হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-২৩

0
1154

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৩
অভ্র কোনো উত্তর না দিয়ে নূপুর দুটো সরিয়ে রাখলো।তারপর নিজের পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো,ফুল নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে শুধু।

নিয়ানা মুচকি মুচকি হেসে বললো,
-ছোতো বাবা তোমায় গিফ্ত দেবে।
-কি গিফত দিবে তোমায় ছোতো বাবা?
-ছোতো বাবায় দিকে দেখো,
অভ্রর দিকে তাকাতেই অভ্র বক্স থেকে নতুন একজোড়া নূপুর বের করে সেগুলো পায়ে পড়িয়ে দিতে লাগলো,

-ওয়াও নাইচ পজিশন! স্মাইল প্লিজ,আরে ফুল তুমি অমন নির্লিপ্ত হয়ে আছো কেনো?তোমার হবু বর তোমায় ভালোবেসে পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিচ্ছে। আরে ঠোঁটে একটা একটু হাসি লাগাও, ব্যাপারটাতে তুমি খুব ইম্প্রেস এইরকম ভাবে তাকাও। ছবিটা ভালো আসবে।

ফুল লজ্জা পেয়ে গেলো,অভ্র গম্ভীর স্বরে অনুর নাম উচ্চারণ করলো
-অনুওওও!
-আমি তো জাস্ট এই মুহুর্তটা ক্যামেরা বন্দী করলাম।একজন লজ্জা পাচ্ছো আরেকজন রাগ করছো।
-বউমণিকে নিয়ে আসার কথা ছিলো তোর সাথে। বউমণি কোথায়?
-আসছে তো,
বলতে বলতেই নিশাত কবিতার সাথে রুমে প্রবেশ করলো,ফুল মাথায় ঘোমটা দিয়ে , অভ্রর সামনে থেকে পা সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিশাতকে সালাম দিলো,
-আসলামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো বোন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
-আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।তুমি উঠে দাঁড়ালে কেনো বসো।
-আগে আপনি বসেন আমি বসছি।

নিশাত ফুলের পাশে এসে দাঁড়াতেই, ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-মাশ-আল্লাহ দেবরের পছন্দ কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস আছে।এমনি এমনি অভ্র তোমার নাম হুর দেয়নি গো।

ফুল লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলো।
কবিতা হেসে হেসে বললো,
-শুধু কি আমাদের মেয়েই নাকি, আপনাদের ছেলেও তো কোথাও কম না।পরী অভ্রর নাম কি দিয়েছে জানেন?
-কি দিয়েছে?
কবিতা ফুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
-পরী বলবো?
ফুল লজ্জায় কবিতার ডানার সাথে নিজের মুখ লুকালো।
নিশাত হাসতে হাসতে বললো,
-আচ্ছা ঠিক আছে, বলতে হবে না। পরে ওর মুখেই শুনে নেবো।

অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে, ফুলের পুরোনো নূপুর জোড়া কবিতার হাতে দিলো।

সবাই বসে বসে গল্প করতে লাগলো।

গল্প শেষে নিশাত ফুলের হাতে একটা ব্রেসলেট পড়িয়ে দিলো,
-এটা কিসের জন্য?
-তোমার এই বোনটার পক্ষ থেকে একটা ছোট্ট বার্থডে গিফট।
-থ্যাংক ইউ।

সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর ফুল অভ্রকে বললো,
-আপনিও কি তখন আমাকে বার্থডে গিফট দিলেন?

