ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৫

0
3154

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৫

অন্যদিকে,
ছাদে নির্ভীক আর প্রান্ত দুজন দুজনার পিঠে হেলান দিয়ে বসে আছে। কেউ কারও মুখ দেখতে পাচ্ছে না।প্রান্ত গিটারে টুং টাং আওয়াজ করছে (প্রান্ত গানও জানেনা গিটারও ভালো বাজাতে পারেনা,ওটা নির্ভীকের গিটার প্রান্ত মাঝে মাঝে ট্রাই করে)।আর নির্ভীক নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে একটা ১০-১১ বছরের ছেলে একটা ৪-৫ বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটি ছেলেটির গালে হাত দিয়ে হাসছে।
নির্ভীক মৃদু হেসে বলল,

নির্ভীক: আমি ভাবতেও পারিনি ও আমার কল্পনার সাথে এভাবে মিলে যাবে। তুই দেখ পুরো মিল আছে।(ফোন প্রান্ত দিকে এগিয়ে দিয়ে)

প্রান্ত:হ্যাঁ সেই চোখ,সেখ নাক,সেই ঠোঁট,সেই….

নির্ভীক চোখ গরম করে তাকাতেই প্রান্ত থেমে গেল তারপর কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে বলল,
—–পুরাই মিল।

নির্ভীক:ও প্রতিদিন একটু একটু করে বড় হয়েছে আর আমি আমার কল্পনায় ওকে একটু একটু করে বড় হতে দেখেছি।আমার রুপসি পরীটা (ফোনের দিকে তাকিয়ে)।
এক্সামের দিন প্রথম ওকে দেখে ভেবেছিলাম এইবার আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছি না হলে বুকের ভেতর থেকে আমার পরীটা বাইরে এলো কি করে?তুই জানিস প্রান্ত,ও যখন আমার সামনে এসেছিল আমি পুরো পৃথিবী ভুলে গিয়েছিলাম।এখনও সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে,ঘুম ভাঙ্গলেই স্বপ্ন চলে যাবে।

প্রান্ত : দাঁড়া তোকে চিমটি কাটি।
নির্ভীক: আউচ, কি করছিস ছাড়।

প্রান্ত : ঘুম ভেঙ্গেছে?এখনও স্বপ্ন দেখছিস?

নির্ভীক: তুই পারিস ও( হাসতে হাসতে)।

কিছুক্ষণ পর,
প্রান্ত : ওকে তো পেলি এখন কি করবি?

নির্ভীক: বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেবো যেন আর কখন ও হারিয়ে যেতে না পারে। তুই শুধু দেখ আমি,আমি ওকে একদম আমার করে নেবো।

প্রান্ত : কিন্তু ওর জীবনে অন্যকেউ থাকলে?

নির্ভীক:ওকে শেষ করে দেবো তারপর নিজেও শেষ হয়ে যাব।(দাঁতে দাঁত চেপে)

প্রান্ত : আর তারপর আমাকেও শেষ করে দিবি?(সংশয় নিয়ে)
নির্ভীক প্রান্তর দিকে রাগী চোখে তাকালো,
প্রান্ত :মজা জাস্ট মজা করছিলাম( থতমত করে)।
তারপর দুজনই হেসে দিল।

নির্ভীক: তুই আমাকে কোনদিনও ছেড়ে যাসনা,প্রান্ত। (আকাশের দিকে তাকিয়ে)

প্রান্ত :আমি ছেড়ে গেলে তুই যেতে দিবি?শালা তুই আমাকে শান্তি মতো মরতেও দেসনি।সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনও আমার কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।

নির্ভীক : সেদিন মরলে আরও বেশি কষ্ট পেতি ডাফার কোথাকার।আর টোয়াকে আমি দেখে নেবো, ওর প্রত্যেকটা দিন যদি নরক না বানাইছি তো আমি নির্ভীক না।(রেগে)

প্রান্ত : ওকে আর কত দেখে নিবি।দুমাস ধরে ওর একটা দিনও ভালও যায়নি।এবার তো ওকে মাফ করে দে।

নির্ভীক:নেভার।(রেগে)

