#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪৩
কয়েকদিন ধরে গলা নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে।জোড়ে কথা বলতে পারিনি,খেতে পারিনি,গরম পানি ইউজ করতে হয়েছে,ফ্যান বা এসিতেও থাকা হয়নি।একদম নরমাল পরিবেশে থাকতে হয়েছে।একটু অনিয়ম হলেই গলার রগের মধ্যে চিন চিনে ব্যাথা হতো।তবে আল্লাহর রহমতে এখন আমি সুস্থ।অ্যান্টি বলেছে চিন্তার আর কোন কারন নেই কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া শুনছেন না।কোথায় দুপুরের খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিবো তা না উনি আমাকে এখন পরমানু কেন্দ্রে থাইরয়েড এর টেস্ট করাতে নিয়ে যাবেন।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মাথায় চিরুনি করছি আর আয়নার মধ্যে নির্ভীক ভাইয়াকে দেখছি।উনি সোফায় বসে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে ভ্রু কুচকে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছেন।মাথার কিছু চুল চোখের উপর এসে পরে আছে, এতে উনি বিরক্ত বোধ করছেন কিন্তু চুল ঠিক করার সময় পাচ্ছেন না।হঠাৎ খেয়াল করলাম উনার মাথা থেকে চিপ বেয়ে ঘাম ঝরছে।আজ অনেক গরম, কিছুক্ষণ পর পর আকাশে মেঘ জমছে আর চারপাশটা ভ্যাপসা গরমের চাদরে ঢাকা পরছে আবার
একটু পর পর বৃষ্টিও নামছে, শ্রাবন মাসটা এমনই।
আমার জন্য নির্ভীক ভাইয়াকে কয়েকদিন ধরে গরমে থাকতে হচ্ছে কারন এসি ফ্যান সব অফ যাতে আমার ঠান্ডা না লাগে আর গলা ব্যাথা না করে,যখন খুব বেশি গরম লাগে তখন উনি কম স্পীডে ফ্যান ছাড়েন।এছাড়া প্রাকৃতিক বাতাসের জন্য উনি রুমের সব জানালা খুলে রেখেছেন,এতে রুম ঠান্ডা থাকে।
নির্ভীক ভাইয়া বাম বাহুতে নিজের বাম গালের ঘাম মুছে পুনরায় কাজে মন দিলেন।আমি হাতের চিরুনি টেবিলে রেখে উঠে এসে ফ্যানের সুইচ টিপে স্পীড একদম বাড়িয়ে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:এমনিতেই বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আবার ফ্যান দিচ্ছো,ঠান্ডা লাগবে তো।(কিন্চিৎ ভ্রু কুচকে)
আমি:গরম লাগছে আমার।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:স্পীড কমাও।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)
আমি:না এভাবেই থাক,অনেক গরম।(আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:আচ্ছা ২মিনিট শুধু তারপর স্পীড কমিয়ে দিবা।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)
আমি:না অনেকক্ষণ,১ঘন্টা।(চিরুনি করতে করতে)
নির্ভীক:অন্ত?(চোখ গরম করে আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে)
উনার চোখ গরম করা দেখে আমি চিরুনি রেখে উনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে দুইহাত নাড়িয়ে বললাম,
আমি:গলা ব্যাথা আর নেই।
আমার কথা শুনে উনি ল্যাপটপ রেখে উঠে দাঁড়ালেন তারপর সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে ফ্যানের স্পীড কমিয়ে দিলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে বেডের উপর ধপাস করে বসে পরলাম।উনি আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে বললেন,
নির্ভীক:তাড়াতাড়ি রেডি হও আমরা কিছুক্ষণ পরই বের হবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কোথাও যাবো না,আমি এখন সুস্থ।(মুখ ফুলিয়ে)
নির্ভীক:আরে বাবা আমি জানি তুমি এখন সুস্থ কিন্তু চেক আপটা করাতে হবে।(ল্যাপটপ এর স্ক্রিনে তাকিয়ে)
আমি:লাগবেনা চেক আপ করানো,যাবো না আমি।
বলেই আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাঁটা দিলাম। উদ্দেশ্য আপুর কাছে যাবো কিন্তু দরজার কাছে না আসতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে আটকিয়ে দিলেন।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনি অনেকটা রাগী ফেস করে বললেন,
নির্ভীক:কোথায় যাচ্ছো?আমি কি বললাম শুনো নি?
