হৃদয়ের কোণে পর্ব ২৮

0
629

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৮)
#নাহার
·
·
·
গোধুলি লগ্ন। সূর্য তার নিজ ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার আগে ভালোবাসা দিয়ে নীল আকাশে হালকা কমলা আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। ভালোই লাগছে এমন দৃশ্য দেখতে। আজ রাফিনের মনটা বেশ ফুরফুরা। এতোদিন পর বাবা মা এসেছে তাই। আবার তারা একসাথেও থাকছে। তাই এই গোধূলি লগ্নে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে। নিরা সাথে থাকলে আরো ভালো লাগতো কিন্তু মেয়েটাকে ডাকার পরেও কেনো যেনো এলো না। মালিহাকে আর রাফিনকে একসাথে দেখে কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে গেছে নিরা।

মালিহা রাফিনের খালাতো বোন। অস্ট্রেলিয়াতেই থাকে তারা। খালার সাথে বেড়াতে এসেছে এখানে। রাফিন বলেছে এটা তার খালাতো বোন কিন্তু নিরা তাও গম্ভীর হয়ে বসে ছিলো। এইসব ভাবতেই ভাবতেই রাফিন তার পিছনে কাউকে অনুভব করে। ভেবেছে নিরা তাই হাসি মুখ করে পেছন ফিরে দেখলো এটা মালিহা। কিছুটা খারাপ লাগলো তার। কিন্তু সেটা মনের মধ্যেই চেপে রেখেছে প্রকাশ করলো না। রাফিন প্রশস্ত হাসি নিয়েই বললো,
— আরে তুই? ছাদে কখন এলি?

— হ্যাঁ আমি। অন্য কাউকে আশা করছিলে বুঝি?

— আরে না তেমনটা না। তো বল তোর খবর।

— আমার খবর ভালোই। তোমার খবর বলো। আর তাছাড়া বিয়ে করছো কবে? বয়স তো আর কম হয়নি।

রাফিন হালকা হাসলো। মাথায় হাত দিয়ে চুল ঝাকালো। একটু লজ্জা লজ্জা ভাব। যা দেখে মালিহা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো রাফিনের দিকে। সে আবার বললো,
— আচ্ছা বিয়ে না হয় হয়েই যাবে। তা তোমার কি কাউকে পছন্দ আছে?

রাফিন চোখের ইশারায় হ্যাঁ বুঝালো। মুচকি হেসে তাকালো আকাশের দিকে। আকাশের বুকে এখন হালকা হালকা আধার নেমে আসছে। মালিহা হাসি আরো প্রশস্ত করে বললো,
— হু ইজ সি?

— বলবো তোকে সময় হোক তারপর।

— তা বিয়ে কবে করবে তাকে?

— খুব শীঘ্রই।

মালিহা আচমকা রাফিনকে জড়িয়ে ধরলো। রাফিন প্রথমে চমকে গেলো। তারপর আশ্চর্য হলো মালিহার কাজে। বারবার ছাড়াতে চেয়েও পারছে না। মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে মালিহা?

— নাহ কিছু না।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে পড়লো রাফিন থেকে। রাফিন লক্ষ করলো মালিহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন তার সামনে গিয়ে দুই হাত ধরে বললো,
— কি হয়েছে মালিহা বল আমাকে। হঠাৎ এমন কান্ড করলি কেনো?

মালিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ গেলো ছাদের গেটের দিকে। মালিহার তাকানোতে রাফিনও তাকালো। দেখলো নিরা দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন এবার দূরে সরে এলো। মনে মনে আশংকা করতে লাগলো নিরা তাদের এভাবে দেখেনিতো? মেয়েটা এমনিতেই অভিমান করে আছে এখন আবার এইসবে আরো বেশি গাল ফুলিয়ে রাখবে। নিরা ধীর পায়ে এগিয়ে এলো রাফিনের দিকে। রাফিমের বাম হাত ধক্ত করে ধরে মালিহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কোনো সমস্যা হয়েছে আপু? কাঁদছেন কেনো?

