💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৬

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৬

তুষার – তুই মানুষ হবি না?
মিষ্টি – এখন আমি মানুষ না তো কি?
তুষার – এখন তুই দু’পায়ের একটা গাধী।
মিষ্টি –
তুষার – আচ্ছা কাল একটা কাজে তোদের কলেজ যাব।কাল আমি তোকে কলেজে নিয়ে যাব রেডি হয়ে থাকিস।
মিষ্টি – আচ্ছা
তুষার – অনেক পড়ছিস আর পড়তে হবে না বেশি পড়লে আবার বিদ্যা নদী হয়ে যাবি।এখন খেয়ে ঘুমাতে যা। তুই তো আবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিস না।

–_—_—_—–_—_—-_—_—-_—-_-

সকালে তুষার মিষ্টি কে নিয়ে কলেজে গিয়ে ওর কিছু দরকারি কাজ সেরে বাসায় চলে আসার সময় মিষ্টির সাথে একটা মেয়েকে দেখতে পায়। মেয়েটা মিষ্টির সাথে হেসে হেসে হাত নাড়িয়ে কথা বলছিল।তুষারের দৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্য মেয়েটার উপর আটকে গেল।মেয়েটা আর কেউ না ওর হচ্ছে জান্নাত মিষ্টি বেস্টু।জান্নাত মিষ্টির থেকে একটু বেশিই সুন্দর। মিষ্টি ও সুন্দর কিন্তু জান্নাতের গায়ের রং মিষ্টির থেকে একটু ফর্সা।তুষার এই প্রথম কোন মেয়ের দিকে এভাবে লক্ষ্য করে তাকালো। বলা যায় তুষার জান্নাত কে দেখে লাইফে ফাস্ট ক্রাশ খাইছে।
তুষার – কে এই মেয়ে, নাম কি ওর?
মেয়েটা যেহেতু মিষ্টির সাথে কথা বলছে তার মানে মিষ্টি ওকে চিনে। আমার এই মেয়েটার সাথে কথা বলতে হবে। আর তার জন্য মিষ্টি কে পটাতে পারলে আমার আর কিছুই করতে হবে না মিষ্টি ই সব ঠিক করে দিবে।