আমি:আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না বলুন তো?আমার ওখানে যাবার কোন প্রয়োজন নেই।(উনার দিকে তাকিয়ে)
আমার কথা শুনে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।দ্রুত পায়ে সোফার কাছে গিয়ে ফোন ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি হকচকিয়ে উনার শার্টের কলার খামচে ধরে বললাম,
আমি:একি!নামান আমাকে।
উনি কোন কথা বললেন না।বড় বড় ধাপ ফেলে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলেন।গাড়িতে আমি সিটে হেলান দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি আর আমার পাশে নির্ভীক ভাইয়া আপন মনে ড্রাইভ করছেন।প্রায় আধঘন্টা পর আমরা পরমানু কেন্দ্রে এসে পৌঁছালাম।গাড়ি পার্ক করে নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে ভেতরে আনলেন।এখানে অ্যান্টির পরিচিত ডক্টর আছে উনি আমার টেস্ট আর্লি করার ব্যবস্থা করলেন।সব স্যাম্পল দিয়ে প্রায় একঘন্টা বসে থেকে আমরা একটা ডক্টরের কাছে এসে বসলাম।অল্প বয়স্ক ডক্টর চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার গলা দেখতে লাগলেন।উনি আমাকে মাথা উপরের দিকে তুলে গলা টান করতে বললেন।আমি এমনটা করতেই উনি আমার চুল গুলো ঠেলে সরিয়ে দিয়ে গলায় হাত দিয়ে টিপতে লাগলেন,আজ আমার সেদিনের মতো ব্যাথা করছে না।কিছুক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডক্টর গিয়ে উনার চেয়ারে বসলেন।মুখ গম্ভীর করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ডক্টর:আপনার কি পিরিয়ড চলছে?
আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল।গলার সাথে পিরিয়ডের কি সম্পর্ক, যত্তসব ফালতু ডক্টর।গলার সমস্যা নিয়ে এসেছি আর ডক্টরটা পিরিয়ডের কথা জিজ্ঞেস করছে,পঁচা ডক্টর একটা।(মনে মনে)
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে না বললাম।আমার কথা শুনে ডক্টরটা মনে হয় খুশি হননি।উনি ডেস্কের উপর দুইহাত রেখে বললেন,
ডক্টর:থাইরয়েড হওয়ার পর কি একবারও পিরিয়ড হয়েছে?
আমি:না।(ক্ষীণ স্বরে)
ডক্টর :এটা বেশি হয় নাকি খুবই কম?
আমি:বেশি।(ক্ষীণ স্বরে)
ডক্টর:কবে ডেট আছে?
আমি:৬-৭দিন পর।(মাথা নিচু করে)
ডক্টর এবার লিখতে শুরু করলেন।লিখা শেষে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ডক্টর:দেখুন আমি উনার গলা দেখে থাইরয়েড বুঝতে পারিনি।বেশির ভাগ সময় এটা গলা দেখে বুঝা যায় না।এখন রিপোর্ট হাতে না আসলে কিছু বলা যাবেনা।উনার কি মেডিসিনের ডোজ কমপ্লিট হয়েছে?
নির্ভীক:জ্বী গত কাল থেকে ও আর মেডিসিন নেইনি।(রাগী ফেস করে)
তখনই কাচের দরজা ঠেলে একটা সিস্টার ঢুকে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
সিস্টার:স্যার উনাদের রিপোর্ট রেডি।
ডক্টর:এখানে নিয়ে আসুন।(সিস্টারের দিকে তাকিয়ে)
সিস্টার একটা সাদা খাম এখান কার একটা লোকের হাতে দিলেন,লোকটা খামটা খুলে ডক্টরকে দিলেন।ডক্টর কিছুক্ষণ রিপোর্টের দিকে দেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
ডক্টর:চিন্তার কোন কারন নেই,সব ঠিক আছে।
এতক্ষণে নির্ভীক ভাইয়াকে একটু স্বস্তির দেখাচ্ছে।আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম,অ্যান্টির কাছে শুনেছিলাম এটা খুবই জটিল সমস্যা।ডক্টর আরও বললেন,
ডক্টর:১টা মেডিসিন দিলাম,৭দিন রাতে ১টা করে খাওয়াবেন।ঘুমের যত্ন নিবেন,এখন পর্যাপ্ত ঘুম হওয়াটা খুবই জরুরী।দুপুরের দিকে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে,বেশি রাত জাগবেন না।মেডিসিন নিয়মিত সেবন করলে নিদ্রাহীনতা,অবসাদ,ক্লান্তি,মাথা ঘুরা এসব দেখা দিতে পারে তাই ৭দিন পর এটা বাদ দিয়ে দিবেন তারপর সমস্যা মনে হলে আবার আসবেন।
নির্ভীক:আবার মেডিসিন কেন?(চিন্তিত হয়ে)
ডক্টর:এর আগে যেই মেডিসিন ওকে দেওয়া হয়েছে ওটার জন্য।
নির্ভীক:এটা নেওয়া খুবই জরুরী?
