হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব-১০

0
2609

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃভূমি

শীতের সকাল মানেই কুয়াশাচ্ছন্ন কোন এক শীতল সকাল।অদ্রিজা মুগ্ধ চাহনিতে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাল।চারদিকটা ঝাপসা দেখাচ্ছে।দূরের গাছগাছালি গুলোও আবছা হয়ে মিশে গেছে ধূসর রংয়ের কোন এক মিশ্রনে।জানালাটা মেলে দিতেই বাইরে থেকে শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে গেল শরীর। অদ্রিজা হালকা কেঁপে উঠল।চিকন পাতলা ঠোঁটজোড়াও সেই শীতল বাতাসের স্পর্শে কেঁপে উঠল।সেই কেঁপে উঠাকে দ্বিগুণ করতেই বোধ হয় পেঁছন থেকে একজোড়া হাত আঁকড়ে ধরল তার কোমড়।পাতলা সুতি শাড়ির উপর সেই হাতজোড়ার উষ্ণ স্পর্ষ স্পষ্ট অনুভব করতে পারল সে।লোমকূপ কেঁপে উঠল সেই অনুভবের শিহরণে। মুখ ঘুরিয়ে পেছনের মানুষটার মুখ দেখার আগেই পেঁছনের লোকটা অদ্ভুত কাজ করে বসল। মাথাটা নুঁইয়ে অদ্রিজার কাঁধে রেখেই ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে দিল তার কাঁধে। এলোমেলো ভাবে করে রাখা খোঁপাটা খুলে দিয়ে নেশাতুর ভাবে মুখ ডুবাল অদ্রিজার খোলা চুলে।অদ্রিজা নুঁইয়ে গেল অদ্ভুত শিহরনে।কিছু বলতে চেয়েও পারল না বলতে। মুখ দিয়ে যেন বের হলো না একটা অক্ষরও।লতানো শিখার মতো লতিয়ে পড়ল যেন সে লোকটার বাহুবন্ধনে।হাত জোড়া দিয়ে শক্ত করে খামচে ধরল জানালার পর্দা।রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার শাড়ির তল দিয়ে হাতজোড়া দিয়ে জড়িয়ে ধরল মসৃন পেটের ধবধবে ফর্সা ত্বক।মুচকি হেসে মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,

‘ আজকের সকালটা কেন জানি ভিন্নরকম সুন্দর অদ্রিজা।আর কিছু মুহুর্ত পর বোধ হয় আরো সুন্দর হবে আমার জন্য এই সকালটা।আর আপনার জন্য? আপনার জন্যও কি ততটাই সুন্দর হবে অদ্রিজা?’

অদ্রিজা বুঝল না কিছুই।রক্তিমের হঠাৎ এমন আচরণেরও কোন মানে খুঁজে পেল না সে।বিয়ের রাতটা ছাড়া আর কোনদিন রক্তিম তাকে অনুমতি না নিয়ে স্পর্ষ করে নি।মাঝখানে একটা দিন কেবল জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল।অদ্রিজা মাথা ঘুরিয়ে রক্তিমের মুখটা চাইতে চাইলেও সম্ভব হলো না।রক্তিম আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে।মুখটা তার কাঁধে ভালোভাবে গুঁজে নিল। ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠল,

‘ উহ!সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন তো অদ্রিজা।আমাকে একটু শান্তি খুঁজতে দিন।প্লিজ!’

অদ্রিজা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।রক্তিম যে কাল রাতেও ঘুমোয়নি তা তার কাছে স্পষ্ট।না ঘুমিয়ে কি করে থাকে?কেনই বা ঘুমোই না এই লোকটা?অদ্রিজা বুঝে উঠে না।উশখুঁশ করে বলে উঠল,

‘ এমন করছেন কেন আপনি?’

‘ বললাম তো শান্তি চাই।শুনতে পান নি?’

