#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১৪
আজ সালমা বানু একা বাড়িতে, তাঁর স্বামী জসীম মিঁয়া ঢাকা গিয়েছে ছেলের বাসায় ডক্টর দেখাতে। সালমা বানুর ফ্ল্যাটটা একতলা, দুই ইউনিটের বাসা। পেয়ারা গাছের এই পাশে সালমা বানুরা থাকে, আর অপর পাশে উনার ভাড়াটিয়া।ভাড়াটিয়া ঈদের ছুটিতে দেশের বাড়ি গিয়েছে।পুরো বাড়িতে উনি এখন একা।
একেতো বয়ষ্ক মহিলা তার মধ্যে একা বাসায়, সেই অনুযায়ীই উনি ঘুমিয়ে গেছে সকাল সকাল।রাত দুটো বাজে মানে সালমা বানু এখন গভীর নিদ্রায় ডুবে আছে।এখন যদি উনার উপর এক গ্লাস পানিও ঢেলে দেয়া হয় উনি ভাববেন স্বপ্ন দেখছেন,স্বপ্নে সে গোসল করছে।
ঘরটা প্রচন্ড অন্ধকার।বাইরে মেঘ করেছে প্রচুর, আকাশে মেঘ ডাকছে প্রচন্ডরকম ভাবে, মাঝে মাঝে বাজ পড়ার আওয়াজে সালমা বানু ঘুমের মধ্যে ছিটকে উঠছে, তবে ঘুম ভাঙছে না তাঁর।
হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড জোরে বাজ পড়লো যার কারণে সালমা বানু ছিটকে তো গেলোই সাথে ঘুমটা ভেঙে গেলো, চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো প্রতি মিনিটে বাজ পড়া মিস নেই। সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে উঠে ইলেক্ট্রিক লাইন সব গুলো অফ করতে লাগলো, টিভি ফ্রিজ সব ধরনের বৈদ্যুতিক লাইন অফ করে রুমে এলো।রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই এক দফা ছিটকে গেলো, রুমের ভেতর একটা মাঝারি সাইজের লাল রঙের আলো পুরো ঘরে ছুটে বেরাচ্ছে আর লাল আলো টার পেছনে একটা সবুজ আলো ছুটছে।সালমা বানু সারা গায়ে কাঁপুনি উঠে গেলো,প্রচন্ড ভয়ে আছে বলে চোখটাও বন্ধ করতে পারছে না।বড় বড় করে তাকিয়ে আলো দুটোর চলন দেখছে। এবার সাহস করে আলো দুটোর দিকে তাকিয়ে বললো,
-ক্কে ক্কে কেহ!
আলোটা ঘুরেই যাচ্ছে।
-ক্কি ক্কি চাই?
একে একে সালমা বানু প্রশ্ন ছুঁড়েই যাচ্ছে
হঠাৎ আলো দুটো থেমে গেলো সামনে লাল আলো পেছনে সবুজ আলো সালমা বানুও থ হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে , ওমনি পেছনের সবুজ আলোটা কারেন্টের গতীতে ছুটে লাল আলোটাকে স্পর্শ করলো, আর সাথে সাথে পুরো ঘর নীল রঙের আলো দিয়ে ছেয়ে গেলো।এটা দেখার পর সালমা বানুর প্রবল বেগে ছুটা হৃদস্পন্দ থেমে গেলো একেতে ঠান্ডা পরিবেশ ঘরে ফ্যান চলছে তবুও সে ঘেমে একাকার । অত:পর একটা বিকট আওয়াজ আসতে লাগলো, কেমন যেনো সে আওয়াজ! হাসি নাকি কান্নার তা বুঝা মুশকিল। সালমা বানু কান চেপে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে কর্কশকন্ঠে বললো,
-ক্কে কে এসেছো আমার ঘরে? ফাইজলামি করছিস?সাহস থাকে তো সামনে আয়।বিটলামীর ঝাল বের করে দিবো। ঠ্যাং ভেঙে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো।
কথা শেষ হতে না হতেই হাড় চিবানোর মতো আওয়াজ আসতে থাকলো,সালমা বানু ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে দেখে সামনে একটা রক্ত মাংশ বিহীন মানুষের শরীরের খাঁজ মানে কংকাল।নীল আলোতে কংকালটাকেও নীল দেখা যাচ্ছে,তারপর সেই প্রবল আওয়াজ আরো তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগলো।একেতে বাইরে বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া, মেঘের ঘন ঘন গর্জন,দমকা বাতাসের বেগ আর তার মধ্যে ঘরের ভেতর এরকম পরিস্থিতি ! ভয়ে কাবু হয়ে সালমাবানু কি করবে বুঝতে পারছে না, ভয়ে শুধু একটা কথায় মুখ দিয়ে বের হচ্ছে।
