হৃদয়ের কোণে পর্ব ০৫

0
1324

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৫)
#নাহার
·
·
·
হালকা হালকা শীত তার উপরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে৷ বেলকনিতে রাখা ছোট ছোট ফুলের গাছ গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে। আকাশ সম্পূর্ণ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। বেলকনির সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানির ঝাপটা চোখে মুখে এসে পড়ছে নিরার। মনকে আর বেধে রাখতে পারছে না। যেভাবেই হোক বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছেই। এর মাঝেই নিরার ফোন বেজে উঠলো। নিরা এখনো বেলকনির সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। তিন চার বার রিং হওয়ার পর খুব বিরক্তি নিয়ে মোবাইল হাতে তুলে নিলো।

মোবাইলের স্ক্রিনে রাফিন নামটা দেখে একটু ভয় পেয়েছে নিরা। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে মোবাইল কানে ধরে কাপা কাপা কণ্ঠে বলে,
— হ্যা..হ্যালো

— এতোক্ষণ কই ছিলে? কয়বার ফোন দিয়েছি দেখেছো?

— সরি খেয়াল করিনি। বৃষ্টি দেখছিলাম তো তাই।

— যেটা বলতে ফোন দিয়েছি শুনো,, আজকে বৃষ্টিতে ভিজবে না। একদমই না। এই বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে সাথে জ্বরও উঠবে তাই রুমে বসে থাকবে।

— হু

রাফিন ফোন কেটে দেয়। নিরা মোবাইল বেডে ছুড়ে মারে। বেলকনির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আবার। মনে মনে ভাবে,
— আচ্ছা আমি বৃষ্টিতে ভিজলে সেটা রাফিন ভাইয়া তো দেখবে না।

মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে সবার চোখ ফাকি দিয়ে নিরা ছাদে চলে যায়। বৃষ্টির পানিতে লাফালাফি করে কিছুক্ষণ। ছাদের মেঝেতে বসে চোখ বন্ধ করে মুখ তুলে আকাশের দিকে ধরে রাখে অনেকক্ষণ। বৃষ্টি থেমে গেছে পাঁচ দশ মিনিট আগে। নিরা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পুরনো কিছু স্মৃতি মনে করে গান ধরে,

–বৃষ্টিতো থেমেছে অনেক আগেই
–ভিজেছি আমি একা,,
–আসতো যদি এই বিভীষিকা
–খুজেও পেতে না আমায়।।।

পেছন থেকে কেউ নিরার গানের পরের লাইনগুলো গাওয়া শুরু করলো,
–মেঘমিলনে চেয়ে রাগ করোনা

নিরা পেছন ফিরে তাকায়। মানুষটিকে দেখে নিরা খুব অবাক হয়। শুধু অবাক নয় অবাকের উচ্চ সীমানায় পৌছে গেছে। সেই মানুষটি গান গেয়ে নিরার দিকে এগিয়ে আসছে।

— মন চায় তোমায়
–আজি রাতে

সেই মানুষটা আর কেউ না তুহিন। নিরার সামনে এসে এক হাত নিরার কোমড়ের পাশে রেলিং-এ রেখেছে। অন্য হাত পকেটে। তুহিনকে দেখে মনে হচ্ছে সেও ভিজেছে। একেবারে কাক ভেজা ভিজেছে।

তুহিনের বুক বরাবর নিরার মুখ। এর আগে এতোটা কাছে এভাবে তুহিন এসে দাঁড়ায়নি। অন্য একরকম অনুভূতি কাজ করছে নিরার ভেতরে। বুকের ভেতরে ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। এ যেনো এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে চলেছে নিরার ভেজা শরীরে।

কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে গেছে। তুহিনের হৃদয়ের হাতুড়ি পেটার প্রতিটা শব্দ নিরা শুনতে পাচ্ছে। তুহিন নিরার দিকে হালকা ঝুকে তখন নিরাও পেছন দিকে ঝুকে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না।

