হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-২৪

0
1118

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৪

দুজনে আবার বসে পড়লো। অভ্র দোলনাতে পা তোলে বসে আর ফুল অভ্রর বুকে হেলান দিয়ে বসে।

দুজনে হাতে হাত রেখে কত শত কথা বলছে।অভ্রর হাতটা খুব শক্ত করে মুঠি করে ধরে আছে ফুল।
-একটা কাজ করো তো কালকে চলে যাওয়ার সময় আমাকে একটা কথা মনে করিয়ে দিও।
-কি?
-না থাক কিছু না।
-আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনাদের চুল গুলো এতো বড় কেনো?
-ঝুটি করবো তাই বড় করছি।কেনো তোমার কি পছন্দ না? পছন্দ না হলে বলো কেটে ফেলবো।
-না না অপছন্দের কি আছে।তবে আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে, আপনাকে দেখতে কেমন লাগবে ভেবে।
-ভালো না লাগলে আমিই কেটে ফেলবো আমি চুল কখনো এতো বড় রাখি না। তবে সব ফ্রেন্ড মিলে প্ল্যান করেছি সবাই এক রকম করে চুল রাখবো তারপর দেখবো কেমন লাগে।
-হি হি হি সন্যাসীদের মতো লাগবে।আচ্ছা একটা গান শুনান না।
-গান শুনবে তুমি?
-হুম
-পরে বলবো, এখন গানের মুড আসছে না।
ফুল রাগ দেখিয়ে বললো,
-আপনাকে যা বলি তাতেই না করেন খালি।এমন করেন কেনো?
অভ্র হেসে দিয়ে বললো,
-তুমি রাগলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।আরো বেশি করে রাগ করো।আমি যদি গান টা গাই তাহলে তো তুমি রাগ করতে না, তোমাকে রাগাতেও ভীষণ মজা।যাকে বলে খুব ট্যাশ!

ফুল অভ্রর হাতের মধ্যে জোরে একটা চিমটি কেটে দেয়।

দুজনের গল্পের মাঝে আড়ং জুড়ে দিলো কাব্য, অয়ন,সমুদ্র, আবীর।
-ভাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখো দুজন,বিয়ে হয়েছে বলে এভাবে মেলা মেশা করতে পারো না।

অভ্র চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলো,
-আমাদের তো বিয়ে টা হয়েছে অনেকের তো আবার তাও হয় নি,তবুও দেখ বিনা লাইসেন্সে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে।আর আমাদের শুধু সার্টিফিকেট টা নেই। তাই শুধু গল্প করছি এতেই তোরা এরকম প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশ করছিস?

সমুদ্র অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বললো
-কথা সেটা না, কথা হলো আমাদের ক্রাশকে যে আমাদের সামনে দিয়ে নিজের বউ করে নিলি এর কি বিচার হওয়া উচিৎ?
-ভাই বউ তো এখন উল্টো পাক ঘুরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তোদের ভাগ করে দিতে পারবো না, তবে তোদের জন্য অন্য কোনো ব্যাবস্থা করতে পারি।
-লাগবে না,আমরা নিজেদেরটা খুঁজে নেবো নিজ দায়িত্বে।তবে তোর ব্যাপারটা সত্যি মাথার উপর দিয়ে গেলো রে বুঝলাম ই না কোথা থেকে কি হয়ে গেলো।তুই যে কত গভীর জলের মাছ রে!

সমুদ্র আসলে ইন্ডাইরেক্টলি অভ্রকে যে কথা বুঝাচ্ছে অভ্র বুঝতে পেরেছে উত্তরে অভ্র বললো,
-শোন শোন, তোরা আসলে একটু বেশিই গতি নিয়ে ছুটছিলি।আমি তা করিনি, আমি পেছনে পড়ে ফার্স্ট হয়েছি।
অই যে একটা প্রবাদ আছে না,”আগে গেলে বাঘে ধরে,পিছে গেলে স্বর্ণ পায়”যদিও তোদের বাঘে ধরে নি তবে আমি স্বর্ণ পেয়েছি।

