হৃদয়ের কোণে পর্ব ০৯

0
854

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৯)
#নাহার
·
·
·
দুপুর থেকে বসে বসে নিরা একটা বই পড়ছে। বইয়ের নাম হলো– আমরা কেউ বাসায় নাই ( হুমায়ুন আহমেদ)। বই পড়া শেষে নিরার মাথায় কুবুদ্ধি ঘুরতে লাগলো। বইটাকে মাথার উপর রেখে দুই পা ভাজ করে দুই হাত কোলের উপর ভাজ করে রেখে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার মতো বসে আছে। এমন সময় ফায়াজ এলো নিরার রুমে। নিরাকে এভাবে দেখে ফায়াজ জোরে হেসে দিলো। নিরা এক চোখ হালকা একটু খুলে সামনে তাকালো। আবার চোখ বন্ধ করে ফায়াজকে বললো,
— ফায়াজ ফাহিমকে গিয়ে থাপ্পড় মার।

ফায়াজ হাসি বন্ধ করে সটান হয়ে দাড়িয়ে পড়লো। নিরার কথা ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। ফায়াজকে নিরা আবার বললো,
— ফাহিমকে গিয়ে থাপ্পড় মার।

ফায়াজ কিছুটা ভয় পেলো। কারণ যে বোন মারামারি থেকে দূরে থাকতে বলে, ঝগড়া একদম পছন্দ করে না সে আজকে নিজের মুখে বলছে থাপ্পড় দিতে। তাও আবার ফাহিমকে। ফায়াজ একবার ভয়ার্ত চোখে নিরার দিকে তাকিয়ে ভৌদৌড়ে নিরার মায়ের সামনে গিয়ে বললো,
— চাচি নিরা আপুকে জ্বিনে ধরেছে। দেখো কেমন করছে।

নিরার মা হতভম্ব হয়ে যান ফায়াজের কথা শুনে। প্রথমে ভাবলেন দুষ্টামি করে বললো। পরে ভাবলেন ফায়াজ দুষ্টামি করে না মোটেও। ফাহিম বললে বুঝতাম দুষ্টামি করছে কারণ ফাহিমের রগে রগে দুষ্টামি ফাইজলামি। নিরার মা তখন জানালার পাশে বসে নকশিকাঁথা সেলাই করছিলেন। উনার খুব শখ ছেলেমেয়েদের বাবুগুলো উনার বানানো নকশিকাঁথায় থাকবে তাই এতশত নকশিকাঁথা বুনেন। ফায়াজের কথায় উঠে দাঁড়িয়ে নিরার রুমের দিকে হাটেন। যাওয়ার সময় ফায়াজ বলে,
— চাচি নিরা আপু বই মাথায় নিয়ে বসে আছে। আমাকে বললো ফাহিমকে থাপ্পড় মারতে।

মিসেস শায়েলা একটু কৌতুহল নিয়ে নিরার রুমে ঢুকলেন। তিনিও দেখলেন নিরা বই মাথায় নিয়ে বসে আছে। মিসেস শায়েলা রুমে গিয়ে বললেন,
— নিরা আমি এসব কি শুনছি?

চোখ বন্ধ অবস্থায় জবাব দিলো,
— কি শুনেছো?

— ফায়াজকে নাকি বলেছিস ফাহিমকে থাপ্পড় দিতে।

নিরা হেসে হেসে বললো,
— হ্যাঁ। তোমাকেও বলতে চাই। তুমি গিয়ে বাবার সাথে ঝগড়া করো।

— মানে? ঝগড়া কেন করবো?

