতে পারে , ততবার ভেতর থেকে শেষ লাগছে নিজেকে | মনে হচ্ছে সে কি এমন ছেলে ! যার জন্য রূপকথার গোটা পৃথিবীটাই বদলে গেলো ! যার জন্য এতো আড়াল চলে এলো ওর মধ্যে ! কি এমন আছে সেই ছেলের মধ্যে , যেটা অনন্তর মধ্যে নেই | আচ্ছা , দোষটা কি ওরই ছিল প্রথম থেকে ! রূপকথাকে ভালোবাসে এই কথাটা বুঝতে কি ওর অনেক দেরি হয়ে গেছে ! আর দু বছর আগে মিথিলাকে ওদের মধ্যে এনে অনন্তই কি বুঝিয়ে দেয়নি যে ওর আর রূপকথার মধ্যে যা আছে সেটা শুধুই বন্ধুত্ব | অনন্তর মনের স্পেশ্যাল জায়গাটা অন্য কারোর জন্যই দখল করা | তাই হয়তো রূপকথাও কখনো অনন্তকে নিয়ে আলাদা করে ভাবেনি | এসব ভাবনার ভিড়ে সবকিছু কেমন ওলোট পালট লাগছে ওর | এবার রূপকথার সঙ্গে নিজের ওপরও রাগ হচ্ছে খুব | কেন নিজের মন , নিজের ফিলিংসগুলোকে বুঝতে এতটা সময় নিলো অনন্ত ! কেন যখন রূপকথা ওর খুব কাছে ছিল , তখন ওকে আলাদা করে দেখলো না ! ওকে ভালোবাসলো না ! তাহলে হয়তো আজ দিনগুলো অনেক অন্য রকম হতো !ওকে এই গঙ্গার ধারের বেঞ্চটায় এই সময় একা বসে ভিজতে হতো না এইভাবে |
সেইদিন অনন্তর এইসব এলোমেলো ভাবনার আড়ালেই রাত হয়ে গিয়েছিলো অনেকটা | বাড়ি যখন ফিরেছিল ও তখন ঘড়িতে এগারোটা বেজে গেছে | তবে বাড়ি এসেও আর কারোর সাথে কোনো কথা বলেনি | চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলো সেইদিন | আসলে সত্যি আজ আর জোর করেও কোনো কথা আসবে না ওর | চুপচাপ নিজের মধ্যে একা একা শেষ হয়ে যাওয়ার দিন আজ | একতরফা ভালোবাসা তো অনন্তও বেসেছিলো | কিন্তু রূপকথা বুঝলো না |
অনন্ত সেই রাতটা জেগেই কাটিয়েছিলো এরপর | ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখেছিলো অনেকক্ষণ | মনে হচ্ছিলো এতো কালো মেঘ ও বোধ হয় একসাথে কখনো আগে দেখেনি ! এতো বৃষ্টি ও কখনো এর আগে খেয়ালই করেনি | মেঘের ডাক , ঝোড়ো হাওয়া , বিদ্যুৎ এর ঝলকানি সবটাই আজ কেমন নতুন | আসলে এই বৃষ্টিটা কি শুধু বাইরের , না কি ওর মনেরও ! এই প্রশ্নটাকে ও সঙ্গে নিয়েই খুব ভোরে চোখটা লেগে গেছিলো অনন্তর| ঘুম আর স্বপ্নের মাঝে একটা মুখ ভেসে উঠেছিল তারপর |দুটো বড়ো বড়ো অভিমানী চোখ , কপালের মাঝে ছোট্ট সেই টিপ্ , আর মিষ্টি একটা হাসি , রূপকথা | আলো আঁধারি একটা পথ ধরে ওর দিকেই যেন এগিয়ে আসছে আস্তে আস্তে | কিন্তু তারপর হঠাৎ চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে গেলো | আর রূপকথা সেই কালো অন্ধকারের ভিড়ে কোথায় একটা হারিয়ে গেলো যেন | অনন্ত সেই অন্ধকারটার মধ্যে হাতড়াতে থাকলো , রূপকথা বলে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলো | কিন্তু কোনো সাড়া পেলো না | বদলে শুধু খুঁজে পেলো নিঃস্তব্ধ একটা অন্ধকার| আঁতকে উঠলো অনন্ত | ঘুমও মাঝে মাঝে মানুষকে শান্তির বদলে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দিয়ে দেয় | এটা যে কোনো হারানোর স্বপ্ন দেখেছে , সে ই একমাত্র জানে |
কথাটা ভাবতে ভাবতেই পাশে রাখা ঘড়ির দিকে চোখ চলে গেলো ওর | সকাল দশটা বাজে | এতক্ষন ধরে ঘুমোচ্ছিলো আজ ! কথাটা মনে আসতেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ এলো কানে | মা ডাকছে | না , আর দেরি না করে অনন্ত সটান উঠে দরজাটা খুললো | মা কফির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে , আর এক হাতে একটা ভাঁজ করা ছোট কাগজ | অনন্ত ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না | তবে ওর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মা বলে উঠলো,
” প্লিজ রেগে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় কথাটা শুনিস | রূপকথা আজ ভোরবেলায়ই বেড়িয়ে গেছে | ওর বোলপুর যাওয়াটা খুব আর্জেন্ট ছিল | তুই ঘুমোচ্ছিলিস বলে তোকে আর ডাকেনি | তবে তোর জন্য এই চিঠিটা রেখে গেছে | পড়ে দেখিস|”
