হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-৩০

0
1324

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩০
-কি করবেন আপনি? ভয় পাই আমি ভেবেছেন?
-সেটা সময় হলেই বুঝবে।

কথা শেষ হতে না হতেই রাজ ফুলের হাত ধরে ফেললো,
-কি করছেন কি?হাত ছাড়ুন!এটা কি ধরণের অসভ্যতা? হাত ছাড়ুন বলছি।

-চলো আমার সাথে রাণী, তোমাকে আমার করে নেবো।

ফুল রাজের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। ফুলকে নিয়ে রাজের রুমের দিকে যাওয়া হচ্ছে,আশে পাশে কেউ নেই ফুলের চিৎকার চেঁচামেচি শোনার মতো, রুমের লক খুলে ভেতরে রাজের এক পা ফেলতেই ওর কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো, রাজ থেমে গিয়ে পেছন ঘুরে তাকালো,ফুলের ঠোঁটে হাসি ফুটলো।

অভ্র আলতো হাতে রাজের হাতটা ধরে ওর হাত থেকে ফুলের হাত টা ছাড়ালো,
-তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি বাইরেই আছি।

ফুল হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে রুমে চলে গেলো।

অভ্র শান্ত স্বরে বললো,
-ভাই চলেন আপনার রুমে গিয়ে বসে কথা বলি, আপনার সাথে কিছু কথা আছে। এখান দিয়ে মানুষজন চলাচল করছে। এসব ব্যাপারে পাব্লিক প্লেসে আলোচনা না করা টাই বেটার।

বোকা রাজ অভ্রর কথা মতো স্বায় দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো,রাজের বন্ধুরা অন্য রুমে ছিলো,টাকার গরমের জন্য রাজ একাই এক রুম নিয়ে থাকতো।

রাজ সামনে অভ্র পেছনে,রাজের রুমে ঢুকেই অভ্র দরজা লক করে দিলো,

এবার অভ্র রাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
-কি ভাইয়া আপনার সমস্যা টা কি জানতে পারি?
-আমার কি সমস্যা সেটা তুমি জেনে কি করবে?তুমি কি ডক্টর?
-ডক্টর হই নি এখনো, তবে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আর ভাগ্যে লিখে রাখলে অবশ্যই একদিন ডক্টর হবো।
-তুমি ডক্টর হও বা পাইলট, আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। হাতটা এখনো ধরে আছো কেনো,হাত ছাড়ো ।
-ছাড়ার জন্য তো ধরি নি!
-কি চাও?
-কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে।
-হাত ছাড়ো।
-উত্তর গুলো দিন ছেড়ে দেবো,তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যাবো। আমি প্রথম প্রশ্নটা বলছি,আমার চোখ যদি সত্য দেখে থাকে তাহলে, আজকে সারাদিন আমাদের ফলো করেছেন,আমরা যেখানে যেখানে গিয়েছি যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছি সেখান দিয়েই আপনি আর আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল গিয়েছিলেন।
-যেতেই পারি এটা একটা পাব্লিক ট্যুর স্পট । এতে প্রশ্ন তোলার কি হলো!
-ওহ ওকে, তাহলে আমার বউ কি পাবলিক প্রোডাক্ট যে কেউ হাত ধরতে পারবে, যার তার রুমে টেনে নিয়ে যাবে?আর কোন এংগেল থেকে ওকে এরকম টা মনে হয়?
-আই থিংক তুমিই ওর বি এফ তাই না? একটু আগে ও বলছিলো ও বিবাহিত। এখন তুমি এখন বলছো ও তোমার বউ?হাইরে নিব্বা নিব্বি রে!বাড়িতে জানে এভাবে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে মাস্তি করতে এসেছিস?এসব ফ্রেম ভালুপাসা বেশিদিন টিকবে না, রাজের চোখ যেখানে পড়েছে সেটা রাজ নিজের রাজ্যে নিয়ে ছাড়ে।

-ওহ আই সি!
অভ্র চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে রাজের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিলো গাল বরাবর ঘুষি।রাজের চাপা থেকে দাঁত ছুটে যায় যায় হাল।
যেহেতু রাজ হ্যাংলা পাতলা,আর অভ্রর ফিট বডি,সেহেতু রাজের সামর্থ্য নেই অভ্রর সাথে পাঙ্গা নেয়ার।
বেধড়ক পিটুনি দেয়ার পর অভ্র রাজকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে বসলো,
-কথায় কথায় বাপের টাকার গরম দেখাচ্ছিস, দেখাতেই পারিস।কিন্তু অন্যের বউয়ের গায়ে হাত দেয়া এটা কি ধর্মে সইবে রে?তাও আবার তুই আমার বউয়ের গায়ে টাচ করেছিস।যে মেয়ের জীবনে তার বাপ ভাইয়ের পর তার স্বামী ছাড়া আর কেউ স্পর্শ করেনি সেখানে তুই কোথাকার কোন শেড উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাচ্ছিস। তোর কলিজার ওজন কতো রে? তুই তো এতোক্ষণ ধরে নিজের ব্যাপারে খুব ডেস্ক্রিপশন দিয়ে গেলি,তুই আমাকে চিনিস?হ্যাঁ?
এই তুই কথা বলছিস না কেনো?কথা বল!

