#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১৫
সবাই আতংক নিয়ে তাকিয়ে আছে ফুপিমার দিকে। মেঘ গম্ভীর হয়ে রুমে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ায়। উনি সবাইকে খেতে ডাকতে এসেছিলো,দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে এরকম মুখ হয়ে গেছেন।সব সময় হাসি খুশি থাকা মানুষ গুলোকে এরকম চোখ মুখ গম্ভীর করলে খুবই বিব্রত লাগে।
ফুপিমা এসে অভ্রর সামনে দাঁড়ালো, এমন ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে যেনো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অভ্রর গালে কষিয়ে এক খানা চড় মারবে।অভ্র খানিকটা ভয় পেয়ে ঢোক গিললো।
ভয়ে ভয়ে ভয়ে চোখের পলক ফেলতে যাবে ওমনি ফুপিমা অভ্রর গালে হাত রেখে হেসে দিয়ে বললো,
-পরীকে রূপকথার গল্প শুনিয়ে বলতাম তোর জীবনেও একটা গল্পের মতো রাজপুত্র আসবে।যেদিন প্রথম এসেছো সেদিন ই তোমাকে দেখে মনে হচ্ছিলো এরকম রাজপুত্রের মতো ছেলে যদি আমার পরীমার ভাগ্যে জুটতো,আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ হতাম।
আল্লাহর কি অশেষ কৃপা সে আমার দোয়া কত্ত তাড়াতাড়ি কবুল করে নিয়েছে।
আকাশ অবাক হয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে বললো,
-মানে ফুপি এ প্রস্তাবে খুশি খুশি রাজি?
-একশোবার রাজি, হাজার বার রাজি।আর অভ্র বাবা তুমি কোনো চিন্তা করো না, আমি বাড়ির সবাইকে রাজি করাবো।
অভ্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
-থ্যাংকস আন্টি। একটা কথা বলি আগেই কাউকে কিছু জানাবেন না আন্টি।আমার ফ্যামিলিতে আমি জানিয়েছি,তাঁরা রাজি কিনা আমি জানি না। আমাদের বাড়ির কি মতামত সেটা আপনাকে জানাবো সময় মতো।আর নিয়মতো ছেলের বাবা মা মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব দেবে,আমি বললেই তো হবে না। যা হবে নিয়ম মতো।আর আমি এটাও জানি না ফুল আমাকে পছন্দ করে কিনা। ওর ও তো একটা মতামত আছে।
ফুপি অভ্রর কথা শুনে ইম্প্রেস হয়ে হয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
-এতো বড় ঘরের ছেলে তোমরা, প্রত্যেকের কি সুন্দর শিষ্টাচার, যে কেউ দেখে মুগ্ধ হবে।আল্লাহ তোমাদের অনেক বড় করুক সহায় থাকুক সর্বদা। যাই হোক অনেক বেলা করেছো সবাই নিচে আসো খাবার খাবে, ঠান্ডা হয়ে যাবে কিন্তু।
আকাশ কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-ফুপি কি রান্না হয়েছে আজ?
-খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা,বেগুন ভাজা আর গরুর মাংসের কালাভুনা।
-বা বা বাহ!তোমাদের মেয়েদের চয়েস আছে বড়।এই বৃষ্টিতে এগুলোই খেতে ইচ্ছে করছিলো।
-নিচে আসো সবাই,আমি খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি।
-আসছি আমরা তুমি যাও।
ফুপি মা নিচে চলে গেলো,ওরা সবাই রুমেই রইলো।
সব কটা মিলে এখন অভ্রকে খেপাতে লাগলো,বিশেষ করে সমুদ্র আবীর অয়ন, ওরা তো রীতিমত শকঠ ঠিক যেরকম কাব্য প্রথম প্রথম খেয়েছিলো।আকাশ আর ফুপিমা জেনে ভালোই হয়েছে।প্রয়োজনে সাহায্য পাবে এদের থেকে।
বৃষ্টির ধারাটা এখন কম কম লাগছে, ফুল আর অনু ছাতা নিয়ে আকাশদের ফ্ল্যাটে
এলো।এসে দেখে সবাই আকাশদের ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে, আকাশের মা আর ফুপিমা সবাইকে সার্ভ করে খাওয়াচ্ছে।ফুল অনু তো সেই কখন খেয়ে নিয়েছে,এরা তো দেরি করে ঘুম থেকে উঠে লাঞ্চ ব্রেকফাস্ট একসাথে করছে।
আকাশ আর আশিক বাদে বাড়ির সব ছেলেরা যার যার কর্মক্ষেত্রে, আশিক আছে তাঁর বউ নিয়ে আকাশ আছে ওর বন্ধুদের নিয়ে।
ফুল আর অনু ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো, ফুলের শব্দ পেয়ে কাব্য ডাইনিং রুম থেকে ডাক দিলো।ফুল উঠে ওদিকে গেলো,
-বলো কি বলবে?
