ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ১২

0
2942

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১২

পদ্মা গার্ডেন থেকে বাসায় ফিরছি।গাড়িতে বসে আছি পাশেই নির্ভীক ভাইয়া গাড়িতে বসে মুখ গোমরা করে রেখে ড্রাইভ করছেন।আমি কিছুক্ষণ একা একা বকবক করে এখন চুপচাপ আছি কারন উনি কোন কথায় বলছেন না।হঠাৎ উনি বললেন,

নির্ভীক: শৈবালকে কিভাবে চিনলে?(আমার দিকে না তাকিয়েই)
আমি: উনাকে ভার্সিটিতে দেখেছিলাম।উনার সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে ফোন পড়ে গিয়েছিল। আচ্ছা ভাইয়া উনি কি বিশেষ কেউ?..না মানে,ধাক্কা লাগার পর আমি উনাকে দেখে চলতে বলেছি দেখে উনি আমাদের বলেছিলেন আমরা নতুন তাই নাকি মুখ দিয়ে এত কথা বের হচ্ছে।

আমার কথা শেষ হতেই উনি ব্রেক কষলেন।তারপর আমার দিকে ঘুরে আমার দুবাহু শক্ত করে ধরে বলতে লাগলেন,

নির্ভীক: ধাক্কা খেয়েছো মানে?…দেখে চলতে পারোনা?(রেগে)
আমি: আহ্ লাগছে,ছাড়ুন। আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা খাইনি।(উনার হাত ধরার চেষ্টা করে)

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বাম হাতের আঙ্গুল কপালে ডলতে থাকলেন।তারপর বললেন,

নির্ভীক: ওর থেকে দূরে থাকবে।আর ক্যাম্পাসে কোন ছেলের সাথে কথা বলবেনা।এই কথা যেন ২য় বার না বলতে হয়।(আমার দিকে তাকিয়ে এক প্রকার থ্রেট দিয়ে)

আমি: কিন্তু….

নির্ভীক : কোন কিন্তু নয়
বলেই আবার ড্রাইভ করা শুরু করলেন।

নির্ভীক:শৈবাল শহরের নাম করা বিজনেস ম্যানের বখাটে ছেলে।কয়েকদিন ঢাকাতে ছিল আবার ফিরে এসেছে।পুরো ভার্সিটি ওকে ভয় পায়।আর ওর কোন মেয়েকে ভাল লাগলে সব বাজে পরিকল্পনা ধাক্কা দিয়েই শুরু করে।ধীরে ধীরে পরিচয় হয় পরিচয় থেকে প্রেম তারপর,,,,

আমি: তারমানে উনি আমার সাথে ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছিলেন….(ভয় পেয়ে)।

নির্ভীক: এই না একদম ভয় পেওনা।আমি আছি তো ওর সাথে কথা বলে নিব তারপরও যদি তোমাকে কিছু বলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে যানাবে।যদি আমাকে কোন কারনে না পাও প্রান্ত কে বলবে।

আমি:হুম(ভয় ও টেনশনে)

নির্ভীক ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে বললেন বাসায় চলে এসেছি।আমি একটা মলিন হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাব তখনই নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে আটকিয়ে বললেন,

নির্ভীক: আমি যতক্ষণ বেচি আছি তোমার কোন ভয় নেয়।
বলেই উনি আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে নিলেন।আমি উনার ব্যবহারে অবাক। লজ্জাও করছিল ভালও লাগছিল।গাড়িতে একটুও দেরি না করে বাসায় দৌঁড় দিলাম।

বাসায় ঢুকার সাথে সাথে আম্মু বললো,

আম্মু : কিরে তুই একা এলি ইচ্ছে কোথায়?আর এটা কার জ্যাকেট পড়ে আছিস?

আমি জ্যাকেটের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।উফ্ আম্মুকে এখন কি বলবো।(মনে মনে)
আমি কিছু একটা বলবো তার আগেই পেছন থেকে ইচ্ছে চিৎকার দিয়ে বললো,

ইচ্ছে: ওটা রিংকুর জ্যাকেট….!

