হৃদয়_রেখেছি_জমা পর্ব১

0
1818

#হৃদয়_রেখেছি_জমা পর্ব১
অরিত্রিকা আহানা

প্লেনে উঠে নির্ধারিত সীটে চুপচাপ বসে আছে মেহরিন। এনএস আই থেকে উজবেকিস্তানের একটা মিশনে পাঠানো হচ্ছে তাঁকে। মিশনটা একাই হ্যান্ডেল করতে হবে মেহরিনকে। সেখানকার স্থানীয় পুলিশ অবশ্য সহযোগীতায় থাকবে কিন্তু বাংলাদেশি কোন এজেন্ট থাকবে না। সিক্রেট মিশন! তাই যথাসম্ভব কনফিডেনসিয়াল রাখার চেষ্টা করছে এনএসআই। ফ্লাইট টেইক অফ করবে এমন সময় পাশের সীটে মাহমুদকে দেখে রীতিমত চমকে উঠলো সে। গোলগোল চোখে চেয়ে থেকে বললো,’তুমি?’

মাহমুদ দাঁত কেলিয়ে হাসলো। হাতের আঙুল দিয়ে ঝাঁকড়া চুলগুলো ব্রাশ করতে করতে বললো,’বস তোমার ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না তাই জোরপূর্বক আমাকে পাঠানো হয়েছে। আমার অবশ্য আসার কোন ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু ভাবলাম ছুটি যখন আছে তখন এনাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি। সেই সাথে….না থাক!’ পুরো কথাটা শেষ করলো না সে।

এমনিতেই তাঁকে দেখেই মেজাজ একশো দুই ডিগ্রী হাই হয়ে গেছে মেহরিনের। তারওপর এমন গা জ্বালানো কথাবার্তা। তেতে উঠে বললো,’সেই সাথে কি? সেই সাথে যদি আমার মিশনে খানিকটা বাগড়া দেওয়া যায় ক্ষতি কি? তাইতো?’

মাহমুদ হাসলো। ডান হাতের তর্জনী দিয়ে মেহরিনের নাকে আলতো করে একটা টোকা দিয়ে বললো,’এক্সেক্টলি। ইউ গট মাই পয়েন্ট!’

রাগ ক্রমাশয় বাড়ছে মেহরিনের। মাহমুদ তাঁর পাশে থাকা মানেই মেজাজ আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাওয়া। বদের হাড্ডিটা জ্বালিয়ে হাড়মাংস কয়লা করে দিয়েছে তাঁর। তথাপি বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললো,’এনা কোথায়?’

-‘পেছনে।’

ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে চাইলো মেহরিন। সঙ্গে সোহাগও আছে। অবাক হলো সে, তাঁকে একা পাঠানোর কথা বলে পুরো টিম পাঠানোর মানেটা কি?

বস্তুত আজকে সকালের আগে মাহমুদরা নিজেরাও জানতো না তারা মিশনে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইরফান আহমেদ খুব সুক্ষ্ম একটা চাল চেলেছেন। মেহরিনকে ফ্রন্টলাইনে রেখে শত্রুপক্ষের নজর হটানোটাই উনার মূল উদ্দেশ্য। কারন তিনি ভালো করেই জানেন এনএস আই এজেন্টের (মেহরিন) উজবেকিস্তানে যাওয়ার খবরটা চাপা থাকবে না। ইনফরমেশন লিক হবেই। সো, সেই অনুযায়ী প্ল্যানটা সাজাতে হবে তাঁকে। মাহমুদ, এনা এবং সোহাগ কেউই মেহরিনের সঙ্গে উজবেকিস্তান যাচ্ছে না। স্টপওভার এয়ারপোর্ট গুলোতে নেমে আলাদা আলাদাভাবে উজবেকিস্তান যাবে তাঁরা। এবং পরবর্তী ইন্সট্রাকশন না পাওয়া পর্যন্ত আত্মগোপন করে থাকতে হবে। কিন্তু মেহরিনকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে কথাটা বলে নি মাহমুদ।

উপরন্তু, খোঁচা মেরে বললো,’সোহাগ অবশ্য নিজে থেকেই এসেছে। তাঁর অতি প্রিয় মেহরিনের ম্যামের মিশনের আমি বাগড়া দেবো শোনার পর আর কিছুতেই আটকে রাখা যায় নি তাঁকে। আদর্শ প্রেমিক বলে কথা!’

