অন্তরিন প্রণয় পর্ব-২৬

0
915

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_২৬

আহনাফ দেওয়ানের মুখোমুখি গম্ভীর মুখে বসে আছেন খুরশীদ আনওয়ার।সকাল-বিকেল পেরিয়ে রাত শুরু হলো কিন্তু এখনো সেহেরিশের দেখা মিলেনি।সবাই নাওয়াখাওয়া ছেড়ে এখনো আগের সাজে বসে আছে।খুরশীদ আনওয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ কয়েকটি ঢোক গিললেন ফাহমিদা।আজ সেহেরিশের সাথে দেখা হলে নির্ঘাত রণক্ষেত্র তৈরি হবে।

– দয়া করে এত রেগে থাকবেন না।আমরা আপনার মেয়েকে তো জলে ভাসিয়ে দেবো না।সে যেহেতু আফীফের স্ত্রী আশা করি বুঝতেই পারছেন পরিবার, সমাজে সে ঠিক কতটুকু মর্যাদা, ভালোবাসা পাবে।এই কয়েকদিনে আমাদের আফীফের সম্পর্কে খুব ভালোই জেনেছেন আশা করি।
আহনাফ দেওয়ানের কথায় আড় চোখে তাকায়
খুরশীদ আনওয়া।
– আপনাদের ছেলে নিতান্তই একজন সুদর্শন যুবক।সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট।তবে তার জন্য আমার মেয়ে একদম পার্ফেক্ট নয়।সে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে।

– যেখানে আফীফ নিজে সেহেরিশকে পছন্দ করেছে সেখানে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে?
– একটা কথা বলুন তো,বাংলাদেশের কথাই ধরলাম একজন ছেলে একজন মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করেই বিয়ে করে।হয় কখনো বাবা মায়ের অসম্মতি বা কখনো তাদের সম্মতিতে।কিন্তু তাদের মাঝে কি বিচ্ছেদ হয় না?একজন আরেকজন কে ভালোলাগলো,ভালোবাসলো বলেই যে বিয়ে করতে হবে এমনটা না।কে কার জন্য কতটা পার্ফেক্ট তা আগে নির্নয় করা জরুরি।
তাই আবারো বলছি আফীফের আমার মেয়েকে ভালোলাগলো বলেই এইসব পাগলামি করবে আর আমি আমার মেয়েকে হাসতে হাসতে তার হাতে তুলে দেবো তা কিন্তু নয়।আমি আমার।মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধ্যান করবো।আফীফ যে আমার মেয়েকে ছেড়ে দেবেনা বা মানসিক শান্তিতে রাখবে তার নিশ্চয়তা কি?

খুরশীদ আনওয়ার থামে।এতক্ষণ আমান কিছুটা দূরে সামীর সঙ্গে অন্য সোফায় বসে রুবিক্স কিউব সমাধান করায় ব্যস্ত ছিল।কিন্তু খুরশীদ আনওয়ারের কথা কানে আসতেই তার ভেতরে চাপা রাগের সঞ্চার হয়। কাউকে কিছু প্রকাশ করতে না দিয়ে।হাতের রুবিক্স কিউবটি নাড়াতে নাড়াতে খুরশীদ আনওয়ারের মুখোমুখি সোফায় বসে পড়ে।শান্ত,তুখোড় কন্ঠে বলে,

– আঙ্কেল বললেন না বিয়ের পর আফীফ ভাই সেহেরিশ আপুকে যে ছেড়ে দেবে না তার নিশ্চয়তা কি?আমি বলে রাখছি একটা সময় আসবে আফীফ ভাই ছাড়তে চাইবে না কিন্তু আপনারা তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগবেন।এটা আফীফ দেওয়ান একবার বিয়েটা হোক তার পর দেখবেন।অবশ্য ৮০% কাজ এখন ভাইয়ের কমপ্লিট হয়ে গেছে।
– এই ছেলে কি বলছো এইসব তুমি?
– না ভয় পাবেন না।আগে কথাটা শুনুন,এতদিন ভাইয়া সেহেরিশ আপুর অসম্মতিতে কিছু বলতেও পারেনি করতেও পারেনি তবে এখন সেহেরিশ আপুর মুখ থেকে একবার যখন সম্মতি পাওয়া গেছে এবার আপু পরবর্তীতে চাইলে আফীফ ভাইয়ের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না।