আম্মু: আস্তে,এত জোড়ে চিৎকার করছিস কেন?(চোখ মুখ খিচে)….রিংকু তো বাচ্চা ছেলে ওর এত বড় জ্যাকেট?

ইচ্ছে: বাচ্চা?..ও কত মোটু জানো?…সেই জন্যই তো বড়দের জ্যাকেট কিনতে হয়।অন্তর শীত করছিল তাই এই জ্যাকেট টা দিল।

আমি ভ্রু কুচকে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা।ইচ্ছে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগালো।

ইচ্ছে: ঐ ছেমরি দেখা করার নাম দিয়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?তুই জানিস আমি কত ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম…সবাইকে বলেছি তুই পাশের বাসার রিংকুর কাছে গিয়েছিস…এটা শুনে মামিন আমাকেও পাঠিয়ে দিল…তোর আসা দেখে আমিও আসলাম।(একদমে)

আমি: বলছি…..

ইচ্ছেকে সবটা খুলে বললাম। শৈবাল ছেলেটার কথাও বললাম।

ইচ্ছে: ভয় পাশনা,আমরা ঐ ছেলের থেকে দূরে থাকবো।

আমি: ভয় করছে,নির্ভীক ভাইয়া বলছিল ছেলেটা বখাটে আর মেয়েদের পেছনে লাগে।(জড়িয়ে ধরে)

ইচ্ছে: ডোন্ট ওরি, নির্ভীক ভাইয়া তো বলেছে ভয় পাবার দরকার নেই,উনি তো ভাল করে ঐছেলেকে চেনেন।

আমি:যদি আরাফের মতো আমাদের পেছনে লাগে?(হালকা কাঁপতে কাঁপতে)

ইচ্ছে: আরে…কোন সমস্যা হবেনা। এখানে সবাই আছে।ভিসি আঙ্কেল আছেন।…এই তুই কাপছিস কেন?(চিন্তিত হয়ে)

ইচ্ছে: ওসব নিয়ে আর ভাবিস না।আরাফ আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি আর পারবেওনা।চল পাস্তা খাব।

বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।

রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছি নির্ভীক ভাইয়া কি সত্যি লুকানোর কথা বললেন।
আমি: ইচ্ছে?

ইচ্ছে: হুম?

আমি: আমরা নির্ভীক আর প্রান্ত ভাইয়া কে একটু বেশি বিশ্বাস করে ফেললাম না?

ইচ্ছে: এ কথা বলছিস কেন?
আমি: উনাদের ব্যাপারে তো আমরা তেমন কিছুই জানিনা…।

ইচ্ছে: দেড় মাস ধরে তো দেখছি।আমার কাছে উনাদের যথেষ্ট ভাল ছেলে বলেই মনে হচ্ছে।উনারা আমাদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করেননি।তবে..

আমি: তবে?
ইচ্ছে: নির্ভীক ভাইয়া তোকে পছন্দ করে।আমার মনে হয় ভালও বাসে।কিন্তু তোকে বলেনা।

আমি: কি যাতা বলছিস।

ইচ্ছে: হুম, তুই সেদিন বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি সেদিন উনি কেমন পাগলের মতো করছিল।আমি উনার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।

ইচ্ছের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আজকে গাড়িতেও উনাকে অন্যরকম লাগছিল।প্রথম দিন থেকেই উনাকে অন্যরকম লাগে,কখনও মনে হয় উনি আমাকে ভালোবাসেন কখনও মনে হয় খুব ভাল ফ্রেন্ড মনে করেন।উনার কেয়ার দেখে মনে হয় উনি আমার খুব আপন কেউ।

ইচ্ছে: কিরে কিছু বল…
আমি: জানিনা কি বলবো,নির্ভীক ভাইয়াকে ভাল মনে হয় তাই উনার সাথে মিশি।কেন যেন মনে হয় উনি আমাদের খুব কাছের কেউ,উনাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।আচ্ছা বাদ দে,প্রান্ত ভাইয়া তোকে কিছু বললো?

