💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ২

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ২

—বিকেলে তুষার মিষ্টিদের বাসায় গিয়ে মিষ্টির রুমে এসে মিষ্টিকে ডাকতে লাগলো।
তুষার – মিষ্টি,,, মিষ্টি,,, আরে এই মিষ্টি কই তুই?
—মিষ্টি বারান্দায় ছিল তুষারের আওয়াজ শুনতে পেয়ে রুমে আসলো।
মিষ্টি – কি হলো টা কি?এভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেন….?আমি কানে শুনতে পায় চেঁচাতে হবে না।
তুষার – রেডি হয়ে নে।
মিষ্টি – কেন। কই যাবো?
তুষার – জাহান্নামে যাবো। এত কথা না বলে তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ।
মিষ্টি – না আমি তোমার সাথে জাহান্নামে যাবো না।তোমার যেখানে ইচ্ছা তুমি সেখান একা যাও আমাকে নিয়ে টানাটানি করো কেন?
তুষার –
মিষ্টি –
তুষার – আরে তোকে নিয়ে একটু কফি শপে যাব।
মিষ্টি – কেন। আর হঠাৎ করে কফি শপে কি দরকার পড়ল?
তুষার – এত প্যাচাল পারস কেন? আগে চল পরে সব বুঝতে পারবি।
মিষ্টি – আচ্ছা তুমি পাঁচ মিনিট দাঁড়াও আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
তুষার – হুম রেডি হয়ে আমাদের বাসায় আস।আমি এখন যাই আর বেশি লেট করবি না কিন্তু।
মিষ্টি – আচ্ছা,, আচ্ছা যাও আমার লেট হবে না।
মিষ্টির আম্মু – কিরে তুষার একটু আগেই তো আসলি আর এখনই চলে যাচ্ছিস কেন?
তুই একটু বস আমি কিছু একটা বানিয়ে দেই খেয়ে যা।
তুষার – না আন্টি এখন কিছু খাবো না। এখন মিষ্টিকে নিয়ে একটু কফি শপে যাবো।
মিষ্টির আম্মু – ওহ আচ্ছা। তা মিষ্টি রেডি হয়ে গেছে নাকি?
তুষার – এখনও হয়নি হবে।
— মিষ্টির আম্মুর সাথে কথা বলে তুষার চলে গেল। মিষ্টি আর তুষারের ছোট বেলা এক সাথেই কাটছে। এখনও মিষ্টি বেশির ভাগ সময় তুষারের সাথেই থাকে। মিষ্টি তুষারের সাথে মেলামেশাতে মিষ্টির আম্মু আব্বু কোনো দিনই কিছু বলেনি।তুষারের আম্মু আব্বু ও মিষ্টিকে অনেক ভালোবাসে নিজের মেয়ের মতোই দেখে। তুষারের আম্মু আব্বু তো মিষ্টিকে তুষারের থেকে একটু বেশিই আদর করে।এই আদর ভাগাভাগি নিয়ে ও মিষ্টি আর তুষারের মাঝে অনেক ঝগড়া হয়।

