💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৯

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৯

তুষার – মিষ্টি আসছিল আর আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেল। কিছু দিন ধরে দেখছি ও জানি কেমন হয়ে গেছে। আগের মত কথা বলে না। আমার সামনে ও আসে না। কি হয়েছে ওর। মিষ্টি হঠাৎ করে এতে চেঞ্জ হয়ে গেল কেন?
কোন ছেলের সাথে প্রেম করে ছ্যাকা ট্যাকা খাইছে নাকি?

মিষ্টি – আমি রাতে বেডে শুয়ে আন্টির বলা কথা গুলো ভাবছি। আন্টির বলা প্রত্যেকটা কথার সাথে আমার মনের অনুভূতি গুলো মিলে যাচ্ছে। তার মানে আমি তুষার কে ভালোবাসতে শুরু করছি। কিন্তু কি ভাবে আমি তো কোন দিনও তুষার কে ওই ভাবে দেখিনি। আর তুষার তো জানু কে ভালোবাসে আমাকে না। আমি যদি সত্যিই তুষার কে ভালোবাসি তাহলে একথা গুলো কোন ভাবেই ওকে জানানো যাবে না। আমার ভালোবাসা একতরফা হয়েই থাক।হয়ত আমি কোন দিন ও তুষার কে আমার মনের কথা বলতে পারবো না কিন্তু আমি সারা জীবন ওকেই ভালোবেসে যাব।
— এদিকে তুষার ও মিষ্টির কথা ই ভাবছে। হঠাৎ করে মিষ্টির এতো চেঞ্জ তুষার মেনে নিতে পারছে না। তুষারের মনে মিষ্টি কে নিয়ে এক অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করেছে। মিষ্টি তো এমন ছিল না।
তুষার – বেডে শুয়ে ভাবছি কি হলো মিষ্টির?
মিষ্টি আমার সাথে ভালো করে কথা ও বলে না। ও কি কিছু নিয়ে আমার উপর রাগ করে আছে। আমার মিষ্টির সাথে কথা বলতে হবে। মিষ্টি আমার সাথে কথা না বলাতে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন?

★★★★★★

মিষ্টি – তুষার I love you, will you marry me?
তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি কোন দিন ও বিয়ে করবো না। এভাবেই নাতি নাতনির মুখ না দেখে মারা যাবো।
তুষার – তোর স্টার জলসার সিরিয়ালের এন্ড কবে হবে বল তো?
আজ আবার কি নতুন নাটক শুরু করলি?
মিষ্টি – নাটক না সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তুষার – হ সত্যিই তো। আমি মিথ্যা কখন বললাম। তোর এক্টিং সত্যিকারের মতই লাগে। তোর উপর দেখছি star plus + star jolsha + colors এর ভালোই প্রভাব পড়ছে।
মিষ্টি – আমি নাটক করছি না। আমি সত্যি বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এখন তুমি আমাকে না ভালোবাসলে আমি হাতের রগ কেটে সুইসাইড করবো। আর সুইসাইড নোটে তোমার নাম দিব।
তুষার –

