#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১১
লেখনীতেঃ ভূমি
অদ্রিজা রিয়াদ সাহেবের রুমের পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষন।ভদ্রলোকের পত্রিকা পড়া শেষ হয় নি।কপালে ভাজ ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে আবারও নিজের রুমে গেল।বেলকনিতে রক্তিমের দিকে একবার উঁকি দিয়েই আবার বেরিয়ে আসল রুম থেকে । রিয়াদ সাহেবের রুমের সামনে এসেই উঁকি দিয়ে বিজয়ী হাসি হাসল।ভদ্রলোকের হাতে এখন পত্রিকা নেই।তার মানে পত্রিকা পড়া শেষ।অদ্রিজা আর অপেক্ষা করল না।পর্দা সরিয়েই উশখুশ করে বলে উঠল,
‘ বাবা?আসব? ‘
রিয়াদ সাহেব ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল।চশমাটা খুলে মুঁছে নিয়ে আবারও চোখে লাগালেন।গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
‘ এসো মা।অনুমতি নেওয়ার কি দরকার।তুমি যখন তখন আসতে পারো।বাবা মানো তো আমায়?’
অদ্রিজা মেকি হাসল।পা বাড়িয়ে রিয়াদ সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই বলল,
‘ হু, অবশ্য মানি বাবা।একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’
‘করো।’
অদ্রিজা হাঁসফাঁস করে এদিক ওদিক চাইল।কথাগুলো ঠিক কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝে উঠল না।কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে মস্তিষ্কে কথাগুলো সাঁজিয়ে নিয়েই মৃদু গলায় বলে উঠল,
‘ রুহানা চৌধুরী কি আপনার স্ত্রী?উনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি বাবা?আর রক্তিমের মা কে বাবা?রুহানা চৌধুরী নাকি বাসায় যিনি আছেন উনি?যদি রুহানা চৌধুরীই রক্তিমের মা হন তবে আপনাদের সাথে থাকেন না কেন উনি?রক্তিমেরই বা আপনাদের প্রতি এই আচরণ কেন বাবা?বলবেন আমায়?’
রিয়াদ সাহেবের মুখে মৃদু হাসিটা যেন মুহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেল।মুখে চোখে ফুটে উঠল তীব্র গাম্ভীর্যের ভাব।সরু চাহনিতে একনজর অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বললেন,
‘ তুমি রুহানার সম্পর্কে কি করে জানলে?কিভাবে জানলে?’
অদ্রিজা নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে হতাশ হলো।উল্টো রিয়াদ সাহেবের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েই ছোট ছোট চোখ করে চেয়ে থাকল উনার দিকে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শুকনো ঢোক গিলতেই সেখানে উপস্থিত হলো রক্তিম।অগোছাল চুলগুলো একহাতে পেছনে ঠেলে দিয়ে শার্টের হাতা গুলো গুঁটাতে গুঁটাতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
‘ মিস্টার মাহমুদ?অদ্রিজার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।উনাকে উনার মায়ের বাসায় যেতে হবে।উনার মা অসুস্থ।কয়েকদিন ওখানে থেকে উনার মায়ের সেবা করলে হয়তো উনার মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হবেন। তাই না অদ্রিজা?’
অদ্রিজা মুখ চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকাল রক্তিমের দিকে।হঠাৎ মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে বুকের ভেতর জমা হলো অজানা ভয়।মিনমিনে চোখে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
‘ কি হয়েছে আম্মুর?কেমন আছে এখন?আপনি কিভাবে জানলেন?’
রক্তিম মুচকি হাসল।হালকা কেঁশেই বলল,
‘ আপনার ছোটবোন কল করেছিল।কল রিসিভড করার পর বলল আপনার মা অসুস্থ।যাবেন আপনার মায়ের কাছে?’
