হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-২৮

0
1166

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৮

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই উপরে চলে গেলো।ফুল অভ্রকে ডাক দিলেও অভ্র কোনো উত্তর দেয় না। কি করবে বুঝতে পারছে না।সবার সামনে কিছু একটা বলতেও পারছে না যদি অভ্র আরো রেগে যায়।

বাইরে সুইমিং পুলের পাশে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো, তখন ফুল বার বার চেষ্টা করে অভ্রর দৃষ্টি আকর্ষণ করার কিন্তু অভ্র ফুল বাদে সবার দিকেই তাকাচ্ছে। অভ্র রাগ করলে ওর চেহারায় একটা অন্যরকম রূপ কাজ করে।ফুল এই অভ্রকে চিনতে পারছে না কোনো ভাবেই।দম বন্ধ হয়ে আসছে কতোটা সেটা শুধু ফুলই বুঝতে পারছে, প্রিয় মানুষ গুলোর অবহেলা একটু না অনেক বেশিই আঘাত করে।

রুমে গিয়ে ফুল অনুর সাথেও বেশি কথা বললো না।চুপচাপ শুয়ে পড়ল, খুব বেশি খারাপ লাগছে। অভ্রকে এতো এতো এসএমএস দিচ্ছে কোনো রিপ্লে দিচ্ছে না, যতবার কল দিচ্ছে রিসিভ তো করছেই না উল্টো ফোন অফ করে রাখছে।

রাত প্রায় একটা বাজে, ফুলের চোখে ঘুম নেই, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, পাশে থেকে অনু যেনো বুঝতে না পারে সেজন্য শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।

অবশেষে অধৈর্য্য হয়ে উঠে বসলো, আর মাথায় কিছু একটা প্ল্যান সেট করে, বিছানা থেকে নেমে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলো। বের হতে না হতেই আবার সেই রাজ নামের ছেলেটার সাথে দেখা,
অই ছেলে গুলোও ছয় তলাতেই উঠেছে, যার কারণে বার বার দেখা হয়ে যাচ্ছে।ছেলেগুলো বাইরে থেকে আসছিলো,
রাজ ফুলকে দেখে প্রশান্তিময় হাসি দিয়ে বললো,
-হেই গার্ল! তোমার নামটা বললে না তো।আর এতো আপসেট লাগছে কেনো তোমায়?

ফুল উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে অভ্রদের রুমের দিকে চলে গেলো।

-কিয়া ইয়ার, আসার পর থেকে কি একটা মেয়ের পিছু লাগছিস!
-জানি না, আমি ওর ওপর ক্রাশ খেয়েছি নাকি প্রেমে পড়ে গেছি।দেখছিস না পুরো একটা পরী।
-এতোবার পিছু নিচ্ছিস,নাম জিজ্ঞেস করছিস বাই এনি চান্স মেয়েটা বোবা নয় তো?
রাজ ওর বন্ধুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো,
-ধেত কি বলছিস!
-ভেবে দেখ রাজ, একটা মেয়েকে এতোবার নাম জিজ্ঞেস করলি নাম না বললো,অপছন্দ হলে দু একটা ধমক তো দেবে তাই না? মেয়েটা একদম চুপচাপ।আর আজকে আসার পর যতবার দেখলাম মেয়েটাকে কখনো কথা বলতে দেখিনি।

রাজ উত্তর না দিয়ে চুপ চাপ রইলো,ব্যাপারটা ভাবার বিষয়!ফুলের পিছু না নিয়ে রুমে চলে গেলো।

ফুল অভ্রদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নক করলো, আকাশ এসে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ফুলকে দেখে খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলো,ফুলের চোখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে ও কান্না করেছে।
-বোন কি হয়েছে? এমন লাগছে কেনো তোকে? ভয় পেয়েছিস?
কান্না করে দেবে দেব ভাব এমন স্বরে উত্তরে বলে উঠলো,
-উনি কি রুমেই আছে?
-হ্যাঁ, কিন্তু কি হয়েছে?
-ভেতরে যেতে পারি?
-হ্যাঁ অবশ্যই আয়।

ফুল ভেতরে যেতেই দেখলো অভ্র সিংগেল বেডের উপর বসে আছে হাতে গিটার নিয়ে আর ডাবল বেডটাতে কাব্য আধশোয়া হয়ে আছে,তারমানে এতো রাতেও এরা ঘুমায় নি।