কিছু চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে তুষার মিষ্টির কাছে আসলো। মিষ্টি বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনছিল।এই বিকেলে হঠাৎ করে তুষারের এত কিছু নিয়ে আসা মিষ্টির কাছে ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না।
মিষ্টি শুয়া থেকে উঠে বসলো আর কান থেকে ইয়ার ফোন টা খুলে পাশেই রাখল।মিষ্টি মনে মনে ভাবতে লাগলো।
মিষ্টি – যেই ষাঁড় কোনো দিন ও এক টাকা দিয়ে একটা চকলেট কিনে খাওয়াই নি সে কিনা আজ এত গুলা চকলেট, আইসক্রিম আর শুধু কি চকলেট আইসক্রিম চুড়ি ও আনছে। আমার জন্য আজ হঠাৎ করে এত ভালবাসা উতলে পড়ছে কেন। নিশ্চয় এর পিছনে কোনো না কারণ তো আছেই। হয়ত অনেক বড় কারণ আছে। তা না হলে এই কিপ্টার আমার জন্য এত কিছু আনার কথা না। আমার জন্য এত কিছু আনল বেপার টা কি?
তুষার – নিশ্চয় এই ফইন্নি টা আমাকে সন্দেহ করছে। মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তিন ঘন্টা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে কি এত ভেবে যাচ্ছে। না জানি এই খবিশ মেয়ের মাথায় কি চলছে। (মনে মনে)
মিষ্টি – বাছাধন আমার দিকে তাকিয়ে এত কিছু ভাবার দরকার নেই। তুমি যা ভাবছো তা ঠিকই সত্যি আমার মাথায় তোমাকে ফকির বানানোর ধান্দা চলছে। তুমি কোনো মেয়ের চক্করে পড়ছ তা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আজ যেহেতু তুমি নিজেই চকলেট আর আইসক্রিম এনে বলির পাঁঠা হয়ছ। তার মানে ভবিষ্যতে ও তোমাকে ই বলির পাঁঠা হতে হবে। আর প্রব্লেম নাই তুমি না হতে চাইলে ও আমি জোর করে তোমাকেই পাঁঠা বানাবো।
মিষ্টি মনে মনে এগুলো ভেবে বিশ্ব জয় করা একটা হাসি দিল।এখন মিষ্টির মনে হাজারো শয়তানি বুদ্ধি উঁকি দিচ্ছে।
তুষার – মিষ্টি
মিষ্টি – হুম বলো।
তুষার – মিষ্টিই
মিষ্টি – আমার নাম মিষ্টি তা আমার মনে আছে। একশো বার মিষ্টি মিষ্টি করে তা মনে করিয়ে দিতে হবে না।
তুষার – বজ্জাত মাইয়া। ভাব নিচ্ছে।এর সাথে এখন রাগলে চলবে না।(মনে মনে)
এমন করো কেন?
এই দেখো তোমার জন্য কত গুলো চকলেট নিয়ে আসছি।সব তোমার তুমি চাইলে আরও এনে দিব।
–তুষারের মুখে তুমি বলতে শুনে মিষ্টির প্রায় র্হাট এর্টাক হতে হতে হলো না।
মিষ্টি – ও রে বাবা আজ সকালে চাঁদ থুক্কু চাঁদ না সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠছিল?
তুষার – দেখ কত ঢং করতে পারে। একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।( মনে মনে)
মিষ্টি – এভাবে তুমি করে বইল না গো। এতো বালুপাশা হজম করতে পারবো না যে। তোমার মুখে তুমি ডাক শুনে মনে হলো অমাবষ্যার রাতে আকাশে চাঁদ উঠছে।
এত পিরীত না লাগিয়ে এখন বলো আসল বেপার কি?
তুষার – আমার ও এত ঢং করতে ভালো লাগে না। কিন্তু তুই তো এগুলো ই পছন্দ করিস।
মিষ্টি – আমি ঢং পছন্দ করি?
তুষার – আচ্ছা থাক এসব কথা।
এখন বল আজ কলেজে তোর সাথে ওই মেয়েটা কে ছিল?
তুষার কোন মেয়ের কথা বলছে তা মিষ্টি বুঝে ও না বুঝার ভান করে বললো।
মিষ্টি – কোন মেয়েটা?
তুষার – আরে কলেজের বারান্দা দিয়ে যে তোরা দু’জন কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলি।
মিষ্টি – আমি তো কলেজে এমন কতো মেয়ের সাথেই কথা বলি কিন্তু তুমি কার কথা বলছো?
তুষার – ধুর,,,,, আরে ওই সুন্দর মেয়েটা। লম্বা চুল ওয়ালা।
মিষ্টি – কোনো সুন্দর মেয়ে। কত জনের ই তো লম্বা চুল।
তুষার – মিষ্টি
আমি খুব ভালো বুঝতে পারছি আমি যার কথা বলছি তুই ওকে চিনে গেছিস পরেও আমার সাথে ফান করতেছিস।
মিষ্টি –
তুমি তো সব সময় বলতে আমি মেয়েদের দিকে তাকায় না। তাহলে আজ দেখলে কি করে সুন্দর মেয়ে, লম্বা চুল।
তুষার – যা জিঙ্গেস করছি শুধু তার উত্তর দে।না হলে এক থাপ্পড় দিয়ে চাপার সব কয়টা দাঁত ফেলে দিব।অনেক হয়ছে ন্যাকামি আর না।
— তুষারকে রেগে যেতে দেখে মিষ্টি একটু ভয় পেয়ে গেল।
মিষ্টি – না বাবা আর মজা করবো না। পরে আবার সত্যি আমার গালে চড় বসিয়ে দিবে।( মনে মনে)
ও আচ্ছা তুমি জানুর কথা বলছো তো?
তুষার – জানু আবার কে?
মিষ্টি – তুমি যার কথা বলছো ওর নাম জান্নাত। আমরা ফ্রেন্ডরা জানু বলে ডাকি।
তুষার – জান্নাত তোর কেমন ফ্রেন্ড?
মিষ্টি – কেমন ফ্রেন্ড মানে ও আমার বেস্টু।
তুষার – তা তোর বেস্টু কি আমার র্বাথডে পার্টিতে আসে?দেখলাম না তো।
মিষ্টি – ওর নানু অসুস্থ ছিল। নানু কে দেখতে নানুর বাসায় গেছিল। তাই পার্টিতে আসেনি।
তুষার – আচ্ছা তোর এই ফ্রেন্ড এর সাথে আমার কথা বলিয়ে দিতে পারবি?
মিষ্টি – কেন, কেন?
তুষার – সত্যি বলতে তোর ফ্রেন্ড কে আমার অনেক ভালো লাগছে। তাই ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই।
মিষ্টি – আমি আগেই বুঝেছি(মনে মনে)
হুম বুঝলাম কিন্তু তুমি কি জানুকে ভালোবাসো?
তুষার – ভালোবাসি কি না তা ঠিক জানি না কিন্তু প্রথম দেখাতে ই ওকে আমার ভালো লাগছে।আর আমি ওর জন্য কি ফিল করি এটা বড় কথা না। ও আমার জন্য কি ফিল করে তা আগে। কারণ আমার একার চাওয়াতে তো আর কিছু হবে না।
মিষ্টি – তার মানে ওর যদি তোমাকে ভালো লাগে তাহলে তুমি জানুর সাথে রিলেশন করবে?
তুষার – তা পরে দেখা যাবে। আগে তুই ওর সাথে কথা বলে দেখ।
মিষ্টি – ও আল্লাহ এই ষাঁড় টার দিকে মুখ তুলে তাকাও।এর যদি গফ হয় তাহলে আর আমাকে বিরক্ত করার টাইম পাবে না। তখন সারাক্ষণ গফ এর সাথে কথা বলতে বিজি থাকবে। ওরে জানুরে তোকে তো রাজি হতেই হবে। তোর হাতে এখন আমার সব স্বাধীনতা। ষাঁড় টা আমাকে অনেক জ্বালাইছে তোকে দিয়ে এর সুধ তুলবো।
মিষ্টি তো মনে মনে এসব ভেবে নাগিন ডান্স দিচ্ছে। কিন্তু তুষার কে এসব বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাহলে মিষ্টির সব প্লেন মাটি হয়ে যাবে।
তুষার – কি রে। কাল কি কথা বলার ব্যবস্থা করে দিবি?
মিষ্টি – না।
তুষার – কেন?
মিষ্টি – তুমি আমাকে সব সময় বকাবকি করো।কথায় কথায় আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলো।আমার কোনো কথা শুন না।আমাকে কোনো দিন ও ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাও না। আমাকে পড়াতে বসালে শুধু বকা দেও।আন্টি আমাকে আদর করলে ও শুধু হিংসে করো।আমি আবির ভাইয়ার সাথে কথা বললেও বকা দেও।
তুষার – আরও কিছু বাকি আছে? থাকলে বল আমি শুনতেছি।
মিষ্টি –
তুষার – আমাকে নিয়ে তোর এত অভিযোগ? আচ্ছা এখন থেকে তুই যা বলবি তাই শুনব।তোকে বকাবকি ও করবো না। তুই শুধু আমাকে কাল জান্নাতের সাথে কথা বলিয়ে দে।
মিষ্টি – ইশশ আমার ড্রামা গুলো কাজে আসছে মনে হয়। তোমায় নিয়ে অভিযোগ না ছাই। ফইন্নি আমি তো তোমাকে দিয়ে আমার কথা গুলো মানানোর জন্য এত ইমোশন ডালছি।আহো চান্দু আহো।অনেক জ্বালাইছ আমাকে। এখন তোমাকে বাঘে পেয়েছি। (মনে মনে)
তুষার – এই মিষ্টি?
মিষ্টি – হুম
তুষার – কিছু তো বল।