‘ হ্যাঁ,অবশ্যই যাব।’
রক্তিম সেভাবেই হাসল।বেরিয়ে আসতে আসতে বলল,
‘ চলুন।’
অদ্রিজা ও বেরিয়ে আসল।রিয়াদ সাহেবকে না বলেই রক্তিমের পিঁছু পিঁছু বেরিয়ে আসল বাসা থেকে।রক্তিম যেন তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারল।মুখে বিশ্বজয়ী হাসি। নিজের গাড়িতে না উঠেই রাস্তায় এসে সূর্যের মৃদু রোদে দাঁড়িয়ে রইল।অদ্রিজা বিরক্তি হয়েই কপাল কুঁচকে বলল,
‘ আমি মায়ের কাছো যাব রক্তিম।এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’
রক্তিম মুখ নামিয়ে অদ্রিজার মুখের দিকে তাকাল। সাদা,ছোট্ট তুলতুলে মুখটা নুঁইয়ে আছে চিন্তায়।কপালে ভাজ স্পষ্ট।মৃদু হেসেই বলল রক্তিম,
‘ রিক্সায় করে নদীর পাড়ে যাব অদ্রিজা।’
অদ্রিজার বিরক্তিটা এবার দ্বিগুণ হলো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আপনি না গেলেও কিছু হবে না রক্তিম।আমি একাই যেতে পারব।আপনি বরং নদীর পাড়ে যান।’
কথাটা বলেই পা বাড়াতে লাগলেই রক্তিম অদ্রিজার বাম হাতটা ঝাপটে ধরল।অদ্রিজা বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রক্তিম অসহায় চোখে তাকাল।চোখজোড়ায় যেন সহস্র আকুতি মিনতি এসে ভীড় করল মুহুর্তেই।অদ্রিজা সেই আকুতি বুঝতে চাইল না।চেষ্টাও করল না বুঝার।বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘ আমার আম্মু অসুস্থ রক্তিম।আমাকে আম্মুর কাছে যেতে হবে।হাত ছাড়ুন।’
রক্তিম হাত ছাড়ল না।রিক্সা ডেকে উঠে বসেই বলল,
‘ উঠে বসুন।আপনার মায়ের কিছুই হয়নি।উনি সুস্থ আছেন।’
অদ্রিজা চোখ বড়বড় করে তাকাল।রক্তিমের কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রক্তিম আবারও বলল,
‘ উঠুন তো।’
অদ্রিজা উঠে বসল।রক্তিমের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ মিথ্যে বলেছেন কেন তাহলে?’
রক্তিম ভাবলেশহীন হয়েই বলল,
‘ এমনিই।’
.
রিক্সাটা এসে থামল নির্দিষ্ট জায়গায়।সেইখান থেকে কিছুটা দূরেই নদী।রাস্তা থেকে পা ফেললেই সবুজ ভেজা ঘাস।মৃদু শীতল বাতাসে নড়েচড়ে উঠছে গাছের সবুজ পাতাগুলো।দূরে একটা গাছে লাল শিমুল ফুল গুলো গাছের সবুজ পাতাকে লুকিয়ে রেখে লাল রক্তিম সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলল গাছটাকে।গাছের নিচটায় সবুজ ঘাসে ঝরে পড়েছে সেই গাছেরই অনেকগুলো ঝরা শিমুল ফুল। অদ্রিজা মিষ্টি হাসল।ফুলগুলোর দিকে তাকিয়েই মৃদু গলায় বলল,”সুন্দর।”রক্তিম অদ্রিজার হাসিটা দেখে নিয়েই দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল ফুলগুলোর দিকে।মাথা ঝুকিয়ে অদ্রিজা কানের কাছে বলল,
‘সুন্দর।’
অদ্রিজা চমকে পাশ ফিরে তাকাল।নিজের কথারই পুনরাবৃত্তি দেখে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ছোট শ্বাস ফেলল।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘ এখানে কেন এসেছি আমরা?’
রক্তিম উত্তর দিল না।চুপচাপ পা বাড়াল সামনের দিকে।অদ্রিজাও কিছু বুঝে না উঠে রক্তিমের পেঁছন পেঁছন পা বাড়াল।নদীর কাছাকাছি এসে সবুজ ঘাসে রক্তিমকে পা লেপ্টে বসে পড়তে দেখেই সরু চোখে তাকাল।বলে উঠল,
‘ এখানে কেন এনেছেন আমায়?আজব!’
রক্তিম ছোট ছোট চোখ করে তাকাল।পাশে দাঁড়িয়ে রমণীর কপালের চুলগুলো নদীর পাড়ের মৃদু হাওয়ায় নড়েচড়ে উঠছে।অপলক চাহনতে অদ্রিজার চোখের দিকে তাকিয়েউ বসতে বলল তাকে।লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,
‘ আমাকে নিয়ে কৌতুহলটা বদ্ধ ঘরে তালা দিয়ে দিতে বলেছিলাম আমি আপনাকে।আপনি শুনলেন না অদ্রিজা।আবারও মিস্টার মাহমুদের কাছে সেসব প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত হলেন নিজের কৈাতুহল মেটাতে।চলুন আপনার কৌতুহলগুলো মিটিয়ে দি। হু?’