এভাবেই সবাই কথা চালাতে লাগলো, এই মুহুর্তে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মন মানছে না, অভ্র মুখ ফুটে ওদের চলে যেতেও বলতে পারছে না। এদিকে ফুল লজ্জায় চুপ হয়ে আছে এদের একেকজনের কথা শুনে।কিছুক্ষণ পর কাব্য সবার উদ্দ্যেশে বললো,
-অই সবাই চল তো ওদের দুজনকে একা কথা বলতে দে একটু।রাত শেষ হলেই তো চলে যাবো আমরা, অভ্রকে আমরা পরেও পাবো কিন্তু পুতুল পাবে না। আজকের রাতটা পুতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে অভ্রকে ছেড়ে দে তোরা।অভ্র তোরা থাক এখানেই,আর কেউ এদিকে আসবে না সে ব্যবস্থা করছি।
– এই তো আমার ভাই কাব্য নানা।তুমিই মনে করো আমার কিডনি ডিজার্ব করো,সব সময় আমাকে দুই লাইন বেশি বুঝো।ওরা কেউ আমাকে এতোটা বুঝার চেষ্টাই করে না।

অয়ন কিছু বলতে যেয়েও থেমে গিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
-ভাই যাহ কিছু বললাম না । তোরে কালকেই ধরবো সবাই।আজকে ছেড়ে দিলাম, ফুলের জন্য।

সবাই চলে গেলো, ওরা আবার নিজেদের মতো সময় কাটাতে লাগলো।

বাড়ির ভেতরে বড় রা বসে কথা বার্তা বলছে,। অভ্রর বাবা খুব বেশি খুশি আজকে, এমন একটা পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করতে পেরে নিজেকে খুব লাকি মনে করছেন তিনি।
কথার মধ্যে ফুলের মামা বলতে লাগলো,
-জানেন ভাই আমাদের মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম।সব সময় মানুষের কাছে কটু কথা শুনতে হয়, মেয়েকে এতো আদর করে রাখি পরের বাড়ি ভাতও জুটবে না,সুখ কি সেটা তো বুঝবেই না।সব সময় আমাদের মধ্যে একটা চিন্তা কাজ করতো,আমরা আমাদের মেয়েকে যেভাবে আদর যত্ন করে রাখি পরের বাড়ি সেভাবে রাখবে তো? এই ভয় টা আমাদের মধ্যে সব সময় কাজ করতো, তাই সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছিলাম একটা সাধারণ ঘরের ছেলের সাথে পরীমার বিয়ে দেবো আর এবাড়িতে ঘর জামাই রাখবো।কোনো দিন কল্পনাও করি নি, এতো ভালো একটা ঘরে আমাদের মেয়ের কপাল জোড়ে ছিলো। আল্লাহ পাকের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা এতো ভালো পরিবারে আমাদের মেয়ের ভবিষ্যৎ লিখে রেখেছেন।এখন আমাদের সেই ভয় নেই, আমরা নিশ্চিত আপনারা যে আমাদের থেকে বেশিই আদরে রাখবেন মেয়েকে।

-ইনশাআল্লাহ ভাই!ছেলে মেয়ের জন্য দোয়া রাখবেন,আল্লাহ যেনো ওদের সুখী করে।
ফুলের ফুপা বললো,
-আপনারা ছেলের পছন্দকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে কথা এগিয়েছেন।সেটা সত্যিই খুব অবাককরা কান্ড।

জায়েদ খান মৃদু হেসে উত্তরে বললো,
-জানেন ভাই আমার ছেলে মেয়ে গুলো কখনো মুখ ফুটে কিছু চায় না।সেখানে এক ছেলে একটা জিনিস চেয়েছে দেবো না আবার! অভ্র তো তাও মুখ ফুটে বলেছে সব। কিন্তু জিয়াদের বেলায় কত কাহিনী শুনে কি বলবেন!আমরা সব সময় চাই ছেলে মেয়ে যাকেই বিয়ে করুক নিজের পছন্দের কাউকে বিয়ে করুক, ভালো থাকুক।জিয়াদের বেলায় আমরা একই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমাদের ধারণা ছিলো, জিয়াদ যেহেতু কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলে না,সেহেতু ওর যদি এই স্টুডেন্ট লাইফে কোনো প্রেম থাকে আর বাই এনি চান্স যদি মেয়ের অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায় তাহলে জিয়াদ আমাদের কিছু বলবে না,মাঝখান থেকে ছেলেটা ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাবে। সেটা ভেবেই
সবাই মিলে কত জিজ্ঞেস করেছি কোনো পছন্দ আছে কিনা পছন্দ আছে কিনা, এই ছেলের মুখ থেকে কোনো ভাবেই বের করা যাচ্ছিলো না।