-‘এসবের মানে কি?’, চটে গেলো মেহরিন। রাগলে তাঁর মুখ লাল হয়ে যায়। চোখে পানি চলে আসে। স্বভাবগত ভাবে খুবই আবেগপ্রবণ সে। রাগটা কিছুতেই সামলাতে পারে না। মাহমুদ ফের বিচ্ছিরিভাবে হেসে বললো,’ভালোবাসা! একেবারে খাঁটি ভালোবাসা।’

এক্ষেত্রে সোহাগের বর্ণনা দেওয়াটা খুবই জরুরী। এনএসআই এর নিরতিশয় ভদ্র এবং অমায়িক প্রকৃতির একজন এজেন্ট সে। নিজের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। হার্ডওয়ার্কিং এ্যান্ড কো-অপারেটিভ। তাঁর কেবল একটাই দোষ মেহরিনের প্রতি একটু বেশিই সহানুভূতিশীল সে। ব্যপারটা অবশ্য মাহমুদের নিজস্ব ধারণা। বাকিরা এর সঙ্গে একমত কিনা এই ব্যপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে সোহাগের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে যদি বলা হয় তাহলে মাহমুদের সবসময় পেছনে লাগার ব্যপারটা একদমই পছন্দ নয় তাঁর। কারণে অকারণে মেহরিনকে বিরক্ত করে মাহমুদ। তাই মাঝেমধ্যে মেহরিনের হয়ে প্রতিবাদ করে সে। কিন্তু মাহমুদ ব্যপারটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ইতোমধ্যে অফিসের অনেকেই সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছে মেহরিনের সঙ্গে গোপনে একটা রিলেশন চলছে তাঁর। আড়ালে কানাঘুষাও চলে তাদের দুজনকে নিয়ে। কিন্তু মেহরিনের সামনে ভয়ে বলার সাহস নেই কারো নেই।

আরো একবার নিজেকে সংযত করে নিলো মেহরিন। মাহমুদের খোঁচাটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে কাঠকাঠ গলায় প্রশ্ন করলো,’বলা হয়েছিলো আমাকে একা পাঠানো হবে। তাহলে তোমাদের পাঠানোর উদ্দেশ্যটা কি?’

-‘বললাম তো। টাকলু তোমার ওপর ভরসা করতে পারছিলো না।’

-‘এইকথাটা আমাকে সরাসরি বললেই তো হতো?’

মাহমুদ নিতান্ত অনিচ্ছা প্রকাশ করে বললো,’সেটা আমি কি করে জানবো? আমাকে এত প্রশ্ন করছো কেন?’

রাগে মুখ ফিরিয়ে নিলো মেহরিন। সে খুব ভালো করেই জানে এসব কেন হচ্ছে? তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস মাহমুদের কানপড়াতেই ইরফান আহমেদ বাধ্য হয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুবা হঠাৎ করে প্ল্যান চেইঞ্জ করবার আর কি কারণ থাকতে পারে? সব ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর মাঝখান দিয়ে মাহমুদের এন্ট্রি। একটা মিশনও সে শান্তি মতন কমপ্লিট করতে দেবে না মেহরিনকে। বাঁ হাত ঢোকাবেই!

সে রেগে আছে বুঝতে পেরে আর বেশি খোঁচালো মাহমুদ। পিছন ফিরে একঝলক সোহাগের দিকে চাইলো। বেচারার মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব! নিশ্চয়ই ভাবছে সুযোগ পেয়ে তার প্রাণপ্রিয় মেহরিন ম্যাডামকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দিচ্ছে মাহমুদ। তাঁর ভাবনাটাকে সত্যি প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে চোখে চোখ পড়তেই প্রচন্ড বিরক্তিকর এবং গাত্র জুলুনিদায়ক একটা হাসি দিলো সে। এই হাসির মানে সোহাগের অজানা নয়। এর মানে হচ্ছে তাঁর ধারণা সম্পূর্ণ নির্ভুল। পায়ে পা লাগিয়ে মেহরিনের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে মাহমুদ। চোখেমুখে অনুনয় ফুটে উঠলো তাঁর। নিঃশব্দে মাথা দুলিয়ে বোঝাতে চাইলো ‘প্লিজ স্যার!’ জবাবে আবারো হাসলো মাহমুদ। তবে এবারের হাসিটা একটু অন্যরকম।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here