ফুল অভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, অভ্র কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফুল জোর দাবী করে বলে উঠলো,
-আমার সাথে বাইরে চলুন!
অভ্র টালবাহানা না করে গিটার রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফুলের সাথে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে, আকাশ কাব্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো, সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো।
-বলো কি বলবে,
-আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো? আমি কি এমন দোষ করেছি যে এমন করছেন?কথা বলছেন না, আমার দিকে তাকাচ্ছেন না,কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না।

ফুলের চোখের দিকে তাকিয়ে নজর সরালো,উল্টো ঘুরে রুমের দিকে যেতে নিলো,
-কোথায় যাচ্ছেন?আমার প্রশ্নের উত্তর টা দিয়ে যান প্লিজ!

অভ্র কোনো সাড়া না দিয়ে রুমে চলে গেলো, ফুল এবার কেঁদেই দিলো,চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলো, কয়েক কদম যাওয়ার পর ফুলের কোমরে কারো হাত পড়লো,ফুল খানিকটা ছিটকে লোকটার মুখের দিকে তাকায়। ওটা অভ্রই ছিলো, রুমে গিয়ে জ্যাকেট পড়ে বেরিয়েছে।
-চলো বাইরে যাই?
-কোথায় যাবেন?
-চলো আগে,

ফুলের কোমর জড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে লিফটের ভেতর ঢুকে গেলো।

বাইরে জ্যোৎস্না রাত, সবে পূর্ণিমা পড়েছে।চা বাগানের মাঝখান দিয়ে দুজনে হাঁটছে। চাঁদের আলো গুলো চা বাগানের উপর প্রখর ভাবে পড়েছে যার জন্য রাতের আঁধারেও সবুজ পাতা গুলোর উপর আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে। জ্বলজ্বল করছে পাতা গুলো, ঘন কুয়াশা গুলোও চাঁদেরকণা গুলোকে আটকে রাখতে পারে নি।

যদিও একটু বেশি ঠান্ডা লাগছে কিন্তু পরিবেশ খুব মজার লাগছে।
-এখন বলো কি প্রশ্ন তোমার?
-এমন করছেন কেনো আমার সাথে?
-কেমন করছি?
-খারাপ ব্যাবহার,ইগনোর।
-কষ্ট হচ্ছে খুব?
-হুম্মম অনেক বেশি।এখন বলুন কি করলে আপনি স্বাভাবিক হবেন?
-সত্যিটা বললে রাগ করবে না তো?
– প্রমিস রাগ অভিমান কোনোটাই করবো না।আর আপনি যা বলবেন আমি তাই ই করবো।
-আমি রাগ অভিমান কোনোটাই করিনি।
ফুল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো
-মানেহ!
-এমনিই মজা করার জন্য তোমার সাথে বাঁদরামো করলাম,তুমি আমাকে ডাকতে না এলে কিছুক্ষণ পর সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমিই তোমাকে ডাকতে যেতাম।
ফুল উত্তেজিত স্বরে বললো,
-এরকম মজা কেউ করে!
-কারণ আছে তো এরকম করার।
-কি কারণ?
-আমি যা করেছি, তোমার ধারণা আমি রাগ করেছি বা অভিমান। কিন্তু আমি এসবটার অভিনয় করেছি।কারণ হলো আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমি রাগ বা অভিমান করলে তুমি ঠিক কি করো, আর কতোটুকু করো আমার রাগ ভাঙানোর জন্য।নাকি উল্টো অভিমান করে বসে থাকো।তা তো পাশ করেই গেলে।
-খুব জরুরী ছিলো এমনটা করার?
-অবশ্যই জরুরী ছিলো,এরকম করার মূল উদ্দেশ্যে হলো ইগো সেটিসফাই করা,বুঝলে?
-হয়েছে বুঝেছি। আপনি আসলে অতোটাও ভালো না যতোটা আমি ধারণা করি।
-হুম হতে পারে।এখন নেক্সট কুইচশেন করো।
ফুল মাথা নিচু করে মন ভার করে উত্তর দিলো,
-আর কোনো প্রশ্ন নেই তবে কাজটা ঠিক করেননি।
-ওকে সরি! আর করবো না এরকম।
-ইট’স ওকে।
-সরি!
-আরে বললাম তো ইট’স ওকে।
-ওকে সরি।
-আপনি আবার ভাউতামি করতেছেন তাই না?