ঠাস,,স,,,স,,,স
— মিষ্টি না,,,আ,,,,হ…… বলে গালে হাত দিয়ে জোরে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
মিষ্টি – আল্লাহ তাহলে এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।এমন ভোর বেলা এমন দুঃস্বপ্ন কেন দেখলাম?
ইশশ থাপ্পড় টা কত জোরে লাগছে। এটা স্বপ্ন না হলে আমি সিউর আমার ২/৩ টা দাঁত পড়ে যেত। লোকে বলে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় তাহলে আজ কি সত্যি ই ষাঁড় টা আমাকে থাপ্পড় দিবে?
আজ তো সারা দিন আমি তুষারের সামনে ও যাবো না।
— মিষ্টি কলেজ যাওয়ার জন্য রিকশার অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু কোন রিকশা আসার নাম গন্ধ ও নেই। মিষ্টি যেই হাটতে শুরু করলো তখনই কোথায় থেকে তুষার বাইক নিয়ে এসে মিষ্টির সামনে দাঁড়াল।
তুষার – ওই মিষ্টি বাইকে উঠ তোকে কলেজে নামিয়ে দিব।
মিষ্টি – হঠাৎ করে ষাঁড় টা কোথায় থেকে আসলো ওর সামনে কেন পড়তে হলো? (মনে মনে)
না আমি যেতে পারবো। তোমার এতো কষ্ট করতে হবে না।
তুষার – (চোখ রাঙিয়ে) উঠতে বলছি?
উঠ আর একটা কথা বললে একটা থাপ্পড় দিব।
মিষ্টি – এখন বাইকে না উঠলে সত্যি ই থাপ্পড় খেতে হবে। (মনে মনে)
বাইকে উঠে গেলাম আর কোন কথা না বলে।
তুষার – কি হয়েছে তোর?
কিছু দিন ধরে আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার সামনে ও আসিস না।
মিষ্টি – (আমি মনে মনে স্বপ্নের কথা ভাবছি)
কি হবে কিছুই তো হয়নি।
তুষার – কিছু না হলে আমার সাথে কথা বলিস না কেন?
রাগ করছিস আমার উপর। আমি কি কোন ভুল করছি?
মিষ্টি – এই ছেলেটা দেখছি আমাকে পাগল করে ছাড়বে। এতো কথা পেচায় কেন। আল্লাহ ই জানে কখন জানি মুখ ফসকে সব বলে দেই।(মনে মনে)
রাগ করবো কেন?
পড়ার চাপ একটু বেশি তাই বাড়ি থেকে বের হইনা।
— তুষার মিষ্টির কথা শুনে হাসতে লাগলো
তুষার – পড়ার চাপ তাও আবার তোর? এটা বেস্ট জোক্স ছিল।
— দুজন কলেজে এসে গেল। জান্নাত তুষার কে দেখা মাত্রই দৌড়ে আসলো।জান্নাত কে তুষারের সাথে দেখে মিষ্টির একটু ও ভালো লাগছে না। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে ও পারছে না।
মিষ্টি – জানুটা ষাঁড় টার সাথে এভাবে চিপকে আছে কেন। এই জানুটা কবে থেকে এতো চিপকু হলো? ইচ্ছে করছে জানুর চুল গুলো ছিড়ে ফেলি।কিন্তু জানু তো আমার বেস্টু। আমি ওদের কে কিছু না বলে ক্লাসে চলে গেলাম।

বিকেলে…..★★★
তুষার – মিষ্টি চল।(মিষ্টির হাত ধরে)
মিষ্টি – কোথায় যাবো?
তুষার – গেলেই দেখতে পাবি।
—তুষার কিছু ছেলের সামনে এনে মিষ্টি কে দাঁড় করালো।
মিষ্টি – তুষার আমাকে ছেলে গুলো কাছে কেন নিয়ে আসলো এগুলো ভাবতে ভাবতেই একটা ছেলেকে দেখে আমার চোখ রস গোল্লার মত বড় হয়ে গেল।এটা তো ওই ছেলেটা
তুষার – এই ছেলেটা কিছু দিন ধরে তোকে বিরক্ত করছে একথা আমাকে বললি না কেন?
—মিষ্টি চুপ করে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর ভাবছে
মিষ্টি – তুষার এই ছেলেটার কথা জানলো কি করে?
তুষার – জান্নাত বলছে তাই জানতে পারছি। তুই তো বলতি ই না।
মিষ্টি – আজ কাল জানুটা কোন কথাই পেটের ভেতর রাখতে পারে না।সব কিছু কি এই ষাঁড় টাকে বলতে হবে?( মনে মনে)
তোমাকে কেন বলবো। আমার সমস্যা আমি নিজেই সমাধান করতে পারবো।