অদ্রিজা হতাশ হয়ে শ্বাস ফেলল।চোখ মুখ শক্ত করে জানালা দিয়ে নিরন্তর চেয়ে রইল বাইরের ঝাপসা শহরটার দিকে।রক্তিম কয়েক মিনিট নিশ্চুপ থেকে সেভাবেই রইল অদ্রিজার ঘাড়ে মুখ গুঁজে। মুচকি হেসে শীতল কন্ঠে বলল,

‘ আপনাদের কোম্পানির সবটুকু পাওনা, দেওনা আজ মিটিয়ে দেওয়া কম্প্লিট হয়ে যাবে অদ্রিজা।আপনার পাওনাটুকু কম্প্লিট হয়ে যাবে আজ।আর আপনার বাড়িটাও ফেরত পেয়ে যাবেন দিন কয়েক পর। আপনার কাজ এবার শেষ। আজকের পর আপনি চাইলে সবটা ছেড়েছুড়ে চলে যেতে পারেন অদ্রিজা।এমনিতেও এক মাস পর আপনি আপনার পথে আর আমি আমার পথে। এখন আপনি বলুন আজ নাকি একমাস পর?কবে যাবেন আমার জীবন থেকে?’

অদ্রিজা হকচকিয়ে উঠল।রক্তিমের শীতল কন্ঠে বলা কথাগুলো মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতেই পেঁছন ঘুরে দাঁড়াল অদ্রিজা।রক্তিমের থেকে নিজেকে সরিয়েই হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইল সে।এতটাই বোঝা সে রক্তিমের জীবনে?এই কয়দিনে রক্তিমের জীবনে এটুকু জায়গা করতে পেরেছে কিনা সে জানে না তবে এতটাও বোঝা হয়ে যাবে ভাবে নি সে।চোখজোড়া টলমল করতেই কঠোর চাহনিতে তাকিয়ে রইল অদ্রিজা।রক্তিমের মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়াল।দৃঢ় কন্ঠে বলল,

‘ আপনার জীবন থেকে আমি যাব না রক্তিম।একমাস পর বা একবছর পর।আমি যাচ্ছি না আপনার জীবন থেকে।বুঝতে পেরেছেন?’

রক্তিম বাঁকা হাসল।ফিচেল গলায় বলল,

‘ কেন?ভালো টালো বাসেন কি আমাকে?’

অদ্রিজা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।রক্তিমের দিকে কঠোর চাহনিতে তাকিয়েই বলল,

‘ আপনাকে ভালোবাসা যায় না রক্তিম।ভালোবাসতে চাইলে ও আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।যে আমার অনুমতি না নিয়ে শরীর ছুঁয়েছে তাকে ভালোবাসা যায় না।যে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দিহানের এক্সিডেন্ট করেছে।যে আমায় বারবার আঘাত করে।তাকে কি করে ভালোবাসি বলুন?তাছাড়া যে মানুষটা মনের এক গুচ্ছ আবেগ, স্বচ্ছ অনুভূতি নিয়ে খেলা করে তাকে তো কোনভাবেই ভালোবাসা যায় না রক্তিম।’

রক্তিম হেসে উঠল আওয়াজ করে।অদ্রিজা কপাল কুচকে একনজর তাকিয়েই সরে আসতে চাইল সেখান থেকে।নেহাকে ডেকেছিল সে তার মামনির সাথে দেখা করতে যাবে বলে।তখন থেকে রক্তিমের জন্য যেতে পারছিল না।এখন রক্তিমকে হাসতে দেখেই পা বাড়িয়ে চলে আসতে চাইল।কিন্তু পারল না।রক্তিম পেঁছন থেকে হাতটা শক্তভাবে ধরে রেখেই বলল,

‘ ফাঁকি দিচ্ছেন আমায়?এতটা আদর, এতটা ভালোবাসা দিয়ে পাহারা দেওয়ার পরও আপনি আমায় ফাঁকি দিয়ে ঐ মহিলার সাথে দেখা করতে যাবেন?’