নিরা এবার চোখ খুলে মাথার উপর থেকে বইটা নামালো। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
— আহা যাও না। গিয়ে ঝগড়া করো। তারপর জানতে পারবে আমার উদ্দেশ্যে।

নিরা একটা শয়তানি হাসি দিলো। নিরার মা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি এখন এই মেয়েকে ঠিক করতে পারবে না। নিরার মাথায় একবার কিছু চাপলে সেটা না হওয়া পর্যন্ত কারো কথা শুনে না। এর আগে যা করেছে সব সামান্য ব্যাপারে পাগলামি করেছে। আজকে এমন কেন করছে মিসেস শায়েলা বুঝতে পারছেন না। যাই হোক উনার শেষ ভরসা রাফিন।

নিরা রুম থেকে বেরিয়ে বড় চাচির রুমে গেলো। চাচা চাচি দুইজনেই ছিলো রুমে। চাচি খাটে বসে ছিলেন। চাচা সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। নিরা গিয়ে চাচার পাশে বসলো। মোহাম্মদ আনোয়ার সাহেব নিরাকে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
— কিরে মা কিছু বলবি?

— আচ্ছা চাচু তুমি আর চাচি কখনো ঝগড়া করোনি?

মিসেস তানজুম এবং মোহাম্মদ আনোয়ার দুইজনই নিরার দিকে হচকচিয়ে তাকালো। নিরা আবার বললো,
— আচ্ছা যদি ঝগড়া না করো। তাহলে আজকে করো। দেখি কে কেমন ঝগড়া করতে পারে।

নিরার চাচি বললো,
— এখন এইসব কি বলছিস নিরা। ছেলে মেয়ে সবাই বড় হয়ে গেছে। এখন ঝগড়া মানায় না।

— আরে মিছামিছি ঝগড়া করবে। দেখি না একটু প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

তারাও বুঝে গেছেন নিরার পাগলামি ভড় করেছে। তাই এখন যতই বুঝানো হোক ওকে কিছুতেই বুঝানো যাবে না। নিরার চাচা চাচি দুইজনেই হেসে হেসে ঝগড়া করছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে সেটা সিরিয়াস ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে। নিরা সেখান থেকে আস্তে করে কেটে পড়লো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলছে,
— শুরু হয়ে গেছে আমার মিশন। এবার ছোট চাচির পালা। হিহি

নিরা ছোট চাচির রুমে গিয়ে ওর চাচার শার্টে তেল ঢেলে দিলো। সাথে লিপস্টিকও লাগিয়ে দিলো। তারপর বের হয়ে গেলো রুম থেকে। কিছুক্ষণ পরই শুনা গেলো ঝগড়ার আওয়াজ। নিরা আবার শয়তানি হাসি দিলো। এবার গেলো ফাতেমার রুমে। সেখানে গিয়ে দেখলো ফাহিম আর ফাতেমা একসাথে বসে টিভি দেখছে। নিরা ভ্রু কুচকে দুইজনের দিকে তাকায়। হেসে হেসে ওদের পিছনে দাঁড়ায়। আস্তে করে ফাতেমার চুল ধরে টান দেয়। ফাতেমা রেগে ফাহিমের দিকে তাকায়। দুইতিন বার এভাবে চুল টানায় ফাতেমা কষে থাপ্পড় লাগায় ফাহিমকে। এরমধ্যে শুরু হয় ওদের যুদ্ধ। নিরা আবার শয়তানি হাসি হেসে বের হয়ে যায়। এবার গেলো কৈশিকের রুমে। কৈশিক অফিসের কোনো কাজ করছে তাই মনযোগ লেপটপে। নিরা আস্তে করে মোবাইল হাতে নিয়ে আফিয়া মানে কৈশিকের প্রেমিকাকে মেসেজ দিয়ে বলে,
— আমি নতুন কাউকে পেয়েছি। তোমার থেকে সুন্দর। দেখতে চাও? ওর পেছনে ঘুরতে হয়নি নিজ থেকেই অফার দিয়েছে। তোমার পিছনে ঘুরে ঘুরে আমার জীবনটায় তামা হয়ে গেলো।

মেসেজটা দিয়েই ডিলিট করে দিলো। রুম থেকে বের হয়ে আড়ি পেতে ছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের মাঝে শুরু হলো ঝামেলা। নিরা এবার শয়তানি হাসি হেসে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো। বইটাকে উলটা করে ধরে পড়ছে। পায়ের উপর পা তুলে শুয়েছে। এক পা নাচিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে বই পড়ছে।