ডক্টর:মোটামুটি জরুরী।এই মাসে পিরিয়ডের সমস্যা হবে।মেডিসিন খেয়ে এক ফোটাও যদি হয় উনি খুব লাকি।তবে শুধু এই মাসটায় এমন হবে বাকি মাসে পিরিয়ডের প্রবলেম হলে ডক্টরের সাথে কথা বলে নিবেন।আমি ফাইল রেডি করে দিয়েছি এখানে সব নির্দেশনা দেওয়া আছে।নির্দেশনা গুলো মেনে চলবেন,থাইরয়েড খুবই সেনসিটিভ একটু অনিয়ম হলেই সমস্যা হবে তাই নির্দেশনা গুলো ইগনোর করবেননা।আর সব থেকে বড় কথা উনার থাইরয়েড নিজের থেকে এমন হয়নি,নিজের থেকে হলে হরমোন রিপোর্ট নরমাল আসতোনা পিরিয়ড ও অস্বাভাবিক থাকতো।আর থাইরয়েডের মেডিসিন নেওয়ার পরও উনার ত্বক এত ফ্রেশ আছে।সাবধানে থাকুন একবার যখন এমন হয়েছে পরবর্তীতেও হতে পারে যদিও হওয়ার চান্স খুবই কম তারপর আপনি উনাকে সাবধানে রাখবেন।ওকে আপনারা এখন আসতে পারেন।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওকে ডক্টর থ্যাঙ্ক ইউ।(চোখমুখ শক্ত রেখে)
ডক্টরের কেবিন থেকে বেড়িয়ে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলেন।বাহিরে আসতেই উনার ফোনে কল আসলো,
নির্ভীক:হুম মিষ্টি বল।
মিষ্টি:………
নির্ভীক:ওকে আই উইল ম্যানেজ,বাই।
কল কেটে উনি আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে আমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে পানির বোতল নিয়ে বাহিরে গেলেন।তারপর আবার ভেতরে এসে একটা ভেজা রুমাল দিয়ে আমার গলা মুছতে লাগলেন।
আমি:কি করছেন?(উনার হাতের উপর হাত রেখে)
নির্ভীক:আম্মু আগে কেন বলল না এখানে ছেলে ডক্টর। রাগ হচ্ছে আমার।(রাগী ফেস করে গলা মুছতে মুছতে)
আমি:আমি আগেই বলেছিলাম আসবোনা এখানে,শুধু শুধু এখন আমাকে আবার মেডিসিন খাওয়া লাগবে।(বিরক্ত হয়ে)
উনি কিছু বললেন না।আমার পুরো গলাটা সপ সপে করে ভিজিয়ে দিয়ে রুমালটা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলেন।টিস্যু দিয়ে গলা মুছে দিয়ে সেটাও জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন।তারপর গাড়ির স্টিয়ারিং এর উপর হাত রেখে চোখ মুখ শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:কি হয়েছে?
উনি স্টিয়ারিং এ জোড়ে বারি দিয়ে মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে উপরে তুলে দিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করলেন।উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি রেগে আছেন।হঠাৎ উনি রেগে গেলেন কেন সেটায় বুঝতে পারছিনা।মিষ্টি উনাকে কি এমন বলল যার জন্য উনি এত রাগ করছেন?