ইচ্ছে: নাহ্।উনি মনে হয় আমাকে ভালোবাসেন না।সেরকম কিছু কখনও বলেনওনি,আমিই সবসময় বেশি বুঝি,উনাকে কি বলবো আমারই মাঝে মাঝে মনে হয় উনি শুধু আমার ক্রাশ আর কিছুনা।(মন খারাপ করে)

আমি:হুম আমি আগেই জানি এইরকমই কিছু হবে।তাই বলি কি সাবার উপর এসব ক্রাশ খাওয়া বাদ দে।নাহলে লাস্টে দেখা যাবে ক্রাশ ভেবে ভালোবাসা হারিয়ে ফেললি।

ইচ্ছে:সবার উপর কই ক্রাশ খেলাম?

আমি: ওই তো ওনলি ৯ জন প্রান্ত ভাইয়াকে দিয়ে ১০ জন।(হেসে)

ইচ্ছে:উহুম…১১জন।১০ নং ক্রাশ নির্ভীক ভাইয়া। তবে তুই চিন্তা করিসনা আমি উনাকে ভাই মনে করি।বাট আই লাভ প্রান্ত ভাইয়া।উনিই আমার প্রথম ভালোবাসা আর শেষ ক্রাশ।(কম্বল মুড়ি দিয়ে)

আমি:তুই পারিস ও
বলেই দুজন ঘুম দিলাম।

.

বিকেলে আমরা সবাই চাঁদ ভাইয়াদের বাসায় ড্রইং রুমে বসে আছি। আজ চাঁদ ভাইয়ার বার্থ ডে। আত্মীয় স্বজন কেউ নেই।চাঁদ ভাইয়া নাকি এসব পছন্দ করেননা তাই শুধু আমদের সাথে দেখা করানোর জন্যই এই আয়োজন।সবাই হৈ-হুল্লোর করছি এমন সময় অ্যান্টি বললেন,
অ্যান্টি:ওই তো চাঁদ এসে গেছে।

আমি সিঁড়ির দিকে তাকিয়েই হতবাক।এ আমি কাকে দেখছি? উনি কি করে চাঁদ ভাইয়া হবেন?…….আমি চোখ একটু বড় সড় করে জোড়েই বলে ফেললাম,
“নির্ভীক ভাইয়া”

উনি ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছেন।আমাকে বা ইচ্ছেকে দেখে একটুও অবাক হননি।মনে হচ্ছে উনি আগে থেকেই আমাদের চিনতেন।

ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ও তো আরও অবাক।

নির্ভীক ভাইয়া আমাদের কাছে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেনই না।

অ্যান্টি: অন্ত?তুই চিনিস চাঁদকে?
আমি: হুম।কিন্তু আমরা জানতামনা উনি চাঁদ ভাইয়া,উনার নাম তো নির্ভীক।তোমরা নির্ভীক ভাইয়াকে চাঁদ ভাইয়া বল কেন?

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া মিটিমিটি হাসছেন।

আম্মু:এমন চাঁদের মতো ফুটফুটে ছেলেকে চাঁদ ছাড়া আর কি বলবো?

অ্যান্টি:চাঁদের নাম তোর আম্মুই দিয়েছেরে অন্ত।(হেসে হেসে)

আমি বুঝতে পারছিনা কি রিয়েকশন দিব।নির্ভীক ভাইয়ার উপর রেগে যাব?কিন্তু আমি তো রেগে যাওয়ার কোন কারন দেখতে পাচ্ছিনা।বরং মনে মনে অনেক খুশি হয়েছি চাঁদ ভাইয়া আর নির্ভিক ভাইয়া দুজন এক ব্যক্তি হওয়ায়।তবে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে আগে বললে কি হত?
নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে চোখ টিপ দিলেন আমি থতমত করে ইচ্ছের হাত ধরলাম।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here