রাফিন বাসায় নেই হসপিটালে। আসতে আসতে বিকেল বা সন্ধ্যা হয়। রাফিনের অনুপস্থিতিতে নিরা এতো কান্ড রটিয়ে দিলো।

——————————————————————————–
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা,,,
রাফিন খুব ক্লান্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। এক হাতে এপ্রোন এবং অন্য হাতে আইডি কার্ড আর স্টেথোস্কোপ। আজকে ঘরের পরিবেশ কেমন যেনো ভারি ভারি লাগছে। সবাই একজন আরেকজনের সাথে কেমন যেনো আচরণ করছে। রাফিন কিছু বুঝতে পারছে না। সোজা উপরে উঠছে। এমন সময় ফায়াজ দৌড়ে এলো রাফিনের কাছে। রাফিন দাড়ালো। ফায়াজ রাফিনকে বলছে,
— ভাইয়া আজকে জানো কি হয়েছে?

— কি হয়েছে?

— ঘরের যেই পরিবেশ দেখলে এগুলা সব নিরা আপুর কান্ড।

— মানে?

— নিরা আপু সবার মাঝে ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছে। এখন নিজে রুমের মধ্যে আরাম করে শুয়ে আছে। বাবা মা, বড় চাচা চাচি সবার মাঝে ঝগড়া বাধিয়েছে। ফাহিম আর ফাতেমার মাঝে যুদ্ধ বাজিয়েছে। আমাকে তো বলেছে ফাহিমকে গিয়ে থাপ্পড় মারতে।

— হঠাৎ এমন কেন করলো?

— জানি না। এখনো মাথায় কিছু ঘুরছে। নিরা আপু নিজে নিজে হাসছে। আমার মনে হচ্ছে আপু পাগল হয়ে গেছে।

— আচ্ছা আমার কাছে ওষুধ আছে। চিন্তা করো না। তোমার আপুকে আমি ঠিক করে দিবো।

ফায়াজ শান্তির হাসি হেসে চলে গেলো। রাফিনের মেজাজ খারাপ হলো। একেতো ক্লান্ত আবার বাসায় এসে এসব শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নিরার উপর। নিজের রুমে না গিয়ে প্রথমে নিরার রুমে গেলো। রাফিন দেখলো নিরা বই মাথায় নিয়ে বসে আছে। রাফিন বেকুবের মতো নিরার দিকে তাকিয়ে নিরাকে ডাকলো,
— এই নিরা।

নিরা চোখ খুলে রাফিনকে দেখে বললো,
— ডাক্তার আপনি চলে এসেছে?

— এইসব কি শুনছি আমি? সবার মাঝে ঝগড়া কেন বাধিয়েছো?

নিরা স্বাভাবিক ভাবে বসে বললো,
— তাহলে শুনুন। আমি একটা নতুন ধর্ম প্রচারে নেমেছি। এই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার মাঝে ঘৃণা তৈরি করা। এই ধর্মের নাম হচ্ছে রগট ধর্ম। এই ধর্ম তিনটা স্তম্ভের উপর দাড়ানো– ঘৃণা, হিঃসা, বিদ্বেষ। এই ধর্মে সপ্তাহে একটা মন্দ কাজ করতে হয়। নাহলে ধর্মনাশ হবে।

রাফিন বেকুব বনে গেলো। এই মূহুর্তে তার মাথা কাজ করছে না। তবে এইসব সে কোথায় যেনো পড়েছে সেটা বুঝতে পারছে। নিরা আবার বলতে শুরু করলো,
— প্রথমে ঝগড়া বাজিয়েছি। এরপর ঘৃণা তৈরি হবে। তারপরই আমার ধর্ম প্রথমে ঘরে। তারপর প্রতিবেশীদের মাঝে,তারপর পুরো শহরে তারপর পুরো বাংলাদেশে আমার ধর্ম ছড়িয়ে পড়বে৷

নিরা উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় ঘরের বাহিরে। রাফিন জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় যাচ্ছো এখন?

— ধর্ম প্রচারে।

— কার কাছে করবে?