আমানের কথা শুনে বিস্তার হাসি হাসে আহনাফ দেওয়ান।
.
গাল ফুলিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে সেহেরিশ।আফীফের কান্ডে সে এবার বড্ড বিরক্ত।তার সম্মতিতে এই ছেলে যা শুরু করেছে বিয়ে হলে তো তাকে আস্ত রাখবে না।সেই সকালে সেহেরিশকে জড়িয়ে ধরে বেশ অনেক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদে।সেহেরিশের গলায় মুখ ডুবিয়ে কান্নার ফলে তার গলার সমস্ত অংশ ভিজে আছে।এখনো কেমন ভেজা ভেজা ভাব অনুভব করছে সে।সকাল পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। এই বিস্তার সময়ে আফীফের মুখ থেকে টুকটাক কিছু কথা বের হলেও বেশির ভাগ সময় সে চুপ করেছিল।সে শুধু তার সেহেরিশকে অনুভব করছিল।

– এবার কি আপনি আমায় ছাড়বেন?
– না।
– আমি এবার উঠবো প্লিজ সরুন।
– প্লিজ সেহেরিশ যেওনা।তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র নেশাটা আজ তবে কিঞ্চিৎ পরিমান ঘুচেছে।
– না সরুন।কিসব করছেন আপনি।
– কি করেছি?একটু জড়িয়ে ধরেছি,জানো তোমার গায়ের গন্ধটা আমার বেশ ভালোলাগে।একদম মোহনীয়।তুমি যখন ছোট বেলায় ঘুমিয়ে থাকতে তোমার পাশে থেকে আমি ঘ্রাণ নিতাম।
– সরুন আপনি, এটা আমার পাফিউমের ঘ্রাণ।
– বোকা মেয়ে।তুমি কি জানো তোমার শরীর ঘ্রাণ আর পারফিউমের ঘ্রাণ দুটো মিলে এলকোহল তৈরি হয়।নেশা,নেশা মস্তবড় নেশা লেগে যায়!

সেহেরিশ আফীফের ঘোর লাগা কন্ঠে ভ্রু কুচকে তাকায়।এই ছেলেকে বিয়ে করলে যে তার মৃত্যু হবে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সেহেরিশ।প্রতিহিংসা,বিদ্বেষ, রুষ্টতা থেকে নয় বরং আফীফের ভালোবাসায় মৃত্যু হবে তার।

– মি.ঘ্রাণ বিজ্ঞানী আপনি দয়া করে উঠবেন প্লিজ আমি বাইরে যাবো।সেই সকালে আমায় বন্দি করেছেন আর এখন রাত হতে চললো।
– হুহ।
আফীফ উঠে বসে সেহেরিশ নিজেও উঠে চুল গুলো ঝাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়।আফীফের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে বিরস সুরে বলে,
– ধরুন এবার আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেলাম তবে কি হবে?

সেহেরিশের কথা শেষ করতে দেরি হলো কিন্তু তার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যেতে দেরি হলো না।সেহেরিশ পিট পিট করে চোখ খুলে তার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে।হঠাৎ আক্রমণে ঘাড়ের ব্যথায় এদিক থেকে সেদিক তাকাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।সে বিছানায় শুয়ে আছে আফীফ তার উপরে শুয়ে, তার দিকে তাকিয়ে আছে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে।তার তপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে সেহেরিশের চোখে মুখে।সেহেরিশ ঢোক গিলে।আফীফ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– কি বলেছো?আমাকে ছেড়ে যাবে?
– হুহ!মানে এমনি বলছিলাম।

সেহেরিশের কথা শেষ হতেই আফীফ তার গলায় মুখ ডোবায়।হঠাৎ সেহেরিশ অনুভব করে তার গলার চামড়া ভেদ করে যেন রক্ত শোষণ করতে চাইছে আফীফ।কিছুক্ষণের মধ্যেই তীব্র ব্যাথায় সেহেরিশ কেঁপে উঠেতেই আফীফ তার মুখ চেপে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর আফীফ সেহেরিশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে চুল গুলো এমন ভাবে ঠিক করছে যেন একটু আগে কিচ্ছু হয় নি।সেহেরিশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।সেহেরিশ গলায় হাত দিতেই লাফিয়ে উঠে,
– ইয়াক!ছিহহ গলায় লালা লাগিয়ে দিয়েছেন কেন?
– ছেড়ে যাবে বললে কেন?
– তাই বলে…আহ আমার গলায় ব্যাথা করছে।