– মুখ শুকনো লাগছে কেনো?খাও নি এখনো?
ফুল মুচকি হেসে বললো,
-এই খাবার গুলো যখন রান্না করে চুলা থেকে নামানো হয়েছে তখনি খেয়ে নিয়েছি আমরা।তোমাদের আগে খেয়েছি।
আবীর ঘাড় বাঁকিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমাদের রেখে একা একা খেতে পারলে তোমরা?
-সারাজীবন তো আপনাদের ছাড়াই খেয়ে এলাম!
-দু এক দিন তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে পারো।
-আপনাদের সাথে খেলেও খাবার পেটে যাবে, আপনাদের ছাড়া খেলেও খাবার পেটে যাবে।
-মাফ করো ভাই তোমার সাথে পারতাম না।
অভ্র ফুলকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।এখানে ওর সাথে দুষ্টুমি করাটা ঠিক হবে না, কারণ আকাশের মা আছে এখানে।অভ্রর পাশে আকাশ বসা ছিলো।খাবার খাওয়ার সময় অভ্রর প্লেটে একটা কলিজার পিছ দেখা গেলো,অভ্র শুনেছিলো এটা ফুলের খুব পছন্দের,তাই আকাশের পায়ে পা দিতেই আকাশ অভ্রর দিকে তাকালো,অভ্র ইশারায় কলিজার পিছটা ফুলকে খাওয়াতে বললো,আকাশ সাথে সাথে পিছটা উঠিয়ে নিয়ে ফুলকে বললো,
-পরী প্লেটে একটা কলিজার পিছ পাইছি,তোর ভাগ্য কত ভালো নে খা।
বলতে বলতেই ফুল আকাশের কাছে এসে দাঁড়ালো আর আকাশ সেটা খাইয়ে দিলো ফুলকে। বেচারী জানেও না কার রিজিক থেকে ওর রিজিকে এলো ।
সন্ধ্যার দিকে নিয়ানাকে নিয়ে নিয়ানার কেয়ার টেকার ওদের বাড়িতে এসে পড়ে। নিশাত চেম্বারে, জিয়াদ অফিসে, ওদের ফিরতে লেট হবে বলে ওদের দুজনকে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিয়েছে নিয়ানার নানাবাড়ি থেকে।
বাড়িতে ফিরতেই নিয়ানা নিয়ানার মতো খেলাধুলোতে মেতে উঠলো, অভ্রর মাও এখনো ফিরে নি,হসপিটালেই আছেন
উনার ফিরতে ফিরতে ৯ টা বাজবে।অভ্রর বাবা জায়েদ খান সে জিয়াদের সাথে ফিরতে পারে আবার একা একাও ফিরতে পারে।
৯টার দিকে অভ্রর মা বাড়ি ফিরলো।নিয়ানাকে দেখে তো প্রচন্ড খুশি, সারাদিন বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে যখন নাতনির মুখটা দেখে সারাদিনের ক্লান্তিটা চলে যায়।নিয়ানা না থাকলে বাড়িটা খালি খালি লাগে।
বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নুসরাত জাহান নাতনি নিয়ে বসেছে,নানা বাড়ি গিয়ে কি কি করেছে সব বলছে।নিয়ানার কথা গুলোও শুনতে বেশ ভালো লাগে, তোতা পাখির মতো করে কথা বলে।দেখতেও যেরকম মিষ্টি কথা গুলোও তেমন মিষ্টি,নিয়ানার সাথে খেলার থেকে ওর কথা শুনতে পছন্দ করে সবাই।
সাড়ে দশটার দিকে জিয়াদ আর নিশাত একসাথে বাড়ি ফিরলো,জিয়াদ অফিস থেকে বেরিয়ে নিশাতকে পিক করতে গিয়েছিলো যার কারণে একসাথে আসা।