— কাশফি আপু বাদ গেছে। সে আমার বড়। এখন যদি আমি গিয়ে কাশফি আপুকে কয়েকটা দিয়ে আসি তাহলে পুরো ঘরে অশান্তি শুরু হবে। ও আচ্ছা আপনি বাদ আছে। আপনি গিয়ে কৈশিক ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করুন হুম। হিহি আমি যাই।

রাফিনের রাগ এবার চড়ে বসলো। নিরা দরজার সামনে চলে গেছে। এমন সময় রাফিন খুব জোরে ধমক দিয়ে বললো,
— এখন পা যদি রুমের বাইরে পড়ে থাপড়িয়ে দাত সব ফেলে দিবো।

রাফিনের ধমকে নিরা ভয় পায়। তার কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে আসে। তারপর বুঝতে পারে এতক্ষণ তার ধর্মে বয়ান করছিলো তার যমের সাথে। নিরা ভয়ে ভয়ে রাফিনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। রাফিন আবার ধমক দিয়ে বলে,
— আমার সামনে আসো।

নিরা আস্তে-ধীরে রাফিনের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। রাফিন রেগে দাতে দাত চেপে বলে,
— বাসায় যে কান্ড রটিয়েছো এখন ইচ্ছে করছে থাপড়িয়ে কান ফাটিয়ে দি। রাবিস কোথাকার৷

নিরা ভয়ে নিজের হাত দিয়ে দুই গাল চেপে ধরে যাতে রাফিন থাপ্পড় দিতে না পারে। রাফিন জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় পড়েছো এসব?

— বই থেকে। বান্ধুবি দিয়েছিলো। তাই আমিও

— পড়েছো ভালো করেছো। এইসব নিয়ে ড্রামা করতে কে বলেছে?

— আমার মন।

— মাথায় তুলে আছাড় মারবো আর একটা ফালতু কথা বললে। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

— যাতে থাপ্পড় মারতে না পারেন তাই।

এটা বলেই নিরা ভ্যা করে কান্না করে দিলো। নিরার এসব দেখে রাফিনের রাগ উধাও হয়ে গেলো। রাফিন হাসছে শব্দ ছাড়াই৷ যাতে নিরা বুঝতে না পারে। হাসি চেপে ধমক দিয়ে আবার বললো,
— কান্না থামাও নাইলে সত্তিই থাপ্পড় মারবো। আর গাল থেকে হাত নামাও।

নিরা কান্না থামায় কিন্তু গাল থেকে হাত নামায় না। রাফিন জিজ্ঞেস করে,
— গাল থেকে হাত নামাচ্ছো না কেনো?

— এখনিতো বললেন থাপ্পড় মারবেন তাই।

রাফিনের আরো হাসি পায় কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। ধমক দিয়ে বলে,
— পড়ার টেবিলে বসো। আমি আসছি তোমাকে পড়াতে। সারা দুপুর বিকেল তো ড্রামা করেছো। এখন আমি আছি বাসায়। একটা ড্রামা করলেই কানের নিচে দিবো। যাও তাড়াতাড়ি বসো পড়তে।

— আ আ আপনি কেন পড়াবেন?

— চুপ কোনো কথা না। যেটা বলেছি সেটা করো। যাও।

নিরা একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই পড়ার টেবিলে বসে। রাফিন রুম থেকে বের হয়ে হালকা হেসে নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।

নিরা বই খুলে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। ভাবছে আজকের সবকিছু। নিজে নিজেই চমকে উঠে। সবার মাঝে ঝগড়া বাধিয়েছে এখন কিভাবে ঠিক করবে এইসব ভেবে। আবার ভয় পাচ্ছে রাফিনকে। যদি এইসব এর জন্য কানের নিচে মারে তাই৷ নিরা আতকে উঠে আশেপাশে তাকায়৷

শান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে নিরা। মনে মনে বলে,
— কেন যে এই রগট ধর্মকে ঘরেই ফলাতে গেলাম? নিরা আজকে তোর কপালে শনি আছে। কি করবো এখন? রাফিন ভাইয়া আজকে কি করবে আল্লাহ মালুম। আম্মুউউউ আর করবো না পাগলামি প্লিজ।

নিরা উঠে দাঁড়ায়। বাইরে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখে। তারপর এক দৌড়ে দুইতলায় এসে মায়ের রুমে ঢুকে পড়ে। মিসেস শায়েলা শুয়ে ছিলেন। নিরাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। নিরা তার মায়ের কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললো,
— আম্মু শুনো না। তোমার চুল গুলো কেমন শুকিয়ে আছে। তেল লাগিয়ে দি?