-মা মা ওমা গো বাঁচাও মা।ভূ ভূ ভূত! বাবাগো বাঁচাও
যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে নড়াচড়া করতেও পারছে না ।এতো ভয়ানক পরিস্থিতিতে তার ঠ্যাং ভাঙার কথা মাথায় এলেও সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণে আসছে না। সর্বশেষ মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে সালমা বানু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
বেচারী সালমা বানুকে হেস্ত নেস্ত করে করে ফুলের ভেতরে মায়া হচ্ছে খুব।ইশারায় সবাইকে আজকের মতো বিটলামী পর্ব অফ করতে বললো।
সালমা বানুকে ভয় দেখাতে এসে নিজেরাই ভয়ে পাচ্ছে এখন। তবে এই ভয়টা ভূতের ভয় না, বৃষ্টির ভয়। কারণ কেউই ছাতা নিয়ে আসে নি,মেঘ যে হারে ডাকাডাকি শুরু করেছে তাতে কয়েক ন্যানোসেকেন্ডেই বৃষ্টি নেমে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
রাস্তায় আসতে না আসতে ভয়ের কাছে কুপোকাত হতে হলো সবাইকে। বৃষ্টি ধৈর্য্য ধরে আর কিছুক্ষণ মেঘেদের সাথে ঝগড়া চালাতে পারছিলো না বলে অভিমান করে শুন্যতে ভেসে মাটির উপর বর্ষণ হতে লাগলো।এতো রাতে বৃষ্টিতে ভেজা টা খুবই অপ্রিতিকর হলেও অনিচ্ছাকৃতভাবে এটাকে মেনে নিতে হলো। তাই বিরক্ত না হয়ে এটাকে মজার ছলে গ্রহণ করলেই হবে বেস্ট আইডিয়া।
মানুষের ডোপামিন হরমোন টা খুব খারাপ একে নিঃসরণ করে মস্তিষ্ক তো প্রশান্তি পায়,কিন্তু এদিকে হৃদপিন্ড পড়ে মহা মুশকিলে ধুক ধুক ধুক ধুক ধুক ধুক ! এই প্রহরের শেষের অংশে বৃষ্টিতে মেতে উঠার জন্য হয়তো এরকমটা হচ্ছে না।হচ্ছে অন্য একটা কারণে সেটা হলো, প্রিয় মানুষটা তাঁর পাশে একই ছন্দে ভিজে যাচ্ছে। আর ডোপামিন নিঃসরিত হয়ে ইলেক্ট্রোলাইট গুলো ব্রেইনের লং মেমোরি সার্কিটে প্রদান করে যাচ্ছে। অনুভুতিতে উর্বরতা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটা মুহুর্ত ।
আড়চোখে অভ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে ফুলও মাঝে মাঝে অভ্রর দিকে তাকাচ্ছে।
আকাশের তারা গুলো নিভে আছে, চাঁদটা ৮৫% সম্পূর্ণ আছে বাকি পনেরো গ্রহের আড়ালে বিলিন হয়ে গেছে।
যদিও বৃষ্টিতে কোনো তীর্যক আলোর প্রখরতা কাজ করে না।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হাল্কা হাল্কা আবছা দেখা যাচ্ছে একে অপরকে।
ঝুম বৃষ্টি নামলেও ল্যাম্পপোস্টের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কারণে অন্ধকার ছেয়ে নিতে পারে নি ওদের
অভ্র, ফুল, অয়ন সামনের দিকে ছিলো
আকাশ, কাব্য, অনু একদম পেছনে ছিলো আর বাকিরা মাঝ বরাবর ।
ফুলের সাথে হেঁটে যাওয়ার মানে হলো ফুলের দিকে বিশেষ নজর রাখা।চোখে চোখে রাখতে রাখতেই যেই কল্পনা সেই বাস্তবায়ন ফুল রাস্তার পিচের উপর হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হতেই অভ্র ফুলের দুই কাঁধেচাপা দিয়ে ধরে।
-ব্যাথা পেলে?