অবশেষে যখন প্রোপার বিয়ের বয়স হলো তখন তো আমরা খুব চাপ দিতে লাগলাম, এই ছেলে বলছিলোই না কিছু, ওর কাজিনরা কতো জিজ্ঞেস করতো তাও বলতো না, অবশেষে ওর বড় খালামনির থেকে শুনি কোনো এক হসপিটালে একটা ওমেন সাইকোলজিস্ট আছে, তাকে সে একদিন দেখেছে কোনো একটা কারণে এক সাথে কফিও খেয়েছে, মোট কথা হসপিটালেই তার সাথে একদিনের পরিচয়।ব্যাপারটা ওর খালাতো বোনকে জানিয়ে বলেছে যদি পারে তো অই মেয়ের খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে।

তারপর আমরা যথারীতি খোঁজ খবর নিলাম, মেয়ের ফ্যামিলিতে জানালাম, তাঁরাও আর আপত্তি করলো না। তারপর বিয়েটা দিয়ে দিলাম।

আমার ছেলেদের চয়েস আছে ভাই!দেখে দেখে একেকটা লক্ষ্মী পছন্দ করে, নিশাত আমাদের বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর আমাদের ব্যাবসা আরো দ্বিগুণ হারে উন্নত হলো এটাকে বলে ঘরে লক্ষ্মীর প্রবেশ। আমার ছোটো ছেলের বউটাও যে এমনি হবে সেটা স্পষ্ট ।নিশাত যেরকম একটা মেয়ে হয়ে আছে, ফুলও সেরকমই থাকবে।
-ইনশাআল্লাহ ভাই,মেয়েকে যেভাবে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবেন সেভাবেই থাকবে ও।

রাত প্রায় শেষের দিকে, শেষ রাত হলেও ফুলের চোখে ঘুম নেই।
সকাল হলেই অভ্রর বিদায়, এটা ভেবেই ফুলের ভেতর পুড়ে যাচ্ছে। জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে অনুও ঘুমিয়ে গেছে , আর একটু পর পর আকাশের জানালার দিকে তাকাচ্ছে অভ্রকে দেখার জন্য।আকাশের রুমে লাইটটা অফ, কিন্তু অভ্রও ফুলের মতোই জানালার পাশে বসে বসে ফুলকে দেখছে।

ফুলকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা ভেবে অভ্রর ও ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট লাগছে।
দুই চোখের পাতা এক হচ্ছে না কোনো মতেই,তবে কোথাও একটা স্বস্তি বিরাজ করছে মনের ভেতর,সেটা হলো ফুল দিন শেষে অভ্ররই।

সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট শেষ করেই সবাই বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজের লোক ব্যাগ পত্র নিয়ে গাড়ীর ডিকি তে নিয়ে রাখছে।ফুল নিজের ঘরে মুখ শুকনো করে বসে আছে, সকাল বেলা কিছু খায়ও নি, কারো সামনেও যায় নি।

অভ্র ফুলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নক করলো,
-আসবো?
অভ্রর শব্দ পেয়ে ফুল উঠে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো।
-বিদায় তো দেবেই না, তাই বিদায় নিতে এলাম।
-ভেতরে আসুন।

অভ্র ভেতরে প্রবেশ করলো , ফুল গাল ফুলিয়ে বসে রইলো আবার।অভ্র ফুলের গা ঘেঁষে পাশে বসলো,
-এভাবে মন খারাপ করে থাকলে আমার যেতে ইচ্ছে করবে না, আর বেশি দিন থাকলে বাইরের লোকে কি বলবে বলো তো।মানুষ তো তিল থেকে তাল বানিয়ে দেয়,বলবে বিয়ের পর ছেলে পরিবার ছেড়ে বউয়ের কাছে পড়ে আছে,ছেলেটা নিশ্চয় বউয়ের আঁচলের নিচে পড়ে থাকে।

