#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৯)
#নাহার
·
·
·
বলতে বলতে কৌশিকের গায়ে হলুদের দিন চলে এসেছে। সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত। বাড়ির ছেলেরা তো আরো ব্যস্ত। গায়ে হলুদের স্টেজ ছাদে বানানো হয়েছে। লাইটিং করা, গাদা ফুল দিয়ে স্টেজ সাজানো সবই হয়েছে। সম্পূর্ণ বাড়ি গাদা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। সারা বাড়ি ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনরা সবাই চলে এসেছে। নিরার তিন ফুফু, ফুফা, তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে সহ আরো অনেক আত্মীয় স্বজনরা আছে। সারা বাড়ি মানুষের গিজগিজ করছে।
মিসেস শায়েলা এবং মিসেস তানজুম রান্না ঘরে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। রাফিনের মা, নিরার ফুফুরা এবং নিরার দাদি তারা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে। বাকি সব কাজিন ভাই বোন ছাদে কাজ করছে আর দুষ্টামি করছে। মিসেস শায়েলা বেশ কিছুক্ষণ একধ্যানে কিছু ভাবলেন। তারপর গলা খাকাড়ি দিয়ে বড় জা এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ভাবি তোমাকে কিছু বলতে চাইছিলাম। যদি কিছু মনে না করো
মিসেস শায়েলা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিসেস তানজুম বললেন,
— অনুমতি নিয়ে কথা বলা কোনদিন থেকে শুরু করলি মেঝো? আমি তোর বোনের মতোই। হ্যাঁ মানছি বয়সে একটু বুড়ি তাই বলে এতোটাও মুরব্বি হয়ে যায়নি। বোন ভাবতে হবে না প্রাণের বান্ধুবি ভেবে নির্দিধায় সব বল আমাকে।
মিসেস শায়েলা কিছুক্ষণ হাসলেন। আসলেই ভুলে গেছিলো তারা দুজন যে অনেক ভালো বান্ধুবি। ছেলেমেয়ে হওয়ার আগে কতশত গল্প করেছেন তারা। এরমধ্যে ছোট জা এসে তাদের সাথে জোগ দিলো। মিসেস শায়েলা একটু ইতস্তত করলেন। তারপর বলেই ফেললেন,
— ভাবি আমি আসলে নিরা আর রাফিনের কথা ভাবছিলাম। তাদের দুজনের কথা যদি সবাইকে জানাই
মিসেস তানজুমের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলো না নিরার মা। ছোট জাও চুপ হয়ে গেলো। বড় ভাবি কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা ভেবে ছোট জা একটু চিন্তিত। কারণ তিনিও চান রাফিন আর নিরার বিয়ে হোক। মিসেস শায়েলা আর কথা না বাড়িয়ে কাজে মন দিলো। ছোট জাও কাজে মন দিলো। মিসেস তানজুম হাসতে হাসতে বললেন,
— আমিও সেটাই ভাবছিলাম। নিরা আর রাফিনের বিয়ে দিলে বেশ ভালোই হয়। মেঝো তুই হবি আমার বেয়ান।
তিনজনেই হেসে দিলো। ছোট জা এসে নিরার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ভাবি ওদের দুজনকে পাশাপাশি যা মানায় না। আমার তো আমাদের সেই বিয়ের আগের কথা মনে পড়ে যায়। রাফিন যখন নিরাকে শাসন করে আমার তখন আহমাদের শাসনের কথা মনে পড়ে যায়।
বাকি বড় দুই জা একটু কেশে ঠোঁট টিপে হাসছে। ছোট বউ মাথা চুলকে অন্যকাজ করতে শুরু করলো। মিসেস তানজুম বললেন,
