হৃদয়ের কোণে পর্ব ০৭

0
945

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৭)
#নাহার
·
·
·
সকালের হিম বাতাস জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে। হালকা মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে এসে নিরার মুখের উপর পড়ায় আড়মোড়া ভেঙে ভালোভাবে চোখ মেলে তাকিয়ে একলাফে উঠে বসলো নিরা। নিরা বেডের পাশে দেখলো রাফিন নেই। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো কোথাও নেই রাফিন। নিরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রুমে যায়।

রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে তাকাতেই নিরার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। রাফিন নিরার রুমে ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে হেটে এসে বেডের পাশে দাঁড়ায় নিরা। রাফিন লম্বা হয়ে দুইহাত বুকের উপর ভাজ করে ঘুমিয়ে আছে। রাফিনের সিল্কি এলোমেলো চুল দেখে নিরা চুলের ফাকে আঙুল ভরে দিয়ে আরো এলোমেলো করে দেয়। নিরা হালকা হাসে। নিরা রাফিনের চুল ছুতেই রাফিনের ঘুম ভেঙে যায় তাও ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে।

ড্রেসিং টেবিলের উপর রাফিনের স্টেথোস্কোপ দেখে নিরা বেডের পাশ থেকে সরে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়ে গলায় ঝুলায় তারপর রাফিনের চশমাটা নিয়ে চোখে লাগিয়ে বলে,
— ওমা এটাতে কোনো পাওয়ার নেই। তো পড়ে কেন এটা?

চশমা খুলে স্টেথোস্কোপ এর দুইপাশ কানে লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে নিজে বলে,
— মেয়ে পটানোর ধান্ধা আরকি। বুঝিনা যেন আমি.. হুহ!

নিরা কথাটা বলাই মুখ বাকায়। রাফিন নিরার কথা শুনে চুপিচুপি হাসছে৷ নিরা চশমাটা চোখে লাগিয়ে রাফিনকে নকল করে বলে,
— এই নিরা তোমাকে না বলেছি বৃষ্টিতে না ভিজতে কথা শুনো না কেন আমার?

নিরা হেসে দেয়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার বলে,
— দেখো তো জ্বর উঠছে তোমার। মানা তো শুনো নি। যাও এখন তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে আসো।

— নেক্সট টাইম আমার কথা না শুনলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।

নিরার কথায় রাফিন উঠে বসে। নিরা হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে আয়নায় দেখে রাফিন বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা ভয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। আস্তে করে চশমাটা রেখে স্টেথোস্কোপটা রেখে দিয়ে এক ভৌ দৌড় দিয়ে নিচে চলে আসে। রাফিন সেখানেই হেসে লুটিপুটি হয়ে যাচ্ছে। বেড থেকে নেমে নিজের রুমে চলে আসে।

——————————————————————————–
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা,,,
সবাই আজকে একসাথে বাসায় আছে। মোহাম্মদ আনোয়ার, আফজাল সাহেব এবং মিসেস তানজুম ও মিসেস রেহানা এবং নিরার দাদি একসাথে বসে গল্প করছে। নিরা, কাশফি,কৌশিক এবং মোহাম্মদ আহমাদ ওরা চারজন এক টিম হয়ে ক্যারাম খেলছে। ওরা হচ্ছে টিম-১। ফায়াজ,ফাতেমা, ফাহিম, নাঈম ওরা চারজন এক টিম। ওরা হচ্ছে টিম-২। টিম-১ এ নিরার চোরামির স্বভাব বেশি আর টিম-২ এ ফাহিম আর ফাতেমার কিলাকিলির স্বভাব বেশি।

নিরার মা মিসেস শায়েলা এবং রাফিন রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছে সবার জন্য। মিসেস শায়েলা শুধু হেল্প করছেন আর রাফিন সব নাস্তা বানাচ্ছে। মিসেস শায়েলা রাফিনকে জিজ্ঞেস করে,
— বাহ তুমি খুব ভালো নাস্তা বানাতে পারো। তো এতকিছু শিখলে কিভাবে?