অভ্র কিছু না বলে হেসে দিয়ে বললো,
-চলো তোমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই।
-ওরি বাবারে আমার ভয় লাগে।
-আরে টেনশন করো না আমি থাকবো তোমার সাথে, আর তোমাকে তো অই বাঙালী স্টাইলে দেখতে আসে নি, যে সামনে যাবে তোমাকে প্রশ্ন করবে, হেঁটে দেখাতে বলবে, উঠে বসে দেখাতে হবে,নানান রকম পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ।
তোমার সেসব ঝামেলা পোহাতে হবে না, আমি আছি তো।প্রশ্ন করলে দুজনকে একসাথেই করবে।তোমার বাড়ির লোক বলে দিয়েছে আমার তোমাকে নিয়ে যেনো সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
-উনারা কি এখনো নিচে?
-নাহ সবাইকে তোমাদের গেস্ট রুমে পাঠানো হয়েছে, ফ্রেশ হয়েই নিচে আসবে।
-আমরা কি এখন নিচে যাবো?
-না।
-তাহলে?
-চলো তোমাকে আলাদা আলাদা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, তাহলে তুমি কমফোর্টেবল ফিল করবে।সবাই একসাথে থাকলে তুমি তখন আমাকেও পর চোখ দেখবে।
-না গেলে হবে না তাই না ? আমার না খুব লজ্জা করছে।
-আরে কিচ্ছু হবে না বললাম ই তো,আমার বউমণি তোমার সাথে যেভাবে কথা বলছিলো বাকিরাও তেমনই ভাবে বলবে।তোমার সাথে এমন ব্যাবহার বা কথা চালাবে না যেটাতে তুমি লজ্জা পাও।
-আচ্ছা অনু বলেছিলো আপনার বাবা আর ভাইয়া নাকি অনেক রাগী?আমাকে দেখে তো আবার ধমক দিবে না ?
-ধমক খেলে একসাথে খাবো চলো তুমি।

অভ্র ফুলের হাত ধরে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাবা মায়ের কাছে গেলো,অভ্র রুমে নক করলো,
-বাবা আসবো?
ভেতর থেকে অভ্রর মা উত্তর দিলো,
-আসো।

ফুলকে নিয়ে অভ্র ভেতরে গেলো,ভেতরে অভ্রর বাবা বসে ছিলো, ওর মা শাড়ী ঠিক করছিলো,
ফুল অভ্রর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সালাম দিলো উনাদের,
-আসসালামু আলাইকুম।
দুজনেই একসাথে উত্তর নিলো,
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো মামুনি তুমি?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

অভ্রর মার শাড়ি ঠিক করা হতে না হতেই ফুলের দিকে তাকিয়ে রইলো,আর জায়েদ খান সেই যে ফুল রুমে আসার পর থেকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। ছেলের পাশে ঠিক এমনই একজনকে তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলো।অভ্রর মা ফুলের গালে হাত দিয়ে বললো,
-মাশ -আল্লাহ! আল্লাহ আমার ঘরের জ্যোতিকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখুক।

ফুল মাথা নিচু করে আছে,জায়েদ খান অভ্রর উদ্দ্যেশে বললো,
-অভ্র, তোমার হুরের বর্ণনা তুমি যেভাবে দিয়েছিলে তাঁর থেকে কিঞ্চিত হেরফেরও হয় নি।কিভাবে পারলে এ রূপের বর্ণনা দিতে?

বাবার কথায় অভ্রও লজ্জা পেয়ে গেলো।
-তবে তুমি যে ওকে হুর উপাধি দিয়েছো,সেটা মানায় নি। ওর উপাধি হুরের রাণী দিলে মানাবে।

ফুল লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে,এরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষভাবে রূপের প্রশংসা করে যাচ্ছে।ফুল যে অভ্রর তুলনায় অনেকটা খাটো সেটা কেউ চোখে বিধাঁচ্ছে না। ওর ফ্যামিলির প্রত্যেকেই পজিটিভ একটা মেন্টালিটি নিয়ে চলে সেটা পুরোটাই স্পষ্ট ।

অভ্রর মা ফুলের গলায় একটা চেন পড়িয়ে দিলো, ফুল অবাক হয়ে রইলো,
-অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটা আমার ছেলের হবু বউয়ের জন্য প্রথম উপহার।
-থ্যাংক ইউ।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো, অভ্রও বেরিয়ে যেতে নিলে অভ্রকে পেছন থেকে ডাক দেয় ওর মা, ফুল বাইরে গিয়ে অভ্রর জন্য অপেক্ষা করে,
-রাজপুত্রের মুখ টা তো হেবভি শুভ!সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম রাজপুত্রের মুখ দেখলাম,আর সেই সকাল থেকে যার সামনে যাচ্ছি সেই কিছু না কিছু দিচ্ছে আমাকে।একদিনেই এতো ভয়াবহ অবস্থা, যখন বিয়ের পর রোজ তার মুখ দেখবো তখন কি হবে?তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত বাই এনি চান্স পরীক্ষার দিন সকালে যদি তার মুখ দেখে যেতে পারি আমার পরিক্ষা তো ঝাকানাকা হবে!(মনে মনে)