আফীফ সেহেরিশকে টেনে আয়নার সামনে দাড় করায়।
– দেখো আমার ভালোবাসার সিলমোহর লাগিয়ে দিলাম।
– আল্লাহ আপনি এটা কি করলেন।বা..বাইট!
– উহুহ, বাইট বলছো কেন লাভ বাইট বলো।
– এটা কি করা খুব জরুরি ছিল?
সেহেরিশের ঝাঝালো কন্ঠ।আফীফ তার গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
– আর বলবে ছেড়ে যাবে?সিলমোহর দিয়ে দিলাম আমার।এবার সারাজীবন এই দাগ থেকে যাবে।ক্রমশ কালো হতে থাকবে যেখানে যাও এই দাগ নিয়ে যাবে।

সেহেরিশ প্রত্যুত্তর করলো না।তার চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।আফীফ বুঝতে পেরে মলম এনে সেহেরিশকে বসিয়ে তার কামড়ের জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে থাকে।
– শুনো সেহেরিশ তুমি ৭০% আমার হয়ে গেছো।এতদিন তোমার সম্মতি হীন আমি কিছু করতে পারিনি।হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলাম।এবার তুমি ছেড়ে যেতে চাও আর কেউ তোমাকে নিয়ে যেতে চায় যাই করুক এর ফল বেশি ভালো হবে না।আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তার আগে রুম থেকে বের হবে না।দুজনে একসাথে বের হব।তোমার পাপা নিশ্চই ক্ষেপে আছে তোমাকে দেখলেই হাত চালাতে দেরি করবেন না।তাই আমাকে ছাড়া বাইরে বের হবে না।

সেহেরিশ মাথা নেড়ে সায় দেয়।আফীফ ক্লজেট থেকে জামা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।

আফীফ চলে যাওয়ার পর সেহেরিশ আফীফের রুমটা খুটিয়ে দেখছে দেয়ালের ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে সে বেশ অবাক হয় কেননা প্রতিটা ছবি সেহেরিশের অজান্তে তোলা।
সেহেরিশের ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা মিলে যায়।কোন স্পাই তার পেছেন আছে কে জানে।
কিছুটা এগিয়ে এসে সেহেরিশ দেয়ালে থাকা একটি ডায়রির ছেড়া পাতা পড়তে থাকে।

” আমার অনুভূতি মিথ্যা নয়!তাকিয়ার মনে জমে থাকা ঘৃণা একদিন ভালোবাসায় রূপান্তরিত হবে আমি শুধু সেই দিনের অপেক্ষায়….
৬ জুলাই ২০১৮

সেহেরিশ চমকায়।কত আগের লেখা আফীফের অনুভূতি গুলো।পাশে রাখা আরেকটি কাগজের লেখা সেহেরিশ পড়তে থাকে।

” আমি একা হাতে সপ্নের ঘর বুনি, একা হাতে সপ্ন সাজাই। কিন্তু যার জন্য আমার এই আয়োজন সে আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে!তবুও আমি তার অপেক্ষায়…..
২১ অক্টোবর ২০১৭

সেহেরিশ থমকে যায়।অনুভূতি গুলো দোটায়নায় খেলছে।দু’চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে।একটা মানুষ তাকে আড়ালে এতটা ভালোবাসে কিন্তু সে কি পালিয়ে বাঁচার পায়তারা করছিল।ইসস ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি অপর পক্ষের মানুষটি নিটোল ভাবে ভালোবাসে।

– আমার এই লেখা তুমি টানা চারদিন পড়লেও শেষ করতে পারবে না।আর অনুভূতি গুলো সম্পূর্ণ অনুভব করতে কখনো পারবেনা।