তোকে সময় দিলাম,কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি তোকে এই রেসোর্টের ত্রিসীমাতে দেখি, হাড় গুঁড়ো করে ধানমন্ডি পাঠিয়ে দেবো ।

শালা মানুষ চেনো না, সারাপথ তিদিং তিদিং তাই না?

ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে রাজ দাঁত কিড়িমিড়ি করতে করতে উত্তর দিলো
-কাজটা তুই ঠিক করলি না। আমি এখানকার পুলিশকে জানাবো। তারপর দেখবি খেলা। থানায় যত টাকা ঢালতে হয় ঢালবো।
-তোকে যে আমি মেরেছি তার কোনো প্রুভ আছে?এতোটা কাঁচা প্লেয়ার ভাবিস আমাকে? তোকে যে এতো মারলাম তাও কোনো প্রুভ নেই,ফরেন্সিক রিপোর্টেও তোর গায়ে আমার হাত পায়ের ছাপ আসবে না, আমার হাতের দিকে তাকা উইন্টার গ্লাভস পড়া। কিন্তু আমি চাইলে তোর ব্যান্ড আরেকটু ভালো করে বাজাতে পারি, তুই যে আমার বউয়ের সাথে বেয়াদবি গুলো করেছিস সবটুকু আমার ফোনে ভিডিও করা আছে।এখন বল পাঙ্গা নিবি নাকি শুধরাবি?সকাল অব্ধি টাইম দিয়েছিলাম না তোকে?এখন সময় কমে আসলো,ফজরের আজানের আগে বিদায় হবি,আমি যে নামাজ পড়ার জন্য উঠবো তোর অস্তিত্ব যদি অনুভব করি তবে দেখবি কত ধানে কত চাল। বেশি কথা বাড়ালে সময় কমে আসবে আরো।

বেচারা রাজ মার খেয়ে কাত হয়ে পড়ে আছে। অভ্র রুম থেকে বেরিয়ে ফুলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে । ড্রেস চেঞ্জ করে ফুল বেরিয়ে আসতেই দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে,দেখে খুব শান্ত আর ঠান্ডা মেজাজের লাগছে।
-হয়েছে?
ফুল মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো
-হুম।
-চলো তাহলে যাওয়া যাক।
-চলুন।
অভ্রর হাত ধরে চলে যেতে লাগলো।
লিফটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অভ্র খেয়াল করলো ফুল ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে।
-কিছু বলবে?
ঝটপট হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো ফুল।
-বলে ফেলো তাহলে।
-আপনি অই ছেলেটাকে কি মেরেছেন?
-ওকে মারবো কেনো?
-ও আপনার বউয়কে প্রেমের প্রস্থাব দিচ্ছিলো,হাত ধরে টানাটানি করছিলো,বাজে ইনটেশন নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যাচ্ছিলো ।
-তাই বলে ওকে মার দেয়া উচিৎ?ইয়া মাবুদ মনুষ্যত্ব কোথায়!
-ওকে কি বলেছেন?
-তেমন কিছু বলিনি,শুধু হাতে পায়ে ধরে বলে বুঝিয়েছি “ভাই আমার বউয়ের পিছু নিয়েন না দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার ভাই। বউটারে এখনো যত্ন কইরা রাইখা দিছি ভাই, ফুরাইয়া যাবো দেইখা। ভাই আমার ভালোবাসা কাইড়া নিয়েন না ভাই”এই টুকু বলেছি পায়ে ধরে। তারপর ও বললো”ঠিক আছে যাহ ছেড়ে দিলাম তোর বউকে আর পিছু নিবো না, তুই কাঁদিস না ”
-আপনি কান্না করছিলেন?
-পায়ে যখন ধরেছি কান্না তো করতেই হবে।
খানিকটা বিরক্তিকর স্বরে ফুল বলে উঠলো,
-ধেত কি ভাবলাম কি হলো!
-কি ভেবেছিলে তুমি?
-ভেবেছিলাম আপনি ছেলেটাকে ইচ্ছে মতো রাম ধোলায় দেবেন।
-দিলে খুশি হতে?
-খুশি হোতাম কিনা জানি না,তবে ভালো লাগতো।আমার রাজপুত্র হিরোদের কতো ডিসুম ডিসুম করে খলনায়ককে মারবে আর আমি ব্লাশিং দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো আর হাত তালি দেবো।
-তাহলে চলো কয়টা দিয়ে আসি ।
-না থাক ঝামেলা তো মিটেই গেছে, নতুন করে আবার বাঁধানোর দরকার নেই। নেক্সট টাইম ঝামেলা হলে তখন ধরে দেবেন।
-ওকে,এজ ইউর উইশ!

