#ভালোবাসি তাই
part:3
Writer :Afifa Jannat Maysha
🍁🍁
বাসায় আসতেই মা বললো খালামনি আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেছে। খবরটা আমার কাছে ছিলো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। কষ্টের মাঝেও কেমন সুখ সুখ ফিল হচ্ছে। আমি খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
” আজ এতো খুশি কেনো?”
এবার মাকে কি উত্তর দেবো ভেবে পাচ্ছি না ।… সত্যিই তো সামান্য একটা কথায় কতটা খুশি হয়ে গেছি আমি।… আমার আবার একটা সমস্যা আছে… অতিরিক্ত খুশি হয়ে গেলে মুখ থেকে হাঁসি সরতেই চায় না।.. আমি যতই থামাতে চেষ্টা করি হাঁসিটা ততই বেড়ে যায়।.. তাই হাঁসি থামানোর বৃথা চেষ্টা না করে হাঁসিমুখেই মাকে বললাম
” আসলে খালামনিকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছিলো.. এখন তো ইচ্ছেটা পূরণ হবে তাই খুশি খুশি লাগছে। ”
আমার কথায় মা অবাক হয়ে বললো
” একদিন আগেই তো তোর খালামনি এলো আমাদের বাসায়। ”
” সেটাই তো.. একদিন আগে। মানে বুঝতে পারছো.. ২৪ ঘন্টা হয়ে গেছে। ২৪ ঘন্টায় ১৪৪০ মিনিট, আবার ১৪৪০ মিনিটে ৮৬৪০০ সেকেন্ড। ও মাই গড, ৮৬৪০০ সেকেন্ড ধরে খালামনিকে দেখিনা। তাইতো আমার চোখদুটো শুধু বলছে খালামনিকে দেখবো খালামনিকে দেখবো। ”
কথা শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।… শুধু মুখের সাইজটা বড় হয়ে আছে… যার ভেতর দিয়ে আস্ত একটা আলু অনায়াসে ঢুকে যাবে।
” তোর এসব ফালতু লজিক তোর কাছেই রাখ। আমরা বুঝতে গেলে মাথা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে তোর খালামনির কাছে যা। ”
” যাচ্ছি। ”
আমার ঘরে যাচ্ছিলাম তখনই দেখা হলো আপুর সাথে।… আপু কেমন মুচকি মুচকি হাঁসছে।.. আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো
” কিরে এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস? ”
” সায়ন ভাইয়াদের বাসায়। ”
সায়ন ভাইয়ার নাম শুনে আপুর গাল লাল হয়ে গেছে।.. ছোট করে শুধু “ওহ ” বলে চলে গেলো নিজের ঘরে।.. আজই প্রথম আপু এমন অদ্ভুত বিহেভ করলো।.. ব্যাপারটা ঠিক কি বুঝে উঠতে পারলাম না। এখন এতো সময়ও নেই।.. এ বিষয়ে পরে রিসার্চ করা যাবে। আপাতত আমার উদ্দেশ্য খালামনির বাসা।
🍁🍁
সেই কখন খালামনির বাসায় এসেছি কিন্তু একবারও সায়ন ভাইয়াকে দেখলাম না।… চুপচাপ বসে থাকতে না পেরে খালামনিকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম
” সায়ন ভাইয়া বাসায় নেই? ”
” না। সেতো সারাদিনই বাড়ির বাইরে থাকে। তাইতো ভাবছি ফাইনাল এক্সাম হয়ে গেলেই আমাদের বিজনেসে বসিয়ে দিয়ে বিয়েটা তারাতাড়ি দিয়ে দেবো। ”
” ওহ ”
হঠাৎ করেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো সায়ন ভাইয়ার জন্য রান্না করবো। তাই খালামনিকে জিজ্ঞেস করলাম
” রাতের রান্না হয়ে গেছে, খালামনি? ”
” না এখনো করিনি। এখন যাবো।”
” তার প্রয়োজন নেই। আজকে আমি রান্না করবো। ”
” তুই পারবি না। পরে দেখা যাবে শরীর পুড়িয়ে ফেলবি।”
” আমি কোনো বাচ্চা মেয়ে না খালামনি। তাছাড়া তোমার বোন আমাকে সব কাজ শিখিয়েছে। তাই সমস্যা হবে না। ”
” তবুও ”
” তুমি একা একা কথা বলতে থাকো আমি রান্নাঘরে গেলাম। ”
” এই না দাঁড়া আমিও আসছি। ”
প্রায় একঘন্টার মধ্যে সায়ন ভাইয়ার সব ফেভারিট খাবার রান্না করে ফেললাম। একটা জিনিস আমার প্রচন্ড বিরক্তিকর লেগেছে। সেটা হলো উনি ঝাল একদম কম খান। ভাবছি উনার সাথে আমার বিয়ে হলে ঝাল খাওয়া শিখে যাবে কারণ আমি একটা ঝালখোর। ভাইয়া বলে অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ার জন্য নাকি আমি ওর সাথে সবসময় ঝগড়া করি ।
রান্না শেষে সায়ন ভাইয়ার ঘরটাও নিজ হাতে গুছিয়ে দিয়েছি। এখন উনি বাসায় থাকলে নির্ঘাত বলতেন ” ইউ বেহায়া মেয়ে, আমার ঘরে কেনো এসেছিস? বেরিয়ে যা ঘর থেকে। “..হাহ, আমার ক্ষেত্রে উনার মুখ থেকে একটাই শব্দ বের হয় “বেহায়া”। মাঝে মাঝে তো মনে এই শব্দটা আবিষ্কারই হয়েছে সায়ন ভাইয়া যেনো আমার উপর প্রয়োগ করতে পারে তার জন্য।
হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ধ্যায়ান ভাঙলো। খালামনির বদলে আমিই গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখি সায়ন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আর আমি বত্রিশ পাটি বের করে হাসি দিচ্ছি। হেঁসে হেঁসেই বললাম
” চলে এসেছি । ”
” তাতো দেখতেই পারছি। পাগলের মতো না হেঁসে সামনে থেকে সর। ”
উনি ড্রয়িংরুমে যেতেই খালামনি বললো ” ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। ”
একটুপর আমি, খালামনি, আংকেল আর সায়ন ভাইয়া একসাথে খেতে বসলাম। সায়ন ভাইয়া খাবারগুলো দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। হবে না কেনো.. সব যে উনার পছন্দের খাবার। খাবার খাওয়ার সময় উনি বললেন
” আজকের রান্না তো সেই হয়েছে মা। ”
“কারণ আজকে রান্নার হাত বদলে গেছে। ”
” তার মানে কি তুমি প্রতিদিন ডান হাতে রান্না করো আর আজ বাম হাতে করেছো? এরকম হলে কিন্তু এখন থেকে বাম হাতেই রান্না করবে। তাই না বাবা?”