-আরে না জুতা হোচট খেয়েছিলো আমি না,জুতাটাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি ব্যালেন্স সামলাতে পারছিলাম না।
-ওকে তুমি আমাকে ধরে হাঁটো, যাতে নেক্সট টাইম তোমার জুতা পিচ্ছিল খেলে বা হোচট খেলে তুমি সফল ভাবে জুতাটাকে বাঁচাতে পারো।
ফুল নিজেও জানে, ভেজা রাস্তা ওর জন্য কতটা ভয়ানক। তাই কথা না বাড়িয়ে অভ্রর হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।
ফুল হাতটা ধরার পর শরীরে কারেন্টের মতো শক খেলো। ফুলের হাতটা ঠান্ডা হয়ে আছে। অভ্রর মনে হচ্ছে ওর হাতের সাথে বরফ লেগে আছে কিন্তু বরফটা তুলোর মতো নরম, যার জন্য সহজেই অভ্রর হাতটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিয়েছে।
বাড়িতে সবাই চোরের মতো করে ফিরে চেঞ্জ করে কাথা মুড়ি দিয়ে লম্বা ঘুম দিলো।এখন ঘুমটা বেস্ট হবে। রাতের ঘটনা গুলোর অনুভুতি দিনের বেলা আড্ডার আসর জমিয়ে প্রকাশ করা যাবে।
একটা রূপকথার রাজ্য, ঠিক যেরকম গল্পে থাকে, ফুলে, ফলে, সবুজে, পাখির কিচিরমিচিরে ভরা একটা রাজ্য সেখানে একটা তাজমহলের মতো রাজ প্রাসাদ।
সেই রাজপ্রাসাদের বাগানে ফুল কুড়াছে এক রাজকন্যা হঠাৎ করে তাঁর সামনে এক জোড়া পা,দেখে মনে হচ্ছে কোনো পুরুষের পা,তবে তার কাছে চেনা কারোর মনে হচ্ছে না বরং অচেনা,কারণ রাজকন্যার সামনে এভাবে কেউ দাঁড়াতে সাহস পাবে না শুধু তার বাপ ভাইয়েরা ছাড়া আর তার বাপ ভাইয়ের কারো পা এরকম নয়। রাজকন্যাটা মাথা তুলে সেই পায়ের মালিকটাকে দেখার জন্য মাথা তোলে তাকাতে যাবে ঠিক তখনি বিনা মেঘে প্রবল বেগে বৃষ্টি নামলো কিন্তু বৃষ্টির পানি গুলো রাজকন্যার পায়ে এসে পতিত হচ্ছে সাড়া গায়ে কোথাও বৃষ্টির পানি লাগছে না শুধু পায়ের পাতায় লাগছে । আর অই পায়ের মালিকটার চেহারাটা অস্পষ্ট দেখাচ্ছে সবটা খুবই রহস্যময় লাগছে। ব্যাপারটা বুঝে উঠার আগেই ঘুম ভেঙে গেলো ফুলের।
চোখ মেলে দেখে ফুলের পা সোজা জানালার গ্লাস্টা খোলা বাইরের পূর্ব পশ্চিম বেগে বৃষ্টি পড়ছে, প্রচন্ড বাতাসের কারণে পায়ের উপর জানালা ভেদ করে বৃষ্টির সেচা আসছে।
অলসতা নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে গ্লাসটা আটকে দিলো।কাথা মুড়ি দিয়ে বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতে লাগলো আবার।মনে মনে বিরক্ত লাগলো জানালাটার উপর এই বৃষ্টির পানির জন্যই ঘুম টা ভেঙে গেলো,স্বপ্নটা ভেঙে গেলো,আর সামনে দাঁড়ানো ছেলেটাকে আর দেখা হলো না।