বাসায় ঢুকতেই দেখি লিভিং রুমের মাঝখানে টাইগার আর লাইওন হাত পা মেলে শুয়ে থেকে ঘুমোচ্ছে।কয়েকদিন ধরে ওদের দেখে দেখে ভয়টা একটু কমেছে কিন্তু ওরা যেখানে থাকে আমি ভুলেও সেখানে যাই না।আমাদের বাসায় ঢুকতে দেখেই আপু সোফা থেকে উঠে বলল,
আফ্রা:ভাইয়া ডক্টর কি বলল?সব ঠিক আছে?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:হুম ও এখন সুস্থ।
নির্ভীক ভাইয়ার কথা শুনেই কুকুর দুটো কেমন একটা আওয়াজ করে উঠে দাঁড়ালো।টাইগার তো লেজ নাড়াতে নাড়াতে এদিকেই আসছে।আমি ভয়ে পেছন দিকে হাঁটা দিতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে রেগে ধমকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কোথায় যাচ্ছো?এত কিসের ভয় তোমার?কোথায় থেকে আসে যে এত ভয়,যত্তসব।যাও রুমে যাও।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।টাইগার উনার কাছে আসতেই উনি টাইগারের গলার বেল্ট ধরে হেঁটে গিয়ে সোফায় বসলেন।আপু আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
আফ্রা:চল আমিও উপরে যাব।
আমি আপুর সাথে উপরে এসে আপুর রুমে গেলাম।রাযীন ভাইয়া রুমে বসে একটা মোটা বই পড়ছিলেন আমি যেতেই ডক্টর কি বলল শুনতে চাইলেন।আমি সব বলতেই নির্ভীক ভাইয়া এসে রাগী গলায় বললেন,
নির্ভীক:এখানে কি করছো?চলো রুমে।
রাযীন:এই চাঁদ,সন্ধ্যার পর আমরা বাহিরে যাবো।তোরা যাবি?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:না,আমার কাজ আছে।(আমার কাছে এগিয়ে এসে)
রাযীন:তাহলে অন্তকে নিয়ে যাবো।এই বুড়ি যাবি?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু বলার আগেই নির্ভীক ভাইয়া রেগে বললেন,
নির্ভীক:না যাবে না,তোমরা যাও তো।এই তুমি চলো আমার সাথে।(আমার হাত ধরে)
উনি আমাকে রুমে নিয়ে এসে লাথি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি কাবার্ড খুলে আমার গোলাপি কালার ড্রেসটা নিয়ে আমার হাত ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে এসে আমাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়করিয়ে পানি ছাড়লেন।
আমি:কি করছেন এসব,আপনি….(চমকে গিয়ে)
নির্ভীক:চুপ?(ধমক দিয়ে আমাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে)
আমি:আরে আমি ভিজে যাচ্ছি তো,সরুন,বন্ধ করুন।(হাত দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে)
নির্ভীক:উফ্ ঠিক করে দাঁড়াও এখানে।(আমাকে শক্ত করে শাওয়ারের নিচে ধরে রেখে)
মুখের উপর পানি পরায় ঠিক করে উনার দিকে তাকাতে পারছি না কিন্তু উনার হাত সরানোর চেষ্টা করে বললাম,
আমি:আমি দুপুরেই শাওয়ার নিয়েছি এই সন্ধ্যায় আবার কেন?আজব তো।আচ্ছা আপনি এবার যান এখান থেকে আমি পারবো।(রেগে)
উনি রাগী মুখ করে হাতের তালু ভর্তি শ্যাম্পু ঢেলে নিলেন।আমার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেল।এত শ্যাম্পু উনি কি করবেন?শ্যাম্পুর বোতল ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিয়ে আমার চুলে শ্যাম্পু লাগিয়ে দিতে লাগলেন,
আমি:কি হচ্ছে এসব।এমন করছেন কেন?উফ্ হাত সরান।আপনি বাহিরে যান আমি করে নিচ্ছি।এত গুলো শ্যাম্পু লাগবেনা।(রেগে উনার হাত আটকিয়ে)
উনি কোন কথা বলছেন না,চোখ মুখ শক্ত করে সব শ্যাম্পু আমার চুলে লাগিয়ে দিলেন।এর পর বডি ওয়াশ নিয়ে আমার মুখে হাতে আর গলায় লাগিয়ে দিলেন।এত বেশি ফেনা হয়েছে যে এগুলো ধুতে ট্যাঙ্কির পানিই শেষ হয়ে যাবে।চোখে ফেনা লেগে চোখ জ্বালা করছে।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে উনার হাত ধরলাম।উনি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমার ওড়না টেনে সরিয়ে দিলেন।আমি দুইহাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম।উনি আমাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলেন।আমি আগে চোখ পরিষ্কার করে নিলাম।তাকিয়ে দেখি আমি ওয়ালের সামনে, নির্ভীক ভাইয়া আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।সাদা ড্রেসে পানি লাগায় কেমন বাজে দেখাচ্ছে আমাকে।আমি লজ্জায় পেছন ফিরে উনার দিকে তাকাতে পারছিনা।মাথা নিচু করে চুপ থাকলাম।কিছুক্ষণ পর উনি শাওয়ার অফ করে বললেন,