অদ্রিজা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল রক্তিমের দিকে।মুখে চমৎকার হাসি ঝুলানো।এতক্ষন এই কাছাকাছি আসার অভিনয়টা তবে অদ্রিজাকে আটকানোর জন্যই ছিল।অদ্রিজা বুঝে উঠেই তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।রক্তিমের প্রতি ঘৃণাটা যেন আরো গাঢ় থেকে গাঢ় হয়ে উঠল।তীব্র তাচ্ছিল্য মুখে ফুটিয়েই বলে উঠল,

‘ আমার হাতটা ছাড়ুন রক্তিম।আপনি এতটা খারাপ আমি ভাবিইনি। ‘

রক্তিম হাসল।ডান ভ্রুটা উঁচু করেই বলল,

‘ আমার সম্বন্ধে অল্প একটু ও ভালো ভেবে রেখেছেনই বা কেন অদ্রিজা?’

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল।হাতটা রক্তিমের হাত থেকে ছাড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করেই হাঁপিয়ে উঠল। কপালে ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু।মুখ চোখে লড়াইয়ের ময়দানে সদ্য হেরে যাওয়া সৈন্যের ন্যায় এক সমুদ্র দুঃখ নিয়ে তাকাল রক্তিমের দিকে।রক্তিম তা দেখেই মুচকি হাসল।অদ্রিজাকে চমকে দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিয়েই বলল সে,

‘ যান। ছেড়ে দিলাম আপনার হাত।গো ফার্স্ট অদ্রিজা।নয়তো আপনার কাঙ্খিত ইচ্ছেটা পূরণ হবে না।এমনিতেও পূরণ হবে বলে মনে হয় না।গিয়ে হয়তো দেখবেন দরজায় তালা ঝুলানো।’

অদ্রিজা আর এক পা ও দাঁড়াল না।রক্তিমের কথার উত্তরও দিল না।দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে এসেই রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াতেই নেহার দেখা মিলল।নেহার চোখে মুখে উপচে পড়া বিরক্তি।অদ্রিজাকে দেখেই মুখে চোখের সেই বিরক্তিটা রাগে রূপান্তরিত হলো।দাঁতে দাঁত চেপেই অদ্রিজার পিঠে কিল লাগিয়ে বলল,

‘ এতক্ষন লাগে তোর?তুই নিজেই বলেছিস সকাল সকাল আসতে। আর নিজেই হাওয়া।আমি সে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’

অদ্রিজা কিছু বলল না।রিক্সা ডেকে দ্রুত উঠে পড়ল।থমথমে মুখ চাহনি নিয়ে পাশে বসা নেহার দিকে এক পলক চাইতেই রিক্সাটা শা শা করে এগিয়ে গেল।নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামতেই ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে একপ্রকার দৌড়েই গেল সেই বাসাটার সামনে দুজনে।গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দাড়োয়ানকে দেখেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল অদ্রিজা,

‘ রুহানা চৌধুরী আছেন? কাল বাড়ি ফিরেন নি উনি?’

দাড়োয়ান ছোট ছোট চোখে তাকাল।কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

‘ উনি তো চইলা গেলেন মাত্র।এই বিশ- পঁচিশ মিনিট হইতেছে চইলা গেছেন উনি।’

অদ্রিজা হতাশ হলো।জোরে জোরে বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়েই দুর্বল কন্ঠে বলল,

‘ বাসা থেকে বেরিয়েছেন মাত্র বিশ-পঁচিশ মিনিট?কোনদিকে গিয়েছেন উনার গাড়ি।বলুন।’

লোকটা কপাল কুঁচকে তাকাল।অদ্রিজা আর নেহাকে বার কয়েক দেখে নিয়েই বলল,

‘ হু, ডানদিকের মোড় দিয়াই গেছে।তবে আপনারা তারে পাইবেন বলে মনে হয় না।এতক্ষনে মনে হয় অনেক দূর চইলা গেছে।আর আপনাদের তো গাড়িও নাই দেখতাছি।’

অদ্রিজা ছোট ছোট চোখ করে নেহার দিকে তাকাল।মৃদু গলায় বলল,

‘ শিট!দেখাটা হলো না নেহা।দেখাটা করতে পারলাম না আমরা।’

নেহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অদ্রিজাও জোরে জোরে শ্বাস ফেলল।ধীর পায়ে কয়েক কদম গিয়েই নেহার দিকে চকচকে চোখে তাকাল অদ্রিজা।বলল,

‘ নেহা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?উত্তর দিবি তো?’