— কৌশিকের বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই আমি ভাইয়া আর ভাবিকে বললো। তারাও রাজি না হয়ে যাবে কই। ছেলে মেয়ে দুইজনই রাজি তো বাবা মায়ের দিমত করে লাভ কি।
মিসেস শায়েলা বললেন,
— হ্যাঁ তাই ভাবছি। আসলে রাফিনকে খুব ভরসা করতে পারি। যেকোনো পরিস্থিতিতে সে নিরাকে সামলে নেয়। আমার মেয়ের যে বাচ্চামি স্বভাব বেশি সেটা রাফিনই খুব যত্ন করে সামলে নেয়। নিরাও খুব মানে রাফিনকে। তাইতো চাইছি তাদের দুজনকে এক করে দিতে।
ছোট জা এই ফাকে বললো,
— বড় ভাবি আমিও কিন্তু তোমার বেয়ান হয়ে যাবো। ছোট বেয়ান। তখন আমাকে আপ্পায়ন করবে ঠিক মতো। বুঝলে।
এর মাঝে কৌশিক এসে উপস্থিত হয়। নিরার মাকে শিনা দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
— বাহ বাহ আমার বিয়ে হচ্ছে তাই এই সুযোগে তোমার ওই আধা পাগল মেয়েরও লাইন করিয়ে দিচ্ছো। একেই বলে বাঙালি বাবা মা।
মিসেস তানজুম কৌশিকের মাথায় চামচ দিয়ে হালকা বারি মারে। কৌশিক আহ করে শব্দ করে মাথায় হাত বুলিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। মিসেস শায়েলা বললেন,
— বেশি পাকনামি করলে বিয়েটা আরো এক সপ্তাহ পিছানো হবে।
কৌশিক এবার চুপ হয়ে গেলো। আস্তে করে বললো,
— তোমার মেয়েকে বিয়ে দাও আমার কি। প্লিজ বিয়ে নিয়ে কোনো কিছু করো না চাচি। প্লিজ
হাত জোর করে কান্নার একটিং করে বের হয়ে যায় কৌশিক। এদিকে রান্নাঘরে তিন জায়ের হাসির রোল পড়ে। এই তিন জাকে দেখে যেকেউ বলবে তারা তিনজন বোন আর খুব ভালো বান্ধুবি।
————————————————————
নিরা নিজের বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে বসে চিপস খাচ্ছে। প্রভা বসে গল্পের বই পড়ছে। নুপুর নিরার পাশে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল টিপছে। একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে পটানোর ট্রায় করছে। আর ঝুমুর এদিক সেদিক হাটাহাটি করছে আর গভীর কিছু চিন্তা করছে। নিরা চিপসের প্যাকেট থেকে একটা চিপস হাতে নিয়ে ঝুমুরকে বললো,
— আরে বনু টেনশন করিস না ওই মালিহা শাকচুন্নি চলে গেছে দুদিন আগে।
ঝুমুর নিরার সামনে বসে ওর হাত থেকে চিপসটা নিয়ে গালে পুরে দিলো। মচমচ শব্দ করে চিপস চিবিয়ে খেয়ে বললো,
— ওই শাকচুন্নি একেবারে চলে গেছে তার গ্যারান্টি কি? আবার যদি রাফিন জিজুর জীবনে ফিরে আসে তখন?
নিরা ঝুমুরের হাতে খামচি দিয়ে বললো,
— তুই আমার চিপস খাইলি কেনো?
ঝুমুর ব্যাঙ করে বললো,
— তোমার ঢং দেখে গা জ্বলে যায়। তেতুল গাছের পেত্নী তোমার উনার ঘাড়ে চেপেছে আর তিনি নিশ্চিন্তে বসে বসে চিপস খাচ্ছে। হুহ!
ঝুমুর সোফায় বসে পরে। নুপুর পা দুলিয়ে মোবাইল টিপছে। মোবাইলের দিকে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করলো,
— এডা তো তোর রুম না। তুই এই রুমে থাকোস কে? এডা না রাফিন ভাইয়ের রুম?
নিরা ছোট্ট করে বললো,
— হুম।
— তাইলে?
— উনি নিজেই আমাকে এই রুমে দিয়ে সে আমার রুম দখল করেছে।
— কাহিনি কি?
— আরে সেদিন তুহিন….