জায়েদ খান এখনো আসেনি। ছেলেদের থেকে জায়েদ খান হাজার গুণ কর্মঠ।
কাজের প্রতি খুব বেশি রেসপন্সেবল।শান্ত স্বভাবের আবার বেশ রাগী মস্তিষ্কের। তবে উনি পরিবেশ ও অবস্থা বুঝে তাঁর রাগ প্রকাশ করেন।সব সময় সব ব্যাপারে রাগ দেখান না, যতটা রাগী ততোটা রাগ কন্ট্রোল করার শক্তিও আছে।
বাড়ির লোকদের সাথে কখনো রাগারাগি করেন না তিনি,কারণ রাগারাগি করার প্রয়োজন পড়ে না, এখানে সবাই সবার মতো স্বাধীন ভাবে চলে,যা উনার মন মতোই হয় থাকে। ব্যক্তি স্বাধীনতা আত্মার প্রশান্তির জন্য খুবই জরুরী মনে করেন তিনি।তাই সে এবাড়িতে কোনো কঠোর রোলস ঝুলিয়ে দেন নি।উনি উনার মতো থাকে বাকিরা বাকিদের মতো।কোনো কাজ ভালো না লাগলে চুপচাপ থেকে যায়,অই বিষয়ে কথা বাড়ায় না কোনো।
উনার স্বভাব গুলো উনার ছেলেদের মধ্যে বেশ বিরাজ করেছে,বিশেষ করে জিয়াদ, ৯৫% ই বাবার মতো স্বভাব।অভ্রও বাবার স্বভাব ধরে রেখেছে তবে জিয়াদের মতো এতো না ৭০% বাবার স্বভাবের সাথে মিলে, আর বাকি ২০% মায়ের মতো হাসি খুশি মিশুক স্বভাবের।কিন্তু অনু প্রায় পুরোটাই মায়ের মতো যেকোনো পরিবেশে পরিস্থিতি কয়েক সেকেন্ডে মিলিয়ে যেতে পারে, রাগ আছে তবে দুই ভাইয়ের মতো এতো না।
রাতে ১১ টার পর জায়েদ খান বাড়ি ফিরে এলো। ফ্রেশ হয়ে উনি এক কাপ চা খাবেন, তারপর ডিনার করবেন আবার ঘুমানোর আগে এক কাপ কফি খাবেন।
ডাইনিং টেবিলে বসে নিশাত আর জিয়াদ মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে,অভ্রর ব্যাপার টা এখন বলবে নাকি সকালে, বুঝতে পারছে না।জায়েদ খানের মন মেজাজ বুঝা বড় মুশকিল উনার মাথা ঠান্ডা আছে নাকি গরম সেটা কখনোই বোঝা যায় না।সব সময় একটা রিয়্যাকশনেই থাকেন।তবে যখন হাসাহাসি করেন তখন বুঝা যায় উনি অনেক খুশি,তখন বুঝা বড় দ্বায় হয় উনার রাগ বলতেও একটা বস্তু আছে!
নিশাত গলায় হাল্কা কাশি দিয়ে জিয়াদকে ইশারা করলো কথাটা ওকে উঠাতে,জিয়াদ চোখ দিয়ে ইশারায় বুঝালো “বলছি ওয়েট করো”
কিন্তু জিয়াদ বলছে না কিছু।নিশাত বললেই বলতে পারে, এবাড়িতে ওকে মেয়ের মতো প্রাধান্য দেয়া হয়।জায়েদ খানও প্রচন্ড ভালোবাসেন নিশাতকে।জিয়াদ আর নিশাতের দিকে নজর পড়লো নুসরাত বেগমের,
-নিশাত, বাবা তুমি কি কিছু বলতে চাচ্ছো?
-হ্যাঁ মা মানে না, হ্যাঁ।
জিয়াদ নিশাতকে বললো,
-আরে কি বলবে বলো না, কি হ্যাঁ না করছো!
জিয়াদের পাল্টি মারা দেখে নিশাত হতভম্ব হয়ে গেলো,জিয়াদের দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে,নজর ফিরিয়ে বললো,
-না মা কিছুনা এমনিই!