মালিহা সচকিত হলো। চোখের পানি সাথে সাথে আড়াল করে স্বাভাবিক হয়ে বললো,
— আরে না না কিছু হয়নি। আর আমি কাঁদছি না। রাফিনের সাথে অনেক পরে দেখাতো তাই খুশিতে কান্না চলে এসেছে।

রাফিন যে নিরার হাত শক্ত করে ধরে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা মালিহার নজর এড়ায়নি। নিরা চোখের চাহনি দিয়েই রাফিনকে শাসাচ্ছে। রাফিন চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো “অপরাধ হয়ে গেছে সরি নিরুপাখি।” দুইজনের চোখের ইশারায় এমন কথাবার্তা দেখে মালিহা কিছুটা আচ করলো যে রাফিন এই মেয়েকে পছন্দ করে। তাও সিউর হওয়ার জন্য গলা খাকাড়ি দিলো। দুইজনেই মালিহার দিকে তাকালো। মালিহা কনফিউশান এর ভাব ধরে রাফিনকে জিজ্ঞেস করলো,
— এই আপুটা কে রাফিন?

রাফিনের ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি। নিরার হাত আরেকটু শক্ত করে ধরলো। নিরার চোখে চোখ রেখে বললো,
— আমার নিরুপাখি। আমার লজ্জাবতী! আমার লাজুকলতা! যাকে অনেক কষ্ট জয় করে নিজের করেছি। যাকে অনেককাল ধরে মনের ভেতরে রেখে একটু একটু করে ভালোবেসেছি।

মালিহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
— ইনিই হচ্ছেন আমার প্রাণভোমরা।

নিরা লজ্জা পেলো খুব। মাথা নিচু করে নিলো। রাফিন বেশ মজা নিচ্ছে নিরার এমন লজ্জায় লাল হওয়া চেহারা। মালিহা নিরাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখলো। “নিরার গায়ের রং ধবধবে সাদা। কোমড় বেয়ে নেমে আসা লম্বা সোজা ঘন কালো চুল। চোখে ঘন পাপড়ি, ডাগর চোখ, নাক সামান্য বোচা, গোলাপি ঠোঁট। লম্বায় মালিহা থেকেও খাটো। রাফিনের কাধ অবদি এসে থেমে গেছে। পরনে আসমানী রঙের সুতির সেলোয়ার-কামিজ। লম্বা হাতা ঢিলেঢালা পোষাক৷ ওড়না দিয়ে শরীর ঢাকা।” মালিহা এবার নিজের কথা চিন্তা করলো। এই মেয়ের সাথে তার একেবারেই যায় না। “মালিহা লম্বায় রাফিনের কান পর্যন্ত ছুয়ে যায়, নিরার গায়ের রঙ থেকেও সাদা, সোজা নাক, স্ট্রেট চুল, গায়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস। বলতে গেলে আধুনিকতার ছোয়া আছে। কথাবার্তায় চলাফেরায় খুব স্মার্ট।” মালিহা ভেতরে ভেতরে অহংকারে গর্জে উঠলো। কিন্তু সামনে তা অরকাশ করলো না। নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— হাই আমি মালিহা।

— আসসালামু আলাইকুম। আমি নিরা।

নিরা পরিচয়ের শুরুতে সালাম দেয়ায় মালিহা নাক ছিটকালো। ভেতরে ভেতরে বললো,
— সম্পূর্ণ আনকালচারড গাইয়া একটা মেয়ে।

রাফিন মুগ্ধ নয়নে এখনো চেয়ে আছে নিরার দিকে। নিরার ভদ্রতায় সে আরো মুগ্ধ হলো। এতোদিন ভাবলো এই মেয়ের মাথায় গোবর ছাড়া কিছুই নেই। তবে না আজ কেনো যেনো ভালো লাগছে। হাত ধরে টেনে আরেকটু কাছে নিয়ে এলো। মালিহা এইসব দেখে বললো,
— রাফিন আমি যাচ্ছি। তোমরা কথা বলো।