অভ্র চুপ হয়ে গেলো।ফুল অভ্রর দিকে তাকাতেই দেখলো অভ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে অপলক হয়ে,
-কি দেখছেন?
রহস্যময় ভাবে উত্তর দিলো,
-দেখছি না ভাবছি।
-কি ভাবছেন?
ভয় মিশ্রিত স্বরে ফুলকে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি কি কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছো?
-কিসের শব্দ?
-কান পেতে শুনো, একটা শব্দ আসছে।
ফুল চুপ করে রইলো,অনেক্ষণ কান পেতে থাকার পর মনে হলো একটা শব্দ হচ্ছে খচখচ শব্দ এটা।
ফুল আস্তে করে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো
-এটা কিসের শব্দ?

অভ্র ফিসফিসিয়ে উত্তর দিলো,
-মনে হচ্ছে চা বাগানের ভূত! আমরা এতো রাত করে এখানে এসেছি।ভূতের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছি।সেই জন্য উঠে এসেছে।
-স স সত্যি ভূত?
-সত্যি না মিথ্যে পরে দেখা যাবে আপাততো পালাও।

কথা শেষ হতে না হতেই অভ্র ফুলের হাত ধরে দৌড় দিলো, ফুল হুঁশে বেহুঁশে অভ্রর সাথে দৌড়াতে লাগলো।ফুল কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো ওরা রেসোর্টের দিকে না গিয়ে উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছে, আরো চা বাগানের গহিনে ঢুকে গেছে।দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে ফুল অভ্রকে বলতে লাগলো,
– এই এই থামুন থামুন!আমরা ভুল দিকে দৌড়াচ্ছি।
-না ঠিক দিকে যাচ্ছি।
-আরে বলছি তো, আমরা উল্টো দিকে যাচ্ছি।দেখুন ভালো করে।

অভ্র থেমে গেলো সাথে ফুলও। দুই হাঁটুতে
হাত রেখে উপুর হয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আর হাঁপাচ্ছে,
– বলে কয়ে বিপদ বাড়ালাম,কোনদিকে এসেছি দেখেছেন?আরো ভিতরে ঢুকে গেছি, এখন রেসোর্টে যাওয়ার আগেই ভূত এসে আমাদের ধরে ফেলবে।
-নতুন করে আর কি ধরবে? ভূত তো তোমার কাছেই।

কথাটা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, ফুলের হৃদস্পনদনের গতি বেড়ে গেলো ,
-কো কো কোথায় ভূত? আ আপনি ছাড়া আর কাউকে দে দেখছি না তো।কোথায়?
-কানা চোখে ঘোড়া দেখো!
এই যে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
-আপনি?

অভ্র উত্তর না দিয়ে শব্দ করে শয়তানি হাসি দিলো, ফুল আরো ভয় পেয়ে গেলো।ভয়ে গা ছমছম করছে,
অন্ধকারের মধ্যে অভ্রর চোখ টা জ্বলজ্বল করছে,গায়ে সাদা রঙের জ্যাকেট আরো চাঁদের আলোতে রংটা ঝকমকে লাগছে।
এই দৃশ্য দেখে ফুলের গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ অবস্থা।

-উনার উপর তো আবার ভূতে ভর করে নি?আল্লাহ বাঁচাও আমাদের (মনে মনে)

মনে মনে ফুল অনবরত দোয়া ইউনূস পড়তে লাগলো।সাহস করে অভ্রকে বললো,
-দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,এসব ইয়ার্কি থামান না হলে আমি সত্যি অনেক রাগ করবো,
-বেঁচে থাকলে তো রাগ করবি, তোকে এখন আমি মটর মটর করে খাবো।হু হা হা হা!

ফুল কোনো উত্তর না দিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলো,
-অ্যাাাায়ায়ায়া হ্যায়ায়ায়া মাআআআ… আমি বাড়ি যাবো। ইহি ইহি ইহি…

ফুলের কান্না দেখে খুব হাসি পাচ্ছে,কিন্তু ওর কান্নাটা থামানো জরুরী এখন।

-ওহ নো, কি থেকে কি হয়ে গেলো। এখন থামাবো কি করে! এখন ও আমার হুর মুডে নেই, সাত ভাইয়ের এক বোন বাড়ির আদরের ছোট্ট মেয়ে মুডে আছে।এখন তো একে সরি বললে উলটো আমার গালে থাপ্পড় মেরে দেবে, কি করি?নাহ আর এর সাথে দুষ্টুমি করা যাবে না। (মনে মনে)