অদ্রিজা চকচকে চোখে তাকিয়েই বলল,
‘ সত্যি?’
রক্তিম তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।বলল,
‘ বলব যখন বলেছি তখন বলবই অদ্রিজা।এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারেন।’
অদ্রিজা চুপ রইল।রক্তিম ছোট্ট শ্বাস ফেলেই বলতে শুরু করল,
‘ গল্পটা একটা ছোট ছেলের অদ্রিজা।তখন তার বয়স আট কি নয় হবে। প্রতিদিন বাবা মায়ের ঝগড়া, ঝামেলা এসব দেখেই সে বড় হচ্ছিল।বাবা মায়ের সরল রূপের সাথে সে পরিচিত ছিল না।বাবা সবসময় গম্ভীর হয়ে ঘুরে বেড়াত তার সামনে।বাবার সামনে আসলেই সেই ছোট্ট ফুটফুটে ছেলেটি ভয়ে কুঁকড়ে মরত। কোনদিন বাবার কাছে কোন আবদার রেখেছিল বলে মনেও পড়ে না।আর মা?ছোট্ট ছেলেটা তার মাকে আঁকড়ে তার সবটুকু সময় কাঁটাতে চাইত।বাবার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকলেও মাকে অতোটাও ভয় পেতনা সে।মাকে অনেকটা ভালোবাসত।কিন্তু সে মা তাকে সময় দিতে পারত না।মায়ের কাছে সে আবদার, বায়না রাখলে উনি বিরক্ত হতেন।ঝাঁঝালো কন্ঠে কয়েকটা কথা বলেই সরে যেতেন ছেলেটার কাছ থেকে।গেইস করুন তো, ছেলেটা কে?’
অদ্রিজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।অস্ফুট স্বরে বলল,
‘ আপনি?আপনিই সেই ছেলেটা রক্তিম?’
রক্তিম শব্দ করে হেসে উঠল।ভেজা সবুজ ঘাসগুলোর উপর চোখ বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুঁয়ে পড়েই হাতজোড়া মাথার নিচে রাখল।সেভাবেই চোখ বন্ধ রেখে বলল,
‘ আপনি যে রুহানা চৌধুরীর পেঁছনে পড়ে আছেন?সে মহিলাটা একটা চরিত্রহীন মহিলা।খুব খারাপ মহিলা অদ্রিজা।’
অদ্রিজা চমকে উঠল।কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ নিজের মা সম্পর্কে কিসব বলছেন আপনি?’
রক্তিমের মধ্যে তেমন একটা ভাব উদয় হলো না।আগের মতোই চোখ বন্ধ রেখে বলল,
‘ রুহানা চৌধুরী আর রিয়াদ মাহমুদ বায়োলজিক্যালি আমার পেরেন্টস। আপনাকে যে গল্পটা শুনিয়েছি সে গল্পের বাবাটা হলো রিয়াদ মাহমুদ।আর মা হলো রুহানা চৌধুরী।ছোট্ট আট নয় বছর বয়সী ছেলেটা হলো রক্তিম মাহমুদ।রক্তিম যখন অনেক ছোট, কোমল শরীরে এদিক সেইদিক ঘুরে বেড়াত তখন থেকেই সে একা, নিঃসঙ্গ ভাবে বড় হয়েছে অদ্রিজা।দশবছর বয়সে এসে তার মা অন্য একজন লোকের সাথে পালিয়ে গেল তার অর্থ, প্রাচুর্যতার লোভে।কি ভাবছেন?তার বাবা তাকে আগলে রেখেছিল?ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়ে বড় করে তুলেছে? নাহ।তেমন কিছুই করেননি তিনি।সবাই যখন বলল, ছেলের দেখাশোনা করার জন্য আরেকটা বিয়ে করে নেওয়া উচিত? উনি আরেকটা বিয়ে করে ও নিলেন তার প্রথম স্ত্রী চলে যাওয়ার একমাসের মাথায়।ছোট্ট রক্তিম কেন জানি না তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নিতে পারে নি।কোনভাবেই পারেনি মেনে নিতে।তবে ভদ্রমহিলা রক্তিমকে অনেক আদর করত, অনরক খেয়াল ও রাখত, অনেকটা ভালোও বাসত হয়তো। কিন্তু ঐ যে, রক্তিম ছেলেটা অদ্ভুত?সে কারণেই হয়তো সে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নিতে পারল না।দুই মাসের মাথায় নিজের নিঃসঙ্গ, একা জীবনটা নিয়ে একদিন মাঝরাতে বেরিয়ে গেল অন্ধকার রাস্তায়। শহরের অলিতে গলিতে তার মা কে খোঁজার চেষ্টা করল।