নির্ভীক:দুমিনিটের মধ্যে চেন্জ করে বাহিরে আসবা।
বলেই উনি বাহিরে গেলেন।আমি পেছন ফিরে দরজা লাগিয়ে দিলাম।এখনও জামায় অনেক ফেনা লেগে আছে তাই আবার শাওয়ার অন করলাম।প্রায় ১০মিনিটের মতো হতেই দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলাম।শাওয়ার অফ করতেই নির্ভীক ভাইয়ার কথা শুনতে পেলাম।
নির্ভীক:এতক্ষণ কি করছো ডামেট।আবার পানি ছেড়েছো?দরজা খোল,বের হও বলছি।(রেগে)
আমি:আর পাঁচ মিনিট।(কাঁপা কাঁপা গলায় রেগে)
নির্ভীক:তাড়াতাড়ি বের হও।
আমি চেন্জ করে কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলতেই নির্ভীক ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।উনি সাদা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর নেভি ব্লু টিশার্ট পরে আছেন।উনার চুলগুলো ভেজা তারমানে উনিও শাওয়ার নিয়েছেন।উনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাগী ফেস করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমিও অনেক রেগে আছি ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে ফ্যানের সুইচ অন করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া ফ্যান অফ করে দিলেন।আমি রেগে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:অফ করলেন কেন?গরম লাগছে আমার।
নির্ভীক:গরম লাগছে তাহলে কাঁপছো কেন?(চিল্লীয়ে)
আমি রাগী ফেস করে হেয়ার ড্রায়ার বের করে চুল শুকাতে লাগলাম।মনে মনে ভাবলাম চুল শুকিয়ে তারপর ফ্যান ছেড়ে পড়তে বসবো।আমার খুব অভিমান হয়েছে,উনি সবটা জেনেও এই সন্ধ্যা সময় আমাকে গোসল করিয়ে নিয়েছেন।আমার কত ঠান্ডা লাগছে। এখন থেকে আমি ঠান্ডাতেই থাকবো আর পারলে ঘুমোনোর আগে আরেকবার গোসল করে নিবো।
চুল শুকানো হলে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন।আমি আবার ফ্যান ছেড়ে একটা বই নিয়ে বেডের উপর উঠে কম্বল গায়ে দিয়ে আধ শোয়া হয়ে বসলাম।আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি বই খুলে পড়তে লাগলাম।উনি শব্দ করে চেয়ার ঠেলে উঠে এসে ফ্যান অফ করে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আর একবার সুইচে হাত দিলে থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো।(আমার দিকে তাকিয়ে রেগে)
বলেই উনি আবার গিয়ে টেবিল চেয়ারে বসলেন।আমি বই বন্ধ করে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পরলাম।খুব কান্না পাচ্ছে।পাচ্ছে কি অলরেডি কাঁদতে শুরু করে দিয়েছি।উনি আমার সাথে রুড বিহেভ করছেন।উনি মনে হয় আমাকে আর ভালোবাসেন না।তখন পরমানু কেন্দ্রে মিষ্টি ফোন দেওয়ার পর থেকে উনি এমন করছেন।আমার সাথে রেগে কথা বলছেন।এসব কষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
নির্ভীক ভাইয়ার ডাকে চোখ খুলে দেখি উনি আমার উপর ঝুকে আমার গালে হাত দিয়ে আছেন।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।ঝুকে থাকার জন্য চুল গুলো নিচের দিকে ঝুলে আছে,উনার সামনের চুল গুলো দেখছি অনেক লম্বা,এমনিতে তো বুঝা যায় না এগুলো এত লম্বা।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,
নির্ভীক:কি হল উঠো।খাবার খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।(গালে হাত দিয়ে)
উনার কথা শুনে আমি গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বাম পাশে কাত হয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,
আমি:খাবো না।
নির্ভীক:খেতে হবে একটু,আমি খাবার নিয়ে এসেছি।আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও আর খাও।(আমার একবাহুতে হাত রেখে)