নেহা আনমনেই বলল,

‘ উত্তর জানলে উত্তর দিব না কেন আমি।বল।’

অদ্রিজা মৃদু হাসল।বলল,

‘ রক্তিম আর রুহানা চৈধুরী?উনাদের সম্পর্ক কি?কে হয় তারা একে অপরের। তুই জানিস?বল প্লিজ।’

নেহা মিনিমিনে চোখে চাইল।ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

‘ রক্তিম ভাইয়ার মা হয় মামনি।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় কি জানিস দ্রিজা? রক্তিম ভাইয়া তার মা বাবাকে ঘৃণা করেন।না উনার মা কে ভালোবাসেন আর না উনার বাবাকে।উনি কখনো উনার মা বাবাকে মা- বাবা বলে ডাকেন ও না। ‘

অদ্রিজা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল।নেহার কথাগুলো ঠিক হজম হলো না তার।মাথার ভেতর উশখুঁশ করতে লাগল প্রত্যেকটা কথা। নেহার মামনিই যদি রক্তিমের মা হয় তবে রিয়াদ সাহেবের স্ত্রী? উনি কে হন?উনি রক্তিমের মা নয়?অদ্রিজা কিছুই বুঝে উঠল না। অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,

‘ মানে?’

‘ মানে হলো রক্তিম ভাইয়ার আম্মু হয় মামনি।বুঝেছিস?’

অদ্রিজা সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে রইল।মাথার ভেতর সব তালগোল লেগে গেছে।কিছুই বোধগম্য হলো না।মৃদু কন্ঠেই জিজ্ঞেস করল,

‘ রিয়াদ মাহমুদ?উনার বাবা রিয়াদ মাহমুদই তো?’

নেহা বলল,

‘ হু।উনিই রক্তিম ভাইয়ার বাবা।’

অদ্রিজা এবার বিভ্রান্ত চাহনি নিয়ে এপাশ ওপাশ চাইল।মাথার চুলগুলো দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ কিসব বলছিস নেহা?রিয়াদ মাহমুদের ওয়াইফ?উনি কে তাহলে?আর উনারা যে বলেন, উনারাই রক্তিমের বাবা মা।সেসব?আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না নেহা।বুঝিয়ে বল।’

নেহা মিনমিনে চোখে চেয়েই কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই পেঁছন থেকে ভারী পুরুষালী কন্ঠ বলে উঠল,

‘ লিটল ওয়াইফ?বলে দিয়েছো সব!আমি তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি। বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়।বলেছিলাম অদ্রিজাকে কিছু না বলতে।কিন্তু তুমি তাও বলে দিয়েছো।বিশ্বাসটা রাখলে না।’

অদ্রিজা মাথা ঘুরিয়ে চাইল। রক্তিমকে দেখেই হিমশীতল হয়ে গেল শরীরের রক্ত।শীতল চাহনি।চোখমুখে অদ্ভুত শীতল একটা ভাব জমেছে তার।সাদা ধবধবে লম্বা চওড়া শরীরের পরনে কালো রংয়ের শার্ট।হাতাগুলো কনুই পর্যন্ত গুঁটানো।ঘন কালো চুলগুলো কপালে কিছু অংশ ঝুঁকেছে।মুখের খোঁচা দাঁড়িগুলোও সুন্দর মুখটাকে আরো সুন্দর করে তুলল যেন।অদ্রিজা রক্তিমের দিকে এক নজর চেয়েই নেহার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ নেহা? তুই বল। কোন বিশ্বাস, অবিশ্বাসের কথা মনে রাখার দরকার নেই।’

রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার দিকে একনজর তাকিয়েই নেহার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমি তোমায় সেই ছোট্ট থেকে অনেক অনেক স্নেহ এবং ভালোবাসা দিয়েছি লিটল ওয়াইফ।তোমায় বিশ্বাস করাটা নিশ্চয় আমার ভুল নয় বলো?তুমি বিশ্বাসযোগ্য তাই বিশ্বাস করেছিলাম।এনিওয়েজ, তোমায় আমি এখনো অনেক স্নেহ করি নেহা।আশা করি তুমি এমন কিছু করবে না যার জন্য তোমার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে যাক।তাই না?’

