💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৪

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৪

তুষারের আত্মীয়,বন্ধুরা সবাই আসছে। মিষ্টি এখনও এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে কোথাও কিছু ভুল হলো না তো তা দেখছে। এর মাঝেই মিষ্টির ফ্রেন্ডরা ও এসে গেছে।
মিষ্টি – কিরে তোরা আসতে এত লেট করলি কেন?
নূহা – কি করবো বল সবাই এক সাথে হতে টাইম লেগে গেল।তার উপর এই সাজুরী তানু টা তো আছেই। মনে হয় র্বাথডে পার্টিতে না বিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।
তানু – একদম আমাকে কিছু বলবি না। আমার জন্য একটু ও লেট হয়নি। লেট তো করেছে নিহা।আমি ঠিক টাইমেই আসছিলাম। নিহা কে ই তো ওর বাসা থেকে গিয়ে আনতে হয়ছে।
নিহা – আমাকে কেন বলিস। নূহা বলেছিল আমাদের বাসায় যাবে। পরে আমরা এক সাথে আসব কিন্তু ও তো আমাকে না নিয়েই সোজা তোদের কাছে চলে আসছে।
নূহা – আমার তো মনে ছিল না কি করবো আমি?
নিহা – তোমারে তিন দিনের বাদাম ভেজানো বাসি পানি খাওয়ামু।ফইন্নি মন কই থাকে তোর?
তানু – তোদের মন থাকে এখানে সেখানে আর মাঝ দিয়ে আমার সাজুগুজু নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেছ।অসহ্য তোদের জন্য মেকআপ টা ও ঠিক করে করতে পারলাম না।
নূহা – কি!
নিহা – কি!
নূহা – মেকআপ করা হয় নি তোর?
নিহা – বইন আর কতো মেকআপ করবি তুই?
মিষ্টি – উফফ উফফ উফফ…….. কি শুরু করলি তোরা। ফইন্নির দল থাম। থাম বলছি। এখানে ও তোদের ড্রামা সহ্য করতে পারবো না।
তোরা তো স্টার জলসা কে ও হার মানাবি।একটার থেকে আরেকটা।
তানু – ও জানু তুমি আজ এতো ভালো হলা কি করে?
আমাদের থেকে বেশি ড্রামা তো তুই করিস।
মিষ্টি – আচ্ছা মানলাম আমি ও তোদের মত একটু একটু ড্রামা করি।তাই বলে কি আজ ও?
নূহা – কেন কুত্তি আজ এমন কি আছে যার জন্য তোর মত শয়তানের নানি ও ভালো মানুষ হয়ে গেল।
মিষ্টি – নূহা পেত্নী তোরে কিন্তু কাঁচা খামু।
এই তোরা সবাই আসলি জানু কই?
ও আসেনি কে?
তানু – জানু ওর নানু বাসায় গেছে। ওর নানু অসুস্থ।
মিষ্টি – কখন গেল আমাকে তো বললো ও না।
নিহা – আরে হঠাৎ করেই ওর নানু অসুস্থ হয়ে গেল। তাই হয়ত বলতে পারেনি।
তানু – ফইন্নি তুই কি এ বাসার কাজের লোক। এভাবে আছিস কেন।এখনও রেডি হসনি।
নূহা – আরে ওর ষাঁড়ের র্বাথডে বলে কথা। তাই তো ওর এত কাজ।
নিহা – ঠিকই দোস্ত এর মত কাম চুন্নি আজ এত কাজ করছে ভাবার বিষয়।
মিষ্টি – আরে আমাকে তো কথা বলার চান্স দিবি। তোরা ই বকবক করে যাচ্ছিস।আমাকে কিছু বলতে দে।
তানু – তোর কোনো বলা বলি নাই। আগে গিয়ে রেডি হয়ে আয় তার পর তোর সব কথা শুনব।
তুষার – মিষ্টি এই মিষ্টি একটু এদিকে আয় তো।
নূহা – তোরে তোর ষাঁড় ডাকে।
মিষ্টি – তুই আমার ষাঁড় আমার ষাঁড় করছ কেন ফইন্নি।
নিহা – এই নূহা মিষ্টির ষাঁড় বলিস কেন?মিষ্টির জানু বাবু ময়না টিয়া এগুলো বলবি।কখনও কি দেখছিস কোন গফ তার বফকে ষাঁড় ডাকে।তুই ও না পশুর সাথে তুলনা না করে পাখি সাথে করবি।তাই না রে মিষ্টি?
— সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিল।
মিষ্টি – তোরে তো আমি পানি ছাড়া কাঁচা খামু।
তুষার – এই মিষ্টি আসবি নাকি? কখন থেকে ডাকছি। আমি আসলে দুইটা উস্টা দিমু কইলাম।
মিষ্টি – মারা যাইতেছ নাকি। মুখে পানি দিতে হবে।
এত ডাকা ডাকির কি আছে?আসছি ত।
তানু – তারাতারি যা তা না হলে আবার উস্টা খেতে হবে।
— মিষ্টি দৌড়ে তুষারের রুমে চলে আসলো।দরজার সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে
মিষ্টি – কি হলো এত ডাকছো কেন?
তুষার – কোন ড্রেস পড়বো সিলেক্ট করে দে।দেখ এই ব্লু কালার পড়বো নাকি ব্ল্যাক?
— মিষ্টি রাগী লুক নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে
মিষ্টি – তুমি কি এই ড্রেস গুলো পড়বা?
তুষার – এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন। আর এই ড্রেস গুলোতে সমস্যা কি।ভালো ই তো।
মিষ্টি – ওই ফকিরের বংশধর র্বাথডে তে পুরোনো ড্রেস কেন পড়বা?
তোমার জন্য নতুন পাঞ্জাবি আনছি।তুমি ওই টা পড়বে।
তুষার – কখন এসব করলি তুই?
মিষ্টি – কখন করছি তা দিয়ে তোমার কি?
তুষার –
—মিষ্টি ওয়ারড্রব থেকে ব্লু কালারের একটা পাঞ্জাবি বের করে এনে তুষারের সামনে নিয়ে ধরলো
মিষ্টি – এই নেও এটা পড়বে তুমি।
— তুষার পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। তুষার যেমন পাঞ্জাবি পছন্দ করে এটা ঠিক ওরকম ই।একদম সিম্পল এর মাঝে। মিষ্টি খুব ভাল করেই জানে তুষারের কি পছন্দ আর কি অপছন্দ।
তুষার – তুই কি পড়বি?
মিষ্টি – লেহেঙ্গা।
তুষার – লেহেঙ্গা?
মিষ্টি – হুম। কেন কোনো প্রব্লেম নাকি?
তুষার – তুই শাড়ি পড়বি।শাড়ি তে তোকে অনেক সুন্দর লাগে।
মিষ্টি – এসব শাড়ি টারি আমি পড়তে পারব না। আমি সামলাতে পারি না। অসহ্য লাগে আমার কাছে।
তুষার – তুই শাড়ি না পড়লে আমি ও পাঞ্জাবি পড়ব না।
মিষ্টি – আমি এখন শাড়ি কোথায় পাবো?
আর তোমার র্বাথডে তে আমি শাড়ি পড়ে কি করব?
আমি তো বলছি আমি লেহেঙ্গা পড়ব।
তুষার – এখন আমার র্বাথডে হয়ে গেল। সকালে তো বলছিলি আমার মানে তোর আর তোর মানে আমার। তুই শাড়ি পড়বি এটাই ফাইনাল।
— তুষারের বেস্ট ফ্রেন্ড আবির তুষারের রুমের সামনে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরেই মিষ্টি আর তুষারের কথা শুনছিল।
আবির – কি মামা ভেতরে আসবো?