সন্ধ্যার দিকে কফি শপে গিয়ে তুষার মিষ্টিকে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তুষার মেয়েটির সামনে গিয়ে মিষ্টিকে দেখিয়ে বলল।
তুষার – এ হলো মিষ্টি আমার গফ।
— তুষারের কথা শুনে মিষ্টির চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় হয়ে গেল। মিষ্টি মনে মনে বলতে লাগলো।
মিষ্টি – হায় আল্লাহ বলে কি ছেলেটা। আমি নাকি ষাঁড়টার গফ। কবে, কোন জন্মে?
তুষার – আমি মিষ্টিকে ভালোবাসি। তোমাকে না।আর তোমাকে কোনো দিন ও ভালোবাসতে পারবো না। আমি মিষ্টিকে বিয়ে করব।আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমাদের ফেমিলির সবাই রাজি শুধু ওর স্টাডির জন্য এখন বিয়েটা হচ্ছে না।
মিষ্টি – এই কথা গুলো শুনে আমার চোখ দুটো ষাঁড়ের ডিমের মত থুক্কু ষাঁড়ের তো ডিম হয় না। হাঁসের ডিমের মত বড় হয়ে গেল। এই ষাঁড়ের সাথে থাকতে থাকতে মুখ দিয়ে সব সময় ষাঁড় কথাটাই বের হয়।আমি শুধু হা করে তাকিয়ে তুষারের কথা গুলো শুনছি।
তুষার – তুমি যত তারাতারি এটা বুঝে যাবে আমি তোমাকে না মিষ্টিকে ভালোবাসি ততই তোমার কষ্ট কম হবে।
মেয়েটি – সত্যি তুমি ওকে ভালোবাস?
তুষার – হুম।
মেয়েটি – ওর মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?
তুষার – কি আছে কি নেই তা জানি না।তবে এটা জানি ভালোবাসা কিছু দেখে হয় না। ভালোবাসা তো এমনিতেই মনের অজান্তে হয়ে যায়। কখন, কিভাবে, কি দেখে ভালোবাসা হয় তা কেউই বলতে পারবে না। আমি শুধু এটা জানি আমি মিষ্টিকে ভালোবাসি।ও আমার পুরো পৃথিবী। ওকে ছাড়া আমার লাইফে অন্য কোনো মেয়েকে ভাবতে ও পারি না।
মিষ্টি – এত বালুপাস(ভালোবাস) আমাকে। আমি তো আগে জানতাম না।( মনে মনে…)