সব কটা বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো। আস্তে আস্তে এগারোটা থেকে একজন একজন করে ঘুম থেকে উঠতে লাগলো।রাতে এতো কিছু ঘটিয়েছে,মনে হচ্ছে স্বপ্ন ছিলো সবটা। অভ্রদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কাছে বেশি রোমাঞ্চকর লাগছে কারণ ওরা এর আগে এরকম অকাজ কুকাজ কোনো দিনও করে নি।এইবার ফুলের পাল্লাই পড়ে প্রথম করলো।তবে সবাই ই বেশ মজা পেয়েছে।
-আচ্ছা সালমা বানুর খোঁজ খবর নেয়া লাগছিলো না? রাতে ডোজটা বেশি হয়ে গেছে বেচারীর ।সেন্স ফিরেছে কিনা জানা দরকার ছিলো,
সালমা বানুর প্রতি একটু দয়া হলো বলে অনু ফুলকে কথাটা বললো,
-আরে অনু চিন্তা করো না সালমা বানু দিব্যি ভালো আছে সকালেই তাঁর স্বামী ফিরে এসেছে। যদি তাঁর কিছু একটা হতোই তাহলে তো কান্নাকাটি হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে যেতো।
-তোমাকে কে বললো?
-সকাল বেলা বর্ষা ওদিকে রাউন্ড দিয়ে এসেছে , আর উঁকি মেরে দেখেছেও সব ঠিক আছে কিনা,তবে কাল রাতের ভয়ে সালমা বানুর হয়তো জ্বর এসেছে।
-মহিলাটা আচ্ছা রকম শিক্ষা পেয়েছে। যদি কোনো ভয়েস দেয়া যেতো আরো ভালো হতো,মোটা একটা কণ্ঠস্বর বলতো “তুই এলাকার ছোটো ছোটো বাচ্চা গুলোকে কেনো পছন্দ করিস না,তাদের কেনো বকাঝকা করিস।পেয়ারা গাছে কেনো উঠতে দিস না “নেক্সট টাইম যদি ওদের গালী দিস, পেয়ারা খেতে না দিস তোর ঘাড় মটকাবো হু হা হা হা। “তারপর সালমাবানু কান্না করতে করতে বলতো “ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন আমায়,আর এমন করবো না কোনো দিন,যত পেয়ারা আছে গাছে এলাকার সব বাচ্চাকাচ্চাদের দিয়ে দেবো।কোনো বাচ্চাকে বকাঝকা করবো না, “যা দেখার মতো সিন হতো না!
ফুল অনুর কথা শুনে হেসে দিয়ে বললো,
-আরে পাগলী,ওরকমটা করলে সালমা বানুর আর বুঝতে বাকি থাকতো না ওটা যে আমাদের কারসাজী, আমাদের বলতে বিশেষ করে উনার মাথায় সবার আগে আমার নামটাই আসতো,তুমি তো জানো না অই মহিলা কত্তটা চালাক।আমি তো চিন্তাই আছি কালকের অই সামান্য ডোজেই সালমা বানু ধরে ফেললো নাকি ওটা একটা কৃত্তিম ভূত ছিলো। আমি তো অই মহিলার উপর সামান্য প্রতিশোধ নিলাম,নেক্সট টাইম অন্য কোনো টোটকা দিয়ে জব্দ করা যাবে।
-আচ্ছা নেক্সট আমরা কিভাবে জব্দ করবো?
