#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪৭)
#নাহার
·
·
·
কলেজ থেকে ফিরার পথে নিরা আফিয়াকে দেখতে নিজের বাসায় গেলো। এদিকে ফোন করে বলে দিয়েছে সে আজ বাসায় যাবে না। মায়ের বাসায় থাকবে। তনিমা খানমও কিছু বললেন না। রাফিনকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নিরাকে পেয়ে বাসায় সবাই খুব খুশি। আফিয়ার সাথে অনেকক্ষণ গল্প গুজব করেছে। কৌশিক তো আফিয়াকে সবসময় নজরে নজরে রাখছে। চোখের আড়াল করতেই চায় না। আফিয়া নিরাকে বললো,
— আমাদের কবে শুনাবে তোমাদের খুশির খবর?
নিরা মুচকি হাসলো। বেশ লজ্জা পেয়েছে। আস্তে করে বললো,
— এখন তো থার্ড ইয়ারে পড়ি। অনার্স পাস করলে হয়ত।
আর কিছু বলতে পারলো না লজ্জায়। কৌশিক বললো,
— ও নিজেই একটা বাচ্চা ও আবার কি বাচ্চা পালবে? বাচ্চা নিলে দুই বাচ্চা মিলে রাফিনের মাথা খারাপ করে দিবে। এমনিতে উনি কি কম করে নাকি।
আফিয়া শব্দ করে হেসে দিলো। নিরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ঝাঝালো কণ্ঠে বললো,
— তুই দেখছিস আমি উনাকে কিরকম জ্বালাই? না দেখেই বকস কেন?
— আরেহ আমি জানি জানি। এখানে থাকতে বাচ্চামি স্বভাবের কারণে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো তাই তোরে তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিছে।
কথাটা বলে কৌশিক হাসতে লাগলো। নিরার চোখ ছলছল করে উঠলো। বেচারি মনে আঘাত পেয়েছে শেষ কথায়। নিরা কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
— সত্যি এইজন্য তাড়াতাড়ি করে বিদায় করছে?
— হ্যাঁ। কেন তুই জানতি না?
নিরা আর একমুহূর্ত না বসে উঠে গেলো সেখান থেকে। নিজের রুমে এসে কেঁদে দিলো। মনে মনে বললো,
— আমি সবাইকে এতো জ্বালাই যে আমাকে সহ্য করতে না পেরে বিদায় করে দিয়েছে। আমি সত্যিই খারাপ।
এদিকে আফিয়া কৌশিককের উপর রেগে গেলো। বললো,
— এভাবে বললা কেন? দেখো তো মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।
— আরে আমিতো দুষ্টামি করেছি। ও যে সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে কে জানতো?
— যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে রাগ ভাঙাও।
— হুম আচ্ছা।
কৌশিক রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো নিরা বোরকা পরে নিচে নেমে যাচ্ছে। আফিয়ার কথাই সত্যি হলো। মেয়েটা সত্যিই রাগ করে চলে যাচ্ছে। কৌশিকও বারবার নিরাকে পেছন থেকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু নিরা শুনছেই না। রাগে কান্না করতে করতে নিচে নামছে। কৌশিক এসে নিরার হাত ধরে বললো,
— আরে রাফিনের পাগলি কই যাচ্ছিস?
নিরা নাক টেনে শ্বাস নিয়ে বললো,
— চলে যাচ্ছি। আমিতো অনেক জ্বালাই তাই। আর আসবো না তোদের জ্বালাতে।
মিসেস তানজুম নিরাকে চলে যেতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
— কিরে নিরা মাত্রই এলি এখন আবার চলে যাচ্ছিস কেন?
— হ্যাঁ চলে যাচ্ছি। আমার জ্বালায় তো তোমরা থাকতে পারো না তাই তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিয়েছো।
— এসব কি বলছিস মা? বিদায় দিয়েছি মানে কি? আর কে বললো তুই জ্বালাতি আমাদের? তুই চলে যাওয়ায় বাড়িটা নিরব হয়ে গেছে।
— সব তোমাদের মুখের কথা আমি জানি।
মিসেস তানজুম কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কি বলেছিস তুই?
— মা আমি ফাজলামো করে বলেছি কথাটা। আর দেখো ও সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে।
— বাদর কোথাকার। বাচ্চার বাবা হবে এখনো ফাইজলামি যায়নি তোর তাই না?
কৌশিকের কান মলা দিয়ে বললেন,
— দেখ বকা দিয়ে দিয়েছি। আর কাদিস না ঠিকাছে। তুই এই বাড়ির মেয়ে। আমাদের কেন জ্বালাতে যাবি। যা ঘরে যা। ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
নিরা রুমে গেলো। কৌশিক নিরাকে সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো,
— সরি রাফিনের পাগলি। ফাইজলামি করেছিলাম। তুই কষ্ট পাবি ভাবিনি। আমি তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য বলিনি।
— হুম। হয়েছে হয়েছে। যাও ভাবির কাছে যাও।
——————————–
সন্ধ্যায় রাফিন এলো। সবাই বেশকিছু সময় গল্প করলো। রাফিন উপরে এসে নিরার ঘরে গেলো। নিরা রুমে নেই। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখলো এখনো নিরা রুমে আসেনি। কৌশিক নিরাকে বললো,
— রুমে যা।
— কেন? এখানে থাকলে কি সমস্যা?
— তোমার ডাক্তার সাহেব এসেছে। যাও যাও হাসবেন্ডকে সময় দাও। এখন তো আমরা পর হয়ে গেছি।
নিরা যাওয়ার আগে কৌশিকের কাধে খামছি দিয়ে দৌড় দিলো। কৌশিক আস্তে করে বললো,
— জংলি বিল্লী।
নিরা রুমে এসে দেখলো রাফিন তাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতেছে। নিরা প্রশ্ন করলো,
— কখন আসলেন?
— কিছুক্ষণ আগে। তুমি কই ছিলে?
— কৌশিক ভাইয়ার রুমে। আফিয়া আপু প্র্যাগনেন্ট তাই ওখানে বসে ছিলাম। আপনার কিছু লাগবে?
— হ্যাঁ।
— কি লাগবে?
— কাছে আসো। তারপর বলছি।
নিরা রাফিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
— বলুন কি লাগবে?
রাফিন শক্ত করে নিরাকে জড়িয়ে ধরলো। নিরা প্রথমে চমকে গেলো। পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে সেও রাফিনের পিঠে হাত রাখে। হঠাৎ রাফিনের কি হলো কে জানে, নিরাকে বুকের পাশে পিষে ফেলতে চাইছে। রাফিনের মন চাচ্ছে নিরাকে তার বুকের কোটরে বন্ধী করে রাখতে। এভাবে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে ছেড়ে দিলো। নিরা বললো,
— কিছু হয়েছে আপনার? মন খারাপ?
— না।
নিরার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— ক্ষিদে পেয়েছে। নাস্তা আনো।
নিরা নিচে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসলো। রাফিন বেডে বসে আছে। নিরা নাস্তা সামনে রাখতেই বললো,
— খাইয়ে দাও প্লিজ।
নিরা কথা না বাড়িয়ে নাস্তা রাফিনের মুখে তুলে দিচ্ছে।
—————————————-
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই আড্ডায় বসেছে। কথার মাঝে কৌশিক বললো,
— তোরা বাবু কবে নিবি ভাই?
রাফিন বড় শ্বাস ফেলে বললো,
— বউটাই তো বাচ্চা। আগে এটাকে বড় করি। এমনিতেই উনাকে ডানে বললে বামে যায়। যেটা মানা করি সেটা করতে যেনো মজা পায়। এখন বাচ্চা নিলে দুই বাচ্চা মিলে আমার নাজেহাল অবস্থা করবে।
কৌশিক হেসে ফেললো। নিরা ফোসফাস করে বললো,
— তো কে বলেছে বাচ্চা বিয়ে করতে। যান মোটা থেকে বড় থেকে কাউকে বিয়ে করে আনুন। হুহ।
নিরা উঠে দপদপ করে চলে গেলো। রাফিন বললো,
— হাহ। দেখলি কি করলো। এতোটা বোকা এই মেয়ে। আগে ওকে বড় করি তারপর একটা বাবু নিবো। এখন গিয়ে সামলাতে হবে।
আফিয়া এবং কৌশিক হাসছে। রাফিন উঠে ঘরে এলো। নিরা এখনো রাগে ফোসফাস করছে। রাফিন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে নিরার কাছে গেলো। বললো,
— এভাবে রাগ করছো কেনো?
— সরুন ধরবেন না আমাকে। আমার কাছে আসার প্রয়োজন নেই। যান বড় থেকে মেয়ে বিয়ে করে শান্তিতে একগাদা বাচ্চা নিন।
রাফিন কোনো কথা না বলেই নিরাকে কোলে তুলে নিলো। নিরা রেগে বললো,
— নামান আমাকে। আপনার সাথে কথা নেই। নামান বলছি।
নিরাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে বাতি নিভিয়ে নিরার পাশে শুয়ে পরলো রাফিন। নিরাকে বেডের সাথে চেপে ধরে বুকে মাথা রেখে বললো,
— আমার বাবুর মা শুধু তুমিই হবে। একগাদা বাচ্চার মাও তুমি হবে। আচ্ছা এতোগুলা সামলাবে কেমন করে?
নিরা রাফিনের চুল শক্ত করে মুঠ করে ধরে বললো,
— সরুন আমার উপর থেকে। কোনো কথা নেই। আপনার বাবুর মা হতেও চাই না আমি।
— কি বললে? এতোবড় কথা। হুম মনে হচ্ছে আজকেও থেরাপি দিতে হবে।
— না না।
— হিহি। রেডি ফর দা থেরাপি নিরুপাখি।
অতঃপর আরেকটা ভালোবাসার রাত। নিরা এবং রাফিন এখানে তিনদিন থেকেই রাফিনের ফ্ল্যাটে ফিরে গেলো। নিরার পড়ার চাপ বেড়েছে। সাথে রাফিনের থেরাপির থ্রেটও বেড়েছে। প্রতিদিন হসলিটালে যাওয়ার আগে নিরার কপালে চুমু দিয়ে বলে দেয়, “আজ পড়া একটা যদি বাদ থাকে রাতে কিন্তু থেরাপি দিবো।” নিরা ভয়ে সব পড়া শিখে নেয়। কখনো ইচ্ছে করেই শিখে না রাফিনের থেরাপি পাবার আশায়।
—————————————-
রাফিন বাসায় আসলো। আজ খুব ক্লান্ত রাফিন। রুমে এসে দেখলো নিরা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাফিন কয়েকবার ডেকেছে নিরার হুশ নেই। নিরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাফিনের মাথায় দুষ্টুমি চাপলো। দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিরাকে কোলে তুলে নেয়। ওয়াশরুমে এসে বাথটাবে ফেলে দেয় নিরাকে।
আচমকা এভাবে পরায় নিরা ধড়ফড় করে উঠে। আশেপাশে তাকিয়ে রাফিনকে দেখে। এরপর ভেজা আর ঠান্ডা লাগায় নিজেকে দেখলো। বাথটাবের পানিতে ভিজে গেছে কোমড় পর্যন্ত। নিরা রেগে বললো,
— এসব কি? এভাবে এখানে ফেলে দিলেন কেনো?
— ঘুম থেকে উঠছিলে না তাই মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চেপেছিলো। সেটা প্রয়োগ করছি।
— তাই বলে এভাবে পানিতে ফেলে দিবেন? আমাকে ডাকতে পারলেন না?
— ডেকেছিতো তুমি উঠলে না।
রাফিন ওয়ালেট, ঘড়ি বেসিনের উপর শুকনো জায়গায় রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বাথটাবের দিকে এগিয়ে আসছে। নিরা এসব দেখে বললো,
— এভাবে এদিকে এগিয়ে আসছেন কেনো?
রাফিন বাথটাবের পানিতে নেমে বললো,
— এভাবে বাথটাবে শুয়ে কখনো রোমাঞ্চ করেছো?
— মানে?
— আজকে তোমাকে এটার এক্সপেরিয়েন্স করিয়ে দি কি বলো?
— না….উমমম!
রফিন তাওয়াল কোমড়ে পেচিয়ে বেরিয়ে গেলো। নিরা ভেজা কাপড় ঠিক করে রুমে আসলো। কাবার্ড থেকে কাপড় বের করছে। নিরা সামনে ফিরলেই রাফিন বললো,
— এই মেয়ে, তোমার গলায় বুকে এসব কিসের দাগ?
রাফিন ভ্রু নাচিয়ে ভিলেনি হাসি দেয়। নিরা কাপড় দিয়ে বারি মেরে ওয়াশরুমে এসে কাপড় পালটে নেয়। খাবারের জন্য ডাইনিং- এ গেলে নিরাকে দেখে তনিমা খানম বললেন,
— কিরে চুমকি তুই এখন গোসল করলি যে?
নিরা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। রাফিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর আর কিছু বললেন না তনিমা খানম। নিরা লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে। মনে মনে রাফিনকে বকেছে অনেক।
রুমে এসে নিরা শুয়ে পরে৷ রাফিন দরজা লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে নিরাকে কাছে টেনে নেয়। নিরা বললো,
— এখন আর না। ছাড়ুন।
— উহু। আমি মানি না। সমর্পণ করো আমার কাছে।
— না।
— ইশ্ বললেই ছেড়ে দিচ্ছি যেনো।
আবারো আরেকদফা ভালোবাসায় ডুব দেয় দুজনে।
——————————
নিরার থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এসেছে। বেশ ব্যস্ত নিরা। পড়ালেখার জন্য দম ফেলার সময় নেই। রাফিন বেশ যত্ন নিচ্ছে নিরার।
পরীক্ষার সময়টাও এগিয়ে এসেছে। এখন আরো চাপ বেড়েছে। থ্রি পয়েন্টের উপর নাম্বার আনতে হবে তাই বেশি টেনশনে আছে নিরা।
বলতে বলতে পরীক্ষার দিন চলে এলো। একে একে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে এলো নিরার। এরই মাঝে খবর এলো আফিয়ার সাত মাস হয়েছে তাই পিঠা খাওয়ানোর অনুষ্ঠান করবে। আরেক খুশির সংবাদ যোগ হয়েছে তা হলো কাশফিও কনসিভ করেছে। বাড়িতে খুশির রোল পরেছে।
আজ শেষ পরীক্ষা ছিলো। নিরা পরীক্ষা শেষেই মায়ের বাড়িতে চলে গেছে। আফিয়াকে সুন্দর করে একটা ঢিলেঢালা থ্রিপিস পড়ানো হয়েছে। নিরা একটা সুন্দর থেকে শাড়ি পরেছে। সোনালি পাড়ের লাল সূতির শাড়ি। চুল হাত খোপা করেছে।
অনুষ্ঠানের আগে রাফিনও চলে এসেছে। নিরার শ্বশুর শ্বাশুড়ি উনারাও এসেছেন। রাফিন ফ্রেস হয়ে একটা কালো খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। অনুষ্ঠান শেষ হলে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নেয়। নিরা কাশফির সাথে কথা বলে জানিতে পারলো তার শ্বাশুড়িও বেশ খুশি। যাক এবার মেনে নিয়েছে। সবাই যে যার যার মতো শুয়ে পরেছে। নিরা তার মাকে রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করে রুমে আসলো। দরজা লাগিয়ে পেছনে ঘুরার আগেই রাফিন নিরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কানে কানে বললো,
— লাল রঙটা আমার একদম পছন্দ না। কিন্তু যখনই এই রঙ তোমার পরনে দেখি তখন এই রঙ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ সুন্দরতম একটা রঙ হয়ে যায়।
নিরা রাফিনের দিকে ফিরে তাকায়। বললো,
— আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে রাফু।
রাফিন অবাক হয়ে তাকায়। বললো,
— আবার বলো।
— রাফু।
নিরা রাফিনের গলা জড়িয়ে ধরে হাসছে। রাফিন নিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমি সবসময় চাইতাম তুমি আমাকে আদর করে রাফু বলে ডাকো। আজ তা পূরণ হলো। ভালোবাসি নিরুপাখি।
নিরা মুচকি হাসলো। রাফিন নিরাকে কোলে তুলে নেয়। দুজনের রাত কাটে ভালোবাসায়।
——————————
দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেছে রাফিন এবং নিরার বিয়ের। রাফিন আজ কিছু কাঠগোলাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। নিরা রাফিনকে দেখে মুচকি হাসে। নিরার হাতে মাঝে সবগুলো কাঠগোলাপ দিয়ে কপালে চুমু দেয়। বললো,
— আমি ফ্রেস হয়ে অজু করে আসছি। তুমি অজু করে আসো। একসাথে নামাজ পরবো। আল্লাহকে শুকরিয়া জানাবো। আজ আমাদের বিয়ের একবছর পূরণ হয়েছে।
— বিবাহ বার্ষিকীতে তো সবাই অনুষ্ঠান করে।
— উহু আমরা করবো না। জীবন থেকে এক বছর চলে গেছে সেটা নিয়ে অনুষ্ঠান করার মানে হয় না নিরুপাখি। এক একটা বছর যাচ্ছে আর আমরা কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করবো যাতে বাকি জীবন এভাবে সুখে কাটাতে পারি।
নিরা কথা বাড়ালো না। শুধু ঝাপটে ধরে রাফিনকে। রাতের খাবার খেয়ে এসে দুজনে নামাজ পড়ে নেয়। সাথে তাহাজ্জুদও পড়ে নেয়। ফজরের নামাজ শেষে কোর’আন পড়ে হাটতে বের হয়। আজকের সকাল খুব মোহনীয় লাগছে নিরার। রাফিনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
আফিয়ার একটা ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে আফাজ আবরার। শুনেছে মায়ের নামের সাথে ছেলের নাম মিলিয়ে রাখলে নাকি ভালো। কতটুকু সত্য এটা জানে না। তাও রাখলো। কৌশিক নিজেই খুশিতে আফিয়ার কপালে চুমু দিয়ে এই নাম রেখেছে। এদিকে কাশফির আট মাস চলছে।
নিরার অনার্স পড়া শেষ। ফাস্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে নিরা। বাড়িতে সবাই খুশি। রাফিন ভালো মানের অনেক মিষ্টি এনেছে। সোফায় বসে নিরাকে বললো,
— তোমার কি চাই নিরা? আজকে যা চাইবে তাই দিবো।
নিরা খুশিতে গদগদ হয়ে রাফিনের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমার একটা ছোট রাফু চাই।
এই কথা শুনে রাফিনের কাশি উঠে গেলো। নিরা পানি এনে রাফিনকে দিলো। রাফিন ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নেয়। নিরা আবারো রাফিনের কোলে বসে। গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমি একটা ছোট রাফু চাই। চাই মানে চাই। আপু, ভাবি সবাই একটা একটা বাবু নিয়েছে। আমি এভাবে বসে থাকবো নাকি। আমার একটা ছোট্ট রাফু চাই।
ঠোঁট ফুলিয়ে কথাগুলো বললো নিরা। রাফিন নিরার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললো,
— ঠিকাছে আমার নিরুপাখিকে একটা ছোট্ট রাফু আর একটা ছোট্ট নিরু দিবো। খুশি?
— হ্যাঁ অনেক। কিন্তু এতোদিন হওয়ার পরেও আমার বাবু হচ্ছে না কেন?