-জায়েদ বলো তো এখন,আমার ছেলে আর হুরের রাণীর জুটি টা কেমন হয়েছে?
-এক কথায়, উপরওয়ালা মেড ফর ইচ আদার। কোনো দিকেই কমতি নেই, সব দিক দিয়েই মানিয়েছে দুজনকে।
অভ্র বাবা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক বললো,
-থ্যাংক বাবা।তোমাদের সবাইকেই অনেক গুলো থ্যাংকস।তোমরা যেভাবে আমার পছন্দকে প্রায়োরিটি দিয়ে যাচ্ছো তার জন্য আমি প্রত্যেকের কাছেই চির কৃতজ্ঞ।
-থ্যাংকস তো তোমার প্রাপ্য অভ্র, তুমি আমাদের মনের মতো একটা মেয়ে বাছাই করেছো।শুধু মেয়ে না একটা পারফেক্ট পরিবারের মেয়ে পেয়েছো।এবাড়ির প্রত্যেকেই খুব বেশি অতিথিপরায়ণ। আমি শুনেছি টাংগাইলের মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ হয়,আজ সেটা নিজ চোখে প্রমাণ পেলাম।
-হ্যাঁ বাবা এটা ঠিক বলেছো, এবাড়ির মানুষ গুলো খুব ভালো,আমরা আসার পর থেকে সবাই এতো বেশি কেয়ার করছে আমাদের এখানে আসার পর কোনো সমস্যাই পড়তে হয় নি,সবাই একদম বাড়ির ছেলের মতো আপন করে নিয়েছে।
-উনাদের প্রত্যেকের ব্যাবহার খুবই আন্তরিকতায় পূর্ণ,খুবই ভালো লেগেছে সব মিলিয়ে।

অভ্র কিছুক্ষণ বাবা মায়ের সাথে কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো, ফুল এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে যেখানে ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছিলো,
-আহারে কষ্ট দিলাম তোমাকে,একা একা দাঁড়িয়ে আছো এতোক্ষণ ধরে।
-সমস্যা নেই,এখন কার সাথে দেখা করতে যাবো?
-মামা মামী তো আকাশদের ফ্ল্যাটে গেছে,আপাততো,খালামনি, খালুজান আর ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসি।
-ঠিক আছে চলুন।আরেকটা কথা আপনি আসলেই একটা পঁচা লোক,
-কেনো?
-আপন সবাইকে বলে দিয়েছেন, আমি আপনার হুর। প্রত্যেকের মুখে এক কথা অভ্রর হুর অভ্রর হুর!
-হ্যাঁ তাতে কি সমস্যা হয়েছে?
-আমার লজ্জা লাগে।
-তাহলে তো আমারও পাওয়া উচিৎ, তুমি যে সবাইকে বলেছো আমি তোমার রাজপুত্র।
-ও হ্যালো আপনি আমার জীবনে আসার আগেও বলতাম যাকে আমি বিয়ে করবো সে রাজপুত্রের মতো দেখতে হবে,সেখানে ভাগ্যবশত আপনি মিলে গেছেন।
-সেম ঘটনা তো আমারও, আমিও তো বলতাম সবাইকে, যে আমার বউ হবে সে হুরের মতো হবে।
-আপনার সাথে কথা বলাই ফালানি।
-আচ্ছা রাগ করো কেনো,
-আরে রাগ করি নি তো, লজ্জা লাগে আমার।
-লজ্জা পেলেই তো ভালো,আরো সুন্দর লাগে।
ফুল চোখ বন্ধ করে বিরক্তি ভাব দেখিয়ে বললো,
-ওরে আল্লাহ, এই পোলার মুখের আঠা লাগাইয়া দাও।