— তুষার আবিরের কথা শুনে দরজার দিকে তাকালো
তুষার – আরে তুই। তুই কখন আসলি।আমার রুমে আসতে তোর আবার পারমিশন লাগে নাকি। ভেতরে আয়।
— আবির তুষারের পাশে এসে তুষারের কাঁধে হাত রেখে
আবির – না তুই তো রুমে একা ছিলি না তাই ভাবলাম পারমিশন নিয়েই আসি।
মিষ্টি – আমি তাহলে যাই। তুমি রেডি হয়ে নিও।
আবির – কই যাবা তুমি?
মিষ্টি – নিচে যাবো। কত কাজ পড়ে আছে। আর আমাকেও তো রেডি হতে হবে।
তুষার – হুম তুই যা এখানে থেকে তোর কোনো কাজ নেই।
— মিষ্টি রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আবির তুষার কে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপর চড়ে বসলো।
তুষারের গলা চেপে ধরে বলতে লাগলো
আবির – শালা আমি যখন মিষ্টির সাথে প্রেম করতে চাই তখন ত বলো ও ওরকম মেয়ে না। এখন ত দেখি তুমি খুব জমিয়ে ওর সাথে প্রেম করতেছ।সোজা বলে দিলেই তো পারতি তুই ওকে লাইক করিস।
তুষার – আরে তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছুই না।
আবির – হুম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব টা ই দেখছি। আমাকে বোকা বানাতে আসবি না শালা। তা কতদিন ধরে এসব চলছে তোমাদের মাঝে?
— তুষার আবির কে সরিয়ে উঠে বসলো।
তুষার – দেখ আবির তোর মাথা থেকে আমাকে আর মিষ্টি কে নিয়ে এসব উল্টা পাল্টা চিন্তা বের করে দে।আমি আর মিষ্টি জাস্ট ফ্রেন্ড এর থেকে বেশি আর কিছুই নেই আমাদের মাঝে।
আবির – সত্যি?
তুষার – হুম ভাই 100% সত্যি।
আবির – তাইলে তুই আমার শালা হওয়ার জন্য রেডি হয়ে যা।
তুষার – আমি তোকে আগে ও অনেক বার বলছি মিষ্টি এসব লাইক করে না। আর ও যা মেয়ে গফ হিসেবে তোর লাইটাকে তেজপাতা করে দিবে।
আবির – ওই একদম আমার মিষ্টির নামে উল্টা পাল্টা কিছু বলবি না।
তুষার – তোর মিষ্টি! কেমনে কি ভাই?
আবির – ওটা তুই বুঝবি না। তুই রেডি হয়ে নিচে আয় আমি আমার মিষ্টির কাছে গেলাম।
তুষার – তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম কিন্তু।
— আবির আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে গেল। আবির অনেক আগে থেকেই মিষ্টি কে পছন্দ করে। কিন্তু আবির ভাবত হয়ত মিষ্টি আর তুষাররে মাঝে রিলেশন আছে।তাই সে আর এসব নিয়ে মিষ্টি কে কিছু বলে নি।

সন্ধ্যায় তুষার আবির আর ওদের কিছু ফ্রেন্ড দাড়িয়ে কথা বলছে। মিষ্টি রুমে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ছিল।এমন সময় মিষ্টি তুষারের আম্মুর ডাক শুনে দৌড়ে ওনার কাছে যেতে লাগলো।
তুষার আর আবির মিষ্টি কে দেখে একপ্রকার হা করে দাড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ পর দুজনের হুশ হল।তুষার আর আবির একে অপরের দিকে কয়েক বার তাকিয়ে আবার মিষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

মিষ্টি – আন্টি আমাকে ডাকছিলে?
তুষারের আম্মু – হুম তুই তো বলছিলি তোর নাকি ব্লু কালারের শাড়ি লাগবে। এই নে।
— শাড়ি হাতে নিয়ে তুষারের আম্মু মিষ্টির দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো বড় বড় করে আর মুখ হা করে দাড়িয়ে আছে।
মিষ্টি – আন্টি কি হলো তোমার। এভাবে হা করে তাকিয়ে আছ কেন?