নিরা চুপ করে বসে আছে। ভুল করে ফেলেছে এই নাম উচ্চারণ করে। তিনজনকে সেদিনের ঘটনার কিছু জানায় নি নিরা। এখন তাকে এসবের জন্য উত্তম মধ্যম খেতে হবে। তাই মিথ্যে হাসি দিয়ে চিপস গালে পুরে দিলো। প্রভা, নুপুর, ঝুমুর নিরার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। নিরাকে এতোটা ভাবেলশহীন দেখে রেগে গেলো তিনজনই। নুপুর মোবাইল ফেলে নিরার গা ঘেষে বসেছে। প্রভা বই ফেলে নিরার সামনে বসে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। ঝুমুর নিরার হাত থেকে একটানে চিপসের প্যাকেট নিয়ে নিলো। সবঠিক আছে কিন্তু প্রভার তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকায় নিরার অস্বস্তি হচ্ছে। প্রভা এভাবে তাকিয়ে থাকলে সাজানো গুছানো মিথ্যে কথাগলোও এলোমেলো হয়ে জট পাকিয়ে যায়। ঝুমুর বললো,
— বাঁচতে চাইলে মুখ খুলুন।
নিরা আসতে করে বললো,
— আমার চিপস।
প্রভা ধমকে বললো,
— রাখ নিয়া। আগে বল তুই আমাদের থেকে কি লুকাইছিস।
— ক কই। ককিছু না।
— তুই কথা বলার সময় তখনই তোতলাস যখন তুই মিথ্যা বলস। বইলা ফেল নাইলে চটকানি দিমু।
নিরা অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো। নুপুর বললো,
— আমরা বহুত পাষাণ। এমন কইরা চাইয়া থাকলে জীবনেও ছাড় পাবি না। জানস না বন্ধুবান্ধুবি অনেক হারামি টাইপস হয়। আমরা এমনই হারামি। বলো বাছা।
নিরা সব খুলে বললো প্রথম থেকে সবকিছু। প্রভা অবাকের চেয়ে বেশি অবাক হলো। নুপুর হালকা ভাবে একটা মারলো নিরাকে। ঝুমুর রাগে ফোসফাস করে বললো,
— ওই হারানির বাচ্চা এতো নির্লজ্জ কেন আমিতো এডাই বুঝি না। কোন মুখে আবার তোর সামনে আসে। আবার কিনা খালি ঘরে আসে। ছিহ!
প্রভা শুধু চেয়ে রইলো নিরার দিকে। নিরা অপরাধীর মতো মাথা নামিয়ে বসে আছে। প্রভা থাবড়া মেরে বললো,
— আগে বল তুই হারামিডা আমাদের কিছু জানাইলি না কেন। তাইলে তো ওর এতো সাহস বাড়তো না। আর তুই কি ভেবে চুপ ছিলি? মানে কি এসবের?
নিরা নাক টেনে শ্বাস নিচ্ছে। মানে বুঝতে পারছে নিরা কাঁদছে। নুপুর বললো,
— থাক বাদ দে। ওর কোনো সমস্যা হয় নাই এটাই বেশি।
ঝুমুর এখনো রেগে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
— তুই কেমনে চুপ কইরা আছিলি। আমি হইলে ঘরে গিয়া জুতা পিডানি দিতাম। জানোছ আমার খালাতো ভাই একবার ওড়না ধরে টান দিছে একদম জুতা দিয়া পিডাইছি ইচ্ছা মতো। আর কোনোদিন সামনে আসে নাই। তুই গাধিরাম চুপ আছিলি কেন?
নিরা আস্তে করে বললো,
— সরি।
প্রভা বললো,
— দেখ তোর যদি ক্ষতি হয় আমাদের কিছুই হবে না। নাম খারাপ হলেও তোরই হবে আমাদের না। আর তোকে শাসন করছি এখানে আমাদের কোনো সার্থও নেই। শাসন করি কারণ তোকে আমরা বোনের চোখে দেখি। তোর কোনো বিপদ হোক আমরা কেউই চাই না। নিরা তুই অনার্সে পড়িস কিন্তু তোর মনটা এখনো বাচ্চাদের মতোই ছোট। একদম পরিষ্কার তোর মন। আর খুব বোকা তুই তাই তোকে আমরা শাসন করি। কারণ আমরা তোকে খুব ভালোবাসি।
নিরা খুশিতে কেঁদে দিলো। প্রভা জড়িয়ে ধরে নিরাকে। নুপুরও এসে জড়িয়ে ধরে। ঝুমুর বললো,
— আমি চাইয়া আছি কে? আমিও আসি।
ঝুমুরও জড়িয়ে ধরে। চারজন একসাথে হেসে দেয়। নিরা মনে মনে বললো,
— ডাক্তার আপনি ঠিকই বলেছেন, যে আমার বান্ধুবি হবে সে আমার সবকিছু মেনে নিয়ে বান্ধুবি হবে। আমার ভুল শুধরে দিবে। অন্যায় করলে শাসন করবে। হ্যাঁ এরা তিনজন ঠিক এমনই। নিরা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিনজনকে।
চারজনই স্বাভাবিক হলো। নিরা এবার বললো,
— আরে ইয়ার আসল কথাতো বলাই হয়নি।
ঝুমুর চেঁচিয়ে বললো,
— আবার কি লুকাইলি।
— আরে আমার ব্যাপারে না।
— তো?
— কাশফি আপুর ব্যাপারে।
— কি হইছে আপুর?
— কাশফি আপু তূর্য ভাইয়াকে ভালোবাসে। আর তূর্য ভাইয়া তুহিনের ভাই।
— ওরে কি সাংঘাতিক।
চারজনেই খুব চিন্তিত। প্রভা বললো,
— তূর্যও কি তুহিনের মতো?