— মেয়েটা আর কিছু না বলে কান্না করতে করতে চলে গেল। তুষার ওর বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মিষ্টি বাইকে বসে আছে। মিষ্টি দু’হাতে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে মনের সুখে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে।
তুষার – তুই এত রাহ্মস কেন? দুইটা আইসক্রিম এক সাথে খাচ্ছিস। আর আমাকে একবার ও খেতে বললি না।
মিষ্টি – ষাঁড় আইসক্রিম খায় তা কি কখনও শুনছ? তুমি তো ষাঁড় নাম্বার ওয়ান। তাই তুমি ও আইসক্রিম খাবে না তা আমি জানি?
তুষার – তুই আর একবার আমাকে ষাঁড় বললে থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিব।
মিষ্টি – ষাঁড়কে ষাঁড় বলবো না তো কি ঘোড়া বলবো।(মনে মনে)
তোমার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে হলে তুমি নিজে কিনে খাও।আমার কাছে চাও কেন। টাকা নাই নাকি?
তুষার – এই আইসক্রিম গুলো কার টাকায় কিনা? কি বলব তোকে খা তুই। আইসক্রিম দুটো খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।
মিষ্টি – তুমি না বললে ও খাবো। আচ্ছা এখন বলোতো মেয়েটা কে ছিল। আর আমি কবে থেকে তোমার পৃথিবী হলাম। ভালোবাসা নিয়ে এত লেকচার দিলা যে কোনো মেয়ের পাল্লায় পরছো নাকি?
তুষার – পাল্লায় না পড়ার জন্যই তো এত লেকচার দিলাম। তুই কি বুঝবি মেয়েরা কেমন চিপকু হয়। তুই আমার পৃথিবী না ছাই। এই কথা গুলো তো ওই মেয়েকে পিছু ছাড়ানোর জন্য বলছি।
মিষ্টি – কি আমার বাহুবলি ফিল্মের হিরো প্রবাস গো।মেয়েরা তোমার পিছু পড়ে থাকবে।
তুষার – প্রবাস থেকে কম কিসে। দেখিস না সব মেয়েরা আমার জন্য পাগল।
মিষ্টি – ওই পাগল গুলোর সাথে তোমাকে ও পাবনা পাঠাবো। মনে হয় বাসায় আয়না নাই।তাই নিজের চেহারা ভালো করে দেখ নাই। ষাঁড়ের মতো দেখা যায় আর উনি আসছে প্রবাসের সাথে তুলনা দিতে।
তুষার – ওই তুই কি খাস রে।এত কথা বলিস কি করে?
মিষ্টি – যা ই খাই তাতে তোমার কি?
আগে বললা না কেন তুমি আমাকে একটা মেয়ের সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসছ তাও আবার তোমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে?
তুষার – কেন। আগে বললে কি হতো?
মিষ্টি – আর একটু বেশি সেজে আসতাম।
তুষার – কেন?
মিষ্টি – তাহলে মেয়েটা আমাকে দেখে আর একটু বেশি জেলাস ফিল করত।
— কথা গুলো বলতেই তুষার আর মিষ্টি হেসে দিল।এই সময় পাশ দিয়ে কয়েকটা ছেলে যাচ্ছিল।একটা ছেলে মিষ্টিকে দেখে বলল।
ছেলে – কি মাল মাইরি। কি হাসি। এমন একটা মাল আমাদের বাইকের পেছনে ও যদি থাকত।
— কথা গুলো বলেই ছেলে গুলো হাসা শুরু করে দিল।
তুষার – ছেলে গুলো মিষ্টিকে দেখে মাল বলাতে আমার সেই রাগ উঠে গেল।আমি ছেলে গুলোকে কিছু বলতে যাবো তখনই দেখি……. যে ছেলেটা মিষ্টিকে মাল বলেছিল মিষ্টি ওই ছেলেটার চুল ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে অনেক কিছু বলছে।
মিষ্টি – বাজে পুলা কি বললি আমাকে। আমি মাল?বাসায় তোর মা,বোন, ভাবী,ফুফু,খালা,চাচি,নানি,দাদি নাই। মেয়ে দেখলেই মাল বলতে ইচ্ছে করে তাই না?
মেয়েদের সম্মান দিতে শিখস নাই।আজ তোর সব চুল ছিড়ে নেব।কুত্তা কোথাকার তোর মত ছেলেদের জন্য আজ স্বাধীন দেশে মেয়েরা স্বাধীন ভাবে চলতে পারে না। কোনো মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার আগে ভেবে নিবি বাসায় তোর ও হয়ত বোন আছে।
তুষার – মিষ্টির কান্ড দেখে আমার সব রাগ চলে গেল।এখন তো বেচারা ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছে।
এই মিষ্টি করছিস কি ছাড় ওকে।
মিষ্টি – না ছাড়ব না। আজ ওর সব চুল ছিড়ে নিব।
তুষার – আর কিছুক্ষণ চুলে ধরে এভাবে ঝাঁকাতে থাকতে সত্যিই ওর চুল গুলো ছিড়ে যাবে।
মিষ্টি – তুষার আমার কাছ থেকে ছেলেটার চুল ছাড়িয়ে ছেলেটাকে চলে যেতে বলল।
তুষার – দেখিস ভাই। আর কোনো দিন কোনো মেয়েকে কিছু বলার আগে দেখে নিবি ওই মেয়ে ও এই মেয়ের মত নাকি।
মিষ্টি –
— ছেলেটা কিছু না বলে নিজের চুল নিয়ে কোনো মতে পালালো।সাথের ছেলে গুলো তো অনেক আগেই পালিয়ে গেছে।
তুষার – তুই পারিস ও বটে।
মিষ্টি – পারতে আর দিলা কই।ছেলেটাকে যেতে দিলা কেন। আর একটু থাকলে দেখতে পারতা। ওর সব চুল গুলো আমার হাতে থাকত।
তুষার – তুই যে এত গুন্ডি তা তো আমি আগে জানতাম না।
মিষ্টি – এখন তো জানছো।
তুষার – আচ্ছা তোর নাম মিষ্টি কে দিছিল?
মিষ্টি – কেন।
তুষার – না আমি ভাবছিলাম কি তোর নাম মিষ্টি না রেখে ঝাল রাখা উচিত ছিল।
মিষ্টি – আর তোমার নাম তুষার না রেখে ষাঁড় রাখা উচিত ছিল। এখন চলো বাসায় যাবো।

চলবে 💕