— রাফিন এসেছে বাসায়?

নিরা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,
— হু এসেছে।

— যা রুমে গিয়ে পড়তে বয়। আমাকে তেল মারতে হবে না। বুঝতে পেরেছি এখন কেনো এসেছিস?

— আম্মুউউ শুনো না।। আর হবে না এইসব প্লিজ। এইবারের মতো ছেড়ে দাও। প্লিজ।

— আমাকে বলে কি লাভ। ঘরে যে ভেজাল বাধিয়েছিস সেগুলো গিয়ে শুধরা। ওহ শুধরাতে হবে না রাফিন শুধরে দিবে। তুই গিয়ে পড়তে বয়।

নিরা রেগে গিয়ে বললো,
— ওই রাফিনকে তোমরা এতো মাথায় তুলে রেখেছো কেনো? আর ওর ঘর থাকতে ওকে এখানে কেনো এনে রেখেছো?

মিসেস শায়েলা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে রাফিন বলে উঠে,
— সবাই আমাকে ভালোবাসে তাই এখানে রেখে দিয়েছে। তোমার কোনো সমস্যা?

নিরা পেছন ফিরে চমকে উঠে। ভয়ে ভয়ে রাফিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রাফিন দরজা ব্লক করে দাঁড়িয়েছে৷ নিরা রাফিনের হাতের নিচ দিয়ে ফুড়ুৎ। রাফিন মিসেস শায়েলার দিকে তাকালে দুইজন একসাথে ফিক করে হেসে দেয়। রাফিন জিজ্ঞেস করে,
— ঘরে সবার অবস্থা এখন কেমন?

— সব আমি সামলে নিয়েছি। চিন্তা করো না। কফি খাবে?

— হ্যাঁ আন্টি মাথাটা ধরেছে খুব। বাসায় এসে এসব শুনে আরো মাথা ব্যাথা বেড়ে গেছে।

— আচ্ছা তুমি রুমে যাও। নিরাকে পাঠাও আমি কফি বানিয়ে দিচ্ছে। আর এতেও যদি মাথা ব্যাথা না কমে নিরা তো আছে মাথা টিপে দিবে।

কথাটা বলেই মিসেস শায়েলা রান্না ঘরে চলে যায়। রাফিন সেখানে দাঁড়িয়ে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,
— আমার শাশুড়ী মা আমার থেকেও এক কদম এগিয়ে। বাহ বেশ তো।

এদিকে নিরা রাগে ফোসফাস করছে৷ আবার ভয়ও পাচ্ছে। রাগে সিড়ি দিয়ে ধপাস ধপাস শব্দ করে উঠছে। রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। কৌশিকের রুমের দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে ওর রুমের ঢুকে। কৌশিক চিৎ হয়ে শুয়ে প্রেমের আলাপ করছে। নিরা রাগে টেবিলের উপর থেকে চিরুনি নিয়ে কৌশিকের দিকে ছুড়ে মারে। চিরুনি গিয়ে কৌশিকের পায়ে লাগলে কৌশিক আহ করে উঠে বসে। নিরা দেখে বলে,
— কিরে শাকচুন্নি তুই এখানে কেন? আমার প্রেমের বারোটা বাজিয়ে আবার এখানে কি করছ?

— তুই আমার জীবনের তেরোটা বাজালি আর আমি তোকে ছেড়ে দিবো? হাহা কখনোই না।

— আমি কি করলাম?