ফুল কড়া স্বরে বলে উঠলো,
-হয়েছে আর যুক্তি দিতে হবে না। চলেই তো যাবেন।
-ওকে সরি, এখন আমাদের হাসি মুখে বিদায় দাও প্লিজ।তোমার হাসিটা যদি না দেখে যেতে পারি আমার খুব কষ্ট লাগবে, বাড়ি গিয়ে কান্না করবো বলে দিলাম।

অভ্রর কথা বলার ভঙ্গি দেখে ফুল ফিক করে হেসে দিলো। যাক ঠোঁটে হাসি দেখে একটু প্রশান্তি পেলো। পাশে থেকে ফুলকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে গালের সাথে গাল ঠেকালো। আরেক হাত দিয়ে বাম পকেট থেকে অভ্রর মোবাইলটা বের করে ফুলের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
– এটা নাও, তোমার কাছে রাখো।

ফুল মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে অভ্রর দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আপনার ফোন আমি নিবো কেনো?
-এটা তোমার কাছে থাকলে আমরা দুজনে যখন তখন কথা বলতে পারবো।আমি চাইলে তোমাকে নতুন ফোন কিনে দিতে পারতাম এটাও অবশ্য নতুন ফোন ই, ঈদের দুদিন আগে কেনা হয়েছে।তোমায় দিলাম এই কারণে যে, আমার ফোনটা দিলে তোমার কাছে একটা টাটকা স্মৃতি থাকবে আমার,যতবার এই মোবাইল হাতে নিবে ততোবার মনে হবে এই মোবাইলটা আমার কাছে ছিলো আমি চালাতাম।আর বড় কথা হলো,মোবাইলের গ্যালারীতে তোমার জন্য একটা বিশেষ সারপ্রাইজ আছে,আমি চলে যাওয়ার পর মনে করে দেখে নিও।
-আপনার মোবাইল তো আমাকে দিয়েই দিলেন কথা বলবেন কি করে?
-আমি অলরেডি মোবাইল অর্ডার করে দিয়েছে, দুই এক ঘন্টার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
ঢাকা পৌঁছেই বাড়িতে ঢুকে তোমাকে কল দিবো হ্যাপি?
ফুল মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,
-হুম।
-একটু হাসো না, তোমার হাসিটা দেখে যাই। আবার কবে দেখতে পারবো তাঁর ঠিক নেই।
-আমার হাসি পাচ্ছে না,
-ওহ ওকে,নো প্রবলেম।তোমার যখন হাসি পাবে আমাকে ভিডিও কল দিও তখন দেখে নিবো।এখন চলো,সবাই বেরিয়ে পড়েছে,হাসি মুখে বিদায় না দিলে,
বিদায়টা দাও।

অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে ফুলের হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করালো,
ফুল অভ্রর পিছু পিছু যেতে নিলো।দরজার কাছে যেতেই ফুল দাঁড়িয়ে পড়লো, অভ্র ফুলের দিকে ফিরতেই দেখে ফুলের চোখ ভরা পানি, বুঝাই যাচ্ছে কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে চোখ ভেদ করে পানি বেরিয়ে পড়বে, লাল বর্ণ ধারণ করেছে চোখ দুটো,অভ্র রুমে আসার আগেও কাঁদছিলো ফুল।এতো কম সময়ে মানুষ মানুষকে এতোটা ভালোবাসতে পারে কি করে! দুজনের ভালোবাসাটা কতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো,আবার কত তাড়াতাড়ি পূর্ণতাও পেয়ে গেছে কোনো রকম বাঁধা ছাড়াই!