আফীফের কথায় তড়াক করে পেছনে ঘুরে তাকায় সেহেরিশ।মাথা নুইয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়।আফীফের গায়ে ব্লাক জ্যাকেট চুল গুলো ভেজা চোখে মুখে শুভ্রতার ভাব সেহেরিশ আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

– কাল সারাদিন সারারাত সিগারেট, মদ গিলেছি শুধু তাই গোসল করে নিলাম।শশুড় আব্বা গায়ে যদি সিগারেটের গন্ধ পায় তবে তো আবার বলবেন জামাই গাঞ্জা খোর।
– হাহ।আমার খিদে পেয়েছে।সেই সকালে একটু খানি স্যান্ডউইচ খেয়েছি।
– এত আদর দিলাম পেট ভরলো না?তুমি তো মহা খাদক সেহেরিশ।বাই দা ওয়ে এতক্ষণ তো আদর পেয়েছো এবার দেখো কি ঝড়টা যায় তোমার উপর।
– সেটাই ভাবছি আমি।
– চলো অলরেডি রাত নয়টা বেজে গেছে।

আফীফ সেহেরিশ একসঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সেহেরিশ আফীফের আগে আগে হাটতে গেলেই পেছন থেকে ডেকে উঠে আফীফ।
– সেহেরিশ।
– হ্যা বলো।
– আমার পাশে আসো।
সেহেরিশ আফীফের পাশে দাড়াতেই আফীফ সেহেরিশের হাতের মুঠোয় তার হাত আঁকড়ে ধরে।
– সব সময় আমার পাশেপাশে থাকবে খবরদার আগে কিংবা পিছনে নয়।

সেহেরিশ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।এই মানুষটার ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত!

.

থাপড়ের শব্দে সবাই একসঙ্গে চমকে তাকায় খুরশীদ আনওয়ারের দিকে।হ্যা চড়টা সেহেরিশের গালেই পড়েছে।
– প…পাপা
– চুপ!পাপা ডাকবি না তুই আমায়।আদর করে করে তোকে বেয়াদব করে তুলেছি তাই আজ বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের উপরে তুই কথা বলিস।

খুরশীদ আনওয়ার আবার হাত তুলতেই
আফীফ সেহেরিশ হাত টেনে দু-কদম পিছিয়ে আনে।সেহেরিশ কাদঁছে, নিরবতা ভেঙ্গে তার হেঁচকির শব্দ চারিদিকে ধ্বনি তুলছে।আফীফের বাবা মাসুম এগিয়ে এসে সেহেরিশের মাথায় হাত বুলিয়ে অনুনয় সুরে বলে,
– থাক কান্না করিস না।ভাইজান রেগে ছিল তাই চড় দিয়ে ফেলেছে।

– এই মেয়েকে খুন করে ফেলবো আমি এত সাহস কোথায় পেলো সে, আমার উপরে কথা বলে।
খুরশীদের কথা কেঁপে উঠে সেহেরিশ।আবারো তিনি তেড়ে আসতে নিলেই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আফীফ।
– আঙ্কেল একবার মারার জন্য সাহস করেছেন কিচ্ছু বলিনি দ্বিতীয় বার আর করবেন না প্লিজ।
– মেয়ে আমার তাকে আমি মারবো কাটবো নদীতে ভাসিয়ে দেবো সেটা কী আমি তোমায় জিজ্ঞেস করবো?
– আমি জানি মেয়ে আপনার।তবে মারার কারনটা আমাকে নিয়ে।তাই আমাকে কথা বলতেই হবে।

– তোমাদের আমায় আগেই সন্দেহ হয়েছিল এতটা আদর সোহাগ মোটেও এমনি এমনি করনি।আমার নির্বোধ মেয়েটার মাথা চাবিয়ে খেয়েছো।
– সরি আঙ্কেল বিষয়টি একটু ভদ্র ভাবে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনারাই আমার ভদ্রতাটা কেড়ে নিলেন।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?
– এত কৈফিয়ত আমি তোমায় দিতে পারবো না। এই মেয়ের যদি এই বাড়িতে থাকার সখ হয় তবে থাকুক সে আমরা চলে যাবো।এই সবাই চলো।