অভ্র হাসতে হাসতে ফুলকে নিয়ে একে একে বাকিদের সাথে ফুলকে পরিচয় করিয়ে দিলো।

রাত ৮ টার দিকে ফুলের বার্থডে সেলিব্রেশন শুরু হয়ে গেলো,যেখানে প্রত্যেকেই উপস্থিত।
প্রতিবছরের থেকে এবছরের সেলিব্রেশনটা ফুলের আজীবন মনে গেঁথে থাকবে।এবারের আয়োজন সবটা অভ্রর প্ল্যান মতো হয়েছে।গত রাত থেকে একের পর এক সারপ্রাইজের স্বীকার হচ্ছে।

রুমে ঢুকতেই আরেক সারপ্রাইজ, ফুলের রুমে জায়গায় জায়গায় গিফট বক্স রাখা।বিছানার উপর ইয়া বড় বড় টেডি,পড়ার টেবিলের উপর অনেক গুলো চকলেট বক্স।এগুলো নিশ্চয় অভ্রর কাজ তাতে সন্দেহ নেই।

রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেলো, সকাল বেলা থেকে বাড়ি সাজানো হচ্ছে ফুল দিয়ে।

যদিও অনুষ্ঠানটা ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে,তবুও বাড়ির একমাত্র মেয়ে কিনা, একদম সাদাসিধে ভাবে হলে কেমন দেখায়।

তাই বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে।

সন্ধ্যা রাত হতেই অনুষ্ঠানের শুরু
ফুলকে সব ভাবীরা মিলে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো,একটা অ্যাস কালার লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। অভ্র ব্ল্যাক কালারের শার্ট পড়ে হাতা ফোল্ড করে রেখেছে, অভ্রকে আর সবার মতো সাধারণ লাগলেও ফুলকে আজ অসাধারণ লাগছে।

সন্ধ্যা হওয়ার পর পর ই কাজী এসে গেছে,ধর্মীয় ভাবে দুজনের আকদ করার জন্য।

ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে এমন সময় অভ্র বন্ধুদের সাথে ফুলদের ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো, ড্রয়িংরুমে দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিলো এমন সময় অভ্র সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-সবার উদ্দ্যেশে আমি কিছু কথা বলতে চাই, সবাই অনুমতি দিলে আমি বলা শুরু করবো,

ফুলের বাবা অভ্রর দিকে মৃদু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-বলো বাবা কি বলবে তুমি।
-যদিও কথা গুলো আগেই বলা উচিৎ ছিলো , কিন্তু এখন না বললেই নয়।
আমি চাই ফুল আরো বড় হোক। পরিবার, দায়িত্ব, কর্তব্য এইসব সম্পর্কে আরো বুঝতে শিখুক। আমাদের দুজনকেই দুজনের অনুভুতির খেয়াল রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।আমাকেও ফুলের বিশ্বাস, ভরসা আর ভালোবাসার মানুষ হিসেবে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে।

আশা করি আমার কথা সবাই বুঝতে পেরেছে,যেহেতু আমি স্বাবলম্বী না। তাই আমার সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর হবে। যেদিন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো সেদিন আমি আমার সামর্থ্য দিয়ে ফুলকে স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান দিবো ।ততোদিন অব্ধি সম্পর্কটা বেঁধে রাখার জন্য বিয়েটা করছি।
আশা করি কারো আপত্তি থাকার কথা না।

ফুলের বড় চাচা স্বস্তির হাসি দিয়ে বললো,
-আরে বাবা এটা তো অতি উত্তম সিদ্ধান্ত। আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই এই ব্যাপারে।বরং আমরা ধন্য এই রকম মন মানুষিকতার মেয়ের জামাই পেয়ে।আমাদের পক্ষে কোনো আপত্তি নেই।এখন বেয়াই আপনাদের কি মত?