অভ্র ফুলের হাত ছেড়ে দিয়ে দুই হাতের ডানা চেপে ধরলো আলতো হাতে, তারপর একদম নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলো।ফুল অভ্রর দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,
-আই লাভ ইউ হুর!
-আই লাভ ইউ টু রাজপুত্র।
মলিন একটা হাসি ঠোঁটে লাগিয়ে ফুল অভ্রর ডান হাত টা সরিয়ে মুঠি করে ধরে ঠোঁটের কাছে এনে হাতের তালুতে চুমু খেলো ।আর অভ্র আবেগের বশে ফুলের থুঁতনিতে হাত রেখে আলতো করে ঠোঁটে চুমু খেলো,নিমেষেই ফুলের মন খারাপ থেকে লজ্জা পেয়ে চিবুক লাল হয়ে গেলো। ফুল হেসে দিয়ে অভ্রর বুকে মুখ ঠেকালো।
-আবার কবে আসবেন?
-তুমি যেদিন বলবে।
-ইয়ার্কি না আমি সিরিয়াসলি বলছি।
-আল্লাহ যেদিন ভাগ্যে লিখে রেখেছে।আল্লাহ যেদিন আনবে সেদিন ই আসবো।
-এতো প্যাঁচ না মেরে ডিরেক্ট বললেই পারেন, অনিশ্চিত!
-এই তো আমার বুদ্ধিমতী বউ,বুঝে গেছে কি সুন্দর।
-আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার।
-অপেক্ষা করো না।
-কেনো?
-অপেক্ষার সময় সর্বদা দীর্ঘ হয়। আগে যেরকম ছিলে সেরকম নিয়মেই সময় পার করবে হুট করেই একদিন এসে উপস্থিত হবো তোমার দরজার সামনে।
-আগের মতো কি করে সময় পার করবো! আগে তো আর অনুভূতিতে আপনি ছিলেন না, এখন আছেন।
-কেনো অই যে কাল বললে, আমি মরে গেলে আবার আগের মতো থাকবে আমায় ছাড়া।
-কিন্তু আপনি তো আর মরেন নি, বেঁচেই আছেন।
-আচ্ছা বাবা,এতো চিন্তা কিসের? প্রযুক্তি কত এগিয়ে গেছে ধারণা আছে? মোবাইল আছে কিসের জন্য?যখন ইচ্ছে হবে আমায় মনে পড়বে অডিও কল ভিডিও কল যেটা ইচ্ছে হয় দিবে। সব সময় ফ্রি আমি তোমার জন্য।শুধু যখন ক্লাসে থাকবো তখন কোনো রেস্পন্স দিতে পারবো না।আর প্রযুক্তি যেরকম এগিয়ে যাচ্ছে তাতে খুব তাড়াতাড়িই ইমারজেন্সি যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে ঠিক যেরকম গতিতে ফোন করে কথা বলা যায়,একে অপরকে দেখা যায়। সেরকম ভাবে দেখবে যখন তখন মন চাইলে যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারছি।
-আর যুক্তি দিতে হবে না বুঝেছি,আপনার এখন কাজ হলো সহী সালামতে ঢাকাই ফিরে কল দেয়া। দেখে শুনে যাবেন দেখেশুনে থাকবেন।নিজের যত্ন নেবেন।
-ঠিক আছে ম্যাডাম,যাহা আজ্ঞা!তবে আপনার উদ্দ্যেশেও কিছু কথা, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন।ঠিক মতো পড়াশুনা করবেন, না করলেও সমস্যা নেই।নিজের যত্ন নেবেন, সেইফলি চলাফেরা করবেন যেনো ধপাস খেয়ে কোমর না ভাঙে।আর দুষ্টুমি করবেন, তবে খুব সাবধানে। একটা প্রবাদ আছে, “চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ো ধরা”আশা করি কথা বুঝেছো?
-হুম।
-আর সালমা বানুর সাথে পাঙ্গা নেয়ার প্রয়োজন নেই।আমার মতে উনাকে যথেষ্ট শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-সুস্থ থাকো ভালো থাকো,এইটুকুই প্রার্থনা আল্লাহর কাছে।আর মা তোমাকে যা যা করতে বলেছে যে যে ওষুধ খেতে বলেছে ঠিক মতো কোর্সটা কমপ্লিট করো ইনশাআল্লাহ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঠিক আছে!আর কিছু?
-তাহলে যাই এখন?
-হুম।