নেহা ভড়কে গেল।কি বলবে বুঝে উঠল না।বিভ্রান্ত চাহনি নিয়ে একবার অদ্রিজা তো একবার রক্তিমের দিকে তাকাল।কিছু বলে উঠার আগেই রক্তিম অদ্রিজাকে টেনে আনল রাস্তার অপরপাশে।ফিসফিসিয়ে বাঁকা হেসেই বলল,

‘ আপনি যে ধীরে ধীরে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন বুঝতে পারছেন আপনি?টের পাচ্ছেন?ভাবুন তে?অন্যবার রুহানা চৌধুরীর সাথে দেখা করতে আপনি এতটা উৎসাহী থাকতেন কি?হঠাৎ এইবার এত উৎসাহ?কাল রাতেও যখন আপনি দেখা করতে আসলেন তখনও আপনি এতটা উৎসাহী ছিলেন কি অদ্রিজা?ছিলেন না।যখনই আমার সাথে ঐ মহিলার সম্পৃক্ততা খুঁজে পেলেন তখন থেকেই আপনি এতটা উৎসাহী হয়ে উঠলেন।এটা কি হতে পারে বলুন তো?আমার সম্পর্কে এতটা কৌতুহলই বা কেন আপনার?বলুন।’

অদ্রিজা থামকে যাওয়া চাহনি নিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাল।মুখে অন্যরকম দুষ্টুমিমাখা হাসি ঝুলছে।তার বলা কথাগুলো যে খুব একটা ভুল তাও নয়।অদ্রিজা হাঁসফাঁস করে এদিক ওদিক তাকাল। রক্তিমের কথাগুলো যে সত্যি তা খুব একটা বুঝতে না দিয়েই বলল,

‘ ফালতু কথা বলবেন না রক্তিম।’

‘ উহ!ফালতু কিংবা ভালো যায় হোক।আমি শুধু এইটুকুই জানাতে চাইছিলাম যে, আমাকে নিয়ে কৈাতুহলটা কমিয়ে নিন অদ্রিজা।একটা মানুষকে ভালো লাগলে, কিংবা তার প্রতি ইন্টারেস্টেড হলে তবেই আমরা তার প্রতি কৌতুহলি হয়ে পড়ি।দিনশেষে ভালোবেসে ফেলি।আপনার ক্ষেত্রে যাতে সেটা না ঘটে তাই সতর্ক করলাম।’

অদ্রিজা থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।রক্তিম কথাগুলো বলেই ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল অদ্রিজার কপালের ছোট ছোট চুল গুলো।মুচকি হেসে সরে গেল সেখান থেকে।অদ্রিজা এখনও সেভাবেই তাকিয়ে রইল রক্তিমের যাওয়ার পথে।লোকটা অদ্ভুত।রক্তিম নামক মানুষটাকে বুঝে উঠা আসলেই সম্ভব কিনা সে জানে না।কখনো শীতল, তো কখনো গম্ভীর, কখনো বা হাসিখুশি, আবার কখনো রাগের ঝটলা!অদ্ভুত তো।

#চলবে…..

{ গল্প কি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে,কিংবা একই ঘটনা বারবার প্যাঁচিয়ে লিখছি?গল্পে তেমন রহস্য নেই তবুও যাদের কাছে মনে হচ্ছে বেশি বেশি রহস্য আমি দুঃখিত।তাছাড়া যেটুকুই রহস্য আছে একপর্বেই কি সবটা উম্মোচন করে দেওয়া উচিত? আর যাদের কাছে পড়তে বিরক্ত লাগছে তার জন্যও দুঃখিত।ভলত্রুটি গুলো তুলে ধরবেন আর কেমন হয়েছে জানাবেন।সবাইকে ভালোবাসা।আর হ্যাঁ, গল্পের প্রধান চরিত্র অবশ্যই রক্তিম আর অদ্রিজাই।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here