উনার এই সুন্দর রুপ দেখে আমার ঘুম আগেই ভেঙ্গে গেছে এখন আমি উনার উপর রাগ করে ভঙ ধরে আছি।উনার কথা শুনে আমি উপুর হয়ে শুলাম।উনি এবার আমাকে এক ঝটকায় চিৎ করে শুইয়ে দিলেন।আমি তাকাতেই উনি আমার ঠোঁটে কিস করে দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:তোমার ঠোঁট এত মিষ্টি!খুব ভাল লাগে,আই লাভ মিষ্টি।
আমি:আপনি আবার আমাকে…এ্যা এ্যা এ্যা।
কান্নার জন্য আর কিছু বলতেই পারলাম না।উনি আমাকে শাসিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কান্না থামাও নাহলে কিন্তু তোমার ঠোঁট খেয়ে ফেলবো।
আমি মুখে হাত রেখে উঠে বসে কাঁদতে কাঁদতে উনাকে বললাম,
আমি:আপনি গত কাল রাতেই প্রমিস করেছিলেন আর এমন করবেন না।
নির্ভীক:এটাই সেই প্রমিস যেটা আমি বার বার, হাজার বার ভাঙ্গতে চাই।(আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)
আমি:আপনি খুব খারাপ।
নির্ভীক:আই নো।এবার চলো তো খেতে হবে তোমার।(হাত ধরে)
খাওয়া শেষে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১:৪৫ বাজে।তারমানে আমি প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমিয়েছি।অনেক ঘুমিয়েছি এখন একটু পড়া দরকার।বই হাতে নিতেই নির্ভীক ভাইয়া বইটা কেড়ে নিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলেন।লাইট অফ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলেন।
নির্ভীক:তোমার চুল এত সফট্ কেন?তুমি এত সুন্দর কেন?একটু কম সুন্দর হলে কি খুব ক্ষতি হতো?ঐ ডক্টর টা তোমার চুলে হাত দিয়েছিল আর গলায় ও,আমি ওর হাত কেঁটে নিবো।ওর কত বড় সাহস আমার সামনে আমার বউ এর ত্বক নিয়ে কথা বলে,আই উইল কিল হিম।(আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে)
আমি:কি??না,উনার কি দোষ?আমার গলায় তো হাত দিতেই হতো না হলে বুঝতো কেমন করে।(ভীত কন্ঠে)
নির্ভীক:ওর হাতে গ্লাভস ছিল জন্য ওকে ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু এখন খুব রাগ হচ্ছে তোমাকে গোসল না দিয়ে ওই ডক্টরকে ড্রেনের পানিতে চোবালে ভাল লাগতো।কাল আমি ওকে ড্রেনে চুবিয়েই ছাড়বো।(গলায় কিস করে)
আমি:আপনি এসব ফালতু কারনে সন্ধ্যাবেলা আমাকে ওতোগুলো শ্যাম্পু দিয়ে……এই আপনি কি পাগল?(লাফ দিয়ে উঠে বসে)
নির্ভীক:হুম আমি পাগল।(আমার হাত টেনে আবার শুইয়ে দিয়ে)
আমি:ওই ডক্টরের কোন দোষ নেই আপনি কিছু করবেন না।(উনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:তোমাকে ওসব ভাবতে হবেনা।তুমি আমাকে ঘুম পারিয়ে দাও তো ছোটবেলায় আমি যেরকম তোমাকে ঘুম পারিয়ে দিতাম।(আমার বুকে মাথা রেখে)
আমি:উফ্ উঠুন,আপনি খুব ভারি।ছাড়ুন।(উনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে)
উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:সব সময় এমন করো কেন?আমি তোমাকে কখনও ছাড়বোনা আর তোমাকেও আমাকে ছাড়তে দিবো না।সবসময় তোমার খুব কাছে থাকবো।
আমি উনার পেটের কাছে জোড়ে একটা চিমটি কাটতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলেন।আমি হাসতে হাসতে বললাম,
আমি:এটুকুতেই ছেড়ে দিলেন?
নির্ভীক:ওরে পিচ্চি আমার সাথে মজা করছো,দাঁড়াও তোমাকে আজ….
বলেই উনি আমাকে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করলেন।হাসতে হাসতে আর সরি বলতে বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম কিন্তু উনি আমাকে ছাড়ছেন না।একসময় আমি আর হাসছিনা দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার উপর শুয়ে পরলেন।আমি চুপচাপ থাকলাম, জানি হাজার বললেও উনি সরবেন না।উনিও চুপ থাকলেন।এভাবে চুপচাপ থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলাম।
চলবে……………….
(এক পার্ট লিখতে গিয়ে ২বার একা একা ডিসকার্ড হয়ে গিয়েছে।তাই আজকের পার্টটা এমন বাজে হয়ে গেল।পুরোটা পরে আমার নিজেরই ভাল লাগছেনা আবার মুছে ফেলতেও কষ্ট লাগছে।আমি সরি, আজ ভাল হলো না।)