-কিছু বলার থাকলে বলতে পারো,দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাচ্ছো।
-না মা তেমন কিছু না ইট’স ওকে।
জায়েদ খান এতোক্ষণে খাবার থেকে চোখ সরিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বলতে লাগলো,
-আমার মনে হচ্ছে নিশাত মা কিছু বলতে চাচ্ছো।তোমরা কি কোথাও ঘুরতে যেতে চাচ্ছো?লম্বা সময়ের জন্য?গেলে যেতে পারো সমস্যা নেই।এখানে পারমিশন নেয়ার কিছু নেই।তোমাদের তো আগেও বলেছি এসব ব্যাপারে পারমিশন নেয়ার কিছু নেই, শুধু যাবে এটা জানালেই হবে।জীবনের অর্ধেকের বেশি সময়টা তো কর্ম জীবনে দিয়ে দিলে,তোমাদের জন্য আমার দাদুভাইটাও সারাদিন একা একা। আমিই তোমাদের বলতে চাচ্ছিলাম কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে কোথাও ঘুরে আসো।মাইন্ড রিফ্রেশমেন্ট এর একটা ব্যাপার আছে।অভ্র অনুকে দেখো ওরা পড়াশুনাও করছে আবার ঘুরা ফেরাও করছে মন মতো।আত্মাকে যেভাবে শান্তি দেয়ার সেভাবেই দিয়ে যাচ্ছে। জিয়াদের বেলায় আমরা দুজন জিয়াদকে সময় দিতে পারিনি বলে জিয়াদের সময়টা একা একাই কেটেছে, কিন্তু অভ্র অনুর সেরকম দিন দেখতে হয় নি।জিয়াদ স্টুডেন্ট লাইফে দুই ভাই বোনকে প্রচুর সময় দিয়েছে তাই ওদের একাকীত্বটা বেশি ফেস করতে হয়নি।জিয়াদ কর্ম জীবনে আসতে আসতে অভ্র একা একা চলতে শিখে গেছে আর অনুকে সময় দিয়ে যাচ্ছে।আমি চাই না জিয়াদের মতো একাকীত্বে নিয়ানা দাদুভাইয়েরও সময় কাটুক।
নিশাত একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পরে গেলো,কি বলতে চাইছিলো আর শ্বশুর মশাই কি শুনালো।নিশাত কিছু না বলে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।কিন্তু নুসরাত বেগম বুঝতে পারছে নিশাত অন্য কিছু বলতে চাচ্ছিলো।এখন প্রশ্ন করে বিভ্রান্তিতে না ফেলাই বেটার।
ডিনার শেষে জিজ্ঞেস করা যাবে ভেবে নিলো।
ডিনার শেষ হতেই জায়েদ খান নিজের রুমে চলে গেলো,ত্রিশ মিনিট পর উনি কফি খেয়ে ঘুমিয়ে যাবেন।
রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই নিশাত জিয়াদকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো।জিয়াদ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-আরে আরে এভাবে ফেলে দিলে কেনো আমায়? ভাগ্যিস ব্যাথা পাই নি।
নিশাত জিয়াদের পাশে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-চুপ মেয়ে উঠে যাবে। কোনো কথা বলবে না।গলা টিপে মারবো।
আমি যা যা প্রশ্ন করবো সোজা উত্তর দেবে।
-ওকে।
-ডাইনিং টেবিলে বাবা মার সামনে ওরকম পাল্টি মারলে কেনো?কি কথা ছিলো?বাড়ি ফেরার পথে তোমায় আমি কি শেখালাম?
-ওপস সরি নিশাত, আমার মনে হয় না বাবা এই ব্যাপারে রাজি হবে।তাই বলতে খুব ভয় লাগছিলো।
– ও মাই গড আব্রাহাম খান জিয়াদ ভয় পায়! তাও আবার তার নিজের বাবাকে সেটাও আমার বিশ্বাস করতে হবে! এটা কি মনে হচ্ছে না ন্যাকামি টাইপ?
জিয়াদ ধমকের স্বরে বললো,
-ধুর কথা বুঝো না কেনো।
-এই তুমি আমায় ধমক দিলে কেনো?বাঘ তুমি পুরো দুনিয়ার সামনে হতে পারো,আর সামনে বেড়াল!