দুজনে আবার সবার সাথে আড্ডার আসরে যোগ দিলো। বারবিকিউ করার বিশেষ বাবুর্চির দায়িত্বে আছে কাব্য অয়ন, ওরা রান্না ভালো জানে মীরা অয়নীও মোটামুটি রান্না বিষয়ক দক্ষ আছে।

রাত দুটোর দিকে বারবিকিউ পার্টি অন্তিম হলো।সবাই যার যার রুমে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে যাচ্ছে,অভ্র রুমে ঢুকতে যেয়েও কিছু একটা ভেবে ফুলদের সাথে ওদের রুমে এসে অনুকে বললো,
-আমি যদি তোদের রুমে ঘুমাই কোনো সমস্যা আছে কি?
-আমাদের সাথে ঘুমাবে?
-হুম,আমি সিংগেল বেডটাতে ঘুমাচ্ছি তোরা দুজন তোদের জায়গায় ঘুমা।
-আমার তো সমস্যা নেই, ফুল তোমার কি সমস্যা আছে?
ফুল উত্তর দিলো,
-আমার আবার কি সমস্যা হবে!

অভ্র কেনো ঘুমাতে চাচ্ছে ওদের সাথে ফুল সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো।রাজ যদি রাতে এসে কোনো গণ্ডগোল পাকায়, সেই রিস্ক নিতে চাচ্ছে না অভ্র। আর অনু ভাবছে হয়তো ফুলের জন্য এখানে ঘুমাতে চাচ্ছে।পরিবেশ টা এত্ত রোম্যান্টিক, ওয়েদারটাও রোম্যান্সের জন্য পারফেক্ট কিন্তু এ বেচারা বেচারীর কোনো মুড ই দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু হাসি ঠাট্টা দুষ্টুমি এসব ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না ওদের মধ্যে। ভাইয়ের প্রতি মায়া হলো খুব।

রুম লক করে দিয়ে অভ্র বিছানাতে যাবে তখন অনু পেছন থেকে বলে উঠলো,
– ভাইয়া তোমরা চাইলে এক সাথে ঘুমাতে পারো।আমি অই বেডে যাচ্ছি।

অভ্র অনুর দিকে ফিরে ফরমাল হাসি দিয়ে বললো,
-শুকরিয়া শাহ্জাদী আপনার হৃদয় অনেক বড়। কিন্তু দরকার নেই।
-ভেবে দেখো,অফার সীমিত সময়ের জন্য,আমি শুয়ে পড়লে কিন্তু উঠবো না।
-তুমি চাইলে এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়তে পারো।
-ওকে।

অনু বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো,ফুল ওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে।অভ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
-অই ঘুমাও,এখনো বসে আছো কেনো?কতো রাত হয়েছে দেখেছো?
-ঘুম আসছে না।
-ঘুম আসছে না?
-না
অভ্র বাকা হাসি দিয়ে বললো,
-তাহলে চলো চা বাগান দিয়ে ঘুরে আসি আজকেও!

ফুল গাল ফুলিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো অত:পর ধপাস করে বালিশের উপর মাথা রেখে ব্ল্যাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

লাইট অফ করে অভ্র শুয়ে পড়ার পর ফুল আবার উঠে বসে।
-শুনুন।
-বলো,
-আমি আপনার কাছে এসে বসি?গল্প করবো,
-ঘুমাও আমার ঘুম পাচ্ছে। অন্যকোনো রাতে সারারাত গল্প করবো।
-কবে ?
-বাসর রাতে ।
-ধুর পঁচা লোক

ফুল আবার শুয়ে পড়লো, অবশ্য ফুলেরও ঘুম পাচ্ছে কিন্তু অভ্র রুমে থাকায় ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না।

কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেলো ফুল।কিন্তু পাশে অনু এখনো ঘুমায় নি, ব্ল্যাংকেটের নিচে ফোনে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত।অভ্র ঘুমিয়েছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।

অনু মন দিয়ে ফোন চালাচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ করে অভ্রর কন্ঠস্বর শুনতে পেলো,
-জানি ঘুমাস নি,এই রুমে আয় তো একটু।