— আন্টি আপনিতো জানেন আমার বাবা মা অস্ট্রেলিয়া থাকে। আমি এখানে যেহেতু হসপিটালে আছি তাই একা ফ্ল্যাট -এ থাকি। সেই সুবাদে রান্না বান্না সবই পারি।

— শুনো এখন থেকে আর একা থাকতে হবে না। আমাদের সাথে একসাথে থাকবে। আর এরকম বিকেলে যখন ফ্রি থাকবে তখন আমি আর তুমি দুইজন মিলে নাস্তা বানাবো। আর মাঝে মাঝে তুমিও রান্না করবে।

দুইজনেই হেসে দেয়। রাফিন মিসেস শায়েলাকে বলে,
— আন্টি আপনি আমাকে তুমি করে না বলে তুই করে বলবেন। তাহলে বেশি আপন আপন লাগে।

রাফিনের রান্নায় মনোযোগ ছিলো। তাই মুখ ফসকে বলে ফেলে,
— আর তাছাড়া আমিতো আপনার মেয়ের জামাই হবো।

রাফিন কথাটা বলেই জিভে কামড় দেয়। মাথা নিচু করে ফেলে। মিসেস শায়েলা কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। তারপর হেসে দেন। রাফিন অবাক হয়। তারপর রাফিনও হাসে৷

এদিকে,,,,,
টিম-১ এ নিরা গোল গোল ঘুরছে মোহাম্মদ আহমাদ এর চারিদিকে আর কৌশিক নিরার পেছনে ছুটছে। নিরা সুযোগ পেলেই কৌশিক এর চুল ধরে টান দিচ্ছে। কৌশিক রেগে বললো,
— তোরে এইজন্য খেলায় নিতে চাই না। চুন্নি তোর চুরি করার স্বভাব। খালি আমার গুটি চুরি করস।

— শুন আমি এখন ভালো খেলা পারি। তাই জেলাস হয়ে বলিস আমি গুটি চুরি করি। বুঝি আমি সব..হুহ

নিরা আবার কৌশিকের চুল টেনে দেয়।কাশফি সোফায় বসে ওদের দুইজনকে দেখছে আর বলছে,
–এই দুইটা ক্যারাম খেলতে বসলেই সাপ বেজির মতো যুদ্ধ করে।

কৌশিক বলে,
— তোর জন্য আজ পর্যন্ত কোনো খেলাই সম্পূর্ণ হয়না৷ তুই শুধু চুরি করে গন্ডোগোল পাকাস। এতই যখন খেলা পারোস আয় আবার প্রথম থেকে খেল।

নিরা আবার কৌশিকের চুল ধরে জোরে টান দিয়ে ঝাকায়। কৌশিক ব্যাথা পেয়ে বসে যায় মাথা ধরে। নিরা তখন বিশ্বজয়ের হাসি দেয়৷

অন্যদিকে টিম-২ এ ফাহিম আর ফাতেমা কিলাকিলি শুরু করেছে। ফাহিম বলে ফাতেমা খেলা পারে না ওকে বাদ দিতে আর ফাতেমা বলে ফাহিম খেলা পারে না ওকে বাদ দিতে। কথা কাটাকাটি করতে করতে দুইটা কিলাকিলি শুরু করে দিয়েছে। নাঈম আর ফায়াজ ওদের থামাতে গিয়ে দুইজনে কয়েকটা কিল খেয়ে চুপচাপ বসে পড়েছে।

মিসেস তানজুম এসে সবগুলাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। সবাই বসে পড়ে৷ রাফিন নিরার সামনে বরাবর বসে। মিসেস রাহেলা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছেন। নিরা খেয়ে তার মাকে বললো,
— মা খাবারটা তো দারুণ হয়েছে। আসলেই তোমার হাতের রান্না অসাধারণ।

— এগুলো আমি রান্না করিনি। রাফিন রান্না করেছে।

নিরা চোরের মতো মুখ করে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন বাম পাশের ভ্রু উঁচিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়। নিরার তখন সকালের কথা মনে পড়ে যায়।লজ্জা পেয়ে নিরা মাথা নিচু করে গপাগপ খেয়েই যাচ্ছে। নিরার এমন কান্ডে রাফিনের হেসে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন চুপ আছে সবাই আছে তাই। সবাই একসাথে গোল করে বসে খাচ্ছে এবং গল্প করছে। রাফিন নিরাকে আরো লজ্জা দেয়ার জন্য মিসেস তানজুমকে জিজ্ঞেস করে,
— আচ্ছা মামি তোমাদের বাড়ির মেয়েরা কেমন রান্না পারে?

