#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸
পর্ব-১৫
#ফাবিহা_নওশীন
🌿🌿
রোজ ভার্সিটির ক্যাম্পাসে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।অরিত্র ওর পাশে এসে বসলো।ওর মুখের মানচিত্র দেখে কাহিনী আন্দাজ করতে পেরেছে।বেচারি চিপস খেতে না পারায় ফাটা প্যাকেটের মতো চুপসে আছে।
—-কি হলো?মুখ এমন পেচার মতো করে রেখেছো কেন?
রোজ অরিত্রের কথা শুনে বিরবির করে বলছে,
—-তুই পেচা,,ব্যাটা উল্লুক,কালো হাতির ডিম আমাকে চিপস খেতে দিলোনা।বাড়িতে পাপা দেয়না আর এখানে ইনি,,
অরিত্র অন্য দিকে তাকিয়ে হেসে মুখ আবার গম্ভীর করে বললো,
—–বিরবির করে কি বলছো?
রোজ টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–কিছুই না।আমি তো ক্লাসের পড়া আওড়াচ্ছিলাম।আমি কত্ত ভালো স্টুডেন্ট।সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া।
অরিত্র বললো,
—–হুম পড়া আর চিপস খাওয়া।
—–এরে চিপসের কথা আবার মনে করিয়ে দিলো।আহা কি সুন্দর চিপসগুলো আমাকে ডাকছে।(অসহায় ফেস করে মনে মনে)
অরিত্র রোজের সামনে একটা চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।রোজ চিপসের প্যাকেট দেখে ভাবলো অরিত্র ওর জন্য এনেছে।রোজ হাত বাড়াতেই অরিত্র ছু মেরে সরিয়ে নিয়ে বললো,
—–কি ব্যাপার আমার চিপস তুমি কেন ধরছো?তোমার তো নিষেধ খাওয়া।
রোজ অরিত্রের কথা শুনে কাদো কাদো ফেস করে বললো,
—–এটা কার জন্য?
অরিত্র বললো ওয়েট।তারপর প্যাকেট খোলে একটা চিপস মুখে দিয়ে বললো,
—–আমার জন্য।
—–আপনি আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে চিপস খাচ্ছেন?ভালো হবেনা।আল্লাহ সইবেনা এই মাসুম বাচ্চার উপর এতবড় অবিচার।আপনার পেট খারাপ হবে।কম করে ১০০বার ওয়াশরুম টু বেডরুম করবেন।আপনি অনেক খারাপ।
অরিত্র ফিক করে হেসে দিলো।তারপর রোজের দিকে চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
—–তোমার জন্য।
রোজ চিপসের প্যাকেট পেয়ে অরিত্রের দিকে চেয়ে মোহনীয় হাসি দিলো।অরিত্র মনে মনে বলছে,
—–এভাবে হেসোনা বুকে বড় লাগে।
—–আপনি কত্ত ভালো।হাও সুইট।
—–কয়েক সেকেন্ড আগেই তো বললে আমি খারাপ।
রোজ জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-ওইটা তো এমনি বলেছি।
—–আমার গোলাপ ফুলের চিপস এতো পছন্দ যে মিনিটের মধ্যে ভালো মানুষ খারাপ হয়ে যাবে খারাপ মানুষ ভালো হয়ে যাবে।
—–মাই নেম ইজ রোজ।নট গোলাপ ফুল।
—–একি তো রোজ অর্থ গোলাপ ফুল।
—–হুম বাট ফুল তোমার শাশুড়ীর নাম।হিহি।
অরিত্র অবাক হয়ে বললো,
—–তোমার মাম্মার নাম ফুল?
—–হুম।মাম্মার নাম তানহা তবে পাপা ভালোবেসে ফুল ডাকে।তাই তো আমার নাম রোজ রেখেছে।
—–তুমি তোমার পাপাকে অনেক ভয় পাও?সে কি কঠোর মানুষ?তোমাকে অনেক শাসনে রাখে?
—–উহু।পাপা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি তার কলিজার টুকরো।তার প্রিন্সেস।পাপার সেকেন্ড লাভ।
—–সেকেন্ড লাভ?
—-হুম ফার্স্ট লাভ মাম্মা।পাপা মাম্মাকে অনেক ভালোবাসে।ভাইয়া আর আমার চেয়েও বেশি।তাদের লাভ স্টোরি জাস্ট ওয়াও।পুরাই ইউনিক।
তবে সেটা অন্য দিন বলবো।কারণ এখন বলতে গেলে একটা ক্লাসও করা হবেনা।সারাদিন পাড় হয়ে যাবে।
(এক নাগাড়ে বলে জোরে শ্বাস নিলো।)
অরিত্র হেসে দিলো।
—–ওরে আমার চঞ্চলপাখি।সারাজীবন এমনি থেকো।আমি অল্প কথা বলি।বাচাল মানুষ আমার পছন্দ না।কিন্তু তোমার কথা শুনলে আমার শুনতেই ইচ্ছে করে।কান পেতে রাখি।ইচ্ছে হয় কথা যেনো না থামে।তোমার কথায় আমি বিরক্তি না মুগ্ধতা খোজে পাই।অপার মুগ্ধতা।
রোজ অরিত্রের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।অরিত্র রোজের হাত ধরে হাতে ঠোঁট ছোয়ালো।রোজ আচমকা আক্রমণে কেপে উঠে।এই প্রথম কোনো ছেলের সংস্পর্শে এসেছে।সারা শরীর বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।রোজ চোখ বড়বড় করে আসেপাশে তাকালো।চারপাশে অনেক মানুষ।
অরিত্র মুচকি হেসে বললো,
—–ডোন্ট ওরি,,সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই।
রোজ লজ্জা মিশ্রত হাসি দিলো।চিপস খাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
“এভাবেই হাসতে থাকো সারাজীবন
চাঁদমুখে কখনো যেনো লাগেনা গ্রহণ।”
হৃদ শাওয়ার নিচ্ছে আর শুভ্রার দেওয়া ভিডিও ইমাজিন করছে।কয়েকদিন মাত্র টাইম।এর মধ্যে নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করতে হবে।কিন্তু কিছু একটা ব্রেইন থেকে মিসিং হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি শাওয়ার শেষ করে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে গলায় তোয়ালে জড়িয়ে ফোন হাতে নিলো।
শরীর আর চুল বেয়ে পানি পড়ছে সেদিকে খেয়াল নেই।ভিডিও দেখে মিসিং স্টেপ ব্রেইনে সেট করে নিলো।তারপর পরের ভিডিও দেখছে।ফাইনার স্টেপ।যেখানে শুভ্রা আর ইশান র্যাম শোতে হাটছে।সেখানে ইশান শুভ্রার কোমড়ে,কখনো কাধে হাত রাখছে।শুভ্রাও ইশানের কাধে হাত দিয়ে বিভিন্ন এংগেলে দাড়াচ্ছে।
হৃদের বিরক্ত লাগছে এসব দেখতে।হৃস ফোন রেখে দিয়ে বলছে,
—-নিজের হবু বউকে কেউ বারবার ছুয়ে দিচ্ছে আর সে ভিডিও দেখে আমি শিখবো ইম্পসিবল।শুভ্রাকে বলবো আমাকে যেনো প্র্যাকটিক্যালি শিখায়।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।শুভ্রার রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রা চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।হৃদ বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বললো,
—-এই মেয়ের একটাই কাজ গান শোনা।
—–শুভ্রা!
শুভ্রার কানে হেডফোন থাকার কারনে কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।হৃদ শুভ্রার কান থেকে হেডফোন খোলে নিলো।শুভ্রা চমকে চোখ খোলে আর হৃদকে দেখে আরো চমকে যায়।
—–তুমি??
—–কাকে আশা করেছিলি তুই?
যাইহোক গুরুত্বপূর্ণ কথা শোন আমি ভিডিও দেখে শিখতে পারছিনা।
শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—–এই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এই হালে এসেছো?
হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–কোন হালে?
—–লুক এট ইউরসেল্ফ।
হৃদ নিজের দিকে তাকিয়ে দুচোখ বন্ধ করে বললো,
—–শিট!মাই গড!!
তারপর ভেজা চুল ঝাকিয়ে বললো,
সো হোয়াট?তুমি তো আমার বউই।
আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি ১০মিনিট লাগবে।তুমি আমার রুমে চলে এসো।
হৃদ আয়নার নিজের চুল সেট করছে।শুভ্রা হৃদের বেডে বসে বসে আড়চোখে হৃদকে স্ক্যান করছে।হৃদের হয়ে যেতেই শুভ্রা চোখ সামনে রেখে চুপ করে রইলো।হৃদ বিছানায় বসে কুশন কোলে নিয়ে শুভ্রার কানে ফিসফিস করে বললো,
—–স্ক্যান করবে তো সামনাসামনি করো,আড়চোখে কেন?
আর তোমার রুমেই স্ক্যান করতে পারতে,সুবিধা হতো।পুরো বডি দৃশ্যমান ছিলো।
শুভ্রা হৃদের পিঠে মেরে বললো,
—-একদম অসভ্যের মতো কথা বলবা না।
—–আর তুমি লুচুর মতো আই মিন লুচির মতো আমাকে স্ক্যান করবা তাতে কিছুনা।
—–তুমি আমাকে লুচু বললা?স্ক্যান করলে করেছি তাতে কি?হবু বরকে করেছি বাইরের কাউকে তো নয়।
—–তাই নাকি?
হৃদ বিছানায় শুয়ে পড়ে শুভ্রার হাত ধরে টান দিয়ে বুকে ফেলে দেয়।তারপর দুহাতে শুভ্রাকে ঝাপটে ধরে যাতে উঠে যেতে না পারে।
—–হৃদ কি করছো?তুমি কি আমাকে এ কাজের জন্য ডেকেছো?
—–উহু।তবে এটা ফ্রি।ফ্রিতে তোকে রোমান্স শিখাচ্ছি।
—–বাড়ির কেউ দেখলে রোমান্স শিখানো হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
—-দেখুক,দেখলে বড়োজোর আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।তাতে আরো ভালো হবে।রোমান্সের লাইসেন্স পেয়ে যাবো।
শুভ্রা কাদো কাদো হয়ে বললো,
—–প্লিজ,ছাড়ো।
—–এমন ছটফট করিস কেন?থাকনা একটু চুপ করে।হৃদয় নামক ব্যক্তির হৃদয়ের আওয়াজ শোন।নিশ্বাসের আওয়াজ শোন কান পেতে।
শুভ্রা হৃদের বুকে কান পেতে হৃদের হৃদপিণ্ডের শব্দ,নিশ্বাসের শব্দ শুনছে।কেমন অদ্ভুৎ তালের সৃষ্টি করছে।শুভ্রা তালের সাথে তাল মিলিয়ে স্বপ্ন বুনছে।রঙ্গিন স্বপ্ন যেখানে হাজারো প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ছে।
দেখতে দেখতে শো এর দিন চলে এলো।হৃদ জীবনের প্রথম এতো নার্ভাস ফিল করছে।জীবনে যা কখনো করেনি,করার কথা ভাবেনি আজ শুভ্রার জন্য তাই করতে হচ্ছে।হৃদের টেনশনের একমাত্র কারণ যদি কোনো গড়বড় হয়ে যায় আর বায়াররা কন্ট্রাক ক্যান্সেল করে দেয়?তবে মাম্মার কাছে মুখ দেখাতে পারবেনা।এত ভরসা করে ওর উপর দায়িত্ব দিয়েছে।
হৃদ রেডি হয়ে ট্রায়াল কেবিনেটের সামনে দাড়িয়ে আছে শুভ্রার দেখা নেই।কি এতো রেডি হচ্ছে খোদাই জানে।
হৃদ বারবার শুভ্রাকে দেখার জন্য দরজার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুভ্রা বেড়িয়ে এলো।লং ডিজাইনিং গ্রাউন যেটা মাটিতে বিছিয়ে আছে।চুলে ছোট ছোট আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক,চোখে মেকাপের সাথে গাঢ় কাজল।কানে স্টোনের এয়ারিং,গলায় ডায়মন্ডের একটা নেকলেস,দুহাতে প্লাটিনাম আর স্টোনের ব্রেসলেট।হৃদ শুভ্রাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।তারপর অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।পলক ফেলতেও ভুলে গেছে।পলক ফেললে এই সুন্দর মুহূর্তের কিছু অংশ হারিয়ে যাবে।
হৃদ আস্তে আস্তে হেটে শুভ্রার সামনে গিয়ে দাড়ালো।শুভ্রা হৃদের মুগ্ধ করা দৃষ্টি দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।দৃষ্টি নত করে হাতের সাথে হাত ঘষছে।
হৃদ বললো,
—–এখন তো আমার শো রেখে কাজি অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে।
হৃদের এমন কথা শুনে শুভ্রা চোখ তুলে হৃদের দিকে চেয়ে হেসে ফেললো।
—–হাসবি না,,আমি শো নিয়ে এমনিতেই নার্ভাস আর এখন তোকে দেখে আরো নার্ভাস লাগছে।কি করি বলতো?এসির মধ্যেও দরদর করে ঘামছি।
শুভ্রা হৃদের কাধে হাত রেখে বললো,
—–রিলেক্স,এভ্রিথিং উইল বি ওকে।আমি আছি।ভরসা রাখো।
শুভ্রা নিজের হাত হৃদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
—–আমার হাত ধরো।এ চারদিন অনেক পরিশ্রম করেছে আর এর রেজাল্ট পাবেই।ডোন্ট বি নার্ভাস।
হৃদ শক্ত করে শুভ্রার হাত ধরলো।
হৃদ আর শুভ্রার বাসার সবাই এসেছে পাশাপাশি ওদের বন্ধুরা।রোজ অরিত্রকে ইনভাইট করেনি।শো-তে এসে আপসোস হচ্ছে।অরিত্রকে জানানো উচিত ছিলো।শুভ্রা আর হৃদ ওদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে এলো।পাশাপাশি বাকি কাপলদের বেস্ট লাক উইশ করছে।
অবশেষে একে একে সবাই র্যাম্পে ওয়াক করেছে।সবাই মিলে নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক পোশাক প্রেজেন্ট করেছে।সবার পারফর্মেন্স পারফেক্ট হয়েছে।
তবে “হৃদ আর শুভ্রা”কে বেস্ট পারফর্মার হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হয়েছে।
বায়াররা পোশাক নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট।তারা সন্তুষ্টি নিয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন করেছে।
হৃদ ১০মিনিট যাবত শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
” শুভ্রা থ্যাঙ্কিউ সো মাচ”
——ওয়েলকাম মি.
তোমার ধইন্যাপাতা দেওয়া শেষ হয়েছে?
হৃদ বাকা হেসে বললো,
—–হুম তবে কিচমিচ দেওয়া বাকি আছে।
শুভ্রা কথা বলার জন্য মুখ খোলার আগেই হৃদ শুভ্রার গালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো।
তারপর আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কয়দিনের জন্য ধরছে কে জানে!!!🔥🔥
চলবে….
(এখন থেকে শুক্রবার ব্রেক নিবো।আল্লাহ যদি সুস্থ ও সমস্যাহীন রাখে তবে অবশ্যই ৬দিন গল্প পাবেন।)