-সেটা সময় হলে দেখা যাবে,আপাততো আমার মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই।সালমা বানু সুস্থ হোক তখন নতুন করে ভাবা যাবে।
-ঠিক আছে দেখা যাবে। তবে যাই বলো রাতের ঘটনাটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে এরকম একটা কুকাজের অভিজ্ঞতা হলো, প্রচন্ড রোমাঞ্চকর ছিলো,আমি খুব বেশি এনজয় করেছি।
-আমার সাথে যারা থাকে তাদের জীবনটাই এরকম হয়ে যায়।তুমি তো কেবল অভিজ্ঞতা নিচ্ছো,দু চার মাস থাকলে দেখবে পুরো আমার মতো হয়ে গেছো।ঠিক যেরকম মিনা, বর্ষা,বাদল,বকুল হয়েছে।
অনু বুকে হাত দিয়ে বললো,
-আই উইশ!
ফুল অনু কাথা মুড়ি দিয়ে গল্প করছে,বেলা হলেও বাইরে বৃষ্টি থামেনি এখনো, বর্ষার বৃষ্টি বলে কথা!
অভ্র ঘুম থেকে উঠেছে সবার পরে। ঘুম এখনো চোখ থেকে সরে নি, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে,গা ঢোলাতে ঢোলাতে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। রুমে আসতেই একটু অবাক হলো অভ্র কারণ সমুদ্র, আবীর, অয়ন,আকাশ কাব্য পাঁচজনে আকাশের রুমে বসে আছে, কিন্তু সবাই অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো অভ্র কোনো খুনের আসামী, কেউ ওর থেকে এক পলক নজরও সরাচ্ছে না,যেনো এতোক্ষণ ভরে ওর অপেক্ষাই ছিলো সবার এখন ধরে নিয়ে জেলে দেবে।
-আমার চেহারায় কি চিড়িয়াখানার ফিল পাওয়া যাচ্ছে?
অয়ন ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-এই কথা বললি কেনো?
-তোরা যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে আমি বাথরুম না চিড়িয়াখানার কোনো খাঁচা থেকে বের হলাম, আর তোরা রোমাঞ্চিত হয়ে সেই দৃশ্য দেখছিস।
আকাশ সামান্য গলা কাঁশি দিয়ে খানিকটা গম্ভীর স্বরে বললো,
-কথা সেটা না কথা হলো গিয়ে,তোর ফোনে ওয়াল পেপার কার রে?
-আমার মোবাইল কোথায়?
আকাশ মোবাইলটা অভ্রর দিকে দিলো,অভ্র ফোন হাতে নিয়ে পকেটে রেখে বললো,
-না দেখে তো আর জিজ্ঞেস করিস নি,তাই আর বললাম না!ছবিটা খুব ভালো লাগছিলো তাই ওয়াল পেপার দিয়েছি।
-তাই বলে তুই পুতুলের ছবি ওয়াল পেপার দিবি?গ্যালারীতে হাজারটা ছবি থাকলেও সমস্যা নেই,এটা কি ধরণের মশকরা?ডাইরেক্ট ওয়াল পেপার!
অভ্র আকাশের কথা বুঝতে পারছে না , আকাশ কি সবটা জানে নাকি জানে না। কাব্যর দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই কাব্য চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝালো। অভ্র হেসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আকাশকে বললো,
-বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে কাভি নেহি সামাজপাতা!
-এই দ্যাখ কথা প্যাঁচাবি না বললাম।
-তোরা চাইলে শুধু ফোনে কেনো, আমার জীবনেও ওয়াল পেপার দিতে প্রস্তুত!চাস কি?
আকাশ হেসে দিয়ে অভ্রর কাছে এসে ওর পেটে একটা ঘুষি মেরে বললো,
-শালা আমাদের চোখের সামনে থেকে তুই আমাদের বোনের পেছনে লাইন মারছিস ।নাকি আমাদের বোনও লাইন মারছে?
-তোদের বোন লাইন মারবে তো দূরে থাক, আমি যে ওর পেছন লেগেছি ও সেটাও জানে না।
-আমার তোর উপর সন্দেহ হচ্ছিলো প্রথম দিন থেকেই,আজকে কাব্য বললো বলে ব্যাপারটা নিশ্চিত হলাম।তাই তো বলি সব সময় তুই দল ছেড়ে পুতুলের ধারে কাছে কেনো থাকিস!