অভ্র ভেবে পাচ্ছে না এখন ফুলকে কিভাবে থামাবে।ফুলকে হেচকা টান দিয়ে একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো,ফুল ভয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
-ওমাগো তোমার মেয়ে ভূতের পেটে গেলো।
-ভূতের পেটে না, তোমার রাজপুত্রের বুকে!
এটা শুনে ফুলের কান্না থেমে গেলো,অভ্রর চোখের দিকে তাকালো।
-আপনি ঠিক হয়ে গেছেন?
-আমি তো ঠিক ই আছি!
-একটু আগে আপনার উপর ভূতে ভর করেছিলো, চলুন এখানে থাকবো না নাহলে আবার ভর করবে, আপনি আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে দিন, তাহলে আর কাছে আসতে পারবে না।
-আরে পালাচ্ছো কেনো?এতো বড় মেয়ে ভূতের ভয় পায়।ভূত বলে কিছু হয়?
-কি বলছেন তাহলে আপনি একটু আগে অমন করলেন কেনো?আর তখন ওরকম শব্দ কিসের হলো?
-তোমাকে রাগানোর জন্য অমন করেছিলাম, কিন্তু তুমি উল্টো ভয় পেয়ে গেছো।আর তখন কোনো কিছুর শব্দ ছিলো না,ওটা তোমার মস্তিষ্কের হ্যালুসিনেশন ছিলো।
-না আপনি আমার ভয় কমানোর জন্য বলছেন এই কথা।
-ঠিক আছে তুমি এটা বলো আমি বলার আগে তুমি কি কোনো শব্দ শুনেছো?
-না
-আমি বলার পর ই তো শুনেছো তাই না?
-হ্যাঁ।
– তাহলে সহজ কথা বুঝছো না কেনো?
-দরকার নেই বুঝার আমার এখানে ভালো লাগছে না চলুন।
ফুল অভ্রর হাত ধরে উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলে,অভ্র একই জায়গায় স্থির থাকে।ফুল অভ্রর দিকে ঘুরে বললো,
-কি হলো চলুন।

কোনো উত্তর না দিয়ে ফুলের হাত নিজের দিকে টেনে নিলো, ফুল একদম অভ্রর কাছে চলে এলো,
-ভয় করছে বলে চলে যেতে চাইছো কেনো?আমাকেও তো বলতে পারো,রাজপুত্র আমার ভয় করছে ভয়টা কমিয়ে দিন।
– কি করে কমাবেন?

ফুলকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো অভ্র।
-আই লাভ ইউ হুর।
-আই লাভ ইউ টু!কিন্তু এটা বলে আমার ভয় কমবে না।

অভ্রর এক হাত ফুলের কোমরে আরেক হাত গালে রেখে বললো,
-আজকের রাতটা খুব খারাপ গেলো তাই না?অনেক কাঁদিয়েছি তোমায়।প্রমিস আর কখনো তোমার চোখের এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিবো না।

-ওকে।আজকের রাতের মতো ক্ষমা করে দিলাম,নেক্সট টাইম কঠিন শাস্তি হবে,এমন দুষ্টুমির জন্য।কিন্তু এখন ফিরে চলুন।

অভ্র ধমকের স্বরে বললো,
-সমস্যা টা কোথায়?এতো ভয় কেনো?বলছি না ভয়ের কিছু নেই।

ফুল অভ্রর ধমকে চুপ হয়ে গেলো,
অভ্র ফুলের মাথা হাতিয়ে হাতিয়ে বললো,

-এখন বলুন তো ভূতের ভয় করছে কি?
ফুল বাচ্চাদের মতো করে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-হুম একটু একটু ।
-ঠিক আছে আর কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকো আমাকে , ভয় কমবে ।ভূত বলে কিছু হয় না,যদি কখনো দেখো ভূতুড়ে কোনো ঘটনা ঘটছে তাহলে বুঝবে ওটা তোমার মস্তিষ্কের হ্যালুসিনেশন।
-হুম।
-আর এমনিতেও যেখানে আমি তোমার সাথে আছি একটা পোকাও তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ছায়া হয়ে থাকবো
আমি তোমার।
ফুল শান্ত স্বরে বললো,
-একটা সত্যি কথা বলুন তো।
-কি?
-আপনি কি তখন সত্যি রাগ করেন নি?নাকি আমাকে শান্ত করার জন্য মিথ্যে বললেন।
-আমি সত্যিই রাগ করি নি।রাগ করার মতো কিছু হয়েছে কি যে রাগ করবো?
-আপনি তখন যা বলছিলেন সেসব কথায় সত্যি আর যুক্তিপূর্ণ ছিলো।
-আরে নাহ, পাগল। আমি তো বলেছিই তুমি যতোদিনে ম্যাচিউর না হচ্ছো, আমি তোমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যোগ্য না হচ্ছি ততোদিনে আমি ওরকম কিছুই করবো না।

-আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করিই, আর ম্যাচিউর? আর কতো ম্যাচিউর হবো? বাড়ির লোক ছেড়ে আপনার সাথে এসে রয়েছি।
-এটার নাম ম্যাচিউর? তাহলে একটু আগে ভয় পাচ্ছিলে কেনো?বাচ্চাদের মতো কান্না করছিলে কেনো?
-ভয় পাবো না মানে, জান বাঁচানো ফরজ!
-তাই বলে ওভাবে কান্না? প্রত্যেকটা মানুষের উচিৎ সব সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। মৃত্যুর থেকে মৃত্যুর পরের শাস্তি গুলোকে ভয় করো,কবরকে ভয় করো দেখবে এই জগতের সমস্ত ভয় বাঁধাকে সহজ করে সমাধান করতে পারবে।যতোই পালাও আর লুকাও মৃত্যু যদি লিখা থাকে ভবে তাহলে তার মুখোমুখি হতেই হবে।
-হুম,
তুচ্ছ হাসি দিয়ে আবার বললো,
-আর বললে বিশ্বাস?সেটা তো রাতে দেখতেই পেলাম!

ফুল কিছুই বললো না,
কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব থাকার পর ফুল অভ্রর কলার চেপে ধরে নিজের দিকে টান দিলো,যার জন্য বাধ্য হয়ে অভ্রর ফুলের দিকে মাথা ঝুঁকতে হলো, আর মাথা ঝুঁকতেই ফুল অভ্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। অভ্র ফুলকে বাঁধা না দিয়ে ওর সাথে স্বায় দিয়ে যাচ্ছে আর ফুলের কোমর শক্ত করে চেপে ধরলো।

বেঘোরে ঘুমাচ্ছে অনু, ফুল যে পাশে নেই সেটা ওর জানা নেই। ফুল যাওয়ার সময় ভুলে রুমটা ভেতর থেকে লক করে যায় নি। এই মুহুর্তে যদি কেউ এসে অনুকে তুলে নিয়ে যায় অনু জানতেও পারবে না।
কিন্তু ঘুমের মাঝে হঠাৎ অনুভব করলো,
কোনো এক মৃদু গরম বাতাসের বিচ্ছুরণ হচ্ছে ওর গলার উপর। বাতাসটা আস্তে আস্তে ওর গালের দিকে যাচ্ছে।
অনুর কাছে ব্যাপারটা শুঁড়শুঁড়ির মতো লাগছে। এটা যে একটা মানুষের কারসাজি সেটা ঘুমের মাঝেই স্পষ্ট বুঝতে পারছে।
কোনো ভাবে এটা ফুল নয় তো? কিন্তু ফুল এরকম দুষ্টুমি কখনো করেনা। চোখ মেলে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ঘুমের কাছে হার মানতে হচ্ছে।যখনি চোখ খোলার জন্য মনস্থির করলো,অমনিই বাতাসের বিচ্ছুরণ বন্ধ হয়ে গেলো।

কিন্তু পরক্ষণেই অনুভব করলো ওর গালের কাছ থেকে কেউ একজন হাতটা সরালো তারপর হাতের তালুর উপর তার আঙুল ঘুরাতে লাগলো।

স্পর্শটা অস্বাভাবিক লাগাই সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায়। আবছা অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে এটা কোনো পুরুষ কিন্তু কে বুঝা যাচ্ছে না।কিন্তু অনু চিনতে পারে।
অনু ছিটকে গিয়ে উঠে বসে,উত্তেজিত স্বরে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
-তুমি? এতো রাতে এখানে!আল্লাহ কেউ দেখে ফেললে!
-সমস্যা নেই জোরে কথা বলো, রুমে কেউ নেই।
-নেই মানে? ফুল কোথায়?আমার পাশেই তো ঘুমোচ্ছিলো!

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here