নিরা মনে মনে ভাবছে,
— যে মানুষ কখনো আমার চেহারা দেখতে চাইতো না। আমাকে দেখলেই রেগে যেতো। আমার উপস্থিতি তার কাছে বিরক্তির কারণ ছিলো সে আজ এভাবে এখানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিজ থেকেই। অদ্ভুত।

নিরা একটু শর্ট তাই মাথা উঠিয়ে তুহিনের দিকে তাকায়। তুহিনের নজর পড়ছে না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। তুহিন আরেক হাতে নিরার কপালের ভেজা ছোট চুল গুলো সরিয়ে দেয়। কপালে আঙুল দিয়ে ঘষে জিজ্ঞেস করে,
— এটা কি?

নিরা অস্পষ্ট ভাবেই উত্তর দেয়,
— ব্রণ

— ওহ!

নিরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে তুহিন নিরার অপর পাশে রেলিং-এ হাত রেখে নিরাকে আটকায়। নিরার চোখে চোখ রেখে বলে,
— কালকে যেই ছেলের সাথে দেখেছি এরপর যেনো না দেখি আর।

নিরা একটু চমকায়। ভালো করে তাকায় তুহিনের দিকে। এ কোন তুহিনকে দেখছে নিরা। নিরা অস্পষ্ট ভাবে বলে,
— মানে?

— মানে হচ্ছে যেই ছেলেটার কাধে মাথা রেখে কাল ঘুমিয়েছো তার সাথে যেনো আর না দেখি। ঠিকাছে?

নিরা কিছু বলেনা। তুহিনকে সরিয়ে দিয়ে চলে আসতে চায়। তুহিন নিরার হাত ধরে টান দিয়ে নিরাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে। দুই হাতে নিরার কোমড় ধরে রেখেছে। নিরা আস্তে শব্দ করে,
— আহ

— কি? আমি কিন্তু ব্যাথা দি নি।

— আমার চুলে টান পড়ছে ছাড়ুন।

তুহিন খেয়াল করে নিরার চুল কোমড় ছাড়িয়ে নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। ভেজা চুল পিঠে লেপ্টে আছে। তুহিন কোমড় ধরে টান দেয়ায় নিরার চুলে টান খায়। তুহিন হাতের বাধন আলগা করে৷

তুহিনের প্রতিটা ছোয়ায় নিরা বারবার কেপে কেপে উঠছে। অদ্ভুত এই অনুভূতি। নাম না জানা এক শিহরণ বয়ে যায়৷ নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায়। বুকের ভেতরে ধুকপুকানি ক্রমশ বাড়তে থাকে। তুহিন নিরাকে বলে,
— আমি যদি আরেকবার দেখি তাহলে কিন্তু খারাপ হবে।

— আমি যার কাধেই মাথা রাখি তাতে আপনার কি? আপনার তো কিছু যায় আসার কথা না।

তুহিনকে সরিয়ে দেয় ধাক্কা দিয়ে। আর অল্প কিছুক্ষণ এভাবে তুহিনের বাধনে থাকলে হয়ত নির্ঘাত নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো নিরার। নিরা চলে যেতে চায় আবার। তুহিন নিরার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
— আমার অনেক কিছু। অনেক অনেক অনেক কিছু। তাই আবার বলছি ওই ছেলের সাথে যেনো তোমায় আর না দেখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।

তুহিন কথাটা বলেই হনহনিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। নিরা এখনো থ হয়ে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে।
— কি বলে গেলো তুহিন? হঠাৎ আবার কি হলো তুহিনের?

নিরা চলে আসে রুমে। তাড়াতাড়ি করে কাপড় পালটে নেয়। একটা সাদা টপস পড়ে প্লাজো দিয়ে। টপসটা শার্ট সিস্টেম তবে হাটু পর্যন্ত।

——————————————————————————-

একদিন আগে,
নিরা বিকেলে রুমের মেঝেতে বসে আছে বেডে হেলান দিয়ে। এমন সময় রাফিন আসে নিরার রুমে। নিরা রাফিনকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— কিছু বলবে রাফিন ভাইয়া?