—————————————-
তুষার পরের দিন জান্নাতের সাথে কথা বলার জন্য মিষ্টির কথা মত মিষ্টির বলা জায়গায় গিয়ে জান্নাতের সাথে কথা বলে। জান্নাত কে তুষারের ভালো লাগে।তুষার এই ভালো লাগাকেই ভালোবাসার নাম দিল।

তুষার – মিষ্টি?
মিষ্টি – কি?
তুষার – এই মিষ্টি?
মিষ্টি – আরে কি?
তুষার – মিষ্টি ই
মিষ্টি – আরে কি কি কি?
তুষার – আমার মনে হয় আমি জান্নাত কে ভালোবেসে ফেলছি।
মিষ্টি – মানে।একদিন দুই তিন মিনিট কি কথা বলছো তার মানে কি ভালোবেসে ফেলছ?
তুষার – আরে ভালোবাসা কখন কি ভাবে কার উপর হয় তা কি বলা যায়। লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইড শুনছিস কখন ও?
আমার মনে হয় আমি জান্নাত কে ভালোবাসি এখন শুধু তুই আমাদের রিলেশন টা করিয়ে দে।
— মিষ্টি অনেকক্ষণ কিছু একটা ভেবে বলল
মিষ্টি – হুম রিলেশন করিয়ে দিব।কিন্তু আমি কিছু শর্ত আছে।
তুষার – কি শর্ত?
মিষ্টি – আছে। আগে বলো আমার শর্ত গুলো মানবা?
তুষার – এখন আমাকে দিয়ে যে কি কি করাবে তা আল্লাহ ই জানে। একটা থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশ টা দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। (মনে মনে)
হুম যে শর্ত দিবি সব মানবো।
মিষ্টি – আমাকে চকলেট, আইসক্রিম, ফুচকা, চুড়ি,নুপূর আরও আমি যা যা বলবো সব এনে দিতে হবে। আর হ্যা প্রতি দিন আমার সাথে ভুতের মুভি দেখতে হবে। চিমটি, কিল,ঘুসি, লাথি, কামড় যাই দেই না কেন রাগ করতে পারবে না। আমাকে বকবে ও না।
তুষার – এই মেয়ে সব সময় আমার পকেট ফাঁকা করার ধান্দায় থাকে। ফইন্নি মেয়ে একটা নিজের বাবার টাকা বাঁচিয়ে আমার বাবার টাকার উপর নজর দেয়। কি আর করবো এখন আমাকে বাঘে পেয়ে। আমাকে দিয়ে যে আরও কত কি করাবি তা আল্লাহ ভালো জানে। তোর মত পেত্নীর সাথে ভুতের মুভি দেখে আমি নিজেই জানি কবে ভুত হয়ে যাই। (মনে মনে)
মিষ্টি – কি হলো? বলো রাজি।
তুষার – হুম ঠিক আছে।

চলবে 💕