–ঠাস করে একটা আওয়াজ হলো,,,,,,,, আর মিষ্টি নিচের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তুষার – আর একটা কথা বললে আরও থাপ্পড় খাবি।
আমাকে বলবি না। নিজেই কি পারবি?
ওদের প্রতি দিন দেখতে তোর ভালো লাগে নাকি?
— তুষার রাগে কটমট করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলছে। তুষারের চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা রেগে আছে। পুরো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মিষ্টি আর একটা কথা বললে ওকে কাঁচা ই খেয়ে ফেলবে।
মিষ্টি – (গালে হাত দিয়ে….) ষাঁড় টা আমাকে মারলো।আমার স্বপ্ন তাহলে সত্যি হলো।আহ কি জোরে লাগলো।এই থাপ্পড় খাওয়ার জন্য ই কি আমি বেঁচে ছিলাম? আল্লাহ তুমি আমাকে তুলে নেও।
— তুষার ছেলেটা কে সেই মার দিল।ঘুসি, থাপ্পড়, লাথি কোন কিছুই বাকি রাখলো না। ছেলেটা নিজের জীবন নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে গেল।
তুষার – মিষ্টির কথায় এতো রাগ উঠে গেল। আর সব রাগ গুলো এই ছেলেটার উপর ঝাড়লাম।
মিষ্টি – ছেলেটা কে এত মারার কি আছে। নিজে অন্য মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে। আর আমাকে কোন ছেলে ভালোবাসতে পারবে না। সব ছেলেদের কে মেরে তাড়িয়ে দিবে বান্দর একটা।
তুষার – এভাবে ভুতের মত তাকিয়ে কি ভাবছিস।বাসায় যাবি না নাকি?
মিষ্টি –
— মিষ্টি বাইকে তুষারের পাশে বসে আছে। মুখটা তেলে পিঠার মত ফুলিয়ে। আর মনে মনে তুষারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।
তুষার – পড়ে যাবি ধরে বস।
মিষ্টি – পড়বো না।
তুষার -আর কোন দিন কোন ছেলে কিছু বললে সবার আগে যদি আমাকে না জানাবি তাহলে ছেলে গুলো কে তো পরে দেখব তার আগে গুনে গুনে তোর বত্রিশ টা দাঁত ফেলে দিব। আর কাল থেকে কলেজে এতো সাজুগুজু করে যাবি না। বোরখা পড়ে মুখ ডেকে যাবি।কলেজের বারান্দায় পা দিতে না দিতেই ওনার ভাব নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ফাজিল মেয়ে একটা। আমার কথা শুনে চললে এই ছেলে গুলো আর তোর পিছনে লাগতো না। আর আমাকেও ওদের সাথে মারামারি করতে হতো না। সব তোর জন্য হয়েছে।
মিষ্টি – আমি যেন বলছি ওই ছেলে গুলোর সাথে মারামারি করতে। (মিষ্টি বিরবির করে কথা গুলো বললো)
তুষার – কি বলছিস স্পষ্ট করে বল তা না হলে বাইক থেকে ফেলে দিব।
মিষ্টি – (ষাঁড় টা তো অনেক বেড়ে গেছে এবার আমার ও রাগ উঠে গেল)
ছেলেটা আমাকে যা ইচ্ছে তা বলবে তোমার কি।তুমি আমার দাঁত ফেলে দেওয়ার কে। আমি কাল থেকে কলেজে আরও সাজুগুজু করে যাব।বোরখা পড়ব না শাড়ি পড়ব তা আমার ব্যাপার।আমি কেন তোমার কথা শুনে চলবো।তুমি আমার কে হও যে তোমার কথা আমাকে শুনে চলতে হবে। আমাকে নিয়ে তোমার এত মাথা ব্যথ্যা কেন।আমার কোন ব্যাপারে তুমি নাক গলাবা না।আমি তোমার গফ না যে তুমি আমার উপরে অধিকার দেখাবা।অধিকার দেখাতে ইচ্ছে হলে তোমার গফের কাছে গিয়ে অধিকার দেখাও।ওনি প্রেম করতে পারবে। আর আমাকে কোন ছেলে কিছু বললেই ওদের কে মারতে শুরু করবে। (মিষ্টি এক দমে কথা গুলো বলে হাঁপাতে লাগল)
— হঠাৎ করে বাইক থেমে গেল।
মিষ্টি – অনেক বেশির বলে ফেললাম নাকি। আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। আজ তো একটা থাপ্পড় ও এদিক ওদিক পড়বে না সব গুলো আমার গালে পড়বে। ( কথা গুলো ভেবে বাইক থেকে নেমে অসহায়ের মত গালে হাত দিয়ে তুষারের দিকে তাকালাম)
তুষার – মিষ্টি এগুলো কি বললো। আর যা বলছে সবই তো ঠিক। ও তো কিছু ভুল বলে নি। ও শুধু শুধু কেন আমার কথা শুনবে। ওর উপর আমি এত অধিকার দেখাচ্ছি কেন? আমি ওর কে হই। শুধু ফ্রেন্ড এর বেশি তো আর কিছু না। ওর লাইফ ও যেভাবে খুশি সে ভাবে থাকবে তাতে আমি কিছু বলার কে?
আমি কে ওর উপর অধিকার দেখানোর?( মনে মনে)
–তুষার মিষ্টির দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো।।।
তোর বাসায় এসে গেছি যা বাসায় যা।
— তুষার এটা বলে বাইক নিয়ে চলে গেল।
মিষ্টি – কি হলো এটা???
থাপ্পড় দিবে তো দূরে থাক একটা কথা ও বললো না। আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি। এত কিছু ভাবতে পারবো না। রাগ হয়ছিল তাই কথা গুলো বলে ফেলছি ইচ্ছে করে মন থেকে তো বলিনি। তুষার ও তো আমাকে এক বার না কয়েক বার থাপ্পড় দিছে তাতে কি আমি রাগ করছি?
তাহলে ও শুধু শুধু রাগ করবে কেন?

চলবে 💕