” একদম ঠিক বলেছিস ”
” ফাজলামো বন্ধ কর। রান্নার হাত বদলেছে মানে আজকে আমি রান্না করিনি। ”
“তাহলে কে করেছে? ”
” মাইশা।”
খালামনির কথায় মুখটা ছোট হয়ে গেছে উনার। আমার দিকে তাকাতেই চোখ মেরে একটা ক্লোজআপ হাসি দিলাম আমি ।….উনার মুখটা দেখার মতো হয়ে আছে। ভুলবশত হলেও আমার প্রসংশা করে খুব বাজেভাবে ফেসে গেছেন উনি। ইশ! মনের মাঝে শান্তিরা যেনো বলছে আমরা এসে গেছি মাইশা.. আমরা এসে গেছি।
উনি খাওয়া শেষে চুপচাপ উঠে গেলেন।.. আমিও চললাম উনার পিছু পিছু।.. যেই উনার ঘরে ঢুকতে যাবো উনি আটকে দিলেন আমায়।
” তুই এখানে কি করিস? ”
” আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি। ”
“তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই। ”
” তো আমি কি করবো? আমার তো আছে। ”
” যা বলার তারাতাড়ি বলে চলে যা। ”
” চলুন বিয়ে করে ফেলি। ”
” আমিতো কয়েকদিন পরেই করে ফেলছি। তোরও যদি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে খালামনিকে পাত্র খুজতে বলছি। ”
” আরে আমি বলছি চলুন আমরা একে অপরকে বিয়ে করে ফেলি। দেখুন, লজিকও বলছে আমরা যেনো একসাথে থাকি। ”
” হোয়াট? ”
” হ্যাঁ, এই যে দেখুন আপনি একদম ঝাল খেতে পারেন না আর আমি ঝালখোর, আপনি বেশি কথা পছন্দ করেন না আর আমি সবসময় বেশি কথা বলি, আপনি আমায় সহ্য করতে পারেন না আর আমি আপনাকেই ভালোবাসি। মানে আমি আর আপনি পুরাই বিপরীত। বিজ্ঞান বলে বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরকে আকর্ষণ করে। তার মানে কি দাঁড়ালো? ”
“কি? ”
“এটাই যে আমার আর আপনার একসাথে থাকা উচিৎ। আর সেজন্য তো আমাদের বিয়েটা করতে হবে। ”
আমার কথায় চেচিয়ে উঠলেন উনি।
” বেরিয়ে যা আমার ঘর থেকে। এক্ষুনি মানে এক্ষু্নি যাবি। রাইটা নাউ। ”
“কেনো আমি কি ভুল কিছু বল….”
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে টেনে উনার ঘর থেকে বের করে দিলেন।
” আর যেনো এই ঘরের আশেপাশে না দেখি। ”
” আশেপাশে না ঘরের ভেতরেই দেখবেন। চ্যালেন্জ করছি একটুপর আপনি নিজে আমায় ডেকে নিয়ে আসবেন এই ঘরে। ”
” মরে গেলেও না। ”
” মরতে যাবেন কেনো বেঁচেও থাকবেন আর আমায় আপনার ঘরেও ডাকবেন। ”
” ওকে চেলেঞ্জ এক্সেপটেড। ”
” গুড বয়। ”
আর কিছু না বলে পা বারালাম গেস্টরুমের উদ্দেশ্যে। আবার উনার হেরে যাওয়া মুখটা দেখতে পারবো ভেবেই শান্তি লাগছে। আজকে কি শান্তির মেলা বসেছে নাকি সবকাজেই কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। ঘরে এসে চুপচাপ সারার সাথে চ্যাটিং করছি। ওকে খাবার টেবিলের ঘটনার কথা বলতেই হাঁসতে হাঁসতে লুটুপুটি খাচ্ছে।
একটুপরই শুনতে পেলাম সায়ন ভাইয়া খালামনিকে ডাকছে। তারমানে কাজ হয়ে গেছে। এবার আমার এন্ট্রি নেওয়ার পালা।
চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ ]