হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব-বোনাস_পর্ব

0
2171

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#বোনাস_পর্ব
লেখনীতেঃ ভূমি

‘ অনেক বড় সমস্যা!তোকে ভালোবাসি।এই সমস্যার কি সলুস্যন হতে পারে বল তো তাড়াতাড়ি।’

দিহান চুপসে গেল। হতাশ চাহনি ফেলে তাকাল নেহার দিকে।তাকে ভালোবাসে এর সমস্যার সমাধাণ আবার তার কাছেই চাইছে মেয়েটা?অদ্ভুত!শুকনো ঢোক গিলেই মৃদু হাসল। শান্ত কন্ঠে বলে উঠল সে,

‘ বাসায় যা। তোর বাবা মা কে বল তোর জন্য পাত্র দেখতে। বিয়ে করে নে, বরকে ভালোবাসতে শুরু কর।বাই।’

নেহা মুখ ফুলাল।দিহানকে যেতে না দিয়ে তার সামনে এসেই কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়াল।বাহবা দিয়ে বলে উঠল,

‘ ওয়াও!তোর মতো সাজেশন সত্যিই আর পাব না বোধ হয়।এগুলো মাথায় রেখেই প্রায় দুই মাস আগে আমাকে বলেছিলি তোর পাশে থাকতে?মানলাম দ্রিজাকে ভুলে যাওয়ার মেডিসিন হিসেবেই পাশে চেয়েছিলে কিন্তু দুইদিন পর যে এমন কিছু বলতি না তারই কি গ্যারান্টি। চমৎকার!সেদিন আসলেই তোকে ফিরিয়ে দেওয়াটা উচিত কাজ হয়েছে। আমি এতদিন শুধু শুধু অনুশোচনায় ভুগেছি।’

দিহান তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকাল।নেহা খিলিখিলিয়ে হেসেই বলল,

‘ তোর সাজেশনটাই গ্রহণ করলাম।প্রস্তুতু থাক।কেমন?’

‘ হু।অবশ্যই।পথ ছাড় এবার।’

দিহানের শান্ত শক্ত কন্ঠ শুনেও পথ ছাড়ল না নেহা।কোমড়ে হাত রেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল দিহানকে। দিহানের পথ না ছাড়াতে বিরক্তি নিয়ে নেহার দিকে তাকাতেই নেহার নজর দ্বিগুণ তীক্ষ্ণ হলো।ভ্রু জোড়া সংকুচিত করেই বলে উঠল,

‘ তোর এত ভাব কেন?কেন বল? কি মনে করিস তুই নিজেকে?তোকে ভালোবাসি বলে আমি নিচে নেমে গেছি?এত ভাব দেখাস কেন তুই আমার সাথে? আমি তোর সামনে যতোটা ভদ্র হয়ে থাকি ততোটা ভদ্র কিন্তু আমি নই দিহান।তুই এভাবে ভাব দেখাতে পারিস না আমার সাথে।’

দিহান নিরাশ হলো। চোখেমুখে তীব্র অসন্তোষ নিয়েই ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ কি সমস্যা তোর?এতদিন তো নিজেই এড়িয়ে গেছিস।হঠাৎ?এমন করছিস কেন?’

‘ দ্রিজা কনসিভ করেছে।এই উপলক্ষ্যে ওর গিফ্ট হিসেবে তোর পাশে থাকব বলে এসেছি।তোকে ভালোবাসব বলে এসেছি।এবার বল।রাজি?’

দিহান হাসল।বিষয়টাকে ততোটা গুরুত্ব না দিয়েই হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাল।সময় দেখে নিয়ে হাসিটা মুখে সেভাবে ঝুলিয়ে রেখেই বলল,

‘ শুধু দ্রিজার গিফ্টের জন্য?এইটুকু?আর কোন গিফ্ট পেলি না নেহা?’

নেহা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল।দিহান হাসল। আবারও বলল,

‘ বল?’

‘ তুই রাজি কিনা তা বল। তারপর বলব শুধু গিফ্ট কিনা অন্যকিছু।’

দিহান গমগমে কন্ঠেই বলল,

‘ যদি গিফ্ট হয় তো সে গিফ্ট দ্রিজাকে দেওয়ার দরকার নেই।আর যদি অন্যকিছু হয় তো ঠিকাছে।আমিও চাই আমার পাশে কেউ থাকুক।কেউ আমার দুঃখগুলে বুঝুক।কেউ আমায় ভালোবেসে আগলে রাখুক।তবে গিফ্টের অযুহাতে মিথ্যের বেড়াজালে জড়াতে চাই না আমি।আমি তোকে ভালোবাসি না স্বীকার করছি।সবটা জেনে পাশে থাকবি?’

নেহা অনেকক্ষন চুপ থাকল।গাল ফুলিয়ে বুকে হাত ভাজ করে রেখেই দিহানের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষন।দিহান হতাশ হলো।নিজের প্রশ্নের কাঙ্খিত উত্তর না পেয়েই মুখ কালো করে নেহার চাহনিতে দৃষ্টি ফেলল।নেহার চাহনির নড়চড় ঘটল না।একইভাবেই তাকিয়ে রইল দিহানের দিকে।অনেক্ষন চুপ থেকেই কঠিন গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

‘ ওকে ফাইন।তোর পাশে থাকলাম।থাকব।তুই আমায় ভালোবাসলেও কি না বাসলেও কি। আমি তো কেবল এটা জানি, আমি তোকে ভালোবাসি। এনিওয়েজ,শুনেছিস দ্রিজা কনসিভ করেছে?’

দিহান মৃদু হাসল।ঘড়ির দিকে আরেকবার নজর রেখেই বলল,

‘ তোর কাছে শুনলাম।আচ্ছা যাই?আমার একটা টিউশনি ছিল।’

নেহা ঠোঁট টেনে হাসল।বাচ্চা বাচ্চা চাহনি ফেলে মাথা দুলাল। যার অর্থ দিহান যেতে পারে।দিহান হাসল। নেহার ফুলকো বাচ্চামতো গাল দেখেই হাসিটা আরো উজ্জ্বল হলো।
হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে মন চাইল উজ্জ্বল ফর্সা ফুলকো গাল দুটো।কি অদ্ভুত সুন্দর!

.

আজ অনেকদিন পরই অত্রিয়া আর নেহার জোরাজুরিতে সেই অন্ধকার, শ্বেতশ্বেতে রুমটা থেকে বেরিয়ে এল অদ্রিজা।সন্ধ্যার আগ মুহুর্তের আলোটা বেশ চমৎকার ঠেকল এতদিন পর। বসন্তের ফুরফুরে বাতাসে গাছের পাতা গুলো বেশ সুন্দর ভাবে নড়েচড়ে উঠছে।আশপাশেই গাড়ির যান্ত্রিক আওয়াজে ভারী হওয়া মাথা নিয়ে নিজের দুপাশে নেহা আর অত্রিয়া দুইজনের দিকেই তাকাল।পার্কের ভেতর গিয়ে কাঠের বেঞ্চিগুলোর একটা দখল করে তিনজন আরাম করে বসতেই দেখা মিলল ছোট ছোট পিচ্চি ছেলেমেয়েগুলোর।এই ছেলেমেয়েগুলোকে সে আগেও দেখেছে।বেশ পরিচিতও তারা।অদ্রিজাও বোধ হয় তাদের কাছে অনেক বেশি পরিচিত।তাই তো তাকে দেখা মাত্রই ছুটে এলো।মুখে খিলখিল হাসি ফুটিয়েই সবাই একসাখে বলে উঠল,

‘ অদ্রিজা আপ্পি।’

অদ্রিজা হাসল।ফর্সা ধবধবে তুলতুলে গালে চমৎকার এক হাসি ফুটিয়েই বলল,

‘ কেমন আছো তোমরা?’

সবাই একসাথে সাই দিল,

‘ অন্নেক ভালো।তুমি?’

অদ্রিজা মুচকি হাসল।মৃদু গলায় বলল,

‘ ভালো।’

এরপর আবার ও একেকজন একেক খেলায় মেতে উঠল। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো মুহুর্তেই সবগুলো ছেলেমেয়ে। অদ্রিজা মুচকি হেসেই সামনের হাওয়াই মিঠাই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে কাছে ডাকল। সেখান থেকে সবাইকে একটা করে হাওয়াই মিঠাই ধরিয়ে দিয়েই আবারও এসে বসল সেখানটাতেই।ততক্ষনে মধ্যবয়স্কা একটা মহিলা এসে দাঁড়াল সেখানে।মুখে হাসি ফুটিয়ে সবগুলো বাচ্চা কে বলে উঠল,”সবাই চলো।ফিরতে হবে এবার।সন্ধ্যা হচ্ছে।”কথাটা বলতেই বাচ্চারা ছুটোছুটি করল।এলেমেলো হয়ে বেরিয়ে গেল পার্ক থেকে।মহিলাটা অদ্রিজার সামনে এসেই মিষ্টি হেসে বলল,

‘ কেমন আছেন? আচ্ছা, রক্তিম স্যার কবে ফিরবেন?’

অদ্রিজা মিনমিনে চাহনিতে তাকাল।মহিলা শুকনো ঢোক গিলে আবারও বলল,

‘ না মানে, ওরা তো ল্যাপটপের স্ক্রিনে দিনে দুবার তিনবার রক্তিম স্যারকে দেখে।কথা বলে আরকি।তবে আসার বিষয়ে কিছু জানান না।আপনাকে কিছু বলেছে কল করে?’

অদ্রিজা সুপ্তশ্বাস ফেলল। স্পষ্টভাবে বলল,

‘ দুঃখিত খালা।উনার সাথে আমার কথা হয় না।তাই জানিও না।’

মহিলা আর কথা বাড়াল না।স্পষ্ট জবাবেই বোধ হয় চুপসে গেল।পা বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতেই অদ্রিজা বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকল।কিছু একটা ভেবেই নেহার দিকে তাকাল।গম্ভীর গমগমে কন্ঠে দ্রুত বলল,

‘ কল দে।’

নেহা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘মানে?কাকে কল দিব।’

‘ রক্তিম নামে তোর যে ফুফাত ভাই আছে তাকে ভিডিও কল দে।দ্রুত।’

নেহা নিরাশ চাহনিতে তাকাল কয়েক সেকেন্ড। তারপর কল দিয়েই মোবাইলটা হাতে নিয়ে ধরল।ওপাশ থেকে কল রিসিভড করতেই ফোনের মসৃন স্ক্রিনে ভেসে উঠল রক্তিমের ঘুম ধরানো ফোলা মুখ।চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই ব্ল্যাংকেট মুড়ি দিয়ে মোবাইলটা ধরে রাখল সে।কানে ইয়ারফোন গুঁজা।নেহা কি বলবে তার অপেক্ষাতে থেকেই চোখ বন্ধ করে রাখল সে।অনেকক্ষন পরও যখন নেহা কিছু বলল না তখন রক্তিম চোখ বন্ধ রেখে নিজেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

‘ কিরে?কল দিলি কেন এই সময়?’

নেহা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল।মৃদু গলায় বলল,

‘ দ্রিজা তোমার সাথে কথা বলবে।কথা বলো।দ্রুত।’

রক্তিম এবার চোখ মেলে চাইল।একেবারে স্বচ্ছ চাহনিতে স্ক্রিনে তাকিয়ে অদ্রিজার মুখটা খুঁজল। নেহার পাশে অদ্রিজার মুখটা দেখেই মুহুর্তেই নজরটা ভিন্নরকম হলো। ঘোরধরা চাহনিতে বেশ কিছুটা সময় অদ্রিজার মুখটা দেখল সে।মুচকি হেসেই চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে উঠল,

‘ আমার সাথে হঠাৎ কথা বলতে চাইছেন যে অদ্রিজা?কি ব্যাপার বলুন তো?প্রেমে পড়ে গিয়েছেন সেটা জানাতে নাকি ভালোবাসেন তা জানাতে?’

অদ্রিজা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।নেহার থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েই নিজের হাতে ধরল।ক্ষ্রিপ্ত গলায় কঠিন নজরে রক্তিমের মুখপানে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ একদমই নয়।আমি আপনাকে ভালবাসি না।বাসি না ভালো আপনাকে। একটা সময় হয়তো বলেছি ভালোবাসি।ঐটা ভ্রম ছিল শুধু।আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভ্রম।আর হ্যাঁ,এসব ফালতু রিজনে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইব না কখনোই।’

‘ তাহলে? ‘

অদ্রিজা রাগল।অদৃশ্য ক্ষোভ নিয়ে ফোঁসফাঁস করে ফুঁসে উঠেই বলে উঠল,

‘প্রথমত আপনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন এটা জানানের জন্যই চিঠি পাঠিয়েছেন নেহাকে দিয়ে?কি দরকার ছিল এসব ফর্মালিটি করার?কি দরকার? দ্বিতীয়ত, আমি আপনার কথায় আমার সন্তানকে ভালো রাখব আশা করলেন কি করে।আমি আমার সন্তানকে নিজের বিবেকবোধ নিয়েই বেশ ভালোভাবে বড় করব।আপনার কোন প্রয়োজন নেই।কোনই না।সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন?আপনি একটা সন্তানের বাবা হওয়ার যোগ্যই না।হয়তো সেই ভয় পেয়েই পালিয়ে গেলেন চুপিচুপি।হাস্যকর!এনিওয়েজ,জাস্ট এই কথাগুলো বলার ছিল আমার।না বললে শান্তি হতো না।’

রক্তিম মুচকি হাসল।দাঁত কেলিয়ে হেসেই ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

‘ কে জানে হয়তো সেই ভয়ে নয়, সেই ভয়কে জয় করতেই পালিয়ে আসলাম চুপিচুপি।এনিওয়েজ,এবার শান্তি পেলেন?’

অদ্রিজা ফুঁসে উঠল।ভ্রু কুঁচকে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইল রক্তিমের মুখের দিকে।রক্তিম মৃদু হাসল। শান্ত গলায় আবারও বলল,

‘ শান্তি হয় নি?আরো কিছু বলবেন? বলে ফেলুন।যত খুশি রাগ ঝাড়ুন।আপনার রাগী ফেইসটা দেখতে ভালোই লাগছে আমার।ইচ্ছে হচ্ছে তাকিয়েই থাকি। এতটা সুন্দর কেন আপনি?ভাবতেই অবাক লাগে আপনার মতো এক সুন্দরী কন্যা আমায় ভালোবাসে।কিভাবে পসিবল?’

অদ্রিজা। বিড়বিড় করল কিছু।দ্রুত কল রেখে নেহার হাতে ধরিয়ে দিল মোবাইলটা। রক্তিমকে ইচ্ছেমতো মনে মনে দোষারোপ করেই ক্ষান্ত হলো না সে।কঠিন কন্ঠেই শুধাল নেহাকে,

‘ নেহা। ঐ জঘন্য ঘৃণ্য লোকটাকে বলে দিবি আমি তাকে ভালোবাসি না।উনার মতো একটা মানুষকে ভালোবাসা যায়ই না নেহা।উনি একটা নিকৃষ্ট মানুষ।উনার মন বলতে কিছু আছে নাকি আদো?আর ঐ নিকৃষ্ট মানুষকে ভালোবাসব আমি?পসিবলই না।’

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here