-জ্বি ম্যাডাম আমি জানি, আমি আপনার সামনে বিড়ালের তুল্য।দুনিয়াতে বউয়ের থেকে ডেঞ্জারাস আর কি থাকতে পারে!তাই আমি চাই না আমার ছোটো ভাইটার জীবন এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাক।
-মেয়েদের জন্মই তোমাদের ছেলেদের চালচুলো ছাড়া জীবনকে গোছানোর জন্য আর তোমরা ছেলেরা প্রশংসা তো করবেই না উল্টো দুর্নাম করো।
-আচ্ছা আমরা একটা সিম্পল বিষয় নিয়ে ঝগড়া করছি কেনো?
-ঝগড়ার উৎপত্তি তো তুমিই করেছো।
-আমি আবার কি করলাম?
-এতো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা শিখিয়ে বাড়িতে আনলাম আর তুমি বাবার সামনে বসে গিরগিটির মতো রঙ বদলে সবটা আমার উপর চাপিয়ে দিলে।
-আচ্ছা সরি, সকাল বেলা বলে দেখবো যাও।
-সকাল মানে আরো একদিন নষ্ট,অভ্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ দিতে বলেছে।ও বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তেমন কিছু না। মেবি অন্য কোনো কারণ আছে,অভ্র বলেছে ব্যাপার টা পরে বলবে আগে এই কাজ করতে হবে।
-অভ্র সব শুধু তোমাকেই বলে।আমাকে বলে না কেনো?
-অভ্র তোমাকে আর বাবাকে একই গ্রহের প্রাণী মনে করে তাই বলে না।
-ভাগ্যিস তুমি ছিলে নিশাত না হলে অভ্রর কি হতো!
-আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো।
-সবাই কি তোমার মতো চিন্তা করতো?তুমি আমার ভাই বোনকে যেভাবে নিজের ভাই বোনের মতো ট্রিট করো সেভাবে আর কেউ পারবে না গো।আমি ভাই হয়েই পারি না।
-জানি না অভ্র অনুর কতটা কাছের হতে পেরেছি।তবে অভ্র অনু আমাকে যেভাবে প্রায়োরিটি দেয় আমিও সেভাবেই দেয়ার চেষ্টা করি।তুমি জানো অনু ওর ফ্রেন্ডসদের সামনে আমায় নিয়ে কি বলে! আমি নাকি অনুর বেস্ট ফ্রেন্ড আর অভ্র তো কথায় নেই! জীবনে এর থেকে আর কি বড় প্রাপ্তি হতে পারে?
কথা বলার সময় ওদের রুমে নক পড়লো,নিশাত উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নুসরাত বেগম।
-মা কিছু বলবেন?
-বলতে আসি নি শুনতে এসেছি।তুমি যে কিছু একটা বলার চেষ্টায় আছো কিন্তু বলতে পারছি না।
নিশাত লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
-বাইরে কেনো মা ভেতরে এসে বসুন বলছি।
নুসরাত বেগম ভেতরে ঢুকলেন। নিশাত মনে জোর নিয়ে শ্বাশুরীকে সবটা খুলে বললো অভ্রর ব্যাপারে, তারপর ফুলের ছবিও দেখালো। সবটা শুনে নুসরাত বেগম নারাজ হলেন না, উল্টো আরো খুশিই হলেন।ফুলের ছবি দেখে খুব মনে ধরেছে। সবটা জেনে শুনে উনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন এই ব্যাপারে তাঁর মত আছে। এখন জায়েদ খানকে জানানোর পালা।আল্লাহ মালুম তিনি ব্যাপারটা কিভাবে নেবেন।
নুসরাত বেগম নিশাতকে নিয়ে রুমে থেকে বের হলো।নিশাত এক কাপ কফি বানালো, জায়েদ খান নিশাতের হাতের কফি খুব বেশি পছন্দ করেন।নিশাত প্রায় ই চা কফি করে শ্বশুরকে খাওয়ায়।জায়েদ খান ছেলের বউয়ের হাতের কফি খেয়ে একটা কমপ্লিমেন্টই দেয়,”মেজাজ যতোই খারাপ থাকুক নিশাত মায়ের হাতের কফি খেলে মস্তিষ্কটা একদম শিরাই শিরাই ঠান্ডা হয়ে যায়, নিশাত মা তুমি তোমার রোগীদের ওষুধ না দিয়ে তাদের এক কাপ করে কফি বানিয়ে খাওয়াবে দেখবে তাদের ব্রেইন ঠিকঠাক চলাচল করছে ।” প্রায় ই নিশাত কফি করে খাওয়ায় বলে এতে জায়েদ খান খুব খুশি হয়।
রুমের সামনে গিয়ে নিশাত নক করলো,
-বাবা আসবো?