রাফিনের কথা শুনে নাঈম হাসতে হাসতে বলে,
— রাফিন ভাই আমি বলছি তোমাকে।

নাঈম কথা বলছে কম হাসছে বেশি। নিরা আর মাথা উপরে তুলছেই না কারণ নিরা সামান্য পানিও গরম করতে পারে না তাই। নাঈম হাসি থামিয়ে বলে,
— এই যে দেখছো বাড়ির বড় মেয়ে ( কাশফিকে দেখিয়ে) উনি আলু ভাজি পারে তাও আধা কাচা থাকে, ডিম ভাজি করে কিন্তু নিচে পুড়ে যায়। উনার গুলো উনি খেয়েই বলে আহ কি স্বাদ। কিন্তু কেউ খেতেই পারে না।

কৌশিক ঘর কাপিয়ে হাসে। কাশফি নাঈমের চুল ধরে টেনে ঝাকি দিয়ে কৌশিকের পাশে বসে ওকে কয়েকটা কিল দেয়। কৌশিক এই সুযোগে ওর বাটির অর্ধেক নাস্তা খেয়ে নেয়৷ নাঈম আবার বলে,
— রাফিন ভাইয়া আমি বিরিয়ানি রান্না পারি।

রাফিন অবাক হয়ে বলে,
— আচ্ছা তাই। তা কে শিখিয়েছে?

— বড় মা থেকে শিখেছি। কৌশিক ভাইয়া বিরিয়ানি ছাড়া বাকি সব রান্না পারে। ফায়াজ এবং ফাহিম অনেক রকমের নাস্তা বানাতে পারে।

ফাহিম ফাতেমার দিকে তাকিয়ে কলার ঝাকি দেয়। ফাতেমা মুখ ভেঙচিয়ে অন্য দিকে তাকায়। ফাহিম দাঁড়িয়ে নাঈমকে বলে,
— নাঈম ভাইয়া তুমি বসো। এবার বাকি দুইটার কথা আমি বলছি।

ফাহিম গলা পরিষ্কার করে ভাষণ দেয়ার মতো করে বলে,
— এইযে দেখছেন শাকচুন্নি ইনি ডিমের খোসা ছাড়া কিছুই ভাজতে জানে না। একবার উনি ডিম ভাজার জন্য কড়াতেই তেল দিয়ে আগুন জোরে বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিম ভেঙে দুইহাত দুর থেকে ডিমটা ছুড়ে মেরেছে কড়াইতে। ডিমের ভেতরের সব নিচে পড়েছে ডিমের খোসা পড়েছে কড়াতে। চামচ দিয়ে নেড়ে চুলা বন্ধ করে দেয়। পড়ে আমরা সবাই গিয়ে দেখি ও ডিমের খোসা ভেজেছে।

সবাই একসাথে হেসে দেয় ফাহিমের কথা শুনে। ফাতেমা রেগে গিয়ে ফাহিমের সাথে কিলাকিলি শুরু করে। নাঈম আর ফায়াজ একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— ভাই যাইস না। তখনের মতো কিল খাবো।

— হো ভাই বসে থাক। ওদের কিলাকিলি দেখি বসে বসে।

রাফিন ধমকে দুইটাকে বসিয়ে দেয়। মিসেস তানজুম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
— তোর মামা একবার আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য চা বানাতে গেছিলো। চা বানাতে গিয়ে হাত পুরে ফেলে। সেদিন আর আমার সামনে আসেনি। রাতেও আসেনি।

মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন,
— আরে এইসব এখন বলার কি দরকার।

সবাই হেসে লুটপাট। কৌশিক ওর বাবার সামনে গিয়ে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আনোয়ার সাহেব বলে,
— হারামজাদা দাড়া দেখাচ্ছি মজা। কৌশিকের কান মলা দেয়।