— আমার তো মনে হয় না। তুহিনের মতো হইলে আপু কোনোদিনই পাত্তা দিতো না। আপু এখন অনেক বদলে গেছে রে। রুম থেকেই বের হয়না। সবসময় মনমরা হয়ে বসে থাকে।
— কিন্তু তূর্য ভাই ছাড়লো কেন?
— জানি না।
নুপুর বললো,
— তুই কেউরে বলস নাই একথা?
— উনাকে বলতে চেয়েছি কিন্তু সুযোগ পাইনি। কৌশিককার তো দেখাই যায়না। বদমাইস ছেলে এখন কই যে থাকে আল্লাহ মালুম।
— হুম।
————————————————————
দুপুরের দিকে কৌশিকের সব বন্ধুরা এসে হাজির হয়েছে। সবাই লুঙি পড়েছে। গায়ে সেন্টু গেঞ্জি। মেয়েরা সবাই হলুদ শাড়ি পড়েছে। নিরাও হলুদ শাড়ি পড়েছে তবে ঢালা শাড়ি। হাতে কয়েকটা হলুদ কাচের চূড়ি আর চোখে কাজল দিয়েছে। চুলে বেণুনি করেছে। রাফিনও সবার সাথে মিলিয়ে লুঙি আর সেন্টু গেঞ্জি পড়েছে। ছাদে বড় বড় সাউন্ড বক্স বসানো হয়েছে। মা চাচিরাও হলুদ শাড়ি আর হাতে হলুদ কাচের চূড়ি পড়েছে। বাবা চাচারাও লুঙি আর সেন্টু গেঞ্জি গায়ে। ছেলেরা সব একসাথে দাঁড়ালে মনে হবে লুঙি উৎসব হচ্ছে এখানে।
সাউন্ড বক্সে গান ছাড়া হয়েছে। সবাই এক এক করে হলুদ লাগিয়ে দিলো কৌশিককে। ভাই বোন সবাই হলুদ লাগালো। কাশফি এলো ছাদে। চোখের নিচে কালি, মুখটা মলিন। তাও মিথ্যে হাসি নিয়ে কৌশিককের গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো। চলে যেতে নিলেই কৌশিক কাশফিকে ধরে পাশে বসায়। কৌশিক কিছুটা বুঝতে পারছে কাশফির সমস্যা। তাই কিছু হলুদ কাশফির মুখে লাগাতে লাগাতে ফিসফিস করে বললো,
— আমার বিয়েটা শেষ হোক তোর ঝামেলাও মিটিয়ে দেবো। প্লিজ উদাসীন থাকিস না বোন। তোর উদাসিতা মেনে নিতে পারছি না। আমার সেই চঞ্চল, কথায় কথায় ঝগড়া করা, ধুমধাম কিল বসিয়ে দেয়া বোনটাকে চাই।
কাশফি ছলছল চোখে কৌশিকের দিকে তাকায়। কৌশিককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে সবাই। নিরার ঠোঁটে হাসির রেখা। কৌশিক চেঁচিয়ে বললো,
— জানতাম তুই পেত্নীটা আমার গায়ে হলুদ খারাপ করবি। হুশ!