ফুল অভ্রর সাথে বেরিয়ে গেলো।সবাইকে বিদায় দিতে লাগলো।অভ্র ছাড়াও আরেক জনের জন্য খারাপ লাগছে সেটা হলো অনু, অনুর সাথে এতো ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে এ কয়দিনে। তারমধ্যে আসার পর থেকে সব সময় ফুলের সাথে থাকা হয়েছে।ফুলকে ছেড়ে যেতে অনুরও খুব কষ্ট লাগছে,ফুলের তো কথায় নেই।অনুর মতো বাকিদেরও খারাপ লাগছে, এতো দিন এখানে থেকে গেলো, কত মজা করেছে সবাই মিলে, আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে এগুলো।

ফুল নিচে এসেই নিয়ানাকে কোলে নিয়ে চুমু খেতে লাগলো,শেষ বেলাই নিয়ানাও ফুলের গালে চুমু খেয়ে দিলো।কিন্তু নিয়ানারও মন খারাপ,সে এতো করে বলেছে তাঁর ছোটো মাকে সাথে করে নিয়ে যাবে কিন্তু কেউ শুনলো না ওর কথা।এতে শুধু অভিমানও না রাগ ও হচ্ছে খুব, যাওয়ার সময় ফুল ছাড়া কারো সাথেই কথা বললো না, অভ্রর কোলে তো গেলোই না কারণ অভ্রকেই সব থেকে বেশি বলেছে ফুলকে সাথে নেয়ার জন্য,কিন্তু তাঁর ছোটো বাবা কথা রাখে নি।

বুকে পাথর রেখে সবাইক হাসি মুখে বিদায় দিলো ফুল,কিন্তু অভ্র স্পষ্ট বুঝতে পারছে ফুলের ভেতর ঝড় বইছে।
-ভালো থেকো হুর।
-আপনিও ভালো থাকবেন।
-আল্লাহ হাফেজ।
অভ্র গাড়িতে উঠে পড়লো,
ফুল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে ফুলের পাশে আকাশ, দুজনে হাত দিয়ে টাটা দিলো ওদের।
-নানা,
-হ্যাঁ বল।
-আমার তো বর চলে যাচ্ছে বলে মন খারাপ,কিন্তু তোমার মনটা মরা মরা লাগছে কেনো গো?
-বোন,
-বলো
-তোর একমাত্র বর চলে গেছে,আর আমার কত্ত গুলো বন্ধু বান্ধুবী চলে গেলো তাতে আমার খারাপ লাগা অস্বাভাবিক কি?

-একদম ই না, রীতিমতো এখন তো তোমার কান্না করলে শুভা পাবে।
যাহা বুঝিলাম করিয়া আকাশ দর্শন, ভাঙিয়া পড়িবে এখন তুমুল বর্ষণ!

-কোন কবিতার চরণ ইহা?
-জানি না, তবে একজনের থেকে ইন্সপায়ার হয়ে কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা দু লাইন আবৃত্তি করার মনোভাব জাগিয়াছিলো,তাই স্বল্প মশলা মাখিয়ে বানিয়ে ফেললাম, কবি জান্নাতুল ফেরদৌস ফুল।
-তোমার সেই ইন্সপিরেশন গুরুটা কি তোমার ঘোড়া বিহীন রাজপুত্রের?

-এই খবরদার টিটকিরি করবে না, আমার রাজপুত্রকে নিয়ে।
-আহারে বোন দিলে লাগে?
-অবশ্যই!

রাস্তায় সারাটা পথ অভ্র ফুলের কথা চিন্তা করতে লাগলো। মেয়েটার মায়ার ঘোর লেগে আছে মনে,চোখ বন্ধ করলেই ফুলের লাজুক প্রতিচ্ছবি, বিষন্ন মুখ, অশ্রু সিক্ত চোখ,অভিমানি ঠোঁট, রাগী দৃষ্টি সব কিছু মনের ভেতর আঁচড় কেটে যাচ্ছে।

রুমে এসেই ফুল অভ্রর মোবাইলটা হাতে নিলো, ওর কথা মতোই গ্যালারীতে ঢুকতেই ফুলের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার অবস্থা।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here