রাফিন হাসলো। নিরার নাকে নাক ঘষে বললো ,
— তোমার গবেট মাথায় এসব ঢুকবে না।
রাফিন শব্দ করে হেসে দেয়। নিরা রাগে রাফিনের ঠোঁট কামড়ে ধরে। রাফিনও পালটা আক্রমণ করে নিরার ঠোঁটে। নিরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
— আমাকে ছোট্ট রাফু না দিলে কথা নাই। হুহ।
নিরা মুখ ভেঙিয়ে চলে যেতে চাইলে রাফিন নিরার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। নিরাকে কোলে নিয়ে বললো,
— চলো রাফু দি তোমাকে।
নিরা লজ্জা পেয়ে রাফিনের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। ভালোবাসার সাগরে ডুব দেয় দুজনে।
——————————
পাঁচ মাস পর,
নিরার এখন কোনো কিছুর গন্ধ সহ্য হয়না। কেমন যেনো গা গুলিয়ে আসে। আজ সকালে রাফিন ওয়াশরুমে গেছে। নিরা উঠে দরজায় কড়াঘাত করতে রাফিন দরজা খুলে দেয়। নিরাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রাফিনকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে বেসিনের মধ্যে বমি করে ভাসিয়ে দেয়। মুখ ধুয়ে রাফিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখ একদম নেমে গেছে। রাফিন নিরাকে শুয়ে দিয়ে চেকাপ করে বললো,
— নিরা।
— হুম।
— তোমার ছোট্ট রাফু নাকি নিরু আসছে।
নিরা খুশিতে উঠে বসে। রাফি নিরাকে কোলে তুলে নাচতে শুরু করে। তনিমা খানম এসে বললেন,
— কি হয়েছে তোদের?
রাফিন নিরাকে কোল থেকে নামিয়ে তনিমা খানমের হাত ধরে টেনে মাকে একবার ঘুরিয়ে বললো,
— মাই ডিয়ার মম, ইউ আর গোয়িং টু বি গ্র্যান্ডমাদার।
তনিমা খানম যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। খুশিতে রাফিনকে জড়িয়ে ধরে। নিরার কাছে এসে নিরাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়। খুশিতে তিনি আত্মহারা হয়ে গেছে। রুমে এসে রাফিনের বাবাকে বললেন। তিনিও বেশ খুশি। সব আত্মীয় স্বজনকে ফোন দিয়ে এই খুশির সংবাদ দিচ্ছেন। নিরার পরিবারকেও দেয়া হয়েছে। সংবাদ শুনার সাথে সাথে নাঈম, ফায়াজ, ফাহিম এবং ফাতেমা এসে হাজির কিছুক্ষণের মধ্যে। চার ভাই বোন খুশিতে নিরাকে জড়িয়ে ধরে। নাঈম তো খুশিতে নিরাকে কোলে তুলে নেয়।
এখন নাঈম, ফায়াজ এবং ফাহিম তিনজনে দেখতে যুবক যুবক লাগে। কারণ যুবক বয়সে পা দিয়েছে তিনজনেই। তিনজনেই পিঠাপিঠি। এদের দেখলে বললে সবগুলো নিরার বড় ভাই। চওড়া দেহ, আর প্রশস্ত বুক। একদম সুঠাম দেহ তিন ভাইয়ের। গাল ভর্তি খোচা দাড়ি। একেবারে পঁচিশ ছাব্বিস বছরের যুবকের মতো লাগে। যদিও ওদের বয়স এখন একুশ কি বাইশ হবে।
এদিকে নিরার বাবা, মা, চাচা,চাচি সবাই চলে এসেছে নিরাকে দেখতে। কৌশিক রাফিন এবং নিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— অবশেষে বাচ্চার পেটে বাচ্চা আসছে।
সবাই হেসে দেয়। সবাই একসাথে মিলিত হওয়ায় উৎসবমুখর হয়ে উঠে দিনটা।
·
·
·
চলবে………………………….