রাফিন জবাব দিলো তবে নিরার দিকে তাকিয়েই। মালিহার এতে রাগ হলো। হনহন করে হেটে চলে গেলো। “এই মেয়ের সাথে এতো ঘেষাঘেষি একদম ভালো লাগছে না। আমাদের স্মার্ট ফ্যামিলি সাথে স্মার্ট মেয়ে দরকার। আর ইনি একটা আস্ত গাইয়া ভূত পছন্দ করেছে।” মালিহা এইসব বিড়বিড় করে বলতে বলতে নচে নেমে গেলো। ফাহিম হেলেদুলে যাচ্ছিলো নিজের রুমে। কিন্তু মালিহাকে দেখে থেমে গেছে। ফাহিমের কেনো যেনো এই মেয়েকে প্রথন থেকেই পছন্দ হচ্ছে না।

মালিহা চলে যেতেই নিরা রেগে অগ্নীমূর্তী হয়ে রাফিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাফিন ডোন্ট কেয়ার ভাব করে দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতে নিরা আরো রেগে গেলো। কটমট করে বললো,
— এই মেয়ের সাথে কি এতো হ্যাঁ?

— কই কি?

— তাহলে জড়িয়ে ধরতে হবে কেন এই মেয়েকে? আবার আদিখ্যেতা করে তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করছেন মালিহা তোমার কি হয়েছে।

কিছুটা ব্যঙ করে বললো কথাটা। রাফিন সরু চোখে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে দুষ্টামির গাট্টি তৈরি করছে। নিরা এখনো রেগে বকবক করে যাচ্ছে,
— হ্যাঁ এখন তো বলবেনই কিছু না। আমাকে কেন বলবেন। এখন তো আমি কিছু লাগি না। এই শরীর দেখানো মেয়ে চলে এসেছে তো তাই এখন তাকেই ভালো লাগবে৷ তাইতো তাকে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুজুরগুজুর করছিলেন। সব বুঝি আমি মিস্টার রাফিন হোসাইন।

রাফিন একহাতে নিরাকে টেনে কাছে নিয়ে এলো৷ কপালের এলোমেলো চুল সরিয়ে দিচ্ছে। রাফিনের নিঃশ্বাস নিরার মুখের পড়ায় একেবারে চুপ হয়ে গেছে। নিরার দিকে একটু ঝুকে কানে কানে বললো,
— আর ইউ জেলাস?

নিরা হচকচিয়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে রাফিনের দিকে তাকয়ে আছে। রাফিনের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। চোখেও দুষ্টামির রেখা। নিরা দুইকদম পিছিয়ে গেলো। কয়েকটা ঢোক গিলে বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
— না আমি জেলাস হচ্ছি না।

রাফিন দুইহাত পকেটে ভরে গন্ধ নেয়ার ভাব করে চারিদিকে তাকিয়ে বিষ্ময় নিয়ে বললো,
— কোথাও থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।

নিরা আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
— কই আমিতো পাচ্ছি না।

কৌতুহল নিয়ে রাফিনের দিকে তাকালো। বেশ লজ্জায় পড়লো নিরা। রাফিন বাকা হাসছে। কথাটা যে সে নিরাকেই বলেছে নিরা বুঝতেই পারেনি। গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিনও পাশে দাঁড়িয়ে নিরার গাল ফুলানি দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। নিরা এবার ডোন্ট কেয়ার ভাব চেহারায় এনে বললো,
— আমার কিছু যায় আসে না আপনি কাকে জড়িয়ে ধরবেন আর ধরবেন না। সেটা আপনার ব্যাপার। হুহ! যাকে ইচ্ছা ধরুন। যতক্ষণ ইচ্ছা ধরুন। তাতে আমার কি।