কিন্তু তার মা যে অন্য একজনের হাত ধরে উন্নত দেশে পাড়ি জমিয়েছে তা হয়তো তার মস্তিষ্ক তখনো বুঝেই উঠে নি।সেইদিন রাতে আমায় অনেক খোঁজা হলো।অবশেষে পেয়েও গেল।বাসায় ফেরার পর রুমের দরজা লাগিয়ে তার বাবা তাকে অনেক কথা শোনাল।মেরেছিলও তাদের মাঝরাতে এই ভাবে খোঁজাখোঁজি নিয়ে বিরক্ত করার জন্য।রক্তিম সেইদিন কেঁদেছিল। প্রচুর কেঁদেছিল অদ্রিজা।আর কাঁদে নি।আরো কোনদিনও কান্না তার চোখে আসে নি।’
অদ্রিজা নিশ্চুপে বসে থেকে রক্তিমের বলা সবগুলো কথা শুনল।শুকনো ঢোক গিলে রক্তিমের দিকে তাকাল।এই যুবকটির মাঝে এতগুলো সুপ্ত দুঃখ আছে কোনদিন আন্দাজও করে নি সে।এতটা হাসি খুশি থাকা যুবকটির মনে এত বিষাদ কে বুঝবে?চোখ জোড়া ছল ছল করল। রক্তিমের দিকে তাকিয়েই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ তারপর?’
রক্তিম মুচকি হাসল।চোখ মেলে অদ্রিজার মুখের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ তারপরের দিন রক্তিমের সবথেকে প্রিয় মানুষ, তার নানী এসেছিল। রক্তিমের গালে তখন মিস্টার মাহমুদের চড়ের পাঁচ আঙ্গুলের চাপ জ্বলজ্বল করছিল।দুই গাল সহ, হাতেও উনার আঘাতের চিহ্ণ ছিল।রক্তিমের নানী তা দেখেই অবাক হলো।সেদিনই নিয়ে আসলেন রক্তিমকে উনার সাথে। তারপর থেকে রক্তিম তার নানীর সাথেই বড় হয়েছে। এই দুনিয়ায় রক্তিমের নানী ব্যাতীত রক্তিমের আর কেউ নেই অদ্রিজা।না কোন বন্ধু, না বোন, না ভাই, আর না মা- বাবা। ‘
অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল।ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল রক্তিমের দিকে।রক্তিম চাপা হাসি নিয়ে উঠে বসেই বলল,
‘ আপনাকে আজ সব বলে দিয়েছি অদ্রিজা।আর কোন কৌতুহল নিশ্চয় নেই আপনার।বলুন?এরপর এসব নিয়ে আর ছুটোছুটি করবেন নাহ।মনে থাকবে?’
অদ্রিজা হঠাৎ বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলাল যে সে আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে না।রক্তিম হেসে বলল,
‘ গুডগার্ল।তাহলে এবার আপনার মায়ের কাছে চলুন।যাওয়া যাক।’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে তাকাল সঙ্গে সঙ্গে।বলল,
‘ আপনি তো বললেন আম্মুর কিছু হয় নি তাহলে?’
রক্তিম কিছু বলল না।উঠে আসল সেখান থেকে।অদ্রিজা রক্তিমের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে হতাশ হলো।চোখ মুখ নামিয়ে হেঁটে চলল রক্তিমের পিঁছু পিঁছু।
.
ক্লাস শেষে নেহা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তায় রিক্সার জন্য দাঁড়াতেই চোখে পড়ল দিহানকে। ধীর পায়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে দিহান।নেহা মুখ কাচুমাচু করে এদিক সেদিক ফিরে তাকাল।নিজের থেকে কয়েক হাত দূরে যুবকটিকে দেখেই যে অস্বস্তির উদ্ভব ঘটেছে নিজের মধ্যে তা লুকোতেই দ্রুত রিক্সা পাওয়ার প্রার্থনা করল।কিন্তু কোন খালি রিক্সা তখন চোখে পড়ল না।দিহান যখন পাশ কাঁটিয়ে চলে যাচ্ছিল তখনই অনেকটা ভয়ভীতি নিয়ে বলে উঠল সে,
‘কেমন আছিস দিহান?সেদিনের পর আর দেখা হয় নি তোর সাথে। ‘
দিহান মুচকি হেসে বলল,
‘ দিব্যি আছি। তুই?’
