#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸
পর্ব-৯
#ফাবিহা_নওশীন❤
🌺🌺
শুভ্রা চোখ মেলেই ঘাবড়ে যায়।ওর পরিচিত মুখগুলো ওকে ঘিরে বসে আছে।শুভ্রা ঘাবড়ে গিয়ে উঠে বসে।তারপর চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো নিজের ঘরে,নিজের বেডে বসে আছে।
বেড থেকে নামার চিন্তা করার আগেই শাওরিন বললো,
—-শুভ্রা অজ্ঞান কিভাবে হয়েছিস?
শুভ্রা এর জবাব খোজে পেলো।ফ্যালফ্যাল করে মাম্মার দিকে চেয়ে আছে।
শুভ্রার চোখ গেলো সোফার দিকে।হৃদ পায়ের উপর পা তুলে নির্বিকার ফোন টিপছে।
হৃদকে দেখে শুভ্রার শান্ত মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু রিয়েক্ট করতে পারছেনা।শুভ্রা মনে মনে বলছে,এত মানুষের সামনে কিভাবে বলবো এই অসুরটা আমাকে কিস করেছে।
রাহাত বললো,কিরে কথা বলছিস না কেন?শরীর খারাপ লাগছে?
—-না পাপা,জানিনা কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছি।
রাহাত বললো,ভাগ্যিস হৃদ ছিলো।ও তোকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
হৃদ সবার দিকে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।
শাওরিন রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-আমার কথা তো তোমার বিশ্বাস হয়না।এবার দেখো।সারাদিন ফোন,ল্যাপটপ আর হেডফোন নিয়ে পড়ে থাকে ঠিকমতো খায় না।রাত জাগে যার দরুন শরীর দূর্বল হয়ে পড়েছে।আর অতিরিক্ত প্রেশারে এই অবস্থা।
রাহাত বললো,
—-হ্যা ঠিক বলেছো।শুভ্রা তুমি ২দিন ফুল রেস্টে থাকবে।শাওরিন ওর ফোন ল্যাপটপ নিয়ে তোমার কাছে রেখে দেও।দুদিনের আগে দিবেনা।
শুভ্রা চোখ বড়বড় করে বললো,
—-দুদিন!!
তারপর অসহায় ফেস করে কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-পাপা প্লিজ।আমি এমনিতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি।আমার ফোন….
রাহাত কড়া গলায় বললো,
—-শুভ্রা যা বলেছি তাই।কেউ এমনি এমনি অজ্ঞান হয়না।
শুভ্রা বেড থেকে নামতে গেলে রাহাত বললো,
—-বেড থেকে নামবে না।রেস্ট নেও।
শুভ্রার ইচ্ছে করছে বেডে বসেই হৃদকে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিতে।
একে একে সবাই রুম থেকে চলে যাচ্ছে।শুভ্রা রাগে ফুসফুস করছে।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে বাকা হেসে বেরিয়ে গেলো।
সবাই যেতেই শুভ্রা কুশন ছুড়ে মারে।আমার আজকের দিনটাই খারাপ।প্রথমে অফিস থেকে ফায়ার,তারপর হৃদের বাচ্চার অসভ্যতামি,তারপর বাড়িতে সবার বকা,আমার ফোন,ল্যাপটপ মাম্মা নিয়ে গেলো।এখন নাকি শান্তিতে দুদিন বাড়িতে বসে থাকবো।হাও পসিবল।
রোজ শুভ্রার পাশে এসে বললো,
—-লেকতা হে ডাল মে কুচ কালা হে।
শুভ্রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—-তোর আবার কি হলো চিপস কন্যা?
—-আমার না তোমার।আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।কি হয়েছে শুভ্রাপু?অজ্ঞান কিভাবে হলে?
শুভ্রা দাতে দাত চেপে বললো,
—-তোর লুচু ভাই আমাকে কিস করেছে।
রোজ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে চোখ বড়বড় করে বললো,
—-কিহ!!!
শুভ্রা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বললো,
—-কি না জ্বি।তোর ভাই যে এতো লুচু জানতাম না।
রোজ তখনো বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
রোজ বললো,
—-শুভ্রাপু সত্যিই কি ভাইয়া? না মানে আমি বলতে চাইছি ভাইয়া হটাৎ করে তোমাকে কিস কেন করবে?তোমাদের তো ঝগড়া চলছে।
—-কারণ তোর ভাই একটা লুচু।
শয়তানটা আমাকে ফায়ার করে দিয়েছে।তাই আমি মুখে পানি ছুড়ে মেরেছি।আর তারপর আমার গালে কিস করেছে অসুরটা।এত অপমান এই শুভ্রা মেনে নিবেনা।
—–ভাইয়া তোমাকে ফায়ার কেন করেছে?
—–আমি কি জানি,তার ঢং হয়েছে।কোনো রিজন ছাড়া আমাকে ফায়ার করেছে।শালা ইতর,লুইচ্চা।
রোজ মুখ টিপে হাসছে।
শুভ্রা তাই দেখে ধমকে বলে,
—-ওই হাসছিস কেন?
রোজ জোরে হেসে দিলো।।
—-শুভ্রাপু তুমি গালে একটা কিস করায় অজ্ঞান হয়ে গেলে?হাস্যকর।ইতিহাসের পাতায় বড়বড় করে লিখে রাখা উচিত তোমার এই কিস কাহিনি।
শুভ্রা রোজের পিঠে মেরে বললো,
—-বেকুব,আমি শকড হয়ে অজ্ঞান হয়েছি।
আমি ভাবতে পারিনি হৃদ এমন কিছু করবে।কিন্তু এই ছেলে তো তেজ চলছে।ভদ্রতার আড়ালে একটা লুচু।আমাকে কিস করেছে।ছিহ!আমার কান্না পাচ্ছে।
কয়েকঘন্টা পর রোজ হৃদের রুমে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে।
হৃদ রোজকে বললো,কিছু বলবি?
রোজ কনফিডেন্সলি বললো,
—-অবশ্যই।তুমি এটা কি করেছো ভাইয়া?
রোজের কথা শুনে হৃদ ঘাবড়ে গেলো।শুভ্রা কি রোজকে বলে দিয়েছি।ছিহ ছিহ।শেষ পর্যন্ত বোনের কাছে এসব শুনতে হবে।শুভ্রার কি বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না।এভাবে লজ্জায় ফেলতে পারলো।
হৃদ আমতা আমতা করে বললো,
রোজ এখন আমি বিজি পরে কথা হবে।
রোজ ভ্রু কুচকে বললো,
—-না এক্ষুনি।তুমি কিভাবে শুভ্রা আপুর সাথে এটা করতে পারলে?কি দোষ ছিলো আপুর যে ফায়ার করে দিয়েছো?
ফায়ারের কথা শুনে হৃদ স্বস্তি পেলো।তারপর বললো,
—-কারণ শুভ্রাকে সবাই আজেবাজে কথা বলছিলো,বাজে নজরে দেখছিলো,যা আমার সহ্য হচ্ছিলো না।ও ওর নাচের স্কুল নিয়েই থাকুক।মডেলিং জগতটা অনেক খারাপ।সবাই ভালো নজরে দেখে না।
—-ভাইয়া আপু তো প্রফেশনাল মডেল না।জাস্ট একটা শো করতো আর কিছুনা।
—-হুম বাট ওর পাটনার ইশান একটা প্লে বয়।আমি খোজ নিয়েছি।
—-শুভ্রাপু কি ওর সাথে প্রেম করতে যাবে?জাস্ট কাজ করবে।তাছাড়া শুভ্রাপুর কাছে পাত্তা পাওয়া এতো সহজ না।আপু কাউকে পাত্তা দেয়না।আর না ওর সাথে প্রেম করতে যাবে।
—-তবুও আমার ভয় লাগে।
রোজ বিরবির করে বলছে,আমার প্ল্যানে আমি কামিয়াব হতে পারলাম না।এতকিছু করে শেষে উফফ,,ভাইয়াটা না।
—-কিন্তু ভাইয়া শুভ্রাপুর ভালো করতে গিয়ে নিজের খারাপ করে ফেলেছিস।নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছিস তার কি হবে?
—-মানে?
—-মানে হলো আপু অন্য কোম্পানি থেকে অফার পেয়েছে।আর তোমার উপর রাগ করে সব ওকে করে ওদের কনফার্ম করবে বিকালে।
তোমার কোম্পানিতে থাকলে তোমার নজরে থাকতো কিন্তু অন্য কোম্পানিতে কি হবে তুমি তো তা এখানে বসে বসে দেখতে পারবেনা।
—-কিহ! কোন কোম্পানি?
—-কোন কোম্পানি আমি জানিনা।এইটুকু বের করতে পেরেছি আর কিছু বলে নি।
আমি এখন যাই।
রোজ মনে মনে বলছে,খোদা,ভাইয়াকে সুবুদ্ধি দেও,ভাইয়া যেনো শুভ্রাপুকে ব্যাক করতে বলে।
শুভ্রা রুম থেকে বের হয়ে হৃদের রুমের সামনে গেলো।দরজা খোলে দেখতে পেলো হৃদ ঘুমাচ্ছে।
—-আমার ফোন আমার ঘুম কেড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে দেখো।
শুভ্রা পা টিপে টিপে হৃদের রুমে গিয়ে বেড থেকে ওর ফোন নিয়ে চলে এলো।তারপর নিজের রুমে গিয়ে লুকিয়ে রাখলো।
কিন্তু এতেও ওর শান্তি হলো না।হৃদ এত শান্তিতে ঘুমাচ্ছে,,সেটা মানা যায়না।
শুভ্রা আবার হৃদের রুমে গিয়ে এক বালতি পানি এনে ওর উপর ঢেলে দিলো।
হটাৎ মুখের উপর,শরীরের উপর পানি পড়ায় হৃদ হকচকিয়ে যায়।লাফিয়ে উঠে দেখে পুরো শরীর ভিজা,বিছানায় পানি।তারপর সামনে তাকাতেই দেখে শুভ্রা বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রা ভ্রু যুগল প্রসারিত করে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বালতি নিচে রেখে উল্টো হাটা দিতেই হৃদ পেছনে থেকে শুভ্রার চুল ধরে ফেলে।
তারপর বলে,
—-কোথায় পালাচ্ছিস?অফিসে পানি ছুড়ে শিক্ষা হয়নি?
শুভ্রার ছোট থেকেই চুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যথা।একারণে কাউকে চুল ধরতে দেয়না সেখানে হৃদ টেনে ধরে রেখেছে।শুভ্রা ব্যথায় কথা বলতে পারছেনা।চুলে হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই হৃদ আরো জোরে চেপে ধরে। শুভ্রা আহ করে উঠে বললো,
—–আমার চুলের গোড়ায় ব্যথা প্লিজ ছেড়ে দেও।
হৃদের কানে এই কথাটা বাজতে থাকলো মনে হচ্ছে কোথাও এর আগে শুনেছে।
ছোটবেলায় শুভ্রা উল্টো পাল্টা কিছু একটা করায় হৃদ ওর চুল টেনে ধরেছিলো।আর তখন শুভ্রা কেদে দিয়েছিলো আর বলেছিলো,
“আমার চুলের গোড়ায় ব্যথা প্লিজ ছেড়ে দেও।”
তারপর হৃদ আর কখনো শুভ্রার চুলে হাত দেয়নি।এত বছরে চুলের কথা ভুলে গেছে।হৃদ তাড়াতাড়ি চুল ছেড়ে দিলো।শুভ্রা চুলে হাত দিয়ে ডলছে আর ছলছল চোখে হৃদের দিকে তাকালো।
হৃদ কাচুমাচু করে বললো,
—-সরি আমার চুলের কথা মনে ছিলো না।আ’ম রিয়েলি সরি।
তারপর শুভ্রার চুলে হাত দিতেই শুভ্রা ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিলো হাত।
—–হয়েছে এত দরদ দেখাতে হবেনা।
সবাই ডিনার করছে।আর তখনই হৃদ এসে বললো,
—–শুভ্রা হয়ার ইজ মাই ফোন?
শুভ্রা কিছু না বুঝার ভান করে বললো,
—হোয়াট!ফোন? হাও ক্যান আই নো হয়ার ইজ ইউর ফোন?
হৃদ রেগে গিয়ে কিছু বলার আগেই রোদ বললো,
—-হোয়াট হ্যাপেন্ড হৃদ?
—-পাপা আমার ফোন খোজে পাচ্ছিনা।কেউ সরিয়েছে আর সেটা শুভ্রা।
সবাই শুভ্রার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই শুভ্রা বললো,
—-সবাই এভাবে তাকাচ্ছো কেন?আমাকে কি তোমাদের চোর মনে হচ্ছে? আমি কেন উনার ফোন নিবো?
—–অবশ্যই তুমি নিয়েছো।কারণ..
শুভ্রা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-কারণ কি?
—-আমি এত কিছু জানিনা,আমার ফোন আমার চাই।এক্ষুনি।
শাওরিন বললো,
—-শুভ্রা ফোন দিয়ে দেও যদি নিয়ে থাকো।
—-মাম্মা আমি কেন নিবো?
—-কারণ আমি তোমার ফোন নিয়েছি তাই।
—–আচ্ছা আমার ফোন নিয়েছো তাই আমি উনার ফোন চুরি করেছি?
আমার এতটাও খারাপ দিন আসেনি যে আমার ফোন নিয়ে যাওয়ায় আমি অন্যের ফোন চুরি করে চালাবো।
আমি চাইলেই একটা ফোন কিনে নিতে পারি।
এভাবে কারো উপর অপবাদ দেওয়ার আগে ভেবে নেওয়া উচিত।
ফুল বললো,
—-হৃদ ঘরে কোথাও আছে খোজে দেখ।
—-খোজেছি কোথাও নেই।
—-তাহলে হয়তো ভুলে কোথাও ফেলে এসেছিস।
—–সেটা অসম্ভব।বাড়িতে এসেও ফোন ইউস করেছি।ফোনে আমার প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আছে।
~~
রোজ চিপস খেতে খেতে বাইরে বের হচ্ছে ক্লাস থেকে।
হটাৎ করেই অরিত্রের সামনে পড়ে।অরিত্রকে দেখে রোজ মিষ্টি হেসে বললো,
—-ভাইয়া কেমন আছেন?
রোজের মুখে আবারও ভাইয়া শুনে অরিত্র রেগে গেলো কিন্তু রাগটা প্রকাশ করতে পারেনি।এখনো সময় আসেনি।
অরিত্র নরম কন্ঠে বললো,
—-গুড।তোমার কি খবর?
—-ভালো।
—-তুমি এত চিপস খাও কেন?
—-কারণ চিপস আমার অনেক পছন্দের।
—–শুনেছি মেয়েরা ফুচকা, চকলেট,আইসক্রিম খেতে বেশি পছন্দ করে কিন্তু তুমি তো দেখছি চিপস পাগলী।
—-ইয়াপ,কজ রোজ সবার থেকে আলাদা।
হিহি।টাটা।
রোজ যেতেই অরিত্র বললো,
—-আসলেই তুমি আলাদা।তাই তো তুমি এই অরিত্রের মন কেড়েছো।
তোমার এই হাসোজ্জল মুখটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা।
“প্রেমে পড়েছি,প্রেমে পড়েছি
যখন আমি তোকে দেখেছি
Oh god forgive me
Oh god forgive me ”
চলবে….
(জানিনা কি হয়েছে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক নাই,সিমে নেটওয়ার্ক নাই।এখন একটু পেলাম তাই লেট হয়ে গেলো)