— এই শুন একদম না জানার ভঙ করবি না। তুই ওই রাফিনকে ঘরে কেন আনলি। এখন এসেই আমার পেছনে লাগছে।

কৌশিক বেডে শুয়ে কাত হয়ে বাম কনুয়ের উপর ভর দিয়ে নিরার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে। নিরা তেড়ে আসতে নিলে পেছন থেকে রাফিন ধমক দিয়ে বলে,
— তোমাকে পড়ার টেবিলে বসতে বলেছি এভাবে ঘুরঘুর করতে বলিনি।

নিরা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বলছে,
— যেখানেই যাই সেখানেই পৌছে যায়। হায় আল্লাহ আমাকে বাচাও।

— কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন?

নিরা কৌশিকের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কৌশিক চোখের ভাষায় বুঝায়, একদম ঠিক হয়েছে। এটা তোর শাস্তি। নিরা চোখের বাসায় কৌশিককে বুঝায়,– তোরে আমি পরে দেখে নিবো।

রাফিনের ধমক খেয়ে নিরা রুমে চলে যায়। কৌশিক হেসে রাফিনকে বলে,
— বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে না বকলেও পারিস। ভয়ে ভয়ে শেষ। শুন মারিস না আমার পিচ্চি বোনটাকে।

— তোর মনে হয় আমি ওরে মারবো? আমাকে ডরাইলে আমি কি করবো?

— ভালাবাসা দে।

— হু তোর কল্লা। তখন ডরে বেহুশ হইয়া যাবে।

— এমনিতেই তোরে আগে থেকেই ভয় পায়। আবার প্রথম দিন এসেই থাপ্পড় মারলি তাই আরো ভয় পায়।

— সেদিন থাপ্পড় টা দরকার ছিলো। আচ্ছা যাই।তুই প্রেম কর।

— হু হু যাও যাও। তুমিও প্রেম প্রেম খেলো।

রাফিন হাসতে হাসতে চলে আসে। নিরার রুমে এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়। নিরা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। রাফিন বেডে সটান হয়ে শুয়ে নিরাকে বললো,
— নিচে যাও কফি নিয়ে আসো।

— আমি যাবো?

— তুমি ছাড়া এখানে আর কে আছে?

— আপনি

রাফিন রেগে তাকায় নিরার দিকে। নিরা রাফিনের রাগি চোখ দেখে উঠে যায়। বের হওয়ার আগে রাফিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে নিরাকে বলে,
— যাচ্ছো ঠিকাছে ২ মিনিটের বেশি দেরি হলে পানির টাঙ্কিতে চুবিয়ে ধরবো।

নিরা দৌড় দেয়। নিচে নামছে আর ভাবছে,
— কেমন মানুষ। আমাকে নাকি পানিতে চুবিয়ে ধরবে। হাহ! ডাক্তার তো তাই এতো পাষাণ। হুহ!

এদিকে রাফিন চোখ বন্ধ করে হাসছে। নিরা দুই মিনিট হওয়ার আগেই কফি নিয়ে এসে হাজির। রাফিনকে কফি দিয়ে নিরা টেবিলে বসে। কফি খাওয়ার পর রাফিন নিরাকে কয়েকটা পড়া দাগিয়ে দিয়ে বের হয়ে যায়। আবার আসে রুমে। দরজার কাছে উলটো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নিরাকে বলে,
— আগেও বলেছি এখন আবার বলছি, আমার সামনে ওড়না পড়ে বসবে। আর জামার গলা এতো বড় রাখবে না। এমনিতেই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। তাই ওয়ার্নিং দিচ্ছি।

রাফিন দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। চাইছে নিরার দিকে ফিরে তাকাতে কিন্তু তাকাচ্ছে না। এদিকে নিরা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিয়েছে। রাফিন ভাবছে একবার ফিরে তাকাবে নিরার দিকে। ওর এই লজ্জামাখা মুখ একবার দেখবে। পরে ভাবলো এখন ফিরলে মেয়েটা লজ্জায় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ধপাস করে লুটিয়ে পড়বে। তাই হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।
·
·
·
চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here