— আচ্ছা তাই? ওকে তাহলে তুমি নিচে যাও। মালিহাকে পাঠিয়ে দিও কেমন। তখন তোমার জন্য বেচারি কিছু বলতে পারেনি। জানো মালিহা অনেক রোমান্টিক। ইশ্ যাও যাও তাড়াতাড়ি ওকে পাঠিয়ে দাও।

নিরা রাগে ফুসকে। রাফিনের দিকে একবার তাকালো। মনে হচ্ছে খুব খুশি হবে মালিহাকে পেলে। নিরা রেগে একটু সামনে এগিয়ে গেলো৷ রাফিন ঠোঁট টিপে হাসছে। এক কদম এগিয়ে গিয়ে আবার পেছন ফিরে এক ঝটকায় রাফিনে কলার টেনে ধরলো। রাফিন জানতো নিরা এইরকম কিছু একটা করবে কিন্তু অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— এই এই কি করছো। ছাড়ো আমার কলার। তখন মালিহা কিন্তু রাগ করবে এইসব দেখলে। ছাড়ো ছাড়ো।

নিরা আরেকটু শক্ত করে ধরে বললো,
— একদম খুন করে ফেলবো ওই শাকচুন্নির দিকে তাকালে। চোখ দুইটা খুলে নিবো। তখন আর কাউকেই দেখতে পারবেন না। আর ওই শাকচুন্নিকে তো একদমই না।

— থাক। আমি আমার মনের চোখ দিয়ে দেখবো তাকে।

নিরা আরো রেগে গেলো। দাতে দাত চেপে বললো,
— একদিনেই এতো ভালোবাসা। আর আমার প্রতি এইসব কি হ্যাঁ? এমন কি দেখেছেন আপনি মালিহার মধ্যে?

— ও খুব সুন্দর আর স্মার্ট। দেখোনি কত সুন্দর ড্রেসাপ তার।

রাফিনের মুখে অন্য একটা মেয়ের প্রসংশা শুনে নিরা কলার ছেড়ে দিলো। মুখটা মলিন হয়ে গেলো। চোখে পানি ছলছল করছে। একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। রাফিন দেখছে নিরার মূহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে যাওয়া মায়াবী চেহারা। নিরা মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। কান্না আসছে তার ভিষণ। সে থাকতে কেনো তার প্রিয় মানুষ অন্য একটা মেয়ের দিকে নজর দিবে? মানতে পারছে না কিছুতেই। তাই কান্না আটকে বললো,
— সরি বিরক্ত করার জন্য।

চলে আসতে নিলেই রাফিন আটকায়। নিরা এতোটা কষ্ট পাবে সে ভাবেওনি। একটু মজা করছিলো। নিরা হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইলে রাফিন হাত আরো শক্ত করে ধরে রাখে। নিজেকে আর সামলাতে পারলো না কেদেই দিলো রাফিনের সামনে।

————————————————–

সন্ধ্যার নাস্তা নিরা ছাদে নিয়ে এসেছে। রাফিন বেতের চেয়ারে বসে বসে পা ঢুলাচ্ছে। তার চাওয়া হচ্ছে আজকে আকাশ দেখবে এবং নাস্তা করবে। নিরা কয়েকবার জোর করেছে নিচে আসার জন্য। কিন্তু রাফিন নাছোড়বান্দা সে আজ ছাদেই নাস্তা খাবে।