— হ্যাঁ

— বলো

— নিরা ছাদে যাবে? একদিন ঘরে বন্দী হয়ে আছো চলো ছাদ থেকে ঘুরিয়ে আনি তোমায়।

— বাবা দেখলে বকবে।

রাফিন নিরার হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসে।নিরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন এক আঙুল দিয়ে ওর মুখটা উপরে তুলে বলে,
— সব ঠিক আছে এখন। কেউ কিছু বলবে না তোমায় চলো।

— হুঁ

নিরাকে নিয়ে রাফিন ছাদে যায়। একপাশে নিয়ে দাঁড়ায়। ছাদে খুব বাতাস আজ। নিরার চুলগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছে বারবার। রাফিন একটু কাছে এসে নিরার চুলগুলো কানের পাশে গুজে দেয়।

অপর ছাদে তুহিন ছিলো। নিরা তাকে খেয়াল করেনি। নিরাকে রাফিনের সাথে দেখে তুহিনের কেমন যেনো রাগ হচ্ছে। বারবার ফোসফাস করছে রাগে। সে চাইছে না সেদিকে তাকাতে কিন্তু মনটা যেনো নাছোড়বান্দা বারবার সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

নিরার দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছিলো কিন্তু ছাদের এইরকম সুন্দর বাতাস থেকে যেতেও ইচ্ছে করছিলো না। তাই ছাদের এক কোণে বেতের চেয়ারে বসে। রাফিনও নিরার পাশে বসে। নিরাকে জিজ্ঞেস করে,
— কি হয়েছে?

— পা ব্যাথা করছিলো দাঁড়িয়ে থাকতে তাই বসলাম

— দেখি পা

— না না পায়ে হাত দিতে হবে না। ঠিক আছি আমি।

— একদম চুপ। দেখাও আমাকে।

রাফিন নিরার পায়ের কাছে বসে নিরার পা দেখছে। নিরার বাবা সেদিন নিরাকে মারার সময় কিছু বারি তার পায়েও পড়ে। সেদিকে একটু কালো হয়ে আছে। তাই দাঁড়িয়ে থাকায় ব্যাথা করছে। রাফিন উঠে বসে নিরার পাশে। নিরাকে জিজ্ঞেস করে,
— কখন থেকে এই ব্যাথা?

— একটু আগে থেকে

— একদম মিথ্যে বলবে না। নাহলে করলার জুস খাওয়াবো। বলো।

নিরা চোখ বড় বড় করে রাফিনের দিকে তাকায়। দুই তিনটা ঢোক গিলে বলে,
— করলার জুস?

— হ্যাঁ। ( দুষ্টু হাসি দিয়ে)

— ওয়াক থু,,, করলার জুস কত তিতা হয় আপনি জানেন?

— না জানি না। তুমি এখন বললে আর আমি এখন জানলাম।

— কিহ? মিথ্যা বলার জায়গা পান না? ( রাগি ফেস করে)

— হ্যাঁ পাইতো। অনেক জায়গা পাই। এইযে তোমার কাছে মিথ্যা বলার অনেক জায়গা পাই।

— হুহ।

— এখন বলবে?

— হ্যাঁ অনেক আগে থেকেই ব্যাথা ছিলো।

— তো বলোনি কেনো?

— ওষুধ খেতে তিতা লাগে। ভালো লাগে না তাই।

রাফিন রাগিভাব নিয়ে নিরার দিকে তাকায়। নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পায়। রাফিনের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসার চেষ্টা করে,
— হিহিহি

— তোমার হিহি ছুটাচ্ছি আমি দাড়াও।

কথাটা বলে রাফিন তার চেয়ার থেকে উঠে নিরার দিকে আসতেই নিরা উঠে দৌড় দেয়। এদিক সেদিক অনেকক্ষণ দৌড়ায়। এরপরেই নিরাকে ধরে ফেলে রাফিন।

নিরাকে রাফিন এভাবে ধরায় তুহিন রেগে যায়। খুব রেগে যায়। কিন্তু সেটা নিজের ভেতরেই রাখে। তুহিন মনে মনে বলে,
— আমার এতো রাগ হচ্ছে কেনো? তাহলে কি তূর্যের কথাটাই সত্যি? আমি নিরাকে..।

তুহিন একটু হাসে। ডান হাত দিয়ে চুলগুলোকে দাড় করিয়ে দেয়। আবার এলোমেলো করে দেয়। এদিক থেকে ওদিকে হাটে দুই তিনবার। আবার থমকে দাঁড়ায়। ডান হাত নিজের অজান্তেই বুকের বাঁ পাশে চলে যায়। হ্যাঁ, হার্টবিট একদম বেড়ে গেছে তুহিনের। এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে তার। ঠোটে এখনো হাসি। নিরাদের ছাদের দিকে তাকায়।

রাফিন নিরাকে কোমড় জড়িয়ে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। কোলে করে বেতের সোফার কাছে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়। নিজেও বসে। নিরার মাথা টেনে এনে রাফিন নিজের কাধে রাখে। নিরা চোখ বুজে।

এইসব দেখে তুহিনের রাগ উঠে। ভ্রু কুচকে তাকায় তাদের দিকে। মনে মনে বলে,
— নিরা এতোদিন আমার ঘৃণা, অবহেলা, অপমান দেখেছো। কাল থেকে আমার ভালোবাসা দেখবে। Madness Love দেখবে।

তুহিন ছাদ থেকে নেমে চলে যায় রুমে।

রাত ৮:৩০,,,,,
তুহিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। আজ তার মন ভার হয়ে নেই আর। আজ আর বিষাদ গুলো তাকে ছুতে পারছে না। নিরার কথা ভাবছে আর হাসছে। এসময় তূর্য এসে পাশে দাঁড়ায়। তুহিনের সেদিকে খেয়াল নেই। সে নিজের মনে মনে হাসছে। তূর্য ভ্রু কুচকে তাকায় তুহিনের দিকে। বাঁ হাতের কনুই দিয়ে তুহিনের পেটে ঢু মারে। তুহিন পেট ধরে একটু নুইয়ে যায় আর আহ্ করে শব্দ করে। তাকিয়ে দেখে তূর্য কোমড়ে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তুহিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তুহিন সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তূর্যের দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসি দেয়,
— হিহিহি

— তোরে কি মিয়া জ্বিনে ধরছে? এমন কেলাইতেছোস কেন?

— আছে একটা কারণ।

কথাটা বলেই তুহিন আবার হাসে। দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়ায়। তূর্য বারবার গভীর চোখে তুহিনকে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু কোনো কারণ খুজে পেলো না। তুহিন কখনো এভাবে হাসে না। কিন্তু আজ হঠাৎ হাসছে। তূর্য মনে মনে ধরেই নিয়েছে তুহিনকে জ্বিনে ধরেছে। তূর্য এবার রেগে গিয়ে বলে,
— বলবি কি হইছে?

— হ্যাঁ বলবো তো। অনেক কিছু হয়েছে।

কথাটা বলেই তুহিন তূর্যের হাত ধরে টান দেয়। এক হাতে তূর্যের কোমড় ধরে অন্যহাত তূর্যের পেছনে। জোর করে টেনে তূর্যকে রুমে নিয়ে আসে। রুমে এসেই তুহিন কাপল ডান্স শুরু করে তূর্যকে নিয়ে। নিজে নিজেই লালা লা লালা,,, আহা হা আহা।

তূর্য একেবারে বোকা বলে গেলো। তুহিন তূর্যের এক হাত উপরে ধরে ওকে ঘুরায় মাঝে মাঝে নিজেও ঘুরছে। তূর্য রেগে তুহিনকে ধাক্কা দেয়। তুহিন মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে। চিৎ পড়ায় তূর্য ভাবলো এবার সে খুব রেগে যাবে। কিন্তু তূর্যকে অবাক করে দিয়ে তুহিন হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এর মধ্যেই তুহিনের বাবা রুমে এলো। তুহিনকে এভাবে দেখে উনি একবার তুহিনের দিকে একবার তূর্যের দিকে তাকাচ্ছেন। তূর্য বলে,
— এই হারামিরে জ্বিনে ধরছে তাই আজকে কেমন করতাছে দেখো।

তুহিনের বাবা তুহিনে ডাকে,
— তুহিন বাবা কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেনো?

— হয়েছে বাবা অনেক কিছু হয়েছে।

তূর্য তুহিনের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— সেই তখন থেকে একই কথা বলতেছে। আমার মনে হয় পরীর আছড়ে ধরছে। পরীর আছোড় লাগলে এমন হাসে। পরীর আছোর নাকি কুতকুতায় মানুষরে।

তুহিনের বাবা কিছু না বলে চলে গেলেন। তুহিন এবার উঠে দাঁড়ায়। তূর্যকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। তারপর বলে,
— ভাই আমি প্রেমে পড়েছি

তুহিন এতক্ষণ নাচানাচি করে রুমের জিনিসপত্র উলোট পালোট করে দিয়েছে। তূর্য জিনিসপত্র ঠিক করছে আর তুহিনকে জিজ্ঞেস করছে,
— কস কি মিয়া? তা সেই মাইয়াডা কে?

— নিরা।

তুহিন অন্যমনস্ক হয়ে হাসে। তূর্য তখন সেল্ফে বই রাখছিলো। তুহিনের কথা শুনে হাত থেকে বই পড়ে গেলো। তুহিনকে অন্যমনস্ক দেখে হাত থেকে পড়ে যাওয়া বইটা নিয়ে তুহিনের গায়ে ছুড়ে মারলো তূর্য। তুহিন ভ্রু কুচকে তাকায় তুর্যের দিকে। তুহিন বলে,
— কিরে মিয়া এমন করছ কেরে?

— তুই কি কইলি? নিরার প্রেমে পড়ছোস? এতোকিছু করার পর তোর মনে হয় নিরা তোরে এখন মাইনা নিবো?

তুহিন বেডে বসতে বসতে বলে,
— মানিয়ে নেয়ার জন্য যা করতে হয় তাই করবো।

— আমার কাছে ব্যাপারটা এখন যুদ্ধ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। সিচুয়েশন আগের মতো নাই এখন। তুই ওরে ভালোবাসার কথা বললে ওর ভাই সব তোরে জুতা দিয়া মারবে।

— দেখা যাক কি হয়।

তুহিন চুপ করে বসে থাকে বেডে। তূর্য বই গোছানোতে মন দেয়। আবার পেছন ফিরে তাকায়। তুহিনের মুখটা কেমন যেনো চুপসে গেছে। এখন তো হাসছিলো এখন আবার চুপসে গেছে। তূর্যের বুকটা কেপে ওঠে। সে বই গোছানো ফেলে রেখে তুহিনের পাশে এসে বসে। তুহিনকে জিজ্ঞেস করে,
— সত্যি চাস?

— এক মূহুর্তের জন্যে মনে হলো আমি আমার দুনিয়া পেয়ে গেছি। কিন্তু এখন ভয় লাগছে সত্যি যদি নিরা আমাকে ফিরিয়ে দেয়।

তূর্য তুহিনের পাশ ঘেঁষে বসে। তুহিনকে বলে,
— আচ্ছা আমি নাহয় একটু হেল্প করবো। নিরার ভাইদের বুঝাবো।

— কিন্তু নিরা?

— নিরা তোর দায়িত্ব। আর যেই কান্ড রটিয়েছিস সেটা কিভাবে ঠিক করবি?

— ওকে বদনাম যেভাবে করেছি সেভাবে বদনাম থেকে বাচিয়ে নিবো।

— ওকে। একটু আগে যেই জোস দেখলাম সেটা হারিয়ে গেছে তোর থেকে।

— মানে?

তূর্য উঠে দাড়ায়। পা বাড়ায় রুমের বাহিরের দিকে। তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— শুন একটা কথা মনে রাখিস Everything is fair in love and war।

তূর্য চলে যায়। তুহিন আবার হাসে। মনে মনে বলে,
— রেডি হও নিরা আমার পাগলামি দেখার জন্য।
·
·
·
চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here