—-এমন কি হয়েছিল যার জন্য নির্ভীক টোয়ার উপর রেগে আছে?
অতীত,
আসলে টোয়া নির্ভীককে ভালোবাসে কিন্তু নির্ভীক ওকে একদম পছন্দ করেনা।তাও টোয়া নির্ভীকের পেছনেই পরে থাকে। এক্সামের দিন যখন নির্ভীক ১ম কোন মেয়েকে নিজের বাইকে উঠায় সেটা দেখে টোয়া খুব রেগে গিয়েছিল কারন ও কখনও নির্ভীকের বাইকে উঠতে পারেনি।
অন্তদের এক্সাম হলে ঢুকিয়ে দিয়েই নির্ভীক ওর মনের সব কথা প্রান্ত কে জানিয়ে দেয়।তারপর ওরা ওখানের ওয়েট করছিল অন্তদের জন্য।কিন্তু টোয়া এসে বিভিন্ন হাজেবাজে কথা বলে নির্ভীককে রাগীয়ে দেয় যার ফলে নির্ভীক আর প্রান্ত ভার্সিটির বাইরে চলে যায় কিন্তু টোয়া ওদের পিছু নেই।নির্ভীক আর প্রান্ত হাইওয়ের পাশে বাইক থামিয়ে ডিসকাস করছিল আবার এক্সাম হলে যাবার জন্য কিন্তু সেখানেও টোয়া এসে হাজির হয়।নির্ভীক আর টোয়ার ঝগড়া চলছিল একসময় টোয়া নির্ভীককে ধাক্কা দেই যার কারণে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগতে লেগেছিল কিন্তু প্রান্ত নির্ভীককে সরিয়ে দেই,দূরভাগ্য বসত প্রান্ত নিজে আর সরে যেতে পারেনি।যার ফলে প্রান্ত গুরুতর আহত হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলে।একসময় প্রান্তর জ্ঞান ফেরে কিন্তু সে নির্ভীক কে বিভিন্ন আবোল-তাবোল কথা বলতে থাকে যেমন আমি আর বাঁচবোনা,আমার মনে হচ্ছে আমি এখনই মারা যাব,নির্ভীক আমি মারা যাচ্ছি তুই ভাল থাকিস…..ব্লা.. ব্লা।নির্ভীক তখন রেগে গিয়ে প্রান্তকে মারতে শুরু করে পরে ডক্টর রা এসে ওকে থামায়।কয়েকদিন পর প্রান্ত সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু টোয়া বেচারির জীবনটা হেল হতে শুরু হয়।

বর্তমান,

নির্ভীক: আমি ওকে ভালোবাসি,অনেক বেশি ভালোবাসি, ঐ আকাশের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।( আকাশের দিকে তাকিয়ে)

প্রান্ত :ওকে বলবি কবে?

নির্ভীক: যেদিন ও শুনতে চাইবে।
প্রান্ত : কি?
নির্ভীক: জ্বী মেরি দোস্ত, চল এখন নিচে যাই খুব শীত করছে।
প্রান্ত : চল।

.

ক্লাসে বসে আছি। বিরক্ত লাগছে খুব।টানা ৩ঘন্টা ধরে ক্লাস করছি। ক্লাসের মাঝেই হঠাৎ কিছু বড় ভাইয়া আপু ঢুকলেন।উনাদের বক্তব্য হলো আগামী দিন নবীনবরণ অনুষ্ঠান করা হবে।ছেলেদের পান্জাবি আর মেয়েদের শাড়ি পরতে হবে। আফ্রা আপুর কাছে শুনেছি ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান মানেই শাড়ি পড়তে হবে মাস্ট। যাইহোক শাড়ি পরতে আমার ভাল লাগে। প্রতিদিন শাড়ি পরতে বললেও আমার সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যা হলো এই ডাইনি ইচ্ছে তো শাড়ি পরতে চাইবেনা,ক্লাস থেকে বের হলেই ঘ্যান ঘেনি শুরু করে দিবে।

ক্লাস থেকে বের হয়ে হাটছি পাশে ইচ্ছে ঘ্যান ঘ্যান করছে শাড়ি পরবেনা বলে।আমি ওর কথা না শুনার চেষ্টা করছি তাও আমার অবাধ্য কান গুলো বলছে ইচ্ছের কথা শুনবিনা কেন?ওর কথা তোকে শুনতেই হবে।উফ্ কি বিরক্তি কর।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় চলে এসেছি।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিল….
পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই লুচু ছেলে, সানভি ভাইয়া।উনি আমাদের কাছে আসলেন।

সানভি: হাই,অন্ত।

আমি: হ্যালো ভাইয়া।

সানভি: আমার নাম সানভি তুমি আমাকে সানভি বলে ডেকো।

আমি : ওকে সানভি ভাইয়া।

সানভি: এই ভাইয়াটা বাদ দিলে হয় না।(ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে বিরবির করে)

আমি: জ্বী সানভি ভাইয়া?আমি শুনতে পাইনি।

সানভি: না কিছু না।কোথায় যাচ্ছো?

ইচ্ছে : বাসায়।(বিরক্ত হয়ে)

সানভি: ইয়ে মানে অন্ত,সেদিন তুমি আমাকে কি যেনো বলতে চেয়েছিলে।এখন বলতে পারো।

আমি: কি বলতে চেয়েছিলাম বলুন তো?(মনে করার ভান করে)

সানভি: ঐযে তোমার মনে নেই? তুমি আমাকে ভা…

আমি: হ্যাঁ মনে পড়েছে। নির্ভীক ভাইয়া বলেছিলেন যদি আমাদের কেউ উল্টা-পাল্টা কিছু বলে আমরা যেন উনাকে জানায়।

ইচ্ছে: আরে জানায় মানে কি উনি তো সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতে বলেছেন।দেখি তে উনাকে ফোনে পাওয়া যায় কিনা।(ফোন বের করতে করতে)

সানভি : আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা কথা বল, আমার ক্লাস আছে আসছি।বাই।(তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন)

উনি যেতেই আমরা হেসে দিলাম।

ইচ্ছে: কি ব্যাপার বলতো?…ভয় পেলো কেন?

আমি: জানিনা।ভার্সিটির কোন বড় ভাই রাজনীতি করলে তাকে সবাই ভয় পায় তবে নির্ভীক ভাইয়া তো আমাদের ভার্সিটির কেউনা তাহলে এখানে উনাকে ভয় পাওয়ার কারন কি?

ইচ্ছে: অত ভেবে কাজ নেই।চল বাসায় যাবো ক্ষুধা লেগেছে।
আমি : হুম চল।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here