কাশফি রেগে তাকায় কৌশিকের দিকে। হাতে হলুদ নিয়ে কৌশিকের সারা মুখে লেপ্টে দেয়। কৌশিক বোকার মতো চেয়ে আছে কাশফির দিকে। কাশফি মুখ ভেঙচিয়ে উঠে যায়। উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে দেয়। এবার সবাই হলুদ নিয়ে যাকে পারছে লাগিয়ে দিচ্ছে। গান ছেড়ে নাচানাচি করছে সবাই। কৌশিক তো উড়াধুড়া নাচতে লাগলো। কি মনে করে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এসে কাশফিকে টেনে এনে দুই ভাই বোন একসাথে উড়াধুড়া নাচতে শুরু করলো। নিরা এক কোণে দাঁড়িয়ে হাসছে। নিরার বান্ধুবিরাও নাচানাচি শুরু করেছে। ঝুমুরের পাগলা নাচ দেখে নিরা পেট চেপে ধরে হাসছে।
এরমধ্যেই ঘটলো আরেক কান্ড। নিরার শাড়ির আঁচলটা বারবার পড়ে যাচ্ছে। ব্লাউজ সরে যাচ্ছে কাধের উপর থেকে। ফলে নিরার বুকটা উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ব্লাউজ সরে যাওয়ায় ভেতরের ফিতাটা দেখা যাচ্ছে। হাসি থামিয়ে এসব সামলাতে শুরু করেছে নিরা। নিরার বড় ফুফুর ছেলে মেহরাব বারবার এদিকে তাকাচ্ছে। এতে করে আরো অস্বস্তি হচ্ছে নিরার। নিরা ঘুরে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ফিরে এসব ঠিক করতে শুরু করে। পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘাবড়ে যায়। ভাবলো মেহরাব বুঝি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। নিরা পেছন ফিরে তাকাতে চাইলেই পরিচিত কণ্ঠে শুনলো,
— ঘুরবে না। আঁচল ঠিক করো। ব্লাউজের পেছনের গলা এতো বড় কেনো? হুক দিয়েছো কেনো তাইতো খুলে যাচ্ছে। বোতাম দিতে পারলে না? আর সোলডার লকে ফিতাটা আটকাওনি কেনো? পিন দাও আঁচলটা পিন দিয়ে আটকাতে হবে।
— পিন পড়ে গেছে।
— নড়বে না একদম। আমি খুজে বের করছি।
রাফিন কথাগুলো বলতে বলতে ব্লাউজ ঠিক করে দিয়েছে। পিনটা খুজে এনে আবার দাঁড়িয়েছে নিরার পেছনে। নিরাকে বললো,
— আঁচল ঠিক করো সামনে। আমি কাধের উপর পিন করে দিচ্ছি।
— না আনি পারবো।
— চুপ। গবেট কোথাকার। দেখেছি কেমন সামলেছো।
নিরা আর কথা বাড়ায়নি। সামনের দিকে আঁচল ঠিক করে নেয়। রাফিন কাধের দিকে পিন করে দেয় ভালোমতো। নিরা রাফিনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ফর্সা গালে আর হাতে হলুদ লেগে থাকায় অন্যরকম সুন্দর লাগছে রাফিনকে। নিরা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রাফিনের দিকে। রাফিন শাসন করে চলেছে। কড়া চোখে চেয়ে বললো,
— খবরদার এতোগুলো ছেলের মাঝে নাচতে যাবে না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ওইদিকে কারো হুশ নেই ধাক্কা লাগবে গায়ে। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো।
রাফিনের একহাত নিরার গালে আরেক হাত নিরার মাথায়। নিরা মাথা তুলে চেয়ে আছে রাফিনের দিকে। প্রতিটা কথা, প্রতিটা শাসন নিরার কাছে খুব ভালো লাগে। নিরা খুব চায় এই মানুষটা সবসময় তার আশেপাশেই থাক। খুব যত্ন করে সামলে রাখে সে নিরাকে। খুব করে বুঝে নিরা এই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। রাফিন একটু ঝুকে নিরার কানে কানে বললো,
— আমাদের বিয়েটা হোক তারপর আর কোনো ছেলের সামনেই তোমাকে যেতে দিবো না। এভাবে শাড়ি পড়ে তো একদমই না। তোমাকে লুকিয়ে রাখবো আমার মাঝে।
রাফিন সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নিরা এখনো একইভাবে রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওইদিকে সবাই নাচানাচিতে ব্যস্ত তাই এদিকে ওদের দুইজনকে কেউ খেয়াল করছে না। রাফিন হালকা হাসে। নিরা রাফিনের গেঞ্জি ধরে টেনে তার দিকে নিচু করে নেয়। রাফিনের কান নিরার মুখের কাছাকাছি এনে বললো,
— ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
নিরার আর একমুহূর্তও দাঁড়ায় না। দৌড়ে নিচে চলে আসে। নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ে। দুইহাতে বুকের বাপাশে চেপে ধরে। হৃদক্রিয়া বেড়ে গেছে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। এক অন্যধরনের অনুভূতির সামনে এসে দাঁড়ালো নিরা। লজ্জায় লাল হচ্ছে। দুইহাতে মুখ ঢেকে ফেলে।
এদিকে রাফিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো কানের মধ্যে একটু আগে নিরার বলে যাওয়া কথাগুলো বাজছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে। তারপর আনমনেই হেসে ফেলে। একহাতে মাথা চুলকায়। রাফিনের এখন উড়তে ইচ্ছা করছে কিন্তু আপাতত সেই ইচ্ছাটা দমিয়ে রেখেছে। মনে মনে বললো,
— একবার বউ হয়ে আসো তারপর এভাবে পালাতে দেবো না। তোমার লজ্জা মাখা মুখ আমি দেখবো আর তুমি সেই লজ্জায় লুটিয়ে পড়বে আমার বুকে।
·
·
·
চলবে……………………..