অভ্রর বাবাও হেসে উত্তর দিলো
– ছেলে যেটা ভালো বুঝে সেটাই হবে।আমাদের আপত্তি নেই কোনো।

এশারের নামাজের পর দুই পরীবারের উপস্থিতিতে কাজী সাহেব অভ্র আর ফুলের বিয়ে পড়ানো শুরু করলো,ফুলের উকিল বাপ হিসেবে কাব্যর বাবাকে নির্ধারণ করা হয়েছে

কবুল বলার সময় ফুল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো।
হঠাৎ ভেতরে কেমন যেনো খুব কষ্ট লাগছিলো,মনে হচ্ছিলো বাপের বাড়ি এখন আস্তে আস্তে পর হয়ে যাবে, আর পরের বাড়ি আস্তে আস্তে আপন হবে।ফুলের চোখের পানি ওর বাড়ির লোকদেরও সহ্য হলো না, তাদেরও খুব কষ্ট লাগছিলো।

একদিন এবাড়ির মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা ভেবেই ভিতর চিরে যাচ্ছে।যদিও বিয়েটা অনেক দেরি আছে।অভ্র ডক্টর হয়ে বের হওয়ার পরই ধুমধাম করে বিয়ে করে নিয়ে যাবে ফুলকে।ততোদিনে ফুল মানুষিক ভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে ।

এতো খুশির দিনেও ফুলের ঠোঁটে আলাদা হাসি নেই,ফুলের বেস্ট ফ্রেন্ড মীনা,বিশেষ কুকর্মা সহকারী বর্ষা, বাদল, বকুল ওরা কতো চেষ্টা করছে ফুলকে হাসানোর কিন্তু পারছে না।

রাত প্রায় এগারোটা বাজে, ফুল অভ্রর পাশে গিয়ে আস্তে করে বললো,
-একটু পর বাইরে আসুন,আমি এখন যাচ্ছি।কথা আছে আপনার সাথে।

অভ্র কোনো উত্তর দিলো না,ফুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানের ভেতর গিয়ে দোলনায় চুপচাপ বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর অভ্র কোনো রকম ছুতো খাটিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। ফুল শুধু বাইরে যেতে বলেছে কিন্তু কোথায় যেতে হবে সেটা বলে নি।তবে ধারণা করা গেলো ও বাগানের ভেতর দোলনাতেই আছে। বাইরে বলতে ওটাই ফুলের আস্তানা।

আন্দাজ মতো গিয়ে পেয়েও গেলো,ফুলের পাশে বসে অভ্র হাসতে হাসতে বললো,
-সামান্য এইটুকুতেই তুমি এরকম কান্না করছিলে, না জানি পরের বিয়ের দিন তুমি কি অবস্থা করবে গো!
ফুল চোখ বড় বড় করে অভ্রর দিকে তাকালো
-না মানে যেদিন আমি স্বাবলম্বী হয়ে তোমাকে মোহরানা দিয়ে, আইনগত ভাবে বিয়ে করবো,সেদিন তোমায় আমার বাড়িতে না নিয়ে হসপিটালে নিতে হবে,কান্না করতে করতে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো।

ফুল অভ্রর কথায় কোনো তোয়াক্কা না করে,মন মরা অবস্থায় ই প্রশ্ন করলো,
-আপনারা কালকে কখন চলে যাবেন?
-এই তো ভোরের দিকেই চলে যাবো।
-ভোরে কেনো?
-সকাল সকাল রাস্তা ফ্রি থাকে।বেলা যত বাড়বে ততোই জ্যাম বাড়বে।
-আর দুদিন থেকে যেতে বললাম থাকবেন না বলছেন,আবার কাল চলে যাবেন তাও আবার সকাল সকাল বলছেন।

অভ্রর ঠোঁটে থেকে হাসিটা চলে গেলো,ফুলের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আমি চলে যাবো বলে খারাপ লাগছে তোমার?মন খারাপ করো না , চলে গেলেই তো আবার আসতে পারবো।
আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি খুব তাড়াতাড়িই তোমার সাথে দেখা করতে আসবো।
-………………………
– তুমি মন খারাপ করলে, আমার ভালো লাগে না, এরকম রাত আমাদের জীবনে দ্বিতীয়বার আসবে না।
-কেনো আসবে না কেনো?
-কারণ আজ রাতে তুমি কিন্তু অলরেডি আমার বউ হয়ে গেছো,বাকি আছে শুধু কাগজে কলমে নিজের করে তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়া। যদিও তোমার বয়স হয় নি কিন্তু তুমি যদি চাও এটাও আজ রাতেই করতে পারি করবো কি?
-না
-তাহলে? তুমি হাঁটবেও না পথও ছাড়বে না,এরকম তো সম্ভব না। যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। সবুর করো মেওয়া ফলবে।
-ঠিক আছে, চলে যান।থাকতেও হবে না আপনাকে, আমার সাথে দেখা করতে আসতেও হবে না।
ফুল অভিমান চেপে বসে রইলো।
-আমি তোমাকে রোজ কল দেবো তো, তুমি যত ইচ্ছে কথা বলো,আমায় দেখতে ইচ্ছে হলে ভিডিও কল দেবে।দেখবে খারাপ লাগছে না আর। আমায় মিসও করবে না।
-……………………

ফুল চুপচাপ আছে ওর মন খারাপটা সহ্য হচ্ছে না।অভ্র আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে ফুলের বদলে ও নিজেই কেঁদে দেবে।কিন্তু একজন ছেলে হয়ে হবু বউয়ের জন্য কান্না করাটা হাস্যকর লাগবে।নিজেকে কনট্রোল করতে বলে উঠলো,

-আচ্ছা ভেতরে চলো, সবাই কি ভাববে বলো তো।আমরা দুজনেই সবার থেকে আলাদা একান্ত সময় কাটাচ্ছি।উঠো ভেতরে চলো।

কথাটা বলেই অভ্র উঠে দাঁড়ালো, সামনের দিকে পা ফেলতে যাবে তখনি ফুল অভ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে আটকালো।অভ্র পিছু ফিরতেই ফুল উঠে দাঁড়িয়ে অভ্রকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আই লাভ ইউ রাজপুত্র। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি,আপনার থেকেও অনেক বেশি অনেক বেশি অনেক বেশি। আপনার চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছি না, খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি ভেবে পাচ্ছি না আপনি চলে গেলে আমার ঠিক কেমন লাগবে, তবে বুঝতে পারছি খুব খারাপ লাগবে।এ কয়দিনে আপনাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।তবে আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা তিনি আপনাকে আমার জীবনে লিখে দিয়েছেন।আমার মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে চলে যাই কিন্তু আপনার সাথে চলে গেলে আমার বাড়ির লোকদের ছাড়তে হবে।আপনাকে ছাড়াও যেমন আমার থাকতে কষ্ট হবে, তেমনই আমি আমার বাড়ির লোকদের ছাড়া থাকতে পারবো না। আপনাকেও তো আর আটকে রাখতে পারবো না।

একদমে কথাগুলো বলে, ফুল অভ্রর শার্টের মধ্যে মুখ ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।অভ্র কোনো উত্তর না দিয়ে, ফুলের দুই গালে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-এই পাগলী, তোমায় ছেড়ে যেতে কি আমারও খুব ভালো লাগবে?আমারও অনেক কষ্ট হচ্ছে তো।ইচ্ছে করছে তোমায় সাথে করে নিয়ে যাই। কিন্তু কি আর করার বাস্তব মেনে নিতে হবে। মন খারাপ করে না প্লিজ!আমি তো তোমার অনুভূতিতে মিশে আছি,তুমি আমার অনুভূতিতে। ভালোবাসি তোমায় হুর অনেক অনেক ভালোবাসি।আমার শেষ নিশ্বাস অব্ধি আমি তোমার অনুভূতিগুলো বুকে রেখে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করবো।

গাল থেকে হাত সরিয়ে ফুলের হাত মুঠি করে ধরে ঠোঁটের কাছে এনে, হাতের তালুতে চুমু খেলো।
-আর কিছুক্ষণ বসুন না, কাল রাতেই তো সেই ঢাকা থাকবেন,আজকেই শেষ গল্প। চলুন না গল্প করি,বাড়ির কেউ কিচ্ছু মনে করবে না।
-ঠিক আছে চলো,এইটুকু আবদার রাখায় যায়।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here