নেহা দিহানের দিকেই তাকিয়ে ছিল এক ধ্যানে। দিহান আবারও জিজ্ঞেস করাতে হকচকিয়ে মেকি হাসল সে।হাতে হাত কচলে বলল,
‘ হু?আমিও ভালো।কোথায় যাচ্ছিস ?ভার্সিটির ক্লাস তো শেষ।’
দিহান সরু চাহনিতে তাকাল নেহার দিকে। মৃদু হেসে বলল,
‘ কিছু নোটস নেওয়ার ছিল।দ্রিজা আসে নি আজ?’
নেহা মিষ্টি হাসল।তারপর বলল,
‘ না। আসে নি।কল করে বলেছিল আজ আসবে না।’
দিহান ছোট্ট শ্বাস ফেলল।মৃদু গলায় বলল,
‘ ওহ।’
নেহা মুচকি হাসল।সামনের যুবকটির সাথে কথা বলার এক সমুদ্র সমান ইচ্ছা থাকলেও কথোপকোতন বাড়ানোর আর কোন কথা খুঁজে পেল না সে।যুবকটিও আর কোন কথা বাড়াল না।তাকে পাশ কাঁটিয়ে চলে গেল নিজস্ব গন্তব্যে।নেহা সেদিক পানে তাকিয়েই হতাশ হয়ে শ্বাস ফেলল।এই যুবকটিকে দেখলেই যে বুকের ভেতর অনুভূতি গুলো রঙ্গিন হয়ে উঠে তা কি আধো কোনদিন এই যুবকটি বুঝবে?কোনদিন সেও কি প্রকাশ করতে পারবে?জানা নেই!
.
অদ্রিজাদের বর্তমান বাসার সামনে এসেই গাড়িটা থামল।অদ্রিজা গাড়ি থেকে নেমেই রক্তিমের দিকে তাকাল।রক্তিম ও তাকাল। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ বাসায় না গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন অদ্রিজা?’
‘ আপনি যাবেন না?’
রক্তিম মুচকি হাসল।তারপর বলল,
‘ অবশ্যই যাব।’
অদ্রিজা মিষ্টি হাসল।কিন্তু সেই হাসিটা বেশিক্ষন টিকল না।বাসায় ডুকে নিজের রুম অব্দি যেতেই হাসিটা উধাও হলো মুখ থেকে।রক্তিম একটা ফাইল এগিয়ে দিয়েই বলল,
‘ আপনার সব পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে অদ্রিজা।সবটুকু কম্প্লিট!এবার আপনি মুক্ত।রাইট?’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল।বলল,
‘ মানে?’
রক্তিম হাসল।বলল,
‘ আপনার মা কে বলে দিয়েছি আপনি এক সপ্তাহের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছেন।এক সপ্তাহ পর্যন্ত উনি আপনাকে যেতে দিবে না ঐ বাসায়।এই এক সপ্তাহ আপনার ছুটি।এটাই বলছিলাম।’
‘ তো?’
রক্তিম নির্বিকার ভাবে বলল,
‘ কিছুই না।এই এক সপ্তাহ আপনি কোন কৌতুহলের অযুহাতে যাতে আমার কাছে ছুটে না আসেন তাই আজকে সবটা বলে দিলাম।আর,আজকে সকাল থেকেই আমি এত খুশি ছিলাম কেন বলুন তো?এই যে আজ থেকে এক সপ্তাহ আমি মুক্ত এই জন্যই।আপনি নামক অসুখটা আর সইতে পারছি না আমি অদ্রিজা।তিলে তিলে মারা যাচ্ছি আমি।’
অদ্রিজার বুকে মুহুর্তেই অনুভব হলো অন্যরকম ব্যাথা।রাগ আর কষ্টে বিষিয়ে উঠল মন।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ সবটাই আপনার প্ল্যান?তবে এই এক সপ্তাহ মুক্তি চাইছেন তো?দিলাম মুক্তি।কিন্তু এক সপ্তাহ পর এই অসুখটাই আপনাকে আষ্টেপৃষ্টে আক্রান্ত করবে রক্তিম।সামলাতে পারবেন তো এই অসুখটাকে তখন?তখন কিন্তু শত চেয়েও আপনি মুক্তি পাবেন না।’
রক্তিম হাসল।কানের কাছে ফিসফিসিয়ে,” বাই” বলে বেরিয়ে আসল।অদ্রিজা হতবাক হয়ে চেয়ে রইল রক্তিমের দিকে।
#চলবে…..
{ কেমন হয়েছে জানাবেন।}