— মিষ্টি আয়েশা বেগমের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে। ওনার হাত ধরে একটু ঝাঁকি দিলে।তিনি বাস্তবে ফিরে আসেন
তুষারের আম্মু – ও মা মিষ্টি এটা কি তুই আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস?
মিষ্টি – না আন্টি এটা মিষ্টি না। তোমার সামনে মিষ্টির ভুত দাড়িয়ে আছে।
তুষারের আম্মু – আরে ধুর মজা করিস না ত।আমার ত বিশ্বাস ই হচ্ছে না শাড়ি তে তোকে এত সুন্দর লাগে। দাঁড়া তোকে কাজল লাগিয়ে দেই কারো নজর লাগবে না।
— আয়েশা বেগম কাজল নিয়ে মিষ্টির চোখে গাঢ় করে কাজল লাগিয়ে দিল। কাজল লাগানো তে মিষ্টিকে আরও দ্বিগুণ সুন্দর লাগছে।
মিষ্টি – আন্টি কি শুরু করলা কি?
আমি আম্মুর শাড়ি পড়ছি আর লাগবে না। তুমি থাকো আমি যাই। ইশ কিভাবে কাজল লাগিয়ে দিলা এখন তো আমাকে পেত্নী লাগবে।
তুষারের আম্মু – আরে না রে পাগলী কাজল দেওয়া তে তোকে আরও সুন্দর লাগছে।

— তুষার আর আবির এখন ও ওই ভাবে হা করে দাড়িয়ে আছে। মিষ্টি তুষারের আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখলো ওরা দু’জন ওভাবে হা করে দাড়িয়ে আছে। মিষ্টি ওদের সামনে এসে হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলতে লাগলো
মিষ্টি – কি হলো মি.কেবলাকান্ত রা এখানে এভাবে হা করে দাড়িয়ে আছো কেন ভুত দেখছ নাকি?
আবির – ভুত না, ভুত না,,,,,,, পরি দেখছি।
তুষার – হ্যা ভাই জলজ্যান্ত নীল পরি।
আবির – খোলা চুলে হালকা মেকআপে নীল পরি।
তুষার – নীল কালারের চুরি আর এয়ারিং এ নীল পরি।
আবির – ভাই কাজলের কথা বললি না যে।
মিষ্টি – কি আবোলতাবোল বলছ তোমরা। মাথা ঠিক আছে তো। পরি দেখছ তা ও আবার নীল শাড়ি, খোলা চুল, হালকা মেকআপ, চুরি, এয়ারিং আর কাজল পড়া পরি?
পাগল গুলা পাবনা যাও তারাতারি। হঠাৎ করে তোমরা এমন পাগল হলে এখন তোমাদের বাবা মার কি হবে আর তোমাদের ফিউচার বউ,পুলাপান গুলার কি হবে?
আবির – তুমি আর কিছুক্ষন সামনে থাকলে সত্যিই পাগল হয়ে যাব।
— আবিরের এ কথা শুনে মিষ্টি এবার রেগে জোরে তুষার বলে চিৎকার করলো।মিষ্টির চিৎকার শুনে তুষার আর আবির দু’জন ই স্বাভাবিক হলো।এতক্ষণ ওরা যা যা বলেছে তা মনে করে মিষ্টির সামনে থেকে কোনো রকমে মান সম্মান নিয়ে পালিয়ে গেল।
তুষার – তোর জন্য আজ মরতে মরতে বেঁচে গেছি।
আবির – আমার জন্য?
তুষার – তা নয়তো কি?
আবির – শালা আমি না হয় আমার মিষ্টি জানু কে শাড়ি তে প্রথম দেখে পরি ভেবে ভুল করেছি। কিন্তু তুই ও কেন ওকে পরি বললি?
আমি তো সেই কবে থেকেই ওর প্রতি দূর্বল তাই ওর সামনে গেলেই কেবলাকান্ত হয়ে যায়। কিন্তু তুই ত ওকে ছোট থেকেই চিনিস আর ওর জন্য কিছু ফিল ও করিস না তাহলে তুই কেন ওর সামনে কেবলাকান্ত হয়ে গেছিলি?

চলবে 💞