-নিশাত মা আসো মা।
নিশাত আর নুসরাত বেগম রুমে ঢুকলো।
নিশাত কফিমগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
-বাবা আপনার কফি।
কফিটা হাতে নিয়ে বললো,
-থ্যাংক ইউ মা।এতো রাতে কফি করে আনলে! দরকারি কিছু বলবে?
নিশাত শ্বাশুরীর দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো, তারপর নুসরাত বেগম আগে কথা শুরু করলো,জায়েদ খান কফি খেতে খেতে সবটা শুনলো, আজকে মনে হয় নিশাতের কফি খেয়ে মস্তিষ্ক ঠান্ডা হচ্ছে না, উল্টো ব্ল্যাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে।
শ্বাশুরীর সাথে তাল মিলিয়ে নিশাতও বুঝাতে লাগলো। নিশাত ফুলের ছবি দেখাতে চায় কিন্তু জায়েদ খান ছবি দেখতে নারাজ হন। নিশাত খানিকটা আশংকা করতে পারলো শ্বশুরের সিদ্ধান্তের । সব শেষে তিনি গম্ভীর স্বরে চোখ মুখ শক্ত করে শুধু এইটুকু বললো,
-এই ব্যাপারে আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।আমি অভ্রর সাথে কথা বলবো।
-কখন কথা বলবেন বাবা?
-সেটা সময় সুযোগ করে কল দেবো।
-ঠিক আছে বাবা।
-হুম
-আসি তাহলে।গুড নাইট।
নিশাত রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। শ্বশুরের ভাব ভঙ্গী দেখে কোনো আশা পাচ্ছে না। নিজের রুমে এসে সাথে সাথে অভ্রকে কল দিলো।,
-আসসালামু আলাইকুম বউমণি
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।অভ্র শুনো, তুমি দয়া করে তোমার ফোনের সাইলেন্ট বা ভাইব্রেট যেটাই করে রাখো না কেনো কিছু সময়ের জন্য নরমাল করে রাখো।
-কেনো?
-বাবা তোমাকে কল দেবে যেকোনো সময়।
-ঠিক আছে কিন্তু তোমায় এমন চিন্তিতো লাগছে কেনো?
-চিন্তিতো লাগবে না আবার।শুনো তাহলে,
বাবার রুমের ঘটনা সব খুলে বললো।এটা শুনে অভ্রর ও টেনশন হতে লাগলো।
নিশাতের কথা শুনে অভ্র মুখ শুকনো করে বসে রইলো।একটু আগেও অভ্র হাসাহাসি করছিলো এখন এরকম মুখ শুকনো দেখে
আকাশ কাব্য অভ্রকে প্রশ্ন করলো,
-কিরে কি হলো তোর?মুখ শুকনো কেনো?
অভ্র নির্লিপ্ত ভঙিতে বললো,
-তরী সব সময় তীরে এসেই ডুবে যায় তাই নারে?
-কি হয়েছে সেটা বল, পরে ধাঁধার উত্তর দিচ্ছি।
-বউমণির কথার ভাবে যা বুঝলাম। বাবার মত নেই।মাও নাকি শুনে খুব খুশি, ভাইয়াও রাজি মাও রাজি,বউমণি তো সবার আগে রাজি কিন্তু বাবা রাজি না।এখন বাবা হয়তো কল দিয়ে বলবে ঢাকায় ফিরে আসো।ওখানে আর এক মুহুর্তও থাকার দরকার নেই।
কাব্য হতাশা কন্ঠে বললো,
-আমিও ফুপার ব্যাপার টাই নিয়ে চিন্তিতো ছিলাম।কি যে হবে আল্লাহ সহায় না হলে। স্বপ্ন মাঠেই মারা যাবে।
-হুম…..!
চলবে…………