অভ্র মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে আকাশের মুখের রিয়্যাকশন দেখে।
-তুই কি আসলেই আমাদের বোনকে ভালোবাসিস, মানে প্রেম করতে চাচ্ছিস?
-ভালোবাসি ঠিকি, কিন্তু প্রেম করতে চাচ্ছি না।
-মানে?
-দেখা গেলো প্রেম শুরু করলাম শুরুর দিকে খুব কেয়ারিং হলাম,লুতুপুতু প্রেম চালাতে লাগলাম।আস্তে আস্তে দুজনের অই লুতুপুতু মোহটা কেটে যেতে লাগবে।ভালোবাসাটা ঠিকি থাকবে তবে আমার ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে যখন আগের মতো কেয়ারিং থাকতে পারবো না ওর,সব বিষয়ে নজর দিতে পারবো না ,তখন দেখা যাবে আমার প্রতি ওর সন্দেহ আসবে, মাথায় নানান চিন্তা ঘুরবে,হারিয়ে যাওয়ার আতংক বিরাজ করবে, ভুল বুঝাবুঝি,রাগারাগি, কথা কাটাকাটি , ব্রেকাপ, ছাড়াছাড়ি ! ওপস এসব ভাবতেই মাথা চাপড়ে যায় । ফুল বাচ্চা বাচ্চা মেন্টালিটি নিয়ে চলে তাই ওর ম্যাচিউর হতে টাইম লাগবে। প্রেম ট্রেম ফুলের জন্য না।
কিন্তু যদি বিয়ের মতো কোনো ব্যাপার হয়,তাহলে এসবের কোনো প্যারা নেই,যতই ব্যস্ত থাকি না কেনো দিন শেষে ওর একটা শান্ত্বনা থাকবে আমি শুধু ওর।
-কিন্তু আমরা ভাইরা রাজি হলেও বাড়ির মুরব্বীরা পুতুলকে এখনি বিয়ে দিতে রাজি হবে না ওকে ছাড়া আমরা ভাইয়েরা দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।আর ওর বয়সটাও কম।অপেক্ষা করতে হবে তোর।
-ভাইরে বোন তোমাদের কাছেই রাইখো, শুধু বিয়েটা আমার সাথে দিও।আমার সাথে থাকতে হবে না। ওই যে বললাম না দিন শেষে একটা শান্ত্বনা ভালোবাসার মানুষটা শুধু তাঁর,আমার জন্য অতটুকুই যথেষ্ট।অপেক্ষা করতে হয় করবো, কিন্তু ও যে শুধু আমার ই হবে তাঁর গ্যারান্টিও তোমাদের ফ্যামিলির আমাদের ফ্যামিলির দিতে হবে।
-দেখা যাক কি হয়,তুই তোর ফ্যামিলি দেখ আমি এদিকটা দেখছি।
সবাই ফুলের ব্যাপারে বলাবলি করছে,এমন সময় আকাশের রুমের দরজার সামনে একটা শব্দ হলো,সবাই ওদিকে তাকাতেই দেখে ফুলের ফুপি মা চোখ মুখ শক্ত করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে বিরাট কোনো ঝড় বাঁধবে বাঁধবে আবহাওয়া। রক্ত চক্ষু নিয়ে রুমে ঢুকতে লাগলো,একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার অভ্রর দিকে।
উনার হয়তো রাগ হচ্ছে আকাশের সামনে ফুলের ব্যাপারে এসব কথা হচ্ছে আকাশ শাসন না করে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।
চলবে…………
(আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক পাঠিকা ভাই বোন আপনাদের জন্য গ্রুপে গেমের আয়োজন করা হয়েছে আশা করি সকলেই অংশগ্রহণ করবেন ধন্যবাদ।)
নিচে গেমের লিংক দেয়া হলো,
https://m.facebook.com/groups/399234587718623?view=permalink&id=435033620805386
“গ্রুপের লিংকও দেয়া হলো”
https://www.facebook.com/groups/399234587718623/?ref=share