অনু ছিটকে গেলো, অভ্র কাকে রুমে আসতে বললো আবার!
ফোন রেখে নানান কথা চিন্তা করতে লাগলো,
এমন সময় শব্দ হলো দরজার লক খোলার, অনু ব্ল্যাংকেট সরিয়ে দেখে রুমে লাইটও জ্বলছে, দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আকাশ ভেতরে আসছে। এবার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো,
-তবে কি ভাইয়া সব জেনে গেছে?কিন্তু কি করে? কাব্য ভাইয়াও তো বলে নি কাউকে।অতি চালাকের গলায় দড়ি!
হে আল্লাহ এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও।

-বল কি বলবি।
অভ্র ঠান্ডা মেজাজে উত্তর দিলো,
– এতো রাতে এভাবে ফোন টিপলে চোখের ক্ষতি সেটা হয়তো ভালো মতোই জানিস। তাই ফোন রেখে দুজনে সামনা সামনিই কথা বল,তারপর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

অভ্র কত কুল মুডে কথা গুলো বললো,আকাশ অনু দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেলো,কি থেকে কি হলো!অনু উঠে বসলো।
অভ্র বিছানায় শুয়ে ব্ল্যাংকেট নিয়ে মুড়ি দিতে দিতে বললো।
-তোর বোনের সাথে আমি ফোনে কখনো রাত জেগে কথা বলি না ।তাহলে তুই কেনো আমার বোনের সাথে এভাবে রাত জেগে ফোনে কথা বলবি!যা পারলে বাইরে গিয়ে ঘুরে আয়।এভাবে রাত জেগে ফোন টেপা আমার একদম পছন্দ না।

এইটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলো।আকাশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাকরুদ্ধ অবস্থায়, অনু বসে আছে একই রিয়্যাকশনে। আকাশ অনু দুই জনই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। অনুর পাশে থেকে ফুল ব্ল্যাংকেটের ভেতর থেকে বললো,
-এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমাদের লাভস্টোরি আমি ফাঁস করে দিয়েছি।আর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে হবে না।

অনুর চোখ আরো বড় বড় হয়ে গেলো,ফুল ই বা জানলো কিভাবে! অনু ফুলের দিকে ফিরে আবার আকাশের দিকে তাকালো।

সকাল হওয়ার আগেই রাজ বন্ধুদের নিয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে রেসোর্ট ছেড়ে চলে গেছে।
কথায় আছে যত গর্জে ততো বর্ষে না। রাজের ক্ষেত্রেও তেমনই, ছেলেটার মাথায় সমস্যাই আছে হয়তো।

অভ্রর মার খেয়ে ভালোই কাবু হয়েছে রাতে। হুমকিতেও বেশ ভয় পেয়েছে।

সাত দিনের ট্যুর প্ল্যান, দু দিন চলে গেলো বাকি আছে পাঁচ দিন। একে একে প্রায় সব জায়গায় ঘুরতে গেলো ওরা।ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের দ্বীপ, মণিপুরি মিউজিয়াম, বিছানাকান্দি,লালাখাল আরো বিভিন্ন ট্যুর স্পটে ঘুরলো ফিরলো।

দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো।

ফুলের মনটা খুব খারাপ, অভ্রর থেকে দূরে চলে যেতে হবে। অভ্র দুষ্টুমি ফাতরামি যাই করুক,সব কিছুতেই ফুল এনজয় করে। অভ্রর সমস্ত কাজকর্মই ওর কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে।

তবে এ কয়টা দিনে নতুন একটা ব্যাপার আবিষ্কার করেছে অভ্রর ভেতর যে রাগ বলে কোনো বস্তু আছে সেটা ফুলের জানা ছিলো না, কিন্তু এ কয়দিনে অভ্রর ব্যাপারে এ ধারণা টা বদলে গেছে। ঠান্ডা মেজাজে থাকলে চট করে রেগে উঠার জন্য কোনো কারণ লাগে না ,আবার রাগ হাওয়া হতেও সময় লাগে না।

চলে যাবে আজ ব্যাগপত্র গোছানো হচ্ছে, ফুলের মন খারাপ খুব, অভ্র ফুলকে সাহায্য করছে ব্যাগ গোছানোতে।
-এভাবে মন খারাপ করে থেকো না প্লিজ,কলিজাই লাগে।
-……………………
-কথা বলছো না, কোনো উত্তর দিচ্ছো না, এভাবে মুখ ভার করে বসে আছো। দেখতে কি ভালো লাগে আমার?
-…………………

খানিকটা রাগী রাগী ভাবে অভ্র বলে উঠলো,
-অই যে চুপ করে আছে,কথা বলো না কেনো রে ভাই?কি করলে কথা বলবে?

-………………
ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও অভ্রর সামনে প্রকাশ করলো না।অভ্র বুঝতে পারলো কথা গুলো ঝাঁঝালো হয়ে যাচ্ছে। গলার স্বর শান্ত করে, ফুলের হাত ধরে মৃদু স্বরে বললো,
-হুর এভাবে মন মরা হয়ে থেকো না। হুরদের মন খারাপ মানায় না!

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here