নাস্তার প্লেট এনে রাফিনের সামনে দাঁড়িয়েছে নিরা। মোবাইলটা রেখে একটা নাস্তার প্লেট হাতে নিলো। অপর পাশের চেয়ারে নিরাও বসেছে। দুজনে চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছে। কিন্তু এই নিরবতা রাফিনের বিরক্ত লাগছে। নিরার প্লেটের দিকে একটু উঁকি দিলো। হঠাৎই ছো মেরে ওর প্লেটের নাস্তা নিয়ে গালে পুরে দিলো রাফিন। আকস্মিক ঘটনায় নিরা থ বনে গেছে। কিছুক্ষণ বেক্কলের মতো তাকিয়ে থেকে আবার খাওয়ায় মন দিলো। কিন্তু রাফিন তো রাফিনই। নাস্তা খাচ্ছে আর পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে নিরার পায়ের তালুতে কাতুকুতু দিচ্ছে। নিরা এবারও বেশ অবাক হলো। বুঝতে পারছে না রাফিন এমন কেন করছে। তাই সে রাফিনের হাতে চিমটি দিলো। রাফিন কিছু না জানার ভান করে মাথা তুলে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— সমস্যা কি? একা পেয়ে মজা নিচ্ছো?

নিরা হা করে তাকিয়ে আছে রাফিনের দিকে। কে মজা নিচ্ছে এখানে? রাফিন নিজেই তো দুষ্টামি করছে। দোষ দিচ্ছে নিরার। নিরা ভ্রু কুচকে রাফিনের হাতে বেশ জোরে আরেকটা চিমটি দেয়। রাফিন ‘আহ্’ শব্দ করে বিরক্তি নিয়ে নিরার দিকে তাকায়। এদিকে নিরার ডোন্ট কেয়ার ভাব।

খাওয়া দাওয়া শেষে নিরা নিচে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। রাফিন গম্ভীর স্বরে বললো,
— দাঁড়ালে কেন?

— আমি রুমে যাচ্ছি।

রাফিন বিড়বিড় করে বললো,
— উফ কি আনরোমান্টিক মেয়ে। কোথায় একটু কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিবে সেটা না করে যত্তসব।

— কি হলো। কি বলছেন জোরে বলুন। আর আজকে এতো পাগলামি করছেন কেনো আপনি?

রাফিন উঠে দাঁড়িয়ে নিরার দুইহাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
— এই মেয়ে তুমি কি জানো একজন পাগল প্রেমিকের মহাঔষধ তার প্রেমিকা।

— মানে।

— ইশ্ তোমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে মন চায়।

নিরা একটু ঘাবড়ে গেলো। রাফিন সুন্দর করে বললো,
— তোমার গোবর মাথায় কিছু ঢুকবে না। ননসেন্স।

নিরা একটু ভেবে বকার মতো প্রশ্ন করলো,
— তাহলে যদি আমি মরে যাই তখন?

রাফিন শক্ত হয়ে জমে গেলো। নিরাকে ছাড়া তার জীবনটা কল্পনা করতে শুরু করলো। সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভাবনা মাথায় চলে এসেছে। সে সম্পূর্ণ বুঝতে পারছে নিরা যখন তুহিনের সাথে সম্পর্কে ছিলো তখন তার দিনগুলো কেমন কেটেছে। তবুও চোখে দেখেছে নিরাকে এটাতেও একটু শান্তি চিলো। কিন্তু মরে যাবে মানে আর কোনোদিন দেখা হবে না। আর কোনোদিন চোখের তৃষ্ণা মিটাতে সম্ভব হবে না তার। রাফিন ধপ করে বসে পরে মেঝেতে। নিরা ভয় পেয়ে যায়। রাফিনের মুখের হাসি উধাও হয়ে একরাশ বিষন্নতা এসে ভর করেছে মনের আকাশে। নিরা রাফিনের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
— এই ডাক্তার কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ কি হলো আপনার?

এদিকে কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে রাফিন। ঘনঘন শ্বাস উঠা নামা করছে। ঘাম ছুটে গেছে। একহাতে নিরার হাতের কবজি শক্ত করে ধরে রেখেছে। এমন করায় নিরা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। হঠাৎ কি হলো এই ভেবে। এতক্ষণ তো স্বাভাবিক আচরণ করছিলো। দুষ্টামি করছিলো। এখন হঠাৎ কি হলো। নিরা বারবার রাফিনকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করছে ‘কি হয়েছে আপনার? কথা বলুন। খারাপ লাগছে? আমি বাসার সবাইকে ডেকে আনি।’ কিন্তু রাফিন নিরার হাত ছাড়ছেই না।

এবার রাগ চড়া দিয়ে উঠলো রাফিনের। নিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখে পানি। আরো রেগে গেছে। একটানে নিরার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
— দেখ কত জোড়ে বিট করছে আমার হার্ট। শুনতে পাচ্ছিস? এই তুই আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলিস কেনো বারবার? আমার সাথে থাকতে তোর কষ্ট হয় নাকি আমাকে সহ্য হয়না বল?

নিরার মাথা উঠিয়ে গলা চেপে ধরে বললো,
— আর কোনোদিন যদি মরার কথা বলিস তো তোকে এভাবে গলা টিপে মেরে ফেলবো। তারপর আমি নিজে মরে যাবো। ননসেন্স কোথাকার।

আবার টেনে এনে মাথাটা বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরেছে। নিরা নিরব দর্শক ছিলো মাত্র। রাফিনকে এইরকম করতে কখনো দেখেনি সে। এইরকম পাগলামি করতে আগে একবারো দেখেনি। উন্মাদ প্রেমিকের মতো আচরণ করছে।

নিরা চোখ পাকিয়ে রাফিনকে দেখছে। এখনো রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে। ‘আমিতো শুধু জানতে চেয়েছি ডাক্তার সাহেব। কিন্তু আপনি এভাবে রেগে গেলেন কেনো? আমিতো আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। হঠাৎ কি হলো আপনার ওই একটা কথা শুনে?’ মনে মনে বললো নিরা কথাগুলো। মুখ ফুটে বলেনি কারণ রাফিন এখনো বেশ রেগে আছে।

——————–
সম্ভবত এখন রাতের সাড়ে এগারোটা বাজে। সেই যে সন্ধ্যায় ছাদে এসেছে এখনো রুমে যায়নি দুইজন। না রাফিন গেছে না সে নিরাকে যেতে দিয়েছে। শক্ত করে চেপে ধরে কোলের উপর বসিয়ে রেখেছে। নিরা বেশ কিছুক্ষণ দাপাদাপি করেছে ছুটার জন্য কিন্তু রাফিন রেগে বলেছে,
— স্টপ ইট ননসেন্স আদারওয়াইজ আই উইল কিস ইউর লিপ এন্ড নেক।

ব্যাস এতটুকুতেই নিরার হাওয়া টাইট হয়ে গেছে। চুপ করে রাফিনের বুকে পিঠ লাগিয়ে বসে আছে। এদিকে রাফিন মহাব্যস্ত। মোবাইলে কিসব কাজ করছে। নিরা রাগে দুঃখে নিজের হাতে নিজে খামছি মেরে নিঃশব্দে কেদে কেটে একাকার করে ফেলেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর রাফিন নিরাকে ডাকলো। কিন্তু ওর কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। খেয়াল করে দেখলো নিরা এখানেই ঘুমিয়ে গেছে। রাফিনের বুকে হেলান দিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। রাফিন মোবাইল রেখে নিরার দিকে ভালোমতো তাকালো। ঘুমন্ত নিরাকে সে কখনোই দেখেনি তাই আজ সে মন ভরে দেখছে। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। ঘুমের মধ্যেই মুখ নাড়াচাড়া করতে দেখে রাফিন ফিসফিস করে বললো,
— ঘুমের মধ্যে কিছু খাও নাকি তুমি?

উত্তরে নিরা একটু নড়েচড়ে উঠলো। আবারো চুপ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাফিন নিরার নাকে নাক ঘষে ওকে কোলে তুলে উঠে দাঁড়ায়। পা বাড়ায় নিচে। ছাদের গেটের আড়াল থেকে এই দৃশ্য দেখে রাগে ফুসকে ফুসতে নিচে নেমে গেছে কেউ।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here