কাশফি বলে,
— একদম ঠিক আছে। আরো হাসতে থাক।

সবাই এবার মিসেস শায়েলার কাছে আসে। নাঈম মায়ের কানে কানে বলে,
— মা এবার তুমিও কিছু বলো। এটাই সুযোগ বাবাকে পচানোর। আর সুযোগ পাবে না।

মিসেস শায়েলা ছেলের কান মলা দিয়ে বলে,
— বেশি পেকে গেছিস। তোর বাবা আমাকে কখনো কিছু বানিয়ে খাওয়ায় নি।

মোহাম্মদ আফজাল সাহেব ফোসফাস করে বলেন,
— আরে তোমার মনে নেই তোমাকে যে আমি আমের আচার বানিয়ে খাইয়েছিলাম। ভুলে গেলে।

সবাই একসাথে ওউ বলে চেচিয়ে উঠে। মোহাম্মদ আফজাল সাহেব কিছুটা লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে যায়। সবাই এবার মিসেস রেহানার কাছে আসে। কাশফি বলে,
— ওদের কথা কিছু বলতে হবে না। ছোট চাচু এমনিতেই অনেক রোমান্টিক। চাচিকে অনেক কিছু বানিয়ে খাইয়েছে।

মোহাম্মদ আহমাদ সাহেব কলার ঝাকিয়ে বলেন,
— ইয়েস।

মিসেস রেহানা মুচকি হাসে। সবাই এবার আসে দাদির কাছে। সবাই দাদির দিকে তাকিয়ে আছে দেখে। উনি চেচিয়ে বলেন,
— আমার দিকে এমনে চাই রইছিস কেরে?

কৌশিক উঠে দাদির পাশে বসে বলে,
— দাদি একটু বলোনা দাদা কেমন রোমান্টিক ছিলো? তোমাকে কিছু রান্না করে খাওয়াইনি?

নিরার দাদি কৌশিকের কান মলা দেয়। কৌশিক কান ডলতে ডলতে এসে নিজের জায়গায় বসে পড়ে৷ কাশফি হেসে বলে,
— ঠিক হইছে।

কৌশিক কাশফির মাথায় গাট্টা মারে। নিরার দাদি বলে উঠেন,
— তোর দাদায় আমারে একবার আম আইনা খাওয়াইছিলো। তাও পাশের বাড়ি থেইকা চুরি কইরা আনছিলো। আমার আম খাওয়ার অনেক ইচ্ছা জাগছিলো তাই হে চুরি কইরা আম আনছে।

সবাই বলে উঠে,
— হাও রোমান্টিক।

সবাই হাসছে কথা বলছে। নিরা চুপ করে বসে আছে। রাফিন না থাকলে নিরাই বাড়ি মাথায় উঠিয়ে নিতো। কিন্তু রাফিনের জন্য লজ্জা পাচ্ছে তাই চুপচাপ বসে আছে। এমন সময় ফায়াজ উঠে বলে,
— নিরা আপুকে নিয়ে আমি বলছি।

সবাই শুনার জন্য আগ্রহ দেখিয়ে বসে৷ সবচেয়ে কৌতুহল রাফিন। নিরা এখন আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। ফায়াজ বলে,
— নিরা আপু কিছুই করতে পারেনা। ওকে আমরা গিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কিছু খাবে নাকি। যখন বলে হ্যাঁ তখন আমরাই বানিয়ে খাওয়াই। ছোট চাচুও নিরাকে সবসময় কিছু না কিছু বানিয়ে খাওয়ায়। তাই ও এতো অলস।

নিরার ছোট চাচা বলে,
— হ্যাঁ। অলস হোক আর যাই হোক। ওকে এমন ছেলের কাছে বিয়ে দিবো যে আমার মেয়েকে রান্না করে খাওয়াবে।

রাফিন হাসে। মিসেস শায়েলা রাফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কৌশিক রাফিনকে চোখ মারে। রাফিন হেসে চুলগুলো ঠিক করে নেয়। নিরার দিকে তাকায়। নিরা ভয়ে ভয়ে একনজর রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন সাথে সাথেই নিরাকে চোখ টিপ মারে। নিরা আর বসে থাকতে না পেরে উঠে চলে যায় রুমে। সবাই আবার হেসে দেয়।