খুরশীদ বড় ব্যাগটি হাতে তুলে নিতেই সেহেরিশ ছুটে যায় তার বাবার দিকে।কিন্তু আফীফকে পেরিয়ে যেতেই সেহেরিশ হাতে টান অনুভব করে।আফীফ তার কবজি শক্ত করে ধরে আছে।সেহেরিশ কান্নার ঘোরে ইশারা করে আফীফকে হাত ছাড়তে কিন্তু আফীফ মাথা দুই পাশে নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে।সেহেরিশকে টেনে তার কাছে এনে কানের সামনে ফিসফিস করে বলে,

– বলেছি না সামনেও না পিছনেও না একদম পাশাপাশি থাকবে। আর এই নিয়ম সারাজীবনের জন্য।

সেহেরিশ আর কিছু বলতে পারলো না কান্নায় তার শরীর কাঁপছে।
– আমার মেয়েটাকে বশ করে ফেলেছো দেখছি।
– আঙ্কেল এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি।
– ভালোয় ভালোয় বলছি আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও আমি কিন্তু আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
– আইন?আইন শেখাচ্ছেন আমায়?আপনি যে কেন এই বাড়িতে মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছেন না তা আমি জানি আমার সাথে এইসব টালবাহানা করবেন না।আর আপনার মেয়েকে শুধুমাত্র আপনাদের অসম্মতিতে আমি ছেড়ে দেবো এত সহজ নাকি?আট থেকে নয় বছর তাকে নজরে রেখেছি, একটু একটু করে আমি নিজেকে সামলে রেখেছি আর সামনে পেয়ে ছেড়ে দেবো এত সহজ নয়।এই বাড়ির চৌকাঠ পার হওয়ার আগেই আক্রমণ আপনাদের উপর হতো আমি সিওর।অন্তত আমার স্বার্থ, আমার ভালো থাকার জন্য হলেও আমার দাদাজান আপনাদের এত সহযে এই বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না।

আফীফ থামে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে মাথা ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়।রাত নয়টা পয়ত্রিশ।আফীফ তার দাদাজানের দিকে তাকিয়ে গমগম সুরে বলে,
– দাদাজান কাজে লেগে যাও।কাল থেকে বিয়ের সব আয়োজন শুরু।এই রাতেই শহর থেকে ওয়েডিং প্লেনার দের আনার ব্যবস্থা কর।আমি কোন ক্রুটি দেখতে চাই না।এটা জমিদার আহনাফ দেওয়ানের নাতি আফীফ দেওয়ানের বিয়ে।আশা করি বুঝতেই পারছো?
– তুই কোন চিন্তা করিস না।আমি এখনি সবাইকে নিয়ে ব্যবস্থা করছি।

কেইন এতক্ষন নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিল।তার ভেতরটা মুষড়ে যাচ্ছে।শুষ্কো ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কান্না থামানোর ব্যবস্থা করে।কিন্তু তবুও চোখে পানি চলে আসছে তাই সবার মাঝ থেকে নিজেকে দ্রুত আড়াল করে নেয়।
.

সেহেরিশ হেচঁকি তুলে কাদছে তার সামনে আফীফ এক থালা ভাত নিয়ে বসে আছে।বাম হাতে সেহেরিশের চোখের পানি মুছে আশ্বাস সুরে বলে,
– কান্না করছো কেন তুমি?একদম কাদবেনা।দেখো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কালকের মেকাপ সুন্দর হবে না কিন্তু।
– পাপা আমার উপর অভিশাপ দেবে আমি জানি।
– তুমি বুঝিয়ে বলবে সেহেরিশ।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।আঙ্কেলের সাথে আমি কথা বলবো।
– না আমি পাপার সামনে যাবো না আমায় মেরেই ফেলবে।
– বোকা মেয়ে।তোমার অনেক সুবিধা হলো জানো তুমি?বিয়ের পর আঙ্কেল বকা দিলে ছুটে চলে আসবে আমার কাছে।বুকে মাথা রেখে ইচ্ছে কাঁদবে।আর আমার যখন ভীষণ রাগ লাগবে তখন হয়তো নিজের অজান্তে বকে দিবো তখন ছুটে যাবে তোমার বাবা মায়ের বুকে।

আফীফের এমন কথায় ফিক করে হেসে দেয় সেহেরিশ।
#চলবে…..
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here