কথাটা শেষ করেই অনন্তর হাতে ওর মা চিঠিটা ধরিয়ে দিলো | তবে ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কোনো কিছু খাওয়ার মুডে আর অনন্ত নেই | তাই কফির কাপটা ওর মার্ হাতেই রয়ে গেলো এই মুহূর্তে | আর এর মাঝেই অনন্ত থমথমে মুখে নিজের ঘরে চলে এলো আবার |
খুব রাগ হচ্ছে এখন | রূপকথা ঠিক অনন্তকে কতটা টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছে ! যে যাওয়ার আগে একবারও নিজের মুখে বলার প্রয়োজন মনে করলো না | শুধু একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো | কথাগুলো ভেবে রাগে মুখটা লাল হয়ে গেলেও চিঠিটা না খুলে থাকতেও পারলো না | কি লিখেছে রূপকথা ? প্রশ্নটা মনে আপনাআপনি এসে ভিড় করছে | যাই হোক , উত্তরটা খোঁজার জন্য অনন্ত চিঠির পাতায় চোখ রাখলো , আর রূপকথা কিছু শব্দ হয়ে বলে উঠলো ,
” চিঠিটা খোলার আগে নিশ্চয়ই তোমার খুব রাগ হচ্ছিলো অনন্ত আমার ওপর | তবে আমি জানি তুমি এটা না পড়েও থাকতে পারবে না | আসলে প্রিন্সিপাল ম্যামের ফোন এসেছিলো দুদিন আগে | উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন বলে পাঁচ মাসের লিভটা নিতে পেরেছি | তবে এর বেশিদিন আর ওরা পার্ট টাইমার দিয়ে কাজ চালাতে পারবে না | তাই এরপর যদি না জয়েন করি তাহলে চাকরিটা হয়তো আর থাকবে না | আর তোমাকে এইসব কিছু বলিনি কারণ আমি জানি তুমি এইসব আগে থেকে জানলে কিছুতেই আমায় শান্তিনিকেতন ফিরতে দিতে না | জোর করে হলেও কলকাতায় রেখে দিতে | আর আমিও হয়তো তোমার মুখের ওপর না বলতে পারতাম না ! যাই হোক , তবে এবার একেবারে নিরুদ্দেশ হওয়ার জন্য যাচ্ছি না | কাকিমার কাছে আমার স্কুলের এড্রেসটা দিয়ে গেলাম | রাগ পরলে ওটা নিয়ে নিও | আর ফোন তো আছেই | আর যদি সময় হয় কখনো তো দেখা করতেও চলে আসতে পারো শান্তিনিকেতন | আর সব শেষে একটাই কথা , আমার নিজের গল্পটা তো ইনকমপ্লিট রয়ে গেলো | কিন্তু তুমি পারলে তোমার গল্পটা কমপ্লিট কোরো | ভালো থেকো মিথিলার সঙ্গে | ”
না, এরপর আর কিছু লেখেনি রূপকথা | শব্দগুলো এখানেই শেষ | কিন্তু অনন্ত তা ও চিঠিটা হাতে ধরে বসে আছে এখন | চিঠির লেখা শেষ লাইনগুলো বার বার মনে এসে ধাক্কা মারছে, আর একটাই কথা মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে , রূপকথার মতন ওর নিজের গল্পটাও তো ইনকমপ্লিট থেকে গেলো ! আর যার জন্য এই ইনকমপ্লিটনেস , সে ই বুঝলো না |
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে কাল। এইরকম নানান স্বাদের ভালোবাসার গল্প পড়তে চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন আমার সম্পূর্ন নতুন দুটি উপন্যাস ‘ শহরের উষ্ণতম দিনে ‘ এবং অগোছালো মন। দুটো বই এর পিডিএফ সংগ্রহ করলে মূল্য ১০০ টাকা। আর যে কোনো একটি বই এর পিডিএফ সংগ্রহ করলে মূল্য ৫০ টাকা মাত্র। পেমেন্ট ডিটেলস জানার জন্য এবং বইয়ের পিডিএফ সংগ্রহ করার জন্য মেসেজ করতে পারেন আমার হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার 089103 33272 তে। পেমেন্ট করে একটা স্ক্রিন শট পাঠিয়ে দিলে বইয়ের পিডিএফ পাঠিয়ে দেয়া হবে হোয়াটস অ্যাপে।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/p/wvmwpTFdBoC6FGhd/?mibextid=oFDknk
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/p/SjT8MMXEbZ24aQJR/?mibextid=oFDknk
তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/p/oE2Cis46UTH1Ubph/?mibextid=oFDknk
চতুর্থ পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/p/ErAQacw4pJZXPqra/?mibextid=oFDknk
পঞ্চম পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/TNDe9t5rH4S76547/?mibextid=oFDknk
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/p/nZywJG7nEDgdkhZT/?mibextid=oFDknk