রাতে যে যার যার মতো খেয়ে ঘুমিয়ে যায়।

——————————————————————————–
সকাল সাড়ে নয়টা,,,
নিরা ওর মায়ের পিছন পিছন বাচ্চাদের মতো ঘুরছে আর ঘ্যানঘ্যান করছে। মিসেস শায়েলা নিরাকে বলে,
— রাফিনকে গিয়ে বল। আমারে জালাইস না। যা এখান থেকে।

নিরা কাদো কাদো হয়ে বলে,
— তোমরা আমার গার্জিয়ান। রাফিন ভাইয়া না। ওকে কেনো জিজ্ঞেস করবো?

নিরা আবার ঘ্যানঘ্যান শুরু করলে নিরার মা রেগে খুন্তি নিয়ে নিরার দিকে এগিয়ে আসলে নিরা দৌড়ে পালায়। কৌশিকের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। কৌশিক অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। এখন বাড়িতে শুধু কৌশিক আর রাফিন আছে। বাকি ভাইবোন সবাই স্কুল আর ভার্সিটিতে চলে গেছে।

কৌশিক নিরাকে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি। নিরা কৌশিককে বলে,
— ভাই আমি কোচিং-এ যেতে চাচ্ছি। আমার তো এবারও এক্সাম দেয়া হয়নি কোথাও ঝামেলার কারণে। তাই কোথায় ভর্তি হবো সেটা নিয়ে কোচিং-এ কথা বলার জন্য যেতে চাচ্ছি। মা বলছে রাফিন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে। তুই একটু গিয়ে জিজ্ঞেস কর।

কৌশিক শান্ত গলায় নিরাকে বলে,
— নিজের কাজ নিজে করা ভালো।

নিরা এবার রেগে যায়। রেগে গিয়ে বলে,
— কৌশিককার বাচ্চা তুই যাবি? নাকি তোরে এখন মাইর দিয়ে লন্ডভন্ড করে দিবো?

কৌশিক বুঝেছে নিরা এখন খুব রেগে আছে। তাই এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। আর নিরা রাগলে উলটা পালটা আজগুবি কথা বলে। নিরা রেগে কৌশিকের কলার ধরে টেনে বলে,
— তোরে কে বলছে এই যমরে ঘরে তুলতে? তুই তুলছিস এখন তুই জিগায় আসবি যা। নাইলে আজকে তোরে আমি কি করবো তুই নিজেও জানোস না।

— আচ্ছা যাচ্ছি কলার ছাড় আগে।

নিরা কলার ছেড়ে সোফায় বসে। এখনো রাগে ফুসছে। নিরা খুব রাগলে ঠোঁট কাপে। কৈশিক অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিরার দিকে তাকিয়ে হিহি করে হেসে এক দৌড়ে তিনতলা থেকে নেমে মেইন ডোর দিয়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় এসে বুক ফুলিয়ে হাটছে কৈশিক। এদিকে নিরা রেগে কৈশিকের বেডে লাথি মেরে পা উঠিয়ে লাফাচ্ছে। আর উপায় না পেয়ে আস্তেধীরে রাফিনের রুমের দিকে পা বাড়ায়। পায়ে ব্যাথা পেয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে নিরা।

নিরা রাফিনের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দেখে রাফিন শার্ট গায়ে দিয়ে ঘড়ি পড়ছে হাতে। এখনো শার্টের বোতাম লাগায়নি। তাওয়াল নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে কারণ একটু আগে গোসল করে বের হয়েছে। নিরা দরজায় হাত রেখে হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন আয়নায় দেখলো নিরা দাঁড়িয়ে অন্যদিকে মুখ করে আছে। মুখে ভয়ের এবং কান্নার ছাপ। রাফিন ঘুরে দাঁড়ায় এবং মুচকি হাসি দেয়। নিরা এখনো খেয়